সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বাজারব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকের মজুরি, বিশেষ করে চা-শ্রমিকের মজুরির সংবাদ জেনে মাথা ঘুরে যাওয়ার দশা। নতুন বর্ধিত মজুরি মাত্র ১৪৫ টাকা সরকার ও মালিকপক্ষ নির্ধারণ করেছে, ভাবা যায়! এর উপসংহারটা কোথায়, কোন সিদ্ধান্তে গিয়ে আমরা পৌঁছাব? বস্তুত ওই সিদ্ধান্তটাই হলো প্রধান, নইলে আমাদের কথা কর্তাদের কথার চেয়েও মূল্যহীন হয়েই থাকবে।
সিদ্ধান্তটা কিন্তু খুবই সরল। সেটা এই যে ব্যবস্থাটাকে বদলাতে হবে, নইলে আমাদের মুক্তি নেই। বুঝতে হবে যে ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী। অপরাধ ব্যক্তিই করছে, তাকেই দেখা যাচ্ছে সামনে, কিন্তু মূল অপরাধী হচ্ছে ব্যবস্থাটা। সে-ই আসল অপরাধকারী। সে লুকিয়ে থাকে। এই অপরাধীকে চিহ্নিত করা দরকার। এবং তাকে বিদায় করা চাই।
সংশোধনে কুলাবে না, সংস্কার তো সংরক্ষণেরই পদক্ষেপ। উদারনীতিকেরা সংস্কার, সংশোধন ইত্যাদি চিকিৎসার কথা ভাবেন, ব্যবস্থাপত্র দেন, কিন্তু তাতে অপরাধীর স্বভাব-চরিত্রে ও অপরাধলিপ্সায় যে কোনো পরিবর্তন আসছে, তা মোটেই না। এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যবস্থাটা আরও বেশি মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, মরণকামড় বসাচ্ছে, পৃথিবীর সর্বত্র নিকৃষ্টমানের মানুষেরা সর্বাধিক ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে, তারা সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছে। পৃথিবী নামের এই গ্রহটিতে মানুষ আর টিকে থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যত্র যেমন, তেমনি বাংলাদেশে দেখছি আমরা যে পুঁজিবাদীরা নিজেদের ‘আলোকিত স্বার্থ’ রক্ষা করবে, তার ব্যবস্থাটাও অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংসদীয় নির্বাচনব্যবস্থা, সেটাও ভেঙে পড়েছে; অর্থাৎ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এক পায়ের ওপর ভরসা করে দাঁড়ানোর জন্য সে ব্যর্থ কসরত করছে। তা নির্বাচনব্যবস্থা না থাকলে কী ঘটতে পারে? হয়তো নৈরাজ্য আসবে। হয়তো অভ্যুত্থান ঘটবে। বামপন্থীরা এমন শক্তিশালী অবস্থানে নেই যে তারা অভ্যুত্থান করবে, অভ্যুত্থান করলে করবে রক্ষণশীলেরা। তেমন ঘটনা নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক হবে না।
পুঁজিবাদ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রধান করে তোলে, স্বার্থবোধের গোপন জায়গাটাতে নীরবে ঘা দিয়ে ব্যক্তির ভেতরের মুনাফালিপ্সাটাকে জাগিয়ে তোলে। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী ‘সাহিত্যে চাবুক’ নামের একটি প্রবন্ধে বলেছেন যে বাংলা ভাষায় ‘মি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো খুবই নোংরা; ভণ্ডামি, ইতরামি, বাঁদরামি, গুন্ডামি, নোংরামি, ভাঁড়ামি—সবকিছুতেই ওই ‘মি’ হাজির; তবে মানুষের জন্য সবচেয়ে সর্বনেশে হচ্ছে ‘আমি’; কারণ ওই পদার্থটির আধিক্য ঘটলে বিদ্যাবুদ্ধি-কাণ্ডজ্ঞান সবকিছু লোপ পায়। এখন সর্বত্রই কিন্তু ওই ‘আমি’র তাণ্ডব। মধ্যযুগের কবি যে গেয়েছেন গান, ‘আপন আপন করে তুই হারালি তোর যা ছিল আপন’, সেটা এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় জাজ্বল্যমান রূপে সত্য। আমার ‘আমি’ এখন আমরা হতে চায় না; আর হয় যদি তবে ‘তোমাদের’ সঙ্গে যুদ্ধ বাধায়। বোধ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ বলবেন আজ প্রয়োজন সর্বজনীন ‘আমরা’ হওয়া। বলবেন, তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি আবশ্যক। আসলে সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিও যথেষ্ট নয়, দরকার হবে রাজনৈতিক কাজ, সেই কাজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের পুঁজিপন্থী ভূমিকার অবসান ঘটল। সমাজ-পরিবর্তন ছাড়া সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়।
পরিবর্তনের জন্য অত্যাবশ্যক সাংস্কৃতিক কাজটি বাংলাদেশে আমরা করছি কি? না, করছি না। যেমন ধরা যাক, পাঠাগার। পাঠাগারে গিয়ে তো মানুষ একত্র হতে পারে। বইকে কেন্দ্র করে মেলামেশা সম্ভব। কিন্তু মানুষ তো এখন আর বই পড়ায় আগ্রহী নয়, পড়লেও পাঠাগারে যায় না; ইন্টারনেট, ওয়েবসাইটে টেপাটেপি করে ঘরে বসে যান্ত্রিক বই সংগ্রহ করে নিয়ে কোনায় বসে বসে পড়ে। পাঠাগার কেবল বই সংগ্রহের জায়গা হলে সেখানে লোক পাওয়া কঠিন হবে; হচ্ছেও। পাঠাগারকে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। পাঠাগার হবে সামাজিকভাবে মিলবার একটি জায়গা, যেখানে মানুষ কেবল বই পড়ার জন্য যাবে না, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আকর্ষণেও যাবে। পাঠাগার হওয়া চাই একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে বই নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নাটক, গান, আবৃত্তি, বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন, আলোচনা, বক্তৃতা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা প্রতিযোগিতা, অনেক কিছুর আয়োজন করা সম্ভব। সেটা করা গেলে বিকেল হলেই মানুষ ওই আশ্রয়ের দিকে রওনা হবে। ছাত্র, কর্মচারী, শিক্ষক, অবসরভোগী, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী—সবাই আসবে। মিলবে মিশবে; সামাজিক হবে। আলোচনা করবে ব্যবস্থা-পরিবর্তনের মতাদর্শ নিয়ে। সবকিছুর ভেতরই মতাদর্শিক বিবেচনাটা থাকবে, মিছরির ভেতর যেমন সুতো থাকত, যে সুতো ছাড়া মিছরি তৈরি করার কথা ভাবা যেত না।
দৃষ্টি দিতে হবে শিশু-কিশোরদের ওপর। খুবই জরুরি হচ্ছে একটি কিশোর আন্দোলন গড়ে তোলা। একসময়ে কিশোর আন্দোলন ছিল; এখন নেই, পুঁজির শাসক সবগুলোকেই গ্রাস করে ফেলেছে। মুকুল ফৌজ গড়ে উঠেছিল পাকিস্তান আন্দোলনের অনুপ্রেরণায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সেই সংগঠন তার প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে, একসময়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। খেলাঘর যুক্ত ছিল কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে; কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিখণ্ডিত হওয়া এবং বিভিন্ন স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়ায় খেলাঘর এখন আর নেই বললেই চলে। কচি-কাঁচার মেলা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারাতে গড়ে উঠেছিল। ওই ধারাও তার ভেতরকার উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছে। কিশোরদের এখন কোনো সংগঠন নেই। তারা স্কুল ও কোচিং সেন্টারে ছোটাছুটি করে, ঘরে ফিরে ইন্টারনেট ও ফেসবুকের ওপর নুইয়ে থাকে, বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পায়; অনেকে মাদকাসক্ত হয়, জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। কিশোরকে নিয়ে আসা চাই বড় অঙ্গনে। তার সৃষ্টিশীলতা ও দুঃসাহসকে উৎসাহিত করা অত্যাবশ্যক। সৃষ্টিশীলতা বাড়ে সামাজিকতায়; আর সবচেয়ে বড় দুঃসাহসিক কাজটা হলো সামাজিক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ। দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন গড়ে তোলা আজ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
যুগ এখন মিডিয়ার। মিডিয়ার এত ক্ষমতা আগে কেউ কখনো দেখেনি। মিডিয়া পুরোপুরি পুঁজিবাদীদের দখলে। পুঁজিবাদের বড় একটা ভরসাও ওই মিডিয়ার ওপরই। বাংলাদেশে সমাজ-পরিবর্তনকামীদের হাতে মিডিয়া নেই। দৈনিক দূরের কথা, একটি সাপ্তাহিকও নেই। খুব দরকার অন্তত একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করার। সেই পত্রিকা দেশ-বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে যা ঘটছে, সেগুলো কেন ঘটছে, যা দৃশ্যমান তার পেছনে কোন স্বার্থের কারসাজি কাজ করছে, ঘটনাবলির তাৎপর্য কী, বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোর যোগ কোথায় এবং উত্তরণ কোন পথে সম্ভব, এসব বিষয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে আলোচনা করবে। তাতে পাঠকের জ্ঞান যেমন বাড়বে, তেমনি সৃষ্টি হবে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দীপনা। সমাজকে যাঁরা বদলাতে চান, তাঁদের পক্ষে সবাই মিলে অন্তত একটি সাপ্তাহিক প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া অত্যাবশ্যক। এটি হবে বড় একটি সাংস্কৃতিক পদক্ষেপ।
স্বাধীনতার পরে মনে হয়েছিল দেশে একটি নাট্য আন্দোলন শুরু হবে। শুরু হয়েছিল, কিন্তু এগোয়নি। শিল্পীরা চলে গেছেন টেলিভিশনে ও সিনেমায়। তেমন গান গাওয়া যায়নি, যা মানুষকে একই সঙ্গে আনন্দ দেবে এবং উদ্দীপ্ত করবে। কবিতা লেখা হচ্ছে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা নিয়ে, তাতে দুঃখের দুর্বিষহতা যত পাওয়া যাচ্ছে, গভীর কোনো দার্শনিকতা তত পাওয়া যাচ্ছে না।
মোটকথা, বিদ্যমান অন্ধকারে মননশীলতা ও সৃজনশীলতার আলো জ্বালা চাই, যে আলো সম্ভব করবে সাংস্কৃতিক জাগরণের এবং পথ দেখাবে সামাজিক বিপ্লবের, যার মধ্য দিয়ে উৎপাদনব্যবস্থা বর্তমান পুঁজিবাদী স্তরে আর আটক থাকবে না, বন্ধন ভেঙে, সমাজতান্ত্রিক স্তরে উন্নীত হবে। জীবনে আসবে প্রাচুর্য, জীবনযাপন হবে আনন্দময়। সে কাজ একা কেউ করতে পারবে না, অল্প কজনে কুলাবে না; তার জন্য পাড়ায়-মহল্লায়, যেমন শহরে, তেমনি গ্রামগঞ্জে, সব ধরনের বসতিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা চাই। ওইখানে পরিবর্তনকামী মানুষের সাংস্কৃতিক লালন-পালন চলবে, যে মানুষ সোৎসাহে রাজনীতিতে যোগ দেবে। রাজনীতি বুর্জোয়াদের ক্ষমতা-পরিবর্তনের ক্রীড়া-কৌতুকে সীমিত থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে বিপ্লবীদের সমাজ-পরিবর্তনের পদক্ষেপ।
পৃথিবীব্যাপী আজ পুঁজিবাদবিরোধী চেতনা প্রখর হয়ে উঠেছে; সেই চেতনাকে সামাজিক বিপ্লবের পথে এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর করার ওপরই কিন্তু নির্ভর করছে মানবজাতির ভবিষ্যৎ।
মধ্যযুগের কবির একটা পরামর্শ ছিল: ‘এবার তোর ভরা আপন তুই বিলিয়ে দেবে যারে তারে।’ ওই পরামর্শে কিন্তু কুলাবে না। কেননা, বিপদটা হবে এই যে আমার আপন যদি আপনে ভরপুর হয়ে যায়, যদি ভারী হয়ে ওঠে স্বার্থে ও সম্পদলিপ্সায়, তবে সে ‘আপন’ নির্ঘাত ডুববে এবং নিজে ডোবার আগে অন্যদের ভরাডুবি ঘটাতে চাইবে এবং তাতে করে সবারই হবে ডোবার দশা। সেটাই এখন ঘটছে, বিশ্বময়। আমার ‘আপন’ ভাসবে যদি নিজে ভারী না-হয়ে অপরের সঙ্গে একত্রে ভাসতে চায় তবেই। মুশকিল যা ঘটানোর ঘটাবে সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা। ঘটাচ্ছেও। মানুষের পক্ষে তাই মানুষ থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে, সামাজিকতা হারিয়ে সে অধম হয়ে পড়ছে বন্য প্রাণীরও।
ক্ষমতাধরেরা ও বচনবাগীশরা যা ইচ্ছা বলুন, বলতে থাকুন, আসল কথাটা হলো সমাজ-পরিবর্তন। সেটা যেন না ভুলি। এটাও যেন না ভুলি যে পালানোর কোনো উপায় নেই, পালালেও বাঁচা যাবে না এবং বাঁচা মানে কেবল টিকে থাকা নয়, মানুষের মতো বাঁচা।
কিন্তু আমরা বাঁচব, অবশ্যই জয়ী হব, যদি আমরা যুদ্ধে থাকি। ভরসা এই যে আমরা একা নই। বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন যুদ্ধে আছে। প্রতিটি সমাজেই ব্যক্তিমানুষ যতই সন্ত্রস্ত হোক, ভয় পাক, সমষ্টিবদ্ধ মানুষ লড়ছে এবং লড়তে গিয়েই বুঝে নিচ্ছে যে বাঁচতে হলে লড়তে হবে। বাঁচার সঙ্গে মরার যে যুদ্ধ, তাতে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। ইতিহাস এগোচ্ছে এবং এগোবে। ইতিহাসে বাঁক আছে, কিন্তু থেমে-যাওয়া নেই। ইতিহাসকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে আমরা বাংলাদেশের মানুষেরাও আছি। অতীতে ছিলাম, আছি বর্তমানে এবং থাকব ভবিষ্যতেও। তবে ইতিহাস এমনি এমনি এগোয় না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি চাই, অনুশীলন চাই জ্ঞানের ও সৃজনশীলতার। সবার ওপরে চাই সংঘবদ্ধতা।

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বাজারব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকের মজুরি, বিশেষ করে চা-শ্রমিকের মজুরির সংবাদ জেনে মাথা ঘুরে যাওয়ার দশা। নতুন বর্ধিত মজুরি মাত্র ১৪৫ টাকা সরকার ও মালিকপক্ষ নির্ধারণ করেছে, ভাবা যায়! এর উপসংহারটা কোথায়, কোন সিদ্ধান্তে গিয়ে আমরা পৌঁছাব? বস্তুত ওই সিদ্ধান্তটাই হলো প্রধান, নইলে আমাদের কথা কর্তাদের কথার চেয়েও মূল্যহীন হয়েই থাকবে।
সিদ্ধান্তটা কিন্তু খুবই সরল। সেটা এই যে ব্যবস্থাটাকে বদলাতে হবে, নইলে আমাদের মুক্তি নেই। বুঝতে হবে যে ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী। অপরাধ ব্যক্তিই করছে, তাকেই দেখা যাচ্ছে সামনে, কিন্তু মূল অপরাধী হচ্ছে ব্যবস্থাটা। সে-ই আসল অপরাধকারী। সে লুকিয়ে থাকে। এই অপরাধীকে চিহ্নিত করা দরকার। এবং তাকে বিদায় করা চাই।
সংশোধনে কুলাবে না, সংস্কার তো সংরক্ষণেরই পদক্ষেপ। উদারনীতিকেরা সংস্কার, সংশোধন ইত্যাদি চিকিৎসার কথা ভাবেন, ব্যবস্থাপত্র দেন, কিন্তু তাতে অপরাধীর স্বভাব-চরিত্রে ও অপরাধলিপ্সায় যে কোনো পরিবর্তন আসছে, তা মোটেই না। এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যবস্থাটা আরও বেশি মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, মরণকামড় বসাচ্ছে, পৃথিবীর সর্বত্র নিকৃষ্টমানের মানুষেরা সর্বাধিক ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে, তারা সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছে। পৃথিবী নামের এই গ্রহটিতে মানুষ আর টিকে থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যত্র যেমন, তেমনি বাংলাদেশে দেখছি আমরা যে পুঁজিবাদীরা নিজেদের ‘আলোকিত স্বার্থ’ রক্ষা করবে, তার ব্যবস্থাটাও অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংসদীয় নির্বাচনব্যবস্থা, সেটাও ভেঙে পড়েছে; অর্থাৎ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এক পায়ের ওপর ভরসা করে দাঁড়ানোর জন্য সে ব্যর্থ কসরত করছে। তা নির্বাচনব্যবস্থা না থাকলে কী ঘটতে পারে? হয়তো নৈরাজ্য আসবে। হয়তো অভ্যুত্থান ঘটবে। বামপন্থীরা এমন শক্তিশালী অবস্থানে নেই যে তারা অভ্যুত্থান করবে, অভ্যুত্থান করলে করবে রক্ষণশীলেরা। তেমন ঘটনা নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক হবে না।
পুঁজিবাদ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রধান করে তোলে, স্বার্থবোধের গোপন জায়গাটাতে নীরবে ঘা দিয়ে ব্যক্তির ভেতরের মুনাফালিপ্সাটাকে জাগিয়ে তোলে। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী ‘সাহিত্যে চাবুক’ নামের একটি প্রবন্ধে বলেছেন যে বাংলা ভাষায় ‘মি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো খুবই নোংরা; ভণ্ডামি, ইতরামি, বাঁদরামি, গুন্ডামি, নোংরামি, ভাঁড়ামি—সবকিছুতেই ওই ‘মি’ হাজির; তবে মানুষের জন্য সবচেয়ে সর্বনেশে হচ্ছে ‘আমি’; কারণ ওই পদার্থটির আধিক্য ঘটলে বিদ্যাবুদ্ধি-কাণ্ডজ্ঞান সবকিছু লোপ পায়। এখন সর্বত্রই কিন্তু ওই ‘আমি’র তাণ্ডব। মধ্যযুগের কবি যে গেয়েছেন গান, ‘আপন আপন করে তুই হারালি তোর যা ছিল আপন’, সেটা এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় জাজ্বল্যমান রূপে সত্য। আমার ‘আমি’ এখন আমরা হতে চায় না; আর হয় যদি তবে ‘তোমাদের’ সঙ্গে যুদ্ধ বাধায়। বোধ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ বলবেন আজ প্রয়োজন সর্বজনীন ‘আমরা’ হওয়া। বলবেন, তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি আবশ্যক। আসলে সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিও যথেষ্ট নয়, দরকার হবে রাজনৈতিক কাজ, সেই কাজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের পুঁজিপন্থী ভূমিকার অবসান ঘটল। সমাজ-পরিবর্তন ছাড়া সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়।
পরিবর্তনের জন্য অত্যাবশ্যক সাংস্কৃতিক কাজটি বাংলাদেশে আমরা করছি কি? না, করছি না। যেমন ধরা যাক, পাঠাগার। পাঠাগারে গিয়ে তো মানুষ একত্র হতে পারে। বইকে কেন্দ্র করে মেলামেশা সম্ভব। কিন্তু মানুষ তো এখন আর বই পড়ায় আগ্রহী নয়, পড়লেও পাঠাগারে যায় না; ইন্টারনেট, ওয়েবসাইটে টেপাটেপি করে ঘরে বসে যান্ত্রিক বই সংগ্রহ করে নিয়ে কোনায় বসে বসে পড়ে। পাঠাগার কেবল বই সংগ্রহের জায়গা হলে সেখানে লোক পাওয়া কঠিন হবে; হচ্ছেও। পাঠাগারকে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। পাঠাগার হবে সামাজিকভাবে মিলবার একটি জায়গা, যেখানে মানুষ কেবল বই পড়ার জন্য যাবে না, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আকর্ষণেও যাবে। পাঠাগার হওয়া চাই একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে বই নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নাটক, গান, আবৃত্তি, বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন, আলোচনা, বক্তৃতা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা প্রতিযোগিতা, অনেক কিছুর আয়োজন করা সম্ভব। সেটা করা গেলে বিকেল হলেই মানুষ ওই আশ্রয়ের দিকে রওনা হবে। ছাত্র, কর্মচারী, শিক্ষক, অবসরভোগী, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী—সবাই আসবে। মিলবে মিশবে; সামাজিক হবে। আলোচনা করবে ব্যবস্থা-পরিবর্তনের মতাদর্শ নিয়ে। সবকিছুর ভেতরই মতাদর্শিক বিবেচনাটা থাকবে, মিছরির ভেতর যেমন সুতো থাকত, যে সুতো ছাড়া মিছরি তৈরি করার কথা ভাবা যেত না।
দৃষ্টি দিতে হবে শিশু-কিশোরদের ওপর। খুবই জরুরি হচ্ছে একটি কিশোর আন্দোলন গড়ে তোলা। একসময়ে কিশোর আন্দোলন ছিল; এখন নেই, পুঁজির শাসক সবগুলোকেই গ্রাস করে ফেলেছে। মুকুল ফৌজ গড়ে উঠেছিল পাকিস্তান আন্দোলনের অনুপ্রেরণায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সেই সংগঠন তার প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে, একসময়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। খেলাঘর যুক্ত ছিল কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে; কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিখণ্ডিত হওয়া এবং বিভিন্ন স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়ায় খেলাঘর এখন আর নেই বললেই চলে। কচি-কাঁচার মেলা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারাতে গড়ে উঠেছিল। ওই ধারাও তার ভেতরকার উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছে। কিশোরদের এখন কোনো সংগঠন নেই। তারা স্কুল ও কোচিং সেন্টারে ছোটাছুটি করে, ঘরে ফিরে ইন্টারনেট ও ফেসবুকের ওপর নুইয়ে থাকে, বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পায়; অনেকে মাদকাসক্ত হয়, জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। কিশোরকে নিয়ে আসা চাই বড় অঙ্গনে। তার সৃষ্টিশীলতা ও দুঃসাহসকে উৎসাহিত করা অত্যাবশ্যক। সৃষ্টিশীলতা বাড়ে সামাজিকতায়; আর সবচেয়ে বড় দুঃসাহসিক কাজটা হলো সামাজিক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ। দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন গড়ে তোলা আজ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
যুগ এখন মিডিয়ার। মিডিয়ার এত ক্ষমতা আগে কেউ কখনো দেখেনি। মিডিয়া পুরোপুরি পুঁজিবাদীদের দখলে। পুঁজিবাদের বড় একটা ভরসাও ওই মিডিয়ার ওপরই। বাংলাদেশে সমাজ-পরিবর্তনকামীদের হাতে মিডিয়া নেই। দৈনিক দূরের কথা, একটি সাপ্তাহিকও নেই। খুব দরকার অন্তত একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করার। সেই পত্রিকা দেশ-বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে যা ঘটছে, সেগুলো কেন ঘটছে, যা দৃশ্যমান তার পেছনে কোন স্বার্থের কারসাজি কাজ করছে, ঘটনাবলির তাৎপর্য কী, বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোর যোগ কোথায় এবং উত্তরণ কোন পথে সম্ভব, এসব বিষয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে আলোচনা করবে। তাতে পাঠকের জ্ঞান যেমন বাড়বে, তেমনি সৃষ্টি হবে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দীপনা। সমাজকে যাঁরা বদলাতে চান, তাঁদের পক্ষে সবাই মিলে অন্তত একটি সাপ্তাহিক প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া অত্যাবশ্যক। এটি হবে বড় একটি সাংস্কৃতিক পদক্ষেপ।
স্বাধীনতার পরে মনে হয়েছিল দেশে একটি নাট্য আন্দোলন শুরু হবে। শুরু হয়েছিল, কিন্তু এগোয়নি। শিল্পীরা চলে গেছেন টেলিভিশনে ও সিনেমায়। তেমন গান গাওয়া যায়নি, যা মানুষকে একই সঙ্গে আনন্দ দেবে এবং উদ্দীপ্ত করবে। কবিতা লেখা হচ্ছে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা নিয়ে, তাতে দুঃখের দুর্বিষহতা যত পাওয়া যাচ্ছে, গভীর কোনো দার্শনিকতা তত পাওয়া যাচ্ছে না।
মোটকথা, বিদ্যমান অন্ধকারে মননশীলতা ও সৃজনশীলতার আলো জ্বালা চাই, যে আলো সম্ভব করবে সাংস্কৃতিক জাগরণের এবং পথ দেখাবে সামাজিক বিপ্লবের, যার মধ্য দিয়ে উৎপাদনব্যবস্থা বর্তমান পুঁজিবাদী স্তরে আর আটক থাকবে না, বন্ধন ভেঙে, সমাজতান্ত্রিক স্তরে উন্নীত হবে। জীবনে আসবে প্রাচুর্য, জীবনযাপন হবে আনন্দময়। সে কাজ একা কেউ করতে পারবে না, অল্প কজনে কুলাবে না; তার জন্য পাড়ায়-মহল্লায়, যেমন শহরে, তেমনি গ্রামগঞ্জে, সব ধরনের বসতিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা চাই। ওইখানে পরিবর্তনকামী মানুষের সাংস্কৃতিক লালন-পালন চলবে, যে মানুষ সোৎসাহে রাজনীতিতে যোগ দেবে। রাজনীতি বুর্জোয়াদের ক্ষমতা-পরিবর্তনের ক্রীড়া-কৌতুকে সীমিত থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে বিপ্লবীদের সমাজ-পরিবর্তনের পদক্ষেপ।
পৃথিবীব্যাপী আজ পুঁজিবাদবিরোধী চেতনা প্রখর হয়ে উঠেছে; সেই চেতনাকে সামাজিক বিপ্লবের পথে এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর করার ওপরই কিন্তু নির্ভর করছে মানবজাতির ভবিষ্যৎ।
মধ্যযুগের কবির একটা পরামর্শ ছিল: ‘এবার তোর ভরা আপন তুই বিলিয়ে দেবে যারে তারে।’ ওই পরামর্শে কিন্তু কুলাবে না। কেননা, বিপদটা হবে এই যে আমার আপন যদি আপনে ভরপুর হয়ে যায়, যদি ভারী হয়ে ওঠে স্বার্থে ও সম্পদলিপ্সায়, তবে সে ‘আপন’ নির্ঘাত ডুববে এবং নিজে ডোবার আগে অন্যদের ভরাডুবি ঘটাতে চাইবে এবং তাতে করে সবারই হবে ডোবার দশা। সেটাই এখন ঘটছে, বিশ্বময়। আমার ‘আপন’ ভাসবে যদি নিজে ভারী না-হয়ে অপরের সঙ্গে একত্রে ভাসতে চায় তবেই। মুশকিল যা ঘটানোর ঘটাবে সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা। ঘটাচ্ছেও। মানুষের পক্ষে তাই মানুষ থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে, সামাজিকতা হারিয়ে সে অধম হয়ে পড়ছে বন্য প্রাণীরও।
ক্ষমতাধরেরা ও বচনবাগীশরা যা ইচ্ছা বলুন, বলতে থাকুন, আসল কথাটা হলো সমাজ-পরিবর্তন। সেটা যেন না ভুলি। এটাও যেন না ভুলি যে পালানোর কোনো উপায় নেই, পালালেও বাঁচা যাবে না এবং বাঁচা মানে কেবল টিকে থাকা নয়, মানুষের মতো বাঁচা।
কিন্তু আমরা বাঁচব, অবশ্যই জয়ী হব, যদি আমরা যুদ্ধে থাকি। ভরসা এই যে আমরা একা নই। বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন যুদ্ধে আছে। প্রতিটি সমাজেই ব্যক্তিমানুষ যতই সন্ত্রস্ত হোক, ভয় পাক, সমষ্টিবদ্ধ মানুষ লড়ছে এবং লড়তে গিয়েই বুঝে নিচ্ছে যে বাঁচতে হলে লড়তে হবে। বাঁচার সঙ্গে মরার যে যুদ্ধ, তাতে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। ইতিহাস এগোচ্ছে এবং এগোবে। ইতিহাসে বাঁক আছে, কিন্তু থেমে-যাওয়া নেই। ইতিহাসকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে আমরা বাংলাদেশের মানুষেরাও আছি। অতীতে ছিলাম, আছি বর্তমানে এবং থাকব ভবিষ্যতেও। তবে ইতিহাস এমনি এমনি এগোয় না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি চাই, অনুশীলন চাই জ্ঞানের ও সৃজনশীলতার। সবার ওপরে চাই সংঘবদ্ধতা।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই।
২৪ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই।
২৪ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই।
২৪ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই।
২৪ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫