জাহাঙ্গীর আলম

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
গবেষণা বলছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ এই সেবার আওতায় রয়েছে। আর বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন মেন্টাল ইলনেসের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন প্রতি বছর মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক সিজোফ্রেনিয়া এবং প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
এই ধরনের ব্যাধিগুলো তুলনামূলক ভাবে স্পষ্ট। চিকিৎসক এবং অন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা সাধারণ নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করেই রোগগুলো শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিরল এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কিন্তু রোগগুলো ভয়ংকর। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তার আশপাশের অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এ রকম ১৫টি রোগের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:
স্টেনডাল সিনড্রোম
স্টেনডাল সিনড্রোম যাদের আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগের পাশাপাশি প্যানিক অ্যাটাক, বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা, বিভ্রান্তি এবং কোনো শিল্পকর্ম দেখার পর হ্যালুসিনেশনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারণত যে শিল্পকে বিশেষভাবে সুন্দর বলে মনে করা হয় বা যখন একটি স্থানে বিপুল পরিমাণে শিল্পকর্ম রাখা থাকে সেখানে গেলে এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। যেমন জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারিতে অতিমাত্রায় স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডস্কেপে বলা হচ্ছে, এসবের পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উনিশ শতকের ফরাসি লেখকের নামে এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১৭ সালে ফ্লোরেন্স ভ্রমণের সময় লেখক এমন উপসর্গ অনুভব করেছিলেন। স্টেনডাল সিনড্রোম আবার হাইপার কালচারেমিয়া বা ফ্লোরেন্স সিনড্রোম নামেও পরিচিত।
অ্যাপোটেমনোফিলিয়া
শরীরের অখণ্ডতার ধারণা বিকার নামেও পরিচিত। অ্যাপোটেমনোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি দেহের কোনো সুস্থ অঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। অবশ্য এই মানসিক সমস্যা সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। মনোবিদেরা এটিকে স্নায়বিক ব্যাধি বলেই মনে করেন। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন বা এমন ভাবে কোনো অঙ্গের ক্ষতি করতে পারেন যে সেটি সারাতে অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের ডান প্যারিয়েটাল লোব কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যাপোটেমনোফিলিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যান না। কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি এবং অ্যাভারসন থেরাপির মাধ্যমে অ্যাপোটেমেনোফিলিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তাঁর হাত আসলে তাঁর নয়। হাতের যেন আলাদা জীবন আছে। এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য স্বাভাবিক অনুভূতি আছে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, তাঁদের হাত যেন এক স্বাধীন জীবন্ত বস্তু, হাতের নিজস্ব ইচ্ছা অনুভূতি আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অঙ্গটিকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। হাত তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আক্রান্ত হাতের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে!
কর্পাস ক্যালোসামের ক্ষতি হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। এই অংশটি মস্তিষ্কের দুটি সেরিব্রাল গোলার্ধকে সংযুক্ত করে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্ট্রোক এবং প্যারিয়েটাল লোবের ক্ষতি। হাতগুলোর মধ্যে তখন ‘আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব’ বা ‘আইডিওমোটর অ্যাপ্রাক্সিয়া’ আছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ মনে হয় যেন একটি হাত আরেক হাতের বিরুদ্ধে লড়ছে।
ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম
এই সিনড্রোমের নাম রাখা হয়েছে জোসেফ ক্যাপগ্রাস নামে এক ফরাসি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নামে। তিনি ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দ্বিত্বের বিভ্রম অন্বেষণে ব্যয় করেছেন। ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় যেন তাঁর কোনো এক প্রিয়জনের স্থলে একইরকম দেখতে আরেক খারাপ লোক ছদ্মবেশ ধরে ঢুকে পড়েছে। এটি স্বামী, স্ত্রী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। অর্থাৎ কোনো এক প্রিয় জনকে অন্য ব্যক্তি বলে ধারণা হওয়ার বিভ্রমের মধ্যে থাকেন তিনি। মনে হয় যেন, তার স্বামী আর আগের ব্যক্তিটি নেই। তিনি তাঁর ক্ষতি বা তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সিজোফ্রেনিয়া, নিদ্রাহীনতা, মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে।
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম (এআইডব্লিউএস), টড সিনড্রোম নামেও পরিচিত। এটি একটি স্নায়বিক বিকার জনিত সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় তার দেহের ছবি, স্থান এবং/অথবা সময় যেন বিচ্যুত বা বিকৃত হচ্ছে। তাঁরা চারপাশের পরিবেশ বিকৃত ভাবে দেখে।
অ্যালিস যেমন বাড়ির উচ্চতার চেয়েও অনেক লম্বা হয়ে যায়, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরও এ ধরনের অনুভূতি হয়। তাঁরা শান্ত বা জোরে শব্দ শুনতে পান, বস্তুর আকার প্রকৃত আকারের চেয়ে ছোট বা বড় দেখেন। এমনকি সঠিক বেগ বা টেক্সচারের অনুভূতিও হারান। আক্রান্ত ব্যক্তি তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের আকার আকৃতি নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন।
এই উপসর্গগুলো আতঙ্ক ও ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেন, মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত বা ড্রাগ আসক্ত হয়ে যেতে পারেন। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তির হ্যালুসিনেশন, সংবেদের বিকার এবং গতি বেগের পরিবর্তিত অনুভূতি হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ২০-এর দশকে যাদের ব্রেন টিউমার বা ড্রাগ নেওয়ার ইতিহাস আছে তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
বোয়ানথ্রপি
খুব বিরল কিন্তু ভীতিকর মানসিক ব্যাধি এটি। বোয়ানথ্রপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে গরু বলে মনে করেন। তাঁরা প্রায়শই গরুর মতো আচরণ করেন। কখনো কখনো তাঁদের মাঠে গরুর মতো চরতে দেখা যায়। গরুর পালের মধ্যে চার পায়ে হাঁটেন, ঘাস চিবান এবং নিজেকে গরুর পালেরই একজন সদস্য বলে মনে করেন। বোয়ানথ্রপি আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে না যে তাঁরা গরুর মতো আচরণ করছেন। গবেষকেরা মনে করেন, এই অদ্ভুত মানসিক ব্যাধি স্বপ্ন বা সম্মোহন থেকেও আরোপ করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, বাইবেলেও বোয়ানথ্রপির কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজারকে ‘মানবগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে ষাঁড়ের মতো ঘাস খেয়েছিলেন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপি
বোয়ানথ্রপির মতো, যারা ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে ভুগছেন তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পশুতে পরিণত হতে সক্ষম। নিজেকে নেকড়ে বলে মনে করেন। কখনো অন্য প্রাণী বলেও মনে হয়। ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি পশুর মতো আচরণ করেন। নিজেকে নেকড়ে বা বাঘ সিংহ বলে মনে হলে তিনি তখন তেমন হিংস্র আচরণ করতে শুরু করেন। প্রায়শই বনে-জঙ্গলে গিয়ে থাকেন বা কখনো বনে গিয়ে পালিয়ে থাকেন।
কোটার্ড ডিলিউশন
দ্য ওয়াকিং ডেড বা হালের হলিউডি জম্বি সিনেমা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা এটিকে সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। এমনকি নিজেকেই এক সময় ওয়াকিং ডেড বা জম্বি ভাবেন। একেই বলে কোটার্ড ডিলিউশন। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, আক্ষরিক অর্থেই তিনি ওয়াকিং ডেড বা ভূত হয়ে গেছেন। শরীর ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং/অথবা শরীরের সমস্ত রক্ত এবং অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর পচে গলে যাওয়ারও একটা অনুভূতি হতে পারে। কোটার্ড ডিলিউশনে ভোগা রোগীর বিষণ্নতার শিকার হওয়া স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর না খেয়ে মরার চিন্তাও আসতে পারে।
এই ভয়ংকর ব্যাধিটি ১৮৮০ সালে প্রথম বর্ণনা করেন স্নায়ুবিদ জুলস কোটার্ড। অবশ্য কোটার্ড ডিলিউশন অত্যন্ত বিরল রোগ। কোটার্ড ডিলিউশনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল হাইতিতে। সেখানে এক ব্যক্তি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং বর্তমানে জাহান্নামে আছেন।
ডায়োজেনিস সিনড্রোম
ডায়োজেনিস সিনড্রোমকে সাধারণত এক ধরনের ‘মজুতদারি’ বোঝায়। অর্থাৎ অকারণে জিনিস পত্র জমিয়ে রাখার একটা সমস্যা। এ কারণে এই রোগ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। গ্রিক দার্শনিক সিনোপের ডায়োজেনিসের নামে এই রোগের নাম রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জায়োজেনিস নিজে আসলে মিনিমালিস্ট! আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অকারণে জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত মজুত ছাড়াও, ডায়োজেনিস সিনড্রোমের সঙ্গে নিজের প্রতি চরম অবহেলা, নিজের বা অন্যদের প্রতি উদাসীনতা, সমাজকে অগ্রাহ্য করা এবং নিজের ‘বদভ্যাসের’ জন্য কখনোই লজ্জিত না হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বয়স্ক, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত এবং যারা জীবনের কোনো এক সময় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন বা যারা কোনো স্থিতিশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠেননি তাঁদের মধ্যে ডায়োজেনিস সিনড্রোম দেখা যেতে পারে।
বিচ্ছিন্ন পরিচয় বোধের সমস্যা
ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার (ডিআইডি)। একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিত্ব ধারণের ব্যাধি নামেও পরিচিত। এটি একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এবং টেলিভিশন শো নির্মিত হয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকের দুতিনটি আলাদা পরিচয় থাকে। কখনো কখনো আরও বেশি। ভুক্তভোগীরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের একটি চক্রের মধ্যে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক বছর পরপর তিনি আলাদা একটি পরিচয়ে বিরাজ করেন। তাঁদের আত্মপরিচয় মুহূর্তের মধ্যে বদলেও যেতে পারে। পরিচয় বদলের আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সতর্কতার লক্ষণও দেখা যায় না। এ ধরনের সমস্যায় যে তিনি আক্রান্ত, এটা তাকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কারণে, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার যাদের আছে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম। তাঁদের মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হন স্বজনেরা।
ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডার বা কপট বিকার
হাঁচির সঙ্গে গায়ে কাঁপুনি দেওয়া সর্দি-জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত। কিন্তু ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। এরা অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা বলে, কপট আচরণ করে। আদতে এটি একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধি। ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থ করে তোলেন। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার একটা অবসেশন দেখা যায়। ডাক্তারের শরণাপন্ন যেন হতে হয় সেই চেষ্টাই তাঁরা সব সময় করেন। কখনো কখনো তাঁরা অসুস্থতার ভান করেন। মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। রোগ নিয়ে বিশাল গল্প ফেঁদে বসেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষণ উপসর্গ বলেন এবং হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অসুস্থতার প্রতি এই জাতীয় আবেশ (অবসেশন) প্রায়ই অতীতের কোনো আঘাত বা গুরুতর অসুস্থতা থেকে তৈরি হতে পারে।
ক্লুভার-বুসি সিনড্রোম
হাভাতের মতো একটি বইয়ের স্বাদ কল্পনা করা বা একটি গাড়ির সঙ্গে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা করা- ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে দ্বারা আক্রান্তরা এমন অদ্ভুত আচরণই করেন। তাঁদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অখাদ্য বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা এবং অটোমোবাইলের মতো নির্জীব বস্তুর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করার মতো আচরণ দেখা যায়। ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে আক্রান্তরা অতি পরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকেও চিনতে পারেন না। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধি শনাক্ত করা কঠিন। মস্তিষ্কের টেমপোরাল লোবে গুরুতর আঘাতের ফল এই রোগ। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো সারা জীবন এই সমস্যায় ভোগেন।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যাটির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়। অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপহাস করেন। খুব কম লোকই অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বুঝতে পারেন। ওসিডি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। তবে আতঙ্কে জড়োসরো থাকা, উদ্বেগ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকা এসব লক্ষণ দেখে ওসিডি চিহ্নিত করা যেতে পারে। বারবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মতো কাজের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন এসব লোক। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কাজ করার অবসেশন দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পুরোপুরি সচেতন থাকেন যে তাঁদের ভয় বা উদ্বেগ একেবারে অযৌক্তিক, এই উপলব্ধি তখন তাঁদের মধ্যে আরেক উদ্বেগের জন্ম দেয়। ফলে তিনি উদ্বেগের একটি চক্রে ঢুকে পড়েন।
প্যারিস সিনড্রোম
প্যারিস সিনড্রোম একটি অত্যন্ত অদ্ভুত অস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এ ধরনের ব্যক্তি প্যারিস শহরে গিয়ে অভিভূত হয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, এটা জাপানি পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্যারিসে আনুমানিক ৬০ লাখ জাপানি পর্যটক যান। তাঁদের মধ্যে এক থেকে দুই ডজন জাপানি অতিমাত্রায় উদ্বেগ, কোনো কিছুতে ব্যক্তিত্ব আরোপ, অবাস্তব অনুভূতি, নিপীড়নমূলক চিন্তাভাবনা, হ্যালুসিনেশন এবং ভয়ংকর ভ্রান্তিতে ভোগেন। এগুলোই প্যারিস সিনড্রোমের বৈশিষ্ট্য। দেখা গেছে, প্যারিস সিনড্রোমে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকের মানসিক রোগের কোনো ইতিহাস নেই। ধারণা করা হয়, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি এবং কল্পনার সঙ্গে প্যারিসের বাস্তবতার পার্থক্য এই মারাত্মক মানসিক সমস্যা তৈরি করে।
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া, ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের মতোই। এখানে মানুষের ডুপ্লিকেট ভাবার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানের ডুপ্লিকেট ভাবে। অর্থাৎ কোনো স্থানে গিয়ে তার কাছে স্থানটি অন্য কোনো স্থানের অনুরূপ বলে মনে হয়। এই বিশ্বাসটি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, একটি স্থান একই সঙ্গে দুই জায়গাতে বিরাজ করছে। ধরা যাক, বান্দরবানে দেখা কোনো পাহাড়কে রাঙামাটিতে গিয়ে দেখা আরেকটি পাহাড়ের অনুরূপ মনে হচ্ছে। হোটেল কক্ষকে তার মনে হচ্ছে বাড়িতে নিজের ঘর। ‘রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া’ শব্দটি প্রথম ১৯০৩ সালে ব্যবহার করেন স্নায়ুবিদ আর্নল্ড পিক। স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। টিউমার, নিদ্রাহীনতা, মস্তিষ্কের আঘাত বা অন্যান্য মানসিক রোগীদের মধ্যে এই সমস্যাটি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
গবেষণা বলছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ এই সেবার আওতায় রয়েছে। আর বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন মেন্টাল ইলনেসের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন প্রতি বছর মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক সিজোফ্রেনিয়া এবং প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
এই ধরনের ব্যাধিগুলো তুলনামূলক ভাবে স্পষ্ট। চিকিৎসক এবং অন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা সাধারণ নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করেই রোগগুলো শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিরল এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কিন্তু রোগগুলো ভয়ংকর। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তার আশপাশের অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এ রকম ১৫টি রোগের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:
স্টেনডাল সিনড্রোম
স্টেনডাল সিনড্রোম যাদের আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগের পাশাপাশি প্যানিক অ্যাটাক, বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা, বিভ্রান্তি এবং কোনো শিল্পকর্ম দেখার পর হ্যালুসিনেশনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারণত যে শিল্পকে বিশেষভাবে সুন্দর বলে মনে করা হয় বা যখন একটি স্থানে বিপুল পরিমাণে শিল্পকর্ম রাখা থাকে সেখানে গেলে এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। যেমন জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারিতে অতিমাত্রায় স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডস্কেপে বলা হচ্ছে, এসবের পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উনিশ শতকের ফরাসি লেখকের নামে এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১৭ সালে ফ্লোরেন্স ভ্রমণের সময় লেখক এমন উপসর্গ অনুভব করেছিলেন। স্টেনডাল সিনড্রোম আবার হাইপার কালচারেমিয়া বা ফ্লোরেন্স সিনড্রোম নামেও পরিচিত।
অ্যাপোটেমনোফিলিয়া
শরীরের অখণ্ডতার ধারণা বিকার নামেও পরিচিত। অ্যাপোটেমনোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি দেহের কোনো সুস্থ অঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। অবশ্য এই মানসিক সমস্যা সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। মনোবিদেরা এটিকে স্নায়বিক ব্যাধি বলেই মনে করেন। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন বা এমন ভাবে কোনো অঙ্গের ক্ষতি করতে পারেন যে সেটি সারাতে অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের ডান প্যারিয়েটাল লোব কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যাপোটেমনোফিলিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যান না। কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি এবং অ্যাভারসন থেরাপির মাধ্যমে অ্যাপোটেমেনোফিলিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তাঁর হাত আসলে তাঁর নয়। হাতের যেন আলাদা জীবন আছে। এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য স্বাভাবিক অনুভূতি আছে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, তাঁদের হাত যেন এক স্বাধীন জীবন্ত বস্তু, হাতের নিজস্ব ইচ্ছা অনুভূতি আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অঙ্গটিকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। হাত তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আক্রান্ত হাতের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে!
কর্পাস ক্যালোসামের ক্ষতি হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। এই অংশটি মস্তিষ্কের দুটি সেরিব্রাল গোলার্ধকে সংযুক্ত করে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্ট্রোক এবং প্যারিয়েটাল লোবের ক্ষতি। হাতগুলোর মধ্যে তখন ‘আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব’ বা ‘আইডিওমোটর অ্যাপ্রাক্সিয়া’ আছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ মনে হয় যেন একটি হাত আরেক হাতের বিরুদ্ধে লড়ছে।
ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম
এই সিনড্রোমের নাম রাখা হয়েছে জোসেফ ক্যাপগ্রাস নামে এক ফরাসি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নামে। তিনি ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দ্বিত্বের বিভ্রম অন্বেষণে ব্যয় করেছেন। ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় যেন তাঁর কোনো এক প্রিয়জনের স্থলে একইরকম দেখতে আরেক খারাপ লোক ছদ্মবেশ ধরে ঢুকে পড়েছে। এটি স্বামী, স্ত্রী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। অর্থাৎ কোনো এক প্রিয় জনকে অন্য ব্যক্তি বলে ধারণা হওয়ার বিভ্রমের মধ্যে থাকেন তিনি। মনে হয় যেন, তার স্বামী আর আগের ব্যক্তিটি নেই। তিনি তাঁর ক্ষতি বা তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সিজোফ্রেনিয়া, নিদ্রাহীনতা, মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে।
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম (এআইডব্লিউএস), টড সিনড্রোম নামেও পরিচিত। এটি একটি স্নায়বিক বিকার জনিত সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় তার দেহের ছবি, স্থান এবং/অথবা সময় যেন বিচ্যুত বা বিকৃত হচ্ছে। তাঁরা চারপাশের পরিবেশ বিকৃত ভাবে দেখে।
অ্যালিস যেমন বাড়ির উচ্চতার চেয়েও অনেক লম্বা হয়ে যায়, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরও এ ধরনের অনুভূতি হয়। তাঁরা শান্ত বা জোরে শব্দ শুনতে পান, বস্তুর আকার প্রকৃত আকারের চেয়ে ছোট বা বড় দেখেন। এমনকি সঠিক বেগ বা টেক্সচারের অনুভূতিও হারান। আক্রান্ত ব্যক্তি তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের আকার আকৃতি নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন।
এই উপসর্গগুলো আতঙ্ক ও ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেন, মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত বা ড্রাগ আসক্ত হয়ে যেতে পারেন। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তির হ্যালুসিনেশন, সংবেদের বিকার এবং গতি বেগের পরিবর্তিত অনুভূতি হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ২০-এর দশকে যাদের ব্রেন টিউমার বা ড্রাগ নেওয়ার ইতিহাস আছে তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
বোয়ানথ্রপি
খুব বিরল কিন্তু ভীতিকর মানসিক ব্যাধি এটি। বোয়ানথ্রপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে গরু বলে মনে করেন। তাঁরা প্রায়শই গরুর মতো আচরণ করেন। কখনো কখনো তাঁদের মাঠে গরুর মতো চরতে দেখা যায়। গরুর পালের মধ্যে চার পায়ে হাঁটেন, ঘাস চিবান এবং নিজেকে গরুর পালেরই একজন সদস্য বলে মনে করেন। বোয়ানথ্রপি আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে না যে তাঁরা গরুর মতো আচরণ করছেন। গবেষকেরা মনে করেন, এই অদ্ভুত মানসিক ব্যাধি স্বপ্ন বা সম্মোহন থেকেও আরোপ করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, বাইবেলেও বোয়ানথ্রপির কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজারকে ‘মানবগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে ষাঁড়ের মতো ঘাস খেয়েছিলেন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপি
বোয়ানথ্রপির মতো, যারা ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে ভুগছেন তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পশুতে পরিণত হতে সক্ষম। নিজেকে নেকড়ে বলে মনে করেন। কখনো অন্য প্রাণী বলেও মনে হয়। ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি পশুর মতো আচরণ করেন। নিজেকে নেকড়ে বা বাঘ সিংহ বলে মনে হলে তিনি তখন তেমন হিংস্র আচরণ করতে শুরু করেন। প্রায়শই বনে-জঙ্গলে গিয়ে থাকেন বা কখনো বনে গিয়ে পালিয়ে থাকেন।
কোটার্ড ডিলিউশন
দ্য ওয়াকিং ডেড বা হালের হলিউডি জম্বি সিনেমা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা এটিকে সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। এমনকি নিজেকেই এক সময় ওয়াকিং ডেড বা জম্বি ভাবেন। একেই বলে কোটার্ড ডিলিউশন। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, আক্ষরিক অর্থেই তিনি ওয়াকিং ডেড বা ভূত হয়ে গেছেন। শরীর ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং/অথবা শরীরের সমস্ত রক্ত এবং অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর পচে গলে যাওয়ারও একটা অনুভূতি হতে পারে। কোটার্ড ডিলিউশনে ভোগা রোগীর বিষণ্নতার শিকার হওয়া স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর না খেয়ে মরার চিন্তাও আসতে পারে।
এই ভয়ংকর ব্যাধিটি ১৮৮০ সালে প্রথম বর্ণনা করেন স্নায়ুবিদ জুলস কোটার্ড। অবশ্য কোটার্ড ডিলিউশন অত্যন্ত বিরল রোগ। কোটার্ড ডিলিউশনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল হাইতিতে। সেখানে এক ব্যক্তি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং বর্তমানে জাহান্নামে আছেন।
ডায়োজেনিস সিনড্রোম
ডায়োজেনিস সিনড্রোমকে সাধারণত এক ধরনের ‘মজুতদারি’ বোঝায়। অর্থাৎ অকারণে জিনিস পত্র জমিয়ে রাখার একটা সমস্যা। এ কারণে এই রোগ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। গ্রিক দার্শনিক সিনোপের ডায়োজেনিসের নামে এই রোগের নাম রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জায়োজেনিস নিজে আসলে মিনিমালিস্ট! আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অকারণে জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত মজুত ছাড়াও, ডায়োজেনিস সিনড্রোমের সঙ্গে নিজের প্রতি চরম অবহেলা, নিজের বা অন্যদের প্রতি উদাসীনতা, সমাজকে অগ্রাহ্য করা এবং নিজের ‘বদভ্যাসের’ জন্য কখনোই লজ্জিত না হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বয়স্ক, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত এবং যারা জীবনের কোনো এক সময় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন বা যারা কোনো স্থিতিশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠেননি তাঁদের মধ্যে ডায়োজেনিস সিনড্রোম দেখা যেতে পারে।
বিচ্ছিন্ন পরিচয় বোধের সমস্যা
ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার (ডিআইডি)। একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিত্ব ধারণের ব্যাধি নামেও পরিচিত। এটি একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এবং টেলিভিশন শো নির্মিত হয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকের দুতিনটি আলাদা পরিচয় থাকে। কখনো কখনো আরও বেশি। ভুক্তভোগীরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের একটি চক্রের মধ্যে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক বছর পরপর তিনি আলাদা একটি পরিচয়ে বিরাজ করেন। তাঁদের আত্মপরিচয় মুহূর্তের মধ্যে বদলেও যেতে পারে। পরিচয় বদলের আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সতর্কতার লক্ষণও দেখা যায় না। এ ধরনের সমস্যায় যে তিনি আক্রান্ত, এটা তাকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কারণে, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার যাদের আছে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম। তাঁদের মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হন স্বজনেরা।
ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডার বা কপট বিকার
হাঁচির সঙ্গে গায়ে কাঁপুনি দেওয়া সর্দি-জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত। কিন্তু ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। এরা অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা বলে, কপট আচরণ করে। আদতে এটি একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধি। ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থ করে তোলেন। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার একটা অবসেশন দেখা যায়। ডাক্তারের শরণাপন্ন যেন হতে হয় সেই চেষ্টাই তাঁরা সব সময় করেন। কখনো কখনো তাঁরা অসুস্থতার ভান করেন। মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। রোগ নিয়ে বিশাল গল্প ফেঁদে বসেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষণ উপসর্গ বলেন এবং হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অসুস্থতার প্রতি এই জাতীয় আবেশ (অবসেশন) প্রায়ই অতীতের কোনো আঘাত বা গুরুতর অসুস্থতা থেকে তৈরি হতে পারে।
ক্লুভার-বুসি সিনড্রোম
হাভাতের মতো একটি বইয়ের স্বাদ কল্পনা করা বা একটি গাড়ির সঙ্গে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা করা- ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে দ্বারা আক্রান্তরা এমন অদ্ভুত আচরণই করেন। তাঁদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অখাদ্য বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা এবং অটোমোবাইলের মতো নির্জীব বস্তুর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করার মতো আচরণ দেখা যায়। ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে আক্রান্তরা অতি পরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকেও চিনতে পারেন না। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধি শনাক্ত করা কঠিন। মস্তিষ্কের টেমপোরাল লোবে গুরুতর আঘাতের ফল এই রোগ। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো সারা জীবন এই সমস্যায় ভোগেন।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যাটির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়। অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপহাস করেন। খুব কম লোকই অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বুঝতে পারেন। ওসিডি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। তবে আতঙ্কে জড়োসরো থাকা, উদ্বেগ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকা এসব লক্ষণ দেখে ওসিডি চিহ্নিত করা যেতে পারে। বারবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মতো কাজের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন এসব লোক। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কাজ করার অবসেশন দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পুরোপুরি সচেতন থাকেন যে তাঁদের ভয় বা উদ্বেগ একেবারে অযৌক্তিক, এই উপলব্ধি তখন তাঁদের মধ্যে আরেক উদ্বেগের জন্ম দেয়। ফলে তিনি উদ্বেগের একটি চক্রে ঢুকে পড়েন।
প্যারিস সিনড্রোম
প্যারিস সিনড্রোম একটি অত্যন্ত অদ্ভুত অস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এ ধরনের ব্যক্তি প্যারিস শহরে গিয়ে অভিভূত হয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, এটা জাপানি পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্যারিসে আনুমানিক ৬০ লাখ জাপানি পর্যটক যান। তাঁদের মধ্যে এক থেকে দুই ডজন জাপানি অতিমাত্রায় উদ্বেগ, কোনো কিছুতে ব্যক্তিত্ব আরোপ, অবাস্তব অনুভূতি, নিপীড়নমূলক চিন্তাভাবনা, হ্যালুসিনেশন এবং ভয়ংকর ভ্রান্তিতে ভোগেন। এগুলোই প্যারিস সিনড্রোমের বৈশিষ্ট্য। দেখা গেছে, প্যারিস সিনড্রোমে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকের মানসিক রোগের কোনো ইতিহাস নেই। ধারণা করা হয়, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি এবং কল্পনার সঙ্গে প্যারিসের বাস্তবতার পার্থক্য এই মারাত্মক মানসিক সমস্যা তৈরি করে।
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া, ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের মতোই। এখানে মানুষের ডুপ্লিকেট ভাবার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানের ডুপ্লিকেট ভাবে। অর্থাৎ কোনো স্থানে গিয়ে তার কাছে স্থানটি অন্য কোনো স্থানের অনুরূপ বলে মনে হয়। এই বিশ্বাসটি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, একটি স্থান একই সঙ্গে দুই জায়গাতে বিরাজ করছে। ধরা যাক, বান্দরবানে দেখা কোনো পাহাড়কে রাঙামাটিতে গিয়ে দেখা আরেকটি পাহাড়ের অনুরূপ মনে হচ্ছে। হোটেল কক্ষকে তার মনে হচ্ছে বাড়িতে নিজের ঘর। ‘রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া’ শব্দটি প্রথম ১৯০৩ সালে ব্যবহার করেন স্নায়ুবিদ আর্নল্ড পিক। স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। টিউমার, নিদ্রাহীনতা, মস্তিষ্কের আঘাত বা অন্যান্য মানসিক রোগীদের মধ্যে এই সমস্যাটি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
জাহাঙ্গীর আলম

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
গবেষণা বলছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ এই সেবার আওতায় রয়েছে। আর বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন মেন্টাল ইলনেসের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন প্রতি বছর মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক সিজোফ্রেনিয়া এবং প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
এই ধরনের ব্যাধিগুলো তুলনামূলক ভাবে স্পষ্ট। চিকিৎসক এবং অন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা সাধারণ নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করেই রোগগুলো শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিরল এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কিন্তু রোগগুলো ভয়ংকর। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তার আশপাশের অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এ রকম ১৫টি রোগের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:
স্টেনডাল সিনড্রোম
স্টেনডাল সিনড্রোম যাদের আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগের পাশাপাশি প্যানিক অ্যাটাক, বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা, বিভ্রান্তি এবং কোনো শিল্পকর্ম দেখার পর হ্যালুসিনেশনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারণত যে শিল্পকে বিশেষভাবে সুন্দর বলে মনে করা হয় বা যখন একটি স্থানে বিপুল পরিমাণে শিল্পকর্ম রাখা থাকে সেখানে গেলে এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। যেমন জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারিতে অতিমাত্রায় স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডস্কেপে বলা হচ্ছে, এসবের পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উনিশ শতকের ফরাসি লেখকের নামে এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১৭ সালে ফ্লোরেন্স ভ্রমণের সময় লেখক এমন উপসর্গ অনুভব করেছিলেন। স্টেনডাল সিনড্রোম আবার হাইপার কালচারেমিয়া বা ফ্লোরেন্স সিনড্রোম নামেও পরিচিত।
অ্যাপোটেমনোফিলিয়া
শরীরের অখণ্ডতার ধারণা বিকার নামেও পরিচিত। অ্যাপোটেমনোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি দেহের কোনো সুস্থ অঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। অবশ্য এই মানসিক সমস্যা সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। মনোবিদেরা এটিকে স্নায়বিক ব্যাধি বলেই মনে করেন। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন বা এমন ভাবে কোনো অঙ্গের ক্ষতি করতে পারেন যে সেটি সারাতে অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের ডান প্যারিয়েটাল লোব কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যাপোটেমনোফিলিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যান না। কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি এবং অ্যাভারসন থেরাপির মাধ্যমে অ্যাপোটেমেনোফিলিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তাঁর হাত আসলে তাঁর নয়। হাতের যেন আলাদা জীবন আছে। এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য স্বাভাবিক অনুভূতি আছে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, তাঁদের হাত যেন এক স্বাধীন জীবন্ত বস্তু, হাতের নিজস্ব ইচ্ছা অনুভূতি আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অঙ্গটিকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। হাত তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আক্রান্ত হাতের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে!
কর্পাস ক্যালোসামের ক্ষতি হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। এই অংশটি মস্তিষ্কের দুটি সেরিব্রাল গোলার্ধকে সংযুক্ত করে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্ট্রোক এবং প্যারিয়েটাল লোবের ক্ষতি। হাতগুলোর মধ্যে তখন ‘আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব’ বা ‘আইডিওমোটর অ্যাপ্রাক্সিয়া’ আছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ মনে হয় যেন একটি হাত আরেক হাতের বিরুদ্ধে লড়ছে।
ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম
এই সিনড্রোমের নাম রাখা হয়েছে জোসেফ ক্যাপগ্রাস নামে এক ফরাসি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নামে। তিনি ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দ্বিত্বের বিভ্রম অন্বেষণে ব্যয় করেছেন। ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় যেন তাঁর কোনো এক প্রিয়জনের স্থলে একইরকম দেখতে আরেক খারাপ লোক ছদ্মবেশ ধরে ঢুকে পড়েছে। এটি স্বামী, স্ত্রী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। অর্থাৎ কোনো এক প্রিয় জনকে অন্য ব্যক্তি বলে ধারণা হওয়ার বিভ্রমের মধ্যে থাকেন তিনি। মনে হয় যেন, তার স্বামী আর আগের ব্যক্তিটি নেই। তিনি তাঁর ক্ষতি বা তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সিজোফ্রেনিয়া, নিদ্রাহীনতা, মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে।
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম (এআইডব্লিউএস), টড সিনড্রোম নামেও পরিচিত। এটি একটি স্নায়বিক বিকার জনিত সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় তার দেহের ছবি, স্থান এবং/অথবা সময় যেন বিচ্যুত বা বিকৃত হচ্ছে। তাঁরা চারপাশের পরিবেশ বিকৃত ভাবে দেখে।
অ্যালিস যেমন বাড়ির উচ্চতার চেয়েও অনেক লম্বা হয়ে যায়, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরও এ ধরনের অনুভূতি হয়। তাঁরা শান্ত বা জোরে শব্দ শুনতে পান, বস্তুর আকার প্রকৃত আকারের চেয়ে ছোট বা বড় দেখেন। এমনকি সঠিক বেগ বা টেক্সচারের অনুভূতিও হারান। আক্রান্ত ব্যক্তি তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের আকার আকৃতি নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন।
এই উপসর্গগুলো আতঙ্ক ও ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেন, মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত বা ড্রাগ আসক্ত হয়ে যেতে পারেন। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তির হ্যালুসিনেশন, সংবেদের বিকার এবং গতি বেগের পরিবর্তিত অনুভূতি হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ২০-এর দশকে যাদের ব্রেন টিউমার বা ড্রাগ নেওয়ার ইতিহাস আছে তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
বোয়ানথ্রপি
খুব বিরল কিন্তু ভীতিকর মানসিক ব্যাধি এটি। বোয়ানথ্রপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে গরু বলে মনে করেন। তাঁরা প্রায়শই গরুর মতো আচরণ করেন। কখনো কখনো তাঁদের মাঠে গরুর মতো চরতে দেখা যায়। গরুর পালের মধ্যে চার পায়ে হাঁটেন, ঘাস চিবান এবং নিজেকে গরুর পালেরই একজন সদস্য বলে মনে করেন। বোয়ানথ্রপি আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে না যে তাঁরা গরুর মতো আচরণ করছেন। গবেষকেরা মনে করেন, এই অদ্ভুত মানসিক ব্যাধি স্বপ্ন বা সম্মোহন থেকেও আরোপ করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, বাইবেলেও বোয়ানথ্রপির কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজারকে ‘মানবগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে ষাঁড়ের মতো ঘাস খেয়েছিলেন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপি
বোয়ানথ্রপির মতো, যারা ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে ভুগছেন তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পশুতে পরিণত হতে সক্ষম। নিজেকে নেকড়ে বলে মনে করেন। কখনো অন্য প্রাণী বলেও মনে হয়। ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি পশুর মতো আচরণ করেন। নিজেকে নেকড়ে বা বাঘ সিংহ বলে মনে হলে তিনি তখন তেমন হিংস্র আচরণ করতে শুরু করেন। প্রায়শই বনে-জঙ্গলে গিয়ে থাকেন বা কখনো বনে গিয়ে পালিয়ে থাকেন।
কোটার্ড ডিলিউশন
দ্য ওয়াকিং ডেড বা হালের হলিউডি জম্বি সিনেমা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা এটিকে সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। এমনকি নিজেকেই এক সময় ওয়াকিং ডেড বা জম্বি ভাবেন। একেই বলে কোটার্ড ডিলিউশন। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, আক্ষরিক অর্থেই তিনি ওয়াকিং ডেড বা ভূত হয়ে গেছেন। শরীর ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং/অথবা শরীরের সমস্ত রক্ত এবং অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর পচে গলে যাওয়ারও একটা অনুভূতি হতে পারে। কোটার্ড ডিলিউশনে ভোগা রোগীর বিষণ্নতার শিকার হওয়া স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর না খেয়ে মরার চিন্তাও আসতে পারে।
এই ভয়ংকর ব্যাধিটি ১৮৮০ সালে প্রথম বর্ণনা করেন স্নায়ুবিদ জুলস কোটার্ড। অবশ্য কোটার্ড ডিলিউশন অত্যন্ত বিরল রোগ। কোটার্ড ডিলিউশনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল হাইতিতে। সেখানে এক ব্যক্তি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং বর্তমানে জাহান্নামে আছেন।
ডায়োজেনিস সিনড্রোম
ডায়োজেনিস সিনড্রোমকে সাধারণত এক ধরনের ‘মজুতদারি’ বোঝায়। অর্থাৎ অকারণে জিনিস পত্র জমিয়ে রাখার একটা সমস্যা। এ কারণে এই রোগ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। গ্রিক দার্শনিক সিনোপের ডায়োজেনিসের নামে এই রোগের নাম রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জায়োজেনিস নিজে আসলে মিনিমালিস্ট! আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অকারণে জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত মজুত ছাড়াও, ডায়োজেনিস সিনড্রোমের সঙ্গে নিজের প্রতি চরম অবহেলা, নিজের বা অন্যদের প্রতি উদাসীনতা, সমাজকে অগ্রাহ্য করা এবং নিজের ‘বদভ্যাসের’ জন্য কখনোই লজ্জিত না হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বয়স্ক, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত এবং যারা জীবনের কোনো এক সময় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন বা যারা কোনো স্থিতিশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠেননি তাঁদের মধ্যে ডায়োজেনিস সিনড্রোম দেখা যেতে পারে।
বিচ্ছিন্ন পরিচয় বোধের সমস্যা
ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার (ডিআইডি)। একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিত্ব ধারণের ব্যাধি নামেও পরিচিত। এটি একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এবং টেলিভিশন শো নির্মিত হয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকের দুতিনটি আলাদা পরিচয় থাকে। কখনো কখনো আরও বেশি। ভুক্তভোগীরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের একটি চক্রের মধ্যে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক বছর পরপর তিনি আলাদা একটি পরিচয়ে বিরাজ করেন। তাঁদের আত্মপরিচয় মুহূর্তের মধ্যে বদলেও যেতে পারে। পরিচয় বদলের আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সতর্কতার লক্ষণও দেখা যায় না। এ ধরনের সমস্যায় যে তিনি আক্রান্ত, এটা তাকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কারণে, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার যাদের আছে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম। তাঁদের মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হন স্বজনেরা।
ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডার বা কপট বিকার
হাঁচির সঙ্গে গায়ে কাঁপুনি দেওয়া সর্দি-জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত। কিন্তু ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। এরা অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা বলে, কপট আচরণ করে। আদতে এটি একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধি। ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থ করে তোলেন। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার একটা অবসেশন দেখা যায়। ডাক্তারের শরণাপন্ন যেন হতে হয় সেই চেষ্টাই তাঁরা সব সময় করেন। কখনো কখনো তাঁরা অসুস্থতার ভান করেন। মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। রোগ নিয়ে বিশাল গল্প ফেঁদে বসেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষণ উপসর্গ বলেন এবং হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অসুস্থতার প্রতি এই জাতীয় আবেশ (অবসেশন) প্রায়ই অতীতের কোনো আঘাত বা গুরুতর অসুস্থতা থেকে তৈরি হতে পারে।
ক্লুভার-বুসি সিনড্রোম
হাভাতের মতো একটি বইয়ের স্বাদ কল্পনা করা বা একটি গাড়ির সঙ্গে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা করা- ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে দ্বারা আক্রান্তরা এমন অদ্ভুত আচরণই করেন। তাঁদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অখাদ্য বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা এবং অটোমোবাইলের মতো নির্জীব বস্তুর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করার মতো আচরণ দেখা যায়। ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে আক্রান্তরা অতি পরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকেও চিনতে পারেন না। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধি শনাক্ত করা কঠিন। মস্তিষ্কের টেমপোরাল লোবে গুরুতর আঘাতের ফল এই রোগ। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো সারা জীবন এই সমস্যায় ভোগেন।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যাটির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়। অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপহাস করেন। খুব কম লোকই অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বুঝতে পারেন। ওসিডি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। তবে আতঙ্কে জড়োসরো থাকা, উদ্বেগ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকা এসব লক্ষণ দেখে ওসিডি চিহ্নিত করা যেতে পারে। বারবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মতো কাজের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন এসব লোক। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কাজ করার অবসেশন দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পুরোপুরি সচেতন থাকেন যে তাঁদের ভয় বা উদ্বেগ একেবারে অযৌক্তিক, এই উপলব্ধি তখন তাঁদের মধ্যে আরেক উদ্বেগের জন্ম দেয়। ফলে তিনি উদ্বেগের একটি চক্রে ঢুকে পড়েন।
প্যারিস সিনড্রোম
প্যারিস সিনড্রোম একটি অত্যন্ত অদ্ভুত অস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এ ধরনের ব্যক্তি প্যারিস শহরে গিয়ে অভিভূত হয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, এটা জাপানি পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্যারিসে আনুমানিক ৬০ লাখ জাপানি পর্যটক যান। তাঁদের মধ্যে এক থেকে দুই ডজন জাপানি অতিমাত্রায় উদ্বেগ, কোনো কিছুতে ব্যক্তিত্ব আরোপ, অবাস্তব অনুভূতি, নিপীড়নমূলক চিন্তাভাবনা, হ্যালুসিনেশন এবং ভয়ংকর ভ্রান্তিতে ভোগেন। এগুলোই প্যারিস সিনড্রোমের বৈশিষ্ট্য। দেখা গেছে, প্যারিস সিনড্রোমে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকের মানসিক রোগের কোনো ইতিহাস নেই। ধারণা করা হয়, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি এবং কল্পনার সঙ্গে প্যারিসের বাস্তবতার পার্থক্য এই মারাত্মক মানসিক সমস্যা তৈরি করে।
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া, ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের মতোই। এখানে মানুষের ডুপ্লিকেট ভাবার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানের ডুপ্লিকেট ভাবে। অর্থাৎ কোনো স্থানে গিয়ে তার কাছে স্থানটি অন্য কোনো স্থানের অনুরূপ বলে মনে হয়। এই বিশ্বাসটি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, একটি স্থান একই সঙ্গে দুই জায়গাতে বিরাজ করছে। ধরা যাক, বান্দরবানে দেখা কোনো পাহাড়কে রাঙামাটিতে গিয়ে দেখা আরেকটি পাহাড়ের অনুরূপ মনে হচ্ছে। হোটেল কক্ষকে তার মনে হচ্ছে বাড়িতে নিজের ঘর। ‘রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া’ শব্দটি প্রথম ১৯০৩ সালে ব্যবহার করেন স্নায়ুবিদ আর্নল্ড পিক। স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। টিউমার, নিদ্রাহীনতা, মস্তিষ্কের আঘাত বা অন্যান্য মানসিক রোগীদের মধ্যে এই সমস্যাটি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
গবেষণা বলছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ এই সেবার আওতায় রয়েছে। আর বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন মেন্টাল ইলনেসের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন প্রতি বছর মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক সিজোফ্রেনিয়া এবং প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
এই ধরনের ব্যাধিগুলো তুলনামূলক ভাবে স্পষ্ট। চিকিৎসক এবং অন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা সাধারণ নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করেই রোগগুলো শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিরল এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কিন্তু রোগগুলো ভয়ংকর। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তার আশপাশের অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এ রকম ১৫টি রোগের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:
স্টেনডাল সিনড্রোম
স্টেনডাল সিনড্রোম যাদের আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগের পাশাপাশি প্যানিক অ্যাটাক, বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা, বিভ্রান্তি এবং কোনো শিল্পকর্ম দেখার পর হ্যালুসিনেশনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারণত যে শিল্পকে বিশেষভাবে সুন্দর বলে মনে করা হয় বা যখন একটি স্থানে বিপুল পরিমাণে শিল্পকর্ম রাখা থাকে সেখানে গেলে এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। যেমন জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারিতে অতিমাত্রায় স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডস্কেপে বলা হচ্ছে, এসবের পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উনিশ শতকের ফরাসি লেখকের নামে এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১৭ সালে ফ্লোরেন্স ভ্রমণের সময় লেখক এমন উপসর্গ অনুভব করেছিলেন। স্টেনডাল সিনড্রোম আবার হাইপার কালচারেমিয়া বা ফ্লোরেন্স সিনড্রোম নামেও পরিচিত।
অ্যাপোটেমনোফিলিয়া
শরীরের অখণ্ডতার ধারণা বিকার নামেও পরিচিত। অ্যাপোটেমনোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি দেহের কোনো সুস্থ অঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। অবশ্য এই মানসিক সমস্যা সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। মনোবিদেরা এটিকে স্নায়বিক ব্যাধি বলেই মনে করেন। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন বা এমন ভাবে কোনো অঙ্গের ক্ষতি করতে পারেন যে সেটি সারাতে অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের ডান প্যারিয়েটাল লোব কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যাপোটেমনোফিলিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যান না। কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি এবং অ্যাভারসন থেরাপির মাধ্যমে অ্যাপোটেমেনোফিলিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তাঁর হাত আসলে তাঁর নয়। হাতের যেন আলাদা জীবন আছে। এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য স্বাভাবিক অনুভূতি আছে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, তাঁদের হাত যেন এক স্বাধীন জীবন্ত বস্তু, হাতের নিজস্ব ইচ্ছা অনুভূতি আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অঙ্গটিকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। হাত তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আক্রান্ত হাতের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে!
কর্পাস ক্যালোসামের ক্ষতি হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। এই অংশটি মস্তিষ্কের দুটি সেরিব্রাল গোলার্ধকে সংযুক্ত করে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্ট্রোক এবং প্যারিয়েটাল লোবের ক্ষতি। হাতগুলোর মধ্যে তখন ‘আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব’ বা ‘আইডিওমোটর অ্যাপ্রাক্সিয়া’ আছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ মনে হয় যেন একটি হাত আরেক হাতের বিরুদ্ধে লড়ছে।
ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম
এই সিনড্রোমের নাম রাখা হয়েছে জোসেফ ক্যাপগ্রাস নামে এক ফরাসি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নামে। তিনি ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দ্বিত্বের বিভ্রম অন্বেষণে ব্যয় করেছেন। ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় যেন তাঁর কোনো এক প্রিয়জনের স্থলে একইরকম দেখতে আরেক খারাপ লোক ছদ্মবেশ ধরে ঢুকে পড়েছে। এটি স্বামী, স্ত্রী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। অর্থাৎ কোনো এক প্রিয় জনকে অন্য ব্যক্তি বলে ধারণা হওয়ার বিভ্রমের মধ্যে থাকেন তিনি। মনে হয় যেন, তার স্বামী আর আগের ব্যক্তিটি নেই। তিনি তাঁর ক্ষতি বা তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সিজোফ্রেনিয়া, নিদ্রাহীনতা, মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে।
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম (এআইডব্লিউএস), টড সিনড্রোম নামেও পরিচিত। এটি একটি স্নায়বিক বিকার জনিত সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় তার দেহের ছবি, স্থান এবং/অথবা সময় যেন বিচ্যুত বা বিকৃত হচ্ছে। তাঁরা চারপাশের পরিবেশ বিকৃত ভাবে দেখে।
অ্যালিস যেমন বাড়ির উচ্চতার চেয়েও অনেক লম্বা হয়ে যায়, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরও এ ধরনের অনুভূতি হয়। তাঁরা শান্ত বা জোরে শব্দ শুনতে পান, বস্তুর আকার প্রকৃত আকারের চেয়ে ছোট বা বড় দেখেন। এমনকি সঠিক বেগ বা টেক্সচারের অনুভূতিও হারান। আক্রান্ত ব্যক্তি তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের আকার আকৃতি নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন।
এই উপসর্গগুলো আতঙ্ক ও ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেন, মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত বা ড্রাগ আসক্ত হয়ে যেতে পারেন। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তির হ্যালুসিনেশন, সংবেদের বিকার এবং গতি বেগের পরিবর্তিত অনুভূতি হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ২০-এর দশকে যাদের ব্রেন টিউমার বা ড্রাগ নেওয়ার ইতিহাস আছে তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
বোয়ানথ্রপি
খুব বিরল কিন্তু ভীতিকর মানসিক ব্যাধি এটি। বোয়ানথ্রপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে গরু বলে মনে করেন। তাঁরা প্রায়শই গরুর মতো আচরণ করেন। কখনো কখনো তাঁদের মাঠে গরুর মতো চরতে দেখা যায়। গরুর পালের মধ্যে চার পায়ে হাঁটেন, ঘাস চিবান এবং নিজেকে গরুর পালেরই একজন সদস্য বলে মনে করেন। বোয়ানথ্রপি আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে না যে তাঁরা গরুর মতো আচরণ করছেন। গবেষকেরা মনে করেন, এই অদ্ভুত মানসিক ব্যাধি স্বপ্ন বা সম্মোহন থেকেও আরোপ করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, বাইবেলেও বোয়ানথ্রপির কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজারকে ‘মানবগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে ষাঁড়ের মতো ঘাস খেয়েছিলেন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপি
বোয়ানথ্রপির মতো, যারা ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে ভুগছেন তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পশুতে পরিণত হতে সক্ষম। নিজেকে নেকড়ে বলে মনে করেন। কখনো অন্য প্রাণী বলেও মনে হয়। ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রোপিতে আক্রান্ত ব্যক্তি পশুর মতো আচরণ করেন। নিজেকে নেকড়ে বা বাঘ সিংহ বলে মনে হলে তিনি তখন তেমন হিংস্র আচরণ করতে শুরু করেন। প্রায়শই বনে-জঙ্গলে গিয়ে থাকেন বা কখনো বনে গিয়ে পালিয়ে থাকেন।
কোটার্ড ডিলিউশন
দ্য ওয়াকিং ডেড বা হালের হলিউডি জম্বি সিনেমা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা এটিকে সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। এমনকি নিজেকেই এক সময় ওয়াকিং ডেড বা জম্বি ভাবেন। একেই বলে কোটার্ড ডিলিউশন। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, আক্ষরিক অর্থেই তিনি ওয়াকিং ডেড বা ভূত হয়ে গেছেন। শরীর ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং/অথবা শরীরের সমস্ত রক্ত এবং অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর পচে গলে যাওয়ারও একটা অনুভূতি হতে পারে। কোটার্ড ডিলিউশনে ভোগা রোগীর বিষণ্নতার শিকার হওয়া স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর না খেয়ে মরার চিন্তাও আসতে পারে।
এই ভয়ংকর ব্যাধিটি ১৮৮০ সালে প্রথম বর্ণনা করেন স্নায়ুবিদ জুলস কোটার্ড। অবশ্য কোটার্ড ডিলিউশন অত্যন্ত বিরল রোগ। কোটার্ড ডিলিউশনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল হাইতিতে। সেখানে এক ব্যক্তি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং বর্তমানে জাহান্নামে আছেন।
ডায়োজেনিস সিনড্রোম
ডায়োজেনিস সিনড্রোমকে সাধারণত এক ধরনের ‘মজুতদারি’ বোঝায়। অর্থাৎ অকারণে জিনিস পত্র জমিয়ে রাখার একটা সমস্যা। এ কারণে এই রোগ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। গ্রিক দার্শনিক সিনোপের ডায়োজেনিসের নামে এই রোগের নাম রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জায়োজেনিস নিজে আসলে মিনিমালিস্ট! আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অকারণে জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত মজুত ছাড়াও, ডায়োজেনিস সিনড্রোমের সঙ্গে নিজের প্রতি চরম অবহেলা, নিজের বা অন্যদের প্রতি উদাসীনতা, সমাজকে অগ্রাহ্য করা এবং নিজের ‘বদভ্যাসের’ জন্য কখনোই লজ্জিত না হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বয়স্ক, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত এবং যারা জীবনের কোনো এক সময় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন বা যারা কোনো স্থিতিশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠেননি তাঁদের মধ্যে ডায়োজেনিস সিনড্রোম দেখা যেতে পারে।
বিচ্ছিন্ন পরিচয় বোধের সমস্যা
ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার (ডিআইডি)। একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিত্ব ধারণের ব্যাধি নামেও পরিচিত। এটি একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এবং টেলিভিশন শো নির্মিত হয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকের দুতিনটি আলাদা পরিচয় থাকে। কখনো কখনো আরও বেশি। ভুক্তভোগীরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের একটি চক্রের মধ্যে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক বছর পরপর তিনি আলাদা একটি পরিচয়ে বিরাজ করেন। তাঁদের আত্মপরিচয় মুহূর্তের মধ্যে বদলেও যেতে পারে। পরিচয় বদলের আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সতর্কতার লক্ষণও দেখা যায় না। এ ধরনের সমস্যায় যে তিনি আক্রান্ত, এটা তাকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কারণে, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার যাদের আছে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম। তাঁদের মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হন স্বজনেরা।
ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডার বা কপট বিকার
হাঁচির সঙ্গে গায়ে কাঁপুনি দেওয়া সর্দি-জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত। কিন্তু ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। এরা অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা বলে, কপট আচরণ করে। আদতে এটি একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধি। ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থ করে তোলেন। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার একটা অবসেশন দেখা যায়। ডাক্তারের শরণাপন্ন যেন হতে হয় সেই চেষ্টাই তাঁরা সব সময় করেন। কখনো কখনো তাঁরা অসুস্থতার ভান করেন। মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। রোগ নিয়ে বিশাল গল্প ফেঁদে বসেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষণ উপসর্গ বলেন এবং হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অসুস্থতার প্রতি এই জাতীয় আবেশ (অবসেশন) প্রায়ই অতীতের কোনো আঘাত বা গুরুতর অসুস্থতা থেকে তৈরি হতে পারে।
ক্লুভার-বুসি সিনড্রোম
হাভাতের মতো একটি বইয়ের স্বাদ কল্পনা করা বা একটি গাড়ির সঙ্গে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা করা- ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে দ্বারা আক্রান্তরা এমন অদ্ভুত আচরণই করেন। তাঁদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অখাদ্য বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা এবং অটোমোবাইলের মতো নির্জীব বস্তুর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করার মতো আচরণ দেখা যায়। ক্লুভার-বুসি সিনড্রোমে আক্রান্তরা অতি পরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকেও চিনতে পারেন না। এই ভয়ানক মানসিক ব্যাধি শনাক্ত করা কঠিন। মস্তিষ্কের টেমপোরাল লোবে গুরুতর আঘাতের ফল এই রোগ। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো সারা জীবন এই সমস্যায় ভোগেন।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যাটির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়। অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপহাস করেন। খুব কম লোকই অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বুঝতে পারেন। ওসিডি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। তবে আতঙ্কে জড়োসরো থাকা, উদ্বেগ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকা এসব লক্ষণ দেখে ওসিডি চিহ্নিত করা যেতে পারে। বারবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মতো কাজের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন এসব লোক। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কাজ করার অবসেশন দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পুরোপুরি সচেতন থাকেন যে তাঁদের ভয় বা উদ্বেগ একেবারে অযৌক্তিক, এই উপলব্ধি তখন তাঁদের মধ্যে আরেক উদ্বেগের জন্ম দেয়। ফলে তিনি উদ্বেগের একটি চক্রে ঢুকে পড়েন।
প্যারিস সিনড্রোম
প্যারিস সিনড্রোম একটি অত্যন্ত অদ্ভুত অস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এ ধরনের ব্যক্তি প্যারিস শহরে গিয়ে অভিভূত হয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, এটা জাপানি পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্যারিসে আনুমানিক ৬০ লাখ জাপানি পর্যটক যান। তাঁদের মধ্যে এক থেকে দুই ডজন জাপানি অতিমাত্রায় উদ্বেগ, কোনো কিছুতে ব্যক্তিত্ব আরোপ, অবাস্তব অনুভূতি, নিপীড়নমূলক চিন্তাভাবনা, হ্যালুসিনেশন এবং ভয়ংকর ভ্রান্তিতে ভোগেন। এগুলোই প্যারিস সিনড্রোমের বৈশিষ্ট্য। দেখা গেছে, প্যারিস সিনড্রোমে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকের মানসিক রোগের কোনো ইতিহাস নেই। ধারণা করা হয়, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি এবং কল্পনার সঙ্গে প্যারিসের বাস্তবতার পার্থক্য এই মারাত্মক মানসিক সমস্যা তৈরি করে।
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া
রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া, ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের মতোই। এখানে মানুষের ডুপ্লিকেট ভাবার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানের ডুপ্লিকেট ভাবে। অর্থাৎ কোনো স্থানে গিয়ে তার কাছে স্থানটি অন্য কোনো স্থানের অনুরূপ বলে মনে হয়। এই বিশ্বাসটি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, একটি স্থান একই সঙ্গে দুই জায়গাতে বিরাজ করছে। ধরা যাক, বান্দরবানে দেখা কোনো পাহাড়কে রাঙামাটিতে গিয়ে দেখা আরেকটি পাহাড়ের অনুরূপ মনে হচ্ছে। হোটেল কক্ষকে তার মনে হচ্ছে বাড়িতে নিজের ঘর। ‘রিডুপ্লিকেটিভ অ্যামনেসিয়া’ শব্দটি প্রথম ১৯০৩ সালে ব্যবহার করেন স্নায়ুবিদ আর্নল্ড পিক। স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। টিউমার, নিদ্রাহীনতা, মস্তিষ্কের আঘাত বা অন্যান্য মানসিক রোগীদের মধ্যে এই সমস্যাটি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
২ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪ দিন আগে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
৪ দিন আগেমুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধের কারণে জনবল হারিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চাপে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বে।
সংক্রামক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যক্ষ্মার মোকাবিলায় সরকারের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প সরকারের বৈশ্বিক কাটছাঁটের অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রায় এক বছর আগে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্তত ৬২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ‘সেক্টর কর্মসূচি’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির অধীন অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায়। ২০২৪ সালের জুনে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার সেক্টর কর্মসূচি বিলুপ্ত করে। বর্তমানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাইকোব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি) কর্মসূচির আওতায়।
চলতি মাসের শেষেই গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর এমবিডিসি কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠি পান এনটিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের ‘অর্থায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন অর্থের জোগান না এলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরু থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫০ কেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হলে প্রায় সোয়া ২ হাজার কর্মী চাকরি হারান। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক এলাকায় রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ রয়েছে এমন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। কর্মসূচি বহাল থাকায় ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ২৬ জনে।
এদিকে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৮ জন। প্রচলিত একাধিক ওষুধে কাজ না হলে তাকে বলা হয় মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা।
এই অবস্থায় অর্থায়ন বন্ধ হলে বাধার মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ৬৪ জন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার, ৪১৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), ৬৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), ১২ জন প্রোগ্রাম অফিসার, ৫৭ জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৫ জন ল্যাব সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসারের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিপির একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু গ্লোবাল ফান্ড আগামী জানুয়ারি থেকে আর অর্থায়ন করতে চাইছে না। এই অবস্থায় যাঁরা যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই চাকরি হারাবেন বলে জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের চাকরিতে রাখা হয়।
এমনিতেই যখন দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের হার কম, সেখানে অর্থায়নের জটিলতা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এখন গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে। সরকার গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। হয়তো তারা আবারও অর্থায়ন শুরু করবে, তবে এতে সময় লাগবে। এই সময়ে সরকারের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলেন, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কিছু জিন এক্সপার্ট আলট্রা মেশিন কিনেছিল। অর্থায়ন বা যথেষ্ট লোকবল না থাকলে এগুলো অকেজো হয়ে যাবে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে শূন্য স্থান (গ্যাপ) তৈরি হবে। এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাথমিক নির্ণয়ের সুযোগ থাকায় রেডিওলজির ওপর চাপ কমে। এখন সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া যাদের ক্ষেত্রে কাশি দিয়ে কফ বের করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না, তাদের জন্য মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী যোগ হয় ১ হাজার ৩৮ জন। দিনে মারা যায় ১২১ জন। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী বাড়ছে। রোগ নিরাময় হার সাধারণ যক্ষ্মায় ৯৫ শতাংশ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৭৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ যক্ষ্মা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সেও সবচেয়ে বড় প্রভাবক হলো যক্ষ্মা। সংক্রামক এই রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফান্ড হয়তো একসঙ্গে অর্থায়ন কমাবে না বা সম্পূর্ণ বাতিল করবে না। যেটুকু অর্থায়ন তারা কমাবে, সরকার রাজস্ব থেকে তা পূরণ করবে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কোথাও বাধা সৃষ্টি হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। ওপি বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো কাজই থেমে যায়নি। সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধের কারণে জনবল হারিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চাপে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বে।
সংক্রামক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যক্ষ্মার মোকাবিলায় সরকারের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প সরকারের বৈশ্বিক কাটছাঁটের অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রায় এক বছর আগে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্তত ৬২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ‘সেক্টর কর্মসূচি’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির অধীন অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায়। ২০২৪ সালের জুনে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার সেক্টর কর্মসূচি বিলুপ্ত করে। বর্তমানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাইকোব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি) কর্মসূচির আওতায়।
চলতি মাসের শেষেই গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর এমবিডিসি কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠি পান এনটিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের ‘অর্থায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন অর্থের জোগান না এলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরু থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫০ কেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হলে প্রায় সোয়া ২ হাজার কর্মী চাকরি হারান। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক এলাকায় রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ রয়েছে এমন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। কর্মসূচি বহাল থাকায় ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ২৬ জনে।
এদিকে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৮ জন। প্রচলিত একাধিক ওষুধে কাজ না হলে তাকে বলা হয় মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা।
এই অবস্থায় অর্থায়ন বন্ধ হলে বাধার মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ৬৪ জন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার, ৪১৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), ৬৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), ১২ জন প্রোগ্রাম অফিসার, ৫৭ জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৫ জন ল্যাব সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসারের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিপির একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু গ্লোবাল ফান্ড আগামী জানুয়ারি থেকে আর অর্থায়ন করতে চাইছে না। এই অবস্থায় যাঁরা যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই চাকরি হারাবেন বলে জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের চাকরিতে রাখা হয়।
এমনিতেই যখন দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের হার কম, সেখানে অর্থায়নের জটিলতা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এখন গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে। সরকার গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। হয়তো তারা আবারও অর্থায়ন শুরু করবে, তবে এতে সময় লাগবে। এই সময়ে সরকারের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলেন, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কিছু জিন এক্সপার্ট আলট্রা মেশিন কিনেছিল। অর্থায়ন বা যথেষ্ট লোকবল না থাকলে এগুলো অকেজো হয়ে যাবে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে শূন্য স্থান (গ্যাপ) তৈরি হবে। এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাথমিক নির্ণয়ের সুযোগ থাকায় রেডিওলজির ওপর চাপ কমে। এখন সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া যাদের ক্ষেত্রে কাশি দিয়ে কফ বের করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না, তাদের জন্য মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী যোগ হয় ১ হাজার ৩৮ জন। দিনে মারা যায় ১২১ জন। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী বাড়ছে। রোগ নিরাময় হার সাধারণ যক্ষ্মায় ৯৫ শতাংশ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৭৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ যক্ষ্মা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সেও সবচেয়ে বড় প্রভাবক হলো যক্ষ্মা। সংক্রামক এই রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফান্ড হয়তো একসঙ্গে অর্থায়ন কমাবে না বা সম্পূর্ণ বাতিল করবে না। যেটুকু অর্থায়ন তারা কমাবে, সরকার রাজস্ব থেকে তা পূরণ করবে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কোথাও বাধা সৃষ্টি হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। ওপি বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো কাজই থেমে যায়নি। সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
১০ অক্টোবর ২০২১
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
২ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪ দিন আগে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
১০ অক্টোবর ২০২১
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
২ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪ দিন আগে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
৪ দিন আগেমো. ইকবাল হোসেন

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।
মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।
এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।
এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।
এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।
আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।
খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—
পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।
মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।
এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।
এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।
এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।
আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।
খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—
পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
১০ অক্টোবর ২০২১
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
২ দিন আগে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
৪ দিন আগেডা. অবন্তি ঘোষ

চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
বীর্য পরীক্ষার পর শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি, আকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি
দেখা হয়।
চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা কেমন এবং কোন স্তরে রয়েছে, তার ওপর। সাধারণভাবে চিকিৎসা কয়েকটি ধাপে করা হয়।
শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতি উন্নত করতে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন দেওয়া হয়, যেমন:
ওষুধ শুরুর পর রোগীকে তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কারণ, নতুন শুক্রাণু তৈরিতে প্রায় ৭৫ দিন লাগে।
ওষুধে উন্নতি হলে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডিম্বাণু উৎপাদন বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
ভেরিকোসিল কিংবা শুক্রনালির ব্লকেজ থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
যাঁদের বীর্যে একেবারেই শুক্রাণু পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পার্মিয়া বলা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে সরাসরি শুক্রাণু সংগ্রহ করে আইসিএসআই করাই সবচেয়ে কার্যকর।
গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০

চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
বীর্য পরীক্ষার পর শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি, আকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি
দেখা হয়।
চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা কেমন এবং কোন স্তরে রয়েছে, তার ওপর। সাধারণভাবে চিকিৎসা কয়েকটি ধাপে করা হয়।
শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতি উন্নত করতে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন দেওয়া হয়, যেমন:
ওষুধ শুরুর পর রোগীকে তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কারণ, নতুন শুক্রাণু তৈরিতে প্রায় ৭৫ দিন লাগে।
ওষুধে উন্নতি হলে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডিম্বাণু উৎপাদন বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
ভেরিকোসিল কিংবা শুক্রনালির ব্লকেজ থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
যাঁদের বীর্যে একেবারেই শুক্রাণু পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পার্মিয়া বলা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে সরাসরি শুক্রাণু সংগ্রহ করে আইসিএসআই করাই সবচেয়ে কার্যকর।
গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০

সব দেশের মানুষের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অনেক মানুষই নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছেও যান না। আবার বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোও অত্যন্ত অপ্রতুল।
১০ অক্টোবর ২০২১
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
২ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪ দিন আগে