আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাবাসনের যোগ্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছিল। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই চলছে।
সরকার বলছে, এটিই প্রথম এমন এক নিশ্চিত তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘদিনের সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মিয়ানমার আরও নিশ্চিত করেছে, মূল তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ৩০ দফা ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়েছিল। নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানায় মিয়ানমার।
কিন্তু ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের আবাস ও জায়গাজমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। বরং তাদের জন্য আলাদা আশ্রয়শিবির নির্মাণের কথা হয়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নেওয়া গেলেও নানামুখী আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নেই। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না। এটি বুঝতে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
আরাকান আর্মি মূলত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’–এর জন্য লড়াই করছে। আর রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল এবং প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে মংডু এবং বুথিডং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে। ফলে এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান আর্মির অবস্থান এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং উত্তেজনা
ঐতিহাসিকভাবে আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গারা কখনো মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করে। এতে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই সময়ের আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতামূলক একটা সম্পর্ক ছিল। সামরিক জান্তার নিপীড়নের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগ থাকলেও ন্যূনতম একটা সম্পর্ক তাদের ছিল।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং সরকার তাদের ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। বৌদ্ধ-মুসলিম ঐতিহাসিক বিভেদের কারণে নাগরিকত্ব আইনের পর আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস প্রবল হয়। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের নৃশংসতায় আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে, যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আরাকান আর্মিও জান্তা সরকারের বয়ানেরই প্রতিধ্বনি করেছিল ওই সময়। যেমন ২০১৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘নৃশংস বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে তারা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনের স্থানীয় হিসেবে নয়, বরং বহিরাগত হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর অবস্থান
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং আরাকান আর্মির ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মিলে অপারেশন ১০২৭–এ অংশগ্রহণের (অক্টোবর ২০২৩–এ শুরু) পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নরম করে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং স্থানীয় সমর্থন অর্জনের কৌশল হিসেবেই তারা বয়ান পরিবর্তন করে।
আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল ত্বান ম্রাত নাইং দাবি করেন, তাঁরা ‘রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানব ও নাগরিক অধিকার’ স্বীকার করেন। ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছে আরাকান আর্মি।
২০২৪ সালের এপ্রিলে আরাকান আর্মি নাম পরিবর্তন করে। ‘আরাকান আর্মি’ থেকে রাখাইন নাম ‘আরাখা আর্মি’ ধারণ ও প্রচার করে তারা। এটিকে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই বক্তব্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, ২০২২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ত্বান ম্রাত নাইং ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ আরাকানি (রাখাইন) এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরাকান আর্মি পরে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২৪ সালের মার্চে জান্তার জারি করা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিবৃতির নিন্দা জানায় আরাকান আর্মি। তারা নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। এতে ধারণা করা যায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয় স্বীকার করতে বা সমান মর্যাদা দিতে রাজি হবে না, যদি না রোহিঙ্গারা শুধু ‘রাখাইন জনগোষ্ঠী’ হিসেবে নিজেদের আত্মীকরণে রাজি হয়।
বিভ্রান্তিমূলক তৎপরতা
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। একদিকে, তারা কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট শত্রুতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে। এখন তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করেছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অস্বীকার করে।
২০২০ সালে আরাকান আর্মির চিকিৎসা দল কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহায়তা করেছিল। কিছু রোহিঙ্গা নেতা, যেমন ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লার লার মিয়া আরাকান আর্মির শাসন সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো এবং নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ সাক্ষীদের বিবরণে পদ্ধতিগত অগ্নিসংযোগ এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মংডুতে একটি ড্রোন হামলায় পলায়নরত বেশ কয়েক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। যদিও আরাকান আর্মি এ বিষয়ে জান্তাকে দায়ী করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফর্টিফাই রাইটস একইভাবে আরাকান আর্মির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্যাতন। ফলে আরাকান আর্মি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে পারে, সে আস্থা দুর্বল হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের কামানের গোলা বহনকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এদিকে আরসা এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে মৈত্রী করেছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে বুথিডংয়ে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছে।
এতে করে জাতিগত বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে নিয়োগের পর জবাব দিয়েছে। এমনকি আরাকান আর্মি এক্সে পোস্ট করে তারা সেটি জানিয়েছে। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা
এরপরও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলা যাবে না। তবে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করতে সম্মতি হওয়া কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১. রাজনৈতিক বাস্তববাদ: রাখাইন নিয়ন্ত্রণে রেখে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ একটি বহুজাতিগত জনসংখ্যাকে শাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, ফলে রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখার ইউএলএর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা অর্জনের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সিএসআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।
২. আন্তর্জাতিক চাপ: আরাকান আর্মি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি চায়। বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে (যেমন চীনের কিয়াউকফিউ বন্দর) সেটি স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে আইসিসি এবং ২৮টি রোহিঙ্গা সংগঠনের নিন্দা তাদের সেই স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে তারা শুধু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়নি।
৩. জাতিগত পরিচয় এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি: আরাকান আর্মির ‘আরাকান স্বপ্ন’ রাখাইন সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারে তাদের অনীহা ও ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহারে আগ্রহ এবং ত্বান ম্রাত নাইংয়ের বক্তব্য নির্দেশ করে যে তারা প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের সমান অংশীদারত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অধীনতা দাবি করতে পারে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি নয়। এর মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিত্বের প্রতি সীমিত সহনশীলতা প্রকাশ পায়।
৪. বর্তমান মনোভাব: চলতি বছরের প্রথম দিকে এক্সে রাখাইন সংঘাতসংক্রান্ত পোস্টগুলো পরস্পর বিরোধী। কেউ কেউ আরাকান আর্মিকে ইসলামোফোবিয়া এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার কেউ বাংলাদেশের সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির দ্বন্দ্ব মিটমাট করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ চুক্তির কথাও শোনা গেছে। এগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিত্রই উঠে এসেছে।
মোদ্দাকথা হলো, আরাকান আর্মির ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি বা তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সমান অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের শাসনের অধীন বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিতে পারে, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে সীমিত অধিকার দিতেও রাজি হতে পারে। রাখাইনে প্রশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরাকান আর্মির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বক্তব্য-বিবৃতির ভঙ্গি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং শর্তহীনভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা—এসবে স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শাসিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে শর্তাধীন। এর মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় বর্জন অন্যতম।
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড—সামরিক আধিপত্যের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য—শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে তারা এই বিভেদের মনোভাব থেকে সরবে, নাকি বর্জনের নীতিতে অবিচল থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেটিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ বা আরও আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপে তাদের বাধ্য করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরার সৌভাগ্য হবে না!
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এটি বরাবরই তীব্র বিতর্কের বিষয় ছিল। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তৎপরতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
০৫ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে