Ajker Patrika

এককালের নরমাংস ভোজী গাছবাসী মানুষেরা

ইশতিয়াক হাসান
এককালের নরমাংস ভোজী গাছবাসী মানুষেরা

করোওয়াইদের কথা প্রথম পড়েছিলাম যদ্দুর মনে পড়ে রিডার্স ডাইজেস্টে। সভ্যতার স্পর্শ পায়নি এমন মানুষদের কথা ভাবতে গেলে আমাজনের জঙ্গলের কিংবা আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের আদিবাসীদের কথাই মাথায় চলে আসত। তবে এই ধারণা বদলে দেয় করোওয়াইরা। আরও মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের বাস এশিয়া মহাদেশেই, দক্ষিণ-পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলের গহিন অরণ্যে। আজ বলব করোওয়াইদের গল্প।

বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশক পর্যন্ত বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না এই আদিবাসীদের। নিজেরদের এই গভীর বনানীর জগৎ ছাড়া আর কোনো পৃথিবী আছে এটা ভাবতেও পারত না ওরা, তেমনি করোওয়াইদের কথা জানত তা গোটা দুনিয়ার মানুষও। এরপরই ১৯৭৪ সালে ডাচ মিশনারিরা খুঁজে বের করেন তাঁদের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুনো জন্তু শিকার ও জংলি ফল-মূল, লতা-পাতা সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করছে এই আদিবাসীরা। আরাফুরা সাগর থেকে মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে করোওয়াইদের বসতি। 

করোওয়াইদের খুঁজে পাওয়ার পর তাঁদের সম্পর্কে আজব এক তথ্য বেরিয়ে আসে। করোওয়াইরা নরমাংস ভোজন করে? পিলে চমকানো খবরটা এতটাই তোলপাড় তোলে যে আরেকটু হলে এর আড়ালে ঢাকা পড়তে বসেছিল এই অরণ্যচারী আদিবাসীদের আশ্চর্য আরেক বৈশিষ্ট্য। সেটি হলো, তাঁদের বৃক্ষচর স্বভাব। উঁচু উঁচু গাছে বাস তাঁদের, তাও অসাধারণ স্থাপত্যকর্মের দৃষ্টিনন্দন সব ঘর। আমার করোওয়াইতে মজে যাওয়ার কারণ তাঁদের এই গাছের জীবনই। 

পর্যটক টানতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রিসোর্টে এখন গাছে রাত কাটানোর চমৎকার ব্যবস্থাও হয়েছে। কিন্তু দেখুন, শত শত বছর ধরে প্রয়োজনের তাগিদেই এমন আশ্চর্য গাছ-বাড়িতে বাস করে আসছে এই আদিবাসীরা। 

মনে নিশ্চয়ই এখন একটা প্রশ্ন জেগেছে, করোওয়াইদের এই গাছবাড়িগুলো কতটা উঁচুতে? সাধারণত ২০ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতায় দেখা পাবেন এমন বাড়িগুলোর। তবে কোনো কোনোটা ছাড়িয়ে যায় এক শ ফুটের সীমাও। ১১৪ ফুট উঁচুতে এমন বাড়ি বানানোর রেকর্ডও আছে। 

একটি গাছেই তৈরি হয় ঘরটি, কখনো কখনো কয়েকটি জীবন্ত গাছের ওপর থাকে ভিতটা, বাড়তি সাপোর্ট হিসেবে থাকে কাঠের খুঁটি। এই গাছবাড়িতে বাসের অনেক সুবিধা। এটা বাসিন্দাদের যে শুধু নিচে গিজগিজ করতে থাকে অগণিত রক্তলোভী মশার কবল থেকে বাঁচায় তা নয়, বাঁচায় প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রতিবেশী কিংবা বন্যপ্রাণীদের থেকেও। অবশ্য করোওয়াইরা এ ধরনের গাছ-বাড়িতে বাসের আরেকটি কারণ আছে। অশুভ আত্মায় প্রবল বিশ্বাস তাঁদের। তাঁরা মনে করেন, এভাবে উঁচু সব বৃক্ষে বাড়ি বানালে অশুভ আত্মাদের কবল থেকেও রেহাই মিলবে। 

সাধারণত ২০ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতায় দেখা পাবেন এমন বাড়িগুলোর। তবে কোনো কোনোটা ছাড়িয়ে যায় এক শ ফুটের সীমাওএমন একটি বৃক্ষবাড়ি বানাবার জন্য প্রধান খুঁটি হিসেবে একটি শক্তপোক্ত গাছ বাছাই করা হয়। গাছের ওপরের অংশটা কেটে ফেলা হয়। এরপর চারপাশে ছোট ছোট খুঁটি বসানোর কাজ চলে। গাছের ডাল-পালা দিয়ে মেঝের কাঠামোটা দাঁড় করানোর পর ঢেকে দেওয়া হয় সাগো পামের শক্ত পাতা দিয়ে। দেয়াল এবং ছাদ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় ওই সাগো পামই। ডালপালাগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা আটকানোর উপাদান বেতজাতীয় রত্তন গাছ। 

বাড়ির মেঝেটা মজবুত হওয়া চাই। কারণ অনেক সময় এক একটা বাড়িতে ডজনখানেক মানুষ বাস করে। তাদের ওজনতো বহন করতে হবে। 
নারী-পুরুষ-শিশুর সঙ্গে পোষাপ্রাণী এবং গবাদিপশুরও ঠাঁই হয়। খাঁজকাটা একটা গাছের গুঁড়ি উঠানামার জন্য মই হিসেবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বড় বাড়িগুলোতে নারী-পুরুষের থাকার আলাদা জায়গা, এমনকি আগুন জ্বালানোর কামরা থাকে। 

আগুনে পুড়ে যাওয়াই এই সবুজ আস্তানার একটি বড় সমস্যা। তবে এমনিতেও এ ধরনের এক একটা বাড়ি পাঁচ বছরের বেশি টেকে না। নতুন করে গাছ-বাড়ি তৈরি করতে হয় তখন। 

করোওয়াইদের পোষাপ্রাণীর মধ্যে আছে কুকুর আর শূকর। কুকুর ব্যবহার করা হয় শিকারের কাজে। তীর, ধনুকসহ হাতে বানানো নানা অস্ত্র ব্যবহার করেন শিকারে। তাঁদের খাদ্যতালিকায় আছে সাপ, হরিণ, বুনো শূকরের মাংস। গুবরে পোকার লার্ভাও খাবার হিসেবে পছন্দের তলিকায় ওপরের দিকে। 

ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলে করোওয়াইদের বাসকরোওয়াইদের একটি বিখ্যাত রীতি হলো সাগো পার্টি। কারও জন্ম, বিয়ে আর মৃত্যুর সময় এ আচার পালন করা হয়। এই রীতিগুলো যেসব পুরোহিত সম্পন্ন করেন তাঁদের নানা ধরনের উপহার দেওয়া হয়। 

শয়তান, পাপিষ্ঠ আত্মা, বান বা তুকতাক, মৃত্যু এসব নিয়ে অন্ধবিশ্বাস‌‌ই নরমাংস ভোজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে করোওয়াইদের। কোনো অপরাধ বা জাদুটোনার জন্য কারও প্রাণদণ্ড হলে তাঁর মাংস খাওয়ার রীতির চল ছিল কালো জাদুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের। ২০০৬ সালে প্রচারিত হয় করোওয়াইদের নিয়ে অস্ট্রেলীয় টিভি অনুষ্ঠান ‘সিক্সটি মিনিটস’–এর তথ্যচিত্র ‘লাস্ট ক্যানিবালস’। প্রচারের পর দারুণ জনপ্রিয়তাও পায় তথ্যচিত্রটি। 

তবে নৃ-বিজ্ঞানী ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য বলছে, শোরগোল তোলার উদ্দেশ্যেই এভাবে নরমাংস ভোজনের ব্যাপারটা প্রচার করা হয়েছে। তাঁদের মত, তথ্যচিত্রটি তৈরির অন্তত দুই যুগ আগ থেকেই পূর্বপুরুষদের ওই বর্বর অভ্যাস থেকে সরে এসেছে করোওয়াইরা। 

গহিন অরণ্যে অনেক উঁচুতে এক গাছ-বাড়িসভ্য জগতের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াটা হয়তো অশনিসংকেতই দিচ্ছে। তরুণেরা এখন অরণ্যবাস ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। মোটের ওপর মাত্র ৩-৪ হাজার করোওয়াই টিকে আছে ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলের গভীর অরণ্যে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই তাঁদের সর্বশেষ স্বকীয়তাগুলো হারিয়ে যাবে। লেখক ও অ্যাডভেঞ্চারার উইল মিলার কয়েকবারই ঘুরে এসেছেন আদিবাসীদের জঙ্গলের আস্তানা। তাঁর অভিজ্ঞতাও সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
 
বিবিসি মিলারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বানিয়েছে তথ্যচিত্র। মিলার মারফতই জানা যায় হতাশাজনক এক তথ্য। সিংহভাগ করোওয়াই এখন ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়িতে বাস করেন না। বরং পর্যটক আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করেন তাঁদের বৃক্ষনিবাসসহ ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ! 

তবে কি আদিম জীবন যাপনের ধারাবাহিকতা নিয়ে টিকে থাকা শেষ আদিবাসী গোত্রগুলোর একটি, করোওয়াইও অচিরেই পুরোপুরি হারাতে বসেছে তাদের অনন্য ঐতিহ্য!

সূত্র: দ্য সান, অথেন্টিক ইন্দোনেশিয়া ডট কম, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত