অনির্বাণ সরকার

সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন-বঙ্গসমাজ’-এ বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস বিধৃত করে গেছেন। এ কথা আজ সবাই জানেন—ইন্দো-পর্তুগিজ যুবক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১) হিন্দু কলেজে শিক্ষক থাকার সময় এবং তারও পরে কিছুকাল তাঁর অকালমৃত্যু পর্যন্ত বাংলার যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে কী বিপুল বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ডিরোজিওর সরাসরি ছাত্রদের বলা হতো ইয়ং বেঙ্গলস অথবা ডিরোজিয়ানস। ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী ছিল তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু সমাজের প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কারবিরোধী। ইয়ং বেঙ্গলরা বিশ্বাস করতেন যুক্তিবাদে, মুক্তচিন্তা ও মানবিকতায়। ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রবল ছিল তাঁদের অবস্থান। এ গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন রামগোপাল ঘোষ, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ। পরিণত বয়সে তাঁরা ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য, প্রবন্ধ রচনায় যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহের মতো সমাজ পরিবর্তনকারী আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর বইয়ে ইয়ং বেঙ্গলদের একজনকে বলেছেন—‘ডিরোজিও-বৃক্ষের একটি উৎকৃষ্ট ফল।’ এ ব্যক্তির নাম রাধানাথ শিকদার (১৮১৩-১৮৭০)। অনেকেই জানেন, তিনি হিমালয় পর্বতের ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’কে নির্ভুল গণনায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, যেটি আজ পরিচিত ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ নামে।
রাধানাথ শিকদারের এই আবিষ্কারের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে ব্যক্তি রাধানাথের জীবন ও অন্যান্য কর্মের ইতিহাস। এ ছাড়া রাধানাথ শিকদারকে নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ও গ্রন্থও সুলভ নয়। বিদ্যোৎসাহী রাধানাথ শিকদার তাঁর পুরো জীবন ব্যয় করেছেন গণিত ও বিজ্ঞানচর্চায়। কর্ম থেকে অবসর গ্রহণের পর সামাজিক আন্দোলনেও ছিলেন প্রথম সারির একজন—এ কথা অনেকেই বিস্মৃত হয়েছেন। ঊনবিংশ শতকের একটি বিশেষ সময় নিয়ে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’-এ পরিণত বয়সের ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর একটি কল্পিত আড্ডার চিত্র আছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে—রাধানাথ শিকদার তাঁর যৌবনের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছেন বাংলার সাম্প্রতিক সামাজিক আন্দোলন সম্পর্কে, জানতে পারছেন বাংলা ভাষায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন রচনার নিদর্শন সম্পর্কে। এই আলাপচারিতা কাল্পনিক হলেও রাধানাথ শিকদার বস্তুত বাংলার ভৌগোলিক সীমানা থেকে অনেক দূরেই অতিবাহিত করছিলেন তাঁর কর্মজীবন। হয়তো বাংলার সামাজিক সংস্কার ও আন্দোলনে অন্যান্য প্রগতিশীল চিন্তক ও কর্মদ্যোগীদের কাজে কিছুটা পরে রাধানাথ শিকদার নিজেকে শামিল করেছিলেন বলে বাংলার সমাজ উন্নয়নের ইতিহাসে রাধানাথ শিকদারের নামটি পেছনেই পড়ে গেছে।
কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না তাঁর পরিবারের। রাধানাথের পরিবার ছিল দরিদ্র। পিতা তিতুরাম শিকদার বুঝেছিলেন, পাশ্চাত্যের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে পরে ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষে কর্মের সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে। তাই তিনি বালক রাধানাথকে প্রথমে পড়তে পাঠান চিৎপুর রোডের ফিরিঙ্গি কমল বসুর স্কুলে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর ১৮২৪ সালে রাধানাথ ভর্তি হন হিন্দু কলেজে। এ কলেজেই তিনি ডিরোজিওকে শিক্ষক হিসেবে পান এবং এই সাক্ষাতে সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ভাবনাজগতে পরিবর্তন সূচিত হয়, যে মানবিক ভাবনা তিনি আজীবন বহন করেছেন।
ডিরোজিও যদি রাধানাথের মানসগঠনের শিক্ষক হন, তবে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে রাধানাথের আগ্রহ জাগিয়েছিলেন হিন্দু কলেজের আরেকজন শিক্ষক ডা. জন টাইটলার। টাইটলার তাঁর ছাত্র রাধানাথের মধ্যে অমিত প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন এবং তিনি রাধানাথকে পড়িয়েছিলেন আইজ্যাক নিউটনের বিখ্যাত বই ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’। রাধানাথ উচ্চতর গণিতের পাঠ নিয়েছিলেন এই টাইটলারের কাছেই। রাধানাথের প্রতিভা বোঝা যায়, যখন মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর উদ্ভাবিত একটি সম্পাদ্যের সমাধান বিখ্যাত ‘গ্লিনিংস ইন সায়েন্স’ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ১৮৩১) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ বয়সেই প্রথম শ্রেণির (বর্তমান দশম শ্রেণি) ছাত্র রাধানাথ হিন্দু কলেজের সভায় পাঠ করেন তাঁর স্বরচিত প্রবন্ধ, যার বিষয় ছিল—‘The cultivation of the sciences is not more favourable to individual happiness, nor more useful and honourable to a nation, than that of polite literature.’ ‘দ্য এশিয়াটিক জার্নাল অ্যান্ড মান্থলি মিসেলেনি’-এর ১৮৩১ আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিতও হয়েছিল সেই প্রবন্ধ। ইংরেজি ব্যাকরণ, ভাষা, পদ্য ইত্যাদিতেও রাধানাথ ছাত্রজীবনে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক মলিস সাহেবের কাছ থেকে।
হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই রাধানাথকে সার্ভে অফিসে চাকরিতে ঢুকতে হয়েছিল; কারণ, পরিবারে অর্থাভাব। কিন্তু সে সময় যা প্রচলিত ছিল, অর্থাৎ দেশীয় রীতি অনুসারে একটি অল্প বয়সী বালিকাকে বিয়ে করা—সেটিতে রাধানাথ সম্মতি দেননি। কারণ, বাল্যবিবাহের প্রতি রাধানাথ আন্তরিক ঘৃণা পোষণ করতেন। শিবনাথ শাস্ত্রী রচিত রাধানাথের জীবনের এই অংশ পড়ে বোঝা যায়, রাধানাথ মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন।
রাধানাথ শিকদারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায় তাঁর বন্ধু প্যারীচাঁদ মিত্রের লেখা থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘রাধানাথ খুব বলিষ্ঠদেহী ও তেজস্বী ছিলেন।’ প্যারীচাঁদ আরও জানাচ্ছেন, ‘সর্বপ্রযত্নে দেশের উপকার সাধন করাই রাধানাথ শিকদারের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। তাঁহার খেয়ালের মধ্যে গোমাংস ভক্ষণ প্রচলন করাই প্রধান, তিনি বলিতেন গোখাদকরা কখন পরাভূত হয় না। বাঙালিদিগের উন্নতি করিতে হইলে প্রথমে শারীরিক উন্নতি আবশ্যক। অথবা যুগপৎ শরীর ও চরিত্র উভয়েরই উৎকর্ষসাধনে তৎপর হওয়া আবশ্যক।’ রাধানাথের মৃত্যুর পর ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ‘তিনি কড়া ধরনের লোক ছিলেন এবং সদ্য সদ্য কর্মনির্বাহ করিতেন এবং কার্যকারণকালে ক্ষিপ্রকারিতার ন্যূনতা তাহাতে কখন পরিলক্ষিত হয় নাই। রাধানাথ অসাধারণ লোক ছিলেন ও তাঁহার অনেক সদ্গুণ ছিল।’
গণিত বিষয়ে অনন্য প্রতিভাসম্পন্ন রাধানাথ কর্মজীবনের শুরুতে তাঁর মনের মতো চাকরিই পেয়েছিলেন—এ কথা বলা যায়। ‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-এর সার্ভেয়ার জেনারেল স্যার জর্জ এভারেস্ট সরাসরি রাধানাথকে জরিপকাজে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কাজ মনের মতো হলেও বেতনের ব্যাপারে রাধানাথ সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ, তাঁর ওপর ছিল পিতামাতা ও ভাইদের অন্নসংস্থানের ভার। এ জন্য ১৮৩৭ সালে রাধানাথ ডেপুটি কালেক্টরের পদে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেন। কিন্তু জর্জ এভারেস্ট বুঝেছিলেন, রাধানাথের আসল প্রতিভা কোথায়। তিনি চাননি রাধানাথের প্রতিভার অপমৃত্যু হোক। এভারেস্টের অনুরোধে সরকার এমন ব্যবস্থা করেন, যাতে এসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো দেশীয় কর্মচারী বিভাগ পাল্টাতে না পারেন। তাই রাধানাথ সার্ভেতেই রয়ে যান। ১৮৪৩ সাল থেকে রাধানাথ সারভেয়ার জেনারেল হিসেবে পান স্যার অ্যান্ড্রু ওয়াকে। ওয়া রাধানাথের কাজ সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। সার্ভে বিভাগের সম্পদ রাধানাথকে চিনতে ভুল করেননি ওয়া। তাই ১৮৫০ সালে আবার যখন ডেপুটি কালেক্টরের পদে আবেদন করেন রাধানাথ, অ্যান্ড্রু ওয়া বিশেষ চেষ্টায় তা স্থগিত করেন এবং রাধানাথের বেতন বৃদ্ধি করেন। এর এক বছর আগেই; অর্থাৎ ১৮৪৯ সালে রাধানাথ অবশ্য দেরাদুন সার্ভে অফিস থেকে কলকাতায় ‘চিফ কমপিউটার’ পদে বদলি হয়ে চলে আসেন।
১৮৫২ সাল, বছরটি কেবল রাধানাথ শিকদারের জন্য নয়, ভৌগোলিক জরিপের ইতিহাসেও একটি উল্লেখযোগ্য বছর। ‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ দীর্ঘকাল যে জরিপকার্য করছিল ভারতবর্ষের পাহাড়ে পাহাড়ে, তাতে একটি চূড়ান্ত অর্জন হয় ওই বছর। পরিমাপকদের সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাধানাথ হিমালয়ের ‘XV’; অর্থাৎ ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’কে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। সে সময় এর উচ্চতা নির্ধারিত হয়েছিল ২৯ হাজার ২ ফুট। জনশ্রুতি আছে, বারবার গণনা করে রাধানাথ ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’-এর উচ্চতা নিশ্চিত হওয়ার পর এতটাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন যে ছুটতে ছুটতে এসে ওয়াকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান আবিষ্কার করে ফেলেছি।’ সরকারিভাবে এই শৃঙ্গের উচ্চতা ১৮৫৬ সালে নির্ধারিত হয় ২৯ হাজার ২৮ ফুট (আরও পরে ২৯ হাজার ৩২ ফুট) এবং সে বছরই স্যার জর্জ এভারেস্টের নামে এর নাম দেওয়া হয় মাউন্ট এভারেস্ট।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধিকৃত ভারতবর্ষের কোনো ইংরেজি সংবাদপত্রেই অবশ্য সদ্য আবিষ্কৃত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের কৃতিত্ব রাধানাথকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর নামও উল্লেখ করা হয়নি। বস্তুত বহুকাল মানুষ জানতেই পারেনি রাধানাথের এই পরিশ্রম ও অর্জন সম্পর্কে। শিবনাথ শাস্ত্রীও রাধানাথের মানবিক বৈশিষ্ট্য বিষয়ে লিখে গেছেন, এভারেস্ট-বিষয়ক কোনো কথা তাতে নেই। রাধানাথ শিকদারের মৃত্যুর বহু বছর পর ১৯২৮ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এভারেস্টের উচ্চতা নির্ণয়ে রাধানাথ শিকদারের অবদানের কথা এবং ১৯৩২ সালে ইতিহাসবিদ যোগেশচন্দ্র বাগল রাধানাথকে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গের গণনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
রাধানাথ শিকদার ছিলেন ভারতবর্ষে জরিপকাজের পথপ্রদর্শক। ১৮৫১ সালে প্রকাশিত জরিপ-সংক্রান্ত কাজের ‘আ ম্যানুয়াল অব সার্ভেইং ফর ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে গাণিতিক অধ্যায় রচনা করেন রাধানাথ। তাঁর রচিত অধ্যায়ের শিরোনাম ছিল ‘প্র্যাকটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড ইটস অ্যাপ্লিকেশনস টু সার্ভেইং’। এই লেখায় জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে রাধানাথের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। যে বছর রাধানাথ এভারেস্টের উচ্চতা নিরূপণ করেছিলেন, সে বছরই (১৮৫২) তাঁকে আলিপুরে কলকাতা অবজারভেটরির অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়। এটিই ছিল রাধানাথের জীবনের শেষ চাকরি। এখানেও রাধানাথ তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছিলেন। ১৮৫২ সালের আগে এই আবহাওয়া অফিসের সংগৃহীত তথ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। রাধানাথ নিজ উদ্যোগে এর পরিমার্জনে নিয়োজিত হন এবং একটি বিজ্ঞানসম্মত তথ্যসারণি তৈরি করেন।
জরিপকার্য এবং আবহাওয়াবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখা রাধানাথ শিকদারের জীবনের অন্য দিকটি কেমন ছিল? অকৃতদার এই মানুষ কর্মসূত্রে দীর্ঘকাল কাটিয়েছিলেন বাংলার বাইরে। কথিত আছে, বাংলা ভাষা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলায় ফিরে আসার পর কর্মযোগী রাধানাথের সঙ্গে যখন হিন্দু কলেজের পুরোনো বন্ধুদের যোগসূত্র স্থাপিত হয়, তিনি দেখলেন—নারীশিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক নানা আন্দোলনে তাঁর বন্ধুরা জড়িয়ে আছে। রাধানাথও এসব কল্যাণমূলক কাজে জড়িত হলেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সুহৃদ প্যারীচাঁদ মিত্র যখন সমাজের জন্য কল্যাণমূলক একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, রাধানাথও তাতে অংশ নেন। এই দুজনের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘মাসিক পত্রিকা’। রাধানাথ বুঝেছিলেন, সমাজের কুসংস্কার দূর করতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের কথা প্রচারিত হওয়া দরকার। তাই তাঁদের এ পত্রিকায় যেসব প্রবন্ধ, অনুবাদ ও অন্যান্য লেখা প্রকাশিত হতো, তা ছিল মৌখিক বাংলা ভাষার কাছাকাছি ভাষায় লেখা, লক্ষ্য ছিল নারী পাঠকেরা। এ পত্রিকা মাত্র চার বছর চললেও এটি ছিল জনপ্রিয় পত্রিকা এবং বাংলার সমাজের কুসংস্কার দূর করতে এর অবদান ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে আছে।
১৮৬২ সালে রাধানাথ শিকদার তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবনের সমাপ্তি টানেন। এরপর তাঁর মৃত্যু অবধি রাধানাথ এককভাবে এবং তাঁর বাংলার বন্ধুবর্গের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পরাধীন বাংলার সমাজের বিভিন্ন স্তরের কুসংস্কার দূর করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনই ছিল রাধানাথের বাসনা। ১৮৭০ সালে রাধানাথের জীবনের অবসান ঘটে চন্দননগরে নিজের বাগানবাড়িতে। চন্দননগরেই এই বিজ্ঞানসাধক, কর্মযোগী ও বলিষ্ঠ চরিত্রের মানুষটির সমাধি রয়েছে।
রাধানাথ ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অগ্রসর এক ব্যক্তি। সুদীর্ঘকাল রাধানাথ সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও পরবর্তী সময়ে বাংলার ইতিহাসের গবেষকেরা রাধানাথের জীবন ও কর্মের বহু অজানা তথ্য উদ্ধার করেছেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে রাধানাথ শিকদারের নামই প্রথমে আসবে—এ কথায় আজ আর কোনো দ্বিধা বা সংশয়ের অবকাশ নেই।
তথ্যসূত্র:
১. রাধানাথ শিকদারের আত্মকথা ও মূল্যায়ন: দীপক দাঁ (সম্পা.)
২. রাধানাথ শিকদার/তথ্যের আলোয়: শঙ্করকুমার নাথ
৩. রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ-সমাজ: শিবনাথ শাস্ত্রী
৪. সেই সময়: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন-বঙ্গসমাজ’-এ বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস বিধৃত করে গেছেন। এ কথা আজ সবাই জানেন—ইন্দো-পর্তুগিজ যুবক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১) হিন্দু কলেজে শিক্ষক থাকার সময় এবং তারও পরে কিছুকাল তাঁর অকালমৃত্যু পর্যন্ত বাংলার যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে কী বিপুল বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ডিরোজিওর সরাসরি ছাত্রদের বলা হতো ইয়ং বেঙ্গলস অথবা ডিরোজিয়ানস। ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী ছিল তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু সমাজের প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কারবিরোধী। ইয়ং বেঙ্গলরা বিশ্বাস করতেন যুক্তিবাদে, মুক্তচিন্তা ও মানবিকতায়। ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রবল ছিল তাঁদের অবস্থান। এ গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন রামগোপাল ঘোষ, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ। পরিণত বয়সে তাঁরা ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য, প্রবন্ধ রচনায় যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহের মতো সমাজ পরিবর্তনকারী আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর বইয়ে ইয়ং বেঙ্গলদের একজনকে বলেছেন—‘ডিরোজিও-বৃক্ষের একটি উৎকৃষ্ট ফল।’ এ ব্যক্তির নাম রাধানাথ শিকদার (১৮১৩-১৮৭০)। অনেকেই জানেন, তিনি হিমালয় পর্বতের ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’কে নির্ভুল গণনায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, যেটি আজ পরিচিত ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ নামে।
রাধানাথ শিকদারের এই আবিষ্কারের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে ব্যক্তি রাধানাথের জীবন ও অন্যান্য কর্মের ইতিহাস। এ ছাড়া রাধানাথ শিকদারকে নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ও গ্রন্থও সুলভ নয়। বিদ্যোৎসাহী রাধানাথ শিকদার তাঁর পুরো জীবন ব্যয় করেছেন গণিত ও বিজ্ঞানচর্চায়। কর্ম থেকে অবসর গ্রহণের পর সামাজিক আন্দোলনেও ছিলেন প্রথম সারির একজন—এ কথা অনেকেই বিস্মৃত হয়েছেন। ঊনবিংশ শতকের একটি বিশেষ সময় নিয়ে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’-এ পরিণত বয়সের ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর একটি কল্পিত আড্ডার চিত্র আছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে—রাধানাথ শিকদার তাঁর যৌবনের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছেন বাংলার সাম্প্রতিক সামাজিক আন্দোলন সম্পর্কে, জানতে পারছেন বাংলা ভাষায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন রচনার নিদর্শন সম্পর্কে। এই আলাপচারিতা কাল্পনিক হলেও রাধানাথ শিকদার বস্তুত বাংলার ভৌগোলিক সীমানা থেকে অনেক দূরেই অতিবাহিত করছিলেন তাঁর কর্মজীবন। হয়তো বাংলার সামাজিক সংস্কার ও আন্দোলনে অন্যান্য প্রগতিশীল চিন্তক ও কর্মদ্যোগীদের কাজে কিছুটা পরে রাধানাথ শিকদার নিজেকে শামিল করেছিলেন বলে বাংলার সমাজ উন্নয়নের ইতিহাসে রাধানাথ শিকদারের নামটি পেছনেই পড়ে গেছে।
কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না তাঁর পরিবারের। রাধানাথের পরিবার ছিল দরিদ্র। পিতা তিতুরাম শিকদার বুঝেছিলেন, পাশ্চাত্যের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে পরে ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষে কর্মের সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে। তাই তিনি বালক রাধানাথকে প্রথমে পড়তে পাঠান চিৎপুর রোডের ফিরিঙ্গি কমল বসুর স্কুলে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর ১৮২৪ সালে রাধানাথ ভর্তি হন হিন্দু কলেজে। এ কলেজেই তিনি ডিরোজিওকে শিক্ষক হিসেবে পান এবং এই সাক্ষাতে সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ভাবনাজগতে পরিবর্তন সূচিত হয়, যে মানবিক ভাবনা তিনি আজীবন বহন করেছেন।
ডিরোজিও যদি রাধানাথের মানসগঠনের শিক্ষক হন, তবে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে রাধানাথের আগ্রহ জাগিয়েছিলেন হিন্দু কলেজের আরেকজন শিক্ষক ডা. জন টাইটলার। টাইটলার তাঁর ছাত্র রাধানাথের মধ্যে অমিত প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন এবং তিনি রাধানাথকে পড়িয়েছিলেন আইজ্যাক নিউটনের বিখ্যাত বই ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’। রাধানাথ উচ্চতর গণিতের পাঠ নিয়েছিলেন এই টাইটলারের কাছেই। রাধানাথের প্রতিভা বোঝা যায়, যখন মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর উদ্ভাবিত একটি সম্পাদ্যের সমাধান বিখ্যাত ‘গ্লিনিংস ইন সায়েন্স’ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ১৮৩১) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ বয়সেই প্রথম শ্রেণির (বর্তমান দশম শ্রেণি) ছাত্র রাধানাথ হিন্দু কলেজের সভায় পাঠ করেন তাঁর স্বরচিত প্রবন্ধ, যার বিষয় ছিল—‘The cultivation of the sciences is not more favourable to individual happiness, nor more useful and honourable to a nation, than that of polite literature.’ ‘দ্য এশিয়াটিক জার্নাল অ্যান্ড মান্থলি মিসেলেনি’-এর ১৮৩১ আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিতও হয়েছিল সেই প্রবন্ধ। ইংরেজি ব্যাকরণ, ভাষা, পদ্য ইত্যাদিতেও রাধানাথ ছাত্রজীবনে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক মলিস সাহেবের কাছ থেকে।
হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই রাধানাথকে সার্ভে অফিসে চাকরিতে ঢুকতে হয়েছিল; কারণ, পরিবারে অর্থাভাব। কিন্তু সে সময় যা প্রচলিত ছিল, অর্থাৎ দেশীয় রীতি অনুসারে একটি অল্প বয়সী বালিকাকে বিয়ে করা—সেটিতে রাধানাথ সম্মতি দেননি। কারণ, বাল্যবিবাহের প্রতি রাধানাথ আন্তরিক ঘৃণা পোষণ করতেন। শিবনাথ শাস্ত্রী রচিত রাধানাথের জীবনের এই অংশ পড়ে বোঝা যায়, রাধানাথ মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন।
রাধানাথ শিকদারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায় তাঁর বন্ধু প্যারীচাঁদ মিত্রের লেখা থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘রাধানাথ খুব বলিষ্ঠদেহী ও তেজস্বী ছিলেন।’ প্যারীচাঁদ আরও জানাচ্ছেন, ‘সর্বপ্রযত্নে দেশের উপকার সাধন করাই রাধানাথ শিকদারের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। তাঁহার খেয়ালের মধ্যে গোমাংস ভক্ষণ প্রচলন করাই প্রধান, তিনি বলিতেন গোখাদকরা কখন পরাভূত হয় না। বাঙালিদিগের উন্নতি করিতে হইলে প্রথমে শারীরিক উন্নতি আবশ্যক। অথবা যুগপৎ শরীর ও চরিত্র উভয়েরই উৎকর্ষসাধনে তৎপর হওয়া আবশ্যক।’ রাধানাথের মৃত্যুর পর ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ‘তিনি কড়া ধরনের লোক ছিলেন এবং সদ্য সদ্য কর্মনির্বাহ করিতেন এবং কার্যকারণকালে ক্ষিপ্রকারিতার ন্যূনতা তাহাতে কখন পরিলক্ষিত হয় নাই। রাধানাথ অসাধারণ লোক ছিলেন ও তাঁহার অনেক সদ্গুণ ছিল।’
গণিত বিষয়ে অনন্য প্রতিভাসম্পন্ন রাধানাথ কর্মজীবনের শুরুতে তাঁর মনের মতো চাকরিই পেয়েছিলেন—এ কথা বলা যায়। ‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-এর সার্ভেয়ার জেনারেল স্যার জর্জ এভারেস্ট সরাসরি রাধানাথকে জরিপকাজে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কাজ মনের মতো হলেও বেতনের ব্যাপারে রাধানাথ সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ, তাঁর ওপর ছিল পিতামাতা ও ভাইদের অন্নসংস্থানের ভার। এ জন্য ১৮৩৭ সালে রাধানাথ ডেপুটি কালেক্টরের পদে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেন। কিন্তু জর্জ এভারেস্ট বুঝেছিলেন, রাধানাথের আসল প্রতিভা কোথায়। তিনি চাননি রাধানাথের প্রতিভার অপমৃত্যু হোক। এভারেস্টের অনুরোধে সরকার এমন ব্যবস্থা করেন, যাতে এসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো দেশীয় কর্মচারী বিভাগ পাল্টাতে না পারেন। তাই রাধানাথ সার্ভেতেই রয়ে যান। ১৮৪৩ সাল থেকে রাধানাথ সারভেয়ার জেনারেল হিসেবে পান স্যার অ্যান্ড্রু ওয়াকে। ওয়া রাধানাথের কাজ সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। সার্ভে বিভাগের সম্পদ রাধানাথকে চিনতে ভুল করেননি ওয়া। তাই ১৮৫০ সালে আবার যখন ডেপুটি কালেক্টরের পদে আবেদন করেন রাধানাথ, অ্যান্ড্রু ওয়া বিশেষ চেষ্টায় তা স্থগিত করেন এবং রাধানাথের বেতন বৃদ্ধি করেন। এর এক বছর আগেই; অর্থাৎ ১৮৪৯ সালে রাধানাথ অবশ্য দেরাদুন সার্ভে অফিস থেকে কলকাতায় ‘চিফ কমপিউটার’ পদে বদলি হয়ে চলে আসেন।
১৮৫২ সাল, বছরটি কেবল রাধানাথ শিকদারের জন্য নয়, ভৌগোলিক জরিপের ইতিহাসেও একটি উল্লেখযোগ্য বছর। ‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ দীর্ঘকাল যে জরিপকার্য করছিল ভারতবর্ষের পাহাড়ে পাহাড়ে, তাতে একটি চূড়ান্ত অর্জন হয় ওই বছর। পরিমাপকদের সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাধানাথ হিমালয়ের ‘XV’; অর্থাৎ ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’কে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। সে সময় এর উচ্চতা নির্ধারিত হয়েছিল ২৯ হাজার ২ ফুট। জনশ্রুতি আছে, বারবার গণনা করে রাধানাথ ‘পিক নাম্বার ফিফটিন’-এর উচ্চতা নিশ্চিত হওয়ার পর এতটাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন যে ছুটতে ছুটতে এসে ওয়াকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান আবিষ্কার করে ফেলেছি।’ সরকারিভাবে এই শৃঙ্গের উচ্চতা ১৮৫৬ সালে নির্ধারিত হয় ২৯ হাজার ২৮ ফুট (আরও পরে ২৯ হাজার ৩২ ফুট) এবং সে বছরই স্যার জর্জ এভারেস্টের নামে এর নাম দেওয়া হয় মাউন্ট এভারেস্ট।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধিকৃত ভারতবর্ষের কোনো ইংরেজি সংবাদপত্রেই অবশ্য সদ্য আবিষ্কৃত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের কৃতিত্ব রাধানাথকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর নামও উল্লেখ করা হয়নি। বস্তুত বহুকাল মানুষ জানতেই পারেনি রাধানাথের এই পরিশ্রম ও অর্জন সম্পর্কে। শিবনাথ শাস্ত্রীও রাধানাথের মানবিক বৈশিষ্ট্য বিষয়ে লিখে গেছেন, এভারেস্ট-বিষয়ক কোনো কথা তাতে নেই। রাধানাথ শিকদারের মৃত্যুর বহু বছর পর ১৯২৮ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এভারেস্টের উচ্চতা নির্ণয়ে রাধানাথ শিকদারের অবদানের কথা এবং ১৯৩২ সালে ইতিহাসবিদ যোগেশচন্দ্র বাগল রাধানাথকে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গের গণনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
রাধানাথ শিকদার ছিলেন ভারতবর্ষে জরিপকাজের পথপ্রদর্শক। ১৮৫১ সালে প্রকাশিত জরিপ-সংক্রান্ত কাজের ‘আ ম্যানুয়াল অব সার্ভেইং ফর ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে গাণিতিক অধ্যায় রচনা করেন রাধানাথ। তাঁর রচিত অধ্যায়ের শিরোনাম ছিল ‘প্র্যাকটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড ইটস অ্যাপ্লিকেশনস টু সার্ভেইং’। এই লেখায় জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে রাধানাথের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। যে বছর রাধানাথ এভারেস্টের উচ্চতা নিরূপণ করেছিলেন, সে বছরই (১৮৫২) তাঁকে আলিপুরে কলকাতা অবজারভেটরির অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়। এটিই ছিল রাধানাথের জীবনের শেষ চাকরি। এখানেও রাধানাথ তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছিলেন। ১৮৫২ সালের আগে এই আবহাওয়া অফিসের সংগৃহীত তথ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। রাধানাথ নিজ উদ্যোগে এর পরিমার্জনে নিয়োজিত হন এবং একটি বিজ্ঞানসম্মত তথ্যসারণি তৈরি করেন।
জরিপকার্য এবং আবহাওয়াবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখা রাধানাথ শিকদারের জীবনের অন্য দিকটি কেমন ছিল? অকৃতদার এই মানুষ কর্মসূত্রে দীর্ঘকাল কাটিয়েছিলেন বাংলার বাইরে। কথিত আছে, বাংলা ভাষা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলায় ফিরে আসার পর কর্মযোগী রাধানাথের সঙ্গে যখন হিন্দু কলেজের পুরোনো বন্ধুদের যোগসূত্র স্থাপিত হয়, তিনি দেখলেন—নারীশিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক নানা আন্দোলনে তাঁর বন্ধুরা জড়িয়ে আছে। রাধানাথও এসব কল্যাণমূলক কাজে জড়িত হলেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সুহৃদ প্যারীচাঁদ মিত্র যখন সমাজের জন্য কল্যাণমূলক একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, রাধানাথও তাতে অংশ নেন। এই দুজনের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘মাসিক পত্রিকা’। রাধানাথ বুঝেছিলেন, সমাজের কুসংস্কার দূর করতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের কথা প্রচারিত হওয়া দরকার। তাই তাঁদের এ পত্রিকায় যেসব প্রবন্ধ, অনুবাদ ও অন্যান্য লেখা প্রকাশিত হতো, তা ছিল মৌখিক বাংলা ভাষার কাছাকাছি ভাষায় লেখা, লক্ষ্য ছিল নারী পাঠকেরা। এ পত্রিকা মাত্র চার বছর চললেও এটি ছিল জনপ্রিয় পত্রিকা এবং বাংলার সমাজের কুসংস্কার দূর করতে এর অবদান ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে আছে।
১৮৬২ সালে রাধানাথ শিকদার তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবনের সমাপ্তি টানেন। এরপর তাঁর মৃত্যু অবধি রাধানাথ এককভাবে এবং তাঁর বাংলার বন্ধুবর্গের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পরাধীন বাংলার সমাজের বিভিন্ন স্তরের কুসংস্কার দূর করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনই ছিল রাধানাথের বাসনা। ১৮৭০ সালে রাধানাথের জীবনের অবসান ঘটে চন্দননগরে নিজের বাগানবাড়িতে। চন্দননগরেই এই বিজ্ঞানসাধক, কর্মযোগী ও বলিষ্ঠ চরিত্রের মানুষটির সমাধি রয়েছে।
রাধানাথ ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অগ্রসর এক ব্যক্তি। সুদীর্ঘকাল রাধানাথ সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও পরবর্তী সময়ে বাংলার ইতিহাসের গবেষকেরা রাধানাথের জীবন ও কর্মের বহু অজানা তথ্য উদ্ধার করেছেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে রাধানাথ শিকদারের নামই প্রথমে আসবে—এ কথায় আজ আর কোনো দ্বিধা বা সংশয়ের অবকাশ নেই।
তথ্যসূত্র:
১. রাধানাথ শিকদারের আত্মকথা ও মূল্যায়ন: দীপক দাঁ (সম্পা.)
২. রাধানাথ শিকদার/তথ্যের আলোয়: শঙ্করকুমার নাথ
৩. রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ-সমাজ: শিবনাথ শাস্ত্রী
৪. সেই সময়: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না ত
০৪ মার্চ ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না ত
০৪ মার্চ ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না ত
০৪ মার্চ ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

কলকাতার জোড়াসাঁকো, যে স্থান বিখ্যাত হয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের জন্য, যেখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত সিংহ পরিবারের কালীপ্রসন্ন সিংহ, যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সমগ্র ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন; সেই জোড়াসাঁকো এলাকাতেই ১৮১৩ সালে জন্ম রাধানাথ শিকদারের। তবে সেখানকার অন্য বিখ্যাত পরিবারের মতো অবস্থা ছিল না ত
০৪ মার্চ ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে