জিনাতুন নুর

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)
জিনাতুন নুর

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৭ ঘণ্টা আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
১ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
২ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’
অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।
বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’
অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।
বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
১ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
২ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ (রিপোর্ট) জানাতে পারেন না।
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারী ও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা এবং সিএসডব্লিউসির ফোকাল মনীষা বিশ্বাস মূল নিবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইত্যাদির রিপোর্টিং (অভিযোগ করা) ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রক্রিয়া জটিল ও ইংরেজিনির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকার কারণে রিপোর্ট ‘পলিসি ভায়োলেশন (নীতিভঙ্গ) নয়’ বলে বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সরাসরি কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়, তা জানেন না৷
মূল নিবন্ধে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না৷ আরও বলা হয়, এআই জেনারেটেড ছবি, ডিপফেক কনটেন্ট—এগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সহায়তা সক্ষমতা সীমিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি উদ্ভূত লিঙ্গভিত্তিক যৌন সহিংসতা-সংক্রান্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারলেও তা খুব সীমিত। এ ছাড়া ইমো, লাইকির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করার সুবিধা না থাকায় অপরাধীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে মনীষা বিশ্বাস জানান, থানায় ভুক্তভোগীরা পরামর্শ নেওয়ার পরে মামলা করতে উৎসাহিত না হওয়ায় অভিযোগ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি থানায় এসে উপাত্ত সরানোর মাধ্যমে পারস্পরিক মীমাংসারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সভায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘সাইবার সহিংসতার কথা যখন বলি, তখন প্রথমে মাথায় আসে, কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছি। তার একটা কারণ হলো, এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং একে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের দেশে সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। ‘মি টু’ আন্দোলনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনেও এই ভয় কাজ করেছে যে, কথা বললেই তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। বাস্তব জীবনে যেভাবে নারীদের দোষারোপ করা হয়, সেই একই চিত্র ডিজিটাল জগতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে নারীরা নিরাপদভাবে অনলাইন পরিসরে বিচরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘ফরেনসিক সাক্ষ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত ডিভাইস জমা দিতে হয়, যা ভুক্তভোগীকে আরও নিরুৎসাহিত করে মামলা করার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের যথাযথ ডেটা নেই যে কতজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কতজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানান, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে ১০৯-এর জরুরি হেল্পলাইন সেবায় ভুক্তভোগীদের চাহিদার ধরনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখন সাইবারসংক্রান্ত অভিযোগ বেশি আসছে।
ঢাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মোছা. মাকসুদা আক্তার বলেন, সাইবারসংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের জন্য মনোসামাজিক সেবা দরকার। যদি পুলিশের কাছে আসতে ভুক্তভোগীরা ভয় পান, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা দরকার।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং একে প্রান্তিক নারীবান্ধব করা প্রয়োজন। আইনবিদদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসা খুব জরুরি।
সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত উপাদান এবং ডিজিটাল অসম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফিকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ই-এফআইআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার ফলে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না, যা হয়রানি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ (রিপোর্ট) জানাতে পারেন না।
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারী ও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা এবং সিএসডব্লিউসির ফোকাল মনীষা বিশ্বাস মূল নিবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইত্যাদির রিপোর্টিং (অভিযোগ করা) ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রক্রিয়া জটিল ও ইংরেজিনির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকার কারণে রিপোর্ট ‘পলিসি ভায়োলেশন (নীতিভঙ্গ) নয়’ বলে বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সরাসরি কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়, তা জানেন না৷
মূল নিবন্ধে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না৷ আরও বলা হয়, এআই জেনারেটেড ছবি, ডিপফেক কনটেন্ট—এগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সহায়তা সক্ষমতা সীমিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি উদ্ভূত লিঙ্গভিত্তিক যৌন সহিংসতা-সংক্রান্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারলেও তা খুব সীমিত। এ ছাড়া ইমো, লাইকির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করার সুবিধা না থাকায় অপরাধীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে মনীষা বিশ্বাস জানান, থানায় ভুক্তভোগীরা পরামর্শ নেওয়ার পরে মামলা করতে উৎসাহিত না হওয়ায় অভিযোগ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি থানায় এসে উপাত্ত সরানোর মাধ্যমে পারস্পরিক মীমাংসারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সভায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘সাইবার সহিংসতার কথা যখন বলি, তখন প্রথমে মাথায় আসে, কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছি। তার একটা কারণ হলো, এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং একে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের দেশে সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। ‘মি টু’ আন্দোলনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনেও এই ভয় কাজ করেছে যে, কথা বললেই তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। বাস্তব জীবনে যেভাবে নারীদের দোষারোপ করা হয়, সেই একই চিত্র ডিজিটাল জগতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে নারীরা নিরাপদভাবে অনলাইন পরিসরে বিচরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘ফরেনসিক সাক্ষ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত ডিভাইস জমা দিতে হয়, যা ভুক্তভোগীকে আরও নিরুৎসাহিত করে মামলা করার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের যথাযথ ডেটা নেই যে কতজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কতজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানান, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে ১০৯-এর জরুরি হেল্পলাইন সেবায় ভুক্তভোগীদের চাহিদার ধরনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখন সাইবারসংক্রান্ত অভিযোগ বেশি আসছে।
ঢাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মোছা. মাকসুদা আক্তার বলেন, সাইবারসংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের জন্য মনোসামাজিক সেবা দরকার। যদি পুলিশের কাছে আসতে ভুক্তভোগীরা ভয় পান, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা দরকার।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং একে প্রান্তিক নারীবান্ধব করা প্রয়োজন। আইনবিদদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসা খুব জরুরি।
সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত উপাদান এবং ডিজিটাল অসম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফিকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ই-এফআইআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার ফলে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না, যা হয়রানি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
২ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
২ দিন আগেমুহাম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা। আর সেখান থেকে শুরু তাঁর উদ্যোগ—বাংলার আদি খাদ্য ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। এটি শুধু ব্যবসা নয়, দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা। সংসার সামলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন শাহেলী। ‘আহরণ’ নামের ফেসবুক পেজের কান্ডারি তিনি।
পরিবার
স্বামী এবং এক সন্তানকে নিয়ে শাহেলীর পরিবার। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে শাহেলী স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়।

শুরুর গল্প
বছর সাতেক আগে শাহেলী ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথম দিকে টুকটাক সমস্যা হলেও বুদ্ধি করে সব সামলে নেন। শাহেলীর পেজ আহরণে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সাত বছর আগে খোলা এই পেজ তাঁর বিক্রির মাধ্যম। অবশ্য অফলাইনেও তিনি পণ্য বিক্রি করেন।
কেন উদ্যোক্তা হলেন
পড়াশোনা করে যে চাকরিই করতে হবে, এমন নয়। শাহেলী মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা আর দক্ষতা থাকলে চাকরি না করে নিজে কিছু করে অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শাহেলী; যাকে বলে ঠেকে ঠেকে শেখা।

মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা
শুরুতে তাঁর পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় এখন তাঁর মাসিক বিক্রি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওঠানামা করে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর কাজে সহকারী হিসেবে যুক্ত আছেন ১৪ জন।
যা বিক্রি করেন
শাহেলীর পেজ আহরণে পাওয়া যাবে মধু, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেজুরের গুড়, শুঁটকি, বিভিন্ন প্রজাতির চাল ইত্যাদি।

কাঁচামাল সংগ্রহ
শাহেলী কাঁচামাল পেতে ছুটে বেড়ান কৃষকের দোরগোড়ায়। নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যের সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করেন। মানের বেলায় তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। এ কারণে অনেক ক্রেতা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে স্বস্তি খুঁজে পান।
আনন্দ
উদ্যোক্তা হিসেবে শাহেলী এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তাই ভিড়ের মধ্যে একদম অচেনা কেউ এগিয়ে এসে যখন বলেন, ‘আপনি মেহেরুন না? আপনার পণ্যের গুণগত মান সত্যিই অসাধারণ’—সেই প্রশংসা শাহেলীর মন ভরিয়ে দেয়। অচেনা মানুষের এমন আন্তরিক সাড়া তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে।
চ্যালেঞ্জ
একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের নানান জায়গায় ছুটে বেড়াবে—এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। শাহেলীর ভাষায়, ‘একজন নারীও পুরুষের মতো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সাহস ও সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অনেকে নানা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে। এতে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।’
তবে শাহেলী জানান, তিনি শুরু থেকে সাহসী। তাই এসব মন্তব্য বা চ্যালেঞ্জ তিনি খুব সহজে সামলে নিতে পারেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাঁর আগামীর পথ আরও দৃঢ় করে।

আফটার সেলস সার্ভিস
নানা কারণে কুরিয়ারে পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি ক্রেতা ক্ষতি মেনে নেবে? মোটেই না।
পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিপূরণ চায়, সেভাবে ক্ষতিপূরণ দেন শাহেলী। আর যারা পণ্য নিতে চায়, পেজে বার্তা পাঠালেই তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ভবিষ্যৎ
একটা গ্রাম হবে। সেই গ্রামে একজন মানুষ যখন প্রবেশ করবে, দেখবে ঢেঁকিতে ধান ভানা হচ্ছে, নারীরা পাটায় সর পিষছে, ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বের হচ্ছে। মোটামুটি বাংলার আদি চিত্র দেখা যাবে সেই গ্রামে। এমন স্বপ্ন শাহেলীর। এ ধরনের একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তাঁর।

বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা। আর সেখান থেকে শুরু তাঁর উদ্যোগ—বাংলার আদি খাদ্য ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। এটি শুধু ব্যবসা নয়, দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা। সংসার সামলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন শাহেলী। ‘আহরণ’ নামের ফেসবুক পেজের কান্ডারি তিনি।
পরিবার
স্বামী এবং এক সন্তানকে নিয়ে শাহেলীর পরিবার। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে শাহেলী স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়।

শুরুর গল্প
বছর সাতেক আগে শাহেলী ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথম দিকে টুকটাক সমস্যা হলেও বুদ্ধি করে সব সামলে নেন। শাহেলীর পেজ আহরণে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সাত বছর আগে খোলা এই পেজ তাঁর বিক্রির মাধ্যম। অবশ্য অফলাইনেও তিনি পণ্য বিক্রি করেন।
কেন উদ্যোক্তা হলেন
পড়াশোনা করে যে চাকরিই করতে হবে, এমন নয়। শাহেলী মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা আর দক্ষতা থাকলে চাকরি না করে নিজে কিছু করে অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শাহেলী; যাকে বলে ঠেকে ঠেকে শেখা।

মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা
শুরুতে তাঁর পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় এখন তাঁর মাসিক বিক্রি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওঠানামা করে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর কাজে সহকারী হিসেবে যুক্ত আছেন ১৪ জন।
যা বিক্রি করেন
শাহেলীর পেজ আহরণে পাওয়া যাবে মধু, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেজুরের গুড়, শুঁটকি, বিভিন্ন প্রজাতির চাল ইত্যাদি।

কাঁচামাল সংগ্রহ
শাহেলী কাঁচামাল পেতে ছুটে বেড়ান কৃষকের দোরগোড়ায়। নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যের সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করেন। মানের বেলায় তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। এ কারণে অনেক ক্রেতা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে স্বস্তি খুঁজে পান।
আনন্দ
উদ্যোক্তা হিসেবে শাহেলী এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তাই ভিড়ের মধ্যে একদম অচেনা কেউ এগিয়ে এসে যখন বলেন, ‘আপনি মেহেরুন না? আপনার পণ্যের গুণগত মান সত্যিই অসাধারণ’—সেই প্রশংসা শাহেলীর মন ভরিয়ে দেয়। অচেনা মানুষের এমন আন্তরিক সাড়া তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে।
চ্যালেঞ্জ
একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের নানান জায়গায় ছুটে বেড়াবে—এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। শাহেলীর ভাষায়, ‘একজন নারীও পুরুষের মতো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সাহস ও সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অনেকে নানা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে। এতে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।’
তবে শাহেলী জানান, তিনি শুরু থেকে সাহসী। তাই এসব মন্তব্য বা চ্যালেঞ্জ তিনি খুব সহজে সামলে নিতে পারেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাঁর আগামীর পথ আরও দৃঢ় করে।

আফটার সেলস সার্ভিস
নানা কারণে কুরিয়ারে পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি ক্রেতা ক্ষতি মেনে নেবে? মোটেই না।
পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিপূরণ চায়, সেভাবে ক্ষতিপূরণ দেন শাহেলী। আর যারা পণ্য নিতে চায়, পেজে বার্তা পাঠালেই তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ভবিষ্যৎ
একটা গ্রাম হবে। সেই গ্রামে একজন মানুষ যখন প্রবেশ করবে, দেখবে ঢেঁকিতে ধান ভানা হচ্ছে, নারীরা পাটায় সর পিষছে, ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বের হচ্ছে। মোটামুটি বাংলার আদি চিত্র দেখা যাবে সেই গ্রামে। এমন স্বপ্ন শাহেলীর। এ ধরনের একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তাঁর।

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৭ ঘণ্টা আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
১ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
২ দিন আগেবাড়ছে আতঙ্ক
ফিচার ডেস্ক

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসেও সেই স্বপ্ন অধরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১১ মাসে সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এটি নতুন করে আশা জাগানো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
চব্বিশের জুলাইয়ের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় দায় রয়েছে, তা নতুন সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বাস্তবতার ভিন্ন রূপ। ১১ মাসে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৯ জন; এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ মোট নির্যাতিতের প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু ও কিশোরী। এই জরিপে বিভিন্ন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।
কন্যা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের এ সংখ্যা প্রমাণ করে, পরিবার বা সমাজের কোনো স্তরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত পরিবারেও নারীরা নিরাপদ নয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে ৫৯৩ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ১০১ জন। নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ জন; এর মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ৬১ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮১ জনকে, যাদের মধ্যে ১৪১ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে ৫০০ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ নারী ও কন্যশিশু। তাদের মধ্যে ১৬ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।
প্রতিবেদনটির উদ্বেগজনক দিক হলো, গত ১১ মাসের এই পরিসংখ্যান ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট নির্যাতনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২ হাজার ২২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
এটি দেশের নাগরিকদের জন্য এক চরম হতাশার বার্তা। এরই মধ্যে গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। যাদের কাজ আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব করা। সে প্রস্তাব করাও হয়ে গেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসের নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসেও সেই স্বপ্ন অধরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১১ মাসে সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এটি নতুন করে আশা জাগানো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
চব্বিশের জুলাইয়ের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় দায় রয়েছে, তা নতুন সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বাস্তবতার ভিন্ন রূপ। ১১ মাসে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৯ জন; এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ মোট নির্যাতিতের প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু ও কিশোরী। এই জরিপে বিভিন্ন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।
কন্যা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের এ সংখ্যা প্রমাণ করে, পরিবার বা সমাজের কোনো স্তরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত পরিবারেও নারীরা নিরাপদ নয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে ৫৯৩ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ১০১ জন। নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ জন; এর মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ৬১ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮১ জনকে, যাদের মধ্যে ১৪১ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে ৫০০ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ নারী ও কন্যশিশু। তাদের মধ্যে ১৬ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।
প্রতিবেদনটির উদ্বেগজনক দিক হলো, গত ১১ মাসের এই পরিসংখ্যান ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট নির্যাতনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২ হাজার ২২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
এটি দেশের নাগরিকদের জন্য এক চরম হতাশার বার্তা। এরই মধ্যে গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। যাদের কাজ আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব করা। সে প্রস্তাব করাও হয়ে গেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসের নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৭ ঘণ্টা আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
১ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
২ দিন আগে