যুক্তরাষ্ট্রের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি ২০২২-এ বাংলাদেশি নাগরিকদের আবেদনের একটি লিংক ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে দেখা যাচ্ছে, যা অনেকেই শেয়ার করছেন। এর উৎস অনুসন্ধান করে ফেসবুকে ‘ডিভি লটারি ২০২২’ নামে একটি পেজ পাওয়া গেছে, যেখানে ‘অ্যামেরিকান ডিভি লটারি ২০২২- এ অনলাইনে আবেদন করুন’ ক্যাপশন দিয়ে একটি লিংক একাধিকবার পোস্ট করা হয়েছে।
‘আমেরিকান ডিবি লটারী ২০২১’ নামে আরও একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া গেছে যেখানে একইভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এছাড়া অনেক দিন ধরেই ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে বেশ কিছু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় একই ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রচার হচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
পোস্টগুলোতে আবেদনের জন্য যে লিংক দেওয়া হয়েছে তাতে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেটি ডিভি লটারির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নয়। ওটি ডটকম ডোমেইন নামের ওই ওয়েবসাইটে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, টাকা আয়, টিপস, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে আলাদা ব্লগ পাওয়া যায়। ‘ডিভি লটারি ২০২২’ সেগুলোর একটি।
ডিভি লটারির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন এখানে।
ব্লগের শুরুতে বলা হচ্ছে, এ বছর থেকে আবার বাংলাদেশি নাগরিকেরা ডাইভারসিটি ভিসার মাধ্যমে যুক্ত্ররাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু একই ব্লগের শেষ দিকে যে দেশগুলোর নাগরিকদের ডিভি লটারিতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই, সেসব দেশের তালিকা দেওয়া আছে। তালিকার প্রথম নামটিই বাংলাদেশ।
এই ব্লগে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ হাজার বাংলাদেশির নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ’ শিরোনামে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শিরোনাম বাদ দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি আইনি পদক্ষেপ বাতিল ঘোষণা করায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি নির্দেশ পুনর্বহাল হয়েছে। বিচারকের ওই রায়ের ফলে সাড়ে আট লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যাদের মধ্যে ৪০ সহস্রাধিক বাংলাদেশি আছেন। প্রতিবেদনে ডিভি লটারির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সতর্কবার্তা
ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে সতর্কবার্তা দিয়েছে। একটি বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে, ‘ডাইভারসিটি ভিসা– ডাইভারসিটি অভিবাসী ভিসা জালিয়াতদের সম্পর্কে সচেতন হোন। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ আর ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য নয়’। এছাড়া ডাইভার্সিটি ইমিগ্রেন্ট ভিসা প্রোগ্রামের নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, বাংলাদেশসহ ১৯টি দেশ এই কর্মসূচির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত।
ডিভি লটারি কী?
ডিভি (ডাইভারসিটি ভিসা) লটারি মূলত একটি কর্মসূচি যেটির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র লটারির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে থাকে। এই কর্মসূচি মূলত সেই দেশগুলোর জন্য– যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার তুলনামূলক কম। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট বলছে, ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ডিভি ভিসা পাওয়া ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ কারণে বাংলাদেশিরা এই ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
কোন কোন দেশ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে?
ডিভি-২০২২–এ আবেদনের জন্য অযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, চীন (হংকংসহ), কলম্বিয়া, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, ভারত, জ্যামাইকা, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য (উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে) ও এর নির্ভরশীল অঞ্চল এবং ভিয়েতনাম। যোগ্যতা হারানোর কারণ হলো, বিগত পাঁচ বছরে এসব দেশ থেকে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন পেয়েছেন।
যেসব দেশ থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীরা ডিভি-২০২২–এর জন্য আবেদন করতে পারবেন সেই তালিকা জানতে ক্লিক করুন।
সিদ্ধান্ত
ডিভি লটারি–২০২২–এ বাংলাদেশি নাগরিকদের আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে