বিভুরঞ্জন সরকার

হাসান আজিজুল হকের নাম প্রথম কবে শুনেছি কিংবা তাঁর লেখা গল্প প্রথম কবে পড়েছি, তা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে স্কুলের ছাত্র থাকতেই তাঁর গল্প পড়েছি। তিনি একজন বড় মাপের গদ্যকার কিংবা তাঁর কতগুলো বই আছে, গল্প ছাড়া আর কিছু, মানে কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি—এসবও তিনি লেখেন কি না, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করেন, অর্থাৎ তাঁর পেশা কী—এসবের কিছুই না জেনে তাঁর লেখা পড়েছি। প্রথম পাঠেই কেন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা-ও আজ আর বলতে পারব না। হয়তো ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ই প্রথম পড়েছিলাম। স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্রের কাছে কেন গল্পটি ভালো লেগেছিল, তা আর না-ই বা বললাম। ভালো লেগেছিল এবং গল্পটি আমাকে টেনেছিল এবং লেখকের প্রতি তৈরি হয়েছিল এক গভীর আকর্ষণ।
তারপর কত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে ধীরে ধীরে কত কিছু জেনেছি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রাণপুরুষ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ ওখানেই। তারপর ১৯৫৪ সালে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায়। তিনি হয়ে গেলেন আমাদের দেশের মানুষ। তিনি দেশভাগ দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দাঙ্গা দেখেছেন, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা দেখেছেন, মানুষের শক্তি এবং দুর্বলতাও দেখেছেন। সংঘাত দেখেছেন আবার সম্প্রীতিও দেখেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন: ‘দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, তার সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে আমি এখনকার বাংলাদেশে আসি। খুলনায়। কারণ খুবই আপতিক। স্কুল ফাইনাল পাস করার পর কোথাও না কোথাও তো ভর্তি হতে হবে–সেটা বর্ধমান কিংবা মাদ্রাজেও হতে পারত। আমার বেলায় হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায়। বাড়ি থেকে খুব যে একটা দূর, তা-ও নয়। বৃহদায়তন উপমহাদেশ মাথায় রাখলে সত্যি খুব একটা দূরে আমার দেশান্তর ঘটেনি।’
এরপর তিনি বলছেন: ‘দাঙ্গার কথা, কোলকাতার দাঙ্গার কথা, নোয়াখালী-বিহারে সাম্প্রদায়িক হত্যার কাহিনী খুব ছোটবেলায় অল্পবিস্তর শুনেছি বটে–আশেপাশের অঞ্চলে দু-একটি ছোটখাটো দাঙ্গা,খুন–তা-ও দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর। এসবই দেশভাগের তুলনায় মনকে অনেক বেশি গ্রাস করেছিল।’
হাসান আজিজুল হক যখন লিখতে শুরু করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন সব বিষয় গল্পে উঠে আসে, যেগুলো তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমছিল। তিনি বলেছেন, ‘ভাণ্ডার শূন্য থাকলে তো কিছু বের হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে এবং আমি দান করতে চাই–সেটা কি সম্ভব হবে?’ না, তাই তো হাসান আজিজুল হক দুহাতে অবিরল লেখেননি, কম লিখেছেন। তবে যা লিখেছেন, তা-ই মানুষের মনে দাগ কেটেছে, পাঠকের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কাউকে অনুসরণ করেননি, বিশেষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি। নিজেই বলেছেন, লিখতে গিয়ে কোনো সংজ্ঞা মানেননি, তাঁর কোনো দীক্ষাগুরুও ছিল না। নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গদ্যভাষাও যেন কবিতার মতো। কারো কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ভেতরের সুধারস ঠিকই পাঠকের মনকে প্লাবিত করে। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের শুরুটা দেখুন: ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠাণ্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়। অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়। ওদিকে গঞ্জের রাস্তার মোড়ে রাহাত খানের বাড়ির টিনের চাল হিম-ঝকঝক করে একসময় কানুর মায়ের কুঁড়েঘরের পৈঠায় সামনের পা তুলে দিয়ে শিয়াল ডেকে ওঠে।’ এমন গদ্য কবিতার চেয়ে কম কিসে! তিনি গদ্যের জন্য তাঁর মতো করে ভাষা নির্মাণ করেছেন। বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে কিছুই হওয়ার নয়। ভাষা হচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতের মতো, ভেতর থেকে বদলে যাবে। মনে রাখতে হবে, এ হচ্ছে জীবনের রসায়ন, যন্ত্রের ফ্যাক্টরি নয়।’
হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘তাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সেই দৃষ্টি শাণিত হয়েছিল তাঁর বামপন্থী বোধের দ্বারা।' তিনি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন? আমি সঠিক জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়া যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা প্রয়াত অনিল মুখার্জি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘শুধু মিছিল-মিটিং করলে, স্লোগান দিলেই কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। তিনিই কমিউনিস্ট যিনি ভালো মানুষ, যে কাজ করেন, তা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে করেন এবং যিনি শুধু নিজের কথা না ভেবে সমষ্টির কথা ভাবেন।’
অনিল মুখার্জির সংজ্ঞা অনুযায়ী হাসান আজিজুল হক অবশ্যই কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সেরাদের মধ্যে সেরা।
তাঁর মতো মুক্ত মনের উদার মানুষ আর কজন আছেন আমাদের দেশে? বড় মানুষের একটি বড় গুণ হলো, তাঁরা কাউকে উপেক্ষা করেন না। অতি উঁচু মাপের ও মনের মানুষ বলেই হাসান আজিজুল হক বরাবর সেই মানুষের জয়গান গেয়েছেন, যাঁরা অক্ষর না চিনলেও আলো মাটি আকাশ নক্ষত্র নদী জল চেনেন।
তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কখনো নিজেকে ‘এলিট শ্রেণির’ প্রতিনিধি ভাবতেন না। চলনে-বলনে সাদাসিধে ছিলেন। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি লিখেছেনও মূলত প্রান্তিক মানুষের কথাই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পশ্চিমের স্বাধীন বুর্জোয়া সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে না গিয়ে তাকে পুরোপুরি ডিঙ্গিয়ে এসে উপনিবেশ এবং তাঁবেদার সামন্ত শ্রেণিভুক্ত হয়ে আজ এই এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এক রকম ভালো অর্থে বলছি, শুয়োরের মতো। শুয়োর দেখে কেউ একজন নাকি জিজ্ঞেস করেছিল–একি ইঁদুর বড় হয়ে হয়ে হয়েছে, নাকি হাতি ছোট হয়ে হয়ে হয়েছে?’
সত্য উচ্চারণে এমন অকপট ও সাহসী ছিলেন হাসান আজিজুল হক।
নিজে যে বাম চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয় তাঁর এই কথায়, ‘পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি সর্বেসর্বা। সমাজের ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায় ব্যক্তির কাছে।’ সেজন্য তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির দ্রোহকে উজ্জ্বল করে এঁকেছেন। কিছু একটা পাল্টাতে গেলে একা পারা যায় না, সমষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত গণতন্ত্র নিয়ে যে তাঁর খুব উচ্ছ্বাস ছিল তা নয়। বরং তিনি বলেছেন, ‘৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর পাঁচ বছর করে গণতন্ত্র কুক্ষিগত হয়।’
আবার মার্কসবাদী দর্শন নিয়েও তিনি বড় আশাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেছেন: ‘আমি মনে করি, মার্কসবাদ নিয়ে এদেশে স্তুতি অথবা নিন্দা–এই দুটি অনর্গল আউড়ে যাওয়া প্রায় একমাত্র কাজ, যা আমরা করতে পেরেছি। এতে মার্কসবাদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে, কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও ক্ষতি হয়েছে। দীক্ষিতদের জন্য মার্কসবাদ শাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, অদীক্ষিতদের জন্য অস্পৃশ্য ব্যাপার। মূল্যায়ন করার কাজ অবশ্যই করা উচিত–যেহেতু মার্কসীয় দর্শন মৃত নয়, কেবলমাত্র দর্শনও নয়।’
হাসান আজিজুল হক আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন আমার মতো আরও অনেকের জীবনপাঠের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও অন্তত বার চারেক বেশ সময় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। তিনি ছিলেন ভালো কথক। এত সুন্দর করে কথা বলতেন, শুনতেও ভালো লাগত। পাণ্ডিত্য ফলাতেন না, কিন্তু আলাভোলার মতো এমন সব কথা বলতেন, যা সচরাচর অনেক পণ্ডিতের মুখ থেকেও বের হওয়া সহজ নয়।
তিনি জানতেন, আমি রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। তাই রাজনৈতিক আলোচনাই করতেন আমার সঙ্গে। বছর কয়েক আগে এক অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি—আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি শুরু করেন, ‘মানুষ পেছনে হাঁটতে পারে না। হাঁটতে হয় সামনের দিকেই। অবশ্য সদরঘাটে যাওয়ার পথে কেউ গুলিস্তানে ঘুরপাক খায় না, তা তো নয়। ক্রমাগত হারানো এবং ক্রমাগত পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যে অর্জন, তা অবিনাশী। তবে হারানোকে বড় করে দেখা আর পাওয়াকে ছোট করে দেখা মানুষের সহজাত প্রবণতা। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গেলে যে মাছটা ধরা যায় না, তাকে বড়ই মনে হয়। আর যেটা বড়শিতে ধরা পড়ে, সেটা ছোট মনে হয়। আমাদের এই জীবনকালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য আকাশতুল্য অর্জন। আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার থেকে ক্রমাগত সরে যেতে দেখাটাও কম বেদনার নয়। এটা অবশ্য রাষ্ট্রের দোষ নয়। দোষ সেই মানুষদের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পায় বা নেয়।’
আমার জন্য এটা খুবই কষ্টের যে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই তিনি গত ১৫ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে।
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়ার বাইরেও তিনি তাঁদের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শিল্প-সাহিত্যের সৃজনভুবনে অসংখ্য তরুণের উৎসাহী পদচারণাকে তিনি উৎসাহিত করতেন। একা নয়, অনেকে মিলে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় তিনি কত সময় যে ব্যয় করেছেন! একে তিনি অপচয় মনে করতেন না, মনে করতেন বিনিয়োগ।
এর বাইরে তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কারো কারো মতো তিনি অনেক লেখেননি, এক বসায় তিনি কয়েক হাজার শব্দের মালা গেঁথে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাননি। তিনি অল্প লিখেছেন, তবে যা লিখেছেন তা বোদ্ধা পাঠকদের মনে নাড়া দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে ভাবনার কেন্দ্রে। তিনি দেখেছেন অনেক, ভেবেছেন তার চেয়ে বেশি। আর লিখেছেন তার তুলনায় কম।
তবে হাসান আজিজুল হক একজনই । তিনি ছিলেন মুক্তমনের মুক্তচিন্তার মানুষ। আড়াল পছন্দ করতেন না। খোলা মনের এই মানুষটি যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু পেয়েছেন? তিনি রাজধানীবাসী হননি। কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই কি পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন? তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উজান’। উজানস্রোতে দাড় টানতে হয়েছে বলেই কি? রাজশাহীতে বাড়ি করার সময় তিনি স্থপতিকে বলেছিলেন, ‘নেহাত দেয়াল না দিলে তো ঘর হয় না। কাজেই দেয়াল আপনি দেন–আপত্তি করব না, তবে যত কম পারেন।’
হাসান আজিজুল হককে বিস্মৃতির দেয়ালে চাপা দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা যেন কাউকে পেয়ে না বসে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

হাসান আজিজুল হকের নাম প্রথম কবে শুনেছি কিংবা তাঁর লেখা গল্প প্রথম কবে পড়েছি, তা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে স্কুলের ছাত্র থাকতেই তাঁর গল্প পড়েছি। তিনি একজন বড় মাপের গদ্যকার কিংবা তাঁর কতগুলো বই আছে, গল্প ছাড়া আর কিছু, মানে কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি—এসবও তিনি লেখেন কি না, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করেন, অর্থাৎ তাঁর পেশা কী—এসবের কিছুই না জেনে তাঁর লেখা পড়েছি। প্রথম পাঠেই কেন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা-ও আজ আর বলতে পারব না। হয়তো ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ই প্রথম পড়েছিলাম। স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্রের কাছে কেন গল্পটি ভালো লেগেছিল, তা আর না-ই বা বললাম। ভালো লেগেছিল এবং গল্পটি আমাকে টেনেছিল এবং লেখকের প্রতি তৈরি হয়েছিল এক গভীর আকর্ষণ।
তারপর কত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে ধীরে ধীরে কত কিছু জেনেছি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রাণপুরুষ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ ওখানেই। তারপর ১৯৫৪ সালে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায়। তিনি হয়ে গেলেন আমাদের দেশের মানুষ। তিনি দেশভাগ দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দাঙ্গা দেখেছেন, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা দেখেছেন, মানুষের শক্তি এবং দুর্বলতাও দেখেছেন। সংঘাত দেখেছেন আবার সম্প্রীতিও দেখেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন: ‘দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, তার সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে আমি এখনকার বাংলাদেশে আসি। খুলনায়। কারণ খুবই আপতিক। স্কুল ফাইনাল পাস করার পর কোথাও না কোথাও তো ভর্তি হতে হবে–সেটা বর্ধমান কিংবা মাদ্রাজেও হতে পারত। আমার বেলায় হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায়। বাড়ি থেকে খুব যে একটা দূর, তা-ও নয়। বৃহদায়তন উপমহাদেশ মাথায় রাখলে সত্যি খুব একটা দূরে আমার দেশান্তর ঘটেনি।’
এরপর তিনি বলছেন: ‘দাঙ্গার কথা, কোলকাতার দাঙ্গার কথা, নোয়াখালী-বিহারে সাম্প্রদায়িক হত্যার কাহিনী খুব ছোটবেলায় অল্পবিস্তর শুনেছি বটে–আশেপাশের অঞ্চলে দু-একটি ছোটখাটো দাঙ্গা,খুন–তা-ও দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর। এসবই দেশভাগের তুলনায় মনকে অনেক বেশি গ্রাস করেছিল।’
হাসান আজিজুল হক যখন লিখতে শুরু করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন সব বিষয় গল্পে উঠে আসে, যেগুলো তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমছিল। তিনি বলেছেন, ‘ভাণ্ডার শূন্য থাকলে তো কিছু বের হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে এবং আমি দান করতে চাই–সেটা কি সম্ভব হবে?’ না, তাই তো হাসান আজিজুল হক দুহাতে অবিরল লেখেননি, কম লিখেছেন। তবে যা লিখেছেন, তা-ই মানুষের মনে দাগ কেটেছে, পাঠকের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কাউকে অনুসরণ করেননি, বিশেষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি। নিজেই বলেছেন, লিখতে গিয়ে কোনো সংজ্ঞা মানেননি, তাঁর কোনো দীক্ষাগুরুও ছিল না। নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গদ্যভাষাও যেন কবিতার মতো। কারো কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ভেতরের সুধারস ঠিকই পাঠকের মনকে প্লাবিত করে। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের শুরুটা দেখুন: ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠাণ্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়। অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়। ওদিকে গঞ্জের রাস্তার মোড়ে রাহাত খানের বাড়ির টিনের চাল হিম-ঝকঝক করে একসময় কানুর মায়ের কুঁড়েঘরের পৈঠায় সামনের পা তুলে দিয়ে শিয়াল ডেকে ওঠে।’ এমন গদ্য কবিতার চেয়ে কম কিসে! তিনি গদ্যের জন্য তাঁর মতো করে ভাষা নির্মাণ করেছেন। বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে কিছুই হওয়ার নয়। ভাষা হচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতের মতো, ভেতর থেকে বদলে যাবে। মনে রাখতে হবে, এ হচ্ছে জীবনের রসায়ন, যন্ত্রের ফ্যাক্টরি নয়।’
হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘তাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সেই দৃষ্টি শাণিত হয়েছিল তাঁর বামপন্থী বোধের দ্বারা।' তিনি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন? আমি সঠিক জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়া যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা প্রয়াত অনিল মুখার্জি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘শুধু মিছিল-মিটিং করলে, স্লোগান দিলেই কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। তিনিই কমিউনিস্ট যিনি ভালো মানুষ, যে কাজ করেন, তা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে করেন এবং যিনি শুধু নিজের কথা না ভেবে সমষ্টির কথা ভাবেন।’
অনিল মুখার্জির সংজ্ঞা অনুযায়ী হাসান আজিজুল হক অবশ্যই কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সেরাদের মধ্যে সেরা।
তাঁর মতো মুক্ত মনের উদার মানুষ আর কজন আছেন আমাদের দেশে? বড় মানুষের একটি বড় গুণ হলো, তাঁরা কাউকে উপেক্ষা করেন না। অতি উঁচু মাপের ও মনের মানুষ বলেই হাসান আজিজুল হক বরাবর সেই মানুষের জয়গান গেয়েছেন, যাঁরা অক্ষর না চিনলেও আলো মাটি আকাশ নক্ষত্র নদী জল চেনেন।
তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কখনো নিজেকে ‘এলিট শ্রেণির’ প্রতিনিধি ভাবতেন না। চলনে-বলনে সাদাসিধে ছিলেন। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি লিখেছেনও মূলত প্রান্তিক মানুষের কথাই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পশ্চিমের স্বাধীন বুর্জোয়া সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে না গিয়ে তাকে পুরোপুরি ডিঙ্গিয়ে এসে উপনিবেশ এবং তাঁবেদার সামন্ত শ্রেণিভুক্ত হয়ে আজ এই এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এক রকম ভালো অর্থে বলছি, শুয়োরের মতো। শুয়োর দেখে কেউ একজন নাকি জিজ্ঞেস করেছিল–একি ইঁদুর বড় হয়ে হয়ে হয়েছে, নাকি হাতি ছোট হয়ে হয়ে হয়েছে?’
সত্য উচ্চারণে এমন অকপট ও সাহসী ছিলেন হাসান আজিজুল হক।
নিজে যে বাম চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয় তাঁর এই কথায়, ‘পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি সর্বেসর্বা। সমাজের ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায় ব্যক্তির কাছে।’ সেজন্য তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির দ্রোহকে উজ্জ্বল করে এঁকেছেন। কিছু একটা পাল্টাতে গেলে একা পারা যায় না, সমষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত গণতন্ত্র নিয়ে যে তাঁর খুব উচ্ছ্বাস ছিল তা নয়। বরং তিনি বলেছেন, ‘৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর পাঁচ বছর করে গণতন্ত্র কুক্ষিগত হয়।’
আবার মার্কসবাদী দর্শন নিয়েও তিনি বড় আশাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেছেন: ‘আমি মনে করি, মার্কসবাদ নিয়ে এদেশে স্তুতি অথবা নিন্দা–এই দুটি অনর্গল আউড়ে যাওয়া প্রায় একমাত্র কাজ, যা আমরা করতে পেরেছি। এতে মার্কসবাদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে, কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও ক্ষতি হয়েছে। দীক্ষিতদের জন্য মার্কসবাদ শাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, অদীক্ষিতদের জন্য অস্পৃশ্য ব্যাপার। মূল্যায়ন করার কাজ অবশ্যই করা উচিত–যেহেতু মার্কসীয় দর্শন মৃত নয়, কেবলমাত্র দর্শনও নয়।’
হাসান আজিজুল হক আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন আমার মতো আরও অনেকের জীবনপাঠের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও অন্তত বার চারেক বেশ সময় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। তিনি ছিলেন ভালো কথক। এত সুন্দর করে কথা বলতেন, শুনতেও ভালো লাগত। পাণ্ডিত্য ফলাতেন না, কিন্তু আলাভোলার মতো এমন সব কথা বলতেন, যা সচরাচর অনেক পণ্ডিতের মুখ থেকেও বের হওয়া সহজ নয়।
তিনি জানতেন, আমি রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। তাই রাজনৈতিক আলোচনাই করতেন আমার সঙ্গে। বছর কয়েক আগে এক অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি—আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি শুরু করেন, ‘মানুষ পেছনে হাঁটতে পারে না। হাঁটতে হয় সামনের দিকেই। অবশ্য সদরঘাটে যাওয়ার পথে কেউ গুলিস্তানে ঘুরপাক খায় না, তা তো নয়। ক্রমাগত হারানো এবং ক্রমাগত পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যে অর্জন, তা অবিনাশী। তবে হারানোকে বড় করে দেখা আর পাওয়াকে ছোট করে দেখা মানুষের সহজাত প্রবণতা। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গেলে যে মাছটা ধরা যায় না, তাকে বড়ই মনে হয়। আর যেটা বড়শিতে ধরা পড়ে, সেটা ছোট মনে হয়। আমাদের এই জীবনকালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য আকাশতুল্য অর্জন। আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার থেকে ক্রমাগত সরে যেতে দেখাটাও কম বেদনার নয়। এটা অবশ্য রাষ্ট্রের দোষ নয়। দোষ সেই মানুষদের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পায় বা নেয়।’
আমার জন্য এটা খুবই কষ্টের যে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই তিনি গত ১৫ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে।
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়ার বাইরেও তিনি তাঁদের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শিল্প-সাহিত্যের সৃজনভুবনে অসংখ্য তরুণের উৎসাহী পদচারণাকে তিনি উৎসাহিত করতেন। একা নয়, অনেকে মিলে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় তিনি কত সময় যে ব্যয় করেছেন! একে তিনি অপচয় মনে করতেন না, মনে করতেন বিনিয়োগ।
এর বাইরে তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কারো কারো মতো তিনি অনেক লেখেননি, এক বসায় তিনি কয়েক হাজার শব্দের মালা গেঁথে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাননি। তিনি অল্প লিখেছেন, তবে যা লিখেছেন তা বোদ্ধা পাঠকদের মনে নাড়া দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে ভাবনার কেন্দ্রে। তিনি দেখেছেন অনেক, ভেবেছেন তার চেয়ে বেশি। আর লিখেছেন তার তুলনায় কম।
তবে হাসান আজিজুল হক একজনই । তিনি ছিলেন মুক্তমনের মুক্তচিন্তার মানুষ। আড়াল পছন্দ করতেন না। খোলা মনের এই মানুষটি যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু পেয়েছেন? তিনি রাজধানীবাসী হননি। কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই কি পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন? তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উজান’। উজানস্রোতে দাড় টানতে হয়েছে বলেই কি? রাজশাহীতে বাড়ি করার সময় তিনি স্থপতিকে বলেছিলেন, ‘নেহাত দেয়াল না দিলে তো ঘর হয় না। কাজেই দেয়াল আপনি দেন–আপত্তি করব না, তবে যত কম পারেন।’
হাসান আজিজুল হককে বিস্মৃতির দেয়ালে চাপা দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা যেন কাউকে পেয়ে না বসে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিভুরঞ্জন সরকার

হাসান আজিজুল হকের নাম প্রথম কবে শুনেছি কিংবা তাঁর লেখা গল্প প্রথম কবে পড়েছি, তা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে স্কুলের ছাত্র থাকতেই তাঁর গল্প পড়েছি। তিনি একজন বড় মাপের গদ্যকার কিংবা তাঁর কতগুলো বই আছে, গল্প ছাড়া আর কিছু, মানে কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি—এসবও তিনি লেখেন কি না, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করেন, অর্থাৎ তাঁর পেশা কী—এসবের কিছুই না জেনে তাঁর লেখা পড়েছি। প্রথম পাঠেই কেন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা-ও আজ আর বলতে পারব না। হয়তো ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ই প্রথম পড়েছিলাম। স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্রের কাছে কেন গল্পটি ভালো লেগেছিল, তা আর না-ই বা বললাম। ভালো লেগেছিল এবং গল্পটি আমাকে টেনেছিল এবং লেখকের প্রতি তৈরি হয়েছিল এক গভীর আকর্ষণ।
তারপর কত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে ধীরে ধীরে কত কিছু জেনেছি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রাণপুরুষ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ ওখানেই। তারপর ১৯৫৪ সালে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায়। তিনি হয়ে গেলেন আমাদের দেশের মানুষ। তিনি দেশভাগ দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দাঙ্গা দেখেছেন, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা দেখেছেন, মানুষের শক্তি এবং দুর্বলতাও দেখেছেন। সংঘাত দেখেছেন আবার সম্প্রীতিও দেখেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন: ‘দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, তার সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে আমি এখনকার বাংলাদেশে আসি। খুলনায়। কারণ খুবই আপতিক। স্কুল ফাইনাল পাস করার পর কোথাও না কোথাও তো ভর্তি হতে হবে–সেটা বর্ধমান কিংবা মাদ্রাজেও হতে পারত। আমার বেলায় হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায়। বাড়ি থেকে খুব যে একটা দূর, তা-ও নয়। বৃহদায়তন উপমহাদেশ মাথায় রাখলে সত্যি খুব একটা দূরে আমার দেশান্তর ঘটেনি।’
এরপর তিনি বলছেন: ‘দাঙ্গার কথা, কোলকাতার দাঙ্গার কথা, নোয়াখালী-বিহারে সাম্প্রদায়িক হত্যার কাহিনী খুব ছোটবেলায় অল্পবিস্তর শুনেছি বটে–আশেপাশের অঞ্চলে দু-একটি ছোটখাটো দাঙ্গা,খুন–তা-ও দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর। এসবই দেশভাগের তুলনায় মনকে অনেক বেশি গ্রাস করেছিল।’
হাসান আজিজুল হক যখন লিখতে শুরু করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন সব বিষয় গল্পে উঠে আসে, যেগুলো তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমছিল। তিনি বলেছেন, ‘ভাণ্ডার শূন্য থাকলে তো কিছু বের হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে এবং আমি দান করতে চাই–সেটা কি সম্ভব হবে?’ না, তাই তো হাসান আজিজুল হক দুহাতে অবিরল লেখেননি, কম লিখেছেন। তবে যা লিখেছেন, তা-ই মানুষের মনে দাগ কেটেছে, পাঠকের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কাউকে অনুসরণ করেননি, বিশেষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি। নিজেই বলেছেন, লিখতে গিয়ে কোনো সংজ্ঞা মানেননি, তাঁর কোনো দীক্ষাগুরুও ছিল না। নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গদ্যভাষাও যেন কবিতার মতো। কারো কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ভেতরের সুধারস ঠিকই পাঠকের মনকে প্লাবিত করে। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের শুরুটা দেখুন: ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠাণ্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়। অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়। ওদিকে গঞ্জের রাস্তার মোড়ে রাহাত খানের বাড়ির টিনের চাল হিম-ঝকঝক করে একসময় কানুর মায়ের কুঁড়েঘরের পৈঠায় সামনের পা তুলে দিয়ে শিয়াল ডেকে ওঠে।’ এমন গদ্য কবিতার চেয়ে কম কিসে! তিনি গদ্যের জন্য তাঁর মতো করে ভাষা নির্মাণ করেছেন। বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে কিছুই হওয়ার নয়। ভাষা হচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতের মতো, ভেতর থেকে বদলে যাবে। মনে রাখতে হবে, এ হচ্ছে জীবনের রসায়ন, যন্ত্রের ফ্যাক্টরি নয়।’
হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘তাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সেই দৃষ্টি শাণিত হয়েছিল তাঁর বামপন্থী বোধের দ্বারা।' তিনি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন? আমি সঠিক জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়া যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা প্রয়াত অনিল মুখার্জি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘শুধু মিছিল-মিটিং করলে, স্লোগান দিলেই কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। তিনিই কমিউনিস্ট যিনি ভালো মানুষ, যে কাজ করেন, তা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে করেন এবং যিনি শুধু নিজের কথা না ভেবে সমষ্টির কথা ভাবেন।’
অনিল মুখার্জির সংজ্ঞা অনুযায়ী হাসান আজিজুল হক অবশ্যই কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সেরাদের মধ্যে সেরা।
তাঁর মতো মুক্ত মনের উদার মানুষ আর কজন আছেন আমাদের দেশে? বড় মানুষের একটি বড় গুণ হলো, তাঁরা কাউকে উপেক্ষা করেন না। অতি উঁচু মাপের ও মনের মানুষ বলেই হাসান আজিজুল হক বরাবর সেই মানুষের জয়গান গেয়েছেন, যাঁরা অক্ষর না চিনলেও আলো মাটি আকাশ নক্ষত্র নদী জল চেনেন।
তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কখনো নিজেকে ‘এলিট শ্রেণির’ প্রতিনিধি ভাবতেন না। চলনে-বলনে সাদাসিধে ছিলেন। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি লিখেছেনও মূলত প্রান্তিক মানুষের কথাই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পশ্চিমের স্বাধীন বুর্জোয়া সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে না গিয়ে তাকে পুরোপুরি ডিঙ্গিয়ে এসে উপনিবেশ এবং তাঁবেদার সামন্ত শ্রেণিভুক্ত হয়ে আজ এই এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এক রকম ভালো অর্থে বলছি, শুয়োরের মতো। শুয়োর দেখে কেউ একজন নাকি জিজ্ঞেস করেছিল–একি ইঁদুর বড় হয়ে হয়ে হয়েছে, নাকি হাতি ছোট হয়ে হয়ে হয়েছে?’
সত্য উচ্চারণে এমন অকপট ও সাহসী ছিলেন হাসান আজিজুল হক।
নিজে যে বাম চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয় তাঁর এই কথায়, ‘পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি সর্বেসর্বা। সমাজের ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায় ব্যক্তির কাছে।’ সেজন্য তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির দ্রোহকে উজ্জ্বল করে এঁকেছেন। কিছু একটা পাল্টাতে গেলে একা পারা যায় না, সমষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত গণতন্ত্র নিয়ে যে তাঁর খুব উচ্ছ্বাস ছিল তা নয়। বরং তিনি বলেছেন, ‘৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর পাঁচ বছর করে গণতন্ত্র কুক্ষিগত হয়।’
আবার মার্কসবাদী দর্শন নিয়েও তিনি বড় আশাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেছেন: ‘আমি মনে করি, মার্কসবাদ নিয়ে এদেশে স্তুতি অথবা নিন্দা–এই দুটি অনর্গল আউড়ে যাওয়া প্রায় একমাত্র কাজ, যা আমরা করতে পেরেছি। এতে মার্কসবাদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে, কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও ক্ষতি হয়েছে। দীক্ষিতদের জন্য মার্কসবাদ শাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, অদীক্ষিতদের জন্য অস্পৃশ্য ব্যাপার। মূল্যায়ন করার কাজ অবশ্যই করা উচিত–যেহেতু মার্কসীয় দর্শন মৃত নয়, কেবলমাত্র দর্শনও নয়।’
হাসান আজিজুল হক আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন আমার মতো আরও অনেকের জীবনপাঠের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও অন্তত বার চারেক বেশ সময় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। তিনি ছিলেন ভালো কথক। এত সুন্দর করে কথা বলতেন, শুনতেও ভালো লাগত। পাণ্ডিত্য ফলাতেন না, কিন্তু আলাভোলার মতো এমন সব কথা বলতেন, যা সচরাচর অনেক পণ্ডিতের মুখ থেকেও বের হওয়া সহজ নয়।
তিনি জানতেন, আমি রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। তাই রাজনৈতিক আলোচনাই করতেন আমার সঙ্গে। বছর কয়েক আগে এক অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি—আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি শুরু করেন, ‘মানুষ পেছনে হাঁটতে পারে না। হাঁটতে হয় সামনের দিকেই। অবশ্য সদরঘাটে যাওয়ার পথে কেউ গুলিস্তানে ঘুরপাক খায় না, তা তো নয়। ক্রমাগত হারানো এবং ক্রমাগত পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যে অর্জন, তা অবিনাশী। তবে হারানোকে বড় করে দেখা আর পাওয়াকে ছোট করে দেখা মানুষের সহজাত প্রবণতা। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গেলে যে মাছটা ধরা যায় না, তাকে বড়ই মনে হয়। আর যেটা বড়শিতে ধরা পড়ে, সেটা ছোট মনে হয়। আমাদের এই জীবনকালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য আকাশতুল্য অর্জন। আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার থেকে ক্রমাগত সরে যেতে দেখাটাও কম বেদনার নয়। এটা অবশ্য রাষ্ট্রের দোষ নয়। দোষ সেই মানুষদের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পায় বা নেয়।’
আমার জন্য এটা খুবই কষ্টের যে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই তিনি গত ১৫ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে।
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়ার বাইরেও তিনি তাঁদের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শিল্প-সাহিত্যের সৃজনভুবনে অসংখ্য তরুণের উৎসাহী পদচারণাকে তিনি উৎসাহিত করতেন। একা নয়, অনেকে মিলে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় তিনি কত সময় যে ব্যয় করেছেন! একে তিনি অপচয় মনে করতেন না, মনে করতেন বিনিয়োগ।
এর বাইরে তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কারো কারো মতো তিনি অনেক লেখেননি, এক বসায় তিনি কয়েক হাজার শব্দের মালা গেঁথে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাননি। তিনি অল্প লিখেছেন, তবে যা লিখেছেন তা বোদ্ধা পাঠকদের মনে নাড়া দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে ভাবনার কেন্দ্রে। তিনি দেখেছেন অনেক, ভেবেছেন তার চেয়ে বেশি। আর লিখেছেন তার তুলনায় কম।
তবে হাসান আজিজুল হক একজনই । তিনি ছিলেন মুক্তমনের মুক্তচিন্তার মানুষ। আড়াল পছন্দ করতেন না। খোলা মনের এই মানুষটি যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু পেয়েছেন? তিনি রাজধানীবাসী হননি। কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই কি পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন? তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উজান’। উজানস্রোতে দাড় টানতে হয়েছে বলেই কি? রাজশাহীতে বাড়ি করার সময় তিনি স্থপতিকে বলেছিলেন, ‘নেহাত দেয়াল না দিলে তো ঘর হয় না। কাজেই দেয়াল আপনি দেন–আপত্তি করব না, তবে যত কম পারেন।’
হাসান আজিজুল হককে বিস্মৃতির দেয়ালে চাপা দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা যেন কাউকে পেয়ে না বসে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

হাসান আজিজুল হকের নাম প্রথম কবে শুনেছি কিংবা তাঁর লেখা গল্প প্রথম কবে পড়েছি, তা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে স্কুলের ছাত্র থাকতেই তাঁর গল্প পড়েছি। তিনি একজন বড় মাপের গদ্যকার কিংবা তাঁর কতগুলো বই আছে, গল্প ছাড়া আর কিছু, মানে কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি—এসবও তিনি লেখেন কি না, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করেন, অর্থাৎ তাঁর পেশা কী—এসবের কিছুই না জেনে তাঁর লেখা পড়েছি। প্রথম পাঠেই কেন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা-ও আজ আর বলতে পারব না। হয়তো ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ই প্রথম পড়েছিলাম। স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্রের কাছে কেন গল্পটি ভালো লেগেছিল, তা আর না-ই বা বললাম। ভালো লেগেছিল এবং গল্পটি আমাকে টেনেছিল এবং লেখকের প্রতি তৈরি হয়েছিল এক গভীর আকর্ষণ।
তারপর কত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে ধীরে ধীরে কত কিছু জেনেছি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রাণপুরুষ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ ওখানেই। তারপর ১৯৫৪ সালে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায়। তিনি হয়ে গেলেন আমাদের দেশের মানুষ। তিনি দেশভাগ দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দাঙ্গা দেখেছেন, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা দেখেছেন, মানুষের শক্তি এবং দুর্বলতাও দেখেছেন। সংঘাত দেখেছেন আবার সম্প্রীতিও দেখেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন: ‘দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, তার সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে আমি এখনকার বাংলাদেশে আসি। খুলনায়। কারণ খুবই আপতিক। স্কুল ফাইনাল পাস করার পর কোথাও না কোথাও তো ভর্তি হতে হবে–সেটা বর্ধমান কিংবা মাদ্রাজেও হতে পারত। আমার বেলায় হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায়। বাড়ি থেকে খুব যে একটা দূর, তা-ও নয়। বৃহদায়তন উপমহাদেশ মাথায় রাখলে সত্যি খুব একটা দূরে আমার দেশান্তর ঘটেনি।’
এরপর তিনি বলছেন: ‘দাঙ্গার কথা, কোলকাতার দাঙ্গার কথা, নোয়াখালী-বিহারে সাম্প্রদায়িক হত্যার কাহিনী খুব ছোটবেলায় অল্পবিস্তর শুনেছি বটে–আশেপাশের অঞ্চলে দু-একটি ছোটখাটো দাঙ্গা,খুন–তা-ও দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর। এসবই দেশভাগের তুলনায় মনকে অনেক বেশি গ্রাস করেছিল।’
হাসান আজিজুল হক যখন লিখতে শুরু করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন সব বিষয় গল্পে উঠে আসে, যেগুলো তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমছিল। তিনি বলেছেন, ‘ভাণ্ডার শূন্য থাকলে তো কিছু বের হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে এবং আমি দান করতে চাই–সেটা কি সম্ভব হবে?’ না, তাই তো হাসান আজিজুল হক দুহাতে অবিরল লেখেননি, কম লিখেছেন। তবে যা লিখেছেন, তা-ই মানুষের মনে দাগ কেটেছে, পাঠকের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কাউকে অনুসরণ করেননি, বিশেষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি। নিজেই বলেছেন, লিখতে গিয়ে কোনো সংজ্ঞা মানেননি, তাঁর কোনো দীক্ষাগুরুও ছিল না। নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গদ্যভাষাও যেন কবিতার মতো। কারো কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ভেতরের সুধারস ঠিকই পাঠকের মনকে প্লাবিত করে। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের শুরুটা দেখুন: ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠাণ্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়। অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়। ওদিকে গঞ্জের রাস্তার মোড়ে রাহাত খানের বাড়ির টিনের চাল হিম-ঝকঝক করে একসময় কানুর মায়ের কুঁড়েঘরের পৈঠায় সামনের পা তুলে দিয়ে শিয়াল ডেকে ওঠে।’ এমন গদ্য কবিতার চেয়ে কম কিসে! তিনি গদ্যের জন্য তাঁর মতো করে ভাষা নির্মাণ করেছেন। বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে কিছুই হওয়ার নয়। ভাষা হচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতের মতো, ভেতর থেকে বদলে যাবে। মনে রাখতে হবে, এ হচ্ছে জীবনের রসায়ন, যন্ত্রের ফ্যাক্টরি নয়।’
হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘তাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সেই দৃষ্টি শাণিত হয়েছিল তাঁর বামপন্থী বোধের দ্বারা।' তিনি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন? আমি সঠিক জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়া যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা প্রয়াত অনিল মুখার্জি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘শুধু মিছিল-মিটিং করলে, স্লোগান দিলেই কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। তিনিই কমিউনিস্ট যিনি ভালো মানুষ, যে কাজ করেন, তা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে করেন এবং যিনি শুধু নিজের কথা না ভেবে সমষ্টির কথা ভাবেন।’
অনিল মুখার্জির সংজ্ঞা অনুযায়ী হাসান আজিজুল হক অবশ্যই কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সেরাদের মধ্যে সেরা।
তাঁর মতো মুক্ত মনের উদার মানুষ আর কজন আছেন আমাদের দেশে? বড় মানুষের একটি বড় গুণ হলো, তাঁরা কাউকে উপেক্ষা করেন না। অতি উঁচু মাপের ও মনের মানুষ বলেই হাসান আজিজুল হক বরাবর সেই মানুষের জয়গান গেয়েছেন, যাঁরা অক্ষর না চিনলেও আলো মাটি আকাশ নক্ষত্র নদী জল চেনেন।
তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কখনো নিজেকে ‘এলিট শ্রেণির’ প্রতিনিধি ভাবতেন না। চলনে-বলনে সাদাসিধে ছিলেন। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি লিখেছেনও মূলত প্রান্তিক মানুষের কথাই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পশ্চিমের স্বাধীন বুর্জোয়া সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে না গিয়ে তাকে পুরোপুরি ডিঙ্গিয়ে এসে উপনিবেশ এবং তাঁবেদার সামন্ত শ্রেণিভুক্ত হয়ে আজ এই এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এক রকম ভালো অর্থে বলছি, শুয়োরের মতো। শুয়োর দেখে কেউ একজন নাকি জিজ্ঞেস করেছিল–একি ইঁদুর বড় হয়ে হয়ে হয়েছে, নাকি হাতি ছোট হয়ে হয়ে হয়েছে?’
সত্য উচ্চারণে এমন অকপট ও সাহসী ছিলেন হাসান আজিজুল হক।
নিজে যে বাম চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয় তাঁর এই কথায়, ‘পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি সর্বেসর্বা। সমাজের ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায় ব্যক্তির কাছে।’ সেজন্য তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির দ্রোহকে উজ্জ্বল করে এঁকেছেন। কিছু একটা পাল্টাতে গেলে একা পারা যায় না, সমষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত গণতন্ত্র নিয়ে যে তাঁর খুব উচ্ছ্বাস ছিল তা নয়। বরং তিনি বলেছেন, ‘৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর পাঁচ বছর করে গণতন্ত্র কুক্ষিগত হয়।’
আবার মার্কসবাদী দর্শন নিয়েও তিনি বড় আশাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেছেন: ‘আমি মনে করি, মার্কসবাদ নিয়ে এদেশে স্তুতি অথবা নিন্দা–এই দুটি অনর্গল আউড়ে যাওয়া প্রায় একমাত্র কাজ, যা আমরা করতে পেরেছি। এতে মার্কসবাদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে, কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও ক্ষতি হয়েছে। দীক্ষিতদের জন্য মার্কসবাদ শাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, অদীক্ষিতদের জন্য অস্পৃশ্য ব্যাপার। মূল্যায়ন করার কাজ অবশ্যই করা উচিত–যেহেতু মার্কসীয় দর্শন মৃত নয়, কেবলমাত্র দর্শনও নয়।’
হাসান আজিজুল হক আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন আমার মতো আরও অনেকের জীবনপাঠের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও অন্তত বার চারেক বেশ সময় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। তিনি ছিলেন ভালো কথক। এত সুন্দর করে কথা বলতেন, শুনতেও ভালো লাগত। পাণ্ডিত্য ফলাতেন না, কিন্তু আলাভোলার মতো এমন সব কথা বলতেন, যা সচরাচর অনেক পণ্ডিতের মুখ থেকেও বের হওয়া সহজ নয়।
তিনি জানতেন, আমি রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। তাই রাজনৈতিক আলোচনাই করতেন আমার সঙ্গে। বছর কয়েক আগে এক অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি—আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি শুরু করেন, ‘মানুষ পেছনে হাঁটতে পারে না। হাঁটতে হয় সামনের দিকেই। অবশ্য সদরঘাটে যাওয়ার পথে কেউ গুলিস্তানে ঘুরপাক খায় না, তা তো নয়। ক্রমাগত হারানো এবং ক্রমাগত পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যে অর্জন, তা অবিনাশী। তবে হারানোকে বড় করে দেখা আর পাওয়াকে ছোট করে দেখা মানুষের সহজাত প্রবণতা। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গেলে যে মাছটা ধরা যায় না, তাকে বড়ই মনে হয়। আর যেটা বড়শিতে ধরা পড়ে, সেটা ছোট মনে হয়। আমাদের এই জীবনকালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য আকাশতুল্য অর্জন। আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার থেকে ক্রমাগত সরে যেতে দেখাটাও কম বেদনার নয়। এটা অবশ্য রাষ্ট্রের দোষ নয়। দোষ সেই মানুষদের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পায় বা নেয়।’
আমার জন্য এটা খুবই কষ্টের যে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই তিনি গত ১৫ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে।
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়ার বাইরেও তিনি তাঁদের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শিল্প-সাহিত্যের সৃজনভুবনে অসংখ্য তরুণের উৎসাহী পদচারণাকে তিনি উৎসাহিত করতেন। একা নয়, অনেকে মিলে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় তিনি কত সময় যে ব্যয় করেছেন! একে তিনি অপচয় মনে করতেন না, মনে করতেন বিনিয়োগ।
এর বাইরে তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কারো কারো মতো তিনি অনেক লেখেননি, এক বসায় তিনি কয়েক হাজার শব্দের মালা গেঁথে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাননি। তিনি অল্প লিখেছেন, তবে যা লিখেছেন তা বোদ্ধা পাঠকদের মনে নাড়া দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে ভাবনার কেন্দ্রে। তিনি দেখেছেন অনেক, ভেবেছেন তার চেয়ে বেশি। আর লিখেছেন তার তুলনায় কম।
তবে হাসান আজিজুল হক একজনই । তিনি ছিলেন মুক্তমনের মুক্তচিন্তার মানুষ। আড়াল পছন্দ করতেন না। খোলা মনের এই মানুষটি যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু পেয়েছেন? তিনি রাজধানীবাসী হননি। কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই কি পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন? তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উজান’। উজানস্রোতে দাড় টানতে হয়েছে বলেই কি? রাজশাহীতে বাড়ি করার সময় তিনি স্থপতিকে বলেছিলেন, ‘নেহাত দেয়াল না দিলে তো ঘর হয় না। কাজেই দেয়াল আপনি দেন–আপত্তি করব না, তবে যত কম পারেন।’
হাসান আজিজুল হককে বিস্মৃতির দেয়ালে চাপা দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা যেন কাউকে পেয়ে না বসে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র।’
১৯ নভেম্বর ২০২১
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র।’
১৯ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র।’
১৯ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র।’
১৯ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে