জাহাঙ্গীর আলম

সি–সেকশন বা সিজারিয়ান অপারেশনসহ স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় নানা উন্নতির ধারাবাহিকতায় গাইনিবিদ্যা আজ যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে পৃথিবীব্যাপী বহু মায়ের জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে শুধু ব্যবসায়িক লাভের জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেলেও এই অস্ত্রোপচার কৌশলটি কিন্তু চিকিৎসাবিদ্যায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। গর্ভজনিত জটিলতায় মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে এই অস্ত্রোপচারের বিকল্প নেই।
কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন ও উন্নয়নের পেছনে যে তিনজন নারী অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছেন সেটি অনেকেরই অজানা। আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
অ্যানার্কা ওয়েস্টকোট, বেটসি এবং লুসি—এই তিন নিগ্রো নারী ছিলেন ক্রীতদাস। ১৮৪০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টগোমেরির কাছে বিভিন্ন কৃষি খামারে কাজ করতেন তাঁরা। সন্তান প্রসব পরবর্তী জটিলতায় তাঁরা মূত্রাশয় এবং অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই অবস্থায় অন্য ক্রীতদাসীদের থেকে তাঁদের আলাদা করে রাখা হয়। কোনো চিকিৎসা না থাকায় তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সারা জীবন এই যন্ত্রণা এবং লজ্জা বয়ে বেড়াতে হবে।
অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে নিয়ে হতাশ ছিলেন তাঁদের শ্বেতাঙ্গ মালিক। কারণ তাঁদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করানো যাচ্ছিল না, এতে উপার্জন কমে যাচ্ছিল। তাই একটা প্রতিকার খুঁজছিলেন মালিক। ১৮৪৪ সালে তিন ক্রীতদাসীকে চিকিৎসক জে. মেরিয়ন সিমসের কাছে পাঠানো হয়।
১৮০০–এর দশকে অন্য অনেক চিকিৎসকের মতো মেরিয়ন সিমস চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খুব আগ্রহী ছিলেন। তিনি দন্ত্যচিকিৎসা থেকে শুরু করে শিশুরোগ ও সাধারণ অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চর্চাই করতেন। ১৮৩৫ সালে দুইজন রোগী মারা যাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনা থেকে অ্যালাবামায় চলে আসেন। অবশেষে মন্টগোমারি কাউন্টিতে বসতি স্থাপন করেন। সেখানেই অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির মালিকের নজরে পড়েন।
সিমস ওই সময় অস্ত্রোপচারের একটি নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ছয় মাসের মধ্যে অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন। নতুন আবিষ্কৃত অস্ত্রোপচার কৌশলটি পরীক্ষা করার জন্য তিনি ওই তিন ক্রীতদাসীকে ভাড়া নেন। মালিককে টাকা দিয়ে ইজারা নেওয়ার কারণে তিন নারীর শরীরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পান তিনি। আর ওই সময়ের চর্চা অনুযায়ী এটা বলাবাহুল্য যে, এর জন্য তিন নারীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করা হয়নি।
সিমসের অপারেশন টেবিলে যাওয়া প্রথম নারী ছিলেন লুসি। অপারেশনের কক্ষটিতে ছিল তখনকার উদীয়মান চিকিৎসকদের ভিড়। তাঁরা পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে চেয়েছিলেন। লুসিকে একবারও জিজ্ঞেস করা হয়নি এতগুলো পুরুষের চোখের সামনে অপারেশনের টেবিলে শুতে তিনি অস্বস্তিবোধ করছেন কি না। লুসিকে নগ্ন অবস্থায় অপারেশন কক্ষে আনা হয়। এরপর টেবিলের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয় যাতে অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়ার কারণে কাজ ব্যাহত না হয়। অস্ত্রোপচারের আগে লুসিকে কোনো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি। কারণ তখন শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের ধারণা ছিল, কালো মেয়েরা ব্যথা অনুভব করে না, বা তাদের অনুভূতিগুলো ঠিক শ্বেতাঙ্গদের মতো কাজ করে না!
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী লুসির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই পুরোটা সময় তিনি সচেতন ছিলেন। ছুরি কাঁচির প্রতিটি আঘাত চোখ বন্ধ করে সহ্য করেন।
অস্ত্রোপচারের পরে লুসির মূত্রাশয়ে একটি বিশেষ ডিভাইস স্থান করেন সিমস। সেখান থেকে ভয়ানক সংক্রমণ হয়। চরম যন্ত্রণার দিনগুলো লুসির কীভাবে কেটেছে তা বর্ণনা করার মতো নয়! ডাক্তার সিমস অবশ্য শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু লুসির মূত্রাশয় সারানোর অপারেশনটি ব্যর্থ হয়েছে।
বেটসি ছিলেন সিমসের ছুরি কাঁচির নিচে পড়া দ্বিতীয় নারী। লুসির মতো, বেটসিকেও অনেকগুলো পুরুষের সামনে অপারেশন টেবিলে নগ্ন করে শোয়ানো হয়। কোনও অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি। সিমস মূত্রাশয়ের জন্য উদ্ভাবিত একটি যন্ত্র সেখানে স্থাপন করেন। বেটসি অবশ্য লুসির মতো অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণের সমস্যায় পড়েননি। কিন্তু বেটসির ক্ষত সারানো যায়নি। এই অপারেশনটিও ব্যর্থ হয়।
সবশেষে অস্ত্রোপচার কক্ষে আনা হয় অ্যানার্কা ওয়েস্টকোটকে। অ্যানার্কা তখন সবে কিশোরী। এর মধ্যে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এমন সময়ে তাঁকে সন্তানের কাছ থেকে আলাদা করে ডাক্তার সিমসের অস্ত্রোপচার কক্ষে পাঠানো হয়। কোনো ধরনের অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই তাঁকে লুসি ও বেটসির মতো একই অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
তবে যখন অ্যানার্কার ওপর করা অস্ত্রোপচারের ফলাফল ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়ে যায়, তখন স্থানীয় চিকিৎসকেরা বলেন, সিমস ব্যর্থ হয়েছেন। সিমসের পরীক্ষাগুলোকেও তাঁরা সমর্থন করা বন্ধ করে দেন। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি সিমসের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যান। কারণ তাঁদের রোগ সারেনি, ফলে মালিকের কাছে তাঁরা তখনো অকেজো। তাঁরা বাধ্য হয়েই সিমসের পরিবারের জন্য কাজ করেন।
সিমস তখন তাঁর শ্বেতাঙ্গ পুরুষ সহকারীদের বাদ দিলেও পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে যান। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে আগেই সহকারীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। অপারেশনের আগে ও পরে কীভাবে যত্ন নিতে হয় তা তাঁদের শিখিয়ে দেন। অবশ্য সিমসকে সহযোগিতা করা ছাড়া তিন নারীর কাছে কোনো বিকল্পও ছিল না। ধীরে ধীরে তাঁরা দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ওঠেন।
এর পরের পাঁচ বছর অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির ওপর ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যান ডাক্তার সিমস। পরীক্ষার জন্য আরও ক্রীতদাস নারীদেরও ভাড়ায় আনেন। ক্রীতদাস নারীরা গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিচর্যা পান না, ফলে নানা জটিলতায় ভোগেন তাঁরা। সে কারণে সিমসেরও রোগীর অভাব হয়নি। সিমস মোট ১২ জন ক্রীতদাসীর ওপর তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি পরীক্ষা করেন। তবে তাঁর প্রকাশিত প্রতিবেদনে শুধু অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির নাম রয়েছে।
১৮৪৯ সালের গ্রীষ্মে অ্যানার্কার ওপর ৩০ তম অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন সিমস। গত চার বছরে যেসব নতুন সরঞ্জাম এবং কৌশল উদ্ভাবন করেছেন সেগুলো এবার প্রয়োগ করেন। অস্ত্রোপচার সফল হলো। অ্যানার্কার জখম সেরে গেল, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন। নিজের উদ্ভাবিত কৌশল নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার পর সিমস তাঁর হাসপাতালটি বন্ধ করে উত্তরের দিকে চলে যান। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধারাবাহিক যন্ত্রণা সহ্য করার পর আবার ফিরে যান মূল মালিকের কাছে।
ডাক্তার সিমস তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’–এ স্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন কীভাবে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
সিমস লিখেছেন, ‘আমি নিগ্রোদের মালিকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম: আপনি যদি আমাকে অ্যানার্কা এবং বেটসিকে দেন, আমি তাদের জীবন বিপন্ন করে এমন কোনো পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচার করব না। এর জন্য একটি পয়সাও চার্জ করব না। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই তাঁদের বিপরীতে ট্যাক্স এবং পোশাক–আশাক দিতে হবে।’ সিমস তাঁর স্মৃতিকথায় বড়াই করেছে লিখেছেন, ‘আমার রোগীরা তাদের জন্য আমি যা করছি তাতে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিল।’
১৮৫২ সালে সিমস একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতির রূপরেখা দেন। তবে সেখানে কখনোই উল্লেখ করেননি যেসব নারীর ওপর অস্ত্রোপচার চালিয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন ক্রীতদাসী, বা টাকার বিনিময়ে তাঁদের শরীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তিনি নিয়েছিলেন। নিবন্ধে যেসব ছবি রয়েছে, সেখানে তাঁকে একজন শ্বেতাঙ্গ নার্সের সাহায্যে শ্বেতাঙ্গ নারীর অস্ত্রোপচার করতে দেখা যায়। রোগীকেও কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করা। রোগীর সম্মানের চিহ্ন সেখানে স্পষ্ট। অথচ অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি কখনো ন্যূনতম সম্মান পাননি। বহু পুরুষের সামনে নগ্ন করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সিমস পরে নারীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল করেন। সেখানে শ্বেতাঙ্গ নারীদের অস্ত্রোপচার করা হতো যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে এবং অবশ্যই অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হতো।
ডাক্তার সিমসের কাজ এবং নিবন্ধ স্ত্রীরোগের অস্ত্রোপচারে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই অবদানের জন্য তাঁকে ‘আধুনিক স্ত্রীরোগবিদ্যার জনক’ বলা হয়। কিন্তু এই অগ্রগতিগুলোর পেছনে যে ক্রীতদাস নারীদের দীর্ঘ যন্ত্রণা এবং শোষণের ইতিহাস আছে, তা ভুলে গেলে অন্যায় হবে। অ্যানার্কা, বেটসি, লুসিসহ ডাক্তার মেরিয়ন সিমসের আরও নাম না জানা কৃষ্ণাঙ্গ রোগীরা ‘আধুনিক স্ত্রীরোগবিদ্যার মা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের শ্রম এবং অমানবিক যন্ত্রণা ছাড়া সিমসের এই ‘অর্জন’ সম্ভব হতো না।

সি–সেকশন বা সিজারিয়ান অপারেশনসহ স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় নানা উন্নতির ধারাবাহিকতায় গাইনিবিদ্যা আজ যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে পৃথিবীব্যাপী বহু মায়ের জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে শুধু ব্যবসায়িক লাভের জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেলেও এই অস্ত্রোপচার কৌশলটি কিন্তু চিকিৎসাবিদ্যায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। গর্ভজনিত জটিলতায় মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে এই অস্ত্রোপচারের বিকল্প নেই।
কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন ও উন্নয়নের পেছনে যে তিনজন নারী অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছেন সেটি অনেকেরই অজানা। আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
অ্যানার্কা ওয়েস্টকোট, বেটসি এবং লুসি—এই তিন নিগ্রো নারী ছিলেন ক্রীতদাস। ১৮৪০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টগোমেরির কাছে বিভিন্ন কৃষি খামারে কাজ করতেন তাঁরা। সন্তান প্রসব পরবর্তী জটিলতায় তাঁরা মূত্রাশয় এবং অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই অবস্থায় অন্য ক্রীতদাসীদের থেকে তাঁদের আলাদা করে রাখা হয়। কোনো চিকিৎসা না থাকায় তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সারা জীবন এই যন্ত্রণা এবং লজ্জা বয়ে বেড়াতে হবে।
অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে নিয়ে হতাশ ছিলেন তাঁদের শ্বেতাঙ্গ মালিক। কারণ তাঁদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করানো যাচ্ছিল না, এতে উপার্জন কমে যাচ্ছিল। তাই একটা প্রতিকার খুঁজছিলেন মালিক। ১৮৪৪ সালে তিন ক্রীতদাসীকে চিকিৎসক জে. মেরিয়ন সিমসের কাছে পাঠানো হয়।
১৮০০–এর দশকে অন্য অনেক চিকিৎসকের মতো মেরিয়ন সিমস চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খুব আগ্রহী ছিলেন। তিনি দন্ত্যচিকিৎসা থেকে শুরু করে শিশুরোগ ও সাধারণ অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চর্চাই করতেন। ১৮৩৫ সালে দুইজন রোগী মারা যাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনা থেকে অ্যালাবামায় চলে আসেন। অবশেষে মন্টগোমারি কাউন্টিতে বসতি স্থাপন করেন। সেখানেই অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির মালিকের নজরে পড়েন।
সিমস ওই সময় অস্ত্রোপচারের একটি নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ছয় মাসের মধ্যে অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন। নতুন আবিষ্কৃত অস্ত্রোপচার কৌশলটি পরীক্ষা করার জন্য তিনি ওই তিন ক্রীতদাসীকে ভাড়া নেন। মালিককে টাকা দিয়ে ইজারা নেওয়ার কারণে তিন নারীর শরীরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পান তিনি। আর ওই সময়ের চর্চা অনুযায়ী এটা বলাবাহুল্য যে, এর জন্য তিন নারীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করা হয়নি।
সিমসের অপারেশন টেবিলে যাওয়া প্রথম নারী ছিলেন লুসি। অপারেশনের কক্ষটিতে ছিল তখনকার উদীয়মান চিকিৎসকদের ভিড়। তাঁরা পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে চেয়েছিলেন। লুসিকে একবারও জিজ্ঞেস করা হয়নি এতগুলো পুরুষের চোখের সামনে অপারেশনের টেবিলে শুতে তিনি অস্বস্তিবোধ করছেন কি না। লুসিকে নগ্ন অবস্থায় অপারেশন কক্ষে আনা হয়। এরপর টেবিলের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয় যাতে অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়ার কারণে কাজ ব্যাহত না হয়। অস্ত্রোপচারের আগে লুসিকে কোনো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি। কারণ তখন শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের ধারণা ছিল, কালো মেয়েরা ব্যথা অনুভব করে না, বা তাদের অনুভূতিগুলো ঠিক শ্বেতাঙ্গদের মতো কাজ করে না!
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী লুসির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই পুরোটা সময় তিনি সচেতন ছিলেন। ছুরি কাঁচির প্রতিটি আঘাত চোখ বন্ধ করে সহ্য করেন।
অস্ত্রোপচারের পরে লুসির মূত্রাশয়ে একটি বিশেষ ডিভাইস স্থান করেন সিমস। সেখান থেকে ভয়ানক সংক্রমণ হয়। চরম যন্ত্রণার দিনগুলো লুসির কীভাবে কেটেছে তা বর্ণনা করার মতো নয়! ডাক্তার সিমস অবশ্য শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু লুসির মূত্রাশয় সারানোর অপারেশনটি ব্যর্থ হয়েছে।
বেটসি ছিলেন সিমসের ছুরি কাঁচির নিচে পড়া দ্বিতীয় নারী। লুসির মতো, বেটসিকেও অনেকগুলো পুরুষের সামনে অপারেশন টেবিলে নগ্ন করে শোয়ানো হয়। কোনও অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি। সিমস মূত্রাশয়ের জন্য উদ্ভাবিত একটি যন্ত্র সেখানে স্থাপন করেন। বেটসি অবশ্য লুসির মতো অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণের সমস্যায় পড়েননি। কিন্তু বেটসির ক্ষত সারানো যায়নি। এই অপারেশনটিও ব্যর্থ হয়।
সবশেষে অস্ত্রোপচার কক্ষে আনা হয় অ্যানার্কা ওয়েস্টকোটকে। অ্যানার্কা তখন সবে কিশোরী। এর মধ্যে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এমন সময়ে তাঁকে সন্তানের কাছ থেকে আলাদা করে ডাক্তার সিমসের অস্ত্রোপচার কক্ষে পাঠানো হয়। কোনো ধরনের অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই তাঁকে লুসি ও বেটসির মতো একই অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
তবে যখন অ্যানার্কার ওপর করা অস্ত্রোপচারের ফলাফল ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়ে যায়, তখন স্থানীয় চিকিৎসকেরা বলেন, সিমস ব্যর্থ হয়েছেন। সিমসের পরীক্ষাগুলোকেও তাঁরা সমর্থন করা বন্ধ করে দেন। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি সিমসের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যান। কারণ তাঁদের রোগ সারেনি, ফলে মালিকের কাছে তাঁরা তখনো অকেজো। তাঁরা বাধ্য হয়েই সিমসের পরিবারের জন্য কাজ করেন।
সিমস তখন তাঁর শ্বেতাঙ্গ পুরুষ সহকারীদের বাদ দিলেও পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে যান। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসিকে আগেই সহকারীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। অপারেশনের আগে ও পরে কীভাবে যত্ন নিতে হয় তা তাঁদের শিখিয়ে দেন। অবশ্য সিমসকে সহযোগিতা করা ছাড়া তিন নারীর কাছে কোনো বিকল্পও ছিল না। ধীরে ধীরে তাঁরা দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ওঠেন।
এর পরের পাঁচ বছর অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির ওপর ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যান ডাক্তার সিমস। পরীক্ষার জন্য আরও ক্রীতদাস নারীদেরও ভাড়ায় আনেন। ক্রীতদাস নারীরা গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিচর্যা পান না, ফলে নানা জটিলতায় ভোগেন তাঁরা। সে কারণে সিমসেরও রোগীর অভাব হয়নি। সিমস মোট ১২ জন ক্রীতদাসীর ওপর তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি পরীক্ষা করেন। তবে তাঁর প্রকাশিত প্রতিবেদনে শুধু অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসির নাম রয়েছে।
১৮৪৯ সালের গ্রীষ্মে অ্যানার্কার ওপর ৩০ তম অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন সিমস। গত চার বছরে যেসব নতুন সরঞ্জাম এবং কৌশল উদ্ভাবন করেছেন সেগুলো এবার প্রয়োগ করেন। অস্ত্রোপচার সফল হলো। অ্যানার্কার জখম সেরে গেল, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন। নিজের উদ্ভাবিত কৌশল নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার পর সিমস তাঁর হাসপাতালটি বন্ধ করে উত্তরের দিকে চলে যান। অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধারাবাহিক যন্ত্রণা সহ্য করার পর আবার ফিরে যান মূল মালিকের কাছে।
ডাক্তার সিমস তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’–এ স্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন কীভাবে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
সিমস লিখেছেন, ‘আমি নিগ্রোদের মালিকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম: আপনি যদি আমাকে অ্যানার্কা এবং বেটসিকে দেন, আমি তাদের জীবন বিপন্ন করে এমন কোনো পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচার করব না। এর জন্য একটি পয়সাও চার্জ করব না। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই তাঁদের বিপরীতে ট্যাক্স এবং পোশাক–আশাক দিতে হবে।’ সিমস তাঁর স্মৃতিকথায় বড়াই করেছে লিখেছেন, ‘আমার রোগীরা তাদের জন্য আমি যা করছি তাতে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিল।’
১৮৫২ সালে সিমস একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতির রূপরেখা দেন। তবে সেখানে কখনোই উল্লেখ করেননি যেসব নারীর ওপর অস্ত্রোপচার চালিয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন ক্রীতদাসী, বা টাকার বিনিময়ে তাঁদের শরীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তিনি নিয়েছিলেন। নিবন্ধে যেসব ছবি রয়েছে, সেখানে তাঁকে একজন শ্বেতাঙ্গ নার্সের সাহায্যে শ্বেতাঙ্গ নারীর অস্ত্রোপচার করতে দেখা যায়। রোগীকেও কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করা। রোগীর সম্মানের চিহ্ন সেখানে স্পষ্ট। অথচ অ্যানার্কা, বেটসি এবং লুসি কখনো ন্যূনতম সম্মান পাননি। বহু পুরুষের সামনে নগ্ন করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সিমস পরে নারীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল করেন। সেখানে শ্বেতাঙ্গ নারীদের অস্ত্রোপচার করা হতো যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে এবং অবশ্যই অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হতো।
ডাক্তার সিমসের কাজ এবং নিবন্ধ স্ত্রীরোগের অস্ত্রোপচারে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই অবদানের জন্য তাঁকে ‘আধুনিক স্ত্রীরোগবিদ্যার জনক’ বলা হয়। কিন্তু এই অগ্রগতিগুলোর পেছনে যে ক্রীতদাস নারীদের দীর্ঘ যন্ত্রণা এবং শোষণের ইতিহাস আছে, তা ভুলে গেলে অন্যায় হবে। অ্যানার্কা, বেটসি, লুসিসহ ডাক্তার মেরিয়ন সিমসের আরও নাম না জানা কৃষ্ণাঙ্গ রোগীরা ‘আধুনিক স্ত্রীরোগবিদ্যার মা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের শ্রম এবং অমানবিক যন্ত্রণা ছাড়া সিমসের এই ‘অর্জন’ সম্ভব হতো না।

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী...
২ দিন আগে
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
৫ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
৫ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামোক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী এক কঠোর নির্দেশ জারি করেছে। এখন থেকে চিকিৎসকদের অবশ্যই পরিষ্কার ও পাঠযোগ্য হাতের লেখায় প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ সেবন এবং এর ফলে হওয়া শারীরিক ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন আদালত ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেন। আদালত স্পষ্টভাবে জানান, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল ওষুধ এবং ভুল মাত্রার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আদালতের মতে, পাঠযোগ্য প্রেসক্রিপশন পাওয়া রোগীর সংবিধানপ্রদত্ত ‘স্বাস্থ্যের অধিকার’-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এনএমসির দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে:
স্পষ্ট হাতের লেখা—প্রেসক্রিপশন অবশ্যই অস্পষ্টতামুক্ত এবং স্পষ্ট হাতের লেখায় লিখতে হবে। সম্ভব হলে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটেল লেটার) লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেনেরিক নাম—প্রতিটি ওষুধের স্পষ্টভাবে জেনেরিক নামে লিখতে হবে।
তদারকি কমিটি—ভারতের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি করে সাব-কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রেসক্রিপশন লেখার ধরন নিয়মিত তদারকি করবে এবং চিকিৎসকেরা নিয়ম মানছেন কি না, তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ—মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে এখন থেকে ‘স্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখন’-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেন এটি জরুরি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মনে করে, ওষুধের ভুল (medication error) বিশ্বব্যাপী রোগীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ বা ভুল মাত্রা সেবনের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। এনএমসির এই পদক্ষেপটি চিকিৎসাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার একটি বড় ধাপ।
ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রেসক্রিপশন স্পষ্ট করে লেখা নিয়ে উচ্চ আদালতের পুরোনো একটি নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৭ সালে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) স্পষ্টভাবে বা বড় অক্ষরে বা ছাপানো আকারে দিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। স্বাস্থ্যসচিব এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামোক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী এক কঠোর নির্দেশ জারি করেছে। এখন থেকে চিকিৎসকদের অবশ্যই পরিষ্কার ও পাঠযোগ্য হাতের লেখায় প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ সেবন এবং এর ফলে হওয়া শারীরিক ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন আদালত ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেন। আদালত স্পষ্টভাবে জানান, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল ওষুধ এবং ভুল মাত্রার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আদালতের মতে, পাঠযোগ্য প্রেসক্রিপশন পাওয়া রোগীর সংবিধানপ্রদত্ত ‘স্বাস্থ্যের অধিকার’-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এনএমসির দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে:
স্পষ্ট হাতের লেখা—প্রেসক্রিপশন অবশ্যই অস্পষ্টতামুক্ত এবং স্পষ্ট হাতের লেখায় লিখতে হবে। সম্ভব হলে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটেল লেটার) লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেনেরিক নাম—প্রতিটি ওষুধের স্পষ্টভাবে জেনেরিক নামে লিখতে হবে।
তদারকি কমিটি—ভারতের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি করে সাব-কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রেসক্রিপশন লেখার ধরন নিয়মিত তদারকি করবে এবং চিকিৎসকেরা নিয়ম মানছেন কি না, তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ—মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে এখন থেকে ‘স্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখন’-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেন এটি জরুরি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মনে করে, ওষুধের ভুল (medication error) বিশ্বব্যাপী রোগীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ বা ভুল মাত্রা সেবনের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। এনএমসির এই পদক্ষেপটি চিকিৎসাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার একটি বড় ধাপ।
ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রেসক্রিপশন স্পষ্ট করে লেখা নিয়ে উচ্চ আদালতের পুরোনো একটি নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৭ সালে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) স্পষ্টভাবে বা বড় অক্ষরে বা ছাপানো আকারে দিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। স্বাস্থ্যসচিব এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

আজ ২৮ মে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
২৮ মে ২০২৩
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
৫ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
৫ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৭ দিন আগেমুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধের কারণে জনবল হারিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চাপে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বে।
সংক্রামক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যক্ষ্মার মোকাবিলায় সরকারের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প সরকারের বৈশ্বিক কাটছাঁটের অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রায় এক বছর আগে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্তত ৬২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ‘সেক্টর কর্মসূচি’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির অধীন অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায়। ২০২৪ সালের জুনে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার সেক্টর কর্মসূচি বিলুপ্ত করে। বর্তমানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাইকোব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি) কর্মসূচির আওতায়।
চলতি মাসের শেষেই গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর এমবিডিসি কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠি পান এনটিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের ‘অর্থায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন অর্থের জোগান না এলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরু থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫০ কেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হলে প্রায় সোয়া ২ হাজার কর্মী চাকরি হারান। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক এলাকায় রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ রয়েছে এমন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। কর্মসূচি বহাল থাকায় ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ২৬ জনে।
এদিকে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৮ জন। প্রচলিত একাধিক ওষুধে কাজ না হলে তাকে বলা হয় মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা।
এই অবস্থায় অর্থায়ন বন্ধ হলে বাধার মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ৬৪ জন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার, ৪১৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), ৬৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), ১২ জন প্রোগ্রাম অফিসার, ৫৭ জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৫ জন ল্যাব সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসারের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিপির একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু গ্লোবাল ফান্ড আগামী জানুয়ারি থেকে আর অর্থায়ন করতে চাইছে না। এই অবস্থায় যাঁরা যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই চাকরি হারাবেন বলে জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের চাকরিতে রাখা হয়।
এমনিতেই যখন দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের হার কম, সেখানে অর্থায়নের জটিলতা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এখন গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে। সরকার গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। হয়তো তারা আবারও অর্থায়ন শুরু করবে, তবে এতে সময় লাগবে। এই সময়ে সরকারের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলেন, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কিছু জিন এক্সপার্ট আলট্রা মেশিন কিনেছিল। অর্থায়ন বা যথেষ্ট লোকবল না থাকলে এগুলো অকেজো হয়ে যাবে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে শূন্য স্থান (গ্যাপ) তৈরি হবে। এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাথমিক নির্ণয়ের সুযোগ থাকায় রেডিওলজির ওপর চাপ কমে। এখন সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া যাদের ক্ষেত্রে কাশি দিয়ে কফ বের করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না, তাদের জন্য মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী যোগ হয় ১ হাজার ৩৮ জন। দিনে মারা যায় ১২১ জন। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী বাড়ছে। রোগ নিরাময় হার সাধারণ যক্ষ্মায় ৯৫ শতাংশ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৭৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ যক্ষ্মা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সেও সবচেয়ে বড় প্রভাবক হলো যক্ষ্মা। সংক্রামক এই রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফান্ড হয়তো একসঙ্গে অর্থায়ন কমাবে না বা সম্পূর্ণ বাতিল করবে না। যেটুকু অর্থায়ন তারা কমাবে, সরকার রাজস্ব থেকে তা পূরণ করবে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কোথাও বাধা সৃষ্টি হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। ওপি বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো কাজই থেমে যায়নি। সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধের কারণে জনবল হারিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চাপে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বে।
সংক্রামক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যক্ষ্মার মোকাবিলায় সরকারের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প সরকারের বৈশ্বিক কাটছাঁটের অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রায় এক বছর আগে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্তত ৬২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ‘সেক্টর কর্মসূচি’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির অধীন অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায়। ২০২৪ সালের জুনে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার সেক্টর কর্মসূচি বিলুপ্ত করে। বর্তমানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাইকোব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি) কর্মসূচির আওতায়।
চলতি মাসের শেষেই গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর এমবিডিসি কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠি পান এনটিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের ‘অর্থায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন অর্থের জোগান না এলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরু থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫০ কেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হলে প্রায় সোয়া ২ হাজার কর্মী চাকরি হারান। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক এলাকায় রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ রয়েছে এমন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। কর্মসূচি বহাল থাকায় ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ২৬ জনে।
এদিকে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৮ জন। প্রচলিত একাধিক ওষুধে কাজ না হলে তাকে বলা হয় মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা।
এই অবস্থায় অর্থায়ন বন্ধ হলে বাধার মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ৬৪ জন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার, ৪১৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), ৬৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), ১২ জন প্রোগ্রাম অফিসার, ৫৭ জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৫ জন ল্যাব সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসারের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিপির একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু গ্লোবাল ফান্ড আগামী জানুয়ারি থেকে আর অর্থায়ন করতে চাইছে না। এই অবস্থায় যাঁরা যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই চাকরি হারাবেন বলে জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের চাকরিতে রাখা হয়।
এমনিতেই যখন দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের হার কম, সেখানে অর্থায়নের জটিলতা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এখন গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে। সরকার গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। হয়তো তারা আবারও অর্থায়ন শুরু করবে, তবে এতে সময় লাগবে। এই সময়ে সরকারের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলেন, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কিছু জিন এক্সপার্ট আলট্রা মেশিন কিনেছিল। অর্থায়ন বা যথেষ্ট লোকবল না থাকলে এগুলো অকেজো হয়ে যাবে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে শূন্য স্থান (গ্যাপ) তৈরি হবে। এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাথমিক নির্ণয়ের সুযোগ থাকায় রেডিওলজির ওপর চাপ কমে। এখন সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া যাদের ক্ষেত্রে কাশি দিয়ে কফ বের করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না, তাদের জন্য মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী যোগ হয় ১ হাজার ৩৮ জন। দিনে মারা যায় ১২১ জন। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী বাড়ছে। রোগ নিরাময় হার সাধারণ যক্ষ্মায় ৯৫ শতাংশ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৭৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ যক্ষ্মা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সেও সবচেয়ে বড় প্রভাবক হলো যক্ষ্মা। সংক্রামক এই রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফান্ড হয়তো একসঙ্গে অর্থায়ন কমাবে না বা সম্পূর্ণ বাতিল করবে না। যেটুকু অর্থায়ন তারা কমাবে, সরকার রাজস্ব থেকে তা পূরণ করবে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কোথাও বাধা সৃষ্টি হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। ওপি বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো কাজই থেমে যায়নি। সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

আজ ২৮ মে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
২৮ মে ২০২৩
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী...
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
৫ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

আজ ২৮ মে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
২৮ মে ২০২৩
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী...
২ দিন আগে
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
৫ দিন আগে
ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৭ দিন আগেমো. ইকবাল হোসেন

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।
মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।
এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।
এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।
এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।
আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।
খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—
পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।
মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।
এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।
এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।
এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।
আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।
খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—
পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

আজ ২৮ মে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে সেই নারীদের গল্পই বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরুর পরই কেবল তাঁরা আলোচনায় এসেছেন। দুঃখের বিষয় এর আগে খোদ গাইনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরাও তাঁদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না!
২৮ মে ২০২৩
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী...
২ দিন আগে
দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ।
৫ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।
৫ দিন আগে