কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে এ মাসের শুরু থেকেই দেশজুড়ে অস্থিরতা বিদ্যমান। শুরুতে এ আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক থাকলেও পরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও পালন করা হয় নানা কর্মসূচি। শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে ১৫ জুলাই (সোমবার) বেপরোয়া হামলার শিকার হন তাঁরা।
এরপর থেকেই আন্দোলন সংঘাতের দিকে যেতে থাকে, ঘটে প্রাণহানি। একপর্যায়ে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ ভাগ ও কোটায় ৭ ভাগ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে এসব প্রাণহানি ও সংঘাতের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে মিছিলের একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, সরকার দাবি মেনে নেওয়ার পরেও আন্দোলন চলছে। আর নেপথ্যে আছে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রী সংস্থা।
ফটোকার্ডটিতে চার নারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রী সংস্থার সদস্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ফারজানা ইসলাম, আসমা আক্তার রিয়া ও কাবেরি জাহান। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী সংস্থার অর্থ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে দাবি করা হচ্ছে। আমাতুল ফেরদৌস নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সংস্থার অর্থ সম্পাদক বলে দাবি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কথিত পরিচয়যুক্ত ফটোকার্ডটি নিজের ওয়ালে শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসসহ আরও অনেকে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে ১১ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিও প্রতিবেদনটির ৫ সেকেন্ড সময়কালে ভাইরাল ফটোকার্ডের ছবিটি হুবহু মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই দিন কুবিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে মিছিল নিয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোডের দিকে এগিয়ে যান।
অর্থাৎ ছবিটি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আগের। প্রসঙ্গত, ২২ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে ২৩ জুলাই এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
পরে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এই চার শিক্ষার্থীর পরিচয় সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিবির ও ছাত্রী সংস্থার সদস্য দাবিতে ফটোকার্ডটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের চারজনই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন বিভাগের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন।
প্রচারিত ছবিতে থাকা অন্য একজন আন্দোলনকারী আজকের পত্রিকাকে জানান, চিহ্নিত চারজনই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী।
নিরাপত্তার স্বার্থে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থীরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ভাইয়ের ওপর ওই দিন পুলিশ হামলা করে। তখন আমরা সবাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মিছিলে গিয়েছিলাম। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। এভাবে আমাদের শিবির বলে প্রচার করাটা অন্যায় এবং জঘন্য কাজ।’
এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের কুবির সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১৮ জুলাইয়ের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি পালন করেনি।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি)
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে