Ajker Patrika

প্রথম বিশ্ব ভ্রমণকারী নারী, ওমরাহ করেছিলেন পুরুষের বেশে

জাহাঙ্গীর আলম
প্রথম বিশ্ব ভ্রমণকারী নারী, ওমরাহ করেছিলেন পুরুষের বেশে

নাম তাঁর ইদ্রিস গ্যালসিয়া হল। ১৯০৬ সালের ১৩ অক্টোবর কানাডার উইনিপেগ শহরে জন্ম। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হার্বার্ট হল এবং মার্গারেট হেডলি হল দম্পতির কন্যা। পরবর্তীতে অবশ্য অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল নামেই বিখ্যাত হয়েছেন। 

 ১৯১৭ সালের জুনে যুদ্ধক্ষেত্রে বাবার মৃত্যুর পর মা ইদ্রিস গ্যালসিয়া ও তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আগে ইদ্রিস ফ্রান্সের একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। 

বাবার মৃত্যু ইদ্রিসের কচি মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির ছিলেন। স্কুলে সিনিয়রদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলায় জড়াতেন। ৬ ফুট উচ্চতার উচ্ছল প্রাণময় কিশোরী ইদ্রিসকে তারা ‘টমবয়’ বলে সম্বোধন করত। শান্ত সৌম্য সামাজিক কিশোরীতে রূপান্তরিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষার্থী ও মুরব্বিরা। কিন্তু ইদ্রিস এসব কখনোই গায়ে মাখেননি। বরং বাবার ছেলেবেলার প্রিয় সংগ্রহ থেকে চমৎকার গল্পের বইগুলোতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। সেসব গল্প ছিল ‘পুরুষালি’ অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। ইদ্রিস সেসব গল্পে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন। তখন থেকেই পৃথিবীর দূর প্রান্তে ভ্রমণে যাওয়া, অ্যাডভেঞ্চার আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। 

১৯২২ সালে ইদ্রিসের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর, প্যারিস হেরাল্ড পত্রিকার রিভেরা সংস্করণে একটি বিজ্ঞাপন তার নজর কাড়ে: ‘বুদ্ধি, সৌন্দর্য এবং পাজামা—ভাগ্যবান যুবতীর জন্য বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ...অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দিতে চান...এশিয়া, আফ্রিকা...।’ 

কিশোরী ইদ্রিসের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে এই বিজ্ঞাপন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ‘ক্যাপ্টেন’ ওয়াল্টার ওয়ান্ডারওয়েলের নেতৃত্বে একটি উচ্চাভিলাষী বিশ্ব ভ্রমণের জন্য সেক্রেটারি এবং ড্রাইভার পদে আবেদন করেন ইদ্রিস। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রকৃত নাম ভ্যালেরিয়ান জোহানেস পিসিনস্কি। পোল্যান্ডের নাগরিক তিনি। 

ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার ওয়ান্ডারওয়েল।একজন সাবেক নাবিক, বিশ্বমানের পর্বতারোহী এবং ভ্রমণকারী ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার। যুদ্ধের সময় গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের জেলে কাটিয়েছেন কিছুদিন। বিশ্ব শান্তি ও লিগ অব নেশনসের (বর্তমানে জাতিসংঘ) প্রচারের অংশ হিসেবে ১৯১৯ সালে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। 

ওয়ার্ক অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল ক্লাব (ডব্লিউএডব্লিউই) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াল্টার এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী নেল। ‘মিলিয়ন ডলারের বাজির’ আয়োজন করেন তাঁরা। 

নেল এবং ওয়াল্টার বিশ্বভ্রমণ অভিযানে প্রতিযোগী দলগুলোর নেতৃত্ব দিতেন। কোন দল সবচেয়ে বেশি মাইল ভ্রমণ করতে পারে—এটাই ছিল প্রতিযোগিতা। আর এই ভ্রমণের অর্থ জোগাড় করা হতো স্যুভেনির প্যাম্ফলেট বিক্রি, বক্তৃতা, রাস্তায় শুট ও সম্পাদনা করা চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শন থেকে পাওয়া আয় দিয়ে। 

 ১৯২২ সাল নাগাদ ইদ্রিস প্যারিস হেরাল্ডের বিজ্ঞাপনটির যখন জবাব দেন, তার অনেক আগেই ওয়াল্টার এবং নেল আলাদা হয়ে হয়ে গেছেন। নেলের দল তখন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছিল। ওয়াল্টার একটি কাস্টমাইজ করা ফোর্ড গাড়িতে ইউরোপ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দরকার ছিল ফরাসি ভাষায় সাবলীল একজন নতুন ক্রু মেম্বার। 

ইদ্রিসের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর উচ্ছলতা, আগ্রহ ও সাহস দেখে অভিভূত হন ওয়াল্টার। এক কথায় তাঁকে ক্রু হিসেবে নেন। ওই সময়ই ইদ্রিসের একটি নতুন মঞ্চ নাম দেন ওয়াল্টার: অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল। 

মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। 

রাস্তায় রাস্তায় জীবনের কঠোরতার সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন অ্যালোহা। ভ্রমণের বিবরণ নির্মাণেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। অভিনেত্রী, ফটোগ্রাফার, সিনেমাটোগ্রাফার, ড্রাইভার, সেলাই, লন্ড্রি, চলচ্চিত্র সম্পাদনা, বিচিত্রানুষ্ঠানের পারফরমার, বিক্রয়কর্মী, দোভাষী, আলোচক, মেকানিক...এবং ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের চাপিয়ে দেওয়া অন্য যে কোনো কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন তিনি। 

চারটি মহাদেশের ৪৩টি দেশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেছেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা। ভয়ংকর দুঃসাহসিক কাজ ছিল সেটি। 

তাঁরা ফ্রান্স এবং দেশটির যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিলেন...মুসোলিনি এবং ফ্যাসিবাদীরা যখন শক্তি সুসংহত করছিল ঠিক তখনই ইতালির ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া জার্মানিতে তখন খাদ্য সংকট নিয়ে দাঙ্গা এবং উগ্র আগ্রাসী জনতার দাপট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্ররা তখন ক্ষতিপূরণ দাবি করছে—এ পরিস্থিতিতে জার্মানির ভেতর দিয়ে যাত্রা.মিসরেররের রাজাদের উপত্যকায় গ্রেট স্ফিংক্সের পাদদেশে তাঁরা শিবির স্থাপন করেছিলেন…ফিলিস্তিন যেখানে ইহুদিরা বসতি গড়ার চেষ্টা করছে… ভারতের বিস্তীর্ণ বালুময় এলাকা, তাঁদের ফোর্ড গাড়িটি নদী পার করিয়ে দিয়েছিল জল মহিষ। 

গাড়িতে চালিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে অ্যালোহা। ছবি: অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল ডটকমঅ্যালোহা পর্তুগিজ উপনিবেশ-পূর্ব আফ্রিকার ভূমি পেরিয়েছিলেন এবং সুদানের মরুভূমিতে তৃষ্ণায় প্রায় মরতে বসেছিলেন…এর মধ্যে পুরুষের ছদ্মবেশে মক্কায় গিয়েছিলেন, সেখানে ওমরাহ পালন করেন… ইন্দো-চীনে হাতি শিকার করেছিলেন, চীনা দস্যুদের সঙ্গে ভাব করেছিলেন এবং এমনকি সাইবেরিয়ার রেড আর্মিতে অনারারি কর্নেল উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে...হলিউড সফরের সময় মেরি পিকফোর্ড এবং ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কসের সঙ্গে গলায়-গলায় সম্পর্ক হয়েছিল। 

অ্যালোহা পুরুষের বেশে মক্কায় ওমরাহ পালন করেন, কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোনো নারী একা সফর করতে পারেন না। 

এই দীর্ঘ ভ্রমণের মধ্যে অ্যালোহা ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রেমে পড়েন। তখনো কিন্তু ওয়াল্টার তাঁর প্রথম স্ত্রী নেলের কাছ থেকে ডিভোর্স পাননি। যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের পর, ওয়াল্টারকে ‘শ্বেতাঙ্গ দাসত্বের’ অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। বিবাহ বিচ্ছেদে সুবিধা আদায়ের জন্য নেলই যে এই চক্রান্ত করেছিলেন, সেটি পরে প্রমাণিত হয়। 

অবশেষে অ্যালোহা এবং ওয়াল্টার ক্যালিফোর্নিয়ায় বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি সন্তান হয়—নিল এবং ভ্যালরি। 

অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল ও ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার ওয়ান্ডারওয়েল দম্পতি। ১৯২৯ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে প্রাথমিক অভিযাত্রা শেষ করেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা জুটি। তাঁদের তথ্যচিত্র ‘উইথ কার অ্যান্ড ক্যামেরা অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়। 

প্রাথমিক অভিযানটি আমাজন অববাহিকার মাটা গ্রোসো অঞ্চলের গভীরে একটি অসাধারণ দুঃসাহসিক কাজ ছিল। তাঁদের বহনকারী বিমানটি অজানা জঙ্গলে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। অ্যালোহাকে একটি আদিবাসীর সঙ্গে থাকতে হয়েছিল। আর ওয়াল্টার ধীরে ধীরে সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁদের কয়েক মাস লেগে গিয়েছিল। 

চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী অ্যালোহা নেটিভদের মুগ্ধ করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রচুর ছবি তোলেন, তাঁদের জীবনযাপন নথিভুক্ত করেন। তাঁর চলচ্চিত্র—ফ্লাইট টু দ্য স্টোন এজ বোরোরোস, ছিল বোরোরো উপজাতির প্রথম চিত্রিত রেকর্ড। এটি এখন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের মানব স্টাডিজ আর্কাইভের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক সম্পদ। 

১৯৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর ওয়াল্টার আরও অভিযান ও চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু এর আগেই ঘটে যায় এক ট্যাজেডি।

অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল বেকার। প্রথম স্বামীর মৃত্যু ও দ্বিতীয় বিয়ের পর। ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে অ্যালোহা দম্পতির ‘দ্য কারমা’ নামের প্রমোদতরীতে আততায়ী হামলা করে। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সন্দেহভাজন একজনকে আটকও করা হয়। কিন্তু পরে তিনি খালাস পান। ওয়াল্টার হত্যাকাণ্ড পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বিখ্যাত অমীমাংসিত অপরাধগুলোর একটি।

ওয়াল্টারের মৃত্যুর পর অ্যালোহা ১৯৩৩ সালে ওয়াল্টার বেকারকে বিয়ে করেন। তিনি ডব্লিউএডব্লিউসি-এর সাবেক ক্যামেরাম্যান। 

নতুন স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন অ্যালোহা। প্রচুর অনুসন্ধানী কাজ, তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দেন। ‘আলোহা ওয়ান্ডারওয়েল, দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ট্রাভেলড গার্ল’ নামে খ্যাতি পান। তাঁর সময় একজন নারীর এমন দুঃসাহসিক কাজ ও বহুমুখী প্রতিভা একটি বিরল ঘটনা। 

আমাজনে বোরোরো আদিবাসীর সঙ্গে অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল। পরবর্তী বছরগুলোতে অ্যালোহা ভ্রমণের নেশা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র, ফটো, জার্নাল এবং অমূল্য শিল্পকর্ম সংগ্রহের দিকে ঝোঁকেন। তাঁর বেশিরভাগ কাজ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন জাদুঘর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে। 

১৯৯৬ সালের ৪ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল ওরফে ইদ্রিস হল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

সম্পাদকীয়
ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।

আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।

বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।

তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।

সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।

তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত