Ajker Patrika

তালেবানের আসল জোর কোথায়

আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২১, ০০: ৫০
তালেবানের আসল জোর কোথায়

আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরছে তালেবান। এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এরই মধ্যে তাজিকিস্তানে পাড়ি দিয়েছেন। দেশটিতে শান্তি প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এরই মধ্যে তাঁকে ‘সাবেক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফলে যা বাকি আছে, তা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনগুণ বড় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবান এত সহজ জয় পল কী করে? তাদের জোরটাই বা কোথায়? 

আফগান সরকারের সেনাবাহিনীতে আছে ৩ লাখ ৬৯৯ সেনা। বিপরীতে বিদ্রোহী তালেবান গোষ্ঠীর সদস্য মাত্র ৮০ হাজার। অস্ত্রশস্ত্রেও কাগজে কলমে এগিয়ে আফগান সরকারি বাহিনী। অথচ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাবুল দখলে নিল তালেবান। প্রশ্ন হলো, একই জাতির মানুষ হয়েও আফগান সরকারি বাহিনীর কী নেই, যা তালেবানের আছে? 

প্রেসিডেন্ট প্যালেস তালেবানদের দখলেযুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করেছিল ২০০১ সালে। দুই দশক সেখানে তারা ছিল আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। এই সময়ে তারা ব্যয় করেছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। হয়েছে সেনাক্ষয়। সবচেয়ে বড় ঝড়টি গেছে আফগানদের ওপর দিয়ে। সামরিক–বেসামরিক মিলিয়ে উভয় পক্ষের প্রায় ৫০ হাজার লোক নিহত হয়েছে। তাহলে এত ব্যয়ের অর্থ কী থাকল? 

বলা হয়েছিল আফগান সরকারের বাহিনীকে প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকার পরিচালনার জন্য তাদের প্রস্তুত করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুই যে হয়নি, তা এখন তো স্পষ্ট। কেন হয়নি? একই জাতির মানুষ দুই পক্ষে বিভক্ত হওয়ার পর কেন তাদের মধ্যে এত বড় ব্যবধান দেখা যাচ্ছে? আজকের তালেবান জয়ের পেছনে মূলত রয়েছে এই দুই বাহিনীর গঠনের মধ্যে। 

তালেবান পক্ষে সেনা সংখ্যা কম, অস্ত্রশস্ত্রও সেকেলে না হলেও অত্যাধুনিক নয়। বিপরীতে অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত আফগান সরকারি বাহিনীর সদস্য অনেক। বোঝাই যাচ্ছে যুদ্ধটা যদি কাগজে–কলমে হতো, তবে নিঃসন্দেহে তালেবান পরাজিত হতো। হয়নি। কারণ, আফগান সরকারি বাহিনীর মাথার ওপর ছাতা হয়ে ছিল ন্যাটো বাহিনী। ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া। তাদের উপস্থিতি এই বাহিনীকে কখনোই নিজের দুর্বলতা বুঝতে দেয়নি। বিপরীতে তালেবান যোদ্ধারা মার্কিন হামলায় পরাভূত হয়ে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের কৌশলগত ভুলগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছে হয়তো। এদিকে ক্ষমতার কাছে বসে যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রচ্ছায়ায় আফগান বাহিনীর মধ্যে হয়েছে দুর্নীতির সংক্রমণ। 

প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তালেবান

আফগানিস্তানে মার্কিন তহবিল ব্যবহারের পর্যবেক্ষক একটি প্রতিষ্ঠান গত মাসে সতর্ক করে বলেছিল, মার্কিন বাহিনীর আফগান বাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেসের (এএনডিএসএফ) স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনো যোগ্যতাই নেই। অথচ ২০২১ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। 

এই অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হলো, তার কোনো সুস্পষ্ট হিসাব নেই। অথচ শুধু এই ব্যয়ের পরিমাণের ওপর দাঁড়িয়েই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর যোগ্যতার নিরূপণ করেছে। আর এতেই হয়েছে বিপত্তি। এই মূল্যায়ন নিয়ে গত বছর যখন মার্কিন প্রশাসন সচেতন হয়ে ওঠে, তত দিন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সেনা প্রত্যাহারের যাবতীয় কাজ তত দিনে সম্পন্ন। আবার চাইলেও এত বড় ব্যয় আবার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার অবস্থাও নেই ওয়াশিংটনের। ফলে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তাকে অটল থাকতে হয়েছে। 

 

এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয়েছে বাহিনীর ভেতরে থাকা দুর্নীতির সমীকরণ, তখন তা তার অযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সেনা নিয়োগ থেকে শুরু করে নেতৃত্ব পর্যায়ে তাদের তুলে আনা বা পদোন্নতি—সব ক্ষেত্রেই বিস্তৃত হয়েছিল এই দুর্নীতি। 

এই পরিস্থিতিতে তালেবান পক্ষ ঠিক বিপরীতভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছে। তারা ছড়িয়ে পড়েছিল আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আফগান সরকার যখন শহরাঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই সন্তুষ্ট ছিল, তখন তালেবান নিজেদের ছড়িয়ে দেয় সারা দেশে। মাঝেমধ্যে দু–একটি স্থাপনা বা বিশেষ দিন বেছে যে বোমা হামলা, তা আদতে ছিল নিজেদের উপস্থিতির জানান, যা একই সঙ্গে তাদের নতুন সদস্যদের উজ্জীবিতও করেছে। মার্কিন সেনা উপস্থিতির দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া হিসেবে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের সংগঠনের প্রসার ঘটানো তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। ফলে সাংগঠনিকসহ সব দিক দিয়েই তারা গড়ে উঠেছে। 

যুদ্ধ কৌশলে আফগান বাহিনী মুখ্যত সম্মুখ যুদ্ধের অপেক্ষায় ছিল। তাদের বড় সাহস ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্মুখ যুদ্ধের এই কৌশলই পিছিয়ে দিয়েছে এএনডিএসএফকে। তারা অনেকটা গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করতে এই কয় বছরে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া তালেবানকে মোকাবিলার কোনো নিজস্ব কৌশল স্থির করেনি। তালেবানও যুক্তরাষ্ট্র সরে পড়ার আগ পর্যন্ত মুখোমুখি আসেনি। ফলে নিয়মিত বিরতিতে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো তালেবান যখন সামনে এল, তখন হকচকিয়ে গেল এএনডিএসএফ। তারা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল বলা যায়। সঙ্গে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত কর্তাব্যক্তিরা তাদের মুখোমুখি হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো নৈতিক ভিত্তিও পেল না। দেশটির ভেতরে আশরাফ গনি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অসন্তোষও ছিল। সব মিলিয়ে যে ক্ষেত্র তৈরি হলো, তা তালেবান উপস্থিতিতে ছেড়ে যেতে এক রকম বাধ্যই ছিল আফগান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বিভিন্ন প্রদেশে এমনটাই দেখা গেছে, যার ফল হলো দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধ ও এত এত মৃত্যু শেষে অতীত সময় ফিরে আসার শঙ্কা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত