ইজাজুল হক, ঢাকা

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সান্নিধ্য-ধন্য এই শিল্পী একসময় চিত্রকলার নানা শাখায় কাজ করেছেন; উপভোগ করেছেন রঙের ভুবন। বর্তমানে ক্যালিগ্রাফিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। এই শিল্পকে একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন—সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
মাহবুব মুর্শিদের জন্ম যশোরে, ১৯৬১ সালে। পড়াশোনা করেছেন যশোরেই। শৈশবেই তাঁর শিল্পসত্তার বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালে বিভিন্ন বিষয়ে আঁকাআঁকি করতেন। অঙ্কন ক্লাসে দশে-দশ পাওয়া তাঁর জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে দলছুট দিন কাটাতেন। রংতুলি তাঁকে ভীষণ টানত। যশোর শহরের আর্টের দোকানগুলোতে আনমনে ঘুরতেন। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা পেইন্টিংগুলোতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। মনে মনে একজন শিল্পগুরুর সন্ধান করতেন।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সন্ধান পান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের। সুলতান তখন যশোর শহরের একটি পুরোনো হোস্টেলে আর্ট শেখাতেন, যেখানে ছোট-বড় অনেকেই অংশ নিতেন। পরে ‘চারুপীঠ’ নামে শিশুদের একটি আর্ট শেখার স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মাহবুব তাঁর কাছে যান এবং শিল্প দীক্ষা গ্রহণ করেন। সুলতানের সঙ্গে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একদিন খোঁজ পেলাম বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের। দেখতে গেলাম তাঁকে। খুব ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম। অনেকেই তাঁর সামনে বসে আছেন। তিনি ছবি আঁকছেন। তাঁর বেশভূষা আমার খুব পছন্দ হলো। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিশীলতা আমাকে মুগ্ধ করল। সারা দিন তাঁর আঁকাআঁকি দেখলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তাঁর মতো আঁকার চেষ্টা করলাম। এভাবেই শুরু। এরপর প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম। তিনি নড়াইলে চলে যাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে তাঁর সান্নিধ্য নিতাম। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদেই থেকেছি।’
মাহবুব জানান, সেই দিনগুলোতে যশোর কেন্দ্রীয় পাঠাগারের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এস এম সুলতান, মোস্তফা আজীজ, খন্দকার বদরুল ইসলাম নান্নু, মাহবুব জামাল শামীমসহ দেশসেরা শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর তিনটি চিত্রকর্ম স্থান পায়। তিন চিত্রের একটি ছিল এস এম সুলতানের পোর্ট্রেট। তিনি তা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং তাঁকে উৎসাহ-আশীর্বাদ দেন।

গত শতকের ৯০-এর দশকে যশোর শহরে ক্রমেই পরিচিত হয়ে ওঠেন তরুণ শিল্পী মাহবুব। একসময়ের আগ্রহের জায়গা আঁকাআঁকিই সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠে তাঁর আয়-রোজগারের প্রধান অবলম্বন। প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট শপ ‘অঙ্কন’। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। দশ-বারোজন শাগরেদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। সে সময় প্রচুর ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ছবি ও পোর্ট্রেট আঁকতেন। মাঝেমধ্যে ক্যালিগ্রাফিও করতেন।
ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে তাঁর পরিচিতি আরও আগে। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে ইরান-ইরাকের কয়েকটি শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকায় তিনি সর্বপ্রথম ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা পান। পত্রিকাগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করতেন এবং সেখানে থাকা ক্যালিগ্রাফিগুলোর অনুশীলন করতেন। ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার সুযোগ না পেলেও এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় তিনি শিল্পটি ভালোভাবে রপ্ত করেন। ধীরে ধীরে ক্যালিগ্রাফির প্রতি আলাদা দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। ২০০০ সালে ঢাকার একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তা আরও বেগবান হয়।
এরপর ক্যালিগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁর বেশি দিন সময় লাগেনি। একের পর এক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিজের শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, তেহরান, লাহোর ও রাজস্থানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপনের সুযোগ। ২০১১ সালে ক্যালিগ্রাফির জন্য সর্বপ্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান। ২১টি দেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত ইরানের তেহরানের এই প্রদর্শনীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে ভারতের আজমির শরিফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আরেক প্রদর্শনীতেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ভারতের রাজস্থানের ‘জয়পুর আর্ট সামিট’-এ একমাত্র ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পান। তাঁর ক্যালিগ্রাফি সংরক্ষিত আছে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশ-বিদেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে।
বর্তমানে শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ ক্যালিগ্রাফির বাইরে অন্য কোনো কাজ করেন না। ‘গালা’ ও ‘এমএম আর্ট ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের প্রধান মাধ্যম ক্যানভাসে এক্রিলিক কালার ও ওয়াটার কালার। এ ছাড়া তিনি মাটির টেরাকোটা, টাইলসের ম্যুরাল, বাঁশের চাটাই এবং মাটির পটারিতেও ক্যালিগ্রাফি করেন।
চাহিদার কারণে তাঁর বেশির ভাগ ক্যালিগ্রাফির ভাষা আরবি এবং কোরআনের আয়াত হলেও প্রায় অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন বাংলা ক্যালিগ্রাফিও করেছেন তিনি। ‘সুলুস’ লিখনশৈলীতে বেশির ভাগ কাজ করেছেন; তবে ‘সুনবুলি’ লিখনশৈলীও তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। রঙের ব্যাপারে বরাবরই সচেতন তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফিতে আধুনিক চিত্রশিল্পের নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘যেকোনো পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রং নির্বাচন মুখ্য বিষয়। রং যদি সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হয়, তাহলে পেইন্টিং খুব বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ হয় না। আর আমাদের দেশের মানুষ আধুনিক চিত্রশিল্প দেখে অভ্যস্ত। আপনি যদি এই বিশাল দর্শক শ্রেণিকে নতুন একটা শিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই আধুনিক শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ফলে মানুষ আপনার শিল্পকে সাদরে গ্রহণ করবে।’
তাঁর ক্যালিগ্রাফির শিল্পমান মূল্যায়ন করে ক্যালিগ্রাফি-গবেষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মানসুর তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘সমকালীন ইসলামি ক্যালিগ্রাফি: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘মাহবুব মুর্শিদ উলম্ব-অনুভূমিক রেখা অঙ্কনে ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করেছেন। লিখনশিল্পের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা তাঁর শিল্পকর্মে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। …তাঁর শিল্পকর্মে ক্যালিগ্রাফির অর্থ ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন; তা বিমূর্ত ঢঙে করতে প্রয়াস চালান তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফি উজ্জ্বল রং ব্যবহারে উদ্ভাসিত। …তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশের ফুল, লতা-পাতার সমাহারে ক্যালিগ্রাফির মধ্যে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণার প্রয়াস পেয়েছেন।’
মাহবুব মুর্শিদের স্বপ্ন, ক্যালিগ্রাফিকে তিনি একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ তিনি মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থাকার কারণে এটিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন। তাই তিনি মূলধারার শিল্পশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যেই তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা সত্তরের দশক থেকে শুরু হলেও গত পঞ্চাশ বছরে যে কাজটি কেউ করতে পারেননি, তা তিনি মাত্র চার বছরে করতে পেরেছেন এবং ক্যালিগ্রাফিকে স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের সংগঠিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট গিল্ড’। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেছেন বাণিজ্যিকভাবে ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ পর্যন্ত তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ১৭টি কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ২ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী কর্মশালাগুলোতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর কাছ থেকে ক্যালিগ্রাফির পাঠ গ্রহণ করে অনেকেই বর্তমানে সফলতার সঙ্গে এ শিল্পের চর্চা করছেন এবং নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্যালিগ্রাফির বাজার কেমন এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খুবই আশাব্যঞ্জক। শুধু প্রয়োজন মানসম্মত কাজ ও ব্যাপক প্রচার। এই শিল্প একদিকে যেমন আধুনিক শিল্পের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে পারে।’ নিজের ক্যালিগ্রাফির বাজারমূল্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি ১০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, এই পেশা খুবই সম্মানজনক। এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তবে সেই স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নবীনদের কর্তব্য হলো, শিল্পটিকে নিখুঁতভাবে শেখা এবং সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সান্নিধ্য-ধন্য এই শিল্পী একসময় চিত্রকলার নানা শাখায় কাজ করেছেন; উপভোগ করেছেন রঙের ভুবন। বর্তমানে ক্যালিগ্রাফিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। এই শিল্পকে একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন—সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
মাহবুব মুর্শিদের জন্ম যশোরে, ১৯৬১ সালে। পড়াশোনা করেছেন যশোরেই। শৈশবেই তাঁর শিল্পসত্তার বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালে বিভিন্ন বিষয়ে আঁকাআঁকি করতেন। অঙ্কন ক্লাসে দশে-দশ পাওয়া তাঁর জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে দলছুট দিন কাটাতেন। রংতুলি তাঁকে ভীষণ টানত। যশোর শহরের আর্টের দোকানগুলোতে আনমনে ঘুরতেন। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা পেইন্টিংগুলোতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। মনে মনে একজন শিল্পগুরুর সন্ধান করতেন।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সন্ধান পান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের। সুলতান তখন যশোর শহরের একটি পুরোনো হোস্টেলে আর্ট শেখাতেন, যেখানে ছোট-বড় অনেকেই অংশ নিতেন। পরে ‘চারুপীঠ’ নামে শিশুদের একটি আর্ট শেখার স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মাহবুব তাঁর কাছে যান এবং শিল্প দীক্ষা গ্রহণ করেন। সুলতানের সঙ্গে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একদিন খোঁজ পেলাম বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের। দেখতে গেলাম তাঁকে। খুব ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম। অনেকেই তাঁর সামনে বসে আছেন। তিনি ছবি আঁকছেন। তাঁর বেশভূষা আমার খুব পছন্দ হলো। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিশীলতা আমাকে মুগ্ধ করল। সারা দিন তাঁর আঁকাআঁকি দেখলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তাঁর মতো আঁকার চেষ্টা করলাম। এভাবেই শুরু। এরপর প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম। তিনি নড়াইলে চলে যাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে তাঁর সান্নিধ্য নিতাম। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদেই থেকেছি।’
মাহবুব জানান, সেই দিনগুলোতে যশোর কেন্দ্রীয় পাঠাগারের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এস এম সুলতান, মোস্তফা আজীজ, খন্দকার বদরুল ইসলাম নান্নু, মাহবুব জামাল শামীমসহ দেশসেরা শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর তিনটি চিত্রকর্ম স্থান পায়। তিন চিত্রের একটি ছিল এস এম সুলতানের পোর্ট্রেট। তিনি তা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং তাঁকে উৎসাহ-আশীর্বাদ দেন।

গত শতকের ৯০-এর দশকে যশোর শহরে ক্রমেই পরিচিত হয়ে ওঠেন তরুণ শিল্পী মাহবুব। একসময়ের আগ্রহের জায়গা আঁকাআঁকিই সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠে তাঁর আয়-রোজগারের প্রধান অবলম্বন। প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট শপ ‘অঙ্কন’। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। দশ-বারোজন শাগরেদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। সে সময় প্রচুর ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ছবি ও পোর্ট্রেট আঁকতেন। মাঝেমধ্যে ক্যালিগ্রাফিও করতেন।
ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে তাঁর পরিচিতি আরও আগে। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে ইরান-ইরাকের কয়েকটি শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকায় তিনি সর্বপ্রথম ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা পান। পত্রিকাগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করতেন এবং সেখানে থাকা ক্যালিগ্রাফিগুলোর অনুশীলন করতেন। ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার সুযোগ না পেলেও এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় তিনি শিল্পটি ভালোভাবে রপ্ত করেন। ধীরে ধীরে ক্যালিগ্রাফির প্রতি আলাদা দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। ২০০০ সালে ঢাকার একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তা আরও বেগবান হয়।
এরপর ক্যালিগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁর বেশি দিন সময় লাগেনি। একের পর এক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিজের শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, তেহরান, লাহোর ও রাজস্থানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপনের সুযোগ। ২০১১ সালে ক্যালিগ্রাফির জন্য সর্বপ্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান। ২১টি দেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত ইরানের তেহরানের এই প্রদর্শনীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে ভারতের আজমির শরিফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আরেক প্রদর্শনীতেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ভারতের রাজস্থানের ‘জয়পুর আর্ট সামিট’-এ একমাত্র ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পান। তাঁর ক্যালিগ্রাফি সংরক্ষিত আছে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশ-বিদেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে।
বর্তমানে শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ ক্যালিগ্রাফির বাইরে অন্য কোনো কাজ করেন না। ‘গালা’ ও ‘এমএম আর্ট ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের প্রধান মাধ্যম ক্যানভাসে এক্রিলিক কালার ও ওয়াটার কালার। এ ছাড়া তিনি মাটির টেরাকোটা, টাইলসের ম্যুরাল, বাঁশের চাটাই এবং মাটির পটারিতেও ক্যালিগ্রাফি করেন।
চাহিদার কারণে তাঁর বেশির ভাগ ক্যালিগ্রাফির ভাষা আরবি এবং কোরআনের আয়াত হলেও প্রায় অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন বাংলা ক্যালিগ্রাফিও করেছেন তিনি। ‘সুলুস’ লিখনশৈলীতে বেশির ভাগ কাজ করেছেন; তবে ‘সুনবুলি’ লিখনশৈলীও তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। রঙের ব্যাপারে বরাবরই সচেতন তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফিতে আধুনিক চিত্রশিল্পের নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘যেকোনো পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রং নির্বাচন মুখ্য বিষয়। রং যদি সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হয়, তাহলে পেইন্টিং খুব বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ হয় না। আর আমাদের দেশের মানুষ আধুনিক চিত্রশিল্প দেখে অভ্যস্ত। আপনি যদি এই বিশাল দর্শক শ্রেণিকে নতুন একটা শিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই আধুনিক শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ফলে মানুষ আপনার শিল্পকে সাদরে গ্রহণ করবে।’
তাঁর ক্যালিগ্রাফির শিল্পমান মূল্যায়ন করে ক্যালিগ্রাফি-গবেষক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মানসুর তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘সমকালীন ইসলামি ক্যালিগ্রাফি: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘মাহবুব মুর্শিদ উলম্ব-অনুভূমিক রেখা অঙ্কনে ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করেছেন। লিখনশিল্পের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা তাঁর শিল্পকর্মে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। …তাঁর শিল্পকর্মে ক্যালিগ্রাফির অর্থ ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন; তা বিমূর্ত ঢঙে করতে প্রয়াস চালান তিনি। তাঁর ক্যালিগ্রাফি উজ্জ্বল রং ব্যবহারে উদ্ভাসিত। …তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশের ফুল, লতা-পাতার সমাহারে ক্যালিগ্রাফির মধ্যে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণার প্রয়াস পেয়েছেন।’
মাহবুব মুর্শিদের স্বপ্ন, ক্যালিগ্রাফিকে তিনি একটি স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ তিনি মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থাকার কারণে এটিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন। তাই তিনি মূলধারার শিল্পশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যেই তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা সত্তরের দশক থেকে শুরু হলেও গত পঞ্চাশ বছরে যে কাজটি কেউ করতে পারেননি, তা তিনি মাত্র চার বছরে করতে পেরেছেন এবং ক্যালিগ্রাফিকে স্বতন্ত্র শিল্পধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের সংগঠিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট গিল্ড’। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেছেন বাণিজ্যিকভাবে ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ পর্যন্ত তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ১৭টি কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ২ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী কর্মশালাগুলোতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর কাছ থেকে ক্যালিগ্রাফির পাঠ গ্রহণ করে অনেকেই বর্তমানে সফলতার সঙ্গে এ শিল্পের চর্চা করছেন এবং নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্যালিগ্রাফির বাজার কেমন এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খুবই আশাব্যঞ্জক। শুধু প্রয়োজন মানসম্মত কাজ ও ব্যাপক প্রচার। এই শিল্প একদিকে যেমন আধুনিক শিল্পের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে পারে।’ নিজের ক্যালিগ্রাফির বাজারমূল্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি ১০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, এই পেশা খুবই সম্মানজনক। এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তবে সেই স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নবীনদের কর্তব্য হলো, শিল্পটিকে নিখুঁতভাবে শেখা এবং সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২০ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২০ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২০ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। দেশের অসংখ্য তরুণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর গুরু ও প্রশিক্ষক। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। তিন শতাধিক নান্দনিক ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি শিল্পবোদ্ধাদেরও। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের...
২৮ জানুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২০ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে