ইজাজুল হক, ঢাকা

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সান্নিধ্য-ধন্য এই শিল্পী একসময় চিত্রকলার নানা শাখায় কাজ করেছেন; উপভোগ করেছেন রঙের ভুবন। বর্তমানে ক্যালিগ্রাফিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। এই শিল্পকে একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন—সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
মাহবুব মুর্শিদের জন্ম যশোরে, ১৯৬১ সালে। পড়াশোনা করেছেন যশোরেই। শৈশবেই তাঁর শিল্পসত্তার বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালে বিভিন্ন বিষয়ে আঁকাআঁকি করতেন। অঙ্কন ক্লাসে দশে-দশ পাওয়া তাঁর জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে দলছুট দিন কাটাতেন। রংতুলি তাঁকে ভীষণ টানত। যশোর শহরের আর্টের দোকানগুলোতে আনমনে ঘুরতেন। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা পেইন্টিংগুলোতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। মনে মনে একজন শিল্পগুরুর সন্ধান করতেন।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সন্ধান পান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের। সুলতান তখন যশোর শহরের একটি পুরোনো হোস্টেলে আর্ট শেখাতেন, যেখানে ছোট-বড় অনেকেই অংশ নিতেন। পরে ‘চারুপীঠ’ নামে শিশুদের একটি আর্ট শেখার স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মাহবুব তাঁর কাছে যান এবং শিল্প দীক্ষা গ্রহণ করেন। সুলতানের সঙ্গে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একদিন খোঁজ পেলাম বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের। দেখতে গেলাম তাঁকে। খুব ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম। অনেকেই তাঁর সামনে বসে আছেন। তিনি ছবি আঁকছেন। তাঁর বেশভূষা আমার খুব পছন্দ হলো। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিশীলতা আমাকে মুগ্ধ করল। সারা দিন তাঁর আঁকাআঁকি দেখলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তাঁর মতো আঁকার চেষ্টা করলাম। এভাবেই শুরু। এরপর প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম। তিনি নড়াইলে চলে যাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে তাঁর সান্নিধ্য নিতাম। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদেই থেকেছি।’
মাহবুব জানান, সেই দিনগুলোতে যশোর কেন্দ্রীয় পাঠাগারের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এস এম সুলতান, মোস্তফা আজীজ, খন্দকার বদরুল ইসলাম নান্নু, মাহবুব জামাল শামীমসহ দেশসেরা শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর তিনটি চিত্রকর্ম স্থান পায়। তিন চিত্রের একটি ছিল এস এম সুলতানের পোর্ট্রেট। তিনি তা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং তাঁকে উৎসাহ-আশীর্বাদ দেন।

গত শতকের ৯০-এর দশকে যশোর শহরে ক্রমেই পরিচিত হয়ে ওঠেন তরুণ শিল্পী মাহবুব। একসময়ের আগ্রহের জায়গা আঁকাআঁকিই সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠে তাঁর আয়-রোজগারের প্রধান অবলম্বন। প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট শপ ‘অঙ্কন’। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। দশ-বারোজন শাগরেদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। সে সময় প্রচুর ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ছবি ও পোর্ট্রেট আঁকতেন। মাঝেমধ্যে ক্যালিগ্রাফিও করতেন।
ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে তাঁর পরিচিতি আরও আগে। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে ইরান-ইরাকের কয়েকটি শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকায় তিনি সর্বপ্রথম ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা পান। পত্রিকাগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করতেন এবং সেখানে থাকা ক্যালিগ্রাফিগুলোর অনুশীলন করতেন। ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার সুযোগ না পেলেও এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় তিনি শিল্পটি ভালোভাবে রপ্ত করেন। ধীরে ধীরে ক্যালিগ্রাফির প্রতি আলাদা দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। ২০০০ সালে ঢাকার একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তা আরও বেগবান হয়।
এরপর ক্যালিগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁর বেশি দিন সময় লাগেনি। একের পর এক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিজের শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, তেহরান, লাহোর ও রাজস্থানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপনের সুযোগ। ২০১১ সালে ক্যালিগ্রাফির জন্য সর্বপ্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান। ২১টি দেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত ইরানের তেহরানের এই প্রদর্শনীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে ভারতের আজমির শরিফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আরেক প্রদর্শনীতেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ভারতের রাজস্থানের ‘জয়পুর আর্ট সামিট’-এ একমাত্র ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পান। তাঁর ক্যালিগ্রাফি সংরক্ষিত আছে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশ-বিদেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে।
বর্তমানে শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ ক্যালিগ্রাফির বাইরে অন্য কোনো কাজ করেন না। ‘গালা’ ও ‘এমএম আর্ট ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের প্রধান মাধ্যম ক্যানভাসে এক্রিলিক কালার ও ওয়াটার কালার। এ ছাড়া তিনি মাটির টেরাকোটা, টাইলসের ম্যুরাল, বাঁশের চাটাই এবং মাটির পটারিতেও ক্যালিগ্রাফি করেন।
চাহিদার কারণে তাঁর বেশির ভাগ ক্যালিগ্রাফির ভাষা আরবি এবং কোরআনের আয়াত হলেও প্রায় অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন বাংলা ক্যালিগ্রাফিও করেছেন তিনি। ‘সুলুস’ লিখনশৈলীতে বেশির ভাগ কাজ করেছেন; তবে ‘সুনবুলি’ লিখনশৈলীও তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। রঙের ব্যাপারে বরাবরই সচেতন তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফিতে আধুনিক চিত্রশিল্পের নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘যেকোনো পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রং নির্বাচন মুখ্য বিষয়। রং যদি সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হয়, তাহলে পেইন্টিং খুব বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ হয় না। আর আমাদের দেশের মানুষ আধুনিক চিত্রশিল্প দেখে অভ্যস্ত। আপনি যদি এই বিশাল দর্শক শ্রেণিকে নতুন একটা শিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই আধুনিক শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ফলে মানুষ আপনার শিল্পকে সাদরে গ্রহণ করবে।’
তাঁর ক্যালিগ্রাফির শিল্পমান মূল্যায়ন করে ক্যালিগ্রাফি-গবেষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মানসুর তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘সমকালীন ইসলামি ক্যালিগ্রাফি: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘মাহবুব মুর্শিদ উলম্ব-অনুভূমিক রেখা অঙ্কনে ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করেছেন। লিখনশিল্পের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা তাঁর শিল্পকর্মে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। …তাঁর শিল্পকর্মে ক্যালিগ্রাফির অর্থ ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন; তা বিমূর্ত ঢঙে করতে প্রয়াস চালান তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফি উজ্জ্বল রং ব্যবহারে উদ্ভাসিত। …তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশের ফুল, লতা-পাতার সমাহারে ক্যালিগ্রাফির মধ্যে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণার প্রয়াস পেয়েছেন।’
মাহবুব মুর্শিদের স্বপ্ন, ক্যালিগ্রাফিকে তিনি একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ তিনি মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থাকার কারণে এটিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন। তাই তিনি মূলধারার শিল্পশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যেই তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা সত্তরের দশক থেকে শুরু হলেও গত পঞ্চাশ বছরে যে কাজটি কেউ করতে পারেননি, তা তিনি মাত্র চার বছরে করতে পেরেছেন এবং ক্যালিগ্রাফিকে স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের সংগঠিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট গিল্ড’। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেছেন বাণিজ্যিকভাবে ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ পর্যন্ত তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ১৭টি কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ২ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী কর্মশালাগুলোতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর কাছ থেকে ক্যালিগ্রাফির পাঠ গ্রহণ করে অনেকেই বর্তমানে সফলতার সঙ্গে এ শিল্পের চর্চা করছেন এবং নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্যালিগ্রাফির বাজার কেমন এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খুবই আশাব্যঞ্জক। শুধু প্রয়োজন মানসম্মত কাজ ও ব্যাপক প্রচার। এই শিল্প একদিকে যেমন আধুনিক শিল্পের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে পারে।’ নিজের ক্যালিগ্রাফির বাজারমূল্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি ১০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, এই পেশা খুবই সম্মানজনক। এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তবে সেই স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নবীনদের কর্তব্য হলো, শিল্পটিকে নিখুঁতভাবে শেখা এবং সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সান্নিধ্য-ধন্য এই শিল্পী একসময় চিত্রকলার নানা শাখায় কাজ করেছেন; উপভোগ করেছেন রঙের ভুবন। বর্তমানে ক্যালিগ্রাফিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। এই শিল্পকে একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন—সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
মাহবুব মুর্শিদের জন্ম যশোরে, ১৯৬১ সালে। পড়াশোনা করেছেন যশোরেই। শৈশবেই তাঁর শিল্পসত্তার বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালে বিভিন্ন বিষয়ে আঁকাআঁকি করতেন। অঙ্কন ক্লাসে দশে-দশ পাওয়া তাঁর জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে দলছুট দিন কাটাতেন। রংতুলি তাঁকে ভীষণ টানত। যশোর শহরের আর্টের দোকানগুলোতে আনমনে ঘুরতেন। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা পেইন্টিংগুলোতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। মনে মনে একজন শিল্পগুরুর সন্ধান করতেন।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সন্ধান পান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের। সুলতান তখন যশোর শহরের একটি পুরোনো হোস্টেলে আর্ট শেখাতেন, যেখানে ছোট-বড় অনেকেই অংশ নিতেন। পরে ‘চারুপীঠ’ নামে শিশুদের একটি আর্ট শেখার স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মাহবুব তাঁর কাছে যান এবং শিল্প দীক্ষা গ্রহণ করেন। সুলতানের সঙ্গে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একদিন খোঁজ পেলাম বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের। দেখতে গেলাম তাঁকে। খুব ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম। অনেকেই তাঁর সামনে বসে আছেন। তিনি ছবি আঁকছেন। তাঁর বেশভূষা আমার খুব পছন্দ হলো। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিশীলতা আমাকে মুগ্ধ করল। সারা দিন তাঁর আঁকাআঁকি দেখলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তাঁর মতো আঁকার চেষ্টা করলাম। এভাবেই শুরু। এরপর প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম। তিনি নড়াইলে চলে যাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে তাঁর সান্নিধ্য নিতাম। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদেই থেকেছি।’
মাহবুব জানান, সেই দিনগুলোতে যশোর কেন্দ্রীয় পাঠাগারের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এস এম সুলতান, মোস্তফা আজীজ, খন্দকার বদরুল ইসলাম নান্নু, মাহবুব জামাল শামীমসহ দেশসেরা শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর তিনটি চিত্রকর্ম স্থান পায়। তিন চিত্রের একটি ছিল এস এম সুলতানের পোর্ট্রেট। তিনি তা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং তাঁকে উৎসাহ-আশীর্বাদ দেন।

গত শতকের ৯০-এর দশকে যশোর শহরে ক্রমেই পরিচিত হয়ে ওঠেন তরুণ শিল্পী মাহবুব। একসময়ের আগ্রহের জায়গা আঁকাআঁকিই সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠে তাঁর আয়-রোজগারের প্রধান অবলম্বন। প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট শপ ‘অঙ্কন’। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। দশ-বারোজন শাগরেদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। সে সময় প্রচুর ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ছবি ও পোর্ট্রেট আঁকতেন। মাঝেমধ্যে ক্যালিগ্রাফিও করতেন।
ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে তাঁর পরিচিতি আরও আগে। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে ইরান-ইরাকের কয়েকটি শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকায় তিনি সর্বপ্রথম ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা পান। পত্রিকাগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করতেন এবং সেখানে থাকা ক্যালিগ্রাফিগুলোর অনুশীলন করতেন। ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার সুযোগ না পেলেও এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় তিনি শিল্পটি ভালোভাবে রপ্ত করেন। ধীরে ধীরে ক্যালিগ্রাফির প্রতি আলাদা দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। ২০০০ সালে ঢাকার একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তা আরও বেগবান হয়।
এরপর ক্যালিগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁর বেশি দিন সময় লাগেনি। একের পর এক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিজের শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, তেহরান, লাহোর ও রাজস্থানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপনের সুযোগ। ২০১১ সালে ক্যালিগ্রাফির জন্য সর্বপ্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান। ২১টি দেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত ইরানের তেহরানের এই প্রদর্শনীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে ভারতের আজমির শরিফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আরেক প্রদর্শনীতেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ভারতের রাজস্থানের ‘জয়পুর আর্ট সামিট’-এ একমাত্র ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পান। তাঁর ক্যালিগ্রাফি সংরক্ষিত আছে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশ-বিদেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে।
বর্তমানে শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ ক্যালিগ্রাফির বাইরে অন্য কোনো কাজ করেন না। ‘গালা’ ও ‘এমএম আর্ট ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের প্রধান মাধ্যম ক্যানভাসে এক্রিলিক কালার ও ওয়াটার কালার। এ ছাড়া তিনি মাটির টেরাকোটা, টাইলসের ম্যুরাল, বাঁশের চাটাই এবং মাটির পটারিতেও ক্যালিগ্রাফি করেন।
চাহিদার কারণে তাঁর বেশির ভাগ ক্যালিগ্রাফির ভাষা আরবি এবং কোরআনের আয়াত হলেও প্রায় অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন বাংলা ক্যালিগ্রাফিও করেছেন তিনি। ‘সুলুস’ লিখনশৈলীতে বেশির ভাগ কাজ করেছেন; তবে ‘সুনবুলি’ লিখনশৈলীও তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। রঙের ব্যাপারে বরাবরই সচেতন তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফিতে আধুনিক চিত্রশিল্পের নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘যেকোনো পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রং নির্বাচন মুখ্য বিষয়। রং যদি সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হয়, তাহলে পেইন্টিং খুব বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ হয় না। আর আমাদের দেশের মানুষ আধুনিক চিত্রশিল্প দেখে অভ্যস্ত। আপনি যদি এই বিশাল দর্শক শ্রেণিকে নতুন একটা শিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই আধুনিক শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ফলে মানুষ আপনার শিল্পকে সাদরে গ্রহণ করবে।’
তাঁর ক্যালিগ্রাফির শিল্পমান মূল্যায়ন করে ক্যালিগ্রাফি-গবেষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মানসুর তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘সমকালীন ইসলামি ক্যালিগ্রাফি: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘মাহবুব মুর্শিদ উলম্ব-অনুভূমিক রেখা অঙ্কনে ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করেছেন। লিখনশিল্পের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা তাঁর শিল্পকর্মে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। …তাঁর শিল্পকর্মে ক্যালিগ্রাফির অর্থ ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন; তা বিমূর্ত ঢঙে করতে প্রয়াস চালান তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফি উজ্জ্বল রং ব্যবহারে উদ্ভাসিত। …তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশের ফুল, লতা-পাতার সমাহারে ক্যালিগ্রাফির মধ্যে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণার প্রয়াস পেয়েছেন।’
মাহবুব মুর্শিদের স্বপ্ন, ক্যালিগ্রাফিকে তিনি একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ তিনি মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থাকার কারণে এটিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন। তাই তিনি মূলধারার শিল্পশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যেই তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা সত্তরের দশক থেকে শুরু হলেও গত পঞ্চাশ বছরে যে কাজটি কেউ করতে পারেননি, তা তিনি মাত্র চার বছরে করতে পেরেছেন এবং ক্যালিগ্রাফিকে স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের সংগঠিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট গিল্ড’। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেছেন বাণিজ্যিকভাবে ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ পর্যন্ত তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ১৭টি কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ২ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী কর্মশালাগুলোতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর কাছ থেকে ক্যালিগ্রাফির পাঠ গ্রহণ করে অনেকেই বর্তমানে সফলতার সঙ্গে এ শিল্পের চর্চা করছেন এবং নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্যালিগ্রাফির বাজার কেমন এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খুবই আশাব্যঞ্জক। শুধু প্রয়োজন মানসম্মত কাজ ও ব্যাপক প্রচার। এই শিল্প একদিকে যেমন আধুনিক শিল্পের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে পারে।’ নিজের ক্যালিগ্রাফির বাজারমূল্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি ১০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, এই পেশা খুবই সম্মানজনক। এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তবে সেই স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নবীনদের কর্তব্য হলো, শিল্পটিকে নিখুঁতভাবে শেখা এবং সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১৭ ঘণ্টা আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১৭ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১৭ ঘণ্টা আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
১৭ ঘণ্টা আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
২ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে