Ajker Patrika

চীন-পাকিস্তানে ঝুঁকছে আফগানিস্তান, চাপে পড়ছে ভারত

আব্দুর রহমান
আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ১৮: ০৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার গত ২১ মে বেইজিংকে আশ্বাস দিয়েছে, তারা ‘কোনো শক্তিকে’ চীনের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী বেইজিংয়ে শীর্ষ চীনা কূটনীতিক ওয়াং ই-এর সাক্ষাৎকালে বলেন, আফগানিস্তান চীনের নিরাপত্তা উদ্বেগকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং চীনের ক্ষতি করে এমন কর্মকাণ্ড চালাতে কোনো শক্তিকে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না।

ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার গত ২২ এপ্রিলের প্রতিবেদন এটি।

এর কয়েক দিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সেই আলাপ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও জয়শঙ্কর আগ বাড়িয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—তালেবান সরকার কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকার নিন্দা করেছে। কিন্তু ভারতের সেই বাগাড়ম্বরের মুখে ছাই দিয়েছে তালেবান সরকার। এর পরপরই আমির খান মুত্তাকী বেইজিংয়ে চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এক বৈঠকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এর ফলে দুই দেশ উভয় দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠাবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আফগানিস্তান ও পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সুস্পষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীন এটিকে স্বাগত জানায় এবং বেইজিং আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করে যাবে।’

এ ছাড়া পাকিস্তান ও চীন জানিয়েছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের বিষয়েও একটি চুক্তি হয়েছে। এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে।’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, ‘চীন ও পাকিস্তান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সহযোগিতার বৃহত্তর কাঠামোর অধীনে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের জন্য তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।’

চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক চমৎকার হলেও ইসলামাবাদ ও কাবুলের সম্পর্ক খানিকটা শীতল। চীনের মধ্যস্থতায় এই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। তবে কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্কোন্নয়নে সময় লাগবে, বিষয়টি এত দ্রুত স্বাভাবিক হবে না। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, ‘স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া দ্রুত হবে না, তবে ইসলামাবাদ ও কাবুল এই (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) স্তরে আবার কথা বলছে এবং রাষ্ট্রদূতদের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’

বেইজিং তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে দূতাবাস বজায় রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে এবং গত বছর বেইজিংয়ে নিযুক্ত তালেবানের রাষ্ট্রদূতকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কোনো দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বীকৃতি না দিলেও চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ কাবুলে রাষ্ট্রদূত বজায় রেখেছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজ দেশেও তালেবানের রাষ্ট্রদূতদের স্বীকৃতি দিয়েছে। গত মাসে রাশিয়াও মস্কোতে তালেবান রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেইজিংয়ের বৈঠক পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কের বরফ গলাতে সাহায্য করেছে। এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে গভীর অবিশ্বাস, আন্তসীমান্ত হামলা এবং আফগান ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ে তীব্র মতবিরোধে জর্জরিত ছিল। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে কাবুলের বিরুদ্ধে টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে, যাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ৭০ শতাংশ হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা মূলত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে। ২০২৫ সালের মার্চে আফগানিস্তানের জন্য মনোনীত পাকিস্তানের বিশেষ দূত মোহাম্মদ সাদিক এক বছরের বেশি সময় পর কাবুল সফর করেন। তাঁর এই মিশনের পর ১৯ এপ্রিল উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের উচ্চপর্যায়ের সফর হয়। যেখানে উভয় পক্ষ তাদের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং বাণিজ্য সহজীকরণের পদক্ষেপে সম্মত হয়।

বেইজিংয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক এই গতিকে আরও বাড়িয়েছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংহতিতে চীনের কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে এবং তারা চীন-আফগানিস্তান-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় সংলাপ পুনরায় শুরু করতে এই বৈঠকের আয়োজন করেছে, যা ২০২৩ সাল থেকে স্থগিত ছিল।

বেইজিং বৈঠকের মূল অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে—একে অপরের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূত রাখার চুক্তি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যার মধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী ও বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের জন্য সমর্থন এবং কাবুলে ষষ্ঠ চীন-আফগানিস্তান-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার সমঝোতা।

বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্য, ট্রানজিট, স্বাস্থ্য ও সংযোগের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ চীনও জোর দিয়ে বলেছে, সব পক্ষকে অবশ্যই ‘তাদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে হবে’ এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের ‘নিজেদের উপযোগী’ উন্নয়ন পথ অনুসরণ করার জন্য তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এই অগ্রগতির মাধ্যমে পাকিস্তান ও চীন মনে করছে, গভীর যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনা কাবুলকে কাছাকাছি আনতে পারে এবং এই অঞ্চলে অস্থিরতা কমাতে পারে। ভারতও ঠিকই একই কৌশল নিয়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ভারত আফগানিস্তানকে খুব একটা অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে রাজি নয়। অথচ, তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানের এটিই এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।

গত ১৫ মে তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকীর সঙ্গে টেলিফোন আলাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে জয়শঙ্কর বলেন, মুত্তাকীর সঙ্গে ‘ভালো আলোচনা’ হয়েছে বলে জানান। তিনি লেখেন, উভয় পক্ষ ‘সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার উপায় ও মাধ্যম’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তালেবান সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আলোচনায় ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির’ ওপর জোর দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনায় তালেবান সরকার পাকিস্তানের নিন্দা জানিয়েছে—এমন দাবিও করেছেন জয়শঙ্কর।

পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করে জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেন, নয়াদিল্লি ‘ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদনের মাধ্যমে অবিশ্বাস তৈরির সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার প্রতি (মুত্তাকীর) দৃঢ় প্রত্যাখ্যানকে স্বাগত জানিয়েছে’।

কিন্তু তালেবানের বিবৃতিতে গত ২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলা বা ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের কোনো উল্লেখ ছিল না।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জয়শঙ্করের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের পর একই দিনে কাবুলে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পঞ্চম পর্বের আয়োজন করেন। এই বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাস দমনে নিবিড় সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন পরই বেইজিংয়ে মুত্তাকী, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়।

ইসলামাবাদভিত্তিক পাকিস্তান-চায়না ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা হায়দার সাইয়্যেদ বেইজিং বৈঠককে ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন। আফগানিস্তানের
ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ। সাইয়্যেদ বলেন, পাকিস্তান ও চীনের জন্য ভারতের সঙ্গে সংঘাত আফগানিস্তানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

কাবুলভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তামিম বাহিসও এতে একমত। তিনি বলেন, ‘মুত্তাকী ও জয়শঙ্করের মধ্যে এই ফোনালাপ ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এটি ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ আঞ্চলিক পরিস্থিতি এমনিতেই অস্থির। এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সময় এবং এর বিষয়বস্তু উভয়ই দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক গতিমুখ বদলে যাওয়ায় এই তিন দেশের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।’

আফগানিস্তান পাকিস্তান ও চীনের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে ৫২১টি হামলা হয়েছে। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। এসব হামলায় প্রায় ১ হাজার বেসামরিক ও নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। আর পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, এসব হামলার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ইসলামাবাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ স্পষ্ট।

কাবুলের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে পাকিস্তানই উদ্যোগী। পেহেলগাম হামলার ঠিক তিন দিন আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার কাবুল সফর করেন। এই সফরের গুরুত্বের বিষয়ে ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ টিপু বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের নতুন কূটনৈতিক যোগাযোগে কয়েকটি বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে—ব্যবসা, সীমান্ত বিরোধ ও সীমান্ত বন্ধের চেয়ে নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চীনও একই মনোভাব পোষণ করে বলে জানান তিনি।

টিপু আল জাজিরাকে বলেন, ‘অর্থবহ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো প্রথমে সমাধান করতে হবে।’ তবে তিনি সতর্ক করে দেন, তা না হলে উত্তেজনা সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিতে পারে। টিপু আরও বলেন, ‘তবে চীনের বৈশ্বিক প্রভাব এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় বেইজিং যেকোনো অঙ্গীকারের নিশ্চয়তা দানকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

তবে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের যে নিরাপত্তা উদ্বেগ, তা কেবল একপক্ষীয় নয়। কারণ, পাকিস্তান আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে নিজ দেশে হামলাকারী জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। এসব হামলার অধিকাংশই পাকিস্তানে সিপেক প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে হয়েছে। ফলে বিষয়টি চীনা প্রকল্পেরও নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাকিস্তান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার চীনা নাগরিক বাস করেন। ২০২১ সাল থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের মতো প্রদেশগুলোতে হামলায় অন্তত ২০ চীনা নিহত হয়েছেন। টিটিপিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে।

চীনও আফগানিস্তানভিত্তিক ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিম) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীর জঙ্গিরা আফগান ভূমি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। পিসিআই-এর সাইয়্যেদ জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান ও চীন উভয়ই আফগানিস্তানে নিরাপত্তাকে তাদের ‘মূল স্বার্থ’ হিসেবে দেখে।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি যৌথ হুমকি এবং অতীতে ইটিএমের আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। এই জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলো একে অপরের সঙ্গেও যুক্ত। তাই যেকোনো সহযোগিতা এগিয়ে নিতে হলে, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে প্রথমে নিষ্ক্রিয় করা জরুরি, যাদের আফগানিস্তানে অবাধে ও আরামে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।’

তবে বাহিস উল্লেখ করেছেন, তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর চীনসহ বেশির ভাগ আঞ্চলিক শক্তি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছে, যা চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সম্ভব করেছে। তিনি বলেন, ‘মূল ব্যতিক্রম হলো পাকিস্তান, যারা আফগান ভূমি থেকে গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পাকিস্তান টিটিপিকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে রাখাকে অগ্রাধিকার দিলেও কাবুল বাণিজ্য, ট্রানজিট ও আঞ্চলিক সংহতির দিকে মনোনিবেশ করছে।’

কাবুলভিত্তিক এই বিশ্লেষক বলেন, ‘এখানেই চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিরাপত্তা সহযোগিতা উৎসাহিত করার পাশাপাশি বাণিজ্য ও ট্রানজিট উদ্যোগের অগ্রগতি ঘটিয়ে চীন মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে অনন্য অবস্থানে রয়েছে, এতে তিনটি দেশই উপকৃত হবে।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নয়াদিল্লি ও কাবুলের কর্মকর্তাদের মধ্যকার বর্ধিত যোগাযোগ কী ইসলামাবাদে উদ্বেগ তৈরি করছে? সাইয়্যেদ অবশ্য তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কাবুলকে অবিশ্বাস করে না। তবে পাকিস্তান পদক্ষেপের কথা বলেছে। কাবুলের শাসকদের টিটিপি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিষয়ে দেওয়া কথা রাখতে হবে। আমি মনে করি না যে, বেইজিং বা ইসলামাবাদ কেউই ভারতের সঙ্গে কাবুলের ইতিবাচক সম্পর্কের বিরোধিতা করবে, যতক্ষণ না তা পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থে আঘাত হানে।’

তবে বাহিস বলছেন, তালেবানের সঙ্গে নয়াদিল্লির এই পুনঃসম্পর্ক স্থাপন পাকিস্তান ও চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। উভয় দেশের সঙ্গেই ভারতের ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারত-আফগানিস্তান যোগাযোগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এক সময় ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়াতে পারে।’

বাহিস আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের যেকোনো দেশের সঙ্গে, এমনকি ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপনের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। তবে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। স্পষ্ট বার্তা দেওয়া জরুরি, যাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো হুমকি হিসেবে মনে করার মতো ঝুঁকি তৈরি না হয়। এই জটিল সম্পর্কগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করতে কূটনীতি, স্বচ্ছতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রয়োজন।’

ভারতের আফগানিস্তান নীতি কাবুলের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলি এবং বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে বিকশিত হয়েছে। তবে পেহেলগামের পর আঞ্চলিক বাস্তবতার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণের কথা ভাবছে। ভারতের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো, আফগানিস্তানে তাদের অসমাপ্ত উন্নয়ন উদ্যোগগুলো সম্পন্ন করা, যা তালেবানের দীর্ঘদিনের দাবি।

তবে ভারতের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তালেবান তাদের বহুমুখী কূটনীতি অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন দিল্লিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক রুশালি সাহা। তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়ও এই প্রচেষ্টা পুরোপুরি দৃশ্যমান ছিল। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তালেবান সরকার দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক রাখার ইঙ্গিত তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিয়েছে।’

রুশালি সাহা বলেন, ‘মুত্তাকী জয়শঙ্করের সঙ্গে কথোপকথনের সময় ভারতকে অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করলেও, তিনি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সব পক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তালেবানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ তবে তালেবান সরকার আদৌ ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্নের বিষয়। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে তুলনামূলক শান্তির সময়ে এই ভারসাম্য খুব একটা কঠিন হবে না। তবে উত্তেজনা ও সংঘাতের সময় ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: দ্য ডন, আল জাজিরা, দ্য ডিপ্লোম্যাট ও হিন্দুস্তান টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪২
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।

হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।

গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?

গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।

সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।

আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত