আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে