Ajker Patrika

সুষ্ঠু নির্বাচন বনাম খাদ্য ও জ্বালানির দাম

অরুণ কর্মকার
সুষ্ঠু নির্বাচন বনাম খাদ্য ও জ্বালানির দাম

শেষ পর্যন্ত রাজনীতিই নাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো কখনো অবশ্য রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। সেই নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা থাকে অর্থনীতির। স্থান-কালভেদে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনায় সেই অবস্থাকে জটিল, সঙিন কিংবা নিদেনপক্ষে বেকায়দায় পড়া বলা যায়। বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এই তিনটির কোনো না কোনো একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সমগ্র ইউরোপ এখন অর্থনৈতিক সংকটের পথযাত্রী। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে তা প্রকট হয়ে উঠেছে। আমেরিকার শরীর অনেক বড় কাপড়ে আবৃত। তাই কোনো দিকে কমতি হলে অন্যদিক থেকে কাপড় টেনেটুনে ঢাকা দেওয়া সম্ভব। তবে শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কিছু একটা সুরাহা না হলে আমেরিকার অনাবৃত শরীর দৃশ্যমান হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।

আমাদের দেশও এই বিশ্ব পরিস্থিতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের বড় আশঙ্কার বিষয় খাদ্য ও জ্বালানির দাম এবং ডলারের সংকট। এর কোনোটিরই গতি-প্রকৃতি ভালো নয়। তবে দেশে এসব আশঙ্কার বিষয়ে ভয়-ভাবনা আপাতত কম; বরং সবচেয়ে বড় ভাবনার জায়গাজুড়ে আছে রাজনীতি। সুষ্ঠু নির্বাচন।

কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন: সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রথম পূর্বশর্ত হলো—গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ। কিন্তু বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ শর্তসাপেক্ষ করেছে। ফলে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এসেছে। আবার আইনি প্রক্রিয়ায় সেই ব্যবস্থার অবসানও হয়েছে। এ নিয়েও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ সন্ত্রাস-অগ্নিসংযোগে অনেক নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। বহু মানুষের প্রাণ গেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত এখনো বহাল আছে।

আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত দলগুলোর শর্ত—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন নয়। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলোপ করা হয়েছে আগেই। তাই ওই দাবি মানতে হলে সংবিধানের বিপরীত সংশোধনী দরকার। আওয়ামী লীগ সেটা কেন করবে! বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো কি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ওই পথে নিতে সক্ষম? বিদেশি কূটনীতিকদের প্রভাব কিংবা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেও কি তা সম্ভব? মনে হয় না।

কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কথা। ‘বিএনপিপন্থী’ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও বৃত্তিজীবী এর প্রবক্তা। তাঁদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এবারও যদি তেমনটি দেন, তাহলে জাতীয় সরকার গঠন ও 
তার অধীনে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২০১৩-১৪ আর ২০২২-২৩ সাল কি এক? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন যা করেছিলেন এখনো তা করবেন কেন? তাঁর কি অন্য কোনো রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে না? তা বিসর্জন দিয়ে তিনি কেন বিরোধীদের কথামতো কাজ করবেন! তারপরও যদি বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সমন্বয়ে। সেখানেও তো বিএনপি নেই! সুতরাং সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত অত্যন্ত ক্ষীণ, যদি বিএনপি শর্ত প্রত্যাহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে।

খাদ্য ও খাদ্যের দাম: এ মৌসুমের বেশির ভাগ আমন ধান উঠে গেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সারা দেশে ফসল ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়া সত্ত্বেও ফড়িয়া-মহাজনদের কাছে ধানের ভালো দামই পাচ্ছেন কৃষক। মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এই দামের প্রভাব পড়েছে খাদ্যের বাজারে। অন্যান্য বছর ধান ওঠার পর বাজারে চালের দাম কমার যে প্রবণতা থাকত, এবার তা নেই।

পাশাপাশি সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করেছে (প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা, চাল ৪২ টাকা), তা বাজারের তুলনায় অনেক কম। তাই এই মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হবে না, তা প্রায় নিশ্চিত।

এমনিতেও কৃষক সরকারের কাছে চাল বিক্রি করেন না। চাল বিক্রি করেন বড় মিলমালিকেরা। কৃষক বিক্রি করেন ধান। কিন্তু সরকারি গুদামের জন্য ধান কেনার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতার বাধ্যবাধকতা থাকায় খুব কম কৃষকের পক্ষেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ হয়। সেই সুযোগ নেন ফড়িয়া-মহাজন। এ বছর দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপও ধান-চাল কিনছে। তাতে কৃষকের ভালো দাম পাওয়ার সুযোগ বাড়তে পারে। তবে পরে ধান-চালের বাজার চড়া থাকবে বলে ধারণা করা যায়।

সেই চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটি এক বড় প্রশ্ন। কারণ, সরকার ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তার গুদামের শস্য খোলাবাজারে ছেড়ে। কিন্তু এ বছর ধানের পাশাপাশি সরকার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ করতে পারবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেননা, সরকারের নির্ধারিত দাম অনেক কম হওয়ায় মিলমালিকেরা সরকারের গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে অনাগ্রহী।

সরকারের সঙ্গে মিলমালিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৮ ডিসেম্বর। একমাত্র বগুড়া জেলাতেই ওই সময়ের মধ্যে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মিলমালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। সেখানে মোট ১ হাজার ১২০ জন মিলারের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৪৪৭ জন। অন্যান্য জেলাতেও একই প্রবণতা বিদ্যমান। এটি সরকার এবং আগামী বছরের ধান-চালের বাজারদরের জন্য ভালো সংকেত নয়। দেশে ধান-চালের অভাব থাকবে না, তবে দাম হবে চড়া।

এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডলার-সংকট বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের প্রাপ্যতারও সংকট দেখা দিতে পারে। কেননা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছর বিশ্বে চালের উৎপাদন কিছুটা কম হবে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হবে বলেই সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা।

জ্বালানির দামে তুঘলকি: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে এক বছর আগের পর্যায়ে নেমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৮ ডলার। এই দামে তেল কিনে বর্তমান দামে বিক্রি করলে সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা মুনাফা হওয়ার কথা।তা-ও দেশে তেলের দাম কমানোর নাম নেই। অথচ অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। এখন বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তা স্থিতিশীল নয়।

জ্বালানির বিশ্ববাজারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অস্থিরতা। সে জন্য মাসাধিককাল ধরে অব্যাহতভাবে দাম কমার পরও দেশে সমন্বয় না করার পক্ষে যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তা ছাড়া, ইউরোপসহ সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে জ্বালানির চাহিদাও কমছে।আগামী বছরও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিমত। তারপরও যদি সরকার নিশ্চিত হতে না পারে তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যা করে, একটি নির্দিষ্ট সময় (কোথাও প্রতিদিন, কথাও প্রতি সপ্তাহে) অন্তর জ্বালানির দাম সমন্বয়, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না কেন?

ব্যয়ের হিসাবে বিরাট অসংগতি: আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় এক রহস্যের বিষয়। এখন যেমন জ্বালানির দাম এক বছর আগের স্তরে নামার পরও বিপিসির নাকি প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

গত অর্থবছরের একটি হিসাবও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলার। বিপিসির হিসাব মতে, এই ব্যয় মাত্র সাড়ে ৫ বিলিয়ন। আবার কাস্টমস তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে তা আরও কম, ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিপিসি এবং তার অধীন বিপণন কোম্পানিগুলো জ্বালানি তেল ও আমদানি করা অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয় না।

বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবে অস্বচ্ছতার অভিযোগ বহু দিনের। কয়েক বছর আগে একটি বহুজাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো অডিট কোম্পানি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। তখনকার অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এ ব্যাপারে কিছু উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরে আর তা এগোয়নি।

গত আগস্ট মাসেও বিপিসির একটি হিসাবের গরমিল নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল। তখন বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত (সাত বছরে) বিপিসি মোট ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা 
মুনাফা করেছে।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ ’-এ উল্লিখিত আছে, ওই সাত বছরে বিপিসি প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিপিসির চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যের মধ্যে ব্যবধান ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়েও পরে আর কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে আগামী বছরের সম্ভাব্য বিশ্ব পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এসব বিষয়ে যথাযথ নজর দেওয়া না হলে দেশের রাজনীতির ওপর অর্থনীতির কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হতে পারে। তাতে বদলে যেতে পারে রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও।

লেথক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত