Ajker Patrika

গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮: ৩৮
গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম একজন শিক্ষাবিদ, নগর বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং পরিবেশবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে ব্যাংককে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে শিক্ষকতা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি এবং নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হয়েছেন। নগর উন্নয়ন, বায়ুদূষণ এবং দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।

আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হয়েছেন। আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আপনার অনুভূতি কী?
নজরুল ইসলাম: ধন্যবাদ। অনুভূতিটা অবশ্যই আনন্দের। আমি খুবই খুশি হয়েছি। কারণ আমি সারা জীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। সরাসরি এখানে শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম ২০০৭ সাল পর্যন্ত।

আজকের পত্রিকা: পরিকল্পিত নগরায়ণ করার ক্ষেত্রে আমাদের কী কী করা উচিত?
নজরুল ইসলাম: এই প্রশ্নটায় একাধিক মাত্রা আছে। প্রথমত, সারা দেশের নগর ভাবনা। দ্বিতীয়ত, একটি নির্দিষ্ট শহরের পরিকল্পনা এবং তৃতীয়ত, শহরবিশেষের পরিকল্পনা। সেটা ঢাকা বা অন্য কোনো জেলা কিংবা উপজেলা শহর হতে পারে। এ রকম ভাবনা নিয়ে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি ও গ্রামপ্রধান দেশ। গত ৫২ বছরে গ্রামের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ৭০ বা ৫০ বছর আগে ৯০ শতাংশ লোক গ্রামে থাকত। এখন ৩৫ শতাংশ শহরে আর বাকি ৬৫ শতাংশ গ্রামে থাকে। এই যে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকাসহ আরও কিছু বড় শহরে, তা তো এক দিনে ঘটেনি।

আমাদের দেশে শহরের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫ লাখের বেশি লোক বাস করে। ১ কোটির বেশি হলে তাকে মেট্রোপলিটন শহর বলে। যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম। বড়, মাঝারি ও ছোট শহরের শ্রেণিক্রম অনুযায়ী পরিকল্পনাসহ রূপকল্প প্রণয়ন করতে হবে। আগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রূপকল্প করা হতো না। যেমন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আজি হতে শত বর্ষ পরে…’ কথাটি বলেছিলেন। শত বর্ষ পরে কী হবে? এখন রাজউক ঢাকার নগর পরিকল্পনা ২০ সাল মেয়াদি করে থাকে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে নগর পরিকল্পনা করতে হবে। আর রূপকল্পের সঙ্গে উন্নয়ন দর্শনও থাকতে হবে পরিকল্পনার মধ্যে।

পরিবেশসম্মত ও বৈষম্যহীন শহর গড়ে তুলতে হবে। আর দর্শনের ক্ষেত্রে মানবিক শহরের ধারণাটা মাথায় রাখতে হবে। যারা এখানে থাকবে, সবার জন্য যেন এটা বসবাসযোগ্য হয়ে ওঠে; যেখানে ধনী, গরিব, মধ্যবিত্তের বিভাজন থাকবে না। এর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাপনা যেমন—আবাসন, পরিবহন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও বিনোদনের ব্যবস্থা পরিকল্পনার মধ্যে রাখতে হবে। মূল কথা হলো, পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার জন্য দৃষ্টিভঙ্গি, আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় চিন্তাকাঠামোর ওপর জোর দিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: ঢাকাকে আমরা কীভাবে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত করতে পারি?
নজরুল ইসলাম: ঢাকার মূল সমস্যা বায়ুদূষণ। তবে এর সঙ্গে পানি, শব্দদূষণও আছে। এসব দূষণের মূল কারণ হচ্ছে শিল্পকারখানা। পোশাকশিল্পে বায়ুদূষণ সেভাবে হয় না। তবে এর ডাইংয়ের মাধ্যমে পানিদূষণ হয়। বায়ুদূষণটা হয় মূলত পরিবহনের মাধ্যমে। আর বেশি করে উচ্চবিত্ত সমাজের লোকেরা। আগে বেশির ভাগ গাড়ি চলত তেলে, পরে গ্যাসে চলা শুরু হলো। ভয়াবহ ব্যাপার হলো, অধিকাংশ প্রাইভেট গাড়িতে এসি থাকে। আর ভবনগুলোতেও এসি থাকে। এটাতে বেশি পরিবেশদূষণ হয়ে থাকে। এসির কারণে শহরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

গাছ কাটলেও বায়ুদূষণ ঘটে। শহরে যত গাছ থাকবে, তত ভালো। বাংলাদেশ আর্দ্রক্রান্তীয় জলবায়ু এলাকা। বৃষ্টিবহুল ও উচ্চ তাপমাত্রা এখানে বিরাজ করে। ফলে এখানে গাছপালা সহজে হয়, যেটা মরু এলাকায় হয় না। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা, তার চেয়ে তুলনামূলক কম আছে। কারণ পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, সে তুলনায় নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে না।

মূল কথা হলো, ঢাকা শহরের দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য পরিবহনের দূষণের মাত্রা কমাতে হবে। গাছপালা, বিশেষ করে বড় গাছ বেশি করে রাখতে হবে। শিল্পকারখানার দূষণ কমাতে হবে। ইটভাটার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দূষণের এসব সূত্র খেয়াল করা এবং এগুলো কীভাবে দূষণ করে, তা নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। এসব কাজ তদারকির দায়িত্ব মূলত রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের। এর বাইরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। সবাইকে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা উচিত।

আজকের পত্রিকা: স্বাধীনতার ৫২ বছরে শিক্ষার অনেক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষায় পিছিয়ে আছি। এটার জন্য কী করা উচিত?
নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশে শিক্ষায় ব্যাপক প্রসার হয়েছে। সংখ্যায় সেটা প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিস্তার ঘটেছে। দেশটা তো ছোট, কিন্তু বিশাল জনসংখ্যা। স্বাধীনতার সময় সাক্ষরতার হার ২০ শতাংশ আর এখন সেটা ৭০-৭৫ শতাংশ। হওয়া উচিত ছিল ১০০ শতাংশ, কিন্তু সামনের দিকে এগোচ্ছে। এর জন্য আরও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এর সঙ্গে শিক্ষক ও অবকাঠামো দরকার। কথা হলো, সংখ্যা বাড়লে গুণগত মান নিশ্চিত হবে না। কথাটি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই মান প্রতিষ্ঠার জন্য সময়, অর্থ ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা লাগবে। দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে গেলে মান ধরে রাখা যাবে কি না, সেটা গুরুতর প্রশ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী হয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ধরা যাক। এর বয়স তো ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। সবাই বলেন, এর পড়াশোনার মান কমেছে। আর এই কমা-বাড়ার হিসাবেও গরমিল আছে। একসময় এখানে সর্বোচ্চ ৫০০ জন শিক্ষক ছিলেন। এখন শিক্ষকের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই হাজার। প্রভাষক থেকে অধ্যাপক হওয়ার জন্য নির্ধারিত মান অর্জন করতে হয়। বর্তমানে একজনের পিএইচডি থাকলে ১২ বছরেই অধ্যাপক হয়ে যান। আগে অধ্যাপক হওয়ার জন্য ২৫ থেকে ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হতো। এখন কোয়ালিফাইড হলেই তিনি অধ্যাপক হয়ে যান। এখন এ রকম শিক্ষকের চাহিদা।

শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা পূরণ করতে হলে মান ধরে রাখা কঠিন। এর জন্য সময় একটা ব্যাপার। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়ভিত্তিক পরিকল্পনার বিষয়টি। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা দরকার। এর জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কিছু কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেসবে গুরুত্ব দেয়, কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করতে পারছে না। আবার কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিজ উদ্যোগে সেসব করছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং তারা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতিও পেয়েছে।

অনেকে বলেন এবং আমিও বলছি, সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষায় মান কমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমেছে না বেড়েছে, তার জন্য প্রতিটি বিষয় ধরে কথা বলতে হবে। গবেষণা, শিক্ষাদান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মান, প্রকাশনা—এসব ধরে ধরে মান যাচাই করে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। যদি বুয়েটের কথা ধরি, এটা অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান। তাদের গুণগত মান আছে কি না, তা কীভাবে নির্ধারিত হবে? আন্তর্জাতিকভাবে তাদের চাহিদা আছে কি না? এখনো ব্যাপক চাহিদা তাদের। এখানকার শিক্ষার্থীরা পাস করার পরেই চাকরি পেয়ে যায়। এমনকি উন্নত দেশে তাদের চাহিদা আছে। মান কমলে তো এ রকম হতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়েও অনেক সমস্যা আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কীভাবে অক্সফোর্ডের তুলনা হতে পারে? তাদের একটা বিভাগের যে বাজেট, সেটা আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সমান। আমাদের এখানকার শিক্ষকদের যে বেতন, তা দিয়ে সংসার খরচের পর একটি বিদেশি প্রকাশনার বই কেনা সম্ভব হয় না। তাই উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হয়, আমাদের এখানে ব্যয় করা হয় মাত্র ২ শতাংশের নিচে। তাহলে কীভাবে শিক্ষার উন্নতি হবে?

আজকের পত্রিকা: সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ কমেছে। মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী করণীয়?
নজরুল ইসলাম: গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রকৃত স্বাধীনতা পাওয়ার জন্যই তো মুক্তিযুদ্ধ করেছি। গণতন্ত্র ছিল না। পশ্চিম ও পূর্বের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল। ওরা খাবে আমরা খাব না, তা তো হবে না—এই কথা বঙ্গবন্ধুর ছিল। তার মানে, বৈষম্যহীন অর্থনীতি হবে। সেটার জন্য স্বপ্ন দেখানো হলো সমাজতান্ত্রিক দেশ হবে। ওই চিন্তায় ফিরে যেতে পারলে ভালো। আগে ছিল সামন্ততান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী। এখন তো পুরোপুরি পুঁজিতান্ত্রিক। পুঁজিপতিদের হাতেই দেশের নিয়ন্ত্রণ। আগে তারা অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ করত আর এখন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণও করে। তারা সংসদে গিয়ে মন্ত্রী হয়।

এখন অর্থনৈতিক বৈষম্যহীনতা বা সাম্যের চিন্তা—এই মূল্যবোধটা আনতে হবে আগে। আর একটা হলো, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। এখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা যেভাবে থাকার কথা, সেটা নেই বলে অনেকে মনে করছেন।

একাত্তরের পর থেকেই জাতি ভীষণভাবে বিভাজিত। যেমন—ধর্মীয়ভাবে বিভাজন বেড়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তো একটা নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এটাতে কী হবে আমি জানি না। কিন্তু সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আবার মডেল মসজিদ করা হচ্ছে। কথা হলো, মডেলের মানেটা কী? এখানে তারা কি উদার, না গোঁড়া হবে?

সারা দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সংকটের মধ্যে আছে। শুধু নির্বাচন নিয়ে কথা বললে হবে না।এখানে আবার নানা ধরনের স্বার্থ আছে। একদল লোক শুধু চিৎকার করছে। বিদেশে তাদের নেটওয়ার্ক আছে। তাই দেশের জন্য চিন্তা করতে হলে এসব নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, ধর্মীয় ও দলগতভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ, সহনশীল এবং একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত