সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘আমি বাবা হত্যার বিচার চাই। আমি দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করল। কারা হত্যাকারী। আমি বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দেখে যেতে চাই। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’
আজ বুধবার বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সেখান থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন তিনি।
বাবা হত্যার বিচার চেয়ে ডরিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেনেছি, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুনেই আমি ডিবিপ্রধান হারুন আংকেলের কাছে এসেছি। তাঁরা ইতিমধ্যে তিনজনকে ধরেছেন। মূলত আমি মামলা করব। ডিএমপি কমিশনার, ডিবিপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ডিবি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছে।’
ডরিন বলেন, ‘আমার কোনো ভাই নেই। আমরা দুই বোন। বড় বোন ডাক্তার। আমি এলএলবি পড়ছি। আমি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্ডারে এলএলবি পড়ছি। আমি নিজেই আজ এখানে আসছি। ডিবি পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন বলে আমি অনেক তথ্য পাচ্ছি।’
গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে ডরিন বলেন, ‘আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। আপনারা এ বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করুন। আপনারা নিউজ করুন, অনুসন্ধান করুন। আপনাদের নিউজে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হোক। আমি যেন বিচার পাই, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন জানতে পারি।’
ডরিন বলেন, ‘আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, কেন করেছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমি এর শেষ দেখতে চাই, তারা কেন বাবাকে হত্যা করেছে? আমি যেন দেখতে পাই আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে।’
ডরিন বলেন, ‘আজকে আমি এতিম হয়ে গেছি। আজকে আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। আমি মাঝপথে। সবার পরিবার আছে, সন্তান আছে। সবাই জানেন, যার বাবা থাকে না, তার কেউ থাকে না। তারা এতিম হয়ে যায়। যতই কাছের আত্মীয়, আপন মানুষ থাকুক না কেন, বাপ বাপই। বাপের মতো কেউ আপন হয় না।
আমার বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাকে এলএলবিতে ভর্তি করিয়েছে। আমি পরীক্ষাও দিয়েছি। সামনে রেজাল্ট দেবে। বাবা আমাকে বলে গেছে, ইন্ডিয়া থেকে ফিরে আমার রেজাল্ট চেক করবে। আমার কোনো কথাই সে রাখতে পারে নাই।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডরিন বলেন, ‘আমার একটাই অনুরোধ, আপনার আমার বাবা হত্যার সুষ্ঠু বিচার করুন। একটা সময় আমার বাবা ১৪টা বছর মিথ্যা মামলায় পালিয়ে পালিয়ে থেকেছেন। তখন আমি অনেক ছোট। তখনো আমি আমার বাবাকে কাছে পাইনি। যখন একটু বুঝতে শিখেছি, তখন আমার বাবাকে কাছে পেয়েছি। এখন আবার আমার বাবাকে হারিয়ে ফেললাম। আপনারা কেউ আমার বড় ভাই, কেউ বাবার মতো। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। আমি নিজের চোখে দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করল, কেন করল। এভাবে।’
আপনি বা আপনার পরিবার কাউকে সন্দেহ করছেন কি না? তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর মধ্যে একজনের নাম আনোয়ারুল, আরেকজনের নাম ফয়সাল। আপনি তাদের চেনেন কি না—এ বিষয়ে ডরিন বলেন, আমি চিনি না, কিন্তু চিনতে চাই। আমি হারুন আঙ্কেলকে বলেছি, আপনি আইডেনটিফাই করুন, কেন এরকমটি হলো। আমি নিজেও আইন পড়ছি, আইনের কিছু বিষয় আমি জানি। আপনি দেখুন, আমাকে চেনান তারা কারা। আমি তাদের চিনতে চাই, আমি তাদের প্রকাশ্যে মৃত্যু দেখতে চাই। আমাকে এভাবে এতিম করে দিল!’
বাবার সঙ্গে আপনার বা পরিবারের সবেশেষ কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে ডরিন বলেন, ‘আমার সঙ্গে বাবার সর্বশেষ ভিডিও কলে কথা হয়েছে। বলেছে, আম্মু আমি ইন্ডিয়ায় যাচ্ছি। দুই-এক দিনের মধ্যে চলে আসব। তোমার দাঁতের ডাক্তারের কাছে দেখানোর কথা। আমি ফিরে এসে তোমাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব, তুমি যেও না। ডাক্তার ফোন করলে বলবে যে বাবা ইন্ডিয়াতে গেছে, বাবা ফিরে আসলে যাব। তুমি থাকো আমি আসছি। তারপর আর বাবার সঙ্গে কথা হয়নি।’
কাউকে সন্দেহ করছি না উল্লেখ করে ডরিন বলেন, ‘আমি আগে দেখতে চাই কারা এ কাজ করেছে। তারপর আমি আমার সন্দেহের কথা বলব।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে