অরুণ কর্মকার

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না। তা সরকারের পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন যে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমানো হবে।
শঙ্কার কারণ কী
আমাদের গ্যাসসংকট অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায়ও কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকলে সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পায়। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি তখন সহনীয় ছিল।
তবে এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে কমতে এখন তা দৈনিক ২১৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
গ্যাসের ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়) যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে। মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটির মাধ্যমে দৈনিক সর্বোচ্চ মোট এক হাজার মিলিয়ন (১০০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব।
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এই এলএনজির দামও বাড়তে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরেও সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায় এবং গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত রাখা যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৬০ ডলারের ওপরে। ফলে সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার।
এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩০০ কোটির মতো। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২১০ কোটি ঘনফুটের মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে। বিশ্ববাজারে দাম এখন যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করতে পারব না। কারণ আমাদের দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট।
অবশ্য এই ১০০ কোটি ঘনফুট নিয়মিত আমদানি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও ডলারের প্রাপ্যতার প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলেও পরবর্তী ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তা ৮টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য আরও এফএসআরইউ এবং স্থলভিত্তিক অবকাঠামো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। সুতরাং চলমান ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।
পাশাপাশি সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তারা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতেও বছর দুয়েক সময় লাগবে। এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১-৬২ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে এই ৬২ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়বে। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে। আমাদের ডলারসংকট কেটে যাবে।এক্সিলারেট এনার্জিও এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়াবে। এই সব মিলে ২০২৫ সালে আমাদের মোট সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক প্রকৃত চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং তা পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এই চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
জ্বালানি তেলের বিষয়টি অবশ্য আলাদা। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহ-সংকট—এর কোনোটাই বলা ঠিক নয়। এটি আসলে কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে একযোগে চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রায় একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্য এবং ডলারসংকটের কারণে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা না কাটলে জ্বালানি তেল আমদানিও স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। একই কথা প্রযোজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির ক্ষেত্রেও। মনে রাখা দরকার, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। রপ্তানি বিঘ্নিত হবে।
দামের প্রসঙ্গ
বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমছে। সে কারণে দেশেও দাম কমানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমানোর বিষয়ে সরকারি বক্তব্যে কিছুটা সংশোধন বা পরিবর্তন লক্ষ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বীর বিক্রম সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমা স্থিতিশীল হলে দেশে কমানো হবে। এই স্থিতিশীলতার মাপকাঠি কী, তা অবশ্য আমাদের কারও জানা নেই। তবে আমরা এটা জানি যে জ্বালানির দাম শিগিগরই কমানো হবে না।
আমাদের মনে আছে, গত বছর আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী, তখন সরকার তড়িঘড়ি করে দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই বৃদ্ধি ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব রেকর্ড করা। ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের মতো একটি অত্যাবশ্যকীয় ও কৌশলগত পণ্যের (স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি) দাম একবারে এতটা বৃদ্ধির নজির কোথাও নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও তখন বলা হয়েছিল, জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা সরকারের ভাবনায় আছে।
বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও সরকার তখন দাম বাড়িয়েছিল, কারণ সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের আর্থিক হিসাব (যা ডলারসংকটের কারণে সৃষ্ট) এবং চলতি ব্যয় নির্বাহ (যার কারণ আয়ের তুলনায় বেশি সরকারি ব্যয়) দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল; অর্থাৎ সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। এই দুই হিসাবেই ঘাটতি এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বরং বেড়েছে। কাজেই মুখে যা-ই বলা হোক জ্বালানির দাম শিগগিরই কমানো হচ্ছে না।
ওই পরিস্থিতিতে সরকার ‘বাজেটারি সাপোর্ট’ হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। ওই ঋণের বহু শর্তের মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে—ভর্তুকি বন্ধ করা ও সরকারের ব্যয় কমানো। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়ে সরকার এই খাতের ভর্তুকি কার্যত তুলে দিয়েছে। উপরন্তু তেল বিপণনকে লাভজনক করে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যায়, বিপিসির তত বেশি লাভ হয়। সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হয়। এ রকম একটি স্বস্তিকর অবস্থান সরকার কেন বদলাবে? বিশেষ করে যখন সরকারের আর্থিক সংকট প্রকটতর হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না। তা সরকারের পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন যে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমানো হবে।
শঙ্কার কারণ কী
আমাদের গ্যাসসংকট অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায়ও কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকলে সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পায়। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি তখন সহনীয় ছিল।
তবে এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে কমতে এখন তা দৈনিক ২১৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
গ্যাসের ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়) যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে। মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটির মাধ্যমে দৈনিক সর্বোচ্চ মোট এক হাজার মিলিয়ন (১০০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব।
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এই এলএনজির দামও বাড়তে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরেও সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায় এবং গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত রাখা যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৬০ ডলারের ওপরে। ফলে সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার।
এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩০০ কোটির মতো। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২১০ কোটি ঘনফুটের মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে। বিশ্ববাজারে দাম এখন যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করতে পারব না। কারণ আমাদের দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট।
অবশ্য এই ১০০ কোটি ঘনফুট নিয়মিত আমদানি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও ডলারের প্রাপ্যতার প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলেও পরবর্তী ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তা ৮টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য আরও এফএসআরইউ এবং স্থলভিত্তিক অবকাঠামো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। সুতরাং চলমান ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।
পাশাপাশি সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তারা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতেও বছর দুয়েক সময় লাগবে। এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১-৬২ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে এই ৬২ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়বে। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে। আমাদের ডলারসংকট কেটে যাবে।এক্সিলারেট এনার্জিও এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়াবে। এই সব মিলে ২০২৫ সালে আমাদের মোট সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক প্রকৃত চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং তা পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এই চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
জ্বালানি তেলের বিষয়টি অবশ্য আলাদা। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহ-সংকট—এর কোনোটাই বলা ঠিক নয়। এটি আসলে কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে একযোগে চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রায় একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্য এবং ডলারসংকটের কারণে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা না কাটলে জ্বালানি তেল আমদানিও স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। একই কথা প্রযোজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির ক্ষেত্রেও। মনে রাখা দরকার, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। রপ্তানি বিঘ্নিত হবে।
দামের প্রসঙ্গ
বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমছে। সে কারণে দেশেও দাম কমানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমানোর বিষয়ে সরকারি বক্তব্যে কিছুটা সংশোধন বা পরিবর্তন লক্ষ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বীর বিক্রম সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমা স্থিতিশীল হলে দেশে কমানো হবে। এই স্থিতিশীলতার মাপকাঠি কী, তা অবশ্য আমাদের কারও জানা নেই। তবে আমরা এটা জানি যে জ্বালানির দাম শিগিগরই কমানো হবে না।
আমাদের মনে আছে, গত বছর আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী, তখন সরকার তড়িঘড়ি করে দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই বৃদ্ধি ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব রেকর্ড করা। ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের মতো একটি অত্যাবশ্যকীয় ও কৌশলগত পণ্যের (স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি) দাম একবারে এতটা বৃদ্ধির নজির কোথাও নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও তখন বলা হয়েছিল, জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা সরকারের ভাবনায় আছে।
বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও সরকার তখন দাম বাড়িয়েছিল, কারণ সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের আর্থিক হিসাব (যা ডলারসংকটের কারণে সৃষ্ট) এবং চলতি ব্যয় নির্বাহ (যার কারণ আয়ের তুলনায় বেশি সরকারি ব্যয়) দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল; অর্থাৎ সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। এই দুই হিসাবেই ঘাটতি এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বরং বেড়েছে। কাজেই মুখে যা-ই বলা হোক জ্বালানির দাম শিগগিরই কমানো হচ্ছে না।
ওই পরিস্থিতিতে সরকার ‘বাজেটারি সাপোর্ট’ হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। ওই ঋণের বহু শর্তের মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে—ভর্তুকি বন্ধ করা ও সরকারের ব্যয় কমানো। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়ে সরকার এই খাতের ভর্তুকি কার্যত তুলে দিয়েছে। উপরন্তু তেল বিপণনকে লাভজনক করে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যায়, বিপিসির তত বেশি লাভ হয়। সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হয়। এ রকম একটি স্বস্তিকর অবস্থান সরকার কেন বদলাবে? বিশেষ করে যখন সরকারের আর্থিক সংকট প্রকটতর হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না। তা সরকারের পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন যে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমানো হবে।
শঙ্কার কারণ কী
আমাদের গ্যাসসংকট অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায়ও কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকলে সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পায়। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি তখন সহনীয় ছিল।
তবে এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে কমতে এখন তা দৈনিক ২১৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
গ্যাসের ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়) যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে। মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটির মাধ্যমে দৈনিক সর্বোচ্চ মোট এক হাজার মিলিয়ন (১০০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব।
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এই এলএনজির দামও বাড়তে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরেও সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায় এবং গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত রাখা যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৬০ ডলারের ওপরে। ফলে সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার।
এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩০০ কোটির মতো। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২১০ কোটি ঘনফুটের মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে। বিশ্ববাজারে দাম এখন যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করতে পারব না। কারণ আমাদের দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট।
অবশ্য এই ১০০ কোটি ঘনফুট নিয়মিত আমদানি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও ডলারের প্রাপ্যতার প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলেও পরবর্তী ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তা ৮টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য আরও এফএসআরইউ এবং স্থলভিত্তিক অবকাঠামো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। সুতরাং চলমান ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।
পাশাপাশি সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তারা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতেও বছর দুয়েক সময় লাগবে। এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১-৬২ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে এই ৬২ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়বে। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে। আমাদের ডলারসংকট কেটে যাবে।এক্সিলারেট এনার্জিও এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়াবে। এই সব মিলে ২০২৫ সালে আমাদের মোট সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক প্রকৃত চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং তা পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এই চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
জ্বালানি তেলের বিষয়টি অবশ্য আলাদা। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহ-সংকট—এর কোনোটাই বলা ঠিক নয়। এটি আসলে কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে একযোগে চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রায় একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্য এবং ডলারসংকটের কারণে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা না কাটলে জ্বালানি তেল আমদানিও স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। একই কথা প্রযোজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির ক্ষেত্রেও। মনে রাখা দরকার, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। রপ্তানি বিঘ্নিত হবে।
দামের প্রসঙ্গ
বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমছে। সে কারণে দেশেও দাম কমানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমানোর বিষয়ে সরকারি বক্তব্যে কিছুটা সংশোধন বা পরিবর্তন লক্ষ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বীর বিক্রম সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমা স্থিতিশীল হলে দেশে কমানো হবে। এই স্থিতিশীলতার মাপকাঠি কী, তা অবশ্য আমাদের কারও জানা নেই। তবে আমরা এটা জানি যে জ্বালানির দাম শিগিগরই কমানো হবে না।
আমাদের মনে আছে, গত বছর আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী, তখন সরকার তড়িঘড়ি করে দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই বৃদ্ধি ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব রেকর্ড করা। ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের মতো একটি অত্যাবশ্যকীয় ও কৌশলগত পণ্যের (স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি) দাম একবারে এতটা বৃদ্ধির নজির কোথাও নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও তখন বলা হয়েছিল, জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা সরকারের ভাবনায় আছে।
বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও সরকার তখন দাম বাড়িয়েছিল, কারণ সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের আর্থিক হিসাব (যা ডলারসংকটের কারণে সৃষ্ট) এবং চলতি ব্যয় নির্বাহ (যার কারণ আয়ের তুলনায় বেশি সরকারি ব্যয়) দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল; অর্থাৎ সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। এই দুই হিসাবেই ঘাটতি এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বরং বেড়েছে। কাজেই মুখে যা-ই বলা হোক জ্বালানির দাম শিগগিরই কমানো হচ্ছে না।
ওই পরিস্থিতিতে সরকার ‘বাজেটারি সাপোর্ট’ হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। ওই ঋণের বহু শর্তের মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে—ভর্তুকি বন্ধ করা ও সরকারের ব্যয় কমানো। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়ে সরকার এই খাতের ভর্তুকি কার্যত তুলে দিয়েছে। উপরন্তু তেল বিপণনকে লাভজনক করে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যায়, বিপিসির তত বেশি লাভ হয়। সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হয়। এ রকম একটি স্বস্তিকর অবস্থান সরকার কেন বদলাবে? বিশেষ করে যখন সরকারের আর্থিক সংকট প্রকটতর হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না। তা সরকারের পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন যে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমানো হবে।
শঙ্কার কারণ কী
আমাদের গ্যাসসংকট অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায়ও কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকলে সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পায়। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি তখন সহনীয় ছিল।
তবে এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে কমতে এখন তা দৈনিক ২১৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
গ্যাসের ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়) যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে। মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটির মাধ্যমে দৈনিক সর্বোচ্চ মোট এক হাজার মিলিয়ন (১০০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব।
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এই এলএনজির দামও বাড়তে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরেও সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায় এবং গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত রাখা যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৬০ ডলারের ওপরে। ফলে সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার।
এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩০০ কোটির মতো। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২১০ কোটি ঘনফুটের মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে। বিশ্ববাজারে দাম এখন যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করতে পারব না। কারণ আমাদের দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট।
অবশ্য এই ১০০ কোটি ঘনফুট নিয়মিত আমদানি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও ডলারের প্রাপ্যতার প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলেও পরবর্তী ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তা ৮টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য আরও এফএসআরইউ এবং স্থলভিত্তিক অবকাঠামো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। সুতরাং চলমান ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।
পাশাপাশি সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তারা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতেও বছর দুয়েক সময় লাগবে। এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১-৬২ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে এই ৬২ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়বে। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে। আমাদের ডলারসংকট কেটে যাবে।এক্সিলারেট এনার্জিও এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়াবে। এই সব মিলে ২০২৫ সালে আমাদের মোট সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক প্রকৃত চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং তা পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এই চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
জ্বালানি তেলের বিষয়টি অবশ্য আলাদা। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহ-সংকট—এর কোনোটাই বলা ঠিক নয়। এটি আসলে কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে একযোগে চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রায় একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্য এবং ডলারসংকটের কারণে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা না কাটলে জ্বালানি তেল আমদানিও স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। একই কথা প্রযোজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির ক্ষেত্রেও। মনে রাখা দরকার, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। রপ্তানি বিঘ্নিত হবে।
দামের প্রসঙ্গ
বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমছে। সে কারণে দেশেও দাম কমানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমানোর বিষয়ে সরকারি বক্তব্যে কিছুটা সংশোধন বা পরিবর্তন লক্ষ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বীর বিক্রম সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমা স্থিতিশীল হলে দেশে কমানো হবে। এই স্থিতিশীলতার মাপকাঠি কী, তা অবশ্য আমাদের কারও জানা নেই। তবে আমরা এটা জানি যে জ্বালানির দাম শিগিগরই কমানো হবে না।
আমাদের মনে আছে, গত বছর আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী, তখন সরকার তড়িঘড়ি করে দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই বৃদ্ধি ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব রেকর্ড করা। ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের মতো একটি অত্যাবশ্যকীয় ও কৌশলগত পণ্যের (স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি) দাম একবারে এতটা বৃদ্ধির নজির কোথাও নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও তখন বলা হয়েছিল, জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা সরকারের ভাবনায় আছে।
বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও সরকার তখন দাম বাড়িয়েছিল, কারণ সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের আর্থিক হিসাব (যা ডলারসংকটের কারণে সৃষ্ট) এবং চলতি ব্যয় নির্বাহ (যার কারণ আয়ের তুলনায় বেশি সরকারি ব্যয়) দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল; অর্থাৎ সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। এই দুই হিসাবেই ঘাটতি এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বরং বেড়েছে। কাজেই মুখে যা-ই বলা হোক জ্বালানির দাম শিগগিরই কমানো হচ্ছে না।
ওই পরিস্থিতিতে সরকার ‘বাজেটারি সাপোর্ট’ হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। ওই ঋণের বহু শর্তের মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে—ভর্তুকি বন্ধ করা ও সরকারের ব্যয় কমানো। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়ে সরকার এই খাতের ভর্তুকি কার্যত তুলে দিয়েছে। উপরন্তু তেল বিপণনকে লাভজনক করে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যায়, বিপিসির তত বেশি লাভ হয়। সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হয়। এ রকম একটি স্বস্তিকর অবস্থান সরকার কেন বদলাবে? বিশেষ করে যখন সরকারের আর্থিক সংকট প্রকটতর হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না।
২৪ জুন ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না।
২৪ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না।
২৪ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দেশের চলমান জ্বালানি ঘাটতি শিগগিরই না মিটে, বরং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে–এ বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। একই সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং হবে, কখনোই ততটা কমানো হবে না।
২৪ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫