Ajker Patrika

তাঁরা দুজন

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
তাঁরা দুজন

জ্যোতির্ময়বাবু শিক্ষক ছিলেন আমার, যেমন তারও কিছু আগে শিক্ষক ছিলেন তিনি রাশীদুল হাসানের। জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে আমার অনেক ধারণাই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। আমি যতটা জানি তারও চেয়ে বেশি আমার ঋণ। জ্যোতির্ময় স্যার অসংশোধনীয়রূপে যুক্তিবাদী ছিলেন, বিষয়কে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখতে চাইতেন তার মূল্য নির্ধারণের আগে।

মানতেই হবে যে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসানের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান ছিল। বয়সে, অভ্যাসে, রুচিতে যতটা না মিল ছিল, গরমিল ছিল তার চেয়েও বেশি। অন্তত বাহ্যত তো তা-ই মনে হতো। যদিও তাঁরা দুজনই ছাত্র ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের, সহকর্মী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে।

কিন্তু তাঁরা কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি ছিলেন বিনয়ে; আরও কাছে ছিলেন একে অপরের দেশের প্রতি ভালোবাসায়। সামান্যতার সাধারণ পরিবেশে তাঁরা অসামান্য হয়ে উঠেছিলেন ওই দুই আপাতসাধারণ, কিন্তু বস্তুত-দুর্লভ গুণে।

জ্যোতির্ময় স্যারের নাম লেখা ছিল মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের সেই খাতায়, যেখানে নাম থাকার কথা অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্যক্তিদের। এটা তিনি প্রথম টের পেলেন যখন দরখাস্ত করলেন কলকাতায় যাওয়ার পাসপোর্টের জন্য। তাঁর বৃদ্ধ মাতা দিন দিন দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছিলেন; সেই মায়ের ইচ্ছা ছিল বড় ছেলেকে দেখবেন। এ জন্য ভেতরে-ভেতরে ভারি চঞ্চল ছিলেন জ্যোতির্ময় স্যার, যদিও বাইরে প্রকাশ করতেন না। খুবই প্রকাশবিমুখ ছিলেন তিনি এসব বিষয়ে—সব সময়ই। অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি নিজে, তাঁর হয়ে অন্যরাও চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ; কিন্তু কারোরই সাধ্য ছিল না মিলিটারির খাতায় যাঁর নাম লেখা রয়েছে ‘কমিউনিস্ট’ বলে, তাঁকে পাসপোর্ট দেয়। প্রভোস্ট ছিলেন তিনি জগন্নাথ হলের। সেই হলের ছেলেরা রাষ্ট্রবিরোধী সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমন একটা বানানো সংবাদে সেনাবাহিনী নাকি খুব তপ্ত হয়েছিল এবং শোনা গেছে প্রভোস্টকে তারা হয়তো গ্রেপ্তার করত ২৫ মার্চের আগেই, যদি না তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভদ্রগোছের একজন লোক থাকতেন প্রাদেশিক গভর্নরের পদে। ২৫ মার্চের রাতেই তাঁকে গুলি করেছিল হানাদাররা, সময়মতো চিকিৎসা হলে হয়তো তিনি বাঁচতেও পারতেন। কিন্তু মার্চে বাঁচলেও ডিসেম্বরে বাঁচতেন কি না, খুবই সন্দেহ। যেমন বাঁচেননি সন্তোষ ভট্টাচার্য, বাঁচেননি জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতারই ছাত্র রাশীদুল হাসান।

রাশীদুল হাসানেরও নাম ছিল মিলিটারির গুপ্ত খাতায়। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তাঁর খোঁজে সশস্ত্র লোকেরা হানা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, হানা দিয়ে ধরে নিয়ে গেল তাঁকে কলাভবনের তাঁর কামরা থেকে। তাঁর খোঁজে সশস্ত্র সেনারা আসবে—এমন গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে তিনি ভাবেননি কখনো বলেই প্রস্তুত ছিলেন না, সেনাবাহিনীর লোকেরা এসে অনায়াসে তাঁর খোঁজ পেয়েছিল। পরে, ডিসেম্বরে আবার যখন আলবদররা এল, তখনো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই ছিলেন তিনি। যাওয়ার তেমন জায়গাও ছিল না তাঁর, এই শহরে। উদ্বাস্তু হয়ে এসেছিলেন তিনি কলকাতা থেকে।

জাত শিক্ষক ছিলেন তাঁরা উভয়েই। জ্যোতির্ময়বাবু শিক্ষক ছিলেন আমার, যেমন তারও কিছু আগে শিক্ষক ছিলেন তিনি রাশীদুল হাসানের। জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে আমার অনেক ধারণাই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। আমি যতটা জানি তারও চেয়ে বেশি আমার ঋণ। জ্যোতির্ময় স্যার অসংশোধনীয়রূপে যুক্তিবাদী ছিলেন, বিষয়কে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখতে চাইতেন তার মূল্য নির্ধারণের আগে। সে জন্য তাঁর সঙ্গে তর্ক ছিল আমার। আসলে তিনি তর্ক ভালোবাসতেন, মনে-প্রাণে ছিলেন গণতান্ত্রিক। সাম্যবাদী নন, বুর্জোয়া গণতন্ত্রী। সেই জন্য তিনি আহ্বান করতেন বিতর্কে, উৎসাহ দিতেন তর্কে, সর্বোপরি মর্যাদা দিতেন ভিন্নমতের—এমনভাবে দিতেন যতটা কম লোককেই দেখেছি আমি দিতে, আমাদের অগণতান্ত্রিক সমাজে। এই সমাজ আজও অগণতান্ত্রিক, সেকালে আরও বেশি ছিল এর জিজ্ঞাসাহীনতা। তিনি নিজে জানতেন কি না, জানি না, তবে আমরা বিলক্ষণ জানতাম যে ভেতরে-ভেতরে তিনি কোমল ছিলেন, ছিলেন স্পর্শকাতর ও অনুভূতিপ্রবণ। একবার ছুটির সময়ে সেই গেন্ডারিয়া থেকে নীলক্ষেতে এসেছিলেন তিনি আমাদের বাসায়—একটা বইয়ের খোঁজে। আমি বাসায় ছিলাম না, ফিরে এসে শুনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে গেছেন। না পেয়ে চলে গেছেন শেষ পর্যন্ত। আমার স্ত্রী গিয়েছিলেন রান্নাঘরে, তাঁর জন্য চায়ের ব্যবস্থা করে ফিরে এসে দেখেন স্যার বারান্দাজুড়ে পায়চারি করছেন আর গুনগুনিয়ে গাইছেন গান। ধরা পড়ে স্যার পাছে অপ্রস্তুত হন সে জন্য আমার স্ত্রী আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এ ঘটনা নিয়ে আমরা হেসেছি ঠিকই, কিন্তু অনেক দিন, অনেক সময় আমার স্মৃতির ভেতর তাঁর সেই না-শোনা গুনগুনিয়ে গাওয়া গান শুনেছি আমি, আমার চেতনার অজানা স্তরে সেই গান বেজে উঠেছে, আজও ওঠে, যখনই তাঁর কথা মনে করি। তাঁর স্নেহ তাঁর ওই গানের মতোই গুনগুন করে ওঠে। শুধু স্নেহ নয়, জীবন্ত তাঁর উপস্থিতিও।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে আমি জানি তাঁর সরাসরি ছাত্র হওয়ার অনেক আগে থেকেই। সেই যখন আমি স্কুল ছেড়েছি কি ছাড়িনি, সেই বয়সেই তাঁর লেখা পড়েছিলাম আমি একটি গ্রন্থ-সমালোচনা; ‘মুকতি’ নামে তখনকার দিনের একটি মাসিক পত্রিকায়। সেই লেখায় তাঁর বক্তব্য কী কী ছিল, আজ আর মনে নেই, কিন্তু এটা ঠিকই মনে আছে বক্তব্যের মধ্যে যুক্তি ছিল স্পষ্ট, পারম্পর্য ছিল দৃঢ়। সেই যে কৈশোরে ছায়া ফেলেছিলেন তিনি মনের ওপর, সেই ছায়া কালে কালে লোপ পায়নি, বরং আরও গভীর হয়েছে; বিশেষ করে সেই আঠারো-উনিশ বছরে যখন সুযোগ হয়েছিল থাকার তাঁর আশপাশে। এই ছায়া স্তব্ধ নয় এবং সমস্ত সত্তাজুড়ে আছে অনুচ্চ সেই গান। অনুচ্চই। কেননা, যে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা নাটক পড়াতেন, নাটক-পরিচালনা করতেন, তাঁর পছন্দ ছিল নাটকীয় দ্বন্দ্ব, যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাটুকেপনা তো নয়ই, নাটকীয়তাও পছন্দ করতেন না।

এম এন রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খুব ছোট একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন জ্যোতির্ময় স্যার—অনেক আগে, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম সেই সময়ে আমাকে বলেছিলেন, তুমি এসো, আর কেউ যদি আসতে চায় এনো। যখন গিয়ে পৌঁছেছি ফ্রেন্ডস সেন্টারের বাড়ির কাছে, আমি ও আমার বন্ধু, দেখি দোরগোড়ায় একা দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। হেসে বললেন, ‘এসো, তোমাদের জন্যই দাঁড়িয়ে আছি।’ আমাদের জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যেমন সেদিন, তেমনি পরেও, যেন আমরা আসি, এসে মতামত দিই একটা কিছু এবং তর্ক করি তাঁর সঙ্গে। সব ছাত্রের প্রতিই এ ছিল তাঁর আমন্ত্রণ—উদার এবং উষ্ণ। সেই দরজা আছে, তিনি নেই। কিন্তু আছে কি সেই দরজাও? মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।

রাশীদুল হাসানকেও আমি শিক্ষকতা ভিন্ন অন্য কোনো পেশায় চিন্তা করতে পারি না। আমি যে তাঁকে অনেক দিন ধরে চিনতাম, তা অবশ্য নয়। ছাত্রাবস্থায় আমরা আসার আগেই তিনি বের হয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং শিক্ষক হয়ে ফিরে এসেছেন বেশ কিছুদিন পরে। মধ্যবর্তী সময়েও শিক্ষকতাই করেছেন তিনি, কিছু সময় পাবনায়, তারপরে জন্মভূমি বীরভূমে। তিনি লিখতেন। প্রবন্ধ লিখতেন, কবিতা লিখতেন সময়-সময়। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনেই, সেই উনসত্তর সালে, যখন প্রবল গণ-আন্দোলনের আদিগন্ত ঝড় বইছে দেশব্যাপী। তার আগে পরিচয় হয়নি। কেননা, তিনি যখন যোগ দেন ইংরেজি বিভাগে, তখন আমি শিক্ষা ছুটিতে বাইরে ছিলাম, কিছুদিনের জন্য। পরিচয় হলো কখন সেটা মনে আছে, কিন্তু ঠিক কখন অন্তরঙ্গতা ঘটল তার, দিন-তারিখ মনে নেই। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর লেখা কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন আমাকে। তাঁর কবিতা শুনে মনে মনে আমি ড্রাইডেনের মন্তব্য স্মরণ করেছি সুইফট সম্বন্ধে; স্মরণ করে বলেছি, রাশীদুল হাসান সাহেব, আপনি কোনো দিন কবি হবেন না। কবি হবেন না এই কারণে নয় যে, আপনার মধ্যে আবেগের অভাব; না-হওয়ার কারণটা অন্য, সেটা এই যে আপনি কবিতা লিখছেন মনের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নেমে গিয়ে বলতে পারছেন না বলে। আপনার ছিল প্রতিবাদ, কিন্তু সুযোগ ছিল না প্রকাশের। কবিতাকে তাই মাধ্যম করলেন। কিন্তু কবিতা তো জীবনের বিকল্প হতে পারে, কেবল তাঁর জন্যই কবিতাকে যিনি জীবনের ঊর্ধ্বে স্থান দেন। আপনি দেননি। আপনি জীবনকে অনেক বেশি ভালোবাসেন, যে জন্য কবিতার কোনো স্বায়ত্তশাসিত সত্তা ছিল না, আজ্ঞাবহ ছিল তারা আপনার মনে কথার। নিজের গরজ বলে কোনো বালাই ছিল না তাদের। ছিল তারা আপনার ইচ্ছাবন্দী। আপনাকে নিরাসক্ত বলবে কে? আপনি জীবনকে সুন্দর করতে চাইতেন, জানতেন একার জীবন মহৎ হবে না অন্যের জীবনকে স্পর্শ না করলে এবং অন্যের সাহায্য না পেলে, তাই তো আপনি চলে গেলেন অত দ্রুত। মৃত্যুর সঙ্গে আপস করলে আধমরা হয়ে হয়তো আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারতেন, যেমন অন্যরা আছে, যেমন আমরা আছি।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসান কখনো, কোনো অবস্থাতেই গোপন কোনো সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বোমাবারুদ তৈরি করেননি। কিন্তু তাঁদের ছিল হৃদয়।

জীবন্ত হৃদয়। বোমাবারুদের চেয়েও যা বিপজ্জনক—শাসকশ্রেণির পক্ষে। বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন তাঁরা। এই ভালোবাসা দেশের সব বুদ্ধিজীবীর মধ্যে ছিল কি? ছিল না।

অবশ্যই ছিল না। মুৎসুদ্দি চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তাঁরা অনেকেই। যাঁরা দেশপ্রেমিক ছিলেন, তাঁদেরও অনেকেই ততটা অগ্রসর ছিলেন না যতটা ছিলেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসান। অথচ অদৃষ্টের সেই পুরোনো ও প্রসিদ্ধ পরিহাস, তাঁরা উভয়েই ছিলেন বলতে গেলে নিরাশ্রয়। জ্যোতির্ময় স্যার আমাদের বলতেন, পাকিস্তানে তোমরা হলে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, আমরা, হিন্দুরা, হিন্দু বলেই তৃতীয় শ্রেণির। পরিহাস করে বলতেন বটে, কিন্তু ব্যাপারটা তো পরিহাসের ছিল না, ছিল মর্মান্তিকরূপে বাস্তবিক। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের আত্মীয়স্বজন বলতে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাদের প্রায় কেউ ছিলেন না। চমৎকার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি কলকাতা চলে যাওয়ার; ১৯৬৫-এর যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান যে তাঁদের পক্ষে আগের তুলনায় অধিক অনাত্মীয় হয়ে উঠেছিল, সে খবর তো বিলেতে বসে না জানার কোনো কারণ ছিল না।

ঘটনাটি অস্বাভাবিক। কিন্তু না, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকছিল; বাসন্তী গুহঠাকুরতাকে ডাকছিল গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস স্কুল (তাঁর একটা লেখা পড়েই আমি ধোলাইখালকে চিনেছিলাম, খালটাকে দেখার আগেই)। তাঁরা চলে এলেন, উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জ্যোতির্ময় স্যারের পক্ষে যতটা সময় থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কাটলেন প্লেনের।

রাশীদুল হাসান পশ্চিমবঙ্গের লোক, ঢাকায় এসেছিলেন উদ্বাস্তু হয়ে; পরে এখান থেকে ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে একবার চলে গিয়েছিলেন জন্মভূমিতে, কিন্তু আবার চলে আসতে হয়েছে তাঁকে, ১৯৬৫-এর যুদ্ধের পর। আত্মীয়স্বজন বলতে প্রায় কেউ ছিলেন না তাঁর ঢাকায়, অথবা পূর্ব পাকিস্তানে। সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন মনে হয় আনোয়ার পাশা, যাঁকে তাঁর সঙ্গেই নিয়ে গিয়েছিল ঘাতকেরা—হত্যা করবে বলে। একই সময়ে, একই বাসা থেকে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল প্রতিরোধের সব সম্ভাব্য ঘাঁটিগুলো দেবে নিশ্চিহ্ন করে। সেই জন্য জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসান চলে গেলেন, আরও অনেকের সঙ্গে, পাকিস্তানি হানাদারদের বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযানে।

লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত