Ajker Patrika

বিএনপিকে মানুষ কেন ‘হ্যাঁ’ বলবে?

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৬
বিএনপিকে মানুষ কেন ‘হ্যাঁ’ বলবে?

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ‘না’ রোগে পেয়েছে। তারা যা চায় তা পাওয়ার অবস্থা হলে তখন বলে—না, এটা চাই না। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন চেয়েছিল। সরকার আইন করার উদ্যোগ নেওয়ার পর বলে, না, আইন চাই না। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতায় যাওয়ার বৈধ ও গণতান্ত্রিক উপায় হলো নির্বাচনে জেতা। কিন্তু নির্বাচন এলে বলে, না, নির্বাচনে যাব না। তাহলে কীভাবে ক্ষমতায় যাবে? বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। তারপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তারপর ‘মানবতার নেত্রী’ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
 
কবে এ বিষয়গুলো ঘটবে? কবে হবে বিএনপির ইচ্ছাপূরণ? গয়েশ্বর রায় বলেছেন, সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অচিরেই এই সরকারের পতন হবে। বাতি যেমন নেভার আগে জ্বলে ওঠে, সরকারের অবস্থাও নাকি তাই। কখন নিভে যাবে, তা তারা নিজেরাও টের পাবে না। 
 
যদি ধরে নেওয়া হয়, সরকার তার অবস্থা টের পাচ্ছে না, তাহলে কি এই প্রশ্ন আসে না যে, বিএনপি কি নিজের অবস্থা টের পাচ্ছে? দলটি তো কত বছর ধরে জ্বলে ওঠার কথা বলছে। কিন্তু জ্বলে ওঠার আগেই তো দপ করে নিভে যাচ্ছে। আন্দোলনের দিন-তারিখ ঘোষণা করে, আন্দোলন আর হয় না। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দূরে সরে গেলেই সরকার পড়ে যাবে, কারণ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সরকারের খুঁটি হয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন। তাই তো হওয়ার কথা।
 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন তো সরকারের অনুগতই হয়। বলা হয়, সরকার বিরোধী দলকে রাজপথে নামতে দেয় না। হামলে পড়ে। এটাই তো স্বাভাবিক।
 
সরকারের সহায়তা নিয়ে, সরকারের আনুকূল্য নিয়ে কি কোনো দেশে বিরোধী দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে? জেল-জুলুমের ভয় পেলে কি নেতা হওয়া যায়? শেখ মুজিবুর রহমান কি জেলের ভয়ে কখনো পিছপা হয়েছেন? ফাঁসির দড়ি দেখেও ভীত হননি বলেই তো শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, জাতির পিতা হতে পেরেছেন।
 
বিএনপি অবশ্য বলতে পারে, কই আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানকে তো ক্ষমতায় যেতে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়নি। বুদ্ধিমান হলে ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন কিছু নয়।
 
সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তিনি সফল হয়েছেন। ১৯৭১ সালে অগ্নিঝরা মার্চে তিনি পাকিস্তানের একজন অনুগত সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে অস্ত্রবাহী ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁকে দিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানোয় পরবর্তী সময়ে তাঁকে বানানো হলো ‘স্বাধীনতার ঘোষক’। আবার ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়েও তিনি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৌশলের খেলা খেলে ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে যান। ক্ষমতা সংহত করতে নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের এক বোতলে ঢুকিয়ে ঘুঁটা দিয়ে এমন এক ককটেল রাজনীতি চালু করেন, যা কার্যত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন ২০১০ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান খুব চালাক ছিলেন, যাকে বলে চিকন বুদ্ধির মানুষ—তিনি অনেক বাম-ডানদের নিয়ে সার্কাস খেলেছিলেন।’ কিন্তু ‘চিকন বুদ্ধি’ তাঁর রক্ষাকবচ হতে পারেনি।
 
বিএনপি জিয়ার অনুসারী বলেই সম্ভবত দলের নেতারা জিয়ার পথই অনুসরণ করতে চান। দলটি সব সময় ক্ষমতায় যাওয়ার শর্টকাট পথ খোঁজে। সুযোগ খোঁজে ‘যদি লাইগা যায়’! কিন্তু চিকন বুদ্ধির নেতা না থাকায় দলটি বারবার ‘ধরা’ খেয়ে খেয়ে এখন এক অসহায় অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
 
‘জোরজবরদস্তি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না’—এই আপ্তবাক্য উচ্চারণ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা বাস্তবে অর্থহীন। শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড তৈরি করেছেন। বিএনপির নীতি-কৌশলের সঙ্গে মোটাদাগে আওয়ামী লীগকে এখন আলাদা করা কঠিন বলেই মানুষ সম্ভবত বিএনপিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিএনপি সরকারে থেকে যেভাবে দেশ চালিয়েছে আওয়ামী লীগ তার চেয়ে খারাপ চালাচ্ছে, সেটা মানুষ মনে করে না। ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপিতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। তারা আর অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ক্ষমতায় গেলে লুটপাটের ধারা বন্ধ করবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংহত হবে, মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, বিরোধী মত দমন করা হবে না–এসব অঙ্গীকার কি বিএনপি নেতৃত্ব একবারও করছে? সরকারের সবকিছুতে বিএনপি ‘না’ বলছে কিন্তু বিএনপিকে মানুষ কেন ‘হ্যাঁ’ বলবে তা পরিষ্কার করছে না।
 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই যে সার্চ কমিটি যে সার্চ করছে, সেখানে স্বেচ্ছায় লোকজন মিছিল করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার জন্য। এতে দেশের গণতন্ত্রের কী হবে, ভোটের কী হবে, সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। এই সার্চ কমিটি হুদা কমিশনের চেয়ে বড় কোনো বেহুদা সার্চ কমিটি বানানোর চেষ্টা করছে। আরও কোনো এক বেহুদাকে দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। এই সার্চ কমিটি যে কমিশন করতে যাচ্ছে, তাদের আমরা আগাম প্রত্যাখ্যান করছি।’
 
বিএনপির এই প্রত্যাখ্যানে কি নির্বাচন কমিশন গঠন বন্ধ থাকবে? অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম জমা দেওয়ার পর সেই তালিকা থেকে পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করার পর শুধু বিএনপি কেন, আরও অনেকে প্রত্যাখ্যান করলেও কি এখন কমিশন বাতিল হয়ে যাবে? সরকার তো সরকারের পছন্দের লোক নিয়েই কাজ করবে। কারণ সরকার কখনো এই প্রতিশ্রুতি দেয়নি যে তারা বিএনপির কথামতো কাজ করবে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কি সরকার বিরোধী দলের পছন্দ অনুযায়ী প্রশাসন সাজায়? পৃথিবীর কোনো দেশে এমন উদার রাজনীতি চলছে? 
 
সবকিছুতে না বলার বা বিরোধিতা করার রাজনীতি বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত কি কোনো সফলতা দেবে? অতীত অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে সরকারকে বেকায়দায় বা চাপে ফেলতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি যতবার যত কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, ততবারই তারা নিজেরাই চাপে বা বেকায়দায় পড়েছে। এর আগে একাধিকবার বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সরকার পতনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করেছে, জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত দলের সহযোগিতা নিয়ে দেশে ব্যাপক সন্ত্রাস-সহিংসতা করেছে, কিন্তু তার পরিণতি কী হয়েছে? বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বর্তমানে সব থেকে কমজোরি অবস্থায় আছে।
 
এর আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তাদের পছন্দের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। পরের নির্বাচনে পারবে—তার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না; বরং বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে স্ববিরোধী অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলছে, আবার দলের লোকজন স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, জয়লাভও করছেন। বিজয়ীদের দল থেকে বের করেও দেওয়া হচ্ছে না। গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে কঠোর নিন্দা-সমালোচনা করছে, সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আবার দলের বিজয়ী সংসদ সদস্যরা সংসদীয় কার্যক্রমে অংশও নিচ্ছেন। মানুষ কি বিএনপির এই স্ববিরোধী অবস্থানকে নৈতিকভাবে সঠিক মনে করছে? এতে কি বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে?
 
বিএনপি যদি তাদের মনমতো সরকার না পায়, অর্থাৎ আগামী নির্বাচনও যদি বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কি নির্বাচন থেকে বাইরে থাকবে? সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো আন্দোলন কি বিএনপির পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব হবে? বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট বা মৈত্রী গড়ে বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে। সরকার পতনের আগামী আন্দোলনে বর্তমান ২০ দলীয় জোটের বাইরে কোন কোন দল বিএনপির নতুন মিত্র হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সরকারের বিরুদ্ধে থাকলেও সব দল যে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্যের ছাতার নিচে মাথা রাখবে না, তা এখনই বলা যায়। যারা রাজনীতির অতীত থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না, তারা বারবার চুন খেয়ে মুখ পোড়াতে পারে, কিন্তু সাধারণ বোধ-বুদ্ধি থাকলে ভুল রাস্তায় কারও হাঁটার কথা নয়। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দিন কয়েক আগে এটা স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপির যে আদর্শিক অবস্থান তাতে সিপিবি অন্তত বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ মসৃণ করার জন্য শতরঞ্জি বিছিয়ে দিতে এগিয়ে যাবে না।
 
সবচেয়ে বড় কথা, যেকোনো আন্দোলন সফল করতে হলে বিশ্বাস করার মতো একটি মুখ প্রয়োজন হয়। আন্দোলনের পেছনে একটি আস্থা রাখার মতো মুখ না দেখলে মানুষ জীবনবাজি রাখতে চায় না। বিএনপির বড় সংকট তাদের কাছে ব্যাপক মানুষের আস্থাভাজন গ্রহণযোগ্য কোনো মুখ নেই। মানুষের সঙ্গে থেকে, লাগাতার লেগে থেকে তাদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মতো উজ্জ্বল মুখ বিএনপি ও তার মিত্রদের মধ্যে একটিও নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা ডিগবাজি বিশারদ এবং আগে নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর দেশ বা দেশের মানুষের কথা ভাবেন।
 
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত