Alexa
রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩

সেকশন

epaper
 

সারার কিডনি ও কর্নিয়ায় কেমন আছেন চার রোগী

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:০০

সারা ইসলামের মরণোত্তর অঙ্গ দানে ভালো আছেন চার রোগী। ছবি: সংগৃহীত সারা ইসলামের মরণোত্তর দানে কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া চার রোগী ভালো আছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। কর্নিয়ার রোগীদের কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলেও কিডনি রোগীদের একজনের সামান্য সমস্যা রয়েছে। তবে তা মারাত্মক পর্যায়ে নয়। চিকিৎসকেরা জানান, মরণোত্তর অঙ্গ নেওয়া চার রোগীকেই বাড়ি ফেরার আগে অন্তত মাসখানেক হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।

আজ শুক্রবার সরেজমিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খোঁজ নিয়ে চিকিৎসকদের থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। 

কিডনি নেওয়া দুজনের একজন শামীমা আক্তার (৩৭) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এবং অন্যজন মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে কর্নিয়া নেওয়া দুজনের একজন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে; অন্যজন সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

বিএসএমএমইউয়ের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জীবিত মানুষের থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনে সাধারণত এক থেকে দেড় মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রেও প্রায় তা-ই। বর্তমানে দুই রোগীই ভালো আছেন। তবে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে যিনি ভর্তি আছেন, তাঁর ইউরিন প্রোডাকশন কিছুটা কম। তবে সেটি শঙ্কার কিছু নেই। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে উন্নতি হবে।’ 

ডা. হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনের পর বেশ কিছু জটিলতা থাকে। ইনজেকশন দিয়ে সেগুলো ইম্প্রুভ করতে হয়। আমরাও একই পথে এগোচ্ছি। সব মিলিয়ে অন্তত মাসখানেক হাসপাতালে থাকতেই হবে।’ 

কর্নিয়া নেওয়া রোগীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) দুজনেরই ফাইনাল ড্রেসিং হয়েছে। এখন বিভিন্ন ড্রপ দেওয়া হবে। এই ধরনের রোগীদের পূর্ণ সুস্থ হতে অন্তত চার সপ্তাহ বা তারও কিছু বেশি সময় লাগে। সে অনুযায়ী তাঁদেরও মাসখানেক চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।’ 

বিএসএমএমইউ হাসপাতালে কিডনি আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসাধীন শামীমা আক্তার। আজ বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে তাঁকে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকায় খুব একটা নড়াচড়া করতে পারছেন না তিনি। নরম খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তাঁকে। 

বাইরে অপেক্ষা করছেন শামীমার ছোট ভাই শাহজাদা আহমেদ। চোখেমুখে কষ্টের ছাপ থাকলেও আছে আনন্দ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামীমার চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রিসহ বসতভিটাও বন্দক রাখতে হয়েছে পরিবারটিকে। দুটি কিডনি বিকল হলেও পরিবারের কারও সঙ্গে না মেলায় ডায়ালাইসিসেই একমাত্র ভরসা ছিল শামীমার। যার পেছনে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাগত। 

শাহজাদা আহমেদ জানান, পাঁচ বছর আগে ইউরিন ইনফেকশন দেখা দেখা দেয় শামীমার। পরীক্ষায় দুটি কিডনি নষ্ট পাওয়া যায়। পরে ছয় মাস ডায়ালাইসিস করে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। পরিবারের কারও সঙ্গে কিডনির মিল না থাকায় মেডিসিনের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব কি না, সে জন্য নেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান রোগীর যে অবস্থা তাতে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। পরে তাঁকে পুনরায় দেশে আনা হয়। এর পর থেকে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে আসছিলেন শামীমা। 

শাহজাদা বলেন, ‘সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস ও ওষুধের খরচ মিলে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাগছে। এতে নিজেদের জমি বিক্রি করার পাশাপাশি বসতভিটা পর্যন্ত বন্দক রাখতে হয়েছে। শুকরিয়া সারা ইসলামের কল্যাণে আমার বোন বেঁচে থাকার আশা পাচ্ছে।’ 

শাহজাদা আরও বলেন, ‘কিডনি না পাওয়ায় বোনকে বাঁচানোর আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা। গত বছর কিডনি ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে মরণোত্তর কিডনি দান নিয়ে আলোচনা হয়। তখনই আমাদের এ সম্পর্কে ধারণা হয়। জানানো হয় এমন কিডনি পেলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা। 

 ‘গত বুধবার বিকেলে আমার বোনসহ চারজনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আমার বোন ও আরেকজনের মিলে যায়। সেদিনই প্রতিস্থাপনের কথা জানানো হয়। যিনি দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা তাঁকে ভালো রাখুন।’

অন্যদিকে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ট্রান্সপ্লান্ট পর্যবেক্ষণ ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন অপর কিডনি রোগী হাসিনা আক্তার। আজ রাতে সরেজমিন হাসপাতালে কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি ৷ কর্তব্য চিকিৎসকেরাও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা আগামীকাল শনিবার চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে তথ্য নিতে বলেন। এমনকি কিডনি রোগী হাসিনা আক্তারের স্বজনের কারও নম্বর চাইলেও দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী শামীমা আক্তার। ছবি: আজকের পত্রিকা  তবে দায়িত্বরত নার্সদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোগী খাবার খাচ্ছে, কিন্তু ইউরিন এখনো তেমন আসছে না। মূলত কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীদের কিছুটা জটিলতা থাকে। আর যেহেতু এটা মরণোত্তর রোগীর কাছ থেকে এবং পরিবারের নয়—তাই কিছুটা জটিলতা থাকবেই। একটু সময় লাগবে ঠিক হতে।’ 

এর আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি ও নানা জটিলতা কাটিয়ে গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারে কিডনি ও কর্নিয়া সংগ্রহসহ প্রতিস্থাপন করা হয়। 

 ২০১৮ সালের মরণোত্তর অঙ্গ সংযোজন আইনে কিডনি, লিভার, কর্নিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দানে বৈধতা দেওয়া হলেও কর্নিয়া ছাড়া আর কিছু দেওয়ার ইতিহাস ছিল না। 

তবে সেই বাধা কাটে ২০ বছরের তরুণী সারা ইসলামের হাত ধরে। যিনি কি না মাত্র ১০ মাস বয়সে মস্তিষ্কে টিউমার বহন করছিলেন। সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হলে সারাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় সারাকে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এর আগেই দান করে যান দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি ও কর্নিয়া। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন সারার মা।

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    এলাকার খবর

     
     

    প্রতি জেলায় হবে মা ও শিশু হাসপাতাল: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

    শর্তে খালেদার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার আবেদন এসেছে: আইনমন্ত্রী

    চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

    ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণে সহযোগিতা করছে সরকার: সমাজকল্যাণমন্ত্রী

    বিএসএমএমইউ উপাচার্যের মেয়াদ হবে ৪ বছর

    আষাঢ়ে নয়

    লোভ-দারিদ্র্যের বলি মাতৃস্নেহ

    ‘৪০ হাজার টন পণ্যবোঝাই জাহাজ ভিড়বে পায়রায়’

    মাদকাসক্ত ছেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দিলেন মা

    স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে স্মৃতিসৌধে ডাচ নারী

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ককটেল বিস্ফোরণ

    কাপ্তাইয়ে ৭৮ মেধাবী শিক্ষার্থী পেল ট্যাবলেট 

    চাঁপাইনবাবগঞ্জে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, দোকান ভাঙচুর