Ajker Patrika

যে ৫ কারণে বাইডেন-সির ফোনালাপ এত গুরুত্বপূর্ণ

যে ৫ কারণে বাইডেন-সির ফোনালাপ এত গুরুত্বপূর্ণ

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে প্রথমবারের মতো ফোনালাপ করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ফোনালাপ এমন সংকট সময়ে সিনো-মার্কিন সম্পর্কে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। 

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা সি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ককে উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়াও এখন পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই হতে যাচ্ছে সি ও বাইডেনের ফোনালাপ। 

বাইডেন-সির ফোনালাপকে পাঁচটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন। কারণগুলো হলো: 

 ১. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মুহূর্তে এই ফোনালাপ 
একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সির সঙ্গে কথা হবে বাইডেনের। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন রাশিয়াকে সামরিক বা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করছে। যদি চীন রাজি হয় তাহলে পশ্চিমাদের সঙ্গে আগামী কয়েক দশক ধরে দেশটির সম্পর্ক খারাপ চলতে পারে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ চীন ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি সহায়তা করতে চাইছে। 
 
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কিছু ন্যাটো মিত্রকে জানিয়েছে যে তাদের বিশ্বাস, চীন রাশিয়াকে সহযোগিতা দিতে ইচ্ছুক। তবে মস্কো এটি অস্বীকার করেছে। বেইজিংও জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হচ্ছে না। 

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে বিচলিত সি। কারণ চীনের গোয়েন্দারাই বলতে পারছে না কী হবে এই যুদ্ধের পরিণতি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধ আরও বেশ কয়েক সপ্তাহ চলবে। 
 
২. রাশিয়াকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে পারে চীন 
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন না যে, চীন রাশিয়াকে ট্যাংক বা জেটের মতো বড় সমর সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। বরং তাঁদের বিশ্বাস, চীন রাশিয়ার জন্য খাবার, গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশের মতো ছোট রসদ পাঠাবে। 

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন রাশিয়াকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করতে সহায়তা করবে। যদিও মার্কিন এবং ইউরোপীয় পদক্ষেপের প্রভাবকে সম্পূর্ণরূপে কমানো চীনের পক্ষে সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, সির সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন রাশিয়াকে সাহায্য না দেওয়ার জন্য বলবেন। 

এ নিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দেবেন যে, রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য যে কোনো পদক্ষেপের জন্য চীনকে দায়ভার নিতে হবে। 

চলতি বছর বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম জাতীয় কংগ্রেসের সি তৃতীয় মেয়াদে চীনের ক্ষমতায় আসীন থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বছরে, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, সি ছোট নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন থাকবেন। 

বেইজিংয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গত বছর ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। সেখানে গত বছর রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার। 

অবশ্য রাশিয়াকে চীন সাহায্য করলে বাইডেন এবং তার প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে তা এখনো জানায়নি। 

 ৩. যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে অংশীদারত্বকে ঠেকাতে হবে 
ইউক্রেনে হামলা চালানোর আগেই পুতিন ও সির সম্পর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক বিল বার্নস গত সপ্তাহে বলেছিলেন, অংশীদারত্বের মূলে রয়েছে অনেক পরিকল্পিত বিষয়। 

গত ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিক উদ্বোধনের সময় বেইজিং যান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে পুতিন ও সি ঘোষণ দেন যে, তাঁদের সম্পর্কের কোনো সীমা নেই। এরপর থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধে সির প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে পশ্চিমারা। 

যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন কর্মকর্তার চীনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল চীন। আবার গত মাসে একজন শীর্ষ চীনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো উচিত। 

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ব্লিঙ্কেন বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম ও নীতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর প্রভাব ব্যবহার করতে পারেন। এর পরিবর্তে চীন নিজেকে একটি নিরপেক্ষ সালিসকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে বিপরীত দিকে হাঁটছে। 

 ৪. এশিয়ায় মার্কিন মিত্ররা ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ নিয়ে পুরো বিশ্বই উদ্বিগ্ন। ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তাইওয়ান। স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের বলে দাবি করে চীন। 

সম্প্রতি দ্বীপটির কাছাকাছি ঘন ঘন সামরিক বিমান উড়িয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও সতর্ক করে দিয়েছে বেইজিং। ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম দিকে আশঙ্কা ছিল যে, তাইওয়ানের প্রতি চীন যেমন আচরণ করছে, রাশিয়াও ইউক্রেনের ব্যাপারে একইভাবে পা ফেলবে। 

মার্কিন কর্মকর্তার বলছেন, রাশিয়ার এই যুদ্ধের পরিণতি তাইওয়ানকে নিয়ে পুনরায় ভাবাতে পারে চীনকে। রাশিয়ার এই যুদ্ধের দিকে শুধু পশ্চিমারা কিংবা ন্যাটোই তাকিয়ে নয়, এর প্রভাব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও পড়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বার্থ এশিয়ার দেশগুলোকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বাধা দেবে। আর এটি নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন না সি। জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার কিছু মার্কিন মিত্র রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পরেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে যে সাড়া দেবে, এমনটি দেখে বিস্মিত বাইডেনের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা দল। 

 ৫. বাইডেন এবং সির দীর্ঘ জানাশোনা
ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় জো বাইডেন সির সঙ্গে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বাইডেন এখনো সির সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এ সময়ে তাঁদের বেশির ভাগ বৈঠক হয়েছে ফোনে অথবা ভিডিও কনফারেন্সে। 

ইউক্রেন সংঘাতের আগে, বাইডেন আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতিতে এশিয়ার ওপর নজর দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে পরবর্তী শতাব্দীর একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হোয়াইট হাউস সাম্প্রতিক সময়ে ব্যস্ত থাকলেও তাঁরা অন্যান্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে নজর সরাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত