Ajker Patrika

মানুষকে ভোটমুখী করার কথা ভাবতে হবে

মোনায়েম সরকার
মানুষকে ভোটমুখী করার কথা ভাবতে হবে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক দিবস আছে। একেকটি দিবস একেক কারণে স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ মে তেমনই একটি দিন। ১৯৮১ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তখন থেকে তাঁরা নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা যখন স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে যান, তখন তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফেরেন, তখন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওই বছরের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের ঐক্যের স্বার্থে দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়াটাও ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন, কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভানেত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছেন পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন। জেল-জুলুম-অত্যাচার-মামলা উপেক্ষা করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রাণপাত ধারাবাহিক সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও রাজনীতির একই পিচ্ছিল পথে হাঁটবেন, সেটা সম্ভবত বঙ্গবন্ধু চাননি। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্যই হয়তো বঙ্গবন্ধু তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন রাজনীতি থেকে দূরের মানুষ একজন পরমাণুবিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। অথচ এক ট্র্যাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শেখ হাসিনাকেই পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নিতে হলো।  

দেশের সবচেয়ে বড় এক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পটভূমিতে। তিনি যখন স্বামীর সঙ্গে বিদেশে যান, তখন তাঁর পিতা জীবিত, দেশের সরকারপ্রধান। কিন্তু তিনি যখন ফিরে আসেন, তখন পিতা নেই, মাতা নেই, ভাই নেই, নেই আরও কত আত্মীয়স্বজন। এক গভীর শূন্যতার মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু। তাঁর এই স্বদেশে ফেরা পঁচাত্তর-পরবর্তী দেশের রাজনীতির আবহ বদলে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।  

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। আমাদের ভাই-বোনের সম্পর্ক। তিনি আমার ‘গুড সিস্টার’ আমি তাঁর ‘ব্রাদার’।

আগেই বলেছি, ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মূলধারার রাজনীতিতে তাঁর আবির্ভাব বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে প্রথমে খন্দকার মোশতাক ও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।

রাজাকারদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ, রাজনীতিবিদদের চরিত্রহননসহ অসংখ্য বিতর্কিত কাজ করেন জিয়া। জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিরতরে দায়মুক্তির জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালো আইন পাস করেন। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বানানোসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতির উল্টোযাত্রা শুরু হওয়ায় এবং দলীয় নেতৃত্বের সুবিধাবাদিতা ও অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান যখন নড়বড়ে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলটি যখন সাংগঠনিকভাবে দিশেহারা, ঠিক সেই সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

এখানে একটি কথা বলে নেওয়া দরকার, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা খুব সহজেই নির্বাচিত হয়েছিলেন, বিষয়টি কিন্তু তেমনও নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চেয়েছেন। আমার জানামতে, ডজনখানেক নেতা সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন। তবে পরের ইতিহাস সবারই জানা, শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সর্বসম্মতভাবে, তিন দিন সম্মেলন চলার পর।

এটা স্বীকার করতেই হবে যে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন বকুল বিছানো পথে চলেনি, বরং অত্যন্ত বেদনাবিধুর ও বিপৎসংকুল পথেই তাঁকে এগোতে হয়েছে। রাজনীতিতে প্রবেশ করেই তিনি গৃহবন্দীর শিকার হন। রাজপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেন, জেল খাটেন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে অসংখ্যবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক নেতা তাঁর মতো জীবননাশী ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হননি।

জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গবন্ধুর আমলে যেমন বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রের ও প্রতিষ্ঠানের বিষদৃষ্টিতে ছিল, এখনো তেমনই আছে। তবে আশার কথা এই যে, শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে বিরুদ্ধবাদী সেই শক্তিমান রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্য না গড়ে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসেও দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহই প্রকাশ করেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর। 
নিন্দুকের দৃষ্টি কখনোই ভালো কিছু দেখে না। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যেসব দুঃসাধ্য কাজ সাধন করেছেন, তা কারও পক্ষে সম্ভব হতো কি না, জানি না। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের (যেমন: জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরীর) মূলোৎপাটন করেছেন। এগুলোকে যারা ছোট করে দেখতে চায়, তারা প্রকারান্তরে চোখ থাকতেই অন্ধ।

বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও অগ্রগতির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এটা যত দিন বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে না পারবে, তত দিন বাংলাদেশের কোনো উন্নয়নই, কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হবে না। আর সেখানেই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার ফল এখন আমরা সব ক্ষেত্রে পাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর নামে আজ ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখতে শেখ হাসিনাকেই ভূমিকা নিতে হবে এবং তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় সুনাম অর্জন করছে। অর্থনীতির ভিত্তি সবল হয়েছে। মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ পরিহার করতে হবে। দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে উজ্জ্বল করতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগের কাছেই মানুষের প্রত্যাশা বেশি। কেননা, মানুষ দেখছে, তাদের আশা পূরণের পথেই শেখ হাসিনা হাঁটছেন।  
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। মানুষ বুঝতে পারছে, আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এখন সব দিক সামাল দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। বাংলাদেশের এখন বড় বাধা অনিয়ম ও দুর্নীতি। সব সেক্টরে অনিয়ম ও দুর্নীতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে আইনের শাসন।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন শেখ হাসিনার চোখের দিকে তাকিয়েই স্বপ্ন দেখছে। শেখ হাসিনার স্বপ্ন আর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা নিজেকে এবং বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় স্থাপন করেছেন। তিনি আওয়ামী নৌকার বইঠা হাতে নিয়েছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।  

তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কসহ যেসব বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা আছে, সেগুলো নিয়ে শেখ হাসিনাকে এখন ভাবতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমন ভোটারের খরা ছিল ভোটকেন্দ্রে, উপজেলা নির্বাচনেও একই অবস্থা। একসময় ভোট ছিল আমাদের মানুষের কাছে অনেকটা উৎসবের মতো। অথচ এখন সেই ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে না পারলে দেশে টেকসই উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করা সহজ হবে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গারে যতটা উৎসাহী, কোনো সমস্যার গভীরে গিয়ে তার সমাধানের পথ খোঁজায় ততটাই অনীহা।  

শেখ হাসিনার কাছে যেহেতু মানুষের প্রত্যাশা বেশি, সেহেতু তাঁকেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্তমান সংকট সমাধানের উপায় বের করতে হবে।

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত