Ajker Patrika

গাজায় নিহত ৭ ত্রাণকর্মীদের একজন বাংলাদেশেও এসেছিলেন

গাজায় নিহত ৭ ত্রাণকর্মীদের একজন বাংলাদেশেও এসেছিলেন

গাজায় চলমান বর্বরতার মধ্যে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কয়েকটি সংস্থা। নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে যেকোনো উপায়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীরা। গত সোমবার ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও পোল্যান্ডের নাগরিকেরাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহত এই কর্মীদের মধ্যে এমনও ব্যক্তি রয়েছেন যারা কয়েক বছর আগে বাংলাদেশেও এসেছিলেন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।

গতকাল মঙ্গলবার অনিচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে দাবি করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেয় ইসরায়েল। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়।

সাইফেদ্দিন ইসসাম আয়াদ আবুতাহা, ফিলিস্তিন

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল মঙ্গলবার নিজ শহর রাফাহে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ২৫ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি তরুণকে দাফন করা হয়। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু হাসান বলেন, ‘সে বাস্তুচ্যুত মানুষকে মানবিক সহায়তা সরবরাহ করে এমন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুশি ছিল। তোমার মৃত্যুতে আমাদের মন ভেঙে গেছে সাইফ। আমরা তোমাকে ভুলব না।’ 

লালজাওমি জোমি ফ্রাঙ্কোম, অস্ট্রেলিয়া

বন্ধুদের কাছে জোমি নামে পরিচিত ৪৩ বছর বয়সী লালজাওমি ফ্রাঙ্কোম কমনওয়েলথ ব্যাংকে কাজ করার পর ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনে যোগদান করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে তাঁকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও ত্রাণ দিতে দেখা গেছে। আরও এক বছর আগে হাইতিতে মোটরবাইকে করে ত্রাণ সরবরাহ করেছেন তিনি। 

তাঁর বন্ধু ব্রায়ান উইভার রয়টার্সকে বলেন, ‘তাঁর কাছে এটাই ছিল সেরা চাকরি। সে এমন মানুষদের গরম খাবার পরিবেশন করতে পেরেছে যারা জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছিল। সে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করাবে।’

এক বিবৃতিতে তাঁর পরিবার বলেন, জোমি সহানুভূতি, সাহসিকতা এবং ভালোবাসার শিক্ষা রেখে গেছেন। 

দামিয়ান সোবল, পোল্যান্ড 

ত্রাণকর্মী সোবল পোল্যান্ডের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের শহর প্রেজেমিসেলের বাসিন্দা বলে জানান শহরের মেয়র ভোজিয়েখ বাকুন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে অসাধারণ এ তরুণের অনুভূতি বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ নেই।’

কয়েকমাস আগের এক ভিডিওতে ৩৫ বছর বয়সী সোবলকে গাজাবাসীদের জন্য পানি, রান্নার সরঞ্জামসহ খাবার সরবরাহ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে রসুঁই তৈরির এবং মানুষকে খাওয়ানোর সব আছে।’ 

জন চ্যাপম্যান, জেমস কারবি, জেমস হেন্ডারসন, যুক্তরাজ্য

চ্যাপম্যান, কারবি ও হেন্ডারসন ডব্লিউসিকে এর নিরাপত্তা দলের সদস্য ছিলেন বলে জানায় সংস্থাটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অনুসারে, এই তিনজনই ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাবেক সেনা ছিলেন। তাঁরা যুক্তরাজ্য়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সোলেস গ্লোবালের প্রাইভেট সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। 

সাবেক বিশেষ বাহিনীর কমান্ডো ৫৭ বছর বয়সী চ্যাপম্যান দুই সন্তানের বাবা ছিলেন। দ্য সান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, নিহত হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি গাজায় গিয়েছিলেন। 

৩৩ বছর বয়সী হেন্ডারসন ছয় বছর রয়্যাল মেরিনসে কাজ করেছিলেন। এটি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর অভিজাত যুদ্ধ বাহিনী। 

৪৭ বছর বয়সী কারবিও অনেক বছর ধরে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন বলে দ্য সান ও দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

জ্যাকব ফ্লিকিংগার, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

৩৩ বছর বয়সী এই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক ত্রাণকর্মীদের দলের একজন সদস্য ছিলেন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, তাঁর ও তাঁর সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সময়মতো পৌঁছাননি মাচাদো, নোবেল শান্তি পুরস্কার নিলেন তাঁর মেয়ে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো। ছবি: বিবিসি
এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো। ছবি: বিবিসি

এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোর পক্ষে তাঁর মেয়ে আনা করিনা সোসা পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নরওয়ের রাজধানী অসলো সিটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোসা তাঁর মায়ের পক্ষ থেকে লেখা একটি বক্তব্যও পড়ে শোনান।

নোবেল কমিটি জানিয়েছে, মাচাদো বর্তমানে নিরাপদে আছেন এবং অসলোর পথে রয়েছেন। তবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন আশা করছেন, তিনি বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল—এই সময়ের মধ্যে অসলো পৌঁছাবেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মাচাদোর কন্যা আনা করিনা সোসা জানান, তাঁর মা একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ভেনেজুয়েলার স্বপ্ন দেখেন এবং সেই লক্ষ্য থেকে কখনো সরে দাঁড়াবেন না। মায়ের সম্পর্কে সোসা বলেন, ‘তিনি জানেন, তার সংগ্রাম শুধুমাত্র রাজনীতি নয়—এটা তার দেশের মানুষের মর্যাদা রক্ষার লড়াই।’

নোবেল কমিটি মাচাদোকে এবার পুরস্কৃত করেছে ভেনেজুয়েলায় ‘স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণের লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকার’ স্বীকৃতি হিসেবে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মাচাদো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নানা জল্পনা ছিল। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। নির্বাচনটি দেশীয় বিরোধী দল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জালিয়াতিপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করে।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর শপথগ্রহণের বিরুদ্ধে গত ৯ জানুয়ারি এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর থেকেই মাচাদো আর জনসমক্ষে দেখা দেননি। নির্বাচনের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ও দমন-পীড়নে প্রায় দুই হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে মাচাদোর জোটের অনেক নেতা কর্মীও আছেন।

তবে লুকিয়ে থাকলেও সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও সাক্ষাৎকার দিয়ে সমর্থকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে আসছিলেন মাচাদো। নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা তাঁর সমর্থকদের নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। তবে এখনো সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে—তিনি কীভাবে আত্মগোপন থেকে বের হলেন এবং কোন পথে ইউরোপে পৌঁছালেন। তাঁর মা ও দুই সন্তান ইতিমধ্যেই অসলোতে অবস্থান করছেন—আবার দেখা হওয়ার অপেক্ষায়। সম্প্রতি তাঁর ছেলে দাবি করেছিলেন, মায়ের সঙ্গে তাঁর প্রায় দুই বছর দেখা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আফগানিস্তানে ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’ চরিত্র সাজায় চার যুবককে গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ১০
ক্রাইম ড্রামা ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’-এর চরিত্রের বেশে এভাবেই ঘুরছিলেন যুবকেরা। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
ক্রাইম ড্রামা ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’-এর চরিত্রের বেশে এভাবেই ঘুরছিলেন যুবকেরা। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

আফগানিস্তানে কঠোর পোশাকবিধি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভঙ্গের অভিযোগে ব্রিটিশ জনপ্রিয় ক্রাইম ড্রামা ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’-এর চরিত্রের মতো পোশাক পরার কারণে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে তালেবান। ওই যুবকেরা হেরাত প্রদেশের জেবরাইল টাউনশিপে নিজেদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছিলেন এবং এগুলো দ্রুত ভাইরাল হচ্ছিল।

ভিডিওতে দেখা যায়—চার যুবক স্যুট, ওয়েস্টকোট, ওভারকোট, ফ্ল্যাট ক্যাপ পরে শহরে ঘুরছেন। তাঁরা সিগার সদৃশ সিগারেটও হাতে রেখেছিলেন। এই পোশাক ও আচরণকে ‘বিদেশি সংস্কৃতি প্রচার’ এবং ‘ইসলামিক মূল্যবোধের পরিপন্থী’ বলে অভিযুক্ত করেছে তালেবান। পরে ওই যুবকদের গ্রেপ্তার করে একটি সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

এই বিষয়ে তালেবানের নৈতিকতা ও শালীনতা রক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফ খাইবার বলেছেন, ‘আমরা মুসলমান এবং আফগান; আমাদের নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ আছে। বিদেশি সংস্কৃতি ও নষ্টাচার থেকে দেশকে রক্ষা করতে আমরা বড় ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং আবারও করব।’

তালেবান দাবি করেছে, সংশ্লিষ্ট চারজনকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাঁরা ‘অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছেন। তবে ক্ষমা আদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা অব্যাহত আছে। চার বছর ক্ষমতায় থাকলেও এখনো কোনো রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান সরকার আফগান পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং ঐতিহ্যবাহী কাবুলি পোশাক ও পাগড়ি বা টুপি পরাকে বাধ্যতামূলক করেছে। আর পাশ্চাত্য পোশাক, বিনোদন, সংগীত, টেলিভিশন ও নারীশিক্ষাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনা খুঁজতে গিয়েছিল দুই কিশোর, খনি ধসে চাপা পড়ে হলো মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছেলে ইয়ায়াহ জেন্নেহকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা নামিনা জেন্নেহ। ছবি: বিবিসি
ছেলে ইয়ায়াহ জেন্নেহকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা নামিনা জেন্নেহ। ছবি: বিবিসি

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনের এক গ্রামে সাদা কাপড়ে মোড়ানো দুই কিশোরের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। কাঁদছে সবাই। কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছে না, কিশোর দুটি তাদের মাঝে আর নেই।

সিয়েরা লিওনের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম নিমবাদু থেকে ঠিক এক দিন আগে সোনার সন্ধানে বেরিয়েছিল ১৬ বছরের মোহামেদ বাঙ্গুরা ও ১৭ বছরের ইয়ায়াহ জেন্নেহ। উদ্দেশ্য, পরিবারের জন্য বাড়তি উপার্জন।

শেষ পর্যন্ত তাদের আর ফেরা হলো না। সোনার জন্য যে গর্ত তারা খুঁড়ছিল, সেটি ধসে তাদের ওপর পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়।

ওই অঞ্চলে গত চার বছরে এ নিয়ে তিনটি খনি দুর্ঘটনা ঘটল, যাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে পাঁচটি শিশু।

এলাকার হেডটিচার ও স্থানীয় কর্মীদের মতে, বাঙ্গুরা ও জেন্নেহর মতো সিয়েরা লিওনের আরও অনেক শিশু স্কুল ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ খনিতে সোনা তুলতে যায়। এ প্রবণতা সেখানে ক্রমেই বাড়ছে।

বিবিসি আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সিয়েরা লিয়নের পূর্বাঞ্চল হীরার খনির জন্য বিখ্যাত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হীরার মজুত ফুরিয়ে আসায় সোনা খনন বেড়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা অঞ্চলটিতে স্থানীয় মানুষজন যেখানেই কোনো কিছুর মজুত খুঁজে পায়, সেখানেই খনির কাজ শুরু হয়ে যায়। তা চাষের জমি, পুরোনো কবরস্থান বা নদীর তীর—যাই হোক না কেন।

অঞ্চলটিতে নামীদামি কোনো খনন কোম্পানি নেই বললেই চলে। যেসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে খনি চালানো লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় ছড়িয়ে আছে এসব অনিয়ন্ত্রিত খনি; যার গভীরতা কখনো কখনো ৪ মিটারও (১৩ ফুট) হয়।

আফ্রিকার আরও বহু দেশে এমন খনির দেখা মেলে, যেখান থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়।

নিমবাদুর অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা চাষাবাদ আর ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প কর্মসংস্থান খুব কম। তাই বাড়তি আয়ের সুযোগ লোভনীয় মনে হয় গ্রামবাসীর।

তবে গ্রামের মানুষ এও জানে, এই আয় কখনো কখনো মূল্য দাবি করে। এবার সেই মূল্য দিতে হয়েছে সম্ভাবনাময় দুই কিশোরকে।

ইয়ায়াহ জেন্নেহর মা নামিনা জেন্নেহর স্বামী মারা গেছেন। পাঁচ সন্তানের সংসার চালাতে কিশোর ছেলেটির ওপরই ভরসা ছিল তাঁর।

একসময় এসব খনিতে কাজ করতেন নামিনা। বিবিসির কাছে তিনি স্বীকার করেন, ছেলেকে তিনিই খনির কাজে অভ্যস্ত করেছিলেন। তবে বলেন, ‘ও আমাকে বলেনি, ওই জায়গায় যাবে। জানলে আমি যেতে দিতাম না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে ৪২ দেশের নাগরিকদের দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার ৫ বছরের রেকর্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৩
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

মার্কিন কাস্টম অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্ট বা শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর (সিবিপি) গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রস্তাব অনুসারে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আসা পর্যটকদের অচিরেই হয়তো বিগত পাঁচ বছর পর্যন্ত তাদের সামাজিক মাধ্যমের ইতিহাস খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের জেরে সেই সব পর্যটকেরা প্রভাবিত হবেন, যারা ভিসা মওকুফ কর্মসূচির যোগ্য। এই কর্মসূচি অনুযায়ী ৪২টি দেশের নাগরিকেরা ইলেকট্রনিক ভ্রমণ অনুমোদন পেলে ভিসা ছাড়াই ৯০ দিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন।

ফেডারেল রেজিস্ট্রারে মঙ্গলবার পেশ করা একটি নথিতে সিবিপি জানিয়েছে, তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের একটি লম্বা তালিকা চাইবে, যার মধ্যে থাকবে সামাজিকমাধ্যম, গত দশ বছরজুড়ে ব্যবহার করা ই–মেইল ঠিকানা এবং বাবা-মা, জীবনসঙ্গী, ভাই-বোন ও সন্তানদের নাম, জন্মতারিখ, বাসস্থান ও জন্মস্থান।

বর্তমানে ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশগুলোর আবেদনকারীদের ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। তাঁরা ৪০ ডলার দিয়ে একটি ই-মেইল ঠিকানা, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং জরুরি যোগাযোগের তথ্য জমা দেন। এই অনুমোদনের মেয়াদ থাকে দুই বছর।

সিবিপির এই পদক্ষেপ মার্কিন সরকারের পূর্বের অনুরূপ কার্যক্রমের মতোই। সরকার ইতিমধ্যে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ১–বি ভিসা এবং শিক্ষার্থী ও গবেষক ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সামাজিকমাধ্যম পর্যালোচনার ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ছাড়া সরকারের একটি নতুন ২৫০ ডলারের ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি সংগ্রহের পরিকল্পনা আছে, যা অনেক ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যদিও ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশের ভ্রমণকারীরা সেই ফি থেকে ছাড় পাবেন।

ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি নিয়ে ট্রাভেল বা পর্যটন শিল্প আপত্তি জানিয়েছে। গত নভেম্বরে ২০ টিরও বেশি পর্যটন ও ভ্রমণ ব্যবসার একটি জোট বিরোধিতা করে একটি চিঠি স্বাক্ষর করে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, এই ফি আরোপের ফলে আগামী বছরের বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইচ্ছুক কোটি কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করবে।

এক পর্যটন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে কথা বলেছেন, সিবিপি এই পরিকল্পনা নিয়ে শিল্পের অংশীজনদের কিছু জানায়নি। তিনি একে যাত্রী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ বাড়াবাড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন। নোটিশে সিবিপি জানিয়েছে যে, তারা এই প্রস্তাবের ওপর ৬০ দিনের জন্য জনসাধারণের মন্তব্য গ্রহণ করবে।

যদি এই পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়, তবে সিবিপি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে পরিবর্তনগুলি কার্যকর করতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ইমিগ্রেশন আইন সংস্থা ফ্রাগোমেন (Fragomen) . ফ্রাগোমেন-এর অংশীদার বো কুপার সরকারের সামাজিক মাধ্যম পর্যালোচনার নতুন এই পদ্ধতিকে ‘প্যারাডাইম শিফট বা ধারণার আমূল পরিবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এর আগে সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট তথ্য, যেমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যাচাইয়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করত।

কুপার বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে অনলাইন আলাপ-আলোচনা দেখা হবে এবং কী ধরনের কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে নিজস্ব বিবেচনা ও নীতির ভিত্তিতে ভ্রমণ বাতিল করা হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘পর্যটন সংখ্যা কেমন থাকে, তা দেখতে বেশ আগ্রহ থাকবে।’

ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি সোফিয়া কোপ বিবৃতিতে বলেন, সামাজিক মাধ্যমের বাধ্যতামূলক প্রকাশ ও নজরদারি ‘নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্য বাজে লোককে খুঁজে বার করতে এটা কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়নি। তবে এটি নিরপরাধ ভ্রমণকারী এবং তাদের আমেরিকান পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের বাক্‌স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করেছে এবং তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।’

সিবিপি এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত