Ajker Patrika

জীবন ঘষে যিনি জ্বালিয়েছেন আগুন

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ০৫
জীবন ঘষে যিনি জ্বালিয়েছেন আগুন

হাসান আজিজুল হকের নাম প্রথম কবে শুনেছি কিংবা তাঁর লেখা গল্প প্রথম কবে পড়েছি, তা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে স্কুলের ছাত্র থাকতেই তাঁর গল্প পড়েছি। তিনি একজন বড় মাপের গদ্যকার কিংবা তাঁর কতগুলো বই আছে, গল্প ছাড়া আর কিছু, মানে কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি—এসবও তিনি লেখেন কি না, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করেন, অর্থাৎ তাঁর পেশা কী—এসবের কিছুই না জেনে তাঁর লেখা পড়েছি। প্রথম পাঠেই কেন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা-ও আজ আর বলতে পারব না। হয়তো ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ই প্রথম পড়েছিলাম। স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্রের কাছে কেন গল্পটি ভালো লেগেছিল, তা আর না-ই বা বললাম। ভালো লেগেছিল এবং গল্পটি আমাকে টেনেছিল এবং লেখকের প্রতি তৈরি হয়েছিল এক গভীর আকর্ষণ। 

তারপর কত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে ধীরে ধীরে কত কিছু জেনেছি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রাণপুরুষ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ ওখানেই। তারপর ১৯৫৪ সালে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায়। তিনি হয়ে গেলেন আমাদের দেশের মানুষ। তিনি দেশভাগ দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দাঙ্গা দেখেছেন, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা দেখেছেন, মানুষের শক্তি এবং দুর্বলতাও দেখেছেন। সংঘাত দেখেছেন আবার সম্প্রীতিও দেখেছেন। 

এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন: ‘দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, তার সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে আমি এখনকার বাংলাদেশে আসি। খুলনায়। কারণ খুবই আপতিক। স্কুল ফাইনাল পাস করার পর কোথাও না কোথাও তো ভর্তি হতে হবে–সেটা বর্ধমান কিংবা মাদ্রাজেও হতে পারত। আমার বেলায় হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায়। বাড়ি থেকে খুব যে একটা দূর, তা-ও নয়। বৃহদায়তন উপমহাদেশ মাথায় রাখলে সত্যি খুব একটা দূরে আমার দেশান্তর ঘটেনি।’ 

এরপর তিনি বলছেন: ‘দাঙ্গার কথা, কোলকাতার দাঙ্গার কথা, নোয়াখালী-বিহারে সাম্প্রদায়িক হত্যার কাহিনী খুব ছোটবেলায় অল্পবিস্তর শুনেছি বটে–আশেপাশের অঞ্চলে দু-একটি ছোটখাটো দাঙ্গা,খুন–তা-ও দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর। এসবই দেশভাগের তুলনায় মনকে অনেক বেশি গ্রাস করেছিল।’ 

হাসান আজিজুল হক যখন লিখতে শুরু করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন সব বিষয় গল্পে উঠে আসে, যেগুলো তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমছিল। তিনি বলেছেন, ‘ভাণ্ডার শূন্য থাকলে তো কিছু বের হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে এবং আমি দান করতে চাই–সেটা কি সম্ভব হবে?’ না, তাই তো হাসান আজিজুল হক দুহাতে অবিরল লেখেননি, কম লিখেছেন। তবে যা লিখেছেন, তা-ই মানুষের মনে দাগ কেটেছে, পাঠকের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কাউকে অনুসরণ করেননি, বিশেষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি। নিজেই বলেছেন, লিখতে গিয়ে কোনো সংজ্ঞা মানেননি, তাঁর কোনো দীক্ষাগুরুও ছিল না। নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গদ্যভাষাও যেন কবিতার মতো। কারো কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ভেতরের সুধারস ঠিকই পাঠকের মনকে প্লাবিত করে। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের শুরুটা দেখুন: ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠাণ্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়। অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়। ওদিকে গঞ্জের রাস্তার মোড়ে রাহাত খানের বাড়ির টিনের চাল হিম-ঝকঝক করে একসময় কানুর মায়ের কুঁড়েঘরের পৈঠায় সামনের পা তুলে দিয়ে শিয়াল ডেকে ওঠে।’  এমন গদ্য কবিতার চেয়ে কম কিসে! তিনি গদ্যের জন্য তাঁর মতো করে ভাষা নির্মাণ করেছেন। বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে কিছুই হওয়ার নয়। ভাষা হচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতের মতো, ভেতর থেকে বদলে যাবে। মনে রাখতে হবে, এ হচ্ছে জীবনের রসায়ন, যন্ত্রের ফ্যাক্টরি নয়।’ 

হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘তাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সেই দৃষ্টি শাণিত হয়েছিল তাঁর বামপন্থী বোধের দ্বারা।' তিনি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন? আমি সঠিক জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়া যায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা প্রয়াত অনিল মুখার্জি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘শুধু মিছিল-মিটিং করলে, স্লোগান দিলেই কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। তিনিই কমিউনিস্ট যিনি ভালো মানুষ, যে কাজ করেন, তা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে করেন এবং যিনি শুধু নিজের কথা না ভেবে সমষ্টির কথা ভাবেন।’ 

অনিল মুখার্জির সংজ্ঞা অনুযায়ী হাসান আজিজুল হক অবশ্যই কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সেরাদের মধ্যে সেরা। 

তাঁর মতো মুক্ত মনের উদার মানুষ আর কজন আছেন আমাদের দেশে? বড় মানুষের একটি বড় গুণ হলো, তাঁরা কাউকে উপেক্ষা করেন না। অতি উঁচু মাপের ও মনের মানুষ বলেই হাসান আজিজুল হক বরাবর সেই মানুষের জয়গান গেয়েছেন, যাঁরা অক্ষর না চিনলেও আলো মাটি আকাশ নক্ষত্র নদী জল চেনেন।

তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কখনো নিজেকে ‘এলিট শ্রেণির’ প্রতিনিধি ভাবতেন না। চলনে-বলনে সাদাসিধে ছিলেন। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি লিখেছেনও মূলত প্রান্তিক মানুষের কথাই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এলিট শ্রেণির মধ্যে নেই। বাংলাদেশের অই শ্রেণিকে আমি ‘রিফিউট’ করি। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের তেলতেলে সুবিধাবাদকেও ঘৃণা করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই দুই শ্রেণি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পশ্চিমের স্বাধীন বুর্জোয়া সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে না গিয়ে তাকে পুরোপুরি ডিঙ্গিয়ে এসে উপনিবেশ এবং তাঁবেদার সামন্ত শ্রেণিভুক্ত হয়ে আজ এই এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এক রকম ভালো অর্থে বলছি, শুয়োরের মতো। শুয়োর দেখে কেউ একজন নাকি জিজ্ঞেস করেছিল–একি ইঁদুর বড় হয়ে হয়ে হয়েছে, নাকি হাতি ছোট হয়ে হয়ে হয়েছে?’ 

সত্য উচ্চারণে এমন অকপট ও সাহসী ছিলেন হাসান আজিজুল হক। 

নিজে যে বাম চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয় তাঁর এই কথায়, ‘পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি সর্বেসর্বা। সমাজের ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায় ব্যক্তির কাছে।’ সেজন্য তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির দ্রোহকে উজ্জ্বল করে এঁকেছেন। কিছু একটা পাল্টাতে গেলে একা পারা যায় না, সমষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত গণতন্ত্র নিয়ে যে তাঁর খুব উচ্ছ্বাস ছিল তা নয়। বরং তিনি বলেছেন, ‘৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর পাঁচ বছর করে গণতন্ত্র কুক্ষিগত হয়।’

আবার মার্কসবাদী দর্শন নিয়েও তিনি বড় আশাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেছেন: ‘আমি মনে করি, মার্কসবাদ নিয়ে এদেশে স্তুতি অথবা নিন্দা–এই দুটি অনর্গল আউড়ে যাওয়া প্রায় একমাত্র কাজ, যা আমরা করতে পেরেছি। এতে মার্কসবাদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে, কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও ক্ষতি হয়েছে। দীক্ষিতদের জন্য মার্কসবাদ শাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, অদীক্ষিতদের জন্য অস্পৃশ্য ব্যাপার। মূল্যায়ন করার কাজ অবশ্যই করা উচিত–যেহেতু মার্কসীয় দর্শন মৃত নয়, কেবলমাত্র দর্শনও নয়।’ 

হাসান আজিজুল হক আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন আমার মতো আরও অনেকের জীবনপাঠের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও অন্তত বার চারেক বেশ সময় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। তিনি ছিলেন ভালো কথক। এত সুন্দর করে কথা বলতেন, শুনতেও ভালো লাগত। পাণ্ডিত্য ফলাতেন না, কিন্তু আলাভোলার মতো এমন সব কথা বলতেন, যা সচরাচর অনেক পণ্ডিতের মুখ থেকেও বের হওয়া সহজ নয়। 

তিনি জানতেন, আমি রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। তাই রাজনৈতিক আলোচনাই করতেন আমার সঙ্গে। বছর কয়েক আগে এক অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি—আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি শুরু করেন, ‘মানুষ পেছনে হাঁটতে পারে না। হাঁটতে হয় সামনের দিকেই। অবশ্য সদরঘাটে যাওয়ার পথে কেউ গুলিস্তানে ঘুরপাক খায় না, তা তো নয়। ক্রমাগত হারানো এবং ক্রমাগত পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যে অর্জন, তা অবিনাশী। তবে হারানোকে বড় করে দেখা আর পাওয়াকে ছোট করে দেখা মানুষের সহজাত প্রবণতা। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গেলে যে মাছটা ধরা যায় না, তাকে বড়ই মনে হয়। আর যেটা বড়শিতে ধরা পড়ে, সেটা ছোট মনে হয়। আমাদের এই জীবনকালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য আকাশতুল্য অর্জন। আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার থেকে ক্রমাগত সরে যেতে দেখাটাও কম বেদনার নয়। এটা অবশ্য রাষ্ট্রের দোষ নয়। দোষ সেই মানুষদের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পায় বা নেয়।’ 

আমার জন্য এটা খুবই কষ্টের যে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই তিনি গত ১৫ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়ার বাইরেও তিনি তাঁদের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শিল্প-সাহিত্যের সৃজনভুবনে অসংখ্য তরুণের উৎসাহী পদচারণাকে তিনি উৎসাহিত করতেন। একা নয়, অনেকে মিলে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় তিনি কত সময় যে ব্যয় করেছেন! একে তিনি অপচয় মনে করতেন না, মনে করতেন বিনিয়োগ। 

এর বাইরে তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কারো কারো মতো তিনি অনেক লেখেননি, এক বসায় তিনি কয়েক হাজার শব্দের মালা গেঁথে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাননি। তিনি অল্প লিখেছেন, তবে যা লিখেছেন তা বোদ্ধা পাঠকদের মনে নাড়া দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে ভাবনার কেন্দ্রে। তিনি দেখেছেন অনেক, ভেবেছেন তার চেয়ে বেশি। আর লিখেছেন তার তুলনায় কম। 

তবে হাসান আজিজুল হক একজনই । তিনি ছিলেন মুক্তমনের মুক্তচিন্তার মানুষ। আড়াল পছন্দ করতেন না। খোলা মনের এই মানুষটি যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু পেয়েছেন? তিনি রাজধানীবাসী হননি। কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই কি পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন? তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উজান’। উজানস্রোতে দাড় টানতে হয়েছে বলেই কি? রাজশাহীতে বাড়ি করার সময় তিনি স্থপতিকে বলেছিলেন, ‘নেহাত দেয়াল না দিলে তো ঘর হয় না। কাজেই দেয়াল আপনি দেন–আপত্তি করব না, তবে যত কম পারেন।’

হাসান আজিজুল হককে বিস্মৃতির দেয়ালে চাপা দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা যেন কাউকে পেয়ে না বসে। 

লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত