ইয়াসিন আরাফাত

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবারে নিত্যকার ঘটনা হয়ে উঠেছিল। বরাবরের মেতোই জারি ছিল ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি। কথা হলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র এমন উত্তেজনা কি হঠাৎ করেই জন্ম নিল? এটা কি শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণেই হচ্ছে? নাকি এর মূল আরও অনেক দূর বিস্তৃত?
‘এমপ্রেস অব চায়না’ নামের জাহাজটি যখন চীনের ক্যান্টনে (বর্তমার গুয়াংঝু) পৌঁছায়, তখন আগস্ট মাস। এই ক্যান্টনই তখন পশ্চিমের সঙ্গে চীনের যোগাযোগের ভরকেন্দ্র। সেই ১৭৬০ সাল থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যাবতীয় বাণিজ্য সম্পর্ক রক্ষায় এই বন্দরের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। সে যা-ই হোক, ১৭৮৪ সালের আগস্টে এই ক্যান্টনে ভেড়া ‘এমপ্রেস অব চায়না’ জাহাজে চড়ে শুধু পণ্যই এল না, এলেন চীনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পাঠানো অনানুষ্ঠানিক প্রতিনিধি (কনসাল) স্যামুয়েল শ। মার্কিন কংগ্রেস নিযুক্ত হলেও তিনি কিন্তু চীনের তৎকালীন কর্তৃপক্ষকে নিজের কাজ ও আগমন কোনো কিছু সম্পর্কেই কিছু জানালেন না। কূটনৈতিক তথ্য দেওয়া বা না দেওয়ার সূত্রটি তাই বলা যায় অনেক পুরোনো। আজকে যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এক দেশে আরেক দেশের বিরুদ্ধে তোলে, তার মূলটি বহু বছর আগেই প্রোথিত ছিল বলা যায়।
আধুনিক সময়ের কথা বললে এই দুই দেশের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে ৭২ বছর আগে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাকালে। লাখো কৃষকের আশার বাতি হয়ে মাও সে তুংয়ের চীনের জন্মের সময়েই রোপিত হয়েছিল চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধের বীজ। নানা সময়ে এর মাত্রা বেড়েছে-কমেছে। ট্রাম্প জমানায় এই উত্তেজনা এতটাই বেড়েছিল যে, মানুষের মনে এমনকি সত্যিকারের যুদ্ধের আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর এই উত্তেজনায় ভাটা পড়ার আশা দেখেছিল মানুষ। কিন্তু তা হয়নি। এই না হওয়ার পেছনে বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতি ও এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের নানা সমীকরণ।
অক্টোবর, ১৯৪৯
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা হয়
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সেতুং ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী সরকার চিয়াং কেই শেককে পরাজিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা করে। তখন চিয়াং এবং তার অনুগামী হাজার হাজার সেনা তখন তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের জাতীয়তাবাদে সমর্থন দিয়েছিল এবং তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে লড়েছিল। চিয়াংকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও তাকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মূলত তখন থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ চলছে।
জুন, ১৯৫০
কোরিয়ায় শুরু হয় যুদ্ধ
১৯৫০ সালের ২৫ জুন; তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রমণ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ নেয়। চীন সমাজতন্ত্রে আস্থা রাখায় উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয়। ওই যুদ্ধে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জাতিসংঘ, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চুক্তির মধ্য দিয়ে ১৯৫৩ সালে যুদ্ধটি শেষ হয়।
আগস্ট, ১৯৫৪
তাইওয়ান প্রণালী নিয়ে প্রথম সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার ১৯৫৪ সালে তাইওয়ানের ওপর থেকে মার্কিন নৌবাহিনীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই বছরের আগস্টে চিয়াং কাইন তাইওয়ান প্রণালীতে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে। তখন চীনের সেনারা হামলা চালিয়ে চিয়াং কাইনের বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পরে ওয়াশিংটন চিয়াংইয়ের জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫৫ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র চীনে পরমাণু হামলার হুমকি দেয়। ওই বছরের এপ্রিলে চীন আলোচনায় বসতে রাজি হয়। তবে দাচেন দ্বীপ জয়ের মাধ্যমে চীন তখন সীমিত পরিসরে নিজেদের জয়ী দাবি করে। এই সংকট ১৯৫৬ ও ১৯৯৬ সালেও দেখা দিয়েছিল।
১৯৫৯ সালের তিব্বত বিদ্রোহ
তিব্বত দখলের নয় বছর পর তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। তিব্বতের লাসা থেকে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। চীনা বাহিনীর হাতে তখন হাজার হাজার তিব্বতি নিহত হয় এবং দালাই লামা বাধ্য হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য চীনের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫০-এর দশকে তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ হয়েছিল, তাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সমর্থন ছিল।
পরমাণু শক্তিধর দেশের তালিকায় চীনের প্রবেশ
চীন প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়১৯৬৪ সালে, যখন ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ চলছিল। সে সময় চীন সীমান্ত এলাকায় ভিয়েতনামের সেনাদের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
পিংপং কূটনীতি
১৯৭১ সালে চীনের আমন্ত্রণে মার্কিন টেবিল টেনিস (পিংপং) দল চীন সফর করে। এ জন্য এর নামকরণ হয় পিংপং কূটনীতি। ‘পিং পংকূটনীতি’ চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে। ১৯৬৪ সালে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের স্বার্থ বিবেচনায় ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কৌশল নেয়। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার চীনে গোপন সফরে আসেন। এরপরই চীনকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

নিক্সনের চীন সফর
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭২ সালে চীন সফর করেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নিক্সন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সাংহাই কমিউনিক চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে জটিল ইস্যুতে আলোচনা করতে রাজি হয় দুই দেশ। তবে ওই দশকের বেশির ভাগ সময় এ সম্পর্কের উন্নয়ন ধীর গতিতে চলেছে।
‘এক চীন’ নীতিতে মার্কিন স্বীকৃতি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রশাসন ১৯৭৯ সালে চীনের কূটনীতিকে স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমেই ‘এক চীন’ নীতিতে মার্কিন স্বীকৃতি মেলে। চীনের তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী ডেং জিয়াওপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এপ্রিলে মার্কিন কংগ্রেস তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টে অনুমোদন দেয়। এর মাধ্যমে তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক শুরু হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী তাইপেতে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা ছিল ওয়াশিংটনের। তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতির লঙ্ঘন করেনি।
রিগান যুগ
প্রেসিডেন্ট পদে রোনাল্ড রিগান আসার পর তার প্রশাসন তাইওয়ানকে ছয়টি বিষয়ে আশ্বস্ত করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাইওয়ান ইস্যুতে হস্তক্ষেপ না করার আশ্বাস। তবে কবে নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। একই সময়ে চীনের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে এক চীন নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পরোক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ। রিগান ১৯৮৪ সালে চীন সফর করেন। সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন অস্ত্র কেনার অনুমতি পায়।
তিয়েনআনমেন গণহত্যা
বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তখন চীনের রাজনৈতিক নেতৃত্বও ভীষণভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী অ্যাসল্ট রাইফেল ও ট্যাংক ব্যবহার করে। এ হত্যাযজ্ঞ তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যা বা ৪ জুন গণহত্যা নামে পরিচিত। এই গণহত্যার পর চীনের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয় চীন।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
তাইওয়ানে ১৯৯৬ সালের মার্চে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, যেখানে জয় পান লি তেং-হুই। তাকে হংকংয়ের 'গণতন্ত্রের জনক বলা হয়। তাইওয়ানের ভোটারদের গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে চীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। নির্বাচিত হওয়ার এক বছর আগে লি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ
ইউএস-চীনা রিলেশন অ্যাক্ট ২০০০-এ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সই। ওই চুক্তির কারণে ২০০১ সালের চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য ৫০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০০৬ সালে চীন মেক্সিকোকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংঘর্ষ
২০০১ সালের এপ্রিলে মার্কিন নজরদারি বিমানের সঙ্গে চীনের যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষ হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এক পাইলট নিহত হন। চীনের হাইনা দ্বীপে মার্কিন বিমানবাহিনীর ২৪ সদস্য আটক করা হয়।, যাদের ১২ দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
চীনের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি
চীনের পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রমে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। ২০০৭ সালের মার্চে চীন সামরিক বাজেট ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। একে ভালো চোখে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতায় পরিণত হয় চীন
জাপানকে ছাড়িয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতায় পরিণত হয় চীন। তখন চীনের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাওনা ছিল ৬০ হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতির মধ্যে এই নির্ভরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভারসাম্যহীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
এশিয়ার প্রতি মনযোগী হয় যুক্তরাষ্ট্র
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন ২০১১ সালে এশিয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হলে চীনের কপালে ভাঁজ পড়ে। এশিয়ার আটটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক চুক্তিতে পৌঁছাতে একমত হলে চীন-মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের আভাস সুস্পষ্ট হয়। চীনের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বিরল ধাতুর একচেটিয়াকরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিসরে সোচ্চার হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থার মধ্যেই ২০১২ সালে দৃষ্টিহীন ভিন্নমতাবলম্বী চেন গুয়াংচেং-এর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয় দু দেশের মধ্যে। পরে সমঝোতা হলেও এর রেশ থেকে যায়।
প্রেসিডেন্ট হলেন সি চিন পিং
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম কংগ্রেসে নতুন প্রেসিডেন্ট হন সি চিন পিং। পাশাপাশি লি কেকিয়াংকে চীনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতায় এসেই চীনের পুনর্জাগরণের ডাক দেন সি।
সানিল্যান্ডস সামিট
ক্যালিফোর্নিয়ার সানিল্যান্ডে ২০১৩ সালের ৭ ও ৮ জুন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। একে উভয়পক্ষ আশাব্যঞ্জক বললেও বছর না ঘুরতেই হ্যাকিংকে কেন্দ্র করে আবার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অভিযোগ ওঠে, চীনা হ্যাকার যুক্তরাষ্ট্রের ২ কোটি ২০ লাখ সাবেক ও বর্তমান কর্মীর তথ্য চুরি করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগর
এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত শ্যাংরি লা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সেনা মোতায়েন নিয়ে আপত্তি জানান। শুরু হয় নতুন করে উত্তেজনা।
ট্রাম্প জমানা
এক চীন নীতিতে সম্মান দেখাতে চান ট্রাম্প। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রচলিত চর্চা ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট টিসাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। একই বছর এপ্রিলে ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দু দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেন। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও উত্তর কোরিয়ার বিষয়টি ছিল চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এজেন্ডা। ২০১৮ সালের মার্চে 'চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ও মেধা সম্পদের অন্যায্য হস্তান্তর' বন্ধ করতে চীনের ৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ শুরু করে। শুরু হয় বাণিজ্যযুদ্ধ। ওই বছর তিন দফায় মোট ২৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রত্যুত্তরে ৫ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে চীন। এরই মধ্যে বছরের শেষ নাগাদ কানাডায় গ্রেফতার হন হুয়াওয়ের সিএফও। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার অভিযোগ তুলে এ পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। এদিকে মার্কিন ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধের পর ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হুয়াওয়ে পাল্টা মামলা করে। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তৈরিতে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানায়। একই বছর মে মাসে বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যায়। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায়। একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় চীন। আগস্টে চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হংকং সমর্থকদের পক্ষে বিল সই করেন ট্রাম্প। বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় চীন। পরের বছর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘ ১৮ মাসের উত্তেজনার পর বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
করোনায় নতুন সংযোজন
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। পরে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন নাগরিক ছাড়া যারা চীন সফর করেছে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন করোনা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে আখ্যা দেন। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ইস্যুতে চীনকে সমর্থন করছে বলে অভিযোগ তুলে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৬০ সাংবাদিকের পরিচয়পত্র বাতিল করে। জবাবে চীন সরকার কমপক্ষে ১৩ মার্কিন সাংবাদিককে বরখাস্তের ঘোষণা দেয়। হংকংয়ের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাসের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন চেংদুতে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়।
বাইডেন প্রশাসন
আশা ছিল জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে বাণিজ্যযুদ্ধসহ চীনের সঙ্গে হওয়া নানা উত্তেজনার কিছুটা প্রশমন হবে। বেইজিংও নতুন করে সম্পর্কোন্নয়নের কথা ভাবছিল। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর বাইডেন এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেননি। ফলে বিদ্যমান নীতি অনুসরণেরই সম্ভাবনা বেশি। তাই সাত দশকের যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক, তা একরকম অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হয়।
আরও পড়ুন:

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবারে নিত্যকার ঘটনা হয়ে উঠেছিল। বরাবরের মেতোই জারি ছিল ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি। কথা হলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র এমন উত্তেজনা কি হঠাৎ করেই জন্ম নিল? এটা কি শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণেই হচ্ছে? নাকি এর মূল আরও অনেক দূর বিস্তৃত?
‘এমপ্রেস অব চায়না’ নামের জাহাজটি যখন চীনের ক্যান্টনে (বর্তমার গুয়াংঝু) পৌঁছায়, তখন আগস্ট মাস। এই ক্যান্টনই তখন পশ্চিমের সঙ্গে চীনের যোগাযোগের ভরকেন্দ্র। সেই ১৭৬০ সাল থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যাবতীয় বাণিজ্য সম্পর্ক রক্ষায় এই বন্দরের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। সে যা-ই হোক, ১৭৮৪ সালের আগস্টে এই ক্যান্টনে ভেড়া ‘এমপ্রেস অব চায়না’ জাহাজে চড়ে শুধু পণ্যই এল না, এলেন চীনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পাঠানো অনানুষ্ঠানিক প্রতিনিধি (কনসাল) স্যামুয়েল শ। মার্কিন কংগ্রেস নিযুক্ত হলেও তিনি কিন্তু চীনের তৎকালীন কর্তৃপক্ষকে নিজের কাজ ও আগমন কোনো কিছু সম্পর্কেই কিছু জানালেন না। কূটনৈতিক তথ্য দেওয়া বা না দেওয়ার সূত্রটি তাই বলা যায় অনেক পুরোনো। আজকে যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এক দেশে আরেক দেশের বিরুদ্ধে তোলে, তার মূলটি বহু বছর আগেই প্রোথিত ছিল বলা যায়।
আধুনিক সময়ের কথা বললে এই দুই দেশের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে ৭২ বছর আগে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাকালে। লাখো কৃষকের আশার বাতি হয়ে মাও সে তুংয়ের চীনের জন্মের সময়েই রোপিত হয়েছিল চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধের বীজ। নানা সময়ে এর মাত্রা বেড়েছে-কমেছে। ট্রাম্প জমানায় এই উত্তেজনা এতটাই বেড়েছিল যে, মানুষের মনে এমনকি সত্যিকারের যুদ্ধের আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর এই উত্তেজনায় ভাটা পড়ার আশা দেখেছিল মানুষ। কিন্তু তা হয়নি। এই না হওয়ার পেছনে বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতি ও এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের নানা সমীকরণ।
অক্টোবর, ১৯৪৯
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা হয়
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সেতুং ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী সরকার চিয়াং কেই শেককে পরাজিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা করে। তখন চিয়াং এবং তার অনুগামী হাজার হাজার সেনা তখন তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের জাতীয়তাবাদে সমর্থন দিয়েছিল এবং তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে লড়েছিল। চিয়াংকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও তাকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মূলত তখন থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ চলছে।
জুন, ১৯৫০
কোরিয়ায় শুরু হয় যুদ্ধ
১৯৫০ সালের ২৫ জুন; তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রমণ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ নেয়। চীন সমাজতন্ত্রে আস্থা রাখায় উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয়। ওই যুদ্ধে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জাতিসংঘ, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চুক্তির মধ্য দিয়ে ১৯৫৩ সালে যুদ্ধটি শেষ হয়।
আগস্ট, ১৯৫৪
তাইওয়ান প্রণালী নিয়ে প্রথম সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার ১৯৫৪ সালে তাইওয়ানের ওপর থেকে মার্কিন নৌবাহিনীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই বছরের আগস্টে চিয়াং কাইন তাইওয়ান প্রণালীতে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে। তখন চীনের সেনারা হামলা চালিয়ে চিয়াং কাইনের বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পরে ওয়াশিংটন চিয়াংইয়ের জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫৫ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র চীনে পরমাণু হামলার হুমকি দেয়। ওই বছরের এপ্রিলে চীন আলোচনায় বসতে রাজি হয়। তবে দাচেন দ্বীপ জয়ের মাধ্যমে চীন তখন সীমিত পরিসরে নিজেদের জয়ী দাবি করে। এই সংকট ১৯৫৬ ও ১৯৯৬ সালেও দেখা দিয়েছিল।
১৯৫৯ সালের তিব্বত বিদ্রোহ
তিব্বত দখলের নয় বছর পর তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। তিব্বতের লাসা থেকে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। চীনা বাহিনীর হাতে তখন হাজার হাজার তিব্বতি নিহত হয় এবং দালাই লামা বাধ্য হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য চীনের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫০-এর দশকে তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ হয়েছিল, তাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সমর্থন ছিল।
পরমাণু শক্তিধর দেশের তালিকায় চীনের প্রবেশ
চীন প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়১৯৬৪ সালে, যখন ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ চলছিল। সে সময় চীন সীমান্ত এলাকায় ভিয়েতনামের সেনাদের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
পিংপং কূটনীতি
১৯৭১ সালে চীনের আমন্ত্রণে মার্কিন টেবিল টেনিস (পিংপং) দল চীন সফর করে। এ জন্য এর নামকরণ হয় পিংপং কূটনীতি। ‘পিং পংকূটনীতি’ চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে। ১৯৬৪ সালে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের স্বার্থ বিবেচনায় ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কৌশল নেয়। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার চীনে গোপন সফরে আসেন। এরপরই চীনকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

নিক্সনের চীন সফর
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭২ সালে চীন সফর করেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নিক্সন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সাংহাই কমিউনিক চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে জটিল ইস্যুতে আলোচনা করতে রাজি হয় দুই দেশ। তবে ওই দশকের বেশির ভাগ সময় এ সম্পর্কের উন্নয়ন ধীর গতিতে চলেছে।
‘এক চীন’ নীতিতে মার্কিন স্বীকৃতি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রশাসন ১৯৭৯ সালে চীনের কূটনীতিকে স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমেই ‘এক চীন’ নীতিতে মার্কিন স্বীকৃতি মেলে। চীনের তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী ডেং জিয়াওপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এপ্রিলে মার্কিন কংগ্রেস তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টে অনুমোদন দেয়। এর মাধ্যমে তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক শুরু হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী তাইপেতে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা ছিল ওয়াশিংটনের। তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতির লঙ্ঘন করেনি।
রিগান যুগ
প্রেসিডেন্ট পদে রোনাল্ড রিগান আসার পর তার প্রশাসন তাইওয়ানকে ছয়টি বিষয়ে আশ্বস্ত করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাইওয়ান ইস্যুতে হস্তক্ষেপ না করার আশ্বাস। তবে কবে নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। একই সময়ে চীনের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে এক চীন নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পরোক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ। রিগান ১৯৮৪ সালে চীন সফর করেন। সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন অস্ত্র কেনার অনুমতি পায়।
তিয়েনআনমেন গণহত্যা
বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তখন চীনের রাজনৈতিক নেতৃত্বও ভীষণভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী অ্যাসল্ট রাইফেল ও ট্যাংক ব্যবহার করে। এ হত্যাযজ্ঞ তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যা বা ৪ জুন গণহত্যা নামে পরিচিত। এই গণহত্যার পর চীনের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয় চীন।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
তাইওয়ানে ১৯৯৬ সালের মার্চে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, যেখানে জয় পান লি তেং-হুই। তাকে হংকংয়ের 'গণতন্ত্রের জনক বলা হয়। তাইওয়ানের ভোটারদের গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে চীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। নির্বাচিত হওয়ার এক বছর আগে লি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ
ইউএস-চীনা রিলেশন অ্যাক্ট ২০০০-এ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সই। ওই চুক্তির কারণে ২০০১ সালের চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য ৫০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০০৬ সালে চীন মেক্সিকোকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংঘর্ষ
২০০১ সালের এপ্রিলে মার্কিন নজরদারি বিমানের সঙ্গে চীনের যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষ হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এক পাইলট নিহত হন। চীনের হাইনা দ্বীপে মার্কিন বিমানবাহিনীর ২৪ সদস্য আটক করা হয়।, যাদের ১২ দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
চীনের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি
চীনের পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রমে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। ২০০৭ সালের মার্চে চীন সামরিক বাজেট ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। একে ভালো চোখে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতায় পরিণত হয় চীন
জাপানকে ছাড়িয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতায় পরিণত হয় চীন। তখন চীনের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাওনা ছিল ৬০ হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতির মধ্যে এই নির্ভরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভারসাম্যহীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
এশিয়ার প্রতি মনযোগী হয় যুক্তরাষ্ট্র
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন ২০১১ সালে এশিয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হলে চীনের কপালে ভাঁজ পড়ে। এশিয়ার আটটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক চুক্তিতে পৌঁছাতে একমত হলে চীন-মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের আভাস সুস্পষ্ট হয়। চীনের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বিরল ধাতুর একচেটিয়াকরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিসরে সোচ্চার হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থার মধ্যেই ২০১২ সালে দৃষ্টিহীন ভিন্নমতাবলম্বী চেন গুয়াংচেং-এর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয় দু দেশের মধ্যে। পরে সমঝোতা হলেও এর রেশ থেকে যায়।
প্রেসিডেন্ট হলেন সি চিন পিং
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম কংগ্রেসে নতুন প্রেসিডেন্ট হন সি চিন পিং। পাশাপাশি লি কেকিয়াংকে চীনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতায় এসেই চীনের পুনর্জাগরণের ডাক দেন সি।
সানিল্যান্ডস সামিট
ক্যালিফোর্নিয়ার সানিল্যান্ডে ২০১৩ সালের ৭ ও ৮ জুন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। একে উভয়পক্ষ আশাব্যঞ্জক বললেও বছর না ঘুরতেই হ্যাকিংকে কেন্দ্র করে আবার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অভিযোগ ওঠে, চীনা হ্যাকার যুক্তরাষ্ট্রের ২ কোটি ২০ লাখ সাবেক ও বর্তমান কর্মীর তথ্য চুরি করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগর
এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত শ্যাংরি লা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সেনা মোতায়েন নিয়ে আপত্তি জানান। শুরু হয় নতুন করে উত্তেজনা।
ট্রাম্প জমানা
এক চীন নীতিতে সম্মান দেখাতে চান ট্রাম্প। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রচলিত চর্চা ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট টিসাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। একই বছর এপ্রিলে ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দু দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেন। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও উত্তর কোরিয়ার বিষয়টি ছিল চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এজেন্ডা। ২০১৮ সালের মার্চে 'চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ও মেধা সম্পদের অন্যায্য হস্তান্তর' বন্ধ করতে চীনের ৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ শুরু করে। শুরু হয় বাণিজ্যযুদ্ধ। ওই বছর তিন দফায় মোট ২৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রত্যুত্তরে ৫ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে চীন। এরই মধ্যে বছরের শেষ নাগাদ কানাডায় গ্রেফতার হন হুয়াওয়ের সিএফও। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার অভিযোগ তুলে এ পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। এদিকে মার্কিন ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধের পর ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হুয়াওয়ে পাল্টা মামলা করে। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তৈরিতে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানায়। একই বছর মে মাসে বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যায়। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায়। একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় চীন। আগস্টে চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হংকং সমর্থকদের পক্ষে বিল সই করেন ট্রাম্প। বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় চীন। পরের বছর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘ ১৮ মাসের উত্তেজনার পর বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
করোনায় নতুন সংযোজন
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। পরে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন নাগরিক ছাড়া যারা চীন সফর করেছে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন করোনা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে আখ্যা দেন। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ইস্যুতে চীনকে সমর্থন করছে বলে অভিযোগ তুলে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৬০ সাংবাদিকের পরিচয়পত্র বাতিল করে। জবাবে চীন সরকার কমপক্ষে ১৩ মার্কিন সাংবাদিককে বরখাস্তের ঘোষণা দেয়। হংকংয়ের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাসের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন চেংদুতে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়।
বাইডেন প্রশাসন
আশা ছিল জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে বাণিজ্যযুদ্ধসহ চীনের সঙ্গে হওয়া নানা উত্তেজনার কিছুটা প্রশমন হবে। বেইজিংও নতুন করে সম্পর্কোন্নয়নের কথা ভাবছিল। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর বাইডেন এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেননি। ফলে বিদ্যমান নীতি অনুসরণেরই সম্ভাবনা বেশি। তাই সাত দশকের যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক, তা একরকম অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হয়।
আরও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবা
২৩ মার্চ ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবা
২৩ মার্চ ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবা
২৩ মার্চ ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ হঠাৎ করেই যেন গোটা বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং এসবকে কেন্দ্র করে দুই বাণিজ্যশক্তির দ্বৈরথ একেবা
২৩ মার্চ ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ দিন আগে