Ajker Patrika

তর্কপ্রিয় বাঙালি এবং ড. ইউনূসকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন

মোনায়েম সরকার
তর্কপ্রিয় বাঙালি এবং ড. ইউনূসকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আবার আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তিনি নিজেও সম্ভবত এভাবে বিতর্কে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তবে আমি মনে করি, তিনি চট্টগ্রামের সওদাগর বা ব্যবসায়ী পিতার সন্তান হিসেবে চূড়ান্ত সাফল্য দেখিয়েছেন ‘দারিদ্র্য-বাণিজ্যে’। তিনি দেশের গরিব মানুষদের নিয়ে কাজ করে, অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতি অর্জন করলেও এখন আর গরিবদের নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। তিনি এখন যেমন বিভিন্ন দেশের রাজা-রানি, সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, ফার্স্ট লেডির সঙ্গ পছন্দ করেন, তেমনি পছন্দ করেন ধনসম্পদ, প্রাচুর্য। তাঁর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ভালো। কেউ কেউ বলেছেন, আন্তর্জাতিক এলিটদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা বেশি। মানুষকে চেনা যায় তাঁর সঙ্গ ও সঙ্গীদের দিয়ে। ড. ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন পর্যায়ের কতজন মানুষের যোগাযোগ আছে? চট্টগ্রামের হাটহাজারীর যে জোবরা গ্রাম থেকে তাঁর উত্থানযাত্রা, সেই গ্রামের সঙ্গেও কি তাঁর আর কোনো যোগাযোগ আছে?

ড. ইউনূস দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে চেয়েছিলেন। দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু সেটা কতটা ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের কারণে আর কতটা সরকারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলের কারণে, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক করা যেতে পারে। তবে আমার আজকের বিষয় তাঁকে নিয়ে সম্প্রতি যেসব আলোচনা শুরু হয়েছে সেটা।

প্রথমেই উল্লেখ করা যাক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য দিয়ে। ওবায়দুল কাদের ৬ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে অশুভ শক্তি তৎপর। গতবার ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নিজেদের অশুভ তাণ্ডব চালিয়েছিল। এবারও তারা ড. ইউনূসকে ইস্যু করে মাঠে নামতে চায়। সেই খেলা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। ইউনূসকে নিয়ে তারা আবার সেই ওয়ান-ইলেভেনের মতো অস্বাভাবিক সরকারের খেলায় মেতে উঠতে চায়।’

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের বিষয়টা ব্যক্তিগত হিংসার কারণে। আরেকটা বিষয়, এই মুহূর্তে এটাকে এত দ্রুত বিচারে নিয়ে আসা, আমাদের প্রধান যে ইস্যু—সরকার পরিবর্তন করতে হবে, তাদের পদত্যাগ করতে হবে—সেটাকে ডাইভারশন করার জন্য এ ধরনের ইস্যু নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও প্রাধান্য পাচ্ছে।’

প্রধান দুই দলের দুই নেতার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে ড. ইউনূসকে নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই রাজনীতিতে ড. ইউনূসের কি কোনো ভূমিকা নেই?

এবারের আলোচনার সূত্রপাত একটি বিবৃতিকে কেন্দ্র করে। এই বিবৃতিরও মূল কারিগর ড. ইউনূসই বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা ১৬০ জনের একটি খোলাচিঠি গণমাধ্যমে খবর হওয়ায় শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে বাদ-প্রতিবাদ। ইউনূসের মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশকারী খোলাচিঠিদাতাদের মধ্যে ১০৪ জনই নোবেল বিজয়ী। এর মধ্যে ১৪ জন শান্তিতে, ২৮ জন রসায়নে, ২৯ জন চিকিৎসাশাস্ত্রে, ২২ জন পদার্থবিজ্ঞানে, চারজন সাহিত্যে এবং সাতজন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ আরও মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক কমান্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।

১৬০ ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহে এবং তাঁদের সবাইকে একটা চিঠির জন্য একত্রীকরণের কাজটি খুব সহজ ছিল বলে মনে হয় না। এমন একটা চিঠি বিশ্বে অবশ্যই রেকর্ড সৃষ্টিকারী। কিন্তু বড় প্রশ্ন জাগে, এর উদ্যোক্তা কে বা কারা? নিশ্চয়ই বিদেশি কেউ বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থা এবং মামলা নিয়ে নিজে থেকে এমন একটা বিষয়ে উদ্যোগ নেননি ড. ইউনূসের জন্য।

কোনো লবিস্ট ফার্ম এটা করে থাকতে পারে। সেখানেও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ড. ইউনূসের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলে এমনটা হওয়া অবশ্যই অস্বাভাবিক। ড. ইউনূসের নোবেল বিজয়ে হিলারির ভূমিকা ছিল মর্মে আমরা আগেও শুনেছি। হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটনের ফাউন্ডেশনে ইউনূসের বিরাট অঙ্কের অর্থদানের কথাও আগে শোনা গেছে। কার্যক্ষেত্রে বান কি মুনের সঙ্গেও ইউনূসের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। হিলারির সঙ্গে বারাক ওবামা এসে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কেননা, ওবামারই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি। আর ড. ইউনূসের পক্ষে অন্যান্য নোবেল বিজয়ীকে একত্র করাও সংগত কারণেই সম্ভব। অতএব, লবিস্ট দিয়েই হোক কিংবা নিজ উদ্যোগেই হোক, ড. ইউনূসই এমন একটা চিঠির সুচারু সম্পাদন করতে সফল হয়েছেন বলা যায়। আগের ৪০ জনের চিঠিরও একই সূত্রে এবং একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে বোঝা যায়। ব্যক্তি ইউনূস এতে সায় না দিলে কার এমন দায় পড়েছে বাংলাদেশের বিচারিক বিষয় নিয়ে এভাবে প্রধানমন্ত্রীকে খোলাচিঠি দেওয়ার? যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এ চিঠি প্রকাশ করা থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো কি সত্যি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাঁকে হয়রানি করার জন্য? 
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. বদিউর রহমানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, যত জনই বিবৃতি দেন, তাতে কিছুই হবে না। কারণ রাজস্ব বোর্ড আয়করের মামলা করার আগে সাত-পাঁচ অনেক ভাবে, আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে থাকে। ঘটনার পেছনে সারবস্তু না থাকলে রাজস্ব বোর্ড অবশ্যই এমন একজন বিশ্ববিখ্যাত এবং আমাদের গর্ব নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে মামলা করত না।

আইন নিজস্ব গতিতে চলবে, কোনো বিবৃতিতে মামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ওই মামলায় ড. ইউনূসকে কর পরিশোধ করতে হয়েছে, তিনি মামলায় জিততে পারেননি, রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে রায় হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে নির্ধারিত বয়সের বেশি বয়সেও অধিষ্ঠিত থাকা নিয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত লড়েছেন এবং শেষতক হেরেছেন।

এখন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে তাঁকে রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, ওয়াসার এমডি পদে একজনকে যদি বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, তাহলে ড. ইউনূসের বেলায় বয়স এত গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন? এটা কি বিদ্বেষের কারণেই নয়? 
এই বক্তব্য আসলে কুযুক্তিপূর্ণ। ওয়াসার এমডি আর ড. ইউনূস কি এক মাপের মানুষ? একটি অন্যায় হলে আরও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে হবে? 
নোবেল বিজয়ীরা একটি স্বাধীন দেশের আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে এভাবে বিবৃতি দিয়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কতটা ভালো করলেন, সে প্রশ্নও উঠতে পারে। তবে এ রকম বিবৃতিদানের মাধ্যমে সেই সব সম্মানিত নোবেল বিজয়ী নিজেদেরই হেয় করেছেন বলে মনে করা অসমীচীন নয়। তাঁরা বড়জোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি সাধারণ আহ্বান জানাতে পারতেন, যার গুরুত্ব এভাবে সরাসরি বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার থেকে অনেক বেশি হতো। কেননা, সে রকম একটি সাধারণ বিবৃতিতে সরকার বেশি সচেতন হতো এবং বিচারটি যাতে শতভাগ নিরপেক্ষ হয়, সেই চেষ্টা করত। এখন তো তাঁরা এভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁদের বিবৃতিতে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিচার বন্ধের উদ্যোগ নেবেন—তেমনটা আশা করা দুরূহ। কেননা, অতীতে এ রকম অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির সরাসরি টেলিফোনে সাড়া না দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকরের দৃষ্টান্ত তো নিকট অতীতেই আছে।

তা ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আইনগতভাবে কোনো বিচার বন্ধের উদ্যোগ নিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে বিচার যদি অব্যাহত থাকে এবং আদালতের রায়ে যদি সাজা হয়েই যায়, তখন নোবেল বিজয়ীদের অবস্থানটা কোথায় দাঁড়াবে?
আমার ধারণা, এতজন নোবেল বিজয়ী বিষয়টি পুরোপুরি জেনে এই বিবৃতি দেননি। ড. ইউনূসই তাঁদের প্রভাবিত করেছেন। এখন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এসব নোবেল বিজয়ীর কাছে সরাসরি চিঠি দিয়ে আসল বিষয়টি তুলে ধরা, যাতে তাঁরা নিজেদের ভুলটা বুঝতে পারেন।

ড. ইউনূসকে নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আছে। যেমন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাতের মনে প্রশ্ন: ড. ইউনূস কেন সাভার স্মৃতিসৌধে যান না; কেন তিনি শহীদ মিনারে যান না; কেন তাঁকে পহেলা বৈশাখ স্পর্শ করে না; কেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেন না; কেন তিনি ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে যান না; কেন তিনি ১৬ ডিসেম্বর এবং ৭ মার্চ ধারণ করেন না; ১৭ আগস্ট ২০০৫-এ জঙ্গিরা যখন সারা দেশে বোমাবাজি করল, কেন তিনি তখন কিছুই বললেন না; ২১ আগস্ট ২০০৪-এ যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো, তখনো তিনি কেন কিছুই বললেন না; কেন তিনি এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন না (তিনি তো শান্তিতে নোবেল পাওয়া বাঙালি মানুষ)। হতে পারে আমরা আবেগী-অতি আবেগী, আর তিনি.... আমি না, বুঝি না।’

আমারা বাঙালিরা তর্ক করতে পছন্দ করি। ড. ইউনূস পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি সাহায্য বন্ধের পক্ষে তদবির করেছিলেন বলে শোনা যায়। কিন্তু তাঁর পক্ষের লোকেরা বলেন, তিনি যে ওই কাজ করেছেন এর কোনো তথ্য-প্রমাণ আছে? এ ক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন করা যায় তিনি যে দেশকে ভালোবাসেন, তার কোনো তথ্য-প্রমাণ কি তাঁর ভক্তরা দিতে পারবেন? এই যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ হাবুডুবু খাচ্ছে, এর প্রতিকারে ড. ইউনূসের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যায় না কেন?  

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও মহাপরিচালক, বিএফডিআর 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত