Ajker Patrika

ভারত-কানাডা বিরোধ কত দূর যাবে

মোনায়েম সরকার
ভারত-কানাডা বিরোধ কত দূর যাবে

বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডার বন্ধুত্বের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, তার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে—তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কেরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে বৃহৎ শক্তি হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর অবস্থানের ওপর। কোনো দেশই হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো দেশের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেবে বলে মনে হচ্ছে না।

খালিস্তান ইস্যুটি ভারতের জন্য স্পর্শকাতর। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৫৮ শতাংশ শিখ এবং ৩৯ শতাংশ হিন্দু। আশি ও নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়। ওই সময় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। এই মুহূর্তে এই আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভারতের বাইরে বসবাসরত অভিবাসীরা।

কানাডায় অভিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ অংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এই সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এর মধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখধর্মানুসারী। কানাডার মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি। পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি শিখ বসবাস করে কানাডায়।

হারদীপ সিং নিজ্জার ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে কানাডায় যান। গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরে এক শিখমন্দির গুরুদুয়ারার গাড়ি পার্কিংয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে দুজন মুখোশ পরিহিত বন্দুকধারী। সে সময় নিজ্জার গাড়ির ভেতরে ছিলেন।

নিজ্জারের মৃত্যুর কয়েক মাস পরও কানাডার ভেতরে এবং বাইরে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। কানাডার টরন্টো ছাড়াও লন্ডন, মেলবোর্ন, সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরে জুলাই মাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তাদের অভিযোগ, ভারত সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের কিছু অংশ নিয়ে স্বাধীন শিখরাষ্ট্র খালিস্তান গঠনের পক্ষে ছিলেন হারদীপ সিং নিজ্জার। ভারতের অভিযোগ, নিজ্জার ছিলেন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘খালিস্তানি টাইগার ফোর্স’ ও ভারতে নিষিদ্ধ ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর কানাডা শাখার নেতা। তিনি ভারতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী হামলাও চালিয়েছেন। যদিও নিজ্জার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ভারত তাঁকে ‘ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসী ঘোষণা করে এবং দেশে ফেরত আনতে আগ্রহী ছিল।

ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন বলছে, গত গ্রীষ্মে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাকে নিজ্জার জানিয়েছিলেন, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের ইস্যুতে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারেতে সেপ্টেম্বরে তিনি একটি গণভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছিলেন। স্বাধীন খালিস্তান গঠনের প্রশ্নে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের গণভোট আয়োজন করা হচ্ছিল। গত বছর কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ব্র্যাম্পটন শহরে এ রকম একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়। ব্র্যাম্পটনে শিখ জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পর কানাডা হচ্ছে দ্বিতীয় দেশ, যেখানে শিখ সম্প্রদায়ের বসবাস সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক কারণেই সে দেশের রাজনীতিতে শিখ সম্প্রদায়ের প্রভাব যথেষ্ট। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে খালিস্তানিদের প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর দল কঠোর নয় বলে ভারত অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে।

এবার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। সম্প্রতি কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো অভিযোগ করেন, হারদীপ সিংকে খুনের পেছনে ভারতীয় এজেন্টদের যুক্ত থাকার নির্দিষ্ট প্রমাণ তাঁর সরকারের কাছে রয়েছে। ট্রুডো বলেছেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ট্রুডোর ওই অভিযোগের পরই কানাডায় অবস্থানরত এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি। তিনি বলেন, কানাডা পবন কুমার রাই নামের ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংয়ের (র) প্রধান ছিলেন।

এর অল্প সময় পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী সে দেশের পার্লামেন্টে যা বলেছেন, তা ‘অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ভারতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ক্যামেরুন ম্যাককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ শুধু অসত্যই নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর। সে দেশের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথাও হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতের মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কানাডার কূটনীতিকের অযথা হস্তক্ষেপ উদ্বেগজনক। তাদের ভারতবিরোধিতা বরদাশত করা যায় না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের অপ্রমাণিত অভিযোগের মূল লক্ষ্য খালিস্তানি চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের দিক থেকে চোখ ফেরানো। এই জঙ্গিদের কানাডা আশ্রয় দিয়েছে। তারা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অথচ কানাডা সরকার নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।

ভারত-কানাডা সম্পর্কের  শীতলতার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা গেছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসরে। ট্রুডো দিল্লি আসার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কাঠামোগত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ভারত সেই বৈঠকে রাজি হয়নি। মোদি ও ট্রুডো সম্মেলনের অবসরে সামান্য কিছু সময়ের জন্য কথা বলেছেন। সেখানেও খালিস্তানিদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোয় ট্রুডোর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মোদি।

মোদি বলেছিলেন, কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনে একাধিকবার খালিস্তানিরা হামলা চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও কানাডার সরকার কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। মোদি ভারতের অসন্তোষ ও অখুশির কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে বলেছেন, ভারতের আশা, কানাডা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে শামিল হবে।

সেই বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, কানাডায় সবার চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। যে অধিকারকে কানাডা বিশেষ গুরুত্ব দেয়, তা কখনো খর্ব করা যায় না। তবে সরকার হিংসা ও ঘৃণা বরদাশত করে না। ট্রুডো এ কথা জানাতে ভোলেননি যে হাতে গোনা কয়েকজনের অপকর্মের দায় একটা গোটা সম্প্রদায়ের ওপর চাপানো যায় না।

বর্তমান অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। অথচ ২০১০ সাল থেকেই ভারত ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই আলোচনা আবার শুরু হয়। মাত্র তিন মাস আগে দুই দেশই জানিয়েছিল, চলতি বছরের মধ্যেই মুক্তবাণিজ্য নিয়ে একটি চুক্তি করতে চায়।

কিন্তু আকস্মিকভাবেই এ-সংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছে কানাডা। ভারত-কানাডা বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার (প্রায় ৬৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা)। শুধু পারস্পরিক রপ্তানিই হয় প্রায় অর্ধেক, ৪০০ কোটি ডলার। এই ভরসাই অবাধ বাণিজ্যের আশা জাগিয়ে রাখছে। তা ছাড়া, ভূরাজনৈতিক দাবার বোর্ডে ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত শুধু একটি ক্রমবর্ধমান শক্তিই নয়, তারা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। পশ্চিমারা ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রতিরক্ষাপ্রাচীর হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।

ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা একটি চূড়ান্ত ঘোষণার বিষয়ে সম্মত হয়। তবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য এই ঘোষণাপত্রে রাশিয়ার নাম উল্লেখ করে নিন্দা জানানো হয়নি।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হারদীপ হত্যার বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে উত্থাপন করেছেন ট্রুডো।

কানাডার মিত্ররা অটোয়ার প্রতি সতর্কতার সঙ্গে সমর্থন বজায় রেখেছে। ট্রুডো চেয়েছিলেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়ে গঠিত ‘দ্য ফাইভ আইজ’ বা ‘পঞ্চনেত্র জোট’ ভারতীয় আচরণের নিন্দা ও সমালোচনা করুক, যৌথভাবে বিবৃতি দিয়ে ভারতের ওপর প্রভাব বিস্তার করুক। কিন্তু বাকি চার সদস্যদেশের কেউ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

ভারত-কানাডার বিরোধ পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে নানা উদ্বেগ-শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারত-কানাডা বিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোনো একটি পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকির দিকটি।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত নিজেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই দেশগুলোকে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বৈশ্বিক দক্ষিণ নামেও ডাকা হয়। এর মধ্যে অনেক দেশই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি।

পশ্চিমা কূটনীতিকেরা কোনোভাবেই চাইবেন না, ভারত-কানাডা বিরোধের জেরে নতুন কোনো আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি হোক কিংবা কমনওয়েলথভুক্ত দুটি দেশের বিরোধের জেরে উত্তর বনাম দক্ষিণের একটি লড়াই বেধে যাক বা ট্রান্স-আটলান্টিক শক্তির সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হোক। নানা ধরনের বিরোধে জড়িয়ে দেশে দেশে সম্পর্কের যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। ভারত-কানাডা বিরোধের জেরে নতুন কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হতে চাইবে কি কোনো দেশ?

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও মহাপরিচালক, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত