Ajker Patrika

হাসান আজিজুল হক: স্বার্থহীন সৃষ্টিশীল প্রাণ

নূরুননবী শান্ত
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ০১
হাসান আজিজুল হক: স্বার্থহীন সৃষ্টিশীল প্রাণ

১৯৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিয়েই আবৃত্তি সংগঠন স্বননে সম্পৃক্ত হলাম। ১৯৮১ সালে এই সংগঠনের গোড়াপত্তনের অন্যতম কুশীলব ছিলেন হাসান আজিজুল হক। স্বনন নামটি তাঁরই দেওয়া।

স্বনন সূত্রেই হাসান স্যারের সান্নিধ্য লাভ। মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের ১৩৭ নম্বর কক্ষটি ছিল হাসান স্যারের বসার ঘর। স্বননের প্রধান পুরুষ নাজিম মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর আমরা স্বননের বসার জায়গা হারিয়ে ফেললাম। বিশ্ববিদ্যালয় তখন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসী তৎপরতায় সন্ত্রস্ত। স্বননের কার্যক্রমসহ সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর বিবিধ বাধা আসছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। একপর্যায়ে নিষিদ্ধ হয়ে গেল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। সন্ধ্যার আগেই মেয়েদের হলে ফেরা বাধ্যতামূলক করা হলো। আড্ডা ও গানের শব্দ পেলেই প্রক্টরের বাহিনী এমনকি প্রক্টর নিজেও ধমক ও হুমকি দেওয়া শুরু করলেন। স্বনন বসার জায়গা হারাল। এমনকি আমাদের প্রিয় শিক্ষকগণ কবিতা পড়ার জন্য একটু জায়গা আমাদের দিতে পারছিলেন না ভয়ে। সেই ভীত-সন্ত্রস্ত ক্যাম্পাসে হাসান স্যার তাঁর মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের নিজ কক্ষের একটি চাবি আমাদের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘যত দিন আমি আছি, আমার ঘরে বসবে তোমরা, আমি কাউকে ভয় পাই না।’

কেবল স্বনন নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি থিয়েটার গ্রুপ থেকে শুরু করে সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের অভিভাবক ছিলেন তিনি। সে সময়কার ইসলামী ছাত্র শিবিরের ভয়াবহ হুমকিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরম প্রেরণা হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের। তাঁর বন্ধুদের অনেক সময়ই তাঁর বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করতে দেখেছি। তাঁরা মনে করতেন, হাসান এসব করতে গিয়ে লেখালেখির পেছনে কম সময় দিচ্ছেন! হ্যাঁ, কথা ঠিক। তবে তাঁর পরম বন্ধু নাজিম মাহমুদকে বলতে শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, সে দায়িত্ব থেকে সরে গেছে। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে মানবিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তচিন্তা বিস্তারের বিকল্প প্রতিষ্ঠান করে তুলতে হাসান আজিজুল হক, নাজিম মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম, রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, আলী আনোয়ার, জুলফিকার মতিন, জাহেদুল হক টুকু, সনৎ কুমার সাহা, মলয় ভৌমিক, মোহাম্মদ নাসের প্রমুখ শিক্ষকদের স্বপ্রণোদিত ভূমিকা পালন করতে হয়েছে।

সত্যি বলতে কি হাসান আজিজুল ছিলেন হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর পথ প্রদর্শক। নতুন প্রজন্মকে ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তচিন্তার পথ দেখাতে যত রকম বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন, সব পদ্ধতিই অবলম্বন করেছেন হাসান আজিজুল হক ও তাঁর সতীর্থগণ। তাঁর ডাকনাম ‘কালো’। ওদিকে নাজিম মাহমুদের ডাকনাম ‘আলো’। নাজিম মাহমুদই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খান সারোয়ার মুরশিদকে অনুরোধ করে হাসানকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তত দিনে হাসান তাঁর ‘শকুন’ গল্পের জন্য বিদ্বৎমহলে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া খান সারোয়ার মুরশিদ জানতেন তরুণ হাসানের পাণ্ডিত্য সম্পর্কে। কেননা, খুলনায় হাসান আজিজুল হক, কবি আবুবকর সিদ্দিক, খালেদ রশিদ গুরু, সাধন সরকারসহ এক ঝাঁক যুবক সন্দীপন নামক সংগঠনের মাধ্যমে ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের আগে থেকেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। নাজিম মাহমুদ ও আবুবকর সিদ্দিক আগুনঝরা গান লিখছেন তখন, আর সাধন সরকার সুর করছেন। হাসান আজিজুল হক, খালেদ রশিদ গুরু বলিষ্ঠ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাঙালিকে জাগিয়ে তোলার কাজ করছেন—এসবই জানতেন খান সারোয়ার মুরশিদ। এ রকম মানুষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা মানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আপনা থেকেই কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়া। হাসানকে খুলনার ফুলতলা কলেজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে তিনি আর দেরি করেননি। 

হ্যাঁ, কেবল ঘরে বসে সাহিত্য করে সন্তুষ্ট থাকেননি হাসান স্যার। তিনি সত্যিকারের পরিবর্তন চেয়েছেন। কূপমণ্ডূকতার অবসান ঘটিয়ে মুক্তবুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন। বৈষম্যহীন, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ কর্মসাধনা করে গেছেন। 

একদিন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে দাঁড়িয়ে আছেন হাসান স্যার। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্যার দুজন স্থানীয় ব্যক্তির ঝগড়া শুনছেন ও দেখছেন মন দিয়ে। ঝগড়া করতে করতে তাঁরা পরস্পরকে এমন সব গালি দিচ্ছিলেন যে, স্যারের সামনে লজ্জা পাচ্ছিলাম। স্যার বুঝতে পেরে হাসি হাসি মুখ করে বলেছিলেন, ‘দেখ, মানুষ রেগে গেলে কেমন অঙ্গভঙ্গি করে, গালিগুলো শুনছ তো, আহা, শব্দ তো নয় যেন মুখ থেকে মধু ঝরছে। সবকিছু থেকেই শেখার আছে, বুঝলে!’ বলেই তাঁর আইকনিক হাসি ছড়িয়ে দিলেন কাজলা গেটের ওপারে। স্যারের সঙ্গে এক মিনিট বাক্য বিনিময় করলেও, তা সে যত সিরিয়াস বিষয়েই হোক, তিনি ওইটুকু সময়ের মধ্যে হাসিয়ে ছাড়বেন। অথচ, সাহিত্যে তিনি একেবারেই উল্টো। স্যারের ‘একাত্তর করতলে ছিন্নমাথা’ আমার কাছ থেকে নিয়ে পড়ার পর একবার আমার ক্লাস টেনের এক ছাত্রী বইটা ফেরত দেওয়ার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কান্নার কারণ জানতে চাইলে বলল—এত সুন্দর ভাষায় এমন ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা পড়ে ঠিক থাকতে পারছি না! এই তো হাসান আজিজুল হক।

আমরা অনেকেই জানি না, অনেক বড় মাপের অভিনয় শিল্পী ছিলেন হাসান স্যার। নাটক করেছেন মনোজ মিত্রের, রবীন্দ্রনাথের, নাজিম মাহমুদের। কেবল অভিনয় করেছেন তা নয়, নির্দেশনাও দিয়েছেন। আবৃত্তি করেছেন সাবলীল। নাজিম মাহমুদের চেতনার সৈকতে অ্যালবামে ভূমিকা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন পরম উৎকর্ষের ছাপ। হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে শিখিয়েছেন কীভাবে শব্দ ও বাক্যের অর্থ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে হয়!

হাসান আজিজুল হকের বক্তৃতা যারা একবার হলেও শুনেছেন, তাঁরা জানেন তাঁর কথায় কখনো পাণ্ডিত্যের প্রকাশ ছিল না। আমরা সবাই তাঁর প্রতিটি শব্দ বুঝতাম। সেগুলো এমনই সরস যে, আমরা হাসিতে ফেটে পড়তাম, রাগে জ্বলে উঠতাম। তবে তাঁর বক্তব্যে কোথাও কোনো সস্তা আবেগ ছিল না। হাস্যকৌতুকের উপমায় মৌলবাদীদের পিঠের ওপর শক্ত চাবুক চালাতেন তিনি অকুতোভয় যোদ্ধার মতো। যোদ্ধাই ছিলেন তিনি। কেবল তাঁর কথা শোনার জন্য নিজের ডিপার্টমেন্টের ক্লাস বাদ দিয়ে দর্শনের ক্লাসে গিয়ে বসে থাকতাম। আমাদের সময়ের অনেকেই করত কাজটা।

একবার অধ্যাপক আব্দুল খালেক যখন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খালেক স্যারকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কাজি নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। হাসান আজিজুল হক সে অনুষ্ঠানে বললেন, ‘সবাই স্বপ্ন দেখছেন যে, প্রফেসর আব্দুল খালেক উপাচার্য হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কালাকানুন রাতারাতি পাল্টে যাবে। আমি তেমন সম্ভাবনার ক্ষীণ আলো দেখলেও ততটা আশা করতে পারছি না। যে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা মাপা শুরু হয়েছে, সেটা দিয়েই ওঁকেও (আব্দুল খালেক) মাপামাপি করতে হবে। দাঁড়িপাল্লায় ত্রুটি থাকলে যত সৎ ব্যবসায়ীই হোন, জিনিস ঠিকঠাক মাপতে পারবেন না। দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন।’

খালেক স্যার ও হাসান স্যার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবু ঘনিষ্ঠজনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাই যখন তেলতেলে বক্তব্য দিয়ে হাততালি নিচ্ছিলেন, হাসান আজিজুল হক বেশ কঠোর বার্তাই দিয়েছিলেন সেদিনের নতুন উপাচার্যের বরাবর। তাঁর এসব প্রতিবাদী ও পথনির্দেশনামূলক ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ছুটে যেতেন দেশের যেকোনো জেলা শহরে, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামে, আদিবাসী পল্লিতে—সর্বত্র রয়েছে হাসান স্যারের উদ্দীপনাময় পদচ্ছাপ। কথাসাহিত্যিক হিসেবে হাসান আজিজুল হকের উচ্চতাই শেষ কথা নয়। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হাসান স্যারের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে কয়েক প্রজন্মের মানস গঠনে। মাঝেমধ্যে অবাক লাগত, এই যে এত সব কাজে জড়িয়ে থাকতেন, হই-হুল্লোড়-আড্ডায় মেতে থাকতেন, লিখতেন কখন! গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ছাড়াও তাঁকে লিখতে হতো অসংখ্য স্মরণিকা, লিফলেট, শুভেচ্ছা বার্তা, নতুন লেখকদের বইয়ের ভূমিকা, আরও কত কী, তার হিসেব নেই। এ রকম মানুষ এ দেশে আর কি দ্বিতীয়টি ছিলেন, যিনি রাজধানীর মোহে আকৃষ্ট হননি, অথচ প্রান্তে টেনে নিয়ে গেছেন বৃহত্তর বাংলাকে! বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলার নানা প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে যিনিই গিয়েছেন, তাঁকেই তিনি সময় দিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। বাংলাদেশের প্রথম থিয়েটার ওয়ার্কশপটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় বলেই জানি। সে ওয়ার্কশপের অন্যতম পুরোহিত ছিলেন হাসান স্যার। যত দূর জানা যায়, নাট্যজন মলয় ভৌমিক এবং অনুশীলন নাট্যদল সেই থিয়েটার ওয়ার্কশপেরই ফসল।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর স্যার নিজের বাড়ি তৈরি করলেন শহর থেকে বেশ দূরে, বিহাস আবাসিক এলাকায়। বাড়ির নাম দিলেন উজান। জানতে পেরে কলকাতার বন্ধুরা (সুশীল সাহার উদ্যোগে) উজান নামে একটি স্যুভেনির ছাপিয়ে রাজশাহীতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় কি মহাশ্বেতা দেবী (আজ আর স্পষ্ট মনে করতে পারছি না) লিখেছেন, ‘হাসানের বাড়ি হলো মানে আমাদেরই বাড়ি হলো। আমাদের সবার আশ্রয় হলো!’ সুবিশাল ছিল হাসানের ভালোবাসার পরিসর।

হাসান স্যার নিজের জন্মদিন পালন করতেন না। আমরা একবার জানতে পারলাম (সম্ভবত ১৯৯৪) হাসান স্যারের জন্মদিন ২ ফেব্রুয়ারি। স্বনন আয়োজন করল তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান। সেই প্রথম হাসান স্যারকে দেখলাম স্যুট-টাই পরেছেন। জন্মদিনের বক্তৃতায় নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতে ছাড়লেন না। তিনি জানালেন, তাঁদের একান্নবর্তী পরিবারে জন্মদিন মনে রাখার সংস্কৃতি ছিল না। তাঁর জন্মদিন ২ ফেব্রুয়ারি কি-না, তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে যেহেতু লিখতে হয়, তাই এই তারিখটাকেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। আর বললেন, ডাকনাম ‘কালো’ হলেও গাঁয়ে আমাকে ‘কেলো’ বলে ডাকত।

হাসানের লাখো ভক্তের কাছে একটি সংবাদ অবিদিতই ছিল ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। আর তা হচ্ছে এই যে, তিনি কবিতাও লিখেছেন। ‘ওসব কিছু হয়নি’ বলে কখনো প্রকাশ করেননি। বড় ভাই কবি মোহাম্মদ কামালের সৌজন্যেই সম্ভবত হাসান আজিজুল হকের কবিতার খাতা আমাদের হস্তগত হয়। সরাসরি স্যারের খাতা থেকে আমার ডায়েরিতে একটি কবিতা টুকে রেখেছিলাম। কবিতাটির কোনো শিরোনাম ছিল না। সেই কবিতাটি উদ্ধৃত করছি:

কি কি বদলে নেওয়া যায় না?
আপন জন্ম আর অন্যের যৌবন

কপালের একেবারে ভিতরের দিকে
খোদাই করা খুদে খুদে অক্ষর
দুই চোখের পাশে চামড়ার উপর 
কাকের পায়ের ছাপ
হয়তো আরও আছে
আঁকাবাঁকা আঙুল, ফাটা পায়ের ভিতরে শুকনো হাড়

ফিরে পাওয়া যায় না
মৃত্যুর পরে কাটিয়ে আসা জীবন
ফেরা যায় না উৎস-মুখে—
পাথরে, লবণে, মাটিতে জলের রেখায়

এরা সবই একমুখে বয়ে যায়
শূন্য থেকে শূন্যে।

এই কবিতাকে কি প্রকাশের অযোগ্য বলা সম্ভব! ‘ফিরে পাওয়া যায় না/ মৃত্যুর পরে কাটিয়ে আসা জীবন/ ফেরা যায় না উৎস-মুখে—/ পাথরে, লবণে, মাটিতে জলের রেখায়...।’ ভাবতে হয়। কিন্তু তিনি কবিতা প্রকাশ করার সামান্য উৎসাহও বোধ করেননি। কলকাতায় তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে। সেটি কে তৈরি করেছিলেন ভুলে গেছি। তবে হাসানের জন্মজগৎ চেনার জন্য তথ্যচিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। বাংলাদেশে তা সংরক্ষণ করা আবশ্যক।

হাসান স্যারের সঙ্গে শেষ দেখা করতে গিয়ে কড়া বকা খেয়েছি। আদিবাসীদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সুলতানা কামাল আপাসহ রাজশাহী থেকে ফেরার পথে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। সুলতানা আপাও রাজি হলেন। উজানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি তো আমার ছেলের মতোই, আমার কোনো সমালোচনা করতে হলে সরাসরি আমাকেই বলতে পারতে। অলক্ষ্যে সমালোচনা করা, আর পেছন থেকে ছুরি মারা তো একই কথা।’ আমি লজ্জা পেলাম। আমার মনে পড়ল, প্রথম আলোয় স্যারের একটি গল্প ছাপা হয়েছিল। যেটি গল্পকার হাসানের মানের নয় বলে আমার মনে হয়েছিল। ওনাকে সরাসরি না বলে ফেসবুকে লেখায় স্যার রাগ করেছিলেন। স্যার নিশ্চয় আমাকে ক্ষমা করেছিলেন। চা না খেয়ে তো আসতে দেননি। স্যারের কাছে এই শিক্ষা আমি নিয়েছি—কাউকে যদি কিছু বলার থাকে, সরাসরি তাকে বলাই সংগত।

স্যার, সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করেছে যে, ‘হাসান আজিজুল হক মারা গেছেন’। খুব কান্না পেয়েছে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। হাসান আজিজুল হক মারা যেতে পারেন না। স্বার্থহীন সৃষ্টিশীল প্রাণ অমর। আপনি থাকছেন বাঙালির অন্তরে।

নূরুননবী শান্ত: গল্পকার, অনুবাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার অক্সফোর্ডের বর্ষসেরা শব্দ ‘রেজ বেইট’—এর অর্থ কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।

অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।

‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।

শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।

গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।

এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।

শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।

প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা

১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।

হত্যার নেপথ্যে

১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।

আসল খুনি কে?

লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’

অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।

গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার

মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জল্লাদখানা বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
জল্লাদখানা বধ্যভূমি

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।

স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।

তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত