বিভুরঞ্জন সরকার

তখন পাকিস্তান আমল। আমিও স্কুলের গণ্ডি পেরোইনি। দিনাজপুর জেলা ভেঙে তিনটি জেলাও হয়নি। অনেক কিছুই তখনো হয়নি। হয়নি সড়কপথে সরাসরি উত্তরের সুদূর এক থানা থেকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসার ব্যবস্থাও। আমি হাইস্কুলের পাঠ শেষ না করলেও সিনেমা দেখার ঝোঁক ছিল। সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার করে ঢাকা এসে পড়েছিলাম মহা ফাঁপরে।
ঢাকা তখনো এখনকার মতো পেল্লায় শহর হয়ে না উঠলেও রাজধানী শহর তো ছিলই। কবরীকে দেখার জন্য মোক্ষম জায়গা এফডিসি বলে এক বড় ভাইয়ের কাছে জেনেছিলাম। তো কী করা, আমি কবরীকে একনজর দেখার জন্য এফডিসির সামনে ধরনা দিলাম।। কিন্তু দুদিন এফডিসির আশপাশে ঘুরঘুর করেছি কবরীদর্শন হয়নি। এত সহজে যে নায়িকা দেখা যায় না, তা তো আর তখন জানতাম না। কিন্তু কবরীর দেখা না পেলেও হয়েছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমার চেহারাসুরত, বেশভূষা দেখে কারও বুঝতে অসুবিধা হতো না যে, আমি এক গাঁইয়া। এক রিকশাচালক জানতে চাইলেন, আমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, ‘বোদা, দিনাজপুর জেলা।’ রিকশাওয়ালা তো হেসে খুন। বললেন, ‘ওইহানেও আবার থাকন যায়নি?’
আমি তার এই কথার মাথামুণ্ডু কিছু তখন বুঝিনি। পরে একজনকে বিষয়টি বলায় তিনি আমাকে বললেন, ‘বোদা’ শব্দ নিয়ে ঢাকাইয়ারা হাসি-তামাশা করে। তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলায় আমি একটু লজ্জা পেলাম। আমাদের জায়গার নাম শুনে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ এ রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে—বিষয়টি আমার ভালো লাগল না। হতাশ মনে বাড়ি ফিরে ‘বোদা’ নামটি বদলানোর জন্য কিছু তৎপরতা শুরু করলাম। তখন দৈনিক আজাদ ছিল জনপ্রিয় পত্রিকা। তো, আমি আজাদে একটি চিঠি লিখলাম, ‘বোদা’ নাম পাল্টানোর যুক্তি দিয়ে।
বোদার মুরব্বিরা আমার এই তৎপরতা ভালো চোখে দেখলেন না। একদিন কয়েকজন আমাকে ডেকে একটু শাসিয়ে বললেন, ‘বিরাট পণ্ডিত হইছিস মনে হচে। খবরের কাগজত লেখেছিস। দোকানির ব্যাটা (আমার বাবার গালামালের দোকান ছিল) এলা হামাক নতুন জ্ঞান দেছে। হামার বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টির বোদা নামে সমস্যা হয়নি। এলা দোকানির ব্যাটার হচে। দুই দিনের বৈরাগী ভাতক কহেছে অন্ন।’
আরও অনেক কিছুই বললেন। মোদ্দা কথা হলো, আমার ভালো না লাগলে আমি যেন বোদা ছেড়ে চলে যাই। তারা কিছুতেই বোদার নাম বদলানো মানবেন না। তোমার যেখানে সাধ যাও, আমরা থাকব এই বোদায়—অনেকটা এই রকম আর কি!
বোদার নাম বদলানো নিয়ে আমি আর কখনো কিছু বলিনি। নামের সঙ্গে আসলে গভীর আবেগ জড়িত। নামকে মানুষ ভালোবাসে। নাম হলো আইডেনটিটির বাহন। সে ব্যক্তির নাম হোক কিংবা হোক জায়গা বা প্রতিষ্ঠানের। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হলেও তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করা মূর্খতা। তা ছাড়া, এক অঞ্চলের বুলি আর এক অঞ্চলের গালি—এ কথাও তো আমাদের জানা। বোদা নামের বিকৃত উচ্চারণে কেউ যদি শরম পায়, পাক। সেটা একান্তভাবেই তার ব্যক্তিগত বুঝের ঘাটতিজনিত সমস্যা; বোদাবাসীর সমস্যা নয়। আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বোদার নাম আইয়ুবগঞ্জ করার একটি ব্যর্থ উদ্যোগের কথাও আমরা শুনেছি।
নাম বিকৃতি নিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। রাজেন্দ্র লাল ভদ্র ছিলেন বোদা হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল গোরা। একদিন কোনো কারণে ফখরুল ইসলাম মানিক ভাইকে তিনি মাঙ্কি বলে সম্বোধন করেন। (মাঙ্কি—বানর) < মানিক > বিকৃত করে। মানিক ভাই ছাড়বার পাত্র নন। সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে প্রশ্ন করেন, ঘোড়াদা (গোরা) কেমন আছে স্যার? স্যার সেদিন বুঝেছিলেন নাম বিকৃতি ভালো নয়।
আজকাল অবশ্য নাম বদল অনেকের কাছে একধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নাম, এমনকি জায়গার নামও। হুজুগে মাতার এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। আগেই বলেছি, নাম হলো পরিচয়জ্ঞাপক একটি বিষয়। একবার একনামে পরিচিতি তৈরি হওয়ার পর সেটা বদলানোর প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে জরুরি বলে মনে হয় না। আমার নাম বিভু। আমার নাম তো শিবুও হতে পারত। এখন বিভু নামেই আমাকে আমার পরিচিতজনেরা চেনেন, জানেন। এখন যদি আমি শিবু নাম নিই, সেটা তো বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
মুসলমানদের নাম রাখা হয় আকিকার মাধ্যমে। হিন্দুদেরও নামাকরণের আনুষ্ঠানিকতা আছে। ধর্মীয় বিধান মেনে না হয় মানুষের নাম হয়, কিন্তু জায়গার নাম রাখা হয় কীভাবে? আমার জানামতে, জায়গার নাম সম্ভবত কোনো অনুষ্ঠান করে রাখা হয় না। জনশ্রুতি আছে যে কলকাতার নাম হয়েছিল এভাবে—কলকতা নামে কোনো জায়গা ছিল না। এখন যে কলকাতা শহর, একসময় সেটা ছিল ফসলের খেত। একদিন এক চাষি আগের দিন কাটা ধানের আঁটির বোঝা বেঁধে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। পথে এক ইংরেজ সাহেব চাষির কাছে ওই জায়গার নাম জানতে চান। চাষি তো ইংরেজি বোঝে না। সাহেব কী বলছে বুঝতে না পেরে সে ধরে নেয় যে, তার ধান কবে কাটা হয়েছে সেটাই হয়তো সাহেব জানতে চাইছে। তাই জবাব দেয় ‘কাল কাটা'। ব্যস, সাহেব ধরে নেন জায়গার নাম—কালকটা। সেই কালকাটা থেকেই কলকাতা। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? না হোক। কিন্তু মনে রাখবেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।
তাই আমার এলাকাবাসীর প্রতি আবেদন, আসুন, বোদার নাম পরিবর্তনের চেয়ে বোদাকেই মনের মন্দিরে ঠাঁই দিয়ে বোদার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করি। বাহারি নাম ধারণ করে কী হবে, যদি বোদা অন্য জায়গার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে। নামে কীই-বা আসে-যায়। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট—এমন অবস্থা কাম্য নয়।
আমি বোদা বলতে শুধু বোদা বাজার এলাকা বুঝি না। আমার বোদা পুরো বোদা উপজেলা এবং চারপাশের এলাকাও। যারা কোনো একসময় বোদায় ছিলেন, অথবা বোদা স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, এখনো নিজেদের বোদার মানুষ বলে পরিচয় দেন—এসব নিয়েই আমার বোদা।
এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ছে। ছোটবেলায় আমরা পড়েছি, গ্রাম কাহাকে বলে। একটু ওপরের ক্লাসে উঠে দেখি জায়গার নামের সঙ্গে গ্রাম শব্দটি থাকলেও সেগুলো অনেক বড় জায়গা। সে জন্য গ্রাম কাকে বলে জিজ্ঞাসা করলে আমরা বলতাম, কোন গ্রাম? ছোট, মাঝারি, নাকি বড়। আমাদের কাছে ছোট গ্রাম ছিল মাঝগ্রাম, যেটা বোদা থানার মধ্যে পড়েছে। মাঝারি গ্রাম হলো কুড়িগ্রাম, যেটা এখন একটি জেলা। আর বড় গ্রাম হলো চট্টগ্রাম জেলা, বিভাগ—সবই। আমি যদি দূরে কোথাও গিয়ে বলি, আমার বাড়ি বোদা, তাহলেই যথেষ্ট। সেখানে মাড়েয়া, চন্দনবাড়ি নাকি ঝলইশালশিরি, সে প্রশ্ন ওঠে না। তেমনি কেউ যখন বলেন তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রাম, তখন কুড়িগ্রামের কোন উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন, সেটা না জানলেও সমস্যা নেই। ঠিক কেউ তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম বললেও আমাদের বুঝে নিতে সমস্যা হয় না। বোদা আমাদের নাড়ির বন্ধনে আবদ্ধ। বোদা আমাদের প্রথম প্রেম। তাই বোদা নিয়ে কোনো বিরূপ কথা নয়।
এবার একটি সতর্কবার্তা। বোদা নিয়ে লিখতে শুরু করেছি বলে কেউ আবার মনে করবেন না যে, আমি সাগর সেচে কোনো মানিক এনে দেব। আমি ইতিহাসবিদ নই, নই উঁচু মাপের গবেষক। আমি একেবারেই একজন সাধারণ কলমজীবী মানুষ। বোদার হাজার বছরের ইতিহাস চর্চা আমি করব না। তা ছাড়া, আমার কাছে ইতিহাস মানে শুধু মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বের করা নয়, আমার কাছে ইতিহাস হলো মানুষ। মানুষ যে পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থায় বসবাস করে, সেটা এবং তার জীবনধারণ, জীবনধারণের সংগ্রাম, তার সাফল্য-ব্যর্থতা—এ সবকিছুই আমার কাছে ইতিহাস। ইতিহাস মানুষের সৃষ্টি। মানুষই ইতিহাস তৈরি করে। যেমন ইতিহাস তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জীবনে প্রথম কবরী নামের এক নায়িকাকে দেখতে ঢাকা এসে যে বিড়ম্বনার মুখে পড়েছিলাম, তা লিখতে গিয়ে কত বাড়তি কথা লিখে ফেললাম। বেশি কথা বলাও আমাদের এক বদ হেবিট! ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা, পরে এটাও জেনেছিলাম যে, কবরী নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে আসা স্কুলপড়ুয়া এক বালিকার পারিবারিক নাম—মিনা পাল।

তখন পাকিস্তান আমল। আমিও স্কুলের গণ্ডি পেরোইনি। দিনাজপুর জেলা ভেঙে তিনটি জেলাও হয়নি। অনেক কিছুই তখনো হয়নি। হয়নি সড়কপথে সরাসরি উত্তরের সুদূর এক থানা থেকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসার ব্যবস্থাও। আমি হাইস্কুলের পাঠ শেষ না করলেও সিনেমা দেখার ঝোঁক ছিল। সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার করে ঢাকা এসে পড়েছিলাম মহা ফাঁপরে।
ঢাকা তখনো এখনকার মতো পেল্লায় শহর হয়ে না উঠলেও রাজধানী শহর তো ছিলই। কবরীকে দেখার জন্য মোক্ষম জায়গা এফডিসি বলে এক বড় ভাইয়ের কাছে জেনেছিলাম। তো কী করা, আমি কবরীকে একনজর দেখার জন্য এফডিসির সামনে ধরনা দিলাম।। কিন্তু দুদিন এফডিসির আশপাশে ঘুরঘুর করেছি কবরীদর্শন হয়নি। এত সহজে যে নায়িকা দেখা যায় না, তা তো আর তখন জানতাম না। কিন্তু কবরীর দেখা না পেলেও হয়েছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমার চেহারাসুরত, বেশভূষা দেখে কারও বুঝতে অসুবিধা হতো না যে, আমি এক গাঁইয়া। এক রিকশাচালক জানতে চাইলেন, আমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, ‘বোদা, দিনাজপুর জেলা।’ রিকশাওয়ালা তো হেসে খুন। বললেন, ‘ওইহানেও আবার থাকন যায়নি?’
আমি তার এই কথার মাথামুণ্ডু কিছু তখন বুঝিনি। পরে একজনকে বিষয়টি বলায় তিনি আমাকে বললেন, ‘বোদা’ শব্দ নিয়ে ঢাকাইয়ারা হাসি-তামাশা করে। তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলায় আমি একটু লজ্জা পেলাম। আমাদের জায়গার নাম শুনে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ এ রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে—বিষয়টি আমার ভালো লাগল না। হতাশ মনে বাড়ি ফিরে ‘বোদা’ নামটি বদলানোর জন্য কিছু তৎপরতা শুরু করলাম। তখন দৈনিক আজাদ ছিল জনপ্রিয় পত্রিকা। তো, আমি আজাদে একটি চিঠি লিখলাম, ‘বোদা’ নাম পাল্টানোর যুক্তি দিয়ে।
বোদার মুরব্বিরা আমার এই তৎপরতা ভালো চোখে দেখলেন না। একদিন কয়েকজন আমাকে ডেকে একটু শাসিয়ে বললেন, ‘বিরাট পণ্ডিত হইছিস মনে হচে। খবরের কাগজত লেখেছিস। দোকানির ব্যাটা (আমার বাবার গালামালের দোকান ছিল) এলা হামাক নতুন জ্ঞান দেছে। হামার বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টির বোদা নামে সমস্যা হয়নি। এলা দোকানির ব্যাটার হচে। দুই দিনের বৈরাগী ভাতক কহেছে অন্ন।’
আরও অনেক কিছুই বললেন। মোদ্দা কথা হলো, আমার ভালো না লাগলে আমি যেন বোদা ছেড়ে চলে যাই। তারা কিছুতেই বোদার নাম বদলানো মানবেন না। তোমার যেখানে সাধ যাও, আমরা থাকব এই বোদায়—অনেকটা এই রকম আর কি!
বোদার নাম বদলানো নিয়ে আমি আর কখনো কিছু বলিনি। নামের সঙ্গে আসলে গভীর আবেগ জড়িত। নামকে মানুষ ভালোবাসে। নাম হলো আইডেনটিটির বাহন। সে ব্যক্তির নাম হোক কিংবা হোক জায়গা বা প্রতিষ্ঠানের। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হলেও তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করা মূর্খতা। তা ছাড়া, এক অঞ্চলের বুলি আর এক অঞ্চলের গালি—এ কথাও তো আমাদের জানা। বোদা নামের বিকৃত উচ্চারণে কেউ যদি শরম পায়, পাক। সেটা একান্তভাবেই তার ব্যক্তিগত বুঝের ঘাটতিজনিত সমস্যা; বোদাবাসীর সমস্যা নয়। আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বোদার নাম আইয়ুবগঞ্জ করার একটি ব্যর্থ উদ্যোগের কথাও আমরা শুনেছি।
নাম বিকৃতি নিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। রাজেন্দ্র লাল ভদ্র ছিলেন বোদা হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল গোরা। একদিন কোনো কারণে ফখরুল ইসলাম মানিক ভাইকে তিনি মাঙ্কি বলে সম্বোধন করেন। (মাঙ্কি—বানর) < মানিক > বিকৃত করে। মানিক ভাই ছাড়বার পাত্র নন। সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে প্রশ্ন করেন, ঘোড়াদা (গোরা) কেমন আছে স্যার? স্যার সেদিন বুঝেছিলেন নাম বিকৃতি ভালো নয়।
আজকাল অবশ্য নাম বদল অনেকের কাছে একধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নাম, এমনকি জায়গার নামও। হুজুগে মাতার এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। আগেই বলেছি, নাম হলো পরিচয়জ্ঞাপক একটি বিষয়। একবার একনামে পরিচিতি তৈরি হওয়ার পর সেটা বদলানোর প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে জরুরি বলে মনে হয় না। আমার নাম বিভু। আমার নাম তো শিবুও হতে পারত। এখন বিভু নামেই আমাকে আমার পরিচিতজনেরা চেনেন, জানেন। এখন যদি আমি শিবু নাম নিই, সেটা তো বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
মুসলমানদের নাম রাখা হয় আকিকার মাধ্যমে। হিন্দুদেরও নামাকরণের আনুষ্ঠানিকতা আছে। ধর্মীয় বিধান মেনে না হয় মানুষের নাম হয়, কিন্তু জায়গার নাম রাখা হয় কীভাবে? আমার জানামতে, জায়গার নাম সম্ভবত কোনো অনুষ্ঠান করে রাখা হয় না। জনশ্রুতি আছে যে কলকাতার নাম হয়েছিল এভাবে—কলকতা নামে কোনো জায়গা ছিল না। এখন যে কলকাতা শহর, একসময় সেটা ছিল ফসলের খেত। একদিন এক চাষি আগের দিন কাটা ধানের আঁটির বোঝা বেঁধে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। পথে এক ইংরেজ সাহেব চাষির কাছে ওই জায়গার নাম জানতে চান। চাষি তো ইংরেজি বোঝে না। সাহেব কী বলছে বুঝতে না পেরে সে ধরে নেয় যে, তার ধান কবে কাটা হয়েছে সেটাই হয়তো সাহেব জানতে চাইছে। তাই জবাব দেয় ‘কাল কাটা'। ব্যস, সাহেব ধরে নেন জায়গার নাম—কালকটা। সেই কালকাটা থেকেই কলকাতা। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? না হোক। কিন্তু মনে রাখবেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।
তাই আমার এলাকাবাসীর প্রতি আবেদন, আসুন, বোদার নাম পরিবর্তনের চেয়ে বোদাকেই মনের মন্দিরে ঠাঁই দিয়ে বোদার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করি। বাহারি নাম ধারণ করে কী হবে, যদি বোদা অন্য জায়গার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে। নামে কীই-বা আসে-যায়। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট—এমন অবস্থা কাম্য নয়।
আমি বোদা বলতে শুধু বোদা বাজার এলাকা বুঝি না। আমার বোদা পুরো বোদা উপজেলা এবং চারপাশের এলাকাও। যারা কোনো একসময় বোদায় ছিলেন, অথবা বোদা স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, এখনো নিজেদের বোদার মানুষ বলে পরিচয় দেন—এসব নিয়েই আমার বোদা।
এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ছে। ছোটবেলায় আমরা পড়েছি, গ্রাম কাহাকে বলে। একটু ওপরের ক্লাসে উঠে দেখি জায়গার নামের সঙ্গে গ্রাম শব্দটি থাকলেও সেগুলো অনেক বড় জায়গা। সে জন্য গ্রাম কাকে বলে জিজ্ঞাসা করলে আমরা বলতাম, কোন গ্রাম? ছোট, মাঝারি, নাকি বড়। আমাদের কাছে ছোট গ্রাম ছিল মাঝগ্রাম, যেটা বোদা থানার মধ্যে পড়েছে। মাঝারি গ্রাম হলো কুড়িগ্রাম, যেটা এখন একটি জেলা। আর বড় গ্রাম হলো চট্টগ্রাম জেলা, বিভাগ—সবই। আমি যদি দূরে কোথাও গিয়ে বলি, আমার বাড়ি বোদা, তাহলেই যথেষ্ট। সেখানে মাড়েয়া, চন্দনবাড়ি নাকি ঝলইশালশিরি, সে প্রশ্ন ওঠে না। তেমনি কেউ যখন বলেন তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রাম, তখন কুড়িগ্রামের কোন উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন, সেটা না জানলেও সমস্যা নেই। ঠিক কেউ তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম বললেও আমাদের বুঝে নিতে সমস্যা হয় না। বোদা আমাদের নাড়ির বন্ধনে আবদ্ধ। বোদা আমাদের প্রথম প্রেম। তাই বোদা নিয়ে কোনো বিরূপ কথা নয়।
এবার একটি সতর্কবার্তা। বোদা নিয়ে লিখতে শুরু করেছি বলে কেউ আবার মনে করবেন না যে, আমি সাগর সেচে কোনো মানিক এনে দেব। আমি ইতিহাসবিদ নই, নই উঁচু মাপের গবেষক। আমি একেবারেই একজন সাধারণ কলমজীবী মানুষ। বোদার হাজার বছরের ইতিহাস চর্চা আমি করব না। তা ছাড়া, আমার কাছে ইতিহাস মানে শুধু মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বের করা নয়, আমার কাছে ইতিহাস হলো মানুষ। মানুষ যে পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থায় বসবাস করে, সেটা এবং তার জীবনধারণ, জীবনধারণের সংগ্রাম, তার সাফল্য-ব্যর্থতা—এ সবকিছুই আমার কাছে ইতিহাস। ইতিহাস মানুষের সৃষ্টি। মানুষই ইতিহাস তৈরি করে। যেমন ইতিহাস তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জীবনে প্রথম কবরী নামের এক নায়িকাকে দেখতে ঢাকা এসে যে বিড়ম্বনার মুখে পড়েছিলাম, তা লিখতে গিয়ে কত বাড়তি কথা লিখে ফেললাম। বেশি কথা বলাও আমাদের এক বদ হেবিট! ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা, পরে এটাও জেনেছিলাম যে, কবরী নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে আসা স্কুলপড়ুয়া এক বালিকার পারিবারিক নাম—মিনা পাল।

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার
১১ জুলাই ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার
১১ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার
১১ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার
১১ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে