Ajker Patrika

দূরে থেকেও ঘুরে দেখি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

অলকানন্দা রায়, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৪
দূরে থেকেও ঘুরে দেখি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

দেশ রক্ষায় যত প্রাণ বলিদান হয়েছে এবং যাঁরা সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জীবনবাজি রেখেছিলেন ১৯৭১ সালে, সেই মহান মুক্তিসৈনিকদের বীরত্বের প্রামাণিক উপকরণের সংগ্রহ যেখানে রাখা আছে, সেটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এ জাদুঘরে আছে কেবলই মুক্তিযুদ্ধের কথা, ছবি এবং মুক্তিযুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা জিনিসপত্র। এত দিন এসব দেখতে সরাসরি যেতে হতো আগারগাঁওয়ে। তবে এখন সরাসরি না গিয়ে দেশের বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

৫০ বছর পেরোনো এ দেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস সবাইকে খুব সহজে জানানোর উদ্দেশ্যে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ উদ্বোধন করেছে এর ভার্চুয়াল অংশ। এ-সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়লে লকডাউনে চলে যায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও। এতে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘরবন্দী হয়ে পড়ে সবাই। বন্ধ হয়ে থাকে আর সব প্রতিষ্ঠানের মতো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটিও। এ সময়ই ভাবনায় আসে ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করার বিষয়টি। এর রূপকার হিসেবে এগিয়ে আসে অলিক লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ভালোবেসে নামমাত্র মূল্যে তৈরি করে দেয় ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে ঘুরে দেখার এই ভার্চুয়াল জাদুঘরটি।’

ঘরবন্দী মানুষ বা যারা চাইলেও সহজে চলে আসতে পারবে না জাদুঘর দেখতে, তারা একটি ক্লিকের মাধ্যমে www. liberationwarmuseumbd.org ঠিকানায় ঢুকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দেখতে পাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি। তারা যেন অনলাইনে বসে দেখে সমৃদ্ধ হতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের অজানা অনেক কিছু জানতে পারে, সে ভাবনা থেকে এই প্রচেষ্টা। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রমেই এই প্রজন্মের তরুণদের আগ্রহ বেশি। এটিও একটি বিষয়।

যা আছে ভার্চুয়াল জাদুঘরে
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবনটিতে রয়েছে চারটি গ্যালারি। এ চারটি গ্যালারিতে যা যা আছে তার সবই হুবহু দেখতে পাওয়া যাবে এর ভার্চুয়াল অংশে।

গ্যালারি-১ 
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান সৃষ্টি থেকে ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত নানা ঘটনার প্রামাণিক বিভিন্ন উপকরণ।

গ্যালারি-২ 
আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ
এখানে স্থান পেয়েছে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বিভিন্ন উপকরণ। অসহযোগ আন্দোলন, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ, সংগঠিত প্রতিরোধ, গণহত্যা ইত্যাদির ঐতিহাসিক দলিল আছে এখানে।

গ্যালারি-৩ 
আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র
এই গ্যালারিতে আছে একাত্তরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের জীবন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংগঠিত কাঠামো, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী, জনপ্রশাসনিক কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক সমর্থনের দলিলাদি।

গ্যালারি-৪ 
আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ
এই গ্যালারির টাইমলাইনে আছে আগস্ট থেকে ১৬ ডিসেম্বরের বিভিন্ন ঘটনার প্রামাণ্য ইতিহাসের বিভিন্ন উপকরণ। যেমন নৌ-কমান্ডো, বিলোনিয়ার যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা সেকশন, নারী নির্যাতন, বুদ্ধিজীবী হত্যা, মিত্রবাহিনীর যোগদান, আত্মসমর্পণ ইত্যাদি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটে ঢুকলে প্রথমেই আসবে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নিয়ে একটি পেজ। ওয়েবসাইটের প্রথমেই চারটি ছবিতে যুদ্ধের সময় বিভিন্ন জায়গায় থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবির পাশাপাশি দেখা যাবে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশের উদ্বাস্তুদের দুর্বিষহ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এ ছাড়া এসব ছবির নিচের বিভাগগুলোতে জানা যাবে ৯ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময়কার গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনাবলি। পেজটির নিচের অংশে আছে ছয়টি ভিডিও। এসব ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার তথ্য জানা যাবে। এ বিষয়গুলো জানালেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আইটি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর হাসিবুল হক ইমন।

যা আছে ওয়েবসাইটে
হাসিবুল হক ইমন জানান, জাদুঘরের সব ধরনের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে ‘অ্যাবাউট মিউজিয়াম’ অপশনে। এই অংশে ক্লিক করলে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের নাম-পরিচয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যাবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ের তালিকা ও প্রচ্ছদও দেখা যাবে। ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ অপশনে জানা যাবে মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া সেক্টর কমান্ডারদের নাম ও যুদ্ধে তাঁদের সাফল্যের ইতিহাস। আর্কাইভে সবার ওপরে আছে টুডে ৭১। এখানে ক্লিক করে দেখে নেওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবি এবং সেই সময়কার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো। ফটো আর্কাইভে ক্লিক করে দেখা যাবে ছবি, গণহত্যা ও নৃশংসতার দলিল।

ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পর্কে। www.facebook.com/liberationwarmuseum.official/
পেজ থেকে জানা যাবে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খবরাখবর এবং বিষয়ভিত্তিক নানা কার্যক্রম সম্পর্কে। জাদুঘরটির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও আছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মাইজিপি অ্যাপেও এই সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা।

স্বশরীরে দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।যেভাবে দেখা যাবে ভার্চুয়াল জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটে ঢুকে পাওয়া যাবে ভার্চুয়াল ট্যুর নামে একটি ট্যাব। এই ট্যাবের মাধ্যমে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ৩ মিনিট ২৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ঘরে বসেই দেখা যাবে জাদুঘরের সবকিছু। এ ছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মাধ্যমেও দেখার সুযোগ রয়েছে পুরো জাদুঘরটি।

দেখার শুরুতে ‘জাদুঘরে প্রবেশ করতে এই আইকনে ক্লিক করুন’ এমন একটি নির্দেশনা বাংলা ও ইংরেজি দুইভাবে দেখা যাবে। ভেতরে প্রবেশ করে তিনটি আলাদা আইকন থাকবে। প্রতিটি আইকনের আলাদা অপশন রয়েছে।

ওই আইকনগুলোতে ক্লিক করলে সেই সুবিধাগুলো পাবেন দর্শনার্থীরা। জাদুঘরের চারটি আলাদা গ্যালারির জন্য চার রঙের পৃথক আইকন রয়েছে। সেই আইকনগুলোতে ক্লিক করে আলাদাভাবে চারটি গ্যালারি দেখতে পাবেন ভার্চুয়াল দর্শনার্থীরা। গ্যালারির মধ্যে প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আইকন দেওয়া আছে। সেগুলোতে ক্লিক করে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

ভার্চুয়াল জাদুঘরে সশরীরে ঘুরে দেখার রোমাঞ্চ হয়তো পাওয়া যাবে না, তবে জানা হয়ে যাবে বাংলাদেশের মানুষের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এআইকে ব্যক্তিগত অর্থ উপদেষ্টা বানালেন ২৭ বছরের এই সিইও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাকি ওং। ছবি: রয়টার্স
তাকি ওং। ছবি: রয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এরই একটি উদাহরণ কানাডার অন্টারিওভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা তাকি ওং।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ২৭ বছর বয়সী তাকি ওং ব্যস্ত পেশাজীবীদের জন্য এআই টুল তৈরি করেন। তবে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ পরিচালনায়ও তিনি এআইয়ের ওপর ভরসা রাখেন। গুগলের জেমিনি এআই মডেলকে তিনি নিজের ‘২৪ ঘণ্টার ব্যক্তিগত আর্থিক উপদেষ্টা’ বলে মনে করেন।

ওং জানান, প্রতি মাসে তিনি নিজের ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য খরচের হিসাব নিজে হাতে এআইয়ে ইনপুট দেন। এরপর এআই সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁকে জানায় কোথায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে।

ওংয়ের ভাষায়, এআই কখনো বলে দেয়—‘তুমি হয়তো রেস্তোরাঁয় বেশি খাচ্ছ’, আবার কখনো সতর্ক করে—‘এই সাবস্ক্রিপশনগুলো অপ্রয়োজনীয়।’ এই ধরনের বিশ্লেষণের ফলেই তিনি বাইরে খাওয়ার খরচ মাসে ৬০০ ডলার থেকে কমিয়ে ২০০ ডলারে নামাতে পেরেছেন। একইভাবে টিভি ও অন্যান্য সাবস্ক্রিপশনের খরচ ৩০০ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ ডলারে।

তবে সুবিধার পাশাপাশি সতর্কতাও অবলম্বন করছেন তিনি। ওং স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কখনোই এআইয়ের সঙ্গে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করেন না। শুধুমাত্র মোট খরচের সংখ্যা বা সামগ্রিক তথ্যই তিনি শেয়ার করেন, যাতে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত থাকে।

এই প্রবণতা শুধু ওংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারকারী আমেরিকানদের একটি বড় অংশ আর্থিক পরামর্শ নিতে এআইয়ের ওপর নির্ভর করছে। এঁদের মধ্যে জেন জি ও মিলেনিয়ালদের হার ৮২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যেও প্রায় তিনজনের একজন নিয়মিত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবহার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই সময় বাঁচাতে ও খরচের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করতে সহায়ক হলেও সব পরামর্শ যাচাই করে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

রায়হান উল ইসলাম সানজিদ।

অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না। এই প্রেক্ষাপটে ‘চর্চা’ নিজেকে উপস্থাপন করছে একটি অনুশীলনকেন্দ্রিক লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। দেশের এডটেক খাতে এই উদ্যোগের ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেছেন চর্চার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান উল ইসলাম সানজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান

আশিকুর রহমান

চর্চার শুরুটা কীভাবে?

চর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আমি নিজেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, লেকচার, গাইডবুক আর প্রশ্নব্যাংকের চাপ—সব মিলিয়ে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করার সময় খুব কম পাওয়া যেত। এই জায়গায় সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে, যেখানে গৎবাঁধা নিয়মে আটকে না থেকে নিয়মিত ও সহজভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, তাহলে শেখাটা অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে চর্চার জন্ম। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির পর কাজটি আরও গতি পায়। ক্লাসরুম থেকেই আমার কো-ফাউন্ডার ও সিএমও নাফিসের সঙ্গে পরিচয়। পরে গালিব কো-ফাউন্ডার ও সিওও হিসেবে যুক্ত হন। শুরু থেকেই মার্কেটিং ও অপারেশনের দায়িত্ব মূলত তাঁরা দুজনই সামলাচ্ছেন।

চর্চা অ্যাপ তৈরির পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা আর পরীক্ষাকে প্রায় সব সময় ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ শেখার প্রক্রিয়াটা হওয়া উচিত আনন্দদায়ক, যেখানে একজন শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধান করতে করতেই শিখবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পড়ার উপকরণ অনেক থাকলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। এই বাস্তবতা থেকে চর্চার ভাবনা। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে শেখার আনন্দ খুঁজে পাক। শেখার প্রতিটি ধাপ যেন চাপ না হয়ে আগ্রহ তৈরি করে—এটিই ছিল চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।

শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ‘চর্চা’র বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেটি একসঙ্গে হাজার হাজার ব্যবহারকারী সামলাতে পারবে এবং সবার জন্য অভিজ্ঞতাটি হবে নিরবচ্ছিন্ন। এর পাশাপাশি বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা। অষ্টম শ্রেণি থেকে বিসিএস—প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেই কনটেন্ট যেন একদিকে নির্ভুল হয়, অন্যদিকে আকর্ষণীয় ও গেমিফাইড হয়। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা ছিল কঠিন। তবে ধাপে ধাপে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ চর্চা একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

‘চর্চা এআই’-এর ধারণা কীভাবে এল?

এটি মূলত এআই এজেন্ট, যা এনসিটিবি পাঠ্যবই এবং আমাদের ১০ লক্ষাধিক প্রশ্নের ডেটাবেইসের ওপর প্রশিক্ষিত। শিক্ষার্থীরা টেক্সট বা ছবি আকারে যেকোনো প্রশ্ন দিতে পারেন, আর চর্চা এআই বইভিত্তিক রেফারেন্সসহ উত্তর দেয়। এটি শুধু ডাউট সলভিং নয়, বরং একটি পার্সোনালাইজড লার্নিং সলিউশন। শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন—কোন টপিকে তিনি দুর্বল, কোথায় আরও প্র্যাকটিস দরকার। মাত্র তিন মাসে চর্চা এআই-এ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চ্যাটরুম তৈরি হয়েছে।

প্রশ্নভান্ডারের মান কীভাবে নিশ্চিত করেন?

চর্চার কনটেন্ট মান নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা কনটেন্ট টিম রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিসিএস—প্রতিটি সেগমেন্টে আলাদা টিম কাজ করে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন ধারার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্টরা। নিয়মিত আপডেট, রিভিউ এবং গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্টের মান ধরে রাখাই আমাদের মূল অগ্রাধিকার।

স্ট্রিক, লিডার বোর্ড ও রিপোর্ট কতটা কার্যকর?

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ ধারণাটিকে প্রাধান্য দেয়। স্ট্রিক শিক্ষার্থীদের দৈনিক অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে। আমাদের এমন ব্যবহারকারীও আছেন, যাঁদের স্ট্রিক এক বছরের বেশি। লিডার বোর্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে। আর মাসিক রিপোর্ট শিক্ষার্থীকে নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে বা কোথায় আরও মনোযোগ দরকার, সেসব বোঝা যায় এ থেকে।

ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করছেন?

ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নিজেদের তথ্য বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে পারেন। কোনো তথ্য ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়া সংগ্রহ করা হয় না। সব ডেটা এনক্রিপটেড থাকে এবং অ্যাপ সার্ভার যোগাযোগ এইচটিটিপিএস সিকিউরিটির মাধ্যমে সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আগামী পাঁচ বছরে আমরা চর্চাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লার্নিং অ্যাপে পরিণত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ১০ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়া। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, শেখার কোনো সীমানা নেই। তাই চর্চাকে একটি গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড প্র্যাকটিস ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে ওঠে, এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

মইনুল হাসান, ফ্রান্স  
মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

মানুষ কি পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? এ কথা কেন বলছি, তার কারণ আছে।গত বছর ডিসেম্বরে বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স’-এ ৯টি দেশের মোট ৩৮ জন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী একত্রে বিবৃতি দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আছেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। তাঁরা বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন ৩০০ পাতার এক বিশাল সচিত্র প্রতিবেদন। তাঁরা সে প্রতিবেদনে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, জীবন নিয়ে খেলা চলবে না। সে বিজ্ঞানীরা আয়নার মধ্যে পুরো পৃথিবী ধ্বংসের অতি মারাত্মক অশনিসংকেত পাচ্ছেন। কারণ, পৃথিবীর দেশে দেশে বিভিন্ন গবেষণাগারে ‘মিরর লাইফ’ বা ‘আয়না জীবন’ উদ্ভাবনে একই সঙ্গে বহু বিজ্ঞানী নিরলসভাবে কাজ করছেন এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছেন। বিশেষ করে চীনের ওয়েস্ট লেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লাইফ সায়েন্সের গবেষক বিজ্ঞানী টিং ঝু জীববিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে আয়না জীবন উদ্ভাবনে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন।

‘আয়না জীবন’ একধরনের কৃত্রিম জীবন। প্রকৃতিতে জীবনের প্রধান আণবিক উপাদান, অনুঘটক প্রোটিন, ডিএনএ, আরএনএ ইত্যাদির অণুগুলো অসমমিতিক অর্থাৎ মাঝখান থেকে বিভাজন করলে দুটি অসমান অংশে বিভক্ত হবে। এ ছাড়া এই অণুগুলো একটি বিশেষ নকশার আকারে সাজানো। কোনোটি ডান দিকে ঘোরানো আবার কোনোটি বাঁ দিকে। সাধারণভাবে পৃথিবীর সব জীবের ডিএনএ ডান দিকে আর প্রোটিন পাক খায় বাঁ দিকে। কিন্তু ‘মিরর লাইফ’-এ বিষয়টা একদম উল্টো, এখানে ডিএনএ বাঁ দিকে আর প্রোটিন পাক খায় ডান দিকে। ডান ও বাঁ হাতের মতো। দেখতে ঠিক এক রকম, একে অন্যের প্রতিবিম্ব, তবে ভিন্ন। কেন এমন হয়? এ প্রশ্নের উত্তর মানুষ আজও জানে না। প্রকৃতির এ এক অভেদ্য রহস্য।

বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, জীবনের এই ডান দিককে বাঁ দিকে আর বাঁ দিককে ডান দিকে করে নতুন ধরনের জীবন উদ্ভাবনের। প্রকৃতির এই ‘ডান’ ও ‘বাঁ’-এর বিপরীতে গিয়ে গবেষণাগারে জীবনের সরল মডেল এককোষী ব্যাকটেরিয়ার কোষে ডিএনএ পরিবর্তন করে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিলে অর্থাৎ আয়নার প্রতিবিম্ব অনুসারে অণুগুলো গঠন করলে সৃষ্টি হবে ‘আয়না ব্যাকটেরিয়া’। বাইরে থেকে সেগুলোর কোনো পার্থক্য করা যাবে না। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ে তা হবে এক অব্যর্থ মহৌষধ।

তবে বহু বিজ্ঞানীর মতে, এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। তাঁরা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন এই ভেবে যে এমন গঠনের অণুজীব যদি একবার তৈরি হয়, তবে তা পৃথিবীর বিদ্যমান বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। প্রতিটি জীবের দেহে প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে এক চমৎকার রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। শরীরের অভ্যন্তরে প্রাণঘাতী অণুজীব বা ভাইরাস ঢুকে পড়লে, জীবদেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অনুপ্রবেশকারী কোষকে পর্যুদস্ত করতে শুরু করে। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট এই আয়না ব্যাকটেরিয়াকে জীবদেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শনাক্ত করতে মোটেই সক্ষম নয়।

বিজ্ঞানী টিং ঝু
বিজ্ঞানী টিং ঝু

ডান হাতের দস্তানা যেমন বাঁ হাতে ঢোকানো সহজসাধ্য নয়, তেমনই জীবদেহের প্রকৃতিপ্রদত্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আয়না ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে মোটেও কার্যকর নয়। প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যাকটেরিয়া খাদক ভাইরাস দিয়েও একে নির্মূল করা যাবে না। কোনো রকম অসতর্কতা বা ভুলের কারণে গবেষণাগার থেকে এই মারাত্মক সংক্রামক রোগের আয়না ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে পড়লে দ্রুত সংক্রমিত করবে পুরো জীবজগৎ। শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধব্যবস্থা কাজ করবে না এবং উপযুক্ত প্রতিষেধক না থাকায় পশুপাখি, উদ্ভিদ, জলজ জীব এমনকি মানুষও এই অভিশপ্ত অণুজীবের মরণ কামড় থেকে রেহাই পাবে না। বিশ্বব্যাপী উজাড় হবে প্রাণ, সমাপ্তি ঘটবে মাটির পৃথিবীতে দৃশ্যমান জীবনের, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিবৃতিদাতা বিজ্ঞানীরাসহ অনেকেই। হতে পারে কোনো এক অশুভ শক্তির হাতে পৌঁছে গেছে এই প্রাণঘাতী এবং অপ্রতিরোধ্য, অতি ক্ষুদ্র আয়না অণুজীব। তাহলে তা হবে এক অতি ভয়ংকর মারণাস্ত্র।

সূত্র: ‘সিয়োন্স এ আভেনির’, ফ্রান্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

ফিচার ডেস্ক
অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

অনলাইনে কেনাকাটার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ঘরে বসেই পছন্দের পণ্য অর্ডার করার সুবিধা থাকলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণার ঝুঁকি। তবে কেনাকাটার আগে কয়েকটি বিষয়ে সচেতন থাকলে এসব প্রতারণা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম

চেষ্টা করুন পরিচিত ও পরীক্ষিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কিনতে। নতুন কোনো ওয়েবসাইটে কেনাকাটার আগে সেটি আসল কি না, প্রতিষ্ঠানটি কত দিন ধরে ব্যবসা করছে—এসব বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিন।

ব্র্যান্ড ও প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানুন

কেনার আগে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে অনলাইনে খোঁজ নিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিজ্ঞাপন বা গ্রাহক রিভিউ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা যায়।

অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না

অনলাইনে কেনাকাটার সময় যেসব ওয়েবসাইট অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য চায়, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা অতিরিক্ত গোপন তথ্য, সেসব প্ল্যাটফর্ম এড়িয়ে চলুন। সাধারণ কেনাকাটার জন্য এসব তথ্যের প্রয়োজন হয় না।

নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন

ব্যাংক কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা এখন স্বাভাবিক হলেও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকে। সম্ভব হলে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা বিশ্বস্ত পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই এড়িয়ে চলুন

ফ্রি বা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে যেকোনো আর্থিক লেনদেন করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনলাইনে পেমেন্টের সময় ব্যক্তিগত বা নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: গ্লোবাল সাইবার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত