Ajker Patrika

সরকার গঠনে বিজেপির জোট রক্ষা, ‘ইন্ডিয়া’র কলেবর বাড়ানোর লড়াই

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ২২: ২৭
সরকার গঠনে বিজেপির জোট রক্ষা, ‘ইন্ডিয়া’র কলেবর বাড়ানোর লড়াই

আজ থেকে ২৮ বছর আগে বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত হয় এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স)। আর মাত্র এক বছর আগে কংগ্রেস, তৃণমূল ও অপরাপর আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে গড়া হয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এই নবীন জোটের কাছেই নাস্তানাবুদ হচ্ছে এনডিএ।

ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন মূলত এই দুই জোটের লড়াই। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল ও প্রবণতাগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক আর তেমন কাজে দিচ্ছে না। কট্টর হিন্দুত্ববাদের ধারও কমে গেছে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটই সরকার গঠন করলেই গত দুবারের মতো এবার আর বিজেপি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আবকি বার, ৪০০ পার’-এর সম্ভাবনার ইতি ঘটে গেছে এরই মধ্যে। মাত্র সাড়ে ১১ মাস বয়সী ইন্ডিয়া জোটের কাছে তিনি ধরাশায়ী হয়েছেন!

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফল ও বিভিন্ন আসনে এগিয়ে থাকার প্রবণতা অনুযায়ী, বিজেপি এবার একক ভাবে ২৫০ আসনও পাবেন না। তাদের আসনসংখ্যা ২৪০-এর আশপাশে থাকতে পারে। ৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭৩টি আসন। অর্থাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য বিজেপিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ জোটের দুই শরিক: চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নিতীশ কুমারের জেডিইউয়ের ওপর।

লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা যত এগোচ্ছে, কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লক ‘কী করতে যাচ্ছে’—এই গুঞ্জনই ক্রমে চাউর হচ্ছে। কারণ, স্পষ্টত নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এবার আর এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছেন না। ঝুঁকিও রয়েছে। অতীতে নিতীশ ও চন্দ্রবাবুর একাধিকবার এনডিএ জোট ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে।

হিন্দিভাষী বেল্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিহার রাজ্য। ‘হিন্দি হার্টল্যান্ড’-এ ২৫০টিরও বেশি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিহার থেকে লোকসভায় এমপি রয়েছেন ৪২ জন। এই রাজ্য বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এবার এ রাজ্যে বিজেপি খুব একটা ভালো ফল করছে না। জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার এখানে ১২টি আসন পেতে যাচ্ছেন। নিতীশ কুমার ছিলেন ইন্ডিয়া জোটের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। পরে তিনি বিজেপিতে ভিড়েছেন।

যা-ই হোক সব ঠিকঠাক থাকলে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করবেন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু টানা তিন দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রেকর্ড হয়তো মোদি ভাঙতে পারবেন না।

ইন্ডিয়া জোট এখন পর্যন্ত ২৩৩টি আসনে এগিয়ে আছে। আপাতত নিতীশের এনডিএ ছাড়ার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। ফলে ইন্ডিয়া জোটের স্কোরে তাঁর দলের ১২টি আসন যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার শেষ মুহূর্তে নিতীশ মত পাল্টালেও তাঁর আসনসংখ্যা বিরোধী জোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজনীয় ২৭২-এর কাছাকাছি নিয়ে যাবে না। যেখানে বিজেপির একারই ২৪০টিরও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে।

নিতীশ কুমার যদিই ইন্ডিয়া জোটে থাকতেন তাহলে বিহারে বিজেপি হয়তো আরও খারাপ করত এবং তাঁর দল জেডিইউ আরও ভালো করতে পারত। যদি ইন্ডিয়া জেডিইউকে ধরে রাখতে পারত, তাহলে বিজেপিকে মাত্র ১৮টি আসন ছেড়ে দিতে হতো। আর জেডিইউর ১২ জন এবং চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) পাঁচজন এমপি পাওয়া যেত।

এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের এনসিপি (এস) দলের প্রধান শারদ পাওয়ার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কলেবর বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন। এনডিএর বেশ কয়েকজন শরিক নেতার সঙ্গেও তাঁর আজ মঙ্গলবার যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশা প্রকাশ করেছেন, আরও কিছু দল অদূর ভবিষ্যতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে শামিল হবে। মমতার তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ধসিয়ে দিয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপিবিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের বিলোপ ঘটে। ইউপিএর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ওই বছর লোকসভা ভোটের আগেই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এই জোট। সেই জোটের নেতৃত্বেই ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে সরকার গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হন কংগ্রেসের মনমোহন সিং।

এবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন ভাগাভাগি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, কেরালায় বাম, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।

২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউর প্রধান নিতীশ কুমারের ডাকে পাটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয় ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিতীশ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে ফিরে যান। আর মার্চে বিজেপির সহযোগী হন চন্দ্রবাবু নায়ড়ু।

গত জুলাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে ঘোষণার সময় যে দলগুলো ছিল কংগ্রেস তৃণমূল, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি (আপ), জেডিইউ, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), এনসিপি (শারদ), শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদল, আপনা দল (কে), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেডিএমকে, এমএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরল কংগ্রেস (মণি) এবং কেরল কংগ্রেস (জোসেফ)। জেডিইউর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের আপনা দলও (কে) এখন জোটের বাইরে।

আর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে গড়া হয় এনডিএ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বে এই জোটের সরকার ছিল। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ফের সরকার গঠন করে এই জোট। তবে গত এক দশকে অন্যতম শরিক পাঞ্জাবের শিরোমনি অকালি দল, তামিলনাড়ুর এডিএমকে, জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপি, হরিয়ানায় জেজেপি, রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি মোদির সঙ্গ ছেড়েছে। সহযোগী পেতে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শারদ পাওয়ারের এনসিপি ভেঙে দেওয়ার কলকাঠি নেড়েছে বিজেপি। এমনকি আদালতকে ব্যবহার করে শিবসেনার দলীয় প্রতীকও দখল করিয়েছে বিজেপি।

জেডিইউর মতোই এনডিএ ছাড়ার পর ফেরত এসেছে অন্ধ্রের তেলেগু দেশম পার্টি, তামিলনাড়ুর পিএমকে, অসমের অসম গণপরিষদ, এলজেপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ। উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোকদল, কর্ণাটকে জেডিএস, অন্ধ্রে জনসেনা ত্রিপুরায় তিপ্রা মথার মতো নতুন সহযোগীও পেয়েছে এনডিএ।

মায়াবতীর বিএসপি, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি বা জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস কোনো জোটে না থাকলেও ‘সংকট মুহূর্তে’ মোদির পাশে দাঁড়াতে পারে বলেও ভোটের আগে মনে করছিলেন অনেক পর্যবেক্ষক। কিন্তু উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর ঝুলি শূন্য। নবীন ও জগন নিজেদের রাজ্যে বিজেপি এবং জোটসঙ্গীর কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে। ওডিশায় বিজেডি পেয়েছে মাত্র একটি আসন। অন্ধ্রে ওয়াইএসআরসিপির পেয়েছে চারটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভিত্তিহীন অভিযোগে হার্ভার্ডের অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করল মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়া। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়া। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড ল স্কুলের একজন অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ডের অধ্যাপক ও ব্রাজিলের নাগরিক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়াকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, গুভেয়ার অস্থায়ী নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা বাতিল করার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অধ্যাপক গুভেয়া ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি সদ্য সমাপ্ত শরৎকালীন সেমিস্টারে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে হার্ভার্ডে পড়িয়েছেন। ডিএইচএস জানিয়েছে, গুভেয়া যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হার্ভার্ডও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে অধ্যাপক গুভেয়ার বিরুদ্ধে ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের আগের দিন ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি সিনাগগের (ইহুদি উপাসনালয়) বাইরে পেলেট গান (ছররা গুলি) ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলাইনে টেম্পল বেথ জিয়নের (ইহুদি উপসনালয়) কাছে গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তির উপস্থিতির খবর পায় পুলিশ। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ গুভেয়াকে আটক করে। ওই সময়টা ছিল ইহুদিদের পবিত্র উৎসব ইয়ম কিপুরের আগের দিন। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুভেয়া দাবি করেছিলেন, তিনি কাছাকাছি ইঁদুর মারতে পেলেট গান ব্যবহার করছিলেন।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ওই ঘটনাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ঘটনা বলে আখ্যা দেয়। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির বিপরীতে টেম্পল বেথ জিয়ন জানায়, ঘটনাটি ইহুদিবিদ্বেষ থেকে ঘটেছে বলে মনে হয় না। ঘটনাটি তদন্তের পর ব্রুকলাইন পুলিশ বিভাগও একই মত দেয়। উপসনালয়টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পুলিশ তাদের জানিয়েছে, গুভেয়া জানতেন না যে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে একটি উপাসনালয় আছে বা ওই দিন সেখানে কোনো ধর্মীয় উৎসব চলছে।

তবে গত মাসে অবৈধভাবে পেলেট গান ছোড়ার অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন গুভোয়া। এরপর তিনি ছয় মাসের প্রিট্রায়াল প্রবেশন (বিচার পূর্ববর্তী বিশেষ ব্যবস্থা) মেনে নেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে আনা শান্তিভঙ্গ, বিশৃঙ্খল আচরণ ও সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগগুলো প্লিয়া ডিলের (ফৌজদারি আইনের একটি প্রক্রিয়া) অংশ হিসেবে বাতিল করা হয়।

কিন্তু গত বুধবার ছয় মাসের প্রিট্রায়াল প্রবেশন শেষ হওয়ার আগেই অস্থায়ী নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা বাতিল করে অধ্যাপক গুভেয়াকে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এদিকে গুভেয়ার গ্রেপ্তারের খবর এমন সময়ে এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাপ দিচ্ছে।

হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে হার্ভার্ড কিছু সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে একজন বিচারক রায় দেন যে ট্রাম্প প্রশাসন বেআইনিভাবে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ করা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি গবেষণা অনুদান বাতিল করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের দিল্লি সফর: ভারসাম্য রক্ষার কৌশলে ভারত, অস্ত্র–তেল বিক্রি বাড়াতে চায় রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শীর্ষ সম্মেলন শুরু করেছেন। যেখানে বাণিজ্য এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপানো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এই শুক্রবারের এই সম্মেলন পুতিনের ভারতে প্রথম সফর। এই সম্মেলন এক সময় হচ্ছে যখন ভারত রুশ তেল কেনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মুখোমুখি।

আলোচনা শুরুর সময় মোদি পুতিনকে বলেন, ‘ভারত নিরপেক্ষ নয়—ভারতের একটি অবস্থান আছে, আর সেই অবস্থানটি হলো শান্তির পক্ষে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তির জন্য নেওয়া সমস্ত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি এবং শান্তির জন্য গ্রহণ করা প্রতিটি উদ্যোগের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াই।’

জবাবে পুতিন সংঘাত মেটানোর লক্ষ্যে মোদির মনোযোগ এবং প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনে কী ঘটছে এবং এই সংকটের সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে আমরা অন্যান্য কয়েকটি শরিক, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যৌথভাবে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি—তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার সুযোগ আমরা পেয়েছি এবং আপনি আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।’

পুতিনের এই সফর এমন এক সময়ে এল—যখন মস্কো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। ভারত রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ ৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাঁরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে বাড়াতে চান।

শুক্রবার পুতিনের সফরসূচি শুরু হয় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে, যেখানে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পুতিনকে স্বাগত জানাতে মুর্মুর সঙ্গে মোদিও উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে পুতিনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর পুতিন রাজঘাটে গিয়ে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে মাল্যদান করেন।

বৃহস্পতিবার মোদি উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে পুতিনকে আলিঙ্গন ও হাত মিলিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি রুশ নেতাকে তাঁর বাসভবনে এক নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। দিল্লি থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক নেহা পুনিয়া মন্তব্য করেন, ‘অনেক আলিঙ্গন ও হাত মেলানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন নজর শুক্রবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই নেতা এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন যে—রুশ নেতা একঘরে নন এবং পশ্চিমা দেশগুলির চাপ সত্ত্বেও ভারতের মতো দেশ তাঁকে স্বাগত জানায়।’

২০২৩ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। ভারত আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয় এবং তার চুক্তি বা নিয়মের দ্বারা আবদ্ধও নয়। সেই কারণে পুতিন গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই ভারতে সফর করতে পেরেছেন।

রুশ নেতা স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার রাত ৯টায় ভারত ছাড়বেন। রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে ২৫ বছর ধরে কৌশলগত শরিকানা রয়েছে, যা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুতিনের প্রথম বছর থেকেই শুরু। তবে, রাশিয়ার ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখার এই ভারসাম্যের কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। রুশ কার্যক্রমের কারণে নেতাদের বার্ষিক সফরের বহুদিনের প্রথা ব্যাহত হয়। তবে গত বছর মোদির রাশিয়া সফরের মাধ্যমে তা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

যুদ্ধের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো যখন রুশ অপরিশোধিত তেলের ওপর তাদের নির্ভরতা কমাতে শুরু করে, ভারত তখন তার ক্রয় বাড়ায়। কিন্তু আগস্টে ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধবিরতি মানতে চাপ দেওয়ার জন্য, ভারতের রুশ তেল কেনার শাস্তিস্বরূপ ভারতীয় পণ্যের ওপর পূর্বে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করে দেন। তা সত্ত্বেও ভারত রুশ তেল কেনা চালিয়ে যায়।

তবে এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে—নভেম্বরে রুশ তেল কোম্পানি রোজনেফ্ট এবং ল্যুকওয়েলের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যকারী অন্য দেশের সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসে। ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই দুটি কোম্পানি থেকে।

নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তাদের অন্যায়ভাবে নিশানা করা হচ্ছে। তারা উল্লেখ করে যে—পশ্চিমা দেশগুলোও যখন তাদের স্বার্থে প্রয়োজন হয়, তখন মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যায়। নয়াদিল্লি আসার আগে এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে পুতিনও একইরকম যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই তাদের নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এখনো আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে।’ তিনি আরও যোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যদি রুশ জ্বালানি কেনার অধিকার থাকে, তবে ভারতেরও ‘একই সুবিধা’ পাওয়া উচিত।

পুতিন ভারতকে আরও রুশ অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রেও নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। মস্কো ভারতকে আরও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এসইউ-৫৭ স্টেল্থ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার আশা করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য চাপ দিতে এই শুক্রবারের বৈঠকের মাত্র কয়েক দিন আগেই পুতিন মস্কোয় মার্কিন এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন। সেই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই অগ্রগতির প্রশংসা করে, যদিও কোনো যুগান্তকারী সমাধান হয়নি। বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে এবং আলাপ-আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প: এশিয়ায় উসকে দেবে সমুদ্রতলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন প্রকল্প নতুন গতি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন আপত্তি দূর হওয়ায় এই উদ্যোগ এখন এশিয়ার নিরাপত্তাকাঠামো পাল্টে দিতে পারে এবং পানির নিচে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে।

উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলায় বহুদিন ধরে পরমাণুচালিত সাবমেরিনের অভিজাত ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছে সিউল। ট্রাম্পের সম্মতি পাওয়ায় দুই দেশের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় জ্বালানির প্রবেশাধিকার মিলেছে, যা এত দিন ছিল বড় বাধা।

তবে বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমাণ এই কর্মসূচি চীনকে বিরক্ত করতে পারে এবং জাপানকেও একই ধরনের সক্ষমতা অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিন ক্যাপ্টেন চোই ইল বলেন, সাবমেরিন অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণাত্মক অস্ত্র। তাই এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য।

সিউলের যুক্তি, উত্তর কোরিয়ার পানির নিচে থাকা হুমকি, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পরমাণুচালিত সাবমেরিন অপরিহার্য।

দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য বারবার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না তারা।

গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক থেকে পাওয়া এই চুক্তিকে ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নমনীয়তা বাড়াবে।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, তারাও একই ধরনের সক্ষমতা বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখায়, কিম জং-উন একটি তথাকথিত পরমাণুচালিত সাবমেরিন পরিদর্শন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার কর্মসূচি কতটা এগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু বিশ্লেষকের সন্দেহ, পিয়ংইয়ং হয়তো রাশিয়ার সহায়তা পাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে, তবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত