জাহাঙ্গীর আলম

নাম তাঁর ইদ্রিস গ্যালসিয়া হল। ১৯০৬ সালের ১৩ অক্টোবর কানাডার উইনিপেগ শহরে জন্ম। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হার্বার্ট হল এবং মার্গারেট হেডলি হল দম্পতির কন্যা। পরবর্তীতে অবশ্য অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল নামেই বিখ্যাত হয়েছেন।
১৯১৭ সালের জুনে যুদ্ধক্ষেত্রে বাবার মৃত্যুর পর মা ইদ্রিস গ্যালসিয়া ও তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আগে ইদ্রিস ফ্রান্সের একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।
বাবার মৃত্যু ইদ্রিসের কচি মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির ছিলেন। স্কুলে সিনিয়রদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলায় জড়াতেন। ৬ ফুট উচ্চতার উচ্ছল প্রাণময় কিশোরী ইদ্রিসকে তারা ‘টমবয়’ বলে সম্বোধন করত। শান্ত সৌম্য সামাজিক কিশোরীতে রূপান্তরিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষার্থী ও মুরব্বিরা। কিন্তু ইদ্রিস এসব কখনোই গায়ে মাখেননি। বরং বাবার ছেলেবেলার প্রিয় সংগ্রহ থেকে চমৎকার গল্পের বইগুলোতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। সেসব গল্প ছিল ‘পুরুষালি’ অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। ইদ্রিস সেসব গল্পে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন। তখন থেকেই পৃথিবীর দূর প্রান্তে ভ্রমণে যাওয়া, অ্যাডভেঞ্চার আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন।
১৯২২ সালে ইদ্রিসের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর, প্যারিস হেরাল্ড পত্রিকার রিভেরা সংস্করণে একটি বিজ্ঞাপন তার নজর কাড়ে: ‘বুদ্ধি, সৌন্দর্য এবং পাজামা—ভাগ্যবান যুবতীর জন্য বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ...অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দিতে চান...এশিয়া, আফ্রিকা...।’
কিশোরী ইদ্রিসের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে এই বিজ্ঞাপন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ‘ক্যাপ্টেন’ ওয়াল্টার ওয়ান্ডারওয়েলের নেতৃত্বে একটি উচ্চাভিলাষী বিশ্ব ভ্রমণের জন্য সেক্রেটারি এবং ড্রাইভার পদে আবেদন করেন ইদ্রিস। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রকৃত নাম ভ্যালেরিয়ান জোহানেস পিসিনস্কি। পোল্যান্ডের নাগরিক তিনি।
একজন সাবেক নাবিক, বিশ্বমানের পর্বতারোহী এবং ভ্রমণকারী ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার। যুদ্ধের সময় গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের জেলে কাটিয়েছেন কিছুদিন। বিশ্ব শান্তি ও লিগ অব নেশনসের (বর্তমানে জাতিসংঘ) প্রচারের অংশ হিসেবে ১৯১৯ সালে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন।
ওয়ার্ক অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল ক্লাব (ডব্লিউএডব্লিউই) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াল্টার এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী নেল। ‘মিলিয়ন ডলারের বাজির’ আয়োজন করেন তাঁরা।
নেল এবং ওয়াল্টার বিশ্বভ্রমণ অভিযানে প্রতিযোগী দলগুলোর নেতৃত্ব দিতেন। কোন দল সবচেয়ে বেশি মাইল ভ্রমণ করতে পারে—এটাই ছিল প্রতিযোগিতা। আর এই ভ্রমণের অর্থ জোগাড় করা হতো স্যুভেনির প্যাম্ফলেট বিক্রি, বক্তৃতা, রাস্তায় শুট ও সম্পাদনা করা চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শন থেকে পাওয়া আয় দিয়ে।
১৯২২ সাল নাগাদ ইদ্রিস প্যারিস হেরাল্ডের বিজ্ঞাপনটির যখন জবাব দেন, তার অনেক আগেই ওয়াল্টার এবং নেল আলাদা হয়ে হয়ে গেছেন। নেলের দল তখন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছিল। ওয়াল্টার একটি কাস্টমাইজ করা ফোর্ড গাড়িতে ইউরোপ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দরকার ছিল ফরাসি ভাষায় সাবলীল একজন নতুন ক্রু মেম্বার।
ইদ্রিসের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর উচ্ছলতা, আগ্রহ ও সাহস দেখে অভিভূত হন ওয়াল্টার। এক কথায় তাঁকে ক্রু হিসেবে নেন। ওই সময়ই ইদ্রিসের একটি নতুন মঞ্চ নাম দেন ওয়াল্টার: অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল।
মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
রাস্তায় রাস্তায় জীবনের কঠোরতার সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন অ্যালোহা। ভ্রমণের বিবরণ নির্মাণেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। অভিনেত্রী, ফটোগ্রাফার, সিনেমাটোগ্রাফার, ড্রাইভার, সেলাই, লন্ড্রি, চলচ্চিত্র সম্পাদনা, বিচিত্রানুষ্ঠানের পারফরমার, বিক্রয়কর্মী, দোভাষী, আলোচক, মেকানিক...এবং ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের চাপিয়ে দেওয়া অন্য যে কোনো কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন তিনি।
চারটি মহাদেশের ৪৩টি দেশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেছেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা। ভয়ংকর দুঃসাহসিক কাজ ছিল সেটি।
তাঁরা ফ্রান্স এবং দেশটির যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিলেন...মুসোলিনি এবং ফ্যাসিবাদীরা যখন শক্তি সুসংহত করছিল ঠিক তখনই ইতালির ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া জার্মানিতে তখন খাদ্য সংকট নিয়ে দাঙ্গা এবং উগ্র আগ্রাসী জনতার দাপট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্ররা তখন ক্ষতিপূরণ দাবি করছে—এ পরিস্থিতিতে জার্মানির ভেতর দিয়ে যাত্রা.মিসরেররের রাজাদের উপত্যকায় গ্রেট স্ফিংক্সের পাদদেশে তাঁরা শিবির স্থাপন করেছিলেন…ফিলিস্তিন যেখানে ইহুদিরা বসতি গড়ার চেষ্টা করছে… ভারতের বিস্তীর্ণ বালুময় এলাকা, তাঁদের ফোর্ড গাড়িটি নদী পার করিয়ে দিয়েছিল জল মহিষ।
অ্যালোহা পর্তুগিজ উপনিবেশ-পূর্ব আফ্রিকার ভূমি পেরিয়েছিলেন এবং সুদানের মরুভূমিতে তৃষ্ণায় প্রায় মরতে বসেছিলেন…এর মধ্যে পুরুষের ছদ্মবেশে মক্কায় গিয়েছিলেন, সেখানে ওমরাহ পালন করেন… ইন্দো-চীনে হাতি শিকার করেছিলেন, চীনা দস্যুদের সঙ্গে ভাব করেছিলেন এবং এমনকি সাইবেরিয়ার রেড আর্মিতে অনারারি কর্নেল উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে...হলিউড সফরের সময় মেরি পিকফোর্ড এবং ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কসের সঙ্গে গলায়-গলায় সম্পর্ক হয়েছিল।
অ্যালোহা পুরুষের বেশে মক্কায় ওমরাহ পালন করেন, কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোনো নারী একা সফর করতে পারেন না।
এই দীর্ঘ ভ্রমণের মধ্যে অ্যালোহা ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রেমে পড়েন। তখনো কিন্তু ওয়াল্টার তাঁর প্রথম স্ত্রী নেলের কাছ থেকে ডিভোর্স পাননি। যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের পর, ওয়াল্টারকে ‘শ্বেতাঙ্গ দাসত্বের’ অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। বিবাহ বিচ্ছেদে সুবিধা আদায়ের জন্য নেলই যে এই চক্রান্ত করেছিলেন, সেটি পরে প্রমাণিত হয়।
অবশেষে অ্যালোহা এবং ওয়াল্টার ক্যালিফোর্নিয়ায় বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি সন্তান হয়—নিল এবং ভ্যালরি।
১৯২৯ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে প্রাথমিক অভিযাত্রা শেষ করেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা জুটি। তাঁদের তথ্যচিত্র ‘উইথ কার অ্যান্ড ক্যামেরা অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
প্রাথমিক অভিযানটি আমাজন অববাহিকার মাটা গ্রোসো অঞ্চলের গভীরে একটি অসাধারণ দুঃসাহসিক কাজ ছিল। তাঁদের বহনকারী বিমানটি অজানা জঙ্গলে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। অ্যালোহাকে একটি আদিবাসীর সঙ্গে থাকতে হয়েছিল। আর ওয়াল্টার ধীরে ধীরে সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁদের কয়েক মাস লেগে গিয়েছিল।
চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী অ্যালোহা নেটিভদের মুগ্ধ করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রচুর ছবি তোলেন, তাঁদের জীবনযাপন নথিভুক্ত করেন। তাঁর চলচ্চিত্র—ফ্লাইট টু দ্য স্টোন এজ বোরোরোস, ছিল বোরোরো উপজাতির প্রথম চিত্রিত রেকর্ড। এটি এখন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের মানব স্টাডিজ আর্কাইভের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক সম্পদ।
১৯৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর ওয়াল্টার আরও অভিযান ও চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু এর আগেই ঘটে যায় এক ট্যাজেডি।
১৯৩২ সালের ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে অ্যালোহা দম্পতির ‘দ্য কারমা’ নামের প্রমোদতরীতে আততায়ী হামলা করে। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সন্দেহভাজন একজনকে আটকও করা হয়। কিন্তু পরে তিনি খালাস পান। ওয়াল্টার হত্যাকাণ্ড পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বিখ্যাত অমীমাংসিত অপরাধগুলোর একটি।
ওয়াল্টারের মৃত্যুর পর অ্যালোহা ১৯৩৩ সালে ওয়াল্টার বেকারকে বিয়ে করেন। তিনি ডব্লিউএডব্লিউসি-এর সাবেক ক্যামেরাম্যান।
নতুন স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন অ্যালোহা। প্রচুর অনুসন্ধানী কাজ, তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দেন। ‘আলোহা ওয়ান্ডারওয়েল, দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ট্রাভেলড গার্ল’ নামে খ্যাতি পান। তাঁর সময় একজন নারীর এমন দুঃসাহসিক কাজ ও বহুমুখী প্রতিভা একটি বিরল ঘটনা।
পরবর্তী বছরগুলোতে অ্যালোহা ভ্রমণের নেশা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র, ফটো, জার্নাল এবং অমূল্য শিল্পকর্ম সংগ্রহের দিকে ঝোঁকেন। তাঁর বেশিরভাগ কাজ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন জাদুঘর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে।
১৯৯৬ সালের ৪ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল ওরফে ইদ্রিস হল।

নাম তাঁর ইদ্রিস গ্যালসিয়া হল। ১৯০৬ সালের ১৩ অক্টোবর কানাডার উইনিপেগ শহরে জন্ম। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হার্বার্ট হল এবং মার্গারেট হেডলি হল দম্পতির কন্যা। পরবর্তীতে অবশ্য অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল নামেই বিখ্যাত হয়েছেন।
১৯১৭ সালের জুনে যুদ্ধক্ষেত্রে বাবার মৃত্যুর পর মা ইদ্রিস গ্যালসিয়া ও তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আগে ইদ্রিস ফ্রান্সের একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।
বাবার মৃত্যু ইদ্রিসের কচি মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির ছিলেন। স্কুলে সিনিয়রদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলায় জড়াতেন। ৬ ফুট উচ্চতার উচ্ছল প্রাণময় কিশোরী ইদ্রিসকে তারা ‘টমবয়’ বলে সম্বোধন করত। শান্ত সৌম্য সামাজিক কিশোরীতে রূপান্তরিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষার্থী ও মুরব্বিরা। কিন্তু ইদ্রিস এসব কখনোই গায়ে মাখেননি। বরং বাবার ছেলেবেলার প্রিয় সংগ্রহ থেকে চমৎকার গল্পের বইগুলোতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। সেসব গল্প ছিল ‘পুরুষালি’ অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। ইদ্রিস সেসব গল্পে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন। তখন থেকেই পৃথিবীর দূর প্রান্তে ভ্রমণে যাওয়া, অ্যাডভেঞ্চার আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন।
১৯২২ সালে ইদ্রিসের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর, প্যারিস হেরাল্ড পত্রিকার রিভেরা সংস্করণে একটি বিজ্ঞাপন তার নজর কাড়ে: ‘বুদ্ধি, সৌন্দর্য এবং পাজামা—ভাগ্যবান যুবতীর জন্য বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ...অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দিতে চান...এশিয়া, আফ্রিকা...।’
কিশোরী ইদ্রিসের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে এই বিজ্ঞাপন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ‘ক্যাপ্টেন’ ওয়াল্টার ওয়ান্ডারওয়েলের নেতৃত্বে একটি উচ্চাভিলাষী বিশ্ব ভ্রমণের জন্য সেক্রেটারি এবং ড্রাইভার পদে আবেদন করেন ইদ্রিস। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রকৃত নাম ভ্যালেরিয়ান জোহানেস পিসিনস্কি। পোল্যান্ডের নাগরিক তিনি।
একজন সাবেক নাবিক, বিশ্বমানের পর্বতারোহী এবং ভ্রমণকারী ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার। যুদ্ধের সময় গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের জেলে কাটিয়েছেন কিছুদিন। বিশ্ব শান্তি ও লিগ অব নেশনসের (বর্তমানে জাতিসংঘ) প্রচারের অংশ হিসেবে ১৯১৯ সালে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন।
ওয়ার্ক অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল ক্লাব (ডব্লিউএডব্লিউই) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াল্টার এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী নেল। ‘মিলিয়ন ডলারের বাজির’ আয়োজন করেন তাঁরা।
নেল এবং ওয়াল্টার বিশ্বভ্রমণ অভিযানে প্রতিযোগী দলগুলোর নেতৃত্ব দিতেন। কোন দল সবচেয়ে বেশি মাইল ভ্রমণ করতে পারে—এটাই ছিল প্রতিযোগিতা। আর এই ভ্রমণের অর্থ জোগাড় করা হতো স্যুভেনির প্যাম্ফলেট বিক্রি, বক্তৃতা, রাস্তায় শুট ও সম্পাদনা করা চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শন থেকে পাওয়া আয় দিয়ে।
১৯২২ সাল নাগাদ ইদ্রিস প্যারিস হেরাল্ডের বিজ্ঞাপনটির যখন জবাব দেন, তার অনেক আগেই ওয়াল্টার এবং নেল আলাদা হয়ে হয়ে গেছেন। নেলের দল তখন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছিল। ওয়াল্টার একটি কাস্টমাইজ করা ফোর্ড গাড়িতে ইউরোপ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দরকার ছিল ফরাসি ভাষায় সাবলীল একজন নতুন ক্রু মেম্বার।
ইদ্রিসের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর উচ্ছলতা, আগ্রহ ও সাহস দেখে অভিভূত হন ওয়াল্টার। এক কথায় তাঁকে ক্রু হিসেবে নেন। ওই সময়ই ইদ্রিসের একটি নতুন মঞ্চ নাম দেন ওয়াল্টার: অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল।
মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
রাস্তায় রাস্তায় জীবনের কঠোরতার সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন অ্যালোহা। ভ্রমণের বিবরণ নির্মাণেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। অভিনেত্রী, ফটোগ্রাফার, সিনেমাটোগ্রাফার, ড্রাইভার, সেলাই, লন্ড্রি, চলচ্চিত্র সম্পাদনা, বিচিত্রানুষ্ঠানের পারফরমার, বিক্রয়কর্মী, দোভাষী, আলোচক, মেকানিক...এবং ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের চাপিয়ে দেওয়া অন্য যে কোনো কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন তিনি।
চারটি মহাদেশের ৪৩টি দেশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেছেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা। ভয়ংকর দুঃসাহসিক কাজ ছিল সেটি।
তাঁরা ফ্রান্স এবং দেশটির যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিলেন...মুসোলিনি এবং ফ্যাসিবাদীরা যখন শক্তি সুসংহত করছিল ঠিক তখনই ইতালির ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া জার্মানিতে তখন খাদ্য সংকট নিয়ে দাঙ্গা এবং উগ্র আগ্রাসী জনতার দাপট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্ররা তখন ক্ষতিপূরণ দাবি করছে—এ পরিস্থিতিতে জার্মানির ভেতর দিয়ে যাত্রা.মিসরেররের রাজাদের উপত্যকায় গ্রেট স্ফিংক্সের পাদদেশে তাঁরা শিবির স্থাপন করেছিলেন…ফিলিস্তিন যেখানে ইহুদিরা বসতি গড়ার চেষ্টা করছে… ভারতের বিস্তীর্ণ বালুময় এলাকা, তাঁদের ফোর্ড গাড়িটি নদী পার করিয়ে দিয়েছিল জল মহিষ।
অ্যালোহা পর্তুগিজ উপনিবেশ-পূর্ব আফ্রিকার ভূমি পেরিয়েছিলেন এবং সুদানের মরুভূমিতে তৃষ্ণায় প্রায় মরতে বসেছিলেন…এর মধ্যে পুরুষের ছদ্মবেশে মক্কায় গিয়েছিলেন, সেখানে ওমরাহ পালন করেন… ইন্দো-চীনে হাতি শিকার করেছিলেন, চীনা দস্যুদের সঙ্গে ভাব করেছিলেন এবং এমনকি সাইবেরিয়ার রেড আর্মিতে অনারারি কর্নেল উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে...হলিউড সফরের সময় মেরি পিকফোর্ড এবং ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কসের সঙ্গে গলায়-গলায় সম্পর্ক হয়েছিল।
অ্যালোহা পুরুষের বেশে মক্কায় ওমরাহ পালন করেন, কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোনো নারী একা সফর করতে পারেন না।
এই দীর্ঘ ভ্রমণের মধ্যে অ্যালোহা ক্যাপ্টেন ওয়াল্টারের প্রেমে পড়েন। তখনো কিন্তু ওয়াল্টার তাঁর প্রথম স্ত্রী নেলের কাছ থেকে ডিভোর্স পাননি। যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের পর, ওয়াল্টারকে ‘শ্বেতাঙ্গ দাসত্বের’ অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। বিবাহ বিচ্ছেদে সুবিধা আদায়ের জন্য নেলই যে এই চক্রান্ত করেছিলেন, সেটি পরে প্রমাণিত হয়।
অবশেষে অ্যালোহা এবং ওয়াল্টার ক্যালিফোর্নিয়ায় বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি সন্তান হয়—নিল এবং ভ্যালরি।
১৯২৯ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে প্রাথমিক অভিযাত্রা শেষ করেন ওয়াল্টার-অ্যালোহা জুটি। তাঁদের তথ্যচিত্র ‘উইথ কার অ্যান্ড ক্যামেরা অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
প্রাথমিক অভিযানটি আমাজন অববাহিকার মাটা গ্রোসো অঞ্চলের গভীরে একটি অসাধারণ দুঃসাহসিক কাজ ছিল। তাঁদের বহনকারী বিমানটি অজানা জঙ্গলে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। অ্যালোহাকে একটি আদিবাসীর সঙ্গে থাকতে হয়েছিল। আর ওয়াল্টার ধীরে ধীরে সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁদের কয়েক মাস লেগে গিয়েছিল।
চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী অ্যালোহা নেটিভদের মুগ্ধ করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রচুর ছবি তোলেন, তাঁদের জীবনযাপন নথিভুক্ত করেন। তাঁর চলচ্চিত্র—ফ্লাইট টু দ্য স্টোন এজ বোরোরোস, ছিল বোরোরো উপজাতির প্রথম চিত্রিত রেকর্ড। এটি এখন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের মানব স্টাডিজ আর্কাইভের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক সম্পদ।
১৯৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর ওয়াল্টার আরও অভিযান ও চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু এর আগেই ঘটে যায় এক ট্যাজেডি।
১৯৩২ সালের ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে অ্যালোহা দম্পতির ‘দ্য কারমা’ নামের প্রমোদতরীতে আততায়ী হামলা করে। ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সন্দেহভাজন একজনকে আটকও করা হয়। কিন্তু পরে তিনি খালাস পান। ওয়াল্টার হত্যাকাণ্ড পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বিখ্যাত অমীমাংসিত অপরাধগুলোর একটি।
ওয়াল্টারের মৃত্যুর পর অ্যালোহা ১৯৩৩ সালে ওয়াল্টার বেকারকে বিয়ে করেন। তিনি ডব্লিউএডব্লিউসি-এর সাবেক ক্যামেরাম্যান।
নতুন স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন অ্যালোহা। প্রচুর অনুসন্ধানী কাজ, তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দেন। ‘আলোহা ওয়ান্ডারওয়েল, দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ট্রাভেলড গার্ল’ নামে খ্যাতি পান। তাঁর সময় একজন নারীর এমন দুঃসাহসিক কাজ ও বহুমুখী প্রতিভা একটি বিরল ঘটনা।
পরবর্তী বছরগুলোতে অ্যালোহা ভ্রমণের নেশা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র, ফটো, জার্নাল এবং অমূল্য শিল্পকর্ম সংগ্রহের দিকে ঝোঁকেন। তাঁর বেশিরভাগ কাজ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন জাদুঘর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে।
১৯৯৬ সালের ৪ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অ্যালোহা ওয়ান্ডারওয়েল ওরফে ইদ্রিস হল।

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
০৮ মার্চ ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
০৮ মার্চ ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
০৮ মার্চ ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

মায়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াল্টারের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন অ্যালোহা। দ্রুতই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।
০৮ মার্চ ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে