Ajker Patrika

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশবাসী গ্রহণ করেননি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশবাসী গ্রহণ করেননি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সম্প্রতি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশবাসী পছন্দ করেননি। ফোনালাপে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনকে এমনটিই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যাগুলো একত্রে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আগামী বসন্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আবদুল মোমেন। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। এ সময়ে পররাষ্ট্রসচিব, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব), দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আলোচনা খুব উষ্ণ হয়েছে। আমরা সময়সূচি মিলাতে পারছিলাম না। প্রথম উনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) একটা সময় দিলেন, আমার তখন ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। তারপর আমি একটা সময় দিলাম, তিনিও তখন সময় মিলাতে পারেননি। কারণ তখন তিনি আরেকটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে।’

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কোনো আবেদন ছিল কি-না? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন করার মূল কারণ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। এ নিষেধাজ্ঞা কবে তুলবেন তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়নি, আর যুক্তরাষ্ট্রও বলেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা আলোচনা করব, একাধিক সংলাপ করব। এ সময়ে আগামী বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন দেওয়ার কারণ কী ছিল, তিনি কী উদ্বিগ্ন বা বিচলিত হয়ে ফোন দিয়েছেন? এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, ‘নিশ্চয়ই না। আপনারা এ ধরনের অলিক চিন্তা কী করে করেন? ওনার সঙ্গে আমাদের এর আগেও অনেকবার আলাপ হয়েছে। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। আগে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে, এবারের যে নিষেধাজ্ঞাটি হয়েছে, তা অনেকটা হয়েছে দেশটির আইনপ্রণেতাদের কারণে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে প্রায় পৌনে ৭টায় উনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাকে ফোন করেন। তখন আমি রাষ্ট্রপতির নৈশভোজের অনুষ্ঠানে। আমাদের আলোচনা হয় অনেকক্ষণ। উনি আমাদের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন জানান। আমি ওনাকে বললাম, আপনারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত আমাদের দেশবাসী, আমি দেশের স্পিরিট (সর্ব সাধারণের চাওয়া) যেটা সেটাই বললাম, এটা (মার্কিন সিদ্ধান্ত) দেশবাসী গ্রহণ করেননি।’

ভারতের রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বিশেষ করে এটি (মার্কিন সিদ্ধান্ত) গ্রহণ করেনি এ জন্য, আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে আমাদের প্রায় ৫০ বছরের বিশ্বাসের সম্পর্ক। আমরা সব বিষয়ে আলোচনা করি। আমরা বাংলাদেশ এমনই দেশ, প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা সব আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করি। আমাদের আশা ছিল, আপনারা কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের জানাবেন। আমরা এটা (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া খুব একটা পছন্দ করিনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (যুক্তরাষ্ট্র) খুব সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিলেন। আপনাদের যে বৈশ্বিক যে সমস্ত উদ্যোগ রয়েছে, এ প্রতিষ্ঠান (র‌্যাব) বাংলাদেশে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সেগুলো পালন করেছে। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে একটিও সন্ত্রাসী হামলা হয়নি এদের (র‌্যাব) জন্য। আর এরা (র‌্যাব) দুর্নীতিপরায়ণ না। দুর্নীতিপরায়ণ না বলেই বাংলাদেশের জনগণের এদের (র‌্যাবের) প্রতি আস্থা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে সমস্যা নিয়ে গেলে র‌্যাবের কাছে যেতে উপদেশ দেওয়া হয়। র‌্যাব এমন একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশবাসী পছন্দ করেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আলোচনার দরজা খোলা।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একে আবদুল মোমেন আরও বলেছেন, মনে রাখা উচিত, র‌্যাবই জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে তো প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ গুম হয়। আর আমাদের দেশে কয়টা লোক গুম হয়? দায়িত্বরত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর হাজারের মতো মানুষ পুলিশের গুলিতে মারা যায়। আর আমাদের দেশে মারলে বলা হয় বিচারবহির্ভূত হত্যা। আর যুক্তরাষ্ট্রে মারলে বলা হয় দায়িত্বরত অবস্থায় মারা গিয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা আর বাড়েনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করব। গণতন্ত্র নিয়ে বাইডেন সরকার অনেক জোর দিয়েছে। তখন আমরা জানিয়েছি যে, বাংলাদেশও গণতান্ত্রিক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের বিষয়ে বেশ জোর দিয়েছে। সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নাম আছে যে, এ বিষয়গুলোতে মার্কিনরা বেশ সোচ্চার। আরও বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে।’

একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকগুলো বৈঠক হয়ে থাকে। কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে এ বৈঠকগুলোতে তুলে ধরতে পারত যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি ফোনও করতে পারত। এ সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, আপনিও ফোন করবেন কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, আমরা খুব শিগগিরই বৈঠক করব। আমরা একাধিক বৈঠক করব। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করব। মার্কিন মন্ত্রী বেশ ইতিবাচক ছিলেন ফোনে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নয়াদিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে ভিসা কার্যাক্রম বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, দিল্লির ভিসা কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভিসা কেন্দ্রের পাশাপাশি দিল্লিতে অন্য কনস্যুলার পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। যদিও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা করা হয়নি।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম শিলিগুড়ি টাইমস জানায়, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনেও ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট মিশনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। পরে বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। ওই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় সে দেশের একটি গোষ্ঠী। ওই পরিস্থিতির মাঝেই চট্টগ্রামে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের দপ্তর লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। উত্তেজনা ছড়ায় সিলেটেও। তার পরেই চট্টগ্রামের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে ভারত। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয় সিলেটের উপদূতাবাসের কাছেও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

  • অন্তত ১২টি আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের ছেড়ে দেবে বিএনপি
  • জামায়াত ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দেবে, বাকি আসন সমমনা দলগুলোকে ছেড়ে দিতে পারে
  • জোট ও আসন সমঝোতা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি এনসিপি
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক আগে থেকে প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তফসিল ঘোষণার পর সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ কষছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ সব দল। সব ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহে আসন সমঝোতা শেষ করতে চায় তারা।

নির্বাচন সামনে রেখে দুই দফায় ২৭২ আসনের বিপরীতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। অবশিষ্ট ২৮ আসনের মধ্যে অন্তত ১২টি আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য জন্য ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সব ঠিক থাকলে আজ মঙ্গলবার না হলেও আগামীকাল বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, আলোচনার মধ্য দিয়ে শরিক দলগুলোর অনেক নেতার জন্য আসন ছাড়ের সবুজসংকেত দিয়েছে বিএনপি। তাঁরা হলেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ হওয়ায় তাঁর স্ত্রী তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪), এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক (চট্টগ্রাম-১৪), কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। এ ছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আমির উবায়দুল্লাহ ফারুককে সিলেট-৫, দলটির মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে নীলফামারী-১, জুনায়েদ আল হাবিবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও মনির হোসেন কাসেমীকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি ছাড়ের সবুজসংকেত দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে সমমনা অনেক দলের নেতা নিজেদের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। ৮ ডিসেম্বর ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এলডিপি দলের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। সমমনা ১২ দলীয় জোটের আরও এক শীর্ষ নেতা ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা গতকাল সোমবার বিএনপিতে যোগ দেন এবং নিজের আসন নিশ্চিত করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।

শাহাদাত হোসেন সেলিম ও সৈয়দ এহসানুল হুদা ছাড়াও সমমনা দল ও জোটের আরও কয়েক নেতা বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। এদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে দর-কষাকষির মধ্যেই গণঅধিকার পরিষদের কোনো কোনো নেতা বিএনপিতে যোগদান করতে পারেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি ২৭২ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। এতে খুব বেশি রদবদলের সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র বলছে, এই তালিকা থেকে হাতে গোনা কয়েকজন প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারা বাদ পড়তে যাচ্ছেন, সম্প্রতি প্রার্থীদের নিয়ে করা বিএনপির কর্মশালার মধ্য দিয়ে এর একটা ইঙ্গিত মিলেছে। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত বুধবার শুরু হয়ে মাঝে এক দিন বিরতি দিয়ে শনিবারে শেষ হয় ওই কর্মশালা। সেখানে তালিকায় স্থান পাওয়া প্রার্থীরা অংশ নেন। ২৭২ জনের তালিকায় নাম থাকার পরেও এই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাননি কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং যশোর-৬ আসনে কাজী রওনকুল ইসলাম। এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। আবার তালিকায় নাম না থাকার পরেও ডাক পেয়েছেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম-৪ আসনে ঘোষিত প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনকে না ডেকে আসলাম চৌধুরীকে কর্মশালায় ডাকা হয়েছে। নতুন ঘোষণায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সমমনা ৮ দলকে নিয়ে ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে জামায়াতে ইসলামী। চলতি সপ্তাহেই এই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ২০০ আসনে জামায়াত দলীয় প্রার্থী দেবে। অবশিষ্ট ১০০টি আসন সমমনা দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে জামায়াতের পক্ষ থেকে।

জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতারা জানান, সমন্বিতভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া একেবারে শেষ পর্যায়ে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আগে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। সব দলের প্রধানেরা এই বিষয় নিয়ে শিগগির আলোচনায় বসবেন। এর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। সব ঠিক থাকলে আজ-কালের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার ঘোষণা আসবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘এখন একই আসনে আমাদের শরিক দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন নিচ্ছেন। এটা দলের অনুমতি নিয়েই। কিন্তু ৮ দলের অঙ্গীকার অনুযায়ী পরে চূড়ান্ত প্রার্থী ছাড়া সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।’ কোন দল কত আসনে নির্বাচন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলছি, দলের চেয়ে ব্যক্তির যোগ্যতা আর এলাকায় জনপ্রিয়তা ও সামর্থ্যকে গুরুত্ব দেব। তবু এত এত আসন, আর ৮টি দল হওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। নানা মানুষ ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থী হওয়ার জন্য, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের ৮ দলের অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা হবে।’

নির্বাচনী সমঝোতা আর জোট নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের জোটে আরও কয়েকটি দলের যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে। নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে আলোচনাও চলমান রয়েছে।’

এনসিপির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে রয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) এবং ইসলামপন্থী একটি দলের একাংশের এই জোটে যুক্ত হওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল। তবে সেই সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে জানা গেছে।

গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, জোটে নতুন দল যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক কম। তবে আলোচনা একেবারে ভেস্তে যায়নি।

১০ ডিসেম্বর ১২৫ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে এনসিপি। বাকি আসনগুলোতে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল দলটি। নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার মাত্র সাত দিন বাকি। তবে এখনো বাকি আসনগুলোর প্রার্থীদের বিষয়ে ঘোষণা আসেনি। অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মাহফুজ আলম এনসিপি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক এনসিপি নেতা। যেকোনো সময় এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে বলেও জানান তাঁরা। তবে আসিফ মাহমুদ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে ঢাকা-১০ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম এখনো নির্বাচনের ঘোষণা দেননি। তবে তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে এনসিপির প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই দুই আসনের কোনোটিতেই এনসিপি এখনো প্রার্থী দেয়নি।

এনসিপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা জানান, ৩০০ আসনে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট প্রার্থী দেবে, সেভাবেই তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই জোটের দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার। সেভাবেই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় নির্বাচন সময়মতো এবং ঠিকভাবে করা যাবে কি না, এটা নিয়ে আমরা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। আমরা ইতিমধ্যে সরকারকে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি।’

এদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির (একাংশ) ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, জোটে থাকা ১৮টি দলের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৬৫০ থেকে ৭০০ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (একাংশ) পক্ষে ১৫০ আসন, জেপির পক্ষে ১০০ আসন, জনতার দলের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিন ধরে নেতারা আসনভিত্তিক যাচাই-বাছাই করছেন, যার ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার ৫০-১০০ আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে জোটটি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করার পরিকল্পনা জোটটির নেই বলে সূত্র দাবি করেছে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির (একাংশ) নির্বাহী চেয়ারম্যান মজিবুল হক চুন্নু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সব আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। কালকে (আজ মঙ্গলবার) হয়তো ৫০ থেকে ১০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারি। বাকিগুলো ধাপে ধাপে মনোনয়ন জমা দেওয়ার (সময় শেষ) আগেই ঘোষণা করব। ’

জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। ২৫ ডিসেম্বর দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার কথা রয়েছে দলটির। গত রোববার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের পক্ষে রংপুর-৩ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বহিষ্কৃত মহাসচিব মসিউর রহমান রাঁঙ্গাকেও।

জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত আমাদের জোট গঠনের কোনো চিন্তা নেই। দলগতভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।’

দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৩০০ আসনের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া হলেও বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে দুই দফা আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করছেন জাপার একাধিক নেতা। দলটির এক নেতা বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে সবচেয়ে বড় দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’ সেটি কি বিএনপি, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, হ্যাঁ, বিএনপি। তাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে আসন সমঝোতা নিয়ে আলাপ হয়েছে। তবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগেই সেটি চূড়ান্ত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হামলা ও মব সহিংসতা: পুলিশের শীর্ষ পদগুলোয় রদবদল হতে পারে

  • প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা।
  • না ঠেকিয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততার অভিযোগ উঠেছে।
  • সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পুলিশের শীর্ষ পদগুলোয় পরিবর্তনের প্রস্তাব।
  • পুলিশ সদর দপ্তরে নতুন দায়িত্বে ৬ ডিআইজি।
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
হামলা ও মব সহিংসতা: পুলিশের শীর্ষ পদগুলোয় রদবদল হতে পারে

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ; ময়মনসিংহে দীপু হত্যাসহ সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থতায় পুলিশের সমালোচনা চলছে। কোনো কোনো ঘটনায় পুলিশের নির্লিপ্ততার অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারদের পরিবর্তনসহ পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কিছু পদে রদবদল হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই শিগগির এই রদবদল হতে পারে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

অবশ্য পুলিশ বলছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষ আইন মানছে না। দেশের সংকটকালে মানুষ সহযোগিতা না করায় পুলিশ কাজ করতে পারছে না। আইন না মানা মানুষের সংখ্যা বেশি, পুলিশ সেখানে আইন প্রয়োগ করতে গেলে আরও সহিংসতার সৃষ্টি হয়।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি না হলে শুধু বলপ্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে না। পুলিশের দিকে যারা তেড়ে আসছে, তারা কাদের প্রটেকশন পায়, সেটাও দেখতে হবে।

সূত্র জানায়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে মারা যাওয়ার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। এর মধ্যে রাত ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো এবং কিছু দূরে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে এবং কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভের পর এই হামলা করা হলেও পুলিশ তা ঠেকাতে পারেনি। এ দুটি কার্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ হামলা, লুট, অগ্নিসংযোগ চললেও এসব ঠেকাতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ মব বা দাঙ্গা প্রতিরোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়, সেদিন তেমন কিছু অনুসরণ করেনি। কারওয়ান বাজারে মিছিল নিয়ে দুটি ভবনে হামলা চালালেও পুলিশ মিছিল ঠেকাতে কোনো ব্যারিকেড দেয়নি, লাঠিপেটা করেনি, কোনো কাঁদানে গ্যাসের শেল বা সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়েনি।

একই অবস্থা দেখা গেছে ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবন ও তোপখানা রোডে উদীচীর কার্যালয়ে হামলার সময়েও।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। এ কারণে সেদিন পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার আগে কারওয়ান বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। ওই বিক্ষোভের সময় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই নির্দেশনা মাঠের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে পৌঁছায়নি।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৮ ডিসেম্বর রাতেই ময়মনসিংহের ভালুকার জামিরদিয়ায় পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড নামের কারখানায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ গাছে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে উত্তেজনা শুরু হলেও পুলিশ তা ঠেকাতে পারেনি। র‍্যাব বলেছে, দীপুকে তাঁর কর্মস্থলের কর্মকর্তাই উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেন।

এসব ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা শুরু হয়। সূত্র জানায়, এসব ঘটনার পর ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে পুলিশের কার্যক্রম ও ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। বৈঠকে ডিএমপি ও সিএমপির কমিশনারকে নির্বাচনের আগেই পরিবর্তনের প্রস্তাব ওঠে। পুলিশের শীর্ষ কমান্ডিং পদে আরও অভিজ্ঞ ও বাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন নিয়েও আলোচনা হয়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এসব সহিংসতা সংঘবদ্ধভাবে ঘটানো হয়েছে। এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টুলসগুলো কাজ করেনি। যা হয়েছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, এমন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। পুলিশকে সক্রিয় করতে হবে। তারাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মূল বাহিনী। যদি এ রকম পরিস্থিতি থাকে, তাহলে নির্বাচন শঙ্কায় পড়বে।

অবশ্য নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি গতকাল বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে ইসি, রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা এক কেন্দ্রবিন্দুতে।

পুলিশ সদর দপ্তরে নতুন দায়িত্বে ৬ ডিআইজি

পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ ডিআইজির ছয়টি পদে রদবদল হয়েছে। বর্তমানে কর্মরত এবং সদ্য যোগদান করা ছয়জন ডিআইজিকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গতকাল সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সই করা এক অফিস আদেশে এই রদবদল করা হয়। তাঁদের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগের ডিআইজি খোন্দকার নজমুল হাসানকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, তাপতুন নাসরীনকে ডিআইজি হেডকোয়ার্টার্সে, আশিক সাঈদকে ডিআইজি ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টে, সারোয়ার মুর্শেদ শামীমকে লজিস্টিকসে, আতিকুর রহমানকে ফিন্যান্সে এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ডেভেলপমেন্টের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে: মার্কিন বিশেষ দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা  
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, যা স্বৈরাচারী শাসনামলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’

আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই আলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী সার্জিও গোর সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। আলোচনার ফলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

আলাপকালে মার্কিন বিশেষ দূত শহীদ ওসমান হাদির বৃহৎ জানাজার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং তাদের পলাতক নেতা সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন। তবে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর প্রায় ৫০ দিন বাকি। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। এটি যেন স্মরণীয় হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

ফোনালাপের সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত