Ajker Patrika

দাবানল ঠেকাতে ছাগল!

আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৬: ১৪
দাবানল ঠেকাতে ছাগল!

গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে ছাগলের কদর আছে নানা দেশে। কিন্তু যদি শোনেন দাবানল ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ছাগল, তখন নিশ্চয় অবাক হবেন। লস অ্যাঞ্জেলেসসহ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সত্যি এটি করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায় এ তথ্য।

স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ, উজ্জ্বল নীল আকাশের নিচে ঝলমল করছে প্রশান্ত মহাসাগরের জল, চোখ যত দূর যায় মাইলকে মাইল সোনালি বালুকাময় সৈকত, আর পর্বতের চূড়ায় ছাগলের একটি পাল মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের দৃশ্য উপভোগ করছে—এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি সাধারণ দৃশ্য। তবে এই ছাগলেরা দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার নতুন অস্ত্র। কোনো কোনো দেশে বহু আগ থেকে ব্যবহার করে আসা এই পন্থা কি আসলেই কাজে লাগবে? 

‘যেখানেই আমরা গিয়েছি, অভিভূত করে দেওয়ার মতো ইতিবাচক সারা পেয়েছ।’ বলেন ছাগলপালক মাইকেল চই, ‘এখন পর্যন্ত যতটা দেখছি, এটি সবার জন্য ভালো একটি পদক্ষেপ।’ 

চই ফায়ার গ্রেজারস নামের একটি পারিবারিক ব্যবসা চালান। তাঁদের কাজ হলো বিভিন্ন শহর ও স্কুল কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারি নানা সংস্থাকে ছাগল ভাড়া দেওয়া। এই ছাগলদের কাজ হচ্ছে সহজে পৌঁছা যায় না এমন পার্বত্য এলাকাসহ দুর্গম জায়গা থেকে খেয়ে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করা। প্রতিষ্ঠানটির ৭০০টি ছাগল রয়েছে। চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি তাদের পাল বড় করত হয়েছে। 

‘আমি মনে করি, লোকেরা বিষয়টি সম্পর্কে আরও আগ্রহী এবং এর পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হবেন। আগাছা পরিষ্কার করতে এবং জমিকে আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, সে সম্পর্কে আরও ভাবনা-চিন্তা করবেন। তবে এর একটি বড় চাহিদা রয়েছে এবং এই পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’ বলেন মাইকেল চই। 

ক্যালিফোর্নিয়াকে সব সময়ই দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে এখানে দাবানল নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে এটি ধ্বংসাত্মক ও বড় আকারে হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশনের (ক্যালফায়ার) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া নজিরবিহীন দাবানলের মুখোমুখি হয়েছিল। শুধু একটি দাবানলে ৯ লাখ ৬০ হাজারের বেশি একর (৩ হাজার ৮৮৫ বর্গকিলোমিটার) জমি পুড়ে যায়। 

২০২২ সালে দাবানলের মৌসুম সে তুলনায় অতটা বিপজ্জনক ছিল না। এই সময়ে ৩ লাখ একরের (১ হাজার ২১৪ বর্গকিলোমিটার) বেশি এলাকা দাবানলে পোড়ে। এদিকে এ বছরের আগস্ট মাসটা ক্যালিফোর্নিয়ায় গড় থেকে শীতল এবং আর্দ্র ছিল। তার পরও আড়াই লাখ একরের বেশি জায়গা দাবানলে পোড়ে। এ সময় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। 

মাইকেল চই ফায়ার গ্রেজারস নামের একটি পারিবারিক ব্যবসা চালান। তাঁরা বিভিন্ন শহর ও স্কুল কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারি নানা সংস্থাকে ছাগল ভাড়া দেন। ছবি: মাইকেল চইয়ের সৌজন্যেগবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতা ও শুষ্কতা বাড়ার মতো বিষয়গুলো দাবানলের ঝুঁকি ও তীব্রতা বাড়ানোর বড় কারণ। তবে গবেষণায় এটাও এসেছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা দাবানল মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মৃত গাছ ও শুকনো গুল্মগুলো বিপজ্জনক জ্বালানি তৈরি করে, যা বড় ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানের টেকসই ও সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি হতে পারে ছাগলের ব্যবহার। 

‘ক্যালিফোর্নিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছাগলেরা বেশ বড় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব এলাকায় জন্মানো ঝোপঝাড়। ছাগলেরা এসব খাওয়ার জন্য খুব ভালোভাবে সজ্জিত, তাদের মুখও খুব কার্যকর।’ বলেন ইউনিভার্সিটি অব আইডাহোর অধ্যাপক ক্যারেঞ্চ লঞ্চবাগ। ভেড়া, ছাগল ও গবাদিপশু চরানোর বিষয়ে একাধিক গবেষণা পরিচালনা করা লঞ্চবাগ আরও বলেন, ‘যেন শুধু ঝোপঝাড়, গুল্ম—এসব খাওয়ার উপযোগী করেই এদের শরীরের নকশা করা।’ 

‘ছাগলের মুখ সরু ও গভীর; যা তাদের বেছে বেছে গুল্ম সংগ্রহ করতে সাহায্য করে। পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তারা ৬.৭ ফুট (২ মিটার) উচ্চতার কোনো কিছুও খেতে পারে। জিহ্বা ও ঠোঁট ব্যবহারে প্রাণীটি খুব কৌশলী। বিভিন্ন যৌগকে বিষক্রিয়ামুক্ত করার ক্ষমতা আছে তাদের। এমনকি বিষাক্ত গাছপালাও খেতে পারে।’ বলেন লঞ্চবাগ। 

ছাগলের আরেকটি সুবিধা হলো উচ্চ তাপমাত্রা, যেমন—১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও অনায়াসে চরে বেড়াতে পারে। শ্রমিকদের জন্য যেসব খাঁড়া পাহাড়ে ওঠা কঠিন, সেখানে অনায়াসে বিচরণ করতে পারে এরা। 

লসঅ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির একটি শহর ইন গ্নেনডালে ৩০০ ছাগল দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে ১৪ একর জায়গা পরিষ্কার করেছে। শহরটি দাবানলের জন্য প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকা। ঝুঁকি কমাতে গ্নেনডালে ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা পেতি মুন্দ ২০১৮ সাল থেকে মাইকেল চইয়ের প্রতিষ্ঠানের ছাগল ব্যবহার করছেন। উদ্দেশ্য বাড়ি-ঘর ও উন্মুক্ত জায়গার মধ্যে একটি বাফার এলাকা তৈরি। যেন দাবানল সৃষ্টি হলে এখানে এসে এটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে কিংবা পুরোপুরি নিভে যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েস্ট সেকরামেনতোতে ২০১৩ সাল থেকেই দাবানল প্রতিরোধের ‘সৃজনশীল ও পরিবেশগতভাবে টেকসই পদ্ধতি’ হিসেবে ছাগলের পাল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান শহরের পার্কগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেসন পুয়োপলো। বছরে দুবার শহরে আসে ছাগলের পাল।

ছাগলগুলো যে ভালোমতোই দায়িত্ব পালন করেছে তার প্রমাণ, শহরের ফায়ার সার্ভিস ২০২২ সালে দাবানলের সময় একটি হাউজিং কমপ্লেক্স বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য এদের কৃতিত্ব দেয়। ‘আমাদের ফায়ার চিফ বলেছেন, ছাগলগুলো যদি ওই মাঠে আগে না চরত, তাহলে দাবানলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।’ পুয়োপলো বলেন ‘যেহেতু ছাগলেরা সম্প্রতি ওই এলাকায় ঝোপঝাড় খেয়ে চার ইঞ্চিতে নামিয়ে আনে, তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ সহজ হয়।’

ইতালি, গ্রিস ও স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোয় জমি পরিষ্কার করার জন্য ছাগল ব্যবহার করা একটি শতাব্দীপ্রাচীন রীতি। ভূমধ্যসাগরে ছাগল চরানো আগুন প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এটি পরিবেশগতভাবে সঠিক ও চমৎকার একটি কৌশল।

ছাগল উচ্চ তাপমাত্রা যেমন এক শ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও অনায়াসে চরে বেড়াতে পারে।অবশ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় এর ব্যবহার শুরু হয় কেবল বছর দশেক আগে। ২০১৩ সালে ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস (ইউএসএফএস) পরীক্ষামূলকভাবে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিভল্যান্ড জাতীয় উদ্যানের ১০০ একর জঙ্গল পাতলা করার জন্য ১ হাজার ৪০০ ছাগল ব্যবহার করে। উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গল ও কাছের লোকালয়ের মধ্যে একটি বাফার এলাকা তৈরি করা। এতে একরপ্রতি খরচ হয় ৪০০-৫০০ ডলার, যেখানে শ্রমিক ব্যবহার করা হলে খরচ হতো ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার। 

বনের ছাগলের ব্যবহার সম্পর্কিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই প্রাণীদের একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব আছে ঝোপঝাড় বা গুল্ম পরিষ্কারে। কোনো এলাকায় এগুলো ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করে এরা। তেমনি উচ্চতা ৯২ শতাংশ কমিয়ে দেয়। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ছাগল একমাত্র উপায় হতে পারে না। তবে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় এ ধরনের প্রাণীর ব্যবহার একটি বড় অস্ত্র হতে পারে বলে মনে করেন লঞ্চবাগ। 

কোনো কোনো এলাকার অগ্নিনিয়ন্ত্রণ বিভাগ দাবানল মোকাবিলায় ছাগল কিনেছেও। সান ম্যানুয়েল ফায়ার ডিপার্টমেন্টের যেমন ৩০০ ছাগলের নিজস্ব একটি পাল রয়েছে দাবানল নিয়ন্ত্রণে। বিভাগের সহকারী প্রধান ক্রিস নেলসন জানান, ছাগলেরা ঘাস ও ঝোপঝাড় খেয়ে এই অঞ্চলে দাবানল প্রশমিত করতে তাঁদের সাহায্য করছে। 

এখন দেখার বিষয়, লসঅ্যাঞ্জলেসসহ ক্যালিফোর্নায়ার বিভিন্ন এলাকায় ভবিষ্যতে গৃহপালিত এই প্রাণীরা বড় দাবানল প্রতিরোধে কতটা ভূমিকা রাখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠল শিশু, অলৌকিক জন্ম দেখল ক্যালিফোর্নিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১১
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।

সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।

অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।

হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।

গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।

সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’

বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অন্য নারীর ছবিতে লাইক দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাসভঙ্গের শামিল: তুরস্কের আদালত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তুরস্কের একটি আদালত এক চাঞ্চল্যকর রায়ে জানিয়েছেন, স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীদের অনলাইন পোস্টে স্বামীর বারবার ‘লাইক’ দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে এবং তা বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। মধ্যতুরস্কের কায়সেরি শহরের একটি মামলায় এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এসেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হাবারলারের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচবি নামে এক নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মৌখিক অপমান এবং আর্থিক ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ আনেন। ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সময় কাটাতেন এবং সেখানে নিয়মিত অন্য নারীদের ছবিতে, এমনকি প্রলুব্ধকর ছবিতেও ‘লাইক’ দিতেন। মাঝেমধ্যে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করতেন।

এইচবি যুক্তি দেন, এই আচরণ তাঁর স্বামীর দাম্পত্য আনুগত্যের পরিপন্থী। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের পাশাপাশি খোরপোশ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। স্বামী এসবি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনিও পাল্টা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এবং দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর বাবাকে অপমান করেছেন এবং অতিরিক্ত ঈর্ষাপরায়ণ। স্ত্রীর এসব অভিযোগ তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

আদালত এই মামলায় স্বামীকেই বেশি দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। তাঁকে প্রতি মাসে ৭৫০ লিরা বা ২০ মার্কিন ডলার খোরপোশ এবং ৮০ হাজার লিরা ২ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসবি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দাবি করেন, এই পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু আদালত তাঁর সেই আবেদন নাকচ করে দেন।

বিচারকেরা জানান, অন্য নারীদের ছবিতে ওই ব্যক্তির ‘লাইক’ দেওয়ার বিষয়টি বৈবাহিক বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। তাঁরা মন্তব্য করেন, ‘অনলাইনে এই আপাত নিরীহ মিথস্ক্রিয়াগুলো মূলত মানসিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।’

তুর্কি আইনজীবী ইমামোগ্লু স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল যে অনলাইন কর্মকাণ্ড এখন বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে স্ক্রিনশট, মেসেজ এবং সব ধরনের ডিজিটাল কার্যক্রম উভয় পক্ষের দোষ নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হবে। নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।’

এই মামলা অনলাইনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘যদি একটি লাইক আপনার সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে, তবে আপনাদের বিয়ে কখনোই মজবুত ছিল না।’ অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এখন পরিচয় লুকিয়ে লাইক দেওয়ার ফিচার চালু করার সময় এসেছে।’ তবে তৃতীয় একজন ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘যদি অনলাইনে প্রতিটি লাইক বা ভিউকে অবিশ্বস্ততা হিসেবে দেখা হয়, তবে মানুষ সারাক্ষণ ভয়ে থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হওয়া উচিত মতপ্রকাশের মুক্ত জায়গা।’

তুরস্কের আদালতে অদ্ভুত কারণে বিবাহবিচ্ছেদের রায় দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে এক ব্যক্তিকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে ‘মোটু’ নামে সেভ করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগ্দত্তা ‘বেশি খায়’, বিয়ে ভেঙে দিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইলেন প্রেমিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৫
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক

এক চীনা ব্যক্তি তাঁর প্রাক্তন বাগ্দত্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর বাগ্‌দত্তা ‘খুব বেশি খাবার খেতেন।’ তাই সম্পর্কের পেছনে ব্যয় করা সব টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জংলান নিউজের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ৯ ডিসেম্বর এই যুগলকে নিয়ে আদালতের একটি শুনানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। হে পদবির ওই ব্যক্তি তাঁর বান্ধবী ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় হে দাবি করেন, তাঁর পরিবার কনেপক্ষকে অগ্রিম যৌতুক (ব্রাইড প্রাইস) হিসেবে যে ২০ হাজার ইউয়ান বা ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিল, তা তিনি ফেরত পেতে চান।

শুধু তা-ই নয়, সম্পর্কের সময় ওয়াংয়ের পেছনে খরচ হওয়া আরও ৩০ হাজার ইউয়ানও (৪ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার) দাবি করেন হে। এই খরচের তালিকায় তাঁর কেনা কালো টাইটস এবং অন্তর্বাসও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের একই গ্রামের বাসিন্দা হে এবং ওয়াং। এক ঘটকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং পরে বাগ্‌দান সম্পন্ন হয়। বাগ্‌দানের পর তাঁরা উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশে হের পরিবারের মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ চালাতে যান।

উল্লেখ্য, মালাতাং চীনের একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড, যা মাংস, সবজি ও নুডলসের ঝাল ঝোলে তৈরি করা হয়। ওয়াং সেখানে ছয় মাস কাজ করেন। তবে হের অভিযোগ, ওয়াং ‘সহজ কাজগুলো’ করতেন। হেইলংজিয়াং টিভিকে হে বলেন, ‘সে প্রতিদিন আমাদের মালাতাং খেত। আমাদের বিক্রির জন্য যা থাকত, তা-ও তার খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর পরিবারও ওয়াংয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ, তাদের মনে হয়েছে মেয়েটি বদলে গেছে।

আদালতে হে সেসব জিনিসের তালিকা পেশ করেন, যা তিনি ওয়াংয়ের জন্য কিনেছিলেন। জবাবে ওয়াং বলেন, ‘ও বড্ড বেশি হিসাবি। আমি তো ওর বান্ধবী ছিলাম।’ আদালতে তিনি হেকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি আমাকে যে টাইটস আর অন্তর্বাস কিনে দিয়েছিলে, সেগুলো কি তুমি নিজেও উপভোগ করনি?’

আদালত ৩০ হাজার ইউয়ান ফেরত দেওয়ার দাবিটি খারিজ করে দেন। বিচারক জানান, এগুলো ব্যক্তিগত জিনিস, যা উভয় পক্ষকেই আবেগীয় তৃপ্তি দিয়েছে। তবে অগ্রিম দেওয়া ২০ হাজার ইউয়ান যৌতুকের অর্ধেক টাকা ওয়াংকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই রায়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

চীনে যৌতুক বা ‘ব্রাইড প্রাইস’ একটি প্রাচীন প্রথা। বিয়ের সময় বরের পরিবার কনের পরিবারকে উপহার হিসেবে এই টাকা দেয়, যা মূলত মেয়েটিকে পরিবারে স্বাগত জানানোর একটি আন্তরিক প্রথা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ একে সেকেলে এবং নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার নামান্তর মনে করেন। আবার অনেকে একে বিয়ের পর নারীর ত্যাগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখেন।

২০২১ সালে কার্যকর হওয়া চীনের সিভিল কোড অনুযায়ী, যদি বিয়ে সম্পন্ন না হয় কিংবা বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস না করেন, তবে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি আদালত সমর্থন করতে পারেন।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইন্টারনেটে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ও যদি এতই হিসাবি হয়, তবে কেন মেয়েটিকে বেতন দিল না?’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘ওর বউ নয়, একজন আয়া দরকার ছিল।’ তৃতীয় আরেকজন লিখেছেন, ‘মেয়েটিকে অভিনন্দন যে সে এমন এক সংকীর্ণমনা মানুষের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত