Ajker Patrika

নিরাপদ সড়ক প্রশ্নে বারবার কেন ফুটওভার ব্রিজের প্রতিশ্রুতি

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ২৩: ৩১
নিরাপদ সড়ক প্রশ্নে বারবার কেন ফুটওভার ব্রিজের প্রতিশ্রুতি

২০১৯ সালের ১৯ মার্চ এবং ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর দুটি আলাদা তারিখ হলেও একটা মিল আছে। দুটি তারিখ বিশেষ হয়ে আছে দুটি মৃত্যু এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে। মজার বিষয় হলো দুটি আন্দোলন থেকেই শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরেছে ফুটওভার ব্রিজ বা পদচারী-সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি শুনে। যেন দুর্ঘটনাস্থলে ফুটওভার ব্রিজ হলেই সড়ক নিরাপদ হয়ে যাবে। 

প্রথম ঘটনার দিকে তাকানো যাক, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ প্রতিদিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ভোর ৭টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বসুন্ধরার গেটে অপেক্ষা করছিলেন আবরার আহমেদ চৌধুরী। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস আসার আগেই তাঁকে চাপা দেয় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস। আবরারকে সেদিন বাসে তুলে দিতে সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর বাবা। আবরার পড়তেন ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিউপি)। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা করেন আবরারের বাবা। 

আবরার নিহত হওয়ার পর তাঁর সহপাঠীরা রাস্তা বন্ধ করে এর বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে। সেই আন্দোলন প্রগতি সরণি ছাপিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মধ্যেই বাসচালক সিরাজুলকে (২৯) আটক করে পুলিশ। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেদিন তিনি আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। 

নাঈম হাসানএর দুই বছর পর রাজধানীর গুলিস্তানে নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ি ধাক্কা দিলে সেখানেই মারা যায় নাঈম। তাঁর মৃত্যুর বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। একে একে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। এবারও আন্দোলনের মূল দাবি নিরাপদ সড়ক।

এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দেন, যেখানে নাঈমের মৃত্যু হয়েছে সেখানে ‘শহীদ নাঈম’ নামে একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করে দেওয়া হবে। 

উভয় প্রতিশ্রুতির পর শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরেছেন। তাঁদের ফিরতে হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই প্রতিশ্রুতিকে এমনভাবে সামনে হাজির করা হয়েছে, যেন ফুটওভার ব্রিজ করে দেওয়া হলেই সড়ক নিরাপদ হয়ে যাবে। শুধু এ দুই ক্ষেত্রেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুধু রাজধানীতে ১১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছে।

এর মধ্যে পথচারী ৬২ জন, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ৩৩ জন এবং অন্যান্য যানবাহনের যাত্রী ও আরোহী ২৪ জন। এই প্রতিটি মৃত্যুতে মানুষ ফুঁসে ওঠেনি। যে দু-একটিতে মানুষ ফুঁসে ওঠে, তাতে ফুটওভার ব্রিজ ও স্পিড ব্রেকার বা গতিরোধক স্থাপনের মতো প্রতিশ্রুতি আসে সমাধান হিসেবে। 

সঙ্গে আরও নানা কথা বলা হয়। এই যেমন ২০১৯ সালে দু-তিন দিনের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডিএনসিসির মেয়র। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘এ ঘটনায় আপনাদের মাঝ থেকে ২-৫ জনকে নিয়ে আমরা একটি কমিটি গঠন করব। প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আপনাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করব।’ বলেছিলেন, ‘এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসের মালিকদের সংযুক্ত করা হবে। এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব না। এ কাজটি আমরা খুব দ্রুত করব।’ 

কথিত সেই ফুটওভার ব্রিজের উদ্বোধনও করেছিলেন মেয়র। কিন্তু বাকি কোনো কিছুই আর সামনে আসেনি। সেই কমিটি, বাসমালিকদের সংযুক্ত করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ বা সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন—কোনোটিই হয়নি। এবারও নাঈমের মৃত্যুর পর প্রায় একই প্রতিশ্রুতি সামনে এসেছে। কিন্তু এই ফুটওভার ব্রিজ বা স্পিড ব্রেকারই কি সড়ককে নিরাপদ করার জন্য যথেষ্ট? 

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ নিরাপদ সড়কের জন্য যথেষ্ট নয়। সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা শুধু মুখ দিয়ে কথাই বলেন, কাজ করেন না। সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকদেরই ঠিক করতে পারলেন না তাঁরা, আবার মানুষকে ঠিক করবেন কীভাবে। নেতারা সারা জীবনই খালি মুখ দিয়ে মানুষকে সান্ত্বনা দিয়ে যান।’ তিনি বলেন, ‘আর দেখুন সিটি করপোরেশনের গাড়ি রাতে চলার কথা। কিন্তু তারা সব সময় চালায়। তারা একেকজন পাওয়ার দেখায় যে, তারা মেয়রের লোক।’ 

আবার বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও পথচারীদের সেগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায় কম। অনেক সময় ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা পার হতে দেখা যায়। রাস্তা পারাপারকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ফুটওভার ব্রিজকে সমাধান হিসেবে দেখতে নারাজ ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজগুলো মানুষের জন্য খুব কষ্টদায়ক। আমি সব সময় সাজেস্ট করি আন্ডারপাস করার জন্য। আন্ডারপাস করলে মানুষের কষ্ট অর্ধেক হয়ে যায়। ফুটওভার ব্রিজ করতে নানা দিক ভাবতে হয়, বাস, ট্রাক ইত্যাদি, ট্রাকের ওপর মালপত্র নেয়। এগুলোর কথা চিন্তা করে এগুলো উঁচু করা হয়। তাই মানুষের উঠতে কষ্ট হয়। আর যদি আপনি আন্ডারগ্রাউন্ড করেন, একটা মানুষের যে উচ্চতা, তার থেকে ২ ফুট উঁচু রাখলেই চলে, যা মানুষের কষ্ট অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।’ 

২০১৯ সালের ১৯ মার্চ প্রগতি সারণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীদুর্ঘটনা ঘটলেই যে সমাধান হিসেবে ফুটওভার ব্রিজের কথা সামনে আসে—এ নিয়েও সমালোচনা করেন কাঞ্চন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এটা তাঁদের পলিসি। শহরে দুর্ঘটনা ঘটলে বলে ফুটওভার ব্রিজ; আর গ্রামে হলে স্পিড ব্রেকার। এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে শান্ত করার জন্য তারা বলে। যখন শান্ত হয়ে যায়, তখন আর এসবের দরকার পড়ে না। আবার যখন কেউ মরবে, তখন আবার উত্তপ্ত হয়ে যাবে। জনগণ তো বারবার একত্র হতে পারবে না। মেয়র সাহেবদের সময় পাঁচ বছর। যদি দুবার এই ঘটনা ঘটে, তাহলে তো দুবার ফুটওভার ব্রিজের কথা বলে সময় পার করে দিতে পারেন।’ 

নিরাপদ সড়ক নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে যাওয়া কর্মীরাও মনে করেন এই প্রতিশ্রুতিগুলো আদতে মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে শান্ত করার জন্যই করা হয়। সড়ক নিরাপদ করার কোনো উদ্যোগ প্রশাসনের নেই। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপরও কিছুটা দায় চাপাতে চান তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য, মানুষ সবকিছুতেই তাৎক্ষণিক ফল চায়। তাঁরা ভাবেন, এক দিন ধর্মঘট করলেই, অবরোধ করলেই সমাধান আসবে। প্রশাসন এই সুযোগটিই নেয়। যেনতেনভাবে একটা সমাধান হাজির করে তারা। অথচ জনগণ এক হয়ে দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগ মেনে নিতে পারলে সমস্যা দূর হতো। না হলে বারবার ফুটওভার ব্রিজের মতো সমাধানই আসবে।  

২০১৮ সালে রাজধানীতে শুরু হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েআবরার বা নাঈমের পরিবার কি এতে তাদের সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে থাকতে পারছেন? ভুলে থাকতে পারছে রাজীব ও দিয়ার পরিবার? সেটা অবশ্য ২০১৮ সালের ঘটনা। ২০১৮ সালে ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় এবং ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে। সেই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা যে সংকট পেয়েছিল, সেই একই সংকট ২০২১ সালের শেষে এসেও বিদ্যমান। এখনো প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের গাড়িতে লাইসেন্সবিহীন চালক থাকে। এখনো বেপরোয়া যানবাহনের গতির প্রতিযোগিতায় জিম্মি সাধারণ যাত্রী ও পথচারী। নিরাপদ সড়কের যে প্রতিশ্রুতি ২০১৮ সালে সরকার দিয়েছিল, তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়ন হলে নাঈমকে চাপা দেওয়া গাড়িটি চালকই চালাতেন এবং তাঁর লাইসেন্সও থাকত। বাস্তবায়ন হলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি এখনো রাস্তায় চলত না। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘আগে সিস্টেমটাকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। আমাদের এখানে লিজ সিস্টেমে গাড়ি চলে, ব্যবসাটা করে চালক; মালিক এখানে নাই বললেই চলে। যখন চালক আয়ের চাপে গাড়ি চালান, তখন তিনি রাস্তার দিকে তাকাবেন নাকি যাত্রীর দিকে তাকাবেন? ওটাকে ঠিক না করে আমি যতই ফুটওভার ব্রিজ বানাই না কেন, তা হচ্ছে আনাড়িপনা।’ 

এসব প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ড. শামসুল হক বলেন, ‘আমরা যত ধরনের প্রতিশ্রুতি দেখি, তা উপসর্গ ধরে; কিন্তু রিফর্ম দরকার, এখানে বিনিয়োগ দরকার। পরিবহনে রিফর্ম দরকার। কেন চালক ব্যবসায় থাকবেন, তাঁকে তো সব সময় রাস্তার দিকে নজর রাখতে হবে। তাঁর তো একজন বেতনভোগী কর্মচারী হওয়ার কথা। কেন এটা হচ্ছে না, তার উত্তর জেনে যদি সাজানো যায় হাতিরঝিলের মতো; অবশ্য সেখানে কিছু সমস্যা থাকলেও বিশৃঙ্খলা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনাটা আমরা সুন্দর করলাম, সেলফ এনফোর্স হলো। এতে পুলিশ অত্যন্ত বেজার হয়ে গেছে। তার একটা ইনকাম ছিল, তা সেখানে নেই।’ 

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি, তাই রাস্তায় তারা প্রতিযোগিতা করছে। প্রতিযোগিতাবিহীন গণপরিবহনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ওপরমহলের লোক যদি না বোঝে, তাহলে সম্ভব না। বিশেষ করে মেয়র হচ্ছেন নগরপতি। তাঁর সব বোঝার দরকার নাই, তাঁর তো কিছু থিংক ট্যাংক থাকার কথা, যা দিয়ে তিনি দৃশ্যমান উন্নতি দেখাতে পারবেন।’ 

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নেমে এলেও কিছু প্রতিশ্রুতি সম্বল করেই তাদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছেসবচেয়ে সরল জিনিস হলো অবকাঠামোর উন্নয়ন। এই অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নের দিকেই অধিকাংশের নজর রয়েছে উল্লেখ করে ড. শামসুল হক বলেন, ‘আন্দোলনকে ঠেকা দেওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজ সামনে আসে। আমরা মুভমেন্ট করছি, আমাদের বিবেকের ভিত নড়ে গেছে, তোমরা দেখিয়ে দিয়েছ—এসবই বোঝানো হয়। (সে সময়) আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহটা ছিল পুলিশের বিষয়ে। এর আগে যে বড় মুভমেন্ট হলো, তখন পুলিশের আইজিপি বলল, তাঁরা একটা মডেল করিডর করছেন, নির্দিষ্ট বাসের জায়গায় চিহ্ন দেওয়া হবে, সেখানেই দাঁড়াতে হবে, পুলিশের নিজস্ব লোক থাকবে। ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি।’ 

 এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রসঙ্গটিও জড়িত একটু ঘুরপথে। বিষয়টি সামনে আনলেন পুরকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপকই। তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যাটা হচ্ছে, আমাদের পরিকল্পনায় অভাব আছে অনেক; কিন্তু কেউ বলছে না—এটা ঠিক করা যাবে না। সবাই বলছে ঠিক হবে। এখানেই সমস্যা। তখন আপনারা-আমরা কথা বললে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকেরা মনে করে—“এরা উন্নয়ন চায় না, আমাদের লোকেরা তো সব ঠিকই করবে বলছে। ” আমাদের বিশৃঙ্খল অবস্থা রেখে যারা উন্নয়নের কথা বলে তারা এনজিওদের মতো। একসময় আমাদের অপুষ্টি দেখিয়ে বিদেশ থেকে লোন আনত তারা। যখন পুষ্টি সমস্যার সমাধান হলো, তখন তাদের ঝামেলা হয়ে গেল। সুতরাং যানজট বিশৃঙ্খলা যদি চলে যায়, তাহলে বিনিয়োগ তো আসবে না। কেন আমি হাতির ঝিলের মতো করব? পুলিশও এটা চাইবে না, যারা নেতা আছে, তাঁরাও এমনটা চাইবেন না। কারণ, চাঁদা তুলতে পারবে না।’ 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যুবকের

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার একটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামির নাম দুলাল মিয়া (২৮)। তিনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক আশরাফুল আলম আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদ আহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়া আট বছরের ওই শিশুকে ঘর থেকে ডেকে নেন। এরপর তাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করেন দুলাল।

মাকছুদ আহাম্মদ জানান, এদিকে ওই রাতেই শিশুকে না পেয়ে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সে সময় সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচারও করা হয়। তখন দুলাল মিয়াও শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেন। পরদিন গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দুলাল মিয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় দুলাল মিয়ার আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আল সরকারের সঙ্গে কথা হয়। পরে বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। মামলার পরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে ঘটনাস্থলসংলগ্ন বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা শেষে ওই রাতেই দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও অভিযুক্তদের খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে চাটমোহর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামলার ১ নম্বর বিবাদী, ছাইকোলা ইউনিয়নের কুবড়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে কুবড়াগাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম (৬৫) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। এতে তিনি দগ্ধ হন। প্রথমে তাঁকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রহিমের ভাই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে প্রতিবেশী সাতজনকে বিবাদী করে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। মামলার ছয়জন জামিন পেলেও ১ নম্বর বিবাদী শফিকুল ইসলাম এখনো কারাগারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুমাইয়া খাতুন দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই সময়ে তাঁর স্বামী চাটমোহরে ছিলেন না। তাঁরা দুজনই সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীকে মামলার ১ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুলের পিতা শহিদ সরদারসহ আরও দুই ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সুমাইয়ার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী গ্রামে থাকেন না। আমরা তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারীতেই থাকি। প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। আমরা অন্যায়ের শিকার।’ তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি থাকায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার। তিন সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে শফিকুল ইসলামের পিতা শহিদ সরদার, তাঁর মা ও অন্যান্য স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুলশানে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ জব্দ, গ্রেপ্তার ১

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব

রাজধানীর গুলশানে মদের চালানসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ ও মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার রবিউল ইসলাম (২১) নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভিটি গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. রাকিব হাসান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানে অভিযান চালিয়ে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ, মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানসহ রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত