Ajker Patrika

ধার করে চলছে ৭৪% গরিব: জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০: ৫৮
ধার করে চলছে ৭৪% গরিব: জরিপ

বাজারে চাল-ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়েছে দফায় দফায়। সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। উচ্চবিত্তের চিন্তা নেই। মধ্যবিত্ত কোনোরকমে ম্যানেজ করে চলছে। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে নিম্নবিত্তের। জরিপের তথ্য বলছে, ভাত থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবকিছু খাওয়া কমিয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আর ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এখন সংসার চালাচ্ছে ধারদেনা করে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এ জরিপ করেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সানেম জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি–এই ছয় মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের আয়-ব্যয়ের তুলনামূলক তথ্য জানতে এ জরিপ চালানো হয়। চলতি মাসের ৯ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে চালানো এ জরিপে দেশের আটটি বিভাগের ১ হাজার ৬০০ পরিবার অংশগ্রহণ করে। শহর ও গ্রামে সমানসংখ্যক পরিবার আসে জরিপের আওতায়।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য বাবদই খরচ বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। কুলিয়ে উঠতে না পেরে ৯০ শতাংশ মানুষ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। প্রতি পরিবারে আয় না বাড়লেও গড়ে খরচ বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। 

সানেম বলেছে, বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার মান কমার সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় গত ছয় মাসের তুলনায় বর্তমানে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে নিম্ন আয়ের মানুষ ভাত, মাছ, মাংস ও ডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গ্রহণে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ গরিব মানুষ মাংস খাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। মাছ খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ লোক। ৭৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ ডিম ও ৮১ দশমিক ৪৩ শতাংশ লোক ভোজ্যতেল খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে।

সানেম বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কারসাজি প্রতিরোধে যে শক্তিশালী ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উচিত, তার অনুপস্থিতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামছাড়া হয়েছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বাজারে প্রভাব বিস্তারের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামছাড়া হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির যে চাপ এক বছর ধরে বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে, তা শুধু বৈশ্বিক কারণেই হচ্ছে না; বরং এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও এর জন্য দায়ী।

সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, গত এক বছরে অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে নিম্ন আয়ের মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। নিম্ন আয়ের ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বলেছে, গত ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সঞ্চয় কমেছে। আয়-ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ নিয়মিত কাজের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়তি খরচ মেটাতে আগের সঞ্চিত টাকা ভাঙতে বাধ্য হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্তও চাপে আছে বলে মনে করে সানেম। আয় আর ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অনেক মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে গেছে।

জরিপের তথ্য বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অতিরিক্ত দামের সঙ্গে কুলাতে না পেরে নিম্ন আয়ের ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষ ক্ষুদ্রঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। ৩৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার করছে। অনেকেই আবার কো-অপারেটিভ সোসাইটি, ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।

গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগি, ডিম, ইলিশ মাছ, রুই ও কাতলা মাছকে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ‘বিশেষ খাদ্য’ উল্লেখ করে সানেম বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আগের ছয় মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসের দিকে প্রতি মাসে গরিব মানুষ এক মাসে গরুর মাংস খেয়েছে একবার। এখন সেটা নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ৩ বারে।

মুরগির মাংস ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে প্রতি মাসে ২ বার খাওয়া হলেও সেটা সেপ্টেম্বর মাসের দিকে প্রতি মাসে ছিল ৪ বার। এই ছয় মাসে ডিম খাওয়ায় ছেদ পড়েছে। সেপ্টেম্বরের দিকে ৮ দশমিক ১ বার খাওয়া হলেও ফেব্রুয়ারি মাসে খাওয়া হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ বার।

পর্যাপ্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিয়ে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ গত ছয় মাসের তুলনায় এখন উদ্বিগ্ন কি না? এই প্রশ্নে সেপ্টেম্বরের দিকে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ বলেছে, তারা পর্যাপ্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে সেটার পরিমাণ বেড়েছে ৭২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ছয় মাস আগে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে পেত না। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ শতাংশে।

সেলিম রায়হান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে গরিব মানুষের ওপর নিষ্ঠুরতম শুল্ক। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারের উচিত মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় উৎসে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষিণ সুদানে যাত্রা করলেন নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান’ (আনমিস)-এ নিয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ জন নৌসদস্য আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে রওনা হন। এই কন্টিনজেন্ট সেখানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এর আগে ৯ ডিসেম্বর প্রথম গ্রুপে ৯৯ জন নৌসদস্য এই মিশনে যোগ দিতে দেশ ছাড়েন।

দক্ষিণ সুদানের প্রতিকূল ও দুর্গম এলাকায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—নীল নদের নৌপথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা। নৌপথে জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণ ও তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। স্থানীয় জনগণের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা এবং বেসামরিক নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ উদ্ধার এবং মিশনে নিয়োজিত সামরিক-বেসামরিক সদস্যদের রসদসামগ্রী দুর্গম স্থানে পৌঁছে দেওয়া।

এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর
এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। নীল নদের ১ হাজার ৩১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখন পর্যন্ত ৭১টি লজিস্টিক অপারেশন (অপারেশন লাইফ লাইন) সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন নৌসদস্যরা।

দক্ষিণ সুদান ছাড়াও লেবাননের ভূমধ্যসাগরে উপমহাদেশের একমাত্র মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’ নিয়োজিত রয়েছে। নৌবাহিনীর এই গৌরবময় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম উজ্জ্বল করছে।

উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই-তে সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউএন ঘাঁটি আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত ও আটজন আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানুয়ারির মাঝামাঝি সাংবাদিকদের মহাসম্মেলনের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ।

তিনি জানিয়েছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুন এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে এ মহাসম্মেলন করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আজ সোমবার প্রতিবাদ সভায় এ কে আজাদ এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যমের কার্যালয়ে যখন হামলা হলো, তখন ডেইলি স্টার সম্পাদক সরকারের সব সংস্থাকে অনুনয় করেছিলেন নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু কারও সাহায্য তিনি পাননি।

সভায় নোয়াব সভাপতি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম আলোতে প্রথম আগুন দেওয়া হয়। তখনই ডেইলি স্টার সম্পাদক আশঙ্কা করেছিলেন এরপরে হামলাকারীরা ডেইলি স্টারে যাবে। তখন তিনি সরকারের এমন কোনো সংস্থা নাই, এমন কোনো ব্যক্তি নাই, যাকে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করেন নাই যে আপনারা ডেইলি স্টারের সামনে ‘প্রোটেকশন’ দেন। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য সাড়া পাননি। যখন পেয়েছেন পোড়ার পরে পেয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ কে আজাদ আরও বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক যখন অসহায়ের মতো নিচে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর সামনে দিয়ে লুটকারীরা কম্পিউটার, চেয়ার, মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে তখন আইনশৃঙ্খলার সমস্ত বাহিনী ছিল। কিন্তু বাহিনীগুলোর কেউ একটা প্রতিবাদ করেনি।

নোয়াব সভাপতি আরও বলেন, সেই রাতে ডেইলি সম্পাদক তাঁকে জানান, ভবনটিতে ২৮ থেকে ২৯ জন আটকা পড়েছিল। আর ১৫ মিনিট আগুন জ্বললে তাদের অনেকেই সেই ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেত।

একে আজাদ বলেন, আমরা এভাবে মারা যেতে চাই না। এভাবে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না।

প্রতিবাদ সভায় জানানো হয়, সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মহাসম্মেলন আয়োজন করা হবে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উদীচী, ছায়ানটে যারা আগুন দিয়েছে যত দিন তাদের বিচার না হবে, সাংবাদিকেরা যত দিন মত প্রকাশের স্বাধীনতা না পাবে, তত দিন পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে শুধু প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নয়, আজকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। তাই গণতন্ত্রী সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার, প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন স্টাফ ভবনের ভেতরে আটকে ছিল, ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল।

প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

বাসস, ঢাকা  
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সোমবার ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব নিরসন করা প্রয়োজন। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, রাশিয়া দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। খোজিন বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হওয়া উচিত।’ বর্তমান পরিস্থিতিকে আর বাড়তে না দেওয়ার বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক করেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। রাষ্ট্রদূত খোজিন আশা প্রকাশ করেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচনের আগে দেশে একটি অনুকূল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়া এ বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য তারা এখন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

২০২৬ সালের হজে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধনকারীদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত হজ-১ শাখা থেকে জারিকৃত পত্রে বলা হয়েছে, ‘হজ ২০২৬-এর সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমাদানপূর্বক প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইন ২০২৬ অনুযায়ী প্রত্যেক হজযাত্রীকে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে জমা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, হজ ২০২৬ এর যে সকল হজযাত্রী নির্বাচিত প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ জমা প্রদান করেননি তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ জমা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ সময়ের মধ্যে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা না দিলে সেই হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত