লেটিসিয়া ভ্যান ডেন অসসাম

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সফলভাবেই লবিং করেছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির উত্থান বিবেচনায় নিতে হবে।
গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পূর্বতন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘টেকসই প্রচেষ্টা’ চালানোর আহ্বান জানান।
নভেম্বরে তাঁর সরকারের দৃঢ় লবিংয়ের ফলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেখানে আগামী বছর (২০২৫ সালে) একটি ‘উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সম্মেলনটি ‘সমস্যাটির টেকসই সমাধানে বিস্তৃত, উদ্ভাবনী, নির্দিষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ও কাতারকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে— এই সম্মেলন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ১৯৭০-এর দশক থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে বোঝা বহন করছে, তার প্রেক্ষিতে দ্রুত এবং কার্যকর প্রত্যাবাসনের দাবি খুবই বোধগম্য। জাতিসংঘের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখার জন্য দারুণ উদ্যোগ। এটি আরও উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে, বর্তমানে সংকট নিয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক সংলাপ নেই। তবে, মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংলাপ আয়োজন সহজ কাজ হবে না। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের—যা আরাকান নামেও পরিচিত—একটি বড় অংশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছ থেকে দখলে নিয়েছে। এই অঞ্চলেরই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে আরাকান আর্মির উত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। তবে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশের জনসমক্ষে এই বিষয়ে ক্রমশ আলোচনা শুরু হয়েছে, যা হাসিনার শাসনামলে প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা এখন বেশ জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নাকি এই গ্রুপের সঙ্গে আধা-আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপনের উপায় বিবেচনা করছে। আরেকটি উদাহরণ হলো— দুই অভিজ্ঞ কূটনীতিক বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শাহিদুল হক এবং মিয়ানমারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির পুনর্বিবেচনা এবং নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রস্তাব করেছেন।
আগামী বছরের রোহিঙ্গা সম্মেলনের আয়োজকদের তাৎক্ষণিকভাবে দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত, কীভাবে সম্মেলনের পরিধি নির্ধারণ করা হবে? দ্বিতীয়ত, কীভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রকৃত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে?
রোহিঙ্গা সংকটে অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে এর বিস্তৃত গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। অনেক সময় রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের একটি দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
‘বিহাইন্ড দ্য ওয়্যার’— শিরোনামে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাপী ২৮ লাখ রোহিঙ্গা আছে, যার মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এই বিষয়টি নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্মম বাস্তবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মিয়ানমার ছাড়াও যেসব দেশে রোহিঙ্গাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে—তার মধ্যে বাংলাদেশে আছে প্রায় ১১ লাখ, পাকিস্তানে ৪ লাখ, সৌদি আরবে ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ১০ হাজার।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। উদাহরণস্বরূপ—সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কয়েক দশক আগে পাড়ি জমিয়েছে এবং তাদের সন্তানেরা কখনোই নিজভূমি দেখেনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস দেখেছে যে, গত পাঁচ বছরে পালিয়ে আসা ৭৬ শতাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চেয়েছে। কিন্তু যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবাসে রয়েছে তাদের মধ্যে এই ইচ্ছা মাত্র ২৮ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সমাধানগুলো বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে হওয়া উচিত এবং ২০১৮ সালের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজির যেসব লক্ষ্য আছে সেগুলোর আলোকে পরিচালিত হওয়া উচিত।
এর মধ্যে রয়েছে— আশ্রয়দাতা দেশগুলোর ওপর চাপ কমানো, শরণার্থীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, তৃতীয় দেশের সমাধানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মাতৃভূমিতে অবস্থার উন্নয়ন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এবং ২০১৬-১৭ সালে তাদের মিয়ানমার ছাড়ার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে ঢাকা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ওপর ফোকাস করাটাই যুক্তিযুক্ত। শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ঢাকার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়াও বোধগম্য। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ ১৯৭০ এর দশক থেকে দেখা ‘রিভলভিং ডোর’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। যেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেলেও আবার একই চক্র শুরু হয়েছে। যদি রোহিঙ্গা সংকটের মূলে থাকা কারণগুলো সমাধান করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা অধরাই থেকে যাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য এর প্রভাব বাড়তে থাকবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন এবং বিতর্ক রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরেই নেওয়া হয় যে, মিয়ানমারে একটি কেন্দ্রীয় সরকার তার সব রাষ্ট্রের সব উপাদানেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ও পরিচালনা করতে পারে। ‘মিয়ানমার’ শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হলেও এটি কেবল সামরিক সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে। তবে জান্তা সরকার দেশের অনেকাংশেরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রাখাইনে তাদের কর্তৃত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক বড় পরাজয়ের পর, তাদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে রয়েছে কেবল রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মুনাউং দ্বীপ এবং কায়াকপায়ু ও গওয়া টাউনশিপের কিছু ছোট অংশে এবং এসব এলাকাতেও নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে, আরাকান আর্মি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে চীন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কয়েকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয় মূলত রোহিঙ্গা এবং রাখাইন— যারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী— তাদের বাদ দেওয়ার কারণে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরুর চেষ্টা আরও কম সফল হয়। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকান আর্মির বাস্তবিক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ স্বীকার না করে, তাহলে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি বিষয়ে অগ্রগতি কল্পনাতীত থেকে যাবে।
রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজকদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে বাংলাদেশ এখনো স্পষ্টতই একটি অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, এমনকি আরাকান আর্মি বাস্তবিকভাবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরও।
একটি পক্ষ হিসেবে আরাকান আর্মিকে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা কিছুটা দূরের হলেও উভয় পক্ষের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা লাভজনক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য একটি মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা, সীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী বিশেষত চীন এবং থাইল্যান্ডের অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ নিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
রাখাইনে পুরোনো জান্তা শাসনব্যবস্থার জায়গায় কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে— তা এখনো পরিষ্কার নয়। আরাকান আর্মির নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানকে মানে না। মাঝে মাঝে তারা একটি ফেডারেল বা সংযুক্ত রাষ্ট্র কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বিকল্পগুলোকেও বাদ দেয়নি। গত কয়েক বছর ধরে রাখাইনের কিছু অংশে প্রশাসনিক ও বিচারিক সেবা চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মির বেসামরিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান এবং আরও বেসামরিক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। তবে এটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার জন্য কেবল যাত্রা মাত্র।
গত বছরটি রাখাইনের জন্য উদ্বেগজনক ছিল। যদিও আরাকান আর্মি প্রায় পুরো রাজ্যকে জান্তা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু দুটি ঘটনা তাদের সামরিক সাফল্যে কালিমা লেপন করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ সংঘর্ষ রাখাইনকে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাজ্যটিতে অবরোধ কঠোর করেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলিক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এমনকি আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এমনকি মুদ্রা সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গুরুতর খাদ্য সংকট এবং এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া এই সংঘাত সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জান্তাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকলেও তারা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ তথা বিভাজনের মাধ্যমে শাসনের কৌশল ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বড় অংশকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁরা সরাসরি রোহিঙ্গাদের যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) অন্যতম। ২০২৪ সালের এপ্রিলে থেকে সব পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের এই অবনতি ২০২২ এবং ২০২৩ সালের পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছিল, সেটির ওপর একটি বড় ধাক্কা। সে সময় রাখাইনে বিশেষ করে মধ্য রাখাইন অঞ্চলে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বসবাসের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছিল এবং সেবার সুযোগও বাড়ছিল। ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সিতওয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থেকে রেহাই পায়নি। কক্সবাজারে অবস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অনেক তরুণকে জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মিয়ানমারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং জান্তাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা যোদ্ধাকে অপহরণ বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কয়েক মাসের তীব্র সংঘর্ষের পর আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর সর্বশেষ আউটপোস্ট দখল করে। এতে শত শত যুদ্ধবন্দি— যার মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা যোদ্ধাও অন্তর্ভুক্ত— তাদের হাতে পড়ে। আরাকান আর্মি বলছে, তারা ভবিষ্যতে সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তবে তারা জান্তাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা রোহিঙ্গাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে পুনরায় স্থাপন করা যায়— তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পদক্ষেপ হিসেবে তারা হয়তো এপ্রিল-মে মাসে বুথিডং টাউনশিপে সংঘটিত গণ-সহিংসতার বিতর্কিত পরিস্থিতি নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের কথা ভাবতে পারে। এছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। তাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে থাকলে তা মেরামত বা পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে।
আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। কক্সবাজারে আশ্রয়শিবির থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ এবং তাদের মিয়ানমারে সীমান্ত পার করে রণক্ষেত্রে পাঠানোর বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশিসহ অনেক পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করতে চান না যে, এটি উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে ঘটেছে।
রাখাইনকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে পুনর্গঠন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি এমন এক চ্যালেঞ্জ, যার দ্রুত কোনো সমাধান নেই। এটি আগে থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর একটি ছিল। উন্নয়নবঞ্চিত, আন্তঃসম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং বঞ্চনার শিকার এই রাজ্যে দারিদ্র্য, সুযোগের অভাব এবং বাস্তুচ্যুতির কারণে এখানকার সব সম্প্রদায়কেই আঘাত করেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যখন জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সহিংসতা তীব্রতর হয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাখাইনে একটি ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপের প্রয়োজন, যাতে সামনে থাকা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ— যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত— ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো রাজ্যের বৈচিত্র্যময় জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর একীকরণ শক্তিশালী করা। বিশেষ করে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনার বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন কাজ। দুই পক্ষই একে অপরের প্রতি গভীর ভয় ও বিদ্বেষ পোষণ করেছে। কিছু রাখাইনের মতে, রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ— যারা জান্তাবাহিনীর সঙ্গে মিলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে— তাঁদের এই ভয়কে আরও গভীর করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভূমিকা পালন করতে হবে। রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায় কী ধরনের সমস্যা বা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে— এটি স্বীকার করতে হবে আগে। গত কয়েক দশকে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী সব সম্প্রদায়কেই আরও বেশি অত্যাচার করতে শুরু করেছে— পেটানো, হত্যা করা এবং নির্যাতন করা, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করা, ঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার ও উপাসনালয় পোড়ানো, মৌলিক পণ্যের পরিবহন বন্ধ করা এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা— যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং এবং যোগাযোগ বন্ধ করা। এখন রাখাইন রাজ্যের সব মানুষই অবরুদ্ধ অবস্থার শিকার।
তাহলে, বিশ্ব সম্প্রদায় সংকটের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে চাইলে তবে তাঁদের কেবল রোহিঙ্গাদের দুর্দশা মোকাবিলা করেই নয়, রাখাইনের সব মানুষের জন্য একত্রে রাজ্য পুনর্গঠনেও সাহায্য করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রোগ্রামের’ বা অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায্যতা নিশ্চিত কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, সত্য, ন্যায়, ক্ষতিপূরণ ও স্মৃতি সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংগতি রাখতে পারবে। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতিসংঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সভাপতিত্বে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশন রাখাইনের উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সমাধান প্রস্তাব করেছিল। এই প্রস্তাব সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের পথে একটি দিশা ছিল। তারপর যা কিছু ঘটেছে, তা সত্ত্বেও, অনেক সুপারিশ আজও প্রাসঙ্গিক। এখন রাখাইনের জনগণ ও তাঁদের নেতাদের ওপরই নির্ভর করছে যে, তারা কীভাবে এগুলোকে নতুন রাখাইন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
লেখক: থাইল্যান্ডে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০১৬ সাল থেকে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক জাতিসংঘের পরামর্শক কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
(মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান)

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সফলভাবেই লবিং করেছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির উত্থান বিবেচনায় নিতে হবে।
গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পূর্বতন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘টেকসই প্রচেষ্টা’ চালানোর আহ্বান জানান।
নভেম্বরে তাঁর সরকারের দৃঢ় লবিংয়ের ফলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেখানে আগামী বছর (২০২৫ সালে) একটি ‘উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সম্মেলনটি ‘সমস্যাটির টেকসই সমাধানে বিস্তৃত, উদ্ভাবনী, নির্দিষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ও কাতারকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে— এই সম্মেলন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ১৯৭০-এর দশক থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে বোঝা বহন করছে, তার প্রেক্ষিতে দ্রুত এবং কার্যকর প্রত্যাবাসনের দাবি খুবই বোধগম্য। জাতিসংঘের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখার জন্য দারুণ উদ্যোগ। এটি আরও উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে, বর্তমানে সংকট নিয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক সংলাপ নেই। তবে, মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংলাপ আয়োজন সহজ কাজ হবে না। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের—যা আরাকান নামেও পরিচিত—একটি বড় অংশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছ থেকে দখলে নিয়েছে। এই অঞ্চলেরই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে আরাকান আর্মির উত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। তবে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশের জনসমক্ষে এই বিষয়ে ক্রমশ আলোচনা শুরু হয়েছে, যা হাসিনার শাসনামলে প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা এখন বেশ জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নাকি এই গ্রুপের সঙ্গে আধা-আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপনের উপায় বিবেচনা করছে। আরেকটি উদাহরণ হলো— দুই অভিজ্ঞ কূটনীতিক বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শাহিদুল হক এবং মিয়ানমারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির পুনর্বিবেচনা এবং নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রস্তাব করেছেন।
আগামী বছরের রোহিঙ্গা সম্মেলনের আয়োজকদের তাৎক্ষণিকভাবে দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত, কীভাবে সম্মেলনের পরিধি নির্ধারণ করা হবে? দ্বিতীয়ত, কীভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রকৃত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে?
রোহিঙ্গা সংকটে অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে এর বিস্তৃত গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। অনেক সময় রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের একটি দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
‘বিহাইন্ড দ্য ওয়্যার’— শিরোনামে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাপী ২৮ লাখ রোহিঙ্গা আছে, যার মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এই বিষয়টি নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্মম বাস্তবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মিয়ানমার ছাড়াও যেসব দেশে রোহিঙ্গাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে—তার মধ্যে বাংলাদেশে আছে প্রায় ১১ লাখ, পাকিস্তানে ৪ লাখ, সৌদি আরবে ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ১০ হাজার।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। উদাহরণস্বরূপ—সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কয়েক দশক আগে পাড়ি জমিয়েছে এবং তাদের সন্তানেরা কখনোই নিজভূমি দেখেনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস দেখেছে যে, গত পাঁচ বছরে পালিয়ে আসা ৭৬ শতাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চেয়েছে। কিন্তু যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবাসে রয়েছে তাদের মধ্যে এই ইচ্ছা মাত্র ২৮ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সমাধানগুলো বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে হওয়া উচিত এবং ২০১৮ সালের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজির যেসব লক্ষ্য আছে সেগুলোর আলোকে পরিচালিত হওয়া উচিত।
এর মধ্যে রয়েছে— আশ্রয়দাতা দেশগুলোর ওপর চাপ কমানো, শরণার্থীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, তৃতীয় দেশের সমাধানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মাতৃভূমিতে অবস্থার উন্নয়ন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এবং ২০১৬-১৭ সালে তাদের মিয়ানমার ছাড়ার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে ঢাকা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ওপর ফোকাস করাটাই যুক্তিযুক্ত। শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ঢাকার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়াও বোধগম্য। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ ১৯৭০ এর দশক থেকে দেখা ‘রিভলভিং ডোর’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। যেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেলেও আবার একই চক্র শুরু হয়েছে। যদি রোহিঙ্গা সংকটের মূলে থাকা কারণগুলো সমাধান করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা অধরাই থেকে যাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য এর প্রভাব বাড়তে থাকবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন এবং বিতর্ক রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরেই নেওয়া হয় যে, মিয়ানমারে একটি কেন্দ্রীয় সরকার তার সব রাষ্ট্রের সব উপাদানেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ও পরিচালনা করতে পারে। ‘মিয়ানমার’ শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হলেও এটি কেবল সামরিক সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে। তবে জান্তা সরকার দেশের অনেকাংশেরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রাখাইনে তাদের কর্তৃত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক বড় পরাজয়ের পর, তাদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে রয়েছে কেবল রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মুনাউং দ্বীপ এবং কায়াকপায়ু ও গওয়া টাউনশিপের কিছু ছোট অংশে এবং এসব এলাকাতেও নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে, আরাকান আর্মি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে চীন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কয়েকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয় মূলত রোহিঙ্গা এবং রাখাইন— যারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী— তাদের বাদ দেওয়ার কারণে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরুর চেষ্টা আরও কম সফল হয়। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকান আর্মির বাস্তবিক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ স্বীকার না করে, তাহলে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি বিষয়ে অগ্রগতি কল্পনাতীত থেকে যাবে।
রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজকদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে বাংলাদেশ এখনো স্পষ্টতই একটি অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, এমনকি আরাকান আর্মি বাস্তবিকভাবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরও।
একটি পক্ষ হিসেবে আরাকান আর্মিকে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা কিছুটা দূরের হলেও উভয় পক্ষের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা লাভজনক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য একটি মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা, সীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী বিশেষত চীন এবং থাইল্যান্ডের অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ নিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
রাখাইনে পুরোনো জান্তা শাসনব্যবস্থার জায়গায় কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে— তা এখনো পরিষ্কার নয়। আরাকান আর্মির নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানকে মানে না। মাঝে মাঝে তারা একটি ফেডারেল বা সংযুক্ত রাষ্ট্র কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বিকল্পগুলোকেও বাদ দেয়নি। গত কয়েক বছর ধরে রাখাইনের কিছু অংশে প্রশাসনিক ও বিচারিক সেবা চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মির বেসামরিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান এবং আরও বেসামরিক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। তবে এটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার জন্য কেবল যাত্রা মাত্র।
গত বছরটি রাখাইনের জন্য উদ্বেগজনক ছিল। যদিও আরাকান আর্মি প্রায় পুরো রাজ্যকে জান্তা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু দুটি ঘটনা তাদের সামরিক সাফল্যে কালিমা লেপন করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ সংঘর্ষ রাখাইনকে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাজ্যটিতে অবরোধ কঠোর করেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলিক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এমনকি আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এমনকি মুদ্রা সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গুরুতর খাদ্য সংকট এবং এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া এই সংঘাত সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জান্তাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকলেও তারা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ তথা বিভাজনের মাধ্যমে শাসনের কৌশল ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বড় অংশকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁরা সরাসরি রোহিঙ্গাদের যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) অন্যতম। ২০২৪ সালের এপ্রিলে থেকে সব পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের এই অবনতি ২০২২ এবং ২০২৩ সালের পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছিল, সেটির ওপর একটি বড় ধাক্কা। সে সময় রাখাইনে বিশেষ করে মধ্য রাখাইন অঞ্চলে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বসবাসের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছিল এবং সেবার সুযোগও বাড়ছিল। ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সিতওয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থেকে রেহাই পায়নি। কক্সবাজারে অবস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অনেক তরুণকে জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মিয়ানমারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং জান্তাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা যোদ্ধাকে অপহরণ বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কয়েক মাসের তীব্র সংঘর্ষের পর আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর সর্বশেষ আউটপোস্ট দখল করে। এতে শত শত যুদ্ধবন্দি— যার মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা যোদ্ধাও অন্তর্ভুক্ত— তাদের হাতে পড়ে। আরাকান আর্মি বলছে, তারা ভবিষ্যতে সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তবে তারা জান্তাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা রোহিঙ্গাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে পুনরায় স্থাপন করা যায়— তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পদক্ষেপ হিসেবে তারা হয়তো এপ্রিল-মে মাসে বুথিডং টাউনশিপে সংঘটিত গণ-সহিংসতার বিতর্কিত পরিস্থিতি নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের কথা ভাবতে পারে। এছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। তাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে থাকলে তা মেরামত বা পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে।
আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। কক্সবাজারে আশ্রয়শিবির থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ এবং তাদের মিয়ানমারে সীমান্ত পার করে রণক্ষেত্রে পাঠানোর বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশিসহ অনেক পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করতে চান না যে, এটি উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে ঘটেছে।
রাখাইনকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে পুনর্গঠন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি এমন এক চ্যালেঞ্জ, যার দ্রুত কোনো সমাধান নেই। এটি আগে থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর একটি ছিল। উন্নয়নবঞ্চিত, আন্তঃসম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং বঞ্চনার শিকার এই রাজ্যে দারিদ্র্য, সুযোগের অভাব এবং বাস্তুচ্যুতির কারণে এখানকার সব সম্প্রদায়কেই আঘাত করেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যখন জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সহিংসতা তীব্রতর হয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাখাইনে একটি ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপের প্রয়োজন, যাতে সামনে থাকা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ— যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত— ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো রাজ্যের বৈচিত্র্যময় জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর একীকরণ শক্তিশালী করা। বিশেষ করে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনার বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন কাজ। দুই পক্ষই একে অপরের প্রতি গভীর ভয় ও বিদ্বেষ পোষণ করেছে। কিছু রাখাইনের মতে, রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ— যারা জান্তাবাহিনীর সঙ্গে মিলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে— তাঁদের এই ভয়কে আরও গভীর করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভূমিকা পালন করতে হবে। রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায় কী ধরনের সমস্যা বা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে— এটি স্বীকার করতে হবে আগে। গত কয়েক দশকে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী সব সম্প্রদায়কেই আরও বেশি অত্যাচার করতে শুরু করেছে— পেটানো, হত্যা করা এবং নির্যাতন করা, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করা, ঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার ও উপাসনালয় পোড়ানো, মৌলিক পণ্যের পরিবহন বন্ধ করা এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা— যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং এবং যোগাযোগ বন্ধ করা। এখন রাখাইন রাজ্যের সব মানুষই অবরুদ্ধ অবস্থার শিকার।
তাহলে, বিশ্ব সম্প্রদায় সংকটের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে চাইলে তবে তাঁদের কেবল রোহিঙ্গাদের দুর্দশা মোকাবিলা করেই নয়, রাখাইনের সব মানুষের জন্য একত্রে রাজ্য পুনর্গঠনেও সাহায্য করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রোগ্রামের’ বা অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায্যতা নিশ্চিত কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, সত্য, ন্যায়, ক্ষতিপূরণ ও স্মৃতি সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংগতি রাখতে পারবে। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতিসংঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সভাপতিত্বে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশন রাখাইনের উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সমাধান প্রস্তাব করেছিল। এই প্রস্তাব সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের পথে একটি দিশা ছিল। তারপর যা কিছু ঘটেছে, তা সত্ত্বেও, অনেক সুপারিশ আজও প্রাসঙ্গিক। এখন রাখাইনের জনগণ ও তাঁদের নেতাদের ওপরই নির্ভর করছে যে, তারা কীভাবে এগুলোকে নতুন রাখাইন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
লেখক: থাইল্যান্ডে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০১৬ সাল থেকে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক জাতিসংঘের পরামর্শক কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
(মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান)

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
০১ জানুয়ারি ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
০১ জানুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
০১ জানুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
০১ জানুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে