Ajker Patrika

অসময়ে দশ ফোঁড়েও কাজ হয় না

আজাদুর রহমান চন্দন
অসময়ে দশ ফোঁড়েও কাজ হয় না

কথায় আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। যদিও ইংরেজিতে বলা হয়, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান’; যার অর্থ হলো, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না; অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে না করলে পরে অনেক চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায় না।

কথাগুলো কারোরই অজানা না হলেও সচরাচর আমরা তা মনে রাখি না। মনে যে রাখি না তার নজির অসংখ্য। সবশেষ নজিরটি রাখলেন সম্প্রতি ক্ষমতা ছেড়ে, নিজ দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থককে অরক্ষিত রেখে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালেই জাতীয় সরকারের ধারণাটি প্রথম সামনে এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের প্রস্তাব ছিল—সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করা হোক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সেই প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এককভাবে সরকার গড়েছিল। যদিও একপর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য মুজিবনগরে আওয়ামী লীগসহ পাঁচটি দলের আটজন সদস্য নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার দাবি তুলেছিলেন তখনকার ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তখনো দাবিটি আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এক গোপন দলিলে (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) উল্লেখ আছে, ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও চাইছিলেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জাতীয় সরকার হোক।

কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের মনোভাব এমন ছিল যে তাঁরাই দেশটা স্বাধীন করেছেন, শুধু তাঁরাই শাসন করবেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে জাতীয় সংসদে ২৯৩টি আসন নিয়েও সামাল দিতে পারছিল না বঙ্গবন্ধুর সরকার। সে অবস্থায় স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেছিলেন। তখন সমমনা কয়েকটি দলকে একীভূত করে কার্যত একদলীয় সরকারকেই জাতীয় বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। অসময়ের সে চেষ্টার ফল কী হয়েছিল, সে কথা সবারই জানা।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে সরকার সরাসরি আলোচনার উদ্যোগ নিলে সেটি সহিংসতার দিকে গড়াত না। কিন্তু সরকার সময়মতো তেমন উদ্যোগ তো নেয়ইনি, উল্টো ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে ফল হলো উল্টো। গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের প্রতিরোধের মুখে ছয় ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের ‘সুরক্ষিত দুর্গ’ পতনের একই রকম চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ক্ষমতাসীনদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায় আলপিনের সামান্য খোঁচায় চুপসে যাওয়া ফাঁকা বেলুনের মতো। এরপরও সরকার অনেক হেলাফেলা ও সময়ক্ষেপণ করেছে, এমনকি নানা রকম কূটচাল চালারও চেষ্টা করেছে। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানান। কিন্তু ততক্ষণে জল অনেক দূর গড়িয়ে যায়। বদলে যায় আন্দোলনকারীদের দাবিও।

অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছিল, ‘ভোটের ফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে “আরব বসন্তের” মতো করে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে।’ তখনকার সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে নানা ষড়যন্ত্র থাকার তত্ত্ব হাজির করলেও তা ঠেকানোর কাজটি সময়মতো সঠিকভাবে না করে উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে আঘাত করার মতো কাজ করেছেন বারবার।

বহু বছর আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নানা মহল থেকে জামায়াতের রাজনীতিসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তরুণ প্রজন্মের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও জোর দাবি উঠেছিল স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলের বিচার করার।

মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মে মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল হওয়ার সম্ভাবনাও উঁকি দিয়েছিল। সে বছরের মে মাসের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হতে পারে বলে সুসংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।

কিন্তু সেই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সপ্তাহ না পেরোতেই একটি দুঃসংবাদ জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশনের যে আইনজীবী দলটি জামায়াতের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ তৈরির কাজ করছিলেন, তাঁরা সেই কাজ বন্ধ করে দেন প্রসিকিউশনেরই একাংশের হস্তক্ষেপে। এ নিয়ে তখন চলছিল দুই পক্ষের বাদানুবাদও। শুধু তা-ই নয়, যে গণজাগরণ মঞ্চে গর্জে উঠেছিল ‘আরেক একাত্তর’, তাতেও চিড় ধরানো হয়েছিল সুকৌশলে।

সরকারের পক্ষ থেকে তখন জামায়াতের বিচারের ক্ষেত্রে আইনে ফাঁক থাকার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হলেও অপরাধী সংগঠনের শাস্তি কী হবে, তা উল্লেখ না থাকার যুক্তি দেখিয়েছিলেন তখনকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

যদিও আইনে ট্রাইব্যুনালের বিবেচনামতো যেকোনো শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। তবু আইনের বিধানটিকে আরও পাকাপোক্ত করার সরকারি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম সংশয় নিয়েও। আইনের ত্রুটি সারানোর অজুহাতে বিচার-প্রক্রিয়াটিকেই ডিপ ফ্রিজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কি না, সে নিয়েই ছিল সংশয়। বাস্তবেও আইন সংশোধনের সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

ক্ষমতা ছাড়ার আগে সরকার ১ আগস্ট এক নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমন একসময়ে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যখন সরকারের ভিত পুরোপুরি নড়বড়ে অবস্থায়, জনমত সরকারের বিপক্ষে।

অন্যদিকে সত্তরের নির্বাচন থেকেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। কেবল ১৯৯১ সালেই একবার তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তবে ভোট শেষে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য তাঁর বইয়ে বিএনপির সঙ্গে সেবার আসন সমঝোতা হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন।

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলেও সেই মেয়াদে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি; বরং ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকেও মনে করেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও বাস্তবে সেই চেতনা বাস্তবায়নের কাজ না করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী সংগঠনের বিচারের দাবি পূরণ না হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির পর সরকার যখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিল, সেই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করায় নানা প্রশ্ন ওঠে।

আমি নিজেও ওই নির্বাহী আদেশসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরদিনই একটি জাতীয় দৈনিকে এক লেখা পাঠিয়েছিলাম ‘অসময়ের পদক্ষেপে না জানি কী হয়’ শিরোনামে। তাতে লিখেছিলাম, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ না করে ঠিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বিচার করার পথে এগোলেই ভালো হতো। কিন্তু বিদায়ী সরকার সে পথে না গিয়ে অসময়ে রাজনৈতিক কূটচাল হিসেবে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার পরিণতি নিয়ে সংশয় থাকলেও তখনো ভাবিনি এত দ্রুত এমন পরিণতি দেখা যাবে। 

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত