Ajker Patrika

রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান খেলনা পুতুল নয়

উপসম্পাদকীয়
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৪: ৪৫
রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান খেলনা পুতুল নয়

বিশ্ব এখন ক্রমেই জটিলতর হয়ে উঠছে। ২২২টির মতো রাষ্ট্র আমাদের এই গ্রহে রয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। বাকি রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত কেন নয়, তার নানা কারণ হয়তো রয়েছে। তবে আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব সার্বভৌমত্ব, সরকার এবং সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থায় পরিচালিত হওয়ার কথা। যদিও রাষ্ট্রের চরিত্র, সরকারব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক রূপের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তারপরও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহ নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাতেই প্রবাহিত হচ্ছে।

আধুনিক-পূর্ব যুগে রাষ্ট্র ও সরকারের চরিত্র ছিল অনেকটাই ভিন্ন। গত এক-দেড় শ বছরে পৃথিবীতে রাষ্ট্র চরিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি নতুন ঐতিহাসিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। উপনিবেশবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশে নতুন নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে। লাতিন আমেরিকায় ১৯ শতকের প্রথমার্ধে ৩০টির মতো রাষ্ট্র ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। স্বাধীন এসব রাষ্ট্র আক্ষরিক অর্থে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হলেও বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাববলয় থেকে কতটা মুক্ত হতে পেরেছে, সেটি মস্ত বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ স্বাধীন রাষ্ট্রই স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। আধুনিক রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার সমস্যা কত জটিল এবং আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অতিক্রম করে অগ্রসর হতে হয়, তা প্রতিটি রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন তথা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই কেবল বোঝা যায়। কোনো রাষ্ট্রই এখন অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নানা আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারছে না। প্রতিটি রাষ্ট্রকেই চলতে হচ্ছে জটিল পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে। সেখানে সরকারব্যবস্থা জটিল, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণকামী দর্শনে পরিচালিত হলেই কেবল রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা একভাবে সম্মুখের দিকে এগোতে পারে।

আবার সরকারব্যবস্থা যদি হয় পশ্চাৎপদ কিংবা রক্ষণশীল অথবা অনাধুনিক চিন্তাধারার। তাহলে সে রাষ্ট্রের জনগণের ভাগ্য ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। তবে বর্তমান দুনিয়ার বেশির ভাগ রাষ্ট্রই পরিচালিত হয় কোনো না কোনো শাসনতন্ত্র অথবা রাষ্ট্র পরিচালিত শক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট আদেশ-নির্দেশে। যে রাষ্ট্রে সরকার এবং সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটে, সে রাষ্ট্রের বেড়ে ওঠার সংকট সহজে কাটার নয়। সুতরাং এখনকার যেকোনো রাষ্ট্রকে সরকারব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া খুব যত্নসহকারে মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে যেসব রাষ্ট্র আধুনিক আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক চরিত্রকে ধারণ করে অগ্রসর হতে চায় তাদের রাষ্ট্র, সরকার এবং সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। কেননা, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরস্পরবিরোধী নানা শক্তি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল থাকে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক নানা শক্তিরও সংযোগ, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিটি রাষ্ট্রকে এখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যা, সংকট, সম্ভাবনা ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখেই পরিচালিত হতে হচ্ছে।

এখানে সামান্যতম ব্যত্যয় ঘটার পরিণতি রাষ্ট্র ও জনগণের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনযাত্রার ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে। নিজেদের দেশ, আশপাশের রাষ্ট্রসমূহ এবং বিশ্বের দিকে তাকালেই আমরা এর যথেষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাব। কিন্তু দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমাদের দেশে এখনো অনেকেই রাষ্ট্র, সরকার এবং সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থার গুরুত্বকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারছে বলে মনে হয় না। সে কারণেই অনেকেই রাষ্ট্র, সরকার এবং সংবিধানকে উপেক্ষা করে অনেক সময় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান দেখতে চান বা পেতে চান। কিন্তু সেটি মোটেও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা, সরকারব্যবস্থা এবং সংবিধানের গুরুত্বকে উপলব্ধি করার অবস্থান থেকে বিবেচনাপ্রসূত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে।

আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচন নিয়ে যে আস্থার সংকটের কথা বলা হয়, তার অন্তর্নিহিত কারণ আমরা খুব কমই তলিয়ে দেখছি। বাহ্যিকভাবে একদল অন্য দলের ওপর অনাস্থার যে দাবি করা হচ্ছে তা রাষ্ট্র, সরকারব্যবস্থা এবং সংবিধানের আদর্শকে অনুসরণ না করা রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। এটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া থেকে জোরপূর্বকভাবে বিচ্যুত করার পর রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে যেসব শক্তির দখলদারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেখান থেকেই। আমরা ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র লাভ করেছি। রাষ্ট্র লাভের পরপরই একটি সংবিধানও আমরা রচনা করতে পেরেছিলাম। সেই সংবিধানটি যাঁরা রচনা করেছেন তাঁরা আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক শক্তি ছিলেন। তাঁদের চিন্তাই ছিল একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সে কারণেই তাঁরা সরকারব্যবস্থাতেও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে কার্যকর করার গণতান্ত্রিক রীতিনীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর বৈধ সরকারকে হত্যা-ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত এবং সামরিক-বেসামরিক ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতা দখলকারী শক্তিসমূহ ছিল অগণতান্ত্রিক, প্রতিক্রিয়াশীল এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে পশ্চাৎমুখী ধারায় পরিচালিত করার অপশক্তি। এরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র রাজনীতির অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল ছিল। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা অপশক্তি বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭২-এর সংবিধানের আদর্শবিরোধী ধারায় পরিচালিত করার লক্ষ্যেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছিল। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র, সরকার এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটি এতটাই গভীরে রাজনীতিকে নিক্ষিপ্ত করেছে, যেখান থেকে বের হয়ে 
আসা বাংলাদেশের পক্ষে আজও সম্ভব হয়নি। এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এর চরম মূল্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রকে যেই সংকটে ফেলা হয়েছিল তা অনেকের কাছে তখন শিশুর হাতের খেলনার মতোই মনে হয়েছিল। যারা বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করতে সশস্ত্র কিংবা ভিন্ন পন্থায় চেষ্টা করেছিল, তাদের কাছে ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তী ঘটনাবলি ছিল রোমাঞ্চকর। কিন্তু রাষ্ট্র, সরকার এবং সংবিধানকে যাঁরা এই সময়ের বাস্তবতা দিয়ে উপলব্ধি করতে অক্ষম ছিলেন, তাঁরা এমনটিই প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের মোহ ভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। শেষ পর্যন্ত কোনো রোমান্টিক স্বপ্নই তাঁদের কাছে ধরা দেয়নি। রাষ্ট্রের ক্ষমতা এক হাত থেকে অন্য হাতে চলে গেছে। কিন্তু তাঁদের কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রকে নিয়ে যারা বেহাত বদলের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিল তাদের শক্তি, ক্ষমতার রশি দেশে ও বিদেশে অনেক দূরে প্রথিত রয়েছে, যা এদের বোঝার কোনো ক্ষমতাই ছিল না। এরপর সংবিধান কেবলই কাটছাঁট হয়েছে, কুমিরের ছানার মতো প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা বেহাত থেকে বেহাতেই কেবল দূরে সরে গেছে। আন্দোলন হয়েছে দেশে, ক্ষমতার পালাবদলও ঘটেছে কিন্তু রাষ্ট্র আর ফিরে আসতে পারেনি তার আপন চরিত্রে। যারা রাষ্ট্রকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চেয়েছে, তারা বাহ্যিকভাবে সরকার, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে মানুষকে নানা স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার মূল রশি তাদের হাতেই ছিল। ১৯৯১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রলেপ মাখিয়ে ‘গণতন্ত্রে’ উত্তরণের একটি স্বপ্ন দেখানো হলো। কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তি সেই উত্তরণে ছিটকে পড়েছিল, অগণতান্ত্রিক শক্তি ‘গণতান্ত্রিক’ মর্যাদা লাভ করেছিল! এরপর বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা দেওয়া হলো। কিন্তু সেটিও তৃতীয় ধাপে (২০০৬) এসে মস্ত বড় হোঁচট খেল। ২০০৭ সালে ক্ষমতা সেই সুযোগে বেহাত হয়ে গেল। দুই বছর অনেক নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালের নির্বাচন ফিরিয়ে আনা গেল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করলেও পৌনে দুই মাসের মাথায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎখাতের মুখে পড়তে হয়েছিল। এরপরও বেশ কয়েকবার সরকার উৎখাতের নীলনকশা ভেতরে-ভেতরে বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়েছিল। চেষ্টা ছিলে  ২০১৩ সালে সাংবিধানিক ধারাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যাত হয়। নির্বাচন নিয়ে সংকট, অনাস্থা আর কাটেনি। পাকিস্তান একই কারণে আজও সাংবিধানিক ধারায় ফিরে আসতে পারেনি। মিয়ানমার সংকটের অতলেই রয়ে গেল।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীবাংলাদেশে আবার জাতীয় সরকার, নির্দলীয় সরকারের আড়ালে রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধানকে উপেক্ষা করার প্রবণতা চলছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ৩১ সদস্যের নাম প্রস্তাব করেছেন। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আবারও বেহাত করার নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ সৃষ্টি করার ফাঁদ পাতা হতে পারে। অথচ শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনে সংসদকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান ও সংসদকে বাদ দিয়ে দুই বছরের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ যে প্রস্তাব করেছেন, যা রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধানকে শুধু উপেক্ষাই নয়, নতুন করে সংকটে ফেলারও গভীর কোনো নীলনকশার অংশ হতে পারে। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ঘাপটি মেরে থাকা নানা অপশক্তি বাংলাদেশকে কোথায় টেনে নিয়ে যাবে, সেটি অনেকেই হয়তো বুঝতে পারবেন না। তবে স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিবাদী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ববিরোধী অনেকেই মুখিয়ে আছে করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য।

যেখানে শ্রীলঙ্কা এত সংকটে থেকেও রাজনৈতিক শক্তি এবং সংসদের মাধ্যমেই সংকটের উত্তরণ খোঁজার চেষ্টা করছে, 
সেখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংবিধান ও সংসদকে এড়িয়ে জাতীয় সরকার গঠনের নামে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিয়ে শিশুর হাতের খেলনা পুতুলের মতো বেহাত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন না তো? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত