Ajker Patrika

সরকার গঠনে বিজেপির জোট রক্ষা, ‘ইন্ডিয়া’র কলেবর বাড়ানোর লড়াই

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ২২: ২৭
সরকার গঠনে বিজেপির জোট রক্ষা, ‘ইন্ডিয়া’র কলেবর বাড়ানোর লড়াই

আজ থেকে ২৮ বছর আগে বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত হয় এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স)। আর মাত্র এক বছর আগে কংগ্রেস, তৃণমূল ও অপরাপর আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে গড়া হয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এই নবীন জোটের কাছেই নাস্তানাবুদ হচ্ছে এনডিএ।

ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন মূলত এই দুই জোটের লড়াই। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল ও প্রবণতাগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক আর তেমন কাজে দিচ্ছে না। কট্টর হিন্দুত্ববাদের ধারও কমে গেছে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটই সরকার গঠন করলেই গত দুবারের মতো এবার আর বিজেপি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আবকি বার, ৪০০ পার’-এর সম্ভাবনার ইতি ঘটে গেছে এরই মধ্যে। মাত্র সাড়ে ১১ মাস বয়সী ইন্ডিয়া জোটের কাছে তিনি ধরাশায়ী হয়েছেন!

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফল ও বিভিন্ন আসনে এগিয়ে থাকার প্রবণতা অনুযায়ী, বিজেপি এবার একক ভাবে ২৫০ আসনও পাবেন না। তাদের আসনসংখ্যা ২৪০-এর আশপাশে থাকতে পারে। ৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭৩টি আসন। অর্থাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য বিজেপিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ জোটের দুই শরিক: চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নিতীশ কুমারের জেডিইউয়ের ওপর।

লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা যত এগোচ্ছে, কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লক ‘কী করতে যাচ্ছে’—এই গুঞ্জনই ক্রমে চাউর হচ্ছে। কারণ, স্পষ্টত নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এবার আর এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছেন না। ঝুঁকিও রয়েছে। অতীতে নিতীশ ও চন্দ্রবাবুর একাধিকবার এনডিএ জোট ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে।

হিন্দিভাষী বেল্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিহার রাজ্য। ‘হিন্দি হার্টল্যান্ড’-এ ২৫০টিরও বেশি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিহার থেকে লোকসভায় এমপি রয়েছেন ৪২ জন। এই রাজ্য বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এবার এ রাজ্যে বিজেপি খুব একটা ভালো ফল করছে না। জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার এখানে ১২টি আসন পেতে যাচ্ছেন। নিতীশ কুমার ছিলেন ইন্ডিয়া জোটের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। পরে তিনি বিজেপিতে ভিড়েছেন।

যা-ই হোক সব ঠিকঠাক থাকলে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করবেন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু টানা তিন দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রেকর্ড হয়তো মোদি ভাঙতে পারবেন না।

ইন্ডিয়া জোট এখন পর্যন্ত ২৩৩টি আসনে এগিয়ে আছে। আপাতত নিতীশের এনডিএ ছাড়ার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। ফলে ইন্ডিয়া জোটের স্কোরে তাঁর দলের ১২টি আসন যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার শেষ মুহূর্তে নিতীশ মত পাল্টালেও তাঁর আসনসংখ্যা বিরোধী জোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজনীয় ২৭২-এর কাছাকাছি নিয়ে যাবে না। যেখানে বিজেপির একারই ২৪০টিরও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে।

নিতীশ কুমার যদিই ইন্ডিয়া জোটে থাকতেন তাহলে বিহারে বিজেপি হয়তো আরও খারাপ করত এবং তাঁর দল জেডিইউ আরও ভালো করতে পারত। যদি ইন্ডিয়া জেডিইউকে ধরে রাখতে পারত, তাহলে বিজেপিকে মাত্র ১৮টি আসন ছেড়ে দিতে হতো। আর জেডিইউর ১২ জন এবং চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) পাঁচজন এমপি পাওয়া যেত।

এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের এনসিপি (এস) দলের প্রধান শারদ পাওয়ার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কলেবর বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন। এনডিএর বেশ কয়েকজন শরিক নেতার সঙ্গেও তাঁর আজ মঙ্গলবার যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশা প্রকাশ করেছেন, আরও কিছু দল অদূর ভবিষ্যতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে শামিল হবে। মমতার তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ধসিয়ে দিয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপিবিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের বিলোপ ঘটে। ইউপিএর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ওই বছর লোকসভা ভোটের আগেই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এই জোট। সেই জোটের নেতৃত্বেই ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে সরকার গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হন কংগ্রেসের মনমোহন সিং।

এবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন ভাগাভাগি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, কেরালায় বাম, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।

২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউর প্রধান নিতীশ কুমারের ডাকে পাটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয় ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিতীশ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে ফিরে যান। আর মার্চে বিজেপির সহযোগী হন চন্দ্রবাবু নায়ড়ু।

গত জুলাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে ঘোষণার সময় যে দলগুলো ছিল কংগ্রেস তৃণমূল, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি (আপ), জেডিইউ, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), এনসিপি (শারদ), শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদল, আপনা দল (কে), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেডিএমকে, এমএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরল কংগ্রেস (মণি) এবং কেরল কংগ্রেস (জোসেফ)। জেডিইউর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের আপনা দলও (কে) এখন জোটের বাইরে।

আর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে গড়া হয় এনডিএ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বে এই জোটের সরকার ছিল। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ফের সরকার গঠন করে এই জোট। তবে গত এক দশকে অন্যতম শরিক পাঞ্জাবের শিরোমনি অকালি দল, তামিলনাড়ুর এডিএমকে, জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপি, হরিয়ানায় জেজেপি, রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি মোদির সঙ্গ ছেড়েছে। সহযোগী পেতে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শারদ পাওয়ারের এনসিপি ভেঙে দেওয়ার কলকাঠি নেড়েছে বিজেপি। এমনকি আদালতকে ব্যবহার করে শিবসেনার দলীয় প্রতীকও দখল করিয়েছে বিজেপি।

জেডিইউর মতোই এনডিএ ছাড়ার পর ফেরত এসেছে অন্ধ্রের তেলেগু দেশম পার্টি, তামিলনাড়ুর পিএমকে, অসমের অসম গণপরিষদ, এলজেপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ। উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোকদল, কর্ণাটকে জেডিএস, অন্ধ্রে জনসেনা ত্রিপুরায় তিপ্রা মথার মতো নতুন সহযোগীও পেয়েছে এনডিএ।

মায়াবতীর বিএসপি, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি বা জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস কোনো জোটে না থাকলেও ‘সংকট মুহূর্তে’ মোদির পাশে দাঁড়াতে পারে বলেও ভোটের আগে মনে করছিলেন অনেক পর্যবেক্ষক। কিন্তু উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর ঝুলি শূন্য। নবীন ও জগন নিজেদের রাজ্যে বিজেপি এবং জোটসঙ্গীর কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে। ওডিশায় বিজেডি পেয়েছে মাত্র একটি আসন। অন্ধ্রে ওয়াইএসআরসিপির পেয়েছে চারটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুসলিম স্ত্রীকে নিয়ে বিবাদ, ভারতে বাবা-মাকে মেরে খণ্ডিত দেহ নদীতে ফেলল ছেলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৯
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন ছেলে। বাবা-মা মেনে নিলেন না এ বিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্যের পর ছেলে ও তাঁর স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন বিবাহ বিচ্ছেদের। কিন্তু খোরপোশ দিতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা না থাকায় বাবার কাছে টাকা চেয়েও পেলেন না। আর এই ক্ষোভের জেরে বাবা-মাকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে নদীতে ফেলে দিলেন ছেলে। এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে।

নিখোঁজ এক ষাটোর্ধ্ব দম্পতির সন্ধানে নেমে এই হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারে পুলিশ। বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে আম্বেশকে আটক করেছে পুলিশ। পেশায় প্রকৌশলী আম্বেশ তাঁর বাবা শ্যাম বাহাদুর (৬২) ও মা ববিতা (৬০)-কে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, আম্বেশের মুসলিম স্ত্রীকে পরিবার মেনে নিতে অস্বীকার করায় দীর্ঘদিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদ চলছিল। একপর্যায়ে আম্বেশ ও তাঁর স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় অ্যালিমনি দেওয়ার জন্য আম্বেশের অর্থের প্রয়োজন হয়। তিনি তাঁর বাবার কাছে টাকা চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা তা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর আম্বেশের বোন বন্দনা জৌনপুরের জাফরবাদ থানায় তাঁর বাবা-মা এবং ভাই নিখোঁজ হওয়ার একটি ডায়েরি করেন।

বন্দনা জানান, গত ৮ ডিসেম্বর আম্বেশ তাঁকে ফোন করে বলেন, বাবা-মা ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তিনি তাঁদের খুঁজতে বের হচ্ছেন। এরপর আম্বেশের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

এক সপ্তাহ পর আম্বেশকে যখন পুলিশ আটক করে, তখন তিনি ভেঙে পড়েন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী শ্যাম বাহাদুরের একমাত্র ছেলে আম্বেশ প্রায় পাঁচ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেননি এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। তাঁদের দুটি সন্তান থাকলেও শ্যাম বাহাদুর বারবার আম্বেশকে চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আম্বেশ স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হন এবং স্ত্রী খোরপোশ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।

গত ৮ ডিসেম্বর সেই টাকার জন্যই আম্বেশ তাঁর বাবার সাহায্য চান। বাবা তা দিতে অস্বীকার করলে মা ববিতার সঙ্গে আম্বেশের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আম্বেশ রান্নাঘরে গিয়ে শিল-পাটার শিল দিয়ে তাঁর মায়ের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় তাঁর বাবা প্রতিবেশিদের ডাকতে নিলে বাবার মাথায়ও আঘাত করেন আম্বেশ। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য আম্বেশ মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন। বড় কোনো ব্যাগ না পেয়ে গ্যারেজে থাকা ছোট বস্তা আনেন। করাত দিয়ে বাবা-মায়ের দেহ ছয় টুকরো করে বস্তায় ভরে গাড়ির ডিকিতে তুলে নেন। পরে ভোরের দিকে নদীতে ফেলে দেন।

বোন বন্দনাকে ফোন করার পর ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন আম্বেশ। এ সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। ১৪ ডিসেম্বর জৌনপুরে ফিরে আসেন তিনি। বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। পরে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আম্বেশ পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে একপর্যায়ে তিনি ভেঙে পড়েন এবং বাবা–মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

স্বীকারোক্তির পর পুলিশ দেহ উদ্ধারের অভিযান শুরু করে। এ সময় শ্যাম বাহাদুরের দেহের একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত করাত এবং শিলপাটাও উদ্ধার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আয়ুষ শ্রীবাস্তব জানান, নদীতে তল্লাশির জন্য ডুবুরি দল নামানো হয়েছে। বাকি দেহাংশও দ্রুত উদ্ধার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার কথা ভাবছেন আতঙ্কিত শিক্ষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২০
যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। ছবি: আলজাজিরা
যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। ছবি: আলজাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্কুলে পড়ান সুজানা। গত দুই বছরে সপ্তাহের প্রতিটি দিন সুজানার কেটেছে শিশুদের জিনিসপত্র সযত্নে সাজানো, ছবি ও বইয়ের মাধ্যমে শেখানো এবং গানের চর্চা করিয়ে। কিন্তু গত অক্টোবরে পাল্টে গেল তাঁর এই জীবন। খবর পেলেন, শিশুদের শিক্ষক হিসেবে যে উপভোগ্য সময় তিনি কাটাতেন, সেই কাজের অনুমতি নবায়নের আবেদন বাতিল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষক অভিবাসী, যাদের মধ্যে একজন সুজানা। আর তাঁর এই পরিচয়ই এখন আবারও ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত জীবনের দিকে।

প্রায় এক দশক আগে গুয়াতেমালার সহিংসতা থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সুজানা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়োগ বাড়লেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘অভিবাসী হঠাও’ নীতি তাঁদের জীবিকার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি এভাবে শিক্ষককে হারানো শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

ওয়াশিংটন ডিসির কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের শিক্ষক সুজানা আল জাজিরাকে বলছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই খবরটা কীভাবে জানাব ভাবছিলাম। তাদের মধ্যে অনেকের বয়স তিন থেকে চার বছর। আবার অনেকে এত ছোট বিষয়টা বোঝার ক্ষমতা নেই।’

স্প্যানিশ ভাষায় সুজানা বলতে থাকেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সবকিছু হারালাম। যখন আমি শিক্ষার্থীদের বিদায় জানালাম, তারা জানতে চেয়েছিল কেন। আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, ‘আমি কেবল তোমাদের বিদায় বলতে পারি।’

সুজানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘কিছু শিশু আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। ওদের কথা ভেবে আমার মন কেঁদে উঠেছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বিদেশে জন্ম নিয়েছেন এমন শিক্ষক কাজ করছেন, এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে ২০১৯ সালে প্রকাশিত জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। তাঁরা প্রি-স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নানা শিক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রি-কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদ পূরণের জন্য ৬ হাজার ৭১৬ জন পূর্ণকালীন শিক্ষককে অস্থায়ী এক্সচেঞ্জ ভিসায় দেশে এনেছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষক ফিলিপাইন থেকে এসেছিলেন, পাশাপাশি জ্যামাইকা, স্পেন ও কলম্বিয়ার মতো দেশ থেকেও অনেকে ছিলেন।

তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসীদের জন্য তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা স্কুলগুলোতে বেশ বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, কেন না তাঁরা অভিবাসী শিক্ষকদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

সুজানার কর্মস্থল কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রাউল ইচেভারিয়া অনুমান করে বলেন, কমিউনিকিডসের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী অভিবাসী। এদের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া এবং বৈধ অনুমোদনের সঙ্গে কাজ করা অভিবাসী উভয়েই রয়েছেন।

অভিবাসনের বৈধ পথ বাতিলের কারণে কয়েকজন শিক্ষকের চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানান ইচেভারিয়া।

স্কুলের আরও পাঁচজন শিক্ষকের কাজের ক্ষমতা অস্থায়ী কাজের অনুমতি (Temporary Protected Status, TPS) বাতিল হয়েছে। ইচেভারিয়া জানান, এই পাঁচজন শিক্ষক মূলত ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন। কিন্তু অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন কমিউনিকিডসের শিক্ষকদেরসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ভেনেজুয়েলার নাগরিকের টিপিএস বাতিল করে।

ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করার অনুমোদন শেষ হবে।

কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ইচেভারিয়া বলেন, ‘এই শিক্ষকেরা জীবিকার সুযোগ হারিয়েছেন। আর আমার স্কুলে স্প্যানিশ, ফরাসি ও ম্যান্ডারিনের মতো ভাষায় দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে।’

সরকারের এ সিদ্ধান্তে স্কুলগুলো শিক্ষক সংকটে পড়ছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যই ফেডারেল সরকারের কাছে শিক্ষক ঘাটতির তথ্য জানিয়েছে। তবে এ নীতির সমর্থকেরা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে উচ্চ চাপ এবং কম বেতন শিক্ষকদের আকর্ষণ ও ধরে রাখাকে কঠিন করে তোলে। ফলে কিছু রাজ্য শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মী সংগ্রহের জন্য বিদেশিদের দিকে ঝুঁকছে।

ইচেভারিয়া জানান, এই নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। হঠাৎ এক রাতের মধ্যে তারা সেই শিক্ষককে হারায়। তখন তাদের মনের অবস্থা কি হতে পারে!’

তিনি মনে করেন, যখন এই সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়, তখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে ছোট বয়সী শিশুদের মধ্যে।

আমেরিকান এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষকেরা যদি বছরের মধ্যবর্তী সময়ে বিদ্যালয় ছাড়েন, তখন শিশুদের ভাষা দক্ষতা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব শিশুর আত্মসম্মান এবং মানসিক স্থিতিশীলতাকেও ছোঁয়।

কমিউনিকিডস-এ পড়া এক শিশু অভিভাবক মিশেল হাওয়েল জানান, শিক্ষককে হারানো ক্লাসরুমের পরিবেশকেও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

তিনি বলেন, ‘সেখানে শিক্ষকেরা শুধুমাত্র ছোট শিশুদের শিক্ষক নন। তারা যেন বাড়িতে যুক্ত হওয়া নতুন এক সদস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা শিশুদের জড়িয়ে ধরে, অভিভাবকের মতো আগলে রাখে। যখন সেই মানুষগুলো থাকে না, তা শুধু শিশুদের জন্যই নয়, সবার জন্যই মেনে নেওয়া কঠিন।’

স্কুল সাইকোলজিস্ট মারিয়া সি (ছদ্মনাম) বলেন, কোনো প্রিয় ব্যক্তি বা শিক্ষকের হঠাৎ অনুপস্থিতি শিশুর শরীরে কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি করতে পারে, যা বিপদের মুহূর্তে শিশুকে সুরক্ষা দেয়। যখন এই চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন একই হরমোন সাহায্যের চেয়ে ক্ষতি করতে শুরু করে। এটি শিশুর স্মৃতি, মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তিনি যেসব শিশুর সঙ্গে কাজ করেন, তারা এই বহিষ্কার নীতির কারণে সৃষ্ট অস্থিরতার সঙ্গে লড়াই করছে।

মারিয়া বলেন, ‘কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এটি উদ্বেগের মতো প্রকাশ পায়। অন্যদের ক্ষেত্রে হতাশা বা হঠাৎ রাগের প্রকাশ দেখা যায়। তারা সারাদিন “লড়াই বা পালানো” মোডে থাকে।’

পাঁচ থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জনপ্রিয়তায় ধস: জাতির উদ্দেশে ভাষণে নিজের গুণগান আর সেনাদের খুশি রাখার কৌশলে ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি

বড়দিনের ঠিক আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বড় ধরনের উপহার ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বিশেষ টেলিভিশন ভাষণে তিনি সাড়ে ১৪ লাখ সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনার প্রত্যেকের জন্য ১ হাজার ৭৭৬ ডলারের একটি বিশেষ বোনাস বা ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের ঐতিহাসিক বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে এই অঙ্কের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই বোনাস প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এই অর্থের সংস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূলত তাঁর প্রশাসনের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত ব্যাপক শুল্কনীতি এবং গত ৪ জুলাই স্বাক্ষরিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ থেকে আসবে। ভাষণে ট্রাম্প অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের সামরিক বাহিনীর চেয়ে এই সম্মানের দাবিদার আর কেউ নেই। চেকগুলো ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে এবং বড়দিনের উৎসবের আগেই তা আমাদের বীরদের হাতে পৌঁছাবে।’

মাত্র ১৮ মিনিটের এই ভাষণে ট্রাম্প তাঁর গত ১১ মাসের অর্থনৈতিক সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত কমতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের মতে, পেট্রল এবং ডিমের দাম কমেছে।

তিনি বর্তমান দ্রব্যমূল্যের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেন, ভাষণে সাতবার বাইডেনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা মুদি পণ্যের দাম আকাশে তুলেছিলেন, কিন্তু আমরা তা সমাধান করছি।’

যদিও সরকারি তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেপ্টেম্বরের অর্থনৈতিক উপাত্ত অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ৩ শতাংশ ছুঁয়েছে। যদিও কিছু পণ্যের দাম কমেছে, তবে সাধারণ আমেরিকানদের বড় অংশই এখনো আবাসন খরচ, শিশু যত্ন এবং স্বাস্থ্যসেবার লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট।

ট্রাম্পের এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বিভিন্ন স্বাধীন জনমত জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ভাষণে তিনি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।

পলিটিকোর জরিপ অনুযায়ী, অর্ধেক ভোটার এমনকি ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মনে করেন জীবনযাত্রার ব্যয় তাঁদের জীবদ্দশায় এখন সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে আছে।

সিবিএস নিউজ/ইউগভের নভেম্বর মাসের জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ট্রাম্পের ওপর জনসমর্থন গত মার্চের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে মাত্র ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক সিটি এমনকি মিয়ামি এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে রিপাবলিকানদের আশানুরূপ ফল না হওয়াকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হিসেবে স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।

২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে। সেই মাইলফলক সামনে রেখে ট্রাম্প এক দেশপ্রেমমূলক আহ্বানের মাধ্যমে তাঁর ভাষণ শেষ করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বিশ্ব যখন আমাদের দিকে তাকাবে, তারা দেখবে এমন এক জাতি, যারা তাদের নাগরিকদের প্রতি অনুগত এবং শ্রমিকদের প্রতি বিশ্বস্ত। আমরা আবার আগের মতো সম্মান পাচ্ছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর সমর্থন ধরে রাখতেই এই ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গত ১১ মাসে সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না আসায় এই সংক্ষিপ্ত ভাষণ বা এককালীন বোনাস ভোটারদের দীর্ঘমেয়াদি অসন্তোষ কমাতে কতটা সক্ষম হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ, বললেন ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৮
ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। ছবি: এএফপি
ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার মিলার এসব কথা বলেন।

এদিকে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মিলারের এই মন্তব্য ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান ঘিরে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা ট্রাম্প প্রশাসন এত দিন দাবি করে আসছে, ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনার মূল কারণ মাদক পাচার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে আমেরিকানদের ঘাম, উদ্ভাবনী শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। এই স্বৈরাচারী দখলদারি মার্কিন সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসে নথিভুক্ত সবচেয়ে বড় চুরি। পরে এই লুণ্ঠিত সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে সন্ত্রাসে অর্থ জোগাতে এবং খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক দিয়ে আমাদের সড়কগুলো প্লাবিত করতে।’

তবে আন্তর্জাতিক আইন বলছে, ‘প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থায়ী সার্বভৌমত্ব’ নীতির আওতায় ভেনেজুয়েলার তেল ওই দেশটিরই সম্পদ।

যদিও ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো যুক্ত ছিল। ১৯৭৬ সালে তেল খাত জাতীয়করণ করে ভেনেজুয়েলা। এরপর খাতটির নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএর হাতে।

পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে প্রয়াত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ ভেনেজুয়েলার অবশিষ্ট বিদেশি তেল প্রকল্পগুলোও জাতীয়করণ করেন। এর ফলে কনোকোফিলিপস ও এক্সন মোবিলের মতো মার্কিন তেল জায়ান্টদের কার্যত ওই দেশ থেকে সরে আসতে হয়।

এ সময় তেল খাত জাতীয়করণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আইনি লড়াই শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি সালিসি ট্রাইব্যুনাল এক্সন মোবিলকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে ভেনেজুয়েলাকে নির্দেশ দেয়। তবে এ-সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিজের তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি আরও জোরদার করেন ট্রাম্প।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ভেনেজুয়েলার তেলবাহী জাহাজগুলোকে ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে এগুলোর ওপর অবরোধের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আর এই অবরোধ ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমেই কঠোর ও সংঘাতমুখী নীতির অংশ। আর ট্রাম্পের এই নীতির লক্ষ্য দেশটির বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প আবারও স্টিফেন মিলারের বক্তব্যের সুরে বলেন, ভেনেজুয়েলাবাসী যুক্তরাষ্ট্রের তেল চুরি করেছে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় নৌবহর দিয়ে ভেনেজুয়েলাকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এটি আরও বড় আকার নেবে। তাদের জন্য যে ধাক্কা আসবে, তা তারা আগে কখনো দেখেনি। যত দিন না তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগে চুরি করা সব তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ফিরিয়ে দিচ্ছে, তত দিন এটা চলবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধেও একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গত নভেম্বরে প্রশাসন ‘কার্টেল দে লস সোলেস’-কে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। যদিও এই নামটি কোনো সংগঠিত গোষ্ঠীকে নির্দেশ করে না।

বরং এটি ভেনেজুয়েলার সরকার ও সামরিক বাহিনীর ভেতরে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ বোঝাতে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি ভেনেজুয়েলার শাসনব্যবস্থাকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করবেন। এর পেছনে তিনি যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করেছে।

তবে গত বুধবার অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ব্যক্তিগত তেল কোম্পানিগুলোর কাছে যোগাযোগ করেছে। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যদি মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হন, তাহলে তারা ভেনেজুয়েলায় আবার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কি না।

এদিকে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মারিয়া করোনা মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হন, দেশের তেল খাত বেসরকারীকরণ করা হবে এবং বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তিনি এ বছরের শুরুতে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত