Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন

রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন
রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ০৩

২ টেস্টে ১৫৫ রান, সিরিজের সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ। সিরিজটা তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়ের সেরা উদাহরণ হয়ে রইল। মিরাজ কাল বিকেলে তাঁর মিরপুরের বাসায় আজকের পত্রিকাকে লম্বা সময় দিলেন নিজের কীর্তি, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, ক্যারিয়ার, সামনের ভারত সিরিজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে। তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রানা আব্বাস। 

প্রশ্ন: চার মাস আগে বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েই কি ভালো করার জেদ চেপেছিল মনে? 
মেহেদী হাসান মিরাজ: জেদ ঠিক না। আমি যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলাম না, তখন আমার সঙ্গে বিসিবি সভাপতির (নাজমুল হাসান পাপন) কথা হয়েছিল। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, দলের সঙ্গে যেতে চাও কি না। আমি তখন পরিষ্কার হতে চাইলাম, ১৫ জনের দলে আমাকে রাখা হচ্ছে কি না। আমাকে বলেছিলেন, ১৭ জনের দলে সদস্য হতে; দলের সঙ্গে থাকতে। ১৭ জনের সদস্য হয়ে যেতে চাইনি। মনে হয়েছে, ওটা আমার জন্য ক্ষতি হবে। এই যে পাঁচটা মাস সুযোগ পেয়েছি, এ সময় নিজের ফিটনেস, স্কিল নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটারই ফল পেয়েছি। 

প্রশ্ন: প্রস্তুতির এই সময়ে স্কিলে কোথায় বেশি উন্নতি করতে চেয়েছেন? 
মিরাজ: প্রস্তুতির শুরুতে বোলিংয়ে খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) বারবার আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলেন। এরপর কাজ করেছি। পরে যখন ঠিক হলো, তিনি অনেক স্বস্তি পেলেন। বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান) সঙ্গে ট্রিগার মুভমেন্ট, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি। দুজনের সঙ্গে কাজ করার ফল পেয়েছি। 

প্রশ্ন: ওয়ানডে ও টেস্টে আপনি নিয়মিত, তিন সংস্করণেই নিয়মিত হতে আপনার আসলে আর কী করণীয়? 
মিরাজ: আমি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। আমি যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়েছি, ওটা যৌক্তিক ছিল। আমি এই সংস্করণে ভালো খেলতে পারিনি। চার বছর আগে যখন ফিরে এলাম এবং ওই সময়ে যখন বাদ পড়লাম, বাদ পড়ার অবস্থায় ছিলাম না। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচসেরা, এশিয়া কাপে ওপেন করানো হয়েছে, একটাতে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলাম, আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ম্যাচসেরা হয়েছিলাম—সব মিলিয়ে যখন টি­-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ি, তখন আমি আসলে বাদ পড়ার পজিশনে ছিলাম না। এটা জানি না, কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে বলেছিল যে ওয়ানডে ও টেস্টে বেশি মনোযোগ রাখতে বাদ পড়েছি। 

প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে আপনাকে নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এত দিন, আপনি খুব ইতিবাচক, সহজেই ‘না’ করেন না। এ কারণেই কি আপনাকে নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে? 
মিরাজ: ঠিক বলেছেন। যেখানেই বলে, সেখানেই রাজি হয়ে যাই খেলতে। আমি সব সময় দলের জন্য খেলি। দলের জন্য অনেক বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি, নিজের ক্যারিয়ারও বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি। রাজি হচ্ছি শুধু দলের জন্যই। একটা পজিশনে যদি খেলা যায়, সেই পজিশন সম্পর্কে ভালো জানা-বোঝা যায়। আমি আটে ব্যাটিং করি লম্বা সময়। ওখানকার ভূমিকা সম্পর্কে আমি খুব ভালো বুঝি। 

প্রশ্ন: আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করার কথা অনেকবার বলেছেন। আপনার সবচেয়ে পছন্দের পজিশন আসলে কোনটি? 
মিরাজ: যদি পাঁচ-ছয়ে ব্যাটিং করতে পারি, অনেক ভালো। এই মুহূর্তে এখানে ব্যাটিং করা কঠিন। এখানে প্রতিষ্ঠিত যারা, অনেক দিন ধরে ভালো খেলছে, দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিচ্ছে। ওখানে এখন ব্যাটিং করার দাবি করব না, করাটা অযৌক্তিক হবে। তবে যখন সুযোগ আসবে, ওখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভালো লাগবে। 

প্রশ্ন: আট নম্বর পজিশন মানে বেশির ভাগ সময়ে ব্যাটিং করতে হয় চাপের মধ্যে। বেশির ভাগ ইনিংস মেরামত করার কাজ করতে হয়। আর যেদিন আপনার একটু নির্ভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে, তখন দলের ৩০০-৪০০ রান হয়ে যায়, দল তখন ইনিংস ঘোষণার কাছাকাছি এসে যায়। এটা ভেবে একটু দুর্ভাগা মনে হয় কি না—সাকিব আল হাসানের মতো আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো এত দিনে নিজেকে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন?
মিরাজ: না। সবশেষ দুই-তিন বছর ভালো ব্যাটিং করার চেষ্টা করছি। আমি বোলিংয়ে মনোযোগী ছিলাম। দুর্ভাগা না, প্রথম দিকে নিজেকে ওভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। এখন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে ব্যাটিং। 

প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজের আগে ভাবনাটা কী ছিল? ভেবেছিলেন, এভাবে দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতবেন? 
মিরাজ: আমরা সিরিজ জিতব, এটা কখনো ভাবিনি, চিন্তা করিনি। তবে হ্যাঁ, চিন্তা করেছিলাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আমরা পাকিস্তানে গিয়ে ভালো রান করতে পারি, উইকেট নিতে পারি, আমরা ওদের সঙ্গে ফাইট দিতে পারি। একটা রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন। আমরা যদি ফাইটই দিতে না পারি, তখন কোনো রেজাল্ট আসবে না। এই মানসিকতা আমাদের দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ছিল, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ফাইট দিতে চাই। এবং ফাইট দিতে দিতে একটা সময় কিন্তু আপনি জিতে যাবেন। 

প্রশ্ন: এই সিরিজে দুটি বড় জুটির সঙ্গে আপনার নাম জড়িয়ে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে দলের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু ২৬ রানে ৬ উইকেট—মানে খুব বিপর্যয়ের মধ্যে কোন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগোতে সহায়তা করেছে? 
মিরাজ: লিটন আর আমি যখন ব্যাটিং শুরু করেছিলাম, তখন অবশ্য চাপ কাজ করেছে। তবে আমরা ওই মুহূর্তকে উপভোগের চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে। মুহূর্তটা উপভোগ করতে, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একেকটা বল খেলা যায়, আমরা গল্প করেছি। ওকে বলছিলাম, এশিয়া কাপে (২০১৮ সালের ফাইনাল) মনে আছে, তুমি আর আমি ওপেন করেছিলাম। ওই পরিস্থিতিটা কী রকম ছিল। হালকা হতে বিভিন্ন দুষ্টুমি করছিলাম। কারণ, আমাদের চাপ কমানোর প্রয়োজন ছিল। যখন আমরা দুজন খেলাটা ধরতে পারলাম, তখন আমরা সিরিয়াসনেস বাড়িয়ে দিলাম এবং গেমের মধ্যে ঢুকে গেলাম—কীভাবে খেলব, কীভাবে বড় ইনিংস করব, গেমকে সাজাব ইত্যাদি। 

প্রশ্ন: যখন ওদের ডমিনেট করছিলেন, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? 
মিরাজ: পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি, এটা বিশাল ব্যাপার। বিশেষ করে টেস্টে। একটা জিতেছেন, হয়তো অনেকে মনে করবেন, এমনি হয়ে গেছে। দুটি জয়—এটা কোনো মজার বিষয় নয়। আপনি দেখেন, আমরা ৯ দিনই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এ জন্যই জিতেছি। পাকিস্তানে যেটা ভালো লেগেছে, ওখানে প্রত্যেক মানুষ শ্রদ্ধা করেছে। 

প্রশ্ন: কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
মিরাজ: তিনি পরিকল্পনা খুব ভালো করেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, ক্রিকেটীয় জ্ঞান খুবই ভালো। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবশেষ টেস্টের এক লাঞ্চের পরে বলেছিল, সায়েম আইয়ুব ব্যাটিং করছিল (দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে), আমি দুটি ফিল্ডার পেছনে নিয়েছিলাম। দুজন ফিল্ডার পেছনে থাকলে ব্যাটার ঝুঁকি নিয়ে মারতে পারবে। তিনি বললেন, তুমি মিড অনটা সামনে রেখে মিড অফটা হাফওয়েতে রাখলে আর অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলে ও একটা ভুল করলে তোমার সুযোগ থাকবে উইকেট নেওয়ার। ওভাবে ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করার চেষ্টা করেছি। তখনই ডাউন দ্য উইকেটে সে আউট হয়েছে। এই যে ছোট একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, এগুলো তাঁর মধ্যে আছে। 

প্রশ্ন: সামনে ভারত সফর, এবার সেখানেও দুর্দান্ত কিছু করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী? 
মিরাজ: শুরুটা ভালো হয়েছে, লড়াই করার মানসিকতা আছে। সে ধরনের বোলার, ব্যাটার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আমরা জানান দিয়েছি, ভালোভাবে আসছি। এটা শুরু মাত্র। ধরে রাখতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট লম্বা প্রক্রিয়া। প্রতিটি প্রজন্মকে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হবে। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে (২০২২) ওদের প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। ওরাও জানে, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ওদের যেকোনো সময় ধরতে পারি। আমরা ভালো করব ইনশা আল্লাহ। 

প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের পর দেশের আরেকজন সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে মিরাজ কতটা এগোলেন? 
মিরাজ: আমাকে অলরাউন্ডার হতে গেলে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেক ভালো করতে হবে, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। আমি ভালো করার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়। সাকিব ভাইকে দেখে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বাংলাদেশ দলকে অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। যখন মানুষ বলে, আমি অলরাউন্ডার হচ্ছি, শুনে খুব ভালো লাগে। এখন যেহেতু ভালো ব্যাটিংটা করছি; আরেকটু ওপরে দিকে নামতে পারলে আমার জন্য আরও ভালো হবে। 

প্রশ্ন: ক্রিকেটের বাইরে যদি আসি, গত কিছুদিনে দেশে বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ছোঁয়া বিসিবিতেও, নতুন সভাপতি এসেছেন। তাদের কাছে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার চাওয়া কী? 
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেট আমরা ভালো খেলতে পারি না, এত দিন এটাই বলা হতো। কিন্তু এখন সময় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের আরও এগিয়ে নেওয়ার। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো আরও ভালো করা; ভালো ভালো উইকেটে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলা; দেশের বাইরে বেশি ম্যাচ খেলা; ‘এ’ দল, এইচপি, বয়সভিত্তিক দলকেও বাইরে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। আগে যে বাইরে খেলার সুযোগ ছিল না, তা নয়, কিন্তু এটা আরও বেশি করা দরকার। যত বেশি এটা করা যাবে, ততই এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট। ভালোর তো আর শেষ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তোপের মুখে বিশ্বকাপের টিকিটের দাম কমাল ফিফা

ক্রীড়া ডেস্ক    
বিশ্বকাপের টিকিটের দাম কমিয়েছে ফিফা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বকাপের টিকিটের দাম কমিয়েছে ফিফা। ছবি: সংগৃহীত

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দলগুলো কে কোন গ্রুপে পড়েছে, তা জানা গেছে ৫ ডিসেম্বর ড্রয়ের পরই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় হতে যাওয়া বিশ্বকাপে টিকিটের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় তোপের মুখে পড়ে ফিফা। অবশেষে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিকিটের দাম কমিয়েছে।

১৯ জুলাই নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪১৮৫ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল দেখতে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হবে না বলে ফিফা আশ্বস্ত করেছে। বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা গতকাল জানিয়েছে, ৬০ ডলারে (৭৩৪২ টাকা) কেনা যাবে ফাইনালের টিকিট। শুধু ফাইনালই নয়, প্রত্যেক ম্যাচেরই টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ৬০ ডলার করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ফেডারেশনের কাছে এই টিকিটগুলো বণ্টন করা হবে। ভক্ত-সমর্থকদের টিকিট কীভাবে দেবে, সেই সিদ্ধান্ত ফেডারেশন নেবে।

প্রত্যেক ম্যাচের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ৬০ ডলার থেকে বড়জোর ১০০ ডলার (১২২৩৭ টাকা)। তবে ১০০০ ডলারে যাবে না বলে ফিফা নিশ্চিত করেছে। ১০০ ডলারের এই টিকিটগুলো ফিফা ‘সাপোর্টার এন্ট্রি টায়ার প্রাইস’ ক্যাটেগরিতে বিক্রি করবে। কেন হঠাৎ করে টিকিট বিক্রির কৌশল বদলে গেল, সেটা স্পষ্ট করেনি ফিফা। তবে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা জানিয়েছে, টুর্নামেন্টে ভক্ত-সমর্থকেরা যেন মাঠে বসে তাদের প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করতে পারেন সেজন্যই টিকিটের দাম কমানো হয়েছে।

ইউরোপীয় ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী (এফএসই) ফিফার এই টিকিটের দাম কমানোর ব্যাপারকে স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি ফিফার প্রতি এফএসইর কিছু পরামর্শও রয়েছে। এক বিবৃতিতে এফএসই বলেছে, ‘আমরা ফিফার কাছ থেকে একটা ঘোষণার আশা করেছিলাম। বিশ্বজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল সেটার প্রতিক্রিয়ায় কী করে ফিফা, তা দেখতে চেয়েছিলাম। শারীরিকভাবে যারা অক্ষম, সেসব ভক্ত-সমর্থকদের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি ফিফার প্রতি।’

বিশ্বকাপ টিকিটের আকাশচুম্বী দাম দেখে এফএসই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ১১ ডিসেম্বর বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, বিশ্বকাপের টিকিটের অত্যধিক মূল্য দেখে এফএসইর কাছে ফিফা ‘বিশ্বাসঘাতক’। নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানিও টিকিটের দাম কমাতে বলেছিলেন। তাঁরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ফিফা টিকিটের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৬ সালেই প্রথমবারের মতো ৪৮ দলের ফুটবল বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। মার্কিন মুলুকে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে নামবেন লিওনেল মেসি, রদ্রিগো দি পল, এমিলিয়ানো মার্তিনেজরা। কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ জিতে মেসি তাঁর আজন্মলালিত স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেষ মুহূর্তে আচমকা একাদশে খাজা, স্মিথের হলো কী

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩০
স্মিথ বাদ পড়ায় একাদশে সুযোগ পেলেন উসমান খাজা। ছবি: ফাইল ছবি
স্মিথ বাদ পড়ায় একাদশে সুযোগ পেলেন উসমান খাজা। ছবি: ফাইল ছবি

টসের সময় একাদশ ঘোষণা করার রীতি থাকলেও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো একাদশ ঘোষণা করে থাকে আগেভাগেই। অ্যাডিলেডে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের আগেও ঠিক এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে যাঁরা অ্যাডিলেড টেস্ট দেখতে উঠেছেন, তাঁরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন। একাদশে নাম থাকলেও স্কোরকার্ডে স্টিভেন স্মিথের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্মিথ না থাকায় কপাল খুলেছে উসমান খাজার। গতকাল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) একাদশে নাম না থাকলেও আজ অ্যাডিলেড টেস্টের একাদশে খাজা জায়গা করে নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে টসের সময় কামিন্স বলেন, ‘স্মিথের শরীর খারাপ। সে বাসায় চলে গেছে। তবে উসমান খাজার মতো কাউকে পেয়ে আমরা আসলেই ভাগ্যবান।’

ভার্টিগো সিম্পটম্পসের কারণে আজ মূলত অ্যাডিলেড টেস্টের একাদশে স্মিথ নেই বলে সিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। সিএ বলেছে, ‘স্মিথের মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাবজনিত সমস্যা রয়েছে। কদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। তাঁকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। খেলার মতো অবস্থায় ছিলেনও। কিন্তু সমস্যা বেশি থাকায় খেলাচ্ছি না তাঁকে আমরা।’

খাজা সবশেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন নভেম্বরে পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে। দুই দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে ৮ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। পিঠের চোটের কারণে ব্রিসবেনের গ্যাবায় অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি খাজা। গোলাপি বলের সেই টেস্টেও অজিরা পেয়েছে ৮ উইকেটের জয়। অ্যাডিলেডে আজ ফিরেই ৮২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলেছেন। ১২৬ বলের ইনিংসে মেরেছেন ১০ চার। ১৮ রানের জন্য ১৭তম টেস্ট সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপটা ঠিকই কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ব্যাটারের।

অ্যাডিলেডে তৃতীয় টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৬২ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান করেছে অজিরা। অধিনায়ক কামিন্স মাত্র এসেছেন। ৫ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। অ্যালেক্স ক্যারি ৭২ রানে ব্যাটিং করছেন। দুই দলের ক্রিকেটারই কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলছেন। সিডনির বন্ডাই বিচে হতাহতদের স্মরণেই মূলত কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলা, ম্যাচ শুরুর আগে নীরবতা ও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিক সেজে প্রশ্ন করলেন মিরাজ, শান্তর পাল্টা রসিকতা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১০
মিরপুরে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মজা করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: সংগৃহীত
মিরপুরে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মজা করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: সংগৃহীত

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল অদম্য-অপরাজেয় প্রীতি ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগেই শুরু হয় মজা। ‘খেলা, খেলা, খেলা’ বলে মিরপুরে পরশু মাইকিং করে নাজমুল হোসেন শান্ত যে গ্রামগঞ্জের পরিচিত দৃশ্যটাই তুলে ধরেছেন। গতকাল ম্যাচ শেষে সেই মজা বেড়ে যায় বহুগুণ। মেহেদী হাসান মিরাজ বনে গেলেন পুরোদস্তুর সাংবাদিক। রসিকতা করতে ছাড়েননি শান্তও।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অদম্য ও অপরাজেয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ ও শান্ত। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলন হলেও সেটা প্রথাগত ছিল না। আড্ডাচ্ছলে হওয়া এই সংবাদ সম্মেলনে হয়েছে অনেক মজা। শান্ত যখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বসলেন, মিরাজ তখন বনে গেলেন সাংবাদিক। শান্তর কাছে মিরাজের প্রশ্ন, ‘আপনি যে বলেছেন অদম্য কমিটির দল। এটা কেন বলেছেন, সেটার ব্যাখ্যা কি দেবেন?’ শান্তর উত্তর, ‘আপনি আসলে দেরিতে এসেছেন। এর উত্তর তো আমি দিয়েছি। আমি আপনাকে বলি। গতকালের (পরশু) যে বিষয়গুলো ছিল, সবই মজা ছিল। তবে আমি এখনো মনে করি আপনারা কমিটির দল।’

শান্ত কমিটির দল বলার পর মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাই হে হে করে হেসে দিলেন। অপরাজেয় অধিনায়ক বলেন, ‘এটা আসলে মজা করার জন্যই ছিল। কমিটির দলই তো সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এটা ছিল মূল মজার বিষয়।’ টস হেরে আগে ব্যাটিং করে শান্তর অপরাজেয় ৯ উইকেটে করে ১৬৬ রান। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন জিশান আলম। ১৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লক্ষ্য তাড়ায় ৪৮ রানের মধ্যে মিরাজের অদম্য ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তবে এবারের বিপিএলে নিলামে কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি হওয়া নাঈম শেখ ৪৪ বলে ৭৬ রান তুলে জয়ের ভিত গড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত চার বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে মিরাজের অদম্য।

বাংলাদেশ অল স্টার্স টি-টোয়েন্টি প্রীতি ম্যাচটা মূলত ছিল ১২তম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার মিশন। সন্ধ্যার পর আবুধাবি থেকে মিরপুর শেরেবাংলায় ছড়িয়ে পড়ে মোস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলে দল পাওয়ার আনন্দ। ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে মোস্তাফিজকে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে রেকর্ড দামে আইপিএলে বিক্রি হওয়াটা মোস্তাফিজের প্রাপ্য বলে মনে করেন মিরাজ। এ উপলক্ষে মোস্তাফিজের কাছে ট্রিট চাইবেন বলে জানিয়েছেন শান্ত। ২৬ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে বিপিএল। সিলেটে শুরু হওয়া বিপিএল শেষ হবে মিরপুরে। শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ২৩ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন:

ট্রিট চাইব কিন্তু মনে হয় না দেবে, মোস্তাফিজকে নিয়ে শান্ত

আইপিএলে রেকর্ড দামে মোস্তাফিজের দল পাওয়ায় অবাক হননি মাশরাফি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রিট চাইব কিন্তু মনে হয় না দেবে, মোস্তাফিজকে নিয়ে শান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে ট্রিট চাইবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: ফাইল ছবি
মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে ট্রিট চাইবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: ফাইল ছবি

ঘড়ির কাঁটা বেলা ৩টা বাজার পর থেকেই সবার নজর আবুধাবিতে। বাংলাদেশের যে সাত ক্রিকেটার নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কারা দল পান সেটা জানতে অপেক্ষায় ছিলেন কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। সন্ধ্যার পর আসে সুখবর। সুদূর আবুধাবি থেকে মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে এই আনন্দ।

আনন্দের উপলক্ষ্য মোস্তাফিজুর রহমানের ২০২৬ আইপিএলে দল পাওয়া। কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কিনেছে। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে আইপিএলে বিক্রি হওয়া ক্রিকেটার এখন এই বাঁহাতি পেসার। মোস্তাফিজ দল পাওয়ার পর আবুধাবি থেকে মিরপুর শেরেবাংলায় ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) আয়োজনে বিজয় দিবসে অদম্য-অপরাজেয় প্রীতি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন দুই অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আড্ডাচ্ছলে হওয়া এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছে মোস্তাফিজের আইপিএলে দল পাওয়ার প্রসঙ্গ। অপরাজেয় অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘এটা তো অনেক খুশির খবর। আপনাদের এটা ভালোভাবে উপস্থাপন করা উচিত মনে করি।’

আইপিএলে রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়া মোস্তাফিজের কাছে কি এই উপলক্ষ্যে ট্রিট চাইবেন শান্ত—এই প্রশ্নের উত্তরে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বেশ মজাই করলেন তিনি (শান্ত)। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘ট্রিট দেবে না মনে হয়। তবে চেষ্টা করব নেওয়ার। অনিশ্চয়তা রয়েছে এখানে।’ শান্তর এই কথা শুনে সংবাদ সম্মেলনে হাসির রোল পড়ে যায়। মোস্তাফিজের আরেক সতীর্থ মিরাজের মতে রেকর্ড দামে আইপিএলে বিক্রি হওয়াটা তাঁর (মোস্তাফিজ) প্রাপ্য। মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে অদম্য অধিনায়ক মিরাজ বলেন, ‘আমরা দেখিনি। তবে শুনেছি যখন খেলছিলাম। তখন শুনেছিলাম তাকে ভালো দামে কেনা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। সে আমাদের বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। আমি মনে করি এটা (৯ কোটি ২০ লাখ রুপি) দাম তার প্রাপ্য।’

মোস্তাফিজের ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে আইপিএলে দল পাওয়াতে মোটেও অবাক হননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মাশরাফি লেখেন, ‘মোস্তাফিজ ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কলকাতা নাইটা রাইর্ডাসে খেলবে এবার যা বাংলাদেশ টাকায় ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অভিনন্দন ফিজ। বর্তমান সে যে ছন্দে আছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। বরং দারুণ কিছু করবে ইনশা আল্লাহ।’ ২০১৬ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আইপিএলে ৬০ ম্যাচে ৮.১৩ ইকোনমিতে মোস্তাফিজ পেয়েছেন ৬৫ উইকেট। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, দিল্লি ক্যাপিটালস, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস, চেন্নাই সুপার কিংস—এই পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন তিনি। কলকাতা তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ দল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত