জাহীদ রেজা নূর

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
ছয় দফাকে আওয়ামী লীগ বলেছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছয় দফা নিয়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া; বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পূর্ব পাকিস্তানে ন্যাপের মওলানা ভাসানী ছয় দফার বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। আইয়ুব খানের মন্ত্রীরা লাগাতারভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন, স্বয়ং আইয়ুব খানও ছয় দফার জবাব দিতে চেয়েছেন অস্ত্রের ভাষায়।
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে আনল, তখনই জনগণ নিশ্চিত ছিল সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের ইতিহাসের মূল নায়ক কে। আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতে ভুল করেননি। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে চিরতরে রাজনীতি থেকে অপসারিত করতে চেয়েছিলেন। ফল ফলেছিল উল্টো।আইয়ুব খানের ডিকেডি আমলেরই তাতে অবসান হলো। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন।
ইতিহাসকে সঙ্গী করলে আমরা এই সময়টাকে খুবই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাব। শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তার পাশে অন্য নেতাদের রাজনীতি হয়ে উঠেছিল কঠিন। সে অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিকে বাধা দিতে নানামুখী চেষ্টা চলেছে। ন্যাপসহ বেশ কয়েকটি দলের ছয় দফা বিরোধিতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় ক্রিয়াশীল ছিল। সেটা হলো, শেখ মুজিবুর রহমান যেন ম্যান্ডেট পেয়ে না যান। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিব যদি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নিয়ে জয়ী হন, তাহলে ছয় দফাই হয়ে উঠবে জাগরণের বাণী। শেখ মুজিব হয়ে উঠবেন অবিসংবাদিত নেতা।
তাই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার সৃষ্টি হয়। এই সময় আমরা দেখতে পাই ন্যাপের মওলানা ভাসানীর অস্থিরতা। অনেকেই মওলানার রাজনীতির নানা সফলতার আলোচনা করেন বটে, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে তাঁর রহস্যময় আচরণের কথা ভুলে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচন যেন না হয়, সে জন্য কত কিছুই না করেছেন মওলানা ভাসানী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের বামপন্থী ধারাটির কথাও কিঞ্চিৎ আলোচনা হওয়া দরকার।
১৯৬৯ সালে যখন শেখ মুজিব জেলখানা থেকে বের হলেন, তখন দেখা গেল, ছাত্রলীগের একটা বড় অংশ তত দিনে বাম দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। সাংগঠনিক সভায় তাঁর বক্তৃতা দারুণভাবে আকৃষ্ট করত তরুণ প্রজন্মকে। তিনি প্রকাশ্য জনসভায় খুব একটা অংশ নিতেন না।
কিন্তু তাঁর তীক্ষ্ণধার প্রচারণার দিকে তরুণেরা আকৃষ্ট হতো অন্ধের মতো। পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের ভাঙনের পর মেধাবী ছাত্রদের একটি বড় অংশ সিরাজুল আলম খানের প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং তারাই আরও কিছুদিন পর জাসদ তৈরি করেছিল। সে আরেক ইতিহাস।
সিরাজুল আলম খানেরাও মওলানা ভাসানীর মতোই শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী ম্যান্ডেটের চেয়ে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষপাতী ছিলেন।
মওলানা ভাসানী বা সিরাজুল আলম খানের পথ অবলম্বন করলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যেত। ম্যান্ডেটহীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে শায়েস্তা করা সরকারের পক্ষে ছিল সহজ কাজ। নির্বাচনে ম্যান্ডেট না পেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারতেন না। তাই নির্বাচনটা জরুরি ছিল।
ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পল্টন ময়দানের জনসভায় নূরে আলম সিদ্দিকী প্রায় এককভাবে জনমত নির্বাচনের দিকে নিয়ে আসেন। সে কাহিনিও আলাদাভাবে উচ্চারণের প্রয়োজন আছে। ছাত্রলীগ যখন শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচন-যাত্রার পক্ষে চলে এল, তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো বাধা থাকল না। এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের মূল চালিকাশক্তি ছিল দুটো—এক. ছাত্রলীগ, দুই. ইত্তেফাক। আওয়ামী লীগও ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাককে সমীহ করে চলত।
সত্তরের নির্বাচনের আগে মওলানা ভাসানীর অস্থির রাজনীতির কিছুটা বিবরণ না দিলে একাত্তরের মার্চ মাসকে বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে না, কীভাবে সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে কৌশলী হতে হলো। পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ভেতরে-বাইরে চক্রান্ত চলছিল এবং সেই সংকটকালে বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাই সাতই মার্চের ভাষণে দেখা যাবে, সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলা নেই। কিন্তু বলা কি নেই? এই যে শক্তিশালীভাবে সব কথা বলে দিয়েও প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলেন না, এ এক বড় বিস্ময়।
১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ঢাকার ইসলামিক একাডেমি হলে মওলানা ভাসানীর দল যে সভার আয়োজন করেছিল, তাতে স্লোগান উঠেছিল, ‘নির্বাচন নির্বাচন, বর্জন বর্জন’, ‘মোরা করেছি পণ, হতে দেব না নির্বাচন’, ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, হাতিয়ার তুলে নাও’। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো এ সময় তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং এ কথা বলার সময় ভাসানী একটা অদ্ভুত প্রশ্ন তুললেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা, সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা, জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, ফেডারেল ব্যবস্থা, এক ইউনিট বাতিল-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারলেন, তাহলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা করলেন না কেন?
পাঠক লক্ষ করুন, এই বক্তব্যের অল্প কিছুদিন আগে ২৯ নভেম্বর মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত জাতীয় পরিষদ জনগণ গ্রহণ করবে না, কেবল একটি জাতীয় সম্মেলনই জনসাধারণের গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারে।
এবার মওলানা ভাসানীর কিছু অতীত কীর্তির কথা বলা যাক। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ‘সিভিল ওয়ার’ শুরু করার কথা বলেছিলেন। এরপর জুন মাসে বলেছিলেন, ‘জাতীয় কনভেনশনের রচিত ও রেফারেন্ডামে অনুমোদিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারি।’ অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসে এসে তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, সেটা বোঝা কঠিন। এবার তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না। শ্রেণিসংগ্রাম করতে হবে। নভেম্বরেই তিনি বলে বসেছেন, ‘নির্বাচনের আগে শাসনতন্ত্র চাই’ (পাঠক, ১৯৬৯ সালের ২৫ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক দেখে নিতে পারেন) এবং ডিসেম্বরে এসে তিনি বলছেন, ‘ভোটের আগে স্বায়ত্তশাসন চাই।’ আর যদি নির্বাচনের আগে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয়, তাহলে অবিরাম সংগ্রাম চলবে।
মওলানা ভাসানীর এই চালাকির ব্যাপারে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তাঁর মঞ্চে-নেপথ্যে কলামে লিখেছিলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের অভিমত কাহারও ওপর চাপাইয়া দিতে চাই না, যেমন চাই না অপর কাহারও মত আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হউক। শাসনতন্ত্রের মতো স্থায়ী জিনিস তৈরির ব্যাপারে আমরা ভোটের জোরের চেয়ে ঐকমত্যের নীতির উপর বেশি ভরসা রাখি। যদিও এটা ঠিক যে সবক্ষেত্রে কনসেনশাস হয় না।
আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রশ্নেও আমাদের কামনা হইবে—কনসেনশাসের মধ্য দিয়াই কাজ করা। ...মওলানা সাহেবও যে এই সব কথা না বোঝেন, ধৈর্যসহকারে চলার প্রয়োজন উপলব্ধি না করেন, তা নয়। কিন্তু তবু তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছেন: প্রেসিডেন্ট অন্য চার পাঁচটি বিষয়ের মতো স্বায়ত্তশাসন দানের কথাও ঘোষণা করিলেন না কেন? মওলানা সাহেব একটু স্থিরভাবে চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, প্রেসিডেন্ট কোনো কিছুই নিজের পকেট হইতে দেন নাই।
উপরোল্লিখিত চার পাঁচটি বিষয়েও তিনি স্বীয় অভিমত চাপাইয়া দিয়াছেন, এ কথা কাহারও বলার জো নাই। তিনি কেবল সেইটুকুই ঘোষণা করিয়াছেন, যেটুকু সর্বপ্রকার বিতর্কের অতীত এবং যাহার উপর দেশের সকল মহলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইলেকশন, শাসনতন্ত্র রচনা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হঠাৎ আপসো আপ হয় না, কাহাকেও না কাহাকেও, কোথাও না কোথাও কাজটা শুরু করিতে হয়। প্রেসিডেন্ট তাহাই করিয়াছেন।’ (সিরাজুদ্দীন হোসেন, মঞ্চে-নেপথ্যে, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮)
স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জনগণ আসলে কী চায়, সেটা তো তারা ঠিক করবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও তখন স্বায়ত্তশাসন চাইছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে এক ইউনিট-সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় তারা তখনো স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে কোনো স্থির একক ধারণায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি নিজেই তাঁর ঘোষণাবলে শাসনতন্ত্র রচনা করে দিতেন, স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দিতেন, তাহলে জনগণের নেতাদের আর কী করার ছিল?
একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র দেবেন, স্বায়ত্তশাসন দেবেন, আর তারপরই কেবল সেই কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদেরা নির্বাচনের কথা ভাববেন—এই ধারণা কী করে একজন বর্ষীয়ান নেতার মাথায় আসতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শাসনতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে বসে করবেন, এটা বোঝার মতো রাজনৈতিক পরিপক্বতা কি মওলানা ভাসানীর ছিল না? বিগত গণ-আন্দোলনের মুখে যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে শাসনতন্ত্র রচনা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যে জনপ্রতিনিধিরা ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের মতো এতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মওলানা ভাসানীর সে সময়ের অস্থিরতার কারণ খুঁজে বের করা গবেষকদের কাজ। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার প্রশ্নে যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হয়েছিল, তাতে কেন তিনি থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তিনি কয়েকবার আইয়ুব খানের প্রশস্তি করেছিলেন কেন, সে প্রশ্নটিও উঠে আসা দরকার।
এই গোলমেলে ব্যাপারটির বিশ্লেষণ ইতিহাসের কিছু দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
ছয় দফাকে আওয়ামী লীগ বলেছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছয় দফা নিয়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া; বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পূর্ব পাকিস্তানে ন্যাপের মওলানা ভাসানী ছয় দফার বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। আইয়ুব খানের মন্ত্রীরা লাগাতারভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন, স্বয়ং আইয়ুব খানও ছয় দফার জবাব দিতে চেয়েছেন অস্ত্রের ভাষায়।
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে আনল, তখনই জনগণ নিশ্চিত ছিল সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের ইতিহাসের মূল নায়ক কে। আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতে ভুল করেননি। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে চিরতরে রাজনীতি থেকে অপসারিত করতে চেয়েছিলেন। ফল ফলেছিল উল্টো।আইয়ুব খানের ডিকেডি আমলেরই তাতে অবসান হলো। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন।
ইতিহাসকে সঙ্গী করলে আমরা এই সময়টাকে খুবই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাব। শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তার পাশে অন্য নেতাদের রাজনীতি হয়ে উঠেছিল কঠিন। সে অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিকে বাধা দিতে নানামুখী চেষ্টা চলেছে। ন্যাপসহ বেশ কয়েকটি দলের ছয় দফা বিরোধিতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় ক্রিয়াশীল ছিল। সেটা হলো, শেখ মুজিবুর রহমান যেন ম্যান্ডেট পেয়ে না যান। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিব যদি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নিয়ে জয়ী হন, তাহলে ছয় দফাই হয়ে উঠবে জাগরণের বাণী। শেখ মুজিব হয়ে উঠবেন অবিসংবাদিত নেতা।
তাই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার সৃষ্টি হয়। এই সময় আমরা দেখতে পাই ন্যাপের মওলানা ভাসানীর অস্থিরতা। অনেকেই মওলানার রাজনীতির নানা সফলতার আলোচনা করেন বটে, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে তাঁর রহস্যময় আচরণের কথা ভুলে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচন যেন না হয়, সে জন্য কত কিছুই না করেছেন মওলানা ভাসানী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের বামপন্থী ধারাটির কথাও কিঞ্চিৎ আলোচনা হওয়া দরকার।
১৯৬৯ সালে যখন শেখ মুজিব জেলখানা থেকে বের হলেন, তখন দেখা গেল, ছাত্রলীগের একটা বড় অংশ তত দিনে বাম দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। সাংগঠনিক সভায় তাঁর বক্তৃতা দারুণভাবে আকৃষ্ট করত তরুণ প্রজন্মকে। তিনি প্রকাশ্য জনসভায় খুব একটা অংশ নিতেন না।
কিন্তু তাঁর তীক্ষ্ণধার প্রচারণার দিকে তরুণেরা আকৃষ্ট হতো অন্ধের মতো। পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের ভাঙনের পর মেধাবী ছাত্রদের একটি বড় অংশ সিরাজুল আলম খানের প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং তারাই আরও কিছুদিন পর জাসদ তৈরি করেছিল। সে আরেক ইতিহাস।
সিরাজুল আলম খানেরাও মওলানা ভাসানীর মতোই শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী ম্যান্ডেটের চেয়ে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষপাতী ছিলেন।
মওলানা ভাসানী বা সিরাজুল আলম খানের পথ অবলম্বন করলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যেত। ম্যান্ডেটহীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে শায়েস্তা করা সরকারের পক্ষে ছিল সহজ কাজ। নির্বাচনে ম্যান্ডেট না পেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারতেন না। তাই নির্বাচনটা জরুরি ছিল।
ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পল্টন ময়দানের জনসভায় নূরে আলম সিদ্দিকী প্রায় এককভাবে জনমত নির্বাচনের দিকে নিয়ে আসেন। সে কাহিনিও আলাদাভাবে উচ্চারণের প্রয়োজন আছে। ছাত্রলীগ যখন শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচন-যাত্রার পক্ষে চলে এল, তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো বাধা থাকল না। এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের মূল চালিকাশক্তি ছিল দুটো—এক. ছাত্রলীগ, দুই. ইত্তেফাক। আওয়ামী লীগও ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাককে সমীহ করে চলত।
সত্তরের নির্বাচনের আগে মওলানা ভাসানীর অস্থির রাজনীতির কিছুটা বিবরণ না দিলে একাত্তরের মার্চ মাসকে বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে না, কীভাবে সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে কৌশলী হতে হলো। পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ভেতরে-বাইরে চক্রান্ত চলছিল এবং সেই সংকটকালে বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাই সাতই মার্চের ভাষণে দেখা যাবে, সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলা নেই। কিন্তু বলা কি নেই? এই যে শক্তিশালীভাবে সব কথা বলে দিয়েও প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলেন না, এ এক বড় বিস্ময়।
১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ঢাকার ইসলামিক একাডেমি হলে মওলানা ভাসানীর দল যে সভার আয়োজন করেছিল, তাতে স্লোগান উঠেছিল, ‘নির্বাচন নির্বাচন, বর্জন বর্জন’, ‘মোরা করেছি পণ, হতে দেব না নির্বাচন’, ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, হাতিয়ার তুলে নাও’। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো এ সময় তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং এ কথা বলার সময় ভাসানী একটা অদ্ভুত প্রশ্ন তুললেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা, সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা, জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, ফেডারেল ব্যবস্থা, এক ইউনিট বাতিল-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারলেন, তাহলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা করলেন না কেন?
পাঠক লক্ষ করুন, এই বক্তব্যের অল্প কিছুদিন আগে ২৯ নভেম্বর মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত জাতীয় পরিষদ জনগণ গ্রহণ করবে না, কেবল একটি জাতীয় সম্মেলনই জনসাধারণের গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারে।
এবার মওলানা ভাসানীর কিছু অতীত কীর্তির কথা বলা যাক। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ‘সিভিল ওয়ার’ শুরু করার কথা বলেছিলেন। এরপর জুন মাসে বলেছিলেন, ‘জাতীয় কনভেনশনের রচিত ও রেফারেন্ডামে অনুমোদিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারি।’ অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসে এসে তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, সেটা বোঝা কঠিন। এবার তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না। শ্রেণিসংগ্রাম করতে হবে। নভেম্বরেই তিনি বলে বসেছেন, ‘নির্বাচনের আগে শাসনতন্ত্র চাই’ (পাঠক, ১৯৬৯ সালের ২৫ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক দেখে নিতে পারেন) এবং ডিসেম্বরে এসে তিনি বলছেন, ‘ভোটের আগে স্বায়ত্তশাসন চাই।’ আর যদি নির্বাচনের আগে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয়, তাহলে অবিরাম সংগ্রাম চলবে।
মওলানা ভাসানীর এই চালাকির ব্যাপারে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তাঁর মঞ্চে-নেপথ্যে কলামে লিখেছিলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের অভিমত কাহারও ওপর চাপাইয়া দিতে চাই না, যেমন চাই না অপর কাহারও মত আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হউক। শাসনতন্ত্রের মতো স্থায়ী জিনিস তৈরির ব্যাপারে আমরা ভোটের জোরের চেয়ে ঐকমত্যের নীতির উপর বেশি ভরসা রাখি। যদিও এটা ঠিক যে সবক্ষেত্রে কনসেনশাস হয় না।
আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রশ্নেও আমাদের কামনা হইবে—কনসেনশাসের মধ্য দিয়াই কাজ করা। ...মওলানা সাহেবও যে এই সব কথা না বোঝেন, ধৈর্যসহকারে চলার প্রয়োজন উপলব্ধি না করেন, তা নয়। কিন্তু তবু তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছেন: প্রেসিডেন্ট অন্য চার পাঁচটি বিষয়ের মতো স্বায়ত্তশাসন দানের কথাও ঘোষণা করিলেন না কেন? মওলানা সাহেব একটু স্থিরভাবে চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, প্রেসিডেন্ট কোনো কিছুই নিজের পকেট হইতে দেন নাই।
উপরোল্লিখিত চার পাঁচটি বিষয়েও তিনি স্বীয় অভিমত চাপাইয়া দিয়াছেন, এ কথা কাহারও বলার জো নাই। তিনি কেবল সেইটুকুই ঘোষণা করিয়াছেন, যেটুকু সর্বপ্রকার বিতর্কের অতীত এবং যাহার উপর দেশের সকল মহলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইলেকশন, শাসনতন্ত্র রচনা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হঠাৎ আপসো আপ হয় না, কাহাকেও না কাহাকেও, কোথাও না কোথাও কাজটা শুরু করিতে হয়। প্রেসিডেন্ট তাহাই করিয়াছেন।’ (সিরাজুদ্দীন হোসেন, মঞ্চে-নেপথ্যে, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮)
স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জনগণ আসলে কী চায়, সেটা তো তারা ঠিক করবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও তখন স্বায়ত্তশাসন চাইছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে এক ইউনিট-সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় তারা তখনো স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে কোনো স্থির একক ধারণায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি নিজেই তাঁর ঘোষণাবলে শাসনতন্ত্র রচনা করে দিতেন, স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দিতেন, তাহলে জনগণের নেতাদের আর কী করার ছিল?
একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র দেবেন, স্বায়ত্তশাসন দেবেন, আর তারপরই কেবল সেই কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদেরা নির্বাচনের কথা ভাববেন—এই ধারণা কী করে একজন বর্ষীয়ান নেতার মাথায় আসতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শাসনতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে বসে করবেন, এটা বোঝার মতো রাজনৈতিক পরিপক্বতা কি মওলানা ভাসানীর ছিল না? বিগত গণ-আন্দোলনের মুখে যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে শাসনতন্ত্র রচনা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যে জনপ্রতিনিধিরা ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের মতো এতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মওলানা ভাসানীর সে সময়ের অস্থিরতার কারণ খুঁজে বের করা গবেষকদের কাজ। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার প্রশ্নে যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হয়েছিল, তাতে কেন তিনি থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তিনি কয়েকবার আইয়ুব খানের প্রশস্তি করেছিলেন কেন, সে প্রশ্নটিও উঠে আসা দরকার।
এই গোলমেলে ব্যাপারটির বিশ্লেষণ ইতিহাসের কিছু দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
ছয় দফাকে আওয়ামী লীগ বলেছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছয় দফা নিয়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া; বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পূর্ব পাকিস্তানে ন্যাপের মওলানা ভাসানী ছয় দফার বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। আইয়ুব খানের মন্ত্রীরা লাগাতারভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন, স্বয়ং আইয়ুব খানও ছয় দফার জবাব দিতে চেয়েছেন অস্ত্রের ভাষায়।
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে আনল, তখনই জনগণ নিশ্চিত ছিল সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের ইতিহাসের মূল নায়ক কে। আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতে ভুল করেননি। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে চিরতরে রাজনীতি থেকে অপসারিত করতে চেয়েছিলেন। ফল ফলেছিল উল্টো।আইয়ুব খানের ডিকেডি আমলেরই তাতে অবসান হলো। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন।
ইতিহাসকে সঙ্গী করলে আমরা এই সময়টাকে খুবই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাব। শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তার পাশে অন্য নেতাদের রাজনীতি হয়ে উঠেছিল কঠিন। সে অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিকে বাধা দিতে নানামুখী চেষ্টা চলেছে। ন্যাপসহ বেশ কয়েকটি দলের ছয় দফা বিরোধিতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় ক্রিয়াশীল ছিল। সেটা হলো, শেখ মুজিবুর রহমান যেন ম্যান্ডেট পেয়ে না যান। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিব যদি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নিয়ে জয়ী হন, তাহলে ছয় দফাই হয়ে উঠবে জাগরণের বাণী। শেখ মুজিব হয়ে উঠবেন অবিসংবাদিত নেতা।
তাই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার সৃষ্টি হয়। এই সময় আমরা দেখতে পাই ন্যাপের মওলানা ভাসানীর অস্থিরতা। অনেকেই মওলানার রাজনীতির নানা সফলতার আলোচনা করেন বটে, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে তাঁর রহস্যময় আচরণের কথা ভুলে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচন যেন না হয়, সে জন্য কত কিছুই না করেছেন মওলানা ভাসানী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের বামপন্থী ধারাটির কথাও কিঞ্চিৎ আলোচনা হওয়া দরকার।
১৯৬৯ সালে যখন শেখ মুজিব জেলখানা থেকে বের হলেন, তখন দেখা গেল, ছাত্রলীগের একটা বড় অংশ তত দিনে বাম দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। সাংগঠনিক সভায় তাঁর বক্তৃতা দারুণভাবে আকৃষ্ট করত তরুণ প্রজন্মকে। তিনি প্রকাশ্য জনসভায় খুব একটা অংশ নিতেন না।
কিন্তু তাঁর তীক্ষ্ণধার প্রচারণার দিকে তরুণেরা আকৃষ্ট হতো অন্ধের মতো। পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের ভাঙনের পর মেধাবী ছাত্রদের একটি বড় অংশ সিরাজুল আলম খানের প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং তারাই আরও কিছুদিন পর জাসদ তৈরি করেছিল। সে আরেক ইতিহাস।
সিরাজুল আলম খানেরাও মওলানা ভাসানীর মতোই শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী ম্যান্ডেটের চেয়ে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষপাতী ছিলেন।
মওলানা ভাসানী বা সিরাজুল আলম খানের পথ অবলম্বন করলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যেত। ম্যান্ডেটহীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে শায়েস্তা করা সরকারের পক্ষে ছিল সহজ কাজ। নির্বাচনে ম্যান্ডেট না পেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারতেন না। তাই নির্বাচনটা জরুরি ছিল।
ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পল্টন ময়দানের জনসভায় নূরে আলম সিদ্দিকী প্রায় এককভাবে জনমত নির্বাচনের দিকে নিয়ে আসেন। সে কাহিনিও আলাদাভাবে উচ্চারণের প্রয়োজন আছে। ছাত্রলীগ যখন শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচন-যাত্রার পক্ষে চলে এল, তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো বাধা থাকল না। এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের মূল চালিকাশক্তি ছিল দুটো—এক. ছাত্রলীগ, দুই. ইত্তেফাক। আওয়ামী লীগও ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাককে সমীহ করে চলত।
সত্তরের নির্বাচনের আগে মওলানা ভাসানীর অস্থির রাজনীতির কিছুটা বিবরণ না দিলে একাত্তরের মার্চ মাসকে বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে না, কীভাবে সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে কৌশলী হতে হলো। পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ভেতরে-বাইরে চক্রান্ত চলছিল এবং সেই সংকটকালে বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাই সাতই মার্চের ভাষণে দেখা যাবে, সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলা নেই। কিন্তু বলা কি নেই? এই যে শক্তিশালীভাবে সব কথা বলে দিয়েও প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলেন না, এ এক বড় বিস্ময়।
১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ঢাকার ইসলামিক একাডেমি হলে মওলানা ভাসানীর দল যে সভার আয়োজন করেছিল, তাতে স্লোগান উঠেছিল, ‘নির্বাচন নির্বাচন, বর্জন বর্জন’, ‘মোরা করেছি পণ, হতে দেব না নির্বাচন’, ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, হাতিয়ার তুলে নাও’। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো এ সময় তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং এ কথা বলার সময় ভাসানী একটা অদ্ভুত প্রশ্ন তুললেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা, সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা, জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, ফেডারেল ব্যবস্থা, এক ইউনিট বাতিল-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারলেন, তাহলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা করলেন না কেন?
পাঠক লক্ষ করুন, এই বক্তব্যের অল্প কিছুদিন আগে ২৯ নভেম্বর মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত জাতীয় পরিষদ জনগণ গ্রহণ করবে না, কেবল একটি জাতীয় সম্মেলনই জনসাধারণের গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারে।
এবার মওলানা ভাসানীর কিছু অতীত কীর্তির কথা বলা যাক। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ‘সিভিল ওয়ার’ শুরু করার কথা বলেছিলেন। এরপর জুন মাসে বলেছিলেন, ‘জাতীয় কনভেনশনের রচিত ও রেফারেন্ডামে অনুমোদিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারি।’ অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসে এসে তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, সেটা বোঝা কঠিন। এবার তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না। শ্রেণিসংগ্রাম করতে হবে। নভেম্বরেই তিনি বলে বসেছেন, ‘নির্বাচনের আগে শাসনতন্ত্র চাই’ (পাঠক, ১৯৬৯ সালের ২৫ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক দেখে নিতে পারেন) এবং ডিসেম্বরে এসে তিনি বলছেন, ‘ভোটের আগে স্বায়ত্তশাসন চাই।’ আর যদি নির্বাচনের আগে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয়, তাহলে অবিরাম সংগ্রাম চলবে।
মওলানা ভাসানীর এই চালাকির ব্যাপারে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তাঁর মঞ্চে-নেপথ্যে কলামে লিখেছিলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের অভিমত কাহারও ওপর চাপাইয়া দিতে চাই না, যেমন চাই না অপর কাহারও মত আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হউক। শাসনতন্ত্রের মতো স্থায়ী জিনিস তৈরির ব্যাপারে আমরা ভোটের জোরের চেয়ে ঐকমত্যের নীতির উপর বেশি ভরসা রাখি। যদিও এটা ঠিক যে সবক্ষেত্রে কনসেনশাস হয় না।
আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রশ্নেও আমাদের কামনা হইবে—কনসেনশাসের মধ্য দিয়াই কাজ করা। ...মওলানা সাহেবও যে এই সব কথা না বোঝেন, ধৈর্যসহকারে চলার প্রয়োজন উপলব্ধি না করেন, তা নয়। কিন্তু তবু তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছেন: প্রেসিডেন্ট অন্য চার পাঁচটি বিষয়ের মতো স্বায়ত্তশাসন দানের কথাও ঘোষণা করিলেন না কেন? মওলানা সাহেব একটু স্থিরভাবে চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, প্রেসিডেন্ট কোনো কিছুই নিজের পকেট হইতে দেন নাই।
উপরোল্লিখিত চার পাঁচটি বিষয়েও তিনি স্বীয় অভিমত চাপাইয়া দিয়াছেন, এ কথা কাহারও বলার জো নাই। তিনি কেবল সেইটুকুই ঘোষণা করিয়াছেন, যেটুকু সর্বপ্রকার বিতর্কের অতীত এবং যাহার উপর দেশের সকল মহলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইলেকশন, শাসনতন্ত্র রচনা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হঠাৎ আপসো আপ হয় না, কাহাকেও না কাহাকেও, কোথাও না কোথাও কাজটা শুরু করিতে হয়। প্রেসিডেন্ট তাহাই করিয়াছেন।’ (সিরাজুদ্দীন হোসেন, মঞ্চে-নেপথ্যে, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮)
স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জনগণ আসলে কী চায়, সেটা তো তারা ঠিক করবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও তখন স্বায়ত্তশাসন চাইছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে এক ইউনিট-সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় তারা তখনো স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে কোনো স্থির একক ধারণায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি নিজেই তাঁর ঘোষণাবলে শাসনতন্ত্র রচনা করে দিতেন, স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দিতেন, তাহলে জনগণের নেতাদের আর কী করার ছিল?
একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র দেবেন, স্বায়ত্তশাসন দেবেন, আর তারপরই কেবল সেই কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদেরা নির্বাচনের কথা ভাববেন—এই ধারণা কী করে একজন বর্ষীয়ান নেতার মাথায় আসতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শাসনতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে বসে করবেন, এটা বোঝার মতো রাজনৈতিক পরিপক্বতা কি মওলানা ভাসানীর ছিল না? বিগত গণ-আন্দোলনের মুখে যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে শাসনতন্ত্র রচনা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যে জনপ্রতিনিধিরা ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের মতো এতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মওলানা ভাসানীর সে সময়ের অস্থিরতার কারণ খুঁজে বের করা গবেষকদের কাজ। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার প্রশ্নে যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হয়েছিল, তাতে কেন তিনি থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তিনি কয়েকবার আইয়ুব খানের প্রশস্তি করেছিলেন কেন, সে প্রশ্নটিও উঠে আসা দরকার।
এই গোলমেলে ব্যাপারটির বিশ্লেষণ ইতিহাসের কিছু দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
ছয় দফাকে আওয়ামী লীগ বলেছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছয় দফা নিয়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া; বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পূর্ব পাকিস্তানে ন্যাপের মওলানা ভাসানী ছয় দফার বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। আইয়ুব খানের মন্ত্রীরা লাগাতারভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন, স্বয়ং আইয়ুব খানও ছয় দফার জবাব দিতে চেয়েছেন অস্ত্রের ভাষায়।
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে আনল, তখনই জনগণ নিশ্চিত ছিল সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের ইতিহাসের মূল নায়ক কে। আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতে ভুল করেননি। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে চিরতরে রাজনীতি থেকে অপসারিত করতে চেয়েছিলেন। ফল ফলেছিল উল্টো।আইয়ুব খানের ডিকেডি আমলেরই তাতে অবসান হলো। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন।
ইতিহাসকে সঙ্গী করলে আমরা এই সময়টাকে খুবই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাব। শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তার পাশে অন্য নেতাদের রাজনীতি হয়ে উঠেছিল কঠিন। সে অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিকে বাধা দিতে নানামুখী চেষ্টা চলেছে। ন্যাপসহ বেশ কয়েকটি দলের ছয় দফা বিরোধিতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় ক্রিয়াশীল ছিল। সেটা হলো, শেখ মুজিবুর রহমান যেন ম্যান্ডেট পেয়ে না যান। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিব যদি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নিয়ে জয়ী হন, তাহলে ছয় দফাই হয়ে উঠবে জাগরণের বাণী। শেখ মুজিব হয়ে উঠবেন অবিসংবাদিত নেতা।
তাই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার সৃষ্টি হয়। এই সময় আমরা দেখতে পাই ন্যাপের মওলানা ভাসানীর অস্থিরতা। অনেকেই মওলানার রাজনীতির নানা সফলতার আলোচনা করেন বটে, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে তাঁর রহস্যময় আচরণের কথা ভুলে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচন যেন না হয়, সে জন্য কত কিছুই না করেছেন মওলানা ভাসানী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের বামপন্থী ধারাটির কথাও কিঞ্চিৎ আলোচনা হওয়া দরকার।
১৯৬৯ সালে যখন শেখ মুজিব জেলখানা থেকে বের হলেন, তখন দেখা গেল, ছাত্রলীগের একটা বড় অংশ তত দিনে বাম দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। সাংগঠনিক সভায় তাঁর বক্তৃতা দারুণভাবে আকৃষ্ট করত তরুণ প্রজন্মকে। তিনি প্রকাশ্য জনসভায় খুব একটা অংশ নিতেন না।
কিন্তু তাঁর তীক্ষ্ণধার প্রচারণার দিকে তরুণেরা আকৃষ্ট হতো অন্ধের মতো। পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের ভাঙনের পর মেধাবী ছাত্রদের একটি বড় অংশ সিরাজুল আলম খানের প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং তারাই আরও কিছুদিন পর জাসদ তৈরি করেছিল। সে আরেক ইতিহাস।
সিরাজুল আলম খানেরাও মওলানা ভাসানীর মতোই শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী ম্যান্ডেটের চেয়ে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষপাতী ছিলেন।
মওলানা ভাসানী বা সিরাজুল আলম খানের পথ অবলম্বন করলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যেত। ম্যান্ডেটহীন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে শায়েস্তা করা সরকারের পক্ষে ছিল সহজ কাজ। নির্বাচনে ম্যান্ডেট না পেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারতেন না। তাই নির্বাচনটা জরুরি ছিল।
ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পল্টন ময়দানের জনসভায় নূরে আলম সিদ্দিকী প্রায় এককভাবে জনমত নির্বাচনের দিকে নিয়ে আসেন। সে কাহিনিও আলাদাভাবে উচ্চারণের প্রয়োজন আছে। ছাত্রলীগ যখন শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচন-যাত্রার পক্ষে চলে এল, তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো বাধা থাকল না। এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের মূল চালিকাশক্তি ছিল দুটো—এক. ছাত্রলীগ, দুই. ইত্তেফাক। আওয়ামী লীগও ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাককে সমীহ করে চলত।
সত্তরের নির্বাচনের আগে মওলানা ভাসানীর অস্থির রাজনীতির কিছুটা বিবরণ না দিলে একাত্তরের মার্চ মাসকে বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে না, কীভাবে সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে কৌশলী হতে হলো। পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ভেতরে-বাইরে চক্রান্ত চলছিল এবং সেই সংকটকালে বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাই সাতই মার্চের ভাষণে দেখা যাবে, সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলা নেই। কিন্তু বলা কি নেই? এই যে শক্তিশালীভাবে সব কথা বলে দিয়েও প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলেন না, এ এক বড় বিস্ময়।
১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ঢাকার ইসলামিক একাডেমি হলে মওলানা ভাসানীর দল যে সভার আয়োজন করেছিল, তাতে স্লোগান উঠেছিল, ‘নির্বাচন নির্বাচন, বর্জন বর্জন’, ‘মোরা করেছি পণ, হতে দেব না নির্বাচন’, ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, হাতিয়ার তুলে নাও’। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো এ সময় তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং এ কথা বলার সময় ভাসানী একটা অদ্ভুত প্রশ্ন তুললেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা, সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা, জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, ফেডারেল ব্যবস্থা, এক ইউনিট বাতিল-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারলেন, তাহলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা করলেন না কেন?
পাঠক লক্ষ করুন, এই বক্তব্যের অল্প কিছুদিন আগে ২৯ নভেম্বর মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত জাতীয় পরিষদ জনগণ গ্রহণ করবে না, কেবল একটি জাতীয় সম্মেলনই জনসাধারণের গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারে।
এবার মওলানা ভাসানীর কিছু অতীত কীর্তির কথা বলা যাক। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ‘সিভিল ওয়ার’ শুরু করার কথা বলেছিলেন। এরপর জুন মাসে বলেছিলেন, ‘জাতীয় কনভেনশনের রচিত ও রেফারেন্ডামে অনুমোদিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারি।’ অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসে এসে তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, সেটা বোঝা কঠিন। এবার তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না। শ্রেণিসংগ্রাম করতে হবে। নভেম্বরেই তিনি বলে বসেছেন, ‘নির্বাচনের আগে শাসনতন্ত্র চাই’ (পাঠক, ১৯৬৯ সালের ২৫ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক দেখে নিতে পারেন) এবং ডিসেম্বরে এসে তিনি বলছেন, ‘ভোটের আগে স্বায়ত্তশাসন চাই।’ আর যদি নির্বাচনের আগে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয়, তাহলে অবিরাম সংগ্রাম চলবে।
মওলানা ভাসানীর এই চালাকির ব্যাপারে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তাঁর মঞ্চে-নেপথ্যে কলামে লিখেছিলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের অভিমত কাহারও ওপর চাপাইয়া দিতে চাই না, যেমন চাই না অপর কাহারও মত আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হউক। শাসনতন্ত্রের মতো স্থায়ী জিনিস তৈরির ব্যাপারে আমরা ভোটের জোরের চেয়ে ঐকমত্যের নীতির উপর বেশি ভরসা রাখি। যদিও এটা ঠিক যে সবক্ষেত্রে কনসেনশাস হয় না।
আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রশ্নেও আমাদের কামনা হইবে—কনসেনশাসের মধ্য দিয়াই কাজ করা। ...মওলানা সাহেবও যে এই সব কথা না বোঝেন, ধৈর্যসহকারে চলার প্রয়োজন উপলব্ধি না করেন, তা নয়। কিন্তু তবু তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছেন: প্রেসিডেন্ট অন্য চার পাঁচটি বিষয়ের মতো স্বায়ত্তশাসন দানের কথাও ঘোষণা করিলেন না কেন? মওলানা সাহেব একটু স্থিরভাবে চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, প্রেসিডেন্ট কোনো কিছুই নিজের পকেট হইতে দেন নাই।
উপরোল্লিখিত চার পাঁচটি বিষয়েও তিনি স্বীয় অভিমত চাপাইয়া দিয়াছেন, এ কথা কাহারও বলার জো নাই। তিনি কেবল সেইটুকুই ঘোষণা করিয়াছেন, যেটুকু সর্বপ্রকার বিতর্কের অতীত এবং যাহার উপর দেশের সকল মহলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইলেকশন, শাসনতন্ত্র রচনা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হঠাৎ আপসো আপ হয় না, কাহাকেও না কাহাকেও, কোথাও না কোথাও কাজটা শুরু করিতে হয়। প্রেসিডেন্ট তাহাই করিয়াছেন।’ (সিরাজুদ্দীন হোসেন, মঞ্চে-নেপথ্যে, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮)
স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জনগণ আসলে কী চায়, সেটা তো তারা ঠিক করবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও তখন স্বায়ত্তশাসন চাইছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে এক ইউনিট-সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় তারা তখনো স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে কোনো স্থির একক ধারণায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি নিজেই তাঁর ঘোষণাবলে শাসনতন্ত্র রচনা করে দিতেন, স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দিতেন, তাহলে জনগণের নেতাদের আর কী করার ছিল?
একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র দেবেন, স্বায়ত্তশাসন দেবেন, আর তারপরই কেবল সেই কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদেরা নির্বাচনের কথা ভাববেন—এই ধারণা কী করে একজন বর্ষীয়ান নেতার মাথায় আসতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শাসনতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে বসে করবেন, এটা বোঝার মতো রাজনৈতিক পরিপক্বতা কি মওলানা ভাসানীর ছিল না? বিগত গণ-আন্দোলনের মুখে যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে শাসনতন্ত্র রচনা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যে জনপ্রতিনিধিরা ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের মতো এতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মওলানা ভাসানীর সে সময়ের অস্থিরতার কারণ খুঁজে বের করা গবেষকদের কাজ। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার প্রশ্নে যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হয়েছিল, তাতে কেন তিনি থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তিনি কয়েকবার আইয়ুব খানের প্রশস্তি করেছিলেন কেন, সে প্রশ্নটিও উঠে আসা দরকার।
এই গোলমেলে ব্যাপারটির বিশ্লেষণ ইতিহাসের কিছু দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
০৪ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
০৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
০৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল এক অনন্য মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটি নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।
০৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫