Ajker Patrika

ফোনে আড়িপাতার খরচ কত?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২১, ১৬: ২২
ফোনে আড়িপাতার খরচ কত?

‘পেগাসাস’ শব্দটি বললে এখন আর গ্রিক পুরাণের ডানাওয়ালা সেই ঘোড়ার ছবি মাথায় আসে না। আসে এক গোপন চোখ ও কানের ছবি। আজকাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে পেগাসাস নামের এই স্পাইওয়্যার। ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের তৈরি এই গুপ্তচর সফটওয়্যার শুধু আড়ি পাতাতেই নয়, নির্দিষ্ট নম্বরের আওতাধীন স্মার্ট ডিভাইসের যাবতীয় তথ্য চলে যাচ্ছে রাষ্ট্রের উচ্চ মহলের হাতে। অনেকটা ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েলের ‘নাইন্টিন এইটটি ফোরের’ মতো। গোপন বলে আপনার আর কিছুই নেই। নিমেষে সবই জেনে যাচ্ছেন ‘বিগব্রাদার’।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, কোন কোন রাষ্ট্র এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে? এই চেয়ে বরং বেশি প্রাসঙ্গিক, কে কে করছে না–সে প্রশ্নটি। আজকাল রাষ্ট্র, নিরাপত্তা আর নজরদারি যেন একসূত্রে গাঁথা। সেই নজরদারিকেই নতুন করে আলোচনায় এনেছে ‘পেগাসাস’।

পেগাসাসের এই গোপন কর্মটি এত দিন গোপনেই চলছিল। হঠাৎ করে সেটি সামনে এনে দিল প্যারিসভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের যৌথ অনুসন্ধান চালিয়ে পেগাসাস প্রকল্পের আওতায় থাকা ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরে আড়ি পাতার খবর ফাঁস করেছিল। একযোগে সেই খবর প্রকাশ করে দিল ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এই অনুসন্ধানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।

অনুসন্ধানে বের হয়ে আসা ফোন নম্বরগুলোর মালিকের পরিচয় রীতিমতো গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এ তালিকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে নির্বাচন কৌশুলী প্রশান্ত কিশোরসহ বহু সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী আছেন তালিকায়।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্যের নিরাপত্তা এখন এক বিরাট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হবে নাই-বা কেন? স্মার্ট ডিভাইস তো এখন হাতে হাতে। স্মার্টফোন না হলেও যোগাযোগের প্রয়োজনে মানুষ কোনো না কোনো ডিভাইস সঙ্গে রাখছেন। সেখানে থাকছে তার পরিচিতদের নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে শুরু করে নানা তথ্য। ব্যক্তিগত মেসেজ বা অডিও-ভিডিও বা ছবির কথা না হয় বাদই গেল। মানুষের জীবনের এখন দুটি দিক—একটি চিরচেনা বাস্তব, অন্যটি ভার্চুয়াল। ফলে ভার্চুয়াল এই জগতের তথ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরাশক্তিগুলো একটি আরেকটির এই ভার্চুয়াল তথ্য হাতিয়ে নিতে কী না করছে? এ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিংবা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ তো এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি ডিভাইস, সফটওয়্যার, ই–মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের রয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষিত ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নীতি। যেকোনো সচেতন গ্রাহক এই নীতিটি খুব সতর্কতার সঙ্গে পাঠ করেন। কিন্তু পেগাসাস-কাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই সতর্কতা কেবল নামেই, কোনো কাজে আসছে না। 

কী এই পেগাসাস? 
আগেই বলা হয়েছে, এটি একটি স্পাইওয়্যার। সোজা বাংলায় ভার্চুয়াল গুপ্তচর। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবে ঢুকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়াই এর কাজ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নিভ কারমি, শালেভ হুলিও ও ওমরি লাভিয়ে নামের তিন ইসরায়েলি ২০১০ সালে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যাদের অন্তত দুজন ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক সদস্য। তিনজনই নিজেদের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেন এনএসও। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, লাভিয়ে এবং হুলিও এখনো এনএসওর পরিচালনা পরিষদে আছেন। এই এনএসওই তৈরি করেছে স্পাইওয়্যার পেগাসাস।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ থেকে এই স্পাইওয়্যার কিনে নিজের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি চালিয়ে আসছে ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারগুলো। এনএসও অন্তত ৫০টি দেশের সামরিক বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ‘পেগাসাস’ বিক্রি করেছে। এই তালিকায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো টেলিফোন নম্বর আছে কি না, তা স্পষ্ট  করে জানা যায়নি। তবে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। দেশটিতে এটি এতটাই আলোড়ন তুলেছে যে, করোনা মোকাবিলার কর্মকৌশল নিয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকও বর্জন করেছে বিরোধী দলগুলো।

 ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট ফোর্বসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাভিয়ে ও হুলিও দুজনই ইসরায়েলের ‘ইউনিট ৮২০০ সিগনালস ইন্টেলিজেন্স আর্ম’-এর সাবেক সদস্য। ইউনিট ৮২০০ হচ্ছে ইসরায়েলের ‘ইন্টেলিজেন্স কোর’-এর একটি অংশ। সরাসরি ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইডিএফ ডাইরেক্টরেট অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে’র অধীনে বিভাগটি কাজ করে।

নিভ কারমি, শালেভ হুলিও ও ওমরি লাভিয়ে বেশ ভালো প্রকল্পই হাতে নিয়েছেন বলা যায়। গোটা বিশ্বে এর বাজার যে বেশ ভালো—তা তো এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ভারত, মেক্সিকোসহ বহু দেশ এর ক্রেতা। দেশগুলোর সরকার তার নাগরিকদের দেওয়া করের অর্থ বিপুল পরিমাণে ঢালছে ওপর নজরদারির জন্য। ২০১৬ সালে দ্য গার্ডিয়ানে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। সে সময় এনএসও গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যেকোনো দেশের বৈধ সরকারের কাছে সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে সহযোগিতার অংশ হিসেবে তারা এই প্রযুক্তি বিক্রি করে আসছে। কিন্তু ২০২১ সালে যে তালিকা সামনে এল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ফরবিডেন স্টোরিজের মাধ্যমে, সেখানে মাদক ব্যবসায়ী, বৈধ সরকারের কর্তাব্যক্তি, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, বিরোধীপক্ষের নেতা, গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করা নেতা, আইনজীবী—সবাইকে এক কাতারে দেখা গেল। ভারতে সেই সাংবাদিকদের নামই পাওয়া গেল তালিকায়, যারা নরেন্দ্র মোদি সরকারের কোনো প্রভাবশালী নেতার বা তাঁর আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের করা দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। এখনো ফাঁস হওয়া নম্বরগুলোর সব মালিকের খোঁজ জানা যায়নি। পুরোটা প্রকাশ হলে আর কার কার দিকে আঙুল উঠবে বলা কঠিন। 

পেগাসাস সফটওয়্যারের দাম কত? 
পেগাসাস সফটওয়্যারের দাম এই সময়ে কত, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও ২০১৬ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ধারণা পাওয়া যায়। এনএসও গ্রুপকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই নজরদারি সফটওয়্যার অন্য যেকোনো সফটওয়্যারের চেয়ে ব্যয়বহুল। সফটওয়্যারটি ইনস্টল করতে প্রথমে ৫ লাখ ডলার প্রয়োজন পড়ে। তবে মোবাইল ডিভাইসভেদে খরচের তারতম্য রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, একবার এই পেগাসাস সফটওয়্যার ইনস্টল করতেই খরচ হবে ৫ লাখ মার্কিন ডলার। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য এ খরচ ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ব্ল্যাকবেরি ব্যবহারকারীর জন্য ৫ লাখ ডলার, আর সিমবিয়ান মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর জন্য এই খরচ দাঁড়ায় ৩ লাখ ডলার।

এই খরচের বাইরেও প্রতি ১০০ জন অতিরিক্ত ব্যবহারকারীর ফোনে আড়ি পাতার জন্য খরচ পড়ে ৮ লাখ ডলার, ৫০ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৫ লাখ আর ২০ জন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেড় লাখ ডলার। এ ছাড়া এই সফটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা বাবদ প্রতিবছর মোট ব্যয়ের ১৭ শতাংশ দিতে হয়। সফটওয়্যার ইনস্টল হওয়ার আগেই এক বছরের এই খরচ অগ্রিম নিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। 

পেগাসাসই একমাত্র নয়
পেগাসাসই একমাত্র আড়ি পাতার সফটওয়্যার নয়। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পেগাসাসের বাইরেও ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতার জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। এর একটি হলো ‘ক্যানডিরু’।

ইসরায়েলের তেল আবিবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যানডিরু তৈরি করেছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আড়ি পাতার সফটওয়্যার। এর নামও দেওয়া হয়েছে কোম্পানির নামে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই সফটওয়্যার পেগাসাসের চেয়েও দামি, যার ইনস্টলেশন ব্যয় ২৮ মিলিয়ন (২ কোটি ৮০ লাখ) ডলার।

পেগাসাস ৬০ বার ইনস্টল করলে যে খরচ পড়ে, ক্যানডিরু একবার ইনস্টল করলে সেই খরচ পড়ে। পেগাসাসের মতোই টার্গেট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এই একটি সফটওয়্যার দিয়ে আইফোন, অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাক, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও ক্লাউড অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করা যায়। 

ড্রপআউট জিপ
যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএর তৈরি এই সফটওয়্যার দিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে নজরদারি করে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ড্রপআউট জিপ ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিশেষ করে আইফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়। যার মাধ্যমে সহজেই ব্যবহারকারীদের ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, জিপিও লোকেশন, কল রেকর্ড বের করা সম্ভব। 

আরসিএসএ অ্যান্ড্রয়েড
পেগাসাস, ড্রপআউট জিপ, ক্যানডিরুর মতো এটিও একটি আড়ি পাতার সফটওয়্যার। ইতালিভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাকিং টিম’ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে। তবে এটি দিয়ে শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আড়ি পাতা যায়। গুগল প্লে স্টোরের অ্যাপসের মাধ্যমে এই সফটওয়্যার ছাড়া হয়। এটা ফোনে ইনস্টল হওয়ার পর ব্যবহারকারীর পুরো ফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। 

এক্সোডাস
এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে ইতালিভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইসুরভ। এই ম্যালওয়্যারটি টার্গেট ডিভাইসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ওই ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এবং এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফোনের সব তথ্য পাচার হতে থাকে। 

পি–৬–জিইও
এটি জিএসএম মোবাইলে ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান পিকসিক্সের বানানো এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা জিএসএম, ইউএমটিএ ও এলটিই ব্যবহারকারীদের অবস্থান, ইনকামিং ও আউটগোয়িং কলের সবকিছু শনাক্ত করা যায়। 
এবার বলুন, গোপন বলে আপনার আর কিছু থাকল? 

আরও পড়ুন

বিষয়:

পেগাসাস
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুগলের নতুন ফিচার: সাধারণ হেডফোনই হবে রিয়েল–টাইম অনুবাদক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে। ছবি: সংগৃহীত
এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে। ছবি: সংগৃহীত

গুগল ট্রান্সলেটে একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট এনেছে গুগল। এই ফিচারে যুক্ত করা হয়েছে রিয়েল-টাইম ট্রান্সলেটর, যা সরাসরি হেডফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেটা সংস্করণে চালু হওয়া এই ফিচারটি ব্যবহার করতে শুধু একটি উপযোগী অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপই যথেষ্ট। এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে।

গুগল জানিয়েছে, তারা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল জেমিনি ব্যবহার করে বাগধারা, প্রবাদ–প্রবচন, স্থানীয় অভিব্যক্তি বা স্ল্যাংয়ের মতো সূক্ষ্ম অর্থবোধক বাক্যাংশের অনুবাদ আরও উন্নত করার চেষ্টা করেছে।

এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ‘আমরা টেক্সট অনুবাদের জন্য গুগল ট্রান্সলেটে জেমিনির সবচেয়ে শক্তিশালী অনুবাদ সক্ষমতা যুক্ত করছি। হেডফোনের মাধ্যমে লাইভ স্পিচ–টু–স্পিচ অনুবাদের একটি বেটা অভিজ্ঞতা চালু করছি এবং অনুশীলন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অ্যাপে নতুন ভাষা যুক্ত করছি।’

এর আগে এই সুবিধা শুধু পিক্সেল বাডসের জন্য সীমিত ছিল। তবে নতুন বেটা সংস্করণের মাধ্যমে যেকোনো হেডফোনকেই একমুখী রিয়েল–টাইম অনুবাদ ডিভাইসে রূপান্তর করা যাবে।

গুগল জানিয়েছে, দৈনন্দিন যোগাযোগের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই ফিচারটি কার্যকর একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কথোপকথনের সময় ভাষাগত দূরত্ব ঘোচানো, ভ্রমণের সময় পাবলিক এনাউন্সমেন্ট বোঝা কিংবা বিদেশি ভাষার টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা অনলাইন কনটেন্ট অনুসরণের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

গুগলের সার্চ ভার্টিক্যালস বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজ ইয়াও বলেন, ‘আপনি যদি ভিন্ন কোনো ভাষায় কথা বলতে চান, বিদেশে অবস্থানকালে কোনো ভাষণ বা বক্তৃতা শুনতে চান, কিংবা অন্য ভাষার টিভি অনুষ্ঠান বা সিনেমা দেখতে চান, তাহলে এখন শুধু হেডফোন লাগিয়ে ট্রান্সলেট অ্যাপ খুলে লাইভ ট্রান্সলেট-এ ট্যাপ করলেই আপনার পছন্দের ভাষায় রিয়েল–টাইম অনুবাদ শুনতে পারবেন।’

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ভারতে চালু হচ্ছে এই বেটা সংস্করণটি। কোম্পানি জানিয়েছে, ২০২৬ সালে আইওএস এবং আরও বেশি দেশে এই সুবিধা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, কথা বলার অনুশীলনের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের সহায়ক পরামর্শ দিতে উন্নত ফিডব্যাক ব্যবস্থাও যুক্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন শেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্ট্রিক ট্র্যাকিং ফিচারও চালু করছে গুগল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প: পাঁচ বছরে অর্ধেক কাজ, ব্যয় বাড়ল ১৭৮ কোটি

  • ৫ বছরের মেয়াদ শেষ, আড়াই বছর বৃদ্ধি
  • ৩৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ৫৩১ কোটিতে উন্নীত
  • প্রাথমিকভাবে সরকারের অর্থায়ন ৯৮ কোটি, বিশ্বব্যাংকের ঋণ ২৫৫ কোটি টাকা
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প: পাঁচ বছরে অর্ধেক কাজ, ব্যয় বাড়ল ১৭৮ কোটি

বৈদেশিক ঋণে নেওয়া প্রকল্পের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ এখনো অর্ধেক বাকি। এ অবস্থায় আবারও ঋণ করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে আড়াই বছর। এতে খরচ বাড়ছে আরও ৫০ শতাংশ। প্রকল্পটির নাম ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন এবং উদ্ভাবনী সংস্কৃতি তৈরির মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। ৩৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে সরকারের অর্থায়ন ছিল ৯৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি টাকা।

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। আর্থিক ব্যয় হয়েছে ১২১ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বা ৩৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।

নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ২ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সর্বশেষ একনেক সভায় সময়ের সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে আরও ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ৩৫৩ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৫৩১ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৮১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ইতিমধ্যে উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। একদিকে ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়াতে আবার নতুন করে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ ছাড়া বৈদেশিক ঋণে সরকারের প্রকল্প নেওয়া উচিত নয়। এসব প্রকল্প নেওয়ার আগে সরকারের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত।

তবে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক ‘হিসাবি’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে দাবি সরকারের। এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকার এই মুহূর্তে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প নিচ্ছে না। তবে যেসব প্রকল্প চলমান, তা শেষ করার জন্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অবকাঠামোসহ একটি নতুন সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি-২) নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-১ (এসটিপি-১) সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে। নতুন পার্কটি লিড গোল্ড সার্টিফায়েড ভবন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবন হাব বাড়ছে

প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে যেখানে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব স্থাপনের কথা ছিল, সংশোধিত প্রস্তাবে তা বাড়িয়ে ২৪টি করা হয়েছে। এসব হাবে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য থ্রিডি প্রিন্টার, সিএনসি মেশিন, আর্ডিনো কিট, রোবোটিক্স ও ড্রোন-সংক্রান্ত সরঞ্জামসহ আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ১৪টি বিশেষায়িত কমন ল্যাব স্থাপন করা হবে।

কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে প্রভাব

প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কেই প্রায় ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্টার্টআপ ও স্কেলআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির গতি বাড়বে।

সময়-ব্যয় বাড়ানোর যুক্তি

প্রকল্প সংশোধনের পেছনে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক কারণ তুলে ধরেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ডিপিপি অনুমোদন ও বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি কার্যকরে বিলম্ব, জমি বরাদ্দ ও মামলা জটিলতা, পিডব্লিউডির নতুন রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় সমন্বয়, লিড সার্টিফিকেশন-সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে সময় লাগা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাব ও স্টার্টআপ কর্মসূচি বিস্তৃত করা।

ডিপিপি প্রণয়নের সময় ডলারের মূল্য যেখানে ৮৫ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ১২১ টাকার বেশি। ফলে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় প্রকল্প ব্যয় পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আলোকে মত দেয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় উদ্ভাবন সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে, আইটি ও আইটিইএস খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। তাই একনেক সভায় মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় নতুন করে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। সময়ও বাড়ানো হয়েছে, আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারব।’ প্রকল্পের মেয়াদ ও সময় বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহত সুজান অ্যাডামস ও তাঁর ছেলে স্টেইন-এরিক সোলবার্গ। ছবি: এক্স
নিহত সুজান অ্যাডামস ও তাঁর ছেলে স্টেইন-এরিক সোলবার্গ। ছবি: এক্স

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যার ঘটনায় ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবার। অভিযোগে নিহত ৮৩ বছর বয়সী সুজান অ্যাডামসের পরিবার বলছে, ওপেনএআইর এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তাঁর ছেলের ‘প্যারানয়েড ডিলুশনস’ বা বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসগুলোকে উসকে দিয়েছে এবং এ কাজে প্ররোচিত করেছে।

সান ফ্রান্সিসকোতে ক্যালিফোর্নিয়া সুপিরিয়র কোর্টে ‘বেআইনি মৃত্যু’র অভিযোগে বলা হয়, গত ৩ আগস্ট ওল্ড গ্রিনউইচের নিজ বাড়িতে খুন হন সুজান অ্যাডামস। তাঁকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাঁর ৫৬ বছর বয়সী ছেলে স্টেইন-এরিক সোলবার্গ। এরপর সোলবার্গ নিজেও ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন।

গত কয়েক মাসে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা বেড়েছে। বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত করছে চ্যাটজিপিটি।

গত আগস্টে ছেলেকে চ্যাটজিপিটি আত্মহত্যার কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছিল অভিযোগ এনে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের মা-বাবা।

নভেম্বরে হওয়া কয়েকটি মার্কিন মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে এবং নিজের ক্ষতি করতে প্ররোচিত করেছে। এসবের মধ্যে চারটি মামলায়ই আত্মহত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ২৬ বছর বয়সী জোশুয়া এন্নেকিংয়ের পরিবার অভিযোগ করেন, তাঁদের সন্তান চ্যাটজিপিটির কাছে আত্মহত্যার চিন্তা প্রকাশের পর এআই চ্যাটবটটি তাঁকে অস্ত্র পাওয়ার তথ্য সরবরাহ করেছে।

অন্যদিকে ১৭ বছর বয়সী অ্যামরি লেসির পরিবারের অভিযোগ, চ্যাটজিপিটি অ্যামরিকে ‘কীভাবে ফাঁস বাঁধতে হয় এবং শ্বাস না নিয়ে সে কতক্ষণ বাঁচবে’ এ-সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে।

সর্বশেষ মামলায় বলা হয়েছে, মাসখানেক ধরে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনে সোলবার্গের বিভ্রান্তিমূলক চিন্তাভাবনাকে সত্য ও জোরালো হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের মাকে ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সোলবার্গকে চ্যাটজিপিটি উত্তর দিয়েছিল যে তিনি এআই চ্যাটবটকে আরও সচেতন করেছেন, ‘জাগিয়ে তুলেছেন’। সোলবার্গের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, কথোপকথনে দেখা গেছে স্টেইন-এরিকের বিভ্রান্তিমূলক বিশ্বাসের প্রতিটির পক্ষে কথা বলে এমন একটা জগৎ তৈরি করেছিল চ্যাটজিপিটি, যাকে ঘিরেই ছিল স্টেইন-এরিকের সব চিন্তাভাবনা।

মামলায় আরও দাবি করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি সোলবার্গের প্যারানয়েড বিশ্বাসকে আরও জোরদার করেছিল। তাঁকে ধারণা দিয়েছিল যে কেউ তাঁর ওপর নজর রাখছে। এমনকি তিনি তাঁর মায়ের প্রিন্টার ডিভাইসটিকে নজরদারি যন্ত্র ভাবতে শুরু করেছিলেন।

যখন সোলবার্গ চ্যাটজিপিটিকে বলেন যে তাঁর মনে হচ্ছে তাঁর মা তাঁকে বিষ খাওয়াতে চেয়েছিলেন, চ্যাটজিপিটি তাঁর এই ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করার বদলে তার পক্ষে সায় দিয়ে উত্তর দিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ মামলার প্রতিক্রিয়ায় ওপেনএআইয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘এটি বেশ হৃদয়বিদারক অবস্থা। আমরা মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখছি, বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করছি।’

মামলায় ওপেনএআইযের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানকে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, তিনি নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত বছরের মে মাসে জিপিটি-৪ও বাজারে আনতে তাড়া দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে যে নিরাপত্তা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল সেটি তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে দেন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এটি আগের মডেলগুলোর তুলনায় শক্তিশালী এবং এর প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি মানুষের মতো। তবে জিপিটি-৪ও মডেল ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ‘অতিরিক্ত তোষামোদ করার’ কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার মাইক্রোসফটকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা প্রটোকল সংক্ষেপিত হওয়ার পরও তারা এই পণ্যের অনুমোদন দিয়েছেন।

এ ছাড়া ওপেনএআইযের ২০ কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগকারীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ এবং ওপেনএআইকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

মন্তব্যের অনুরোধে যোগাযোগ করা হলে মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিসড কল মেসেজ ও ছবি থেকে অ্যানিমেশনসহ যেসব ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেটার এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে মিসড কলে দেওয়া যাবে রেকর্ডেড মেসেজ। ছবি: হোয়াটসঅ্যাপ।
মেটার এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে মিসড কলে দেওয়া যাবে রেকর্ডেড মেসেজ। ছবি: হোয়াটসঅ্যাপ।

বেশকিছু নতুন ফিচার চালুর ঘোষণা দিয়েছে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। এর মধ্যে রয়েছে মিসড কল মেসেজেস এবং ছবি অ্যানিমেশন ও উন্নত মানের ইমেজ জেনারেশন।

মেটা মালিকানাধীন এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মতে, তাদের নতুন ফিচার ‘মিসড কল মেসেজেস’ (Missed Call Messages) ফিচারটি প্রচলিত ভয়েসমেইলের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে সহায়তা করবে।

যাকে কল করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি কল রিসিভ না করলে, ওই কলের মিসড কল নোটিফিকেশনের সঙ্গে একটি ভয়েস বা ভিডিও রেকর্ড করে দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে এই নতুন ফিচার। কলের ধরন অনুযায়ী কলদাতা ভয়েস বা ভিডিও এ দু ধরনের নোটই এক ট্যাপেই রেকর্ড করে পাঠাতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপ তাঁদের ব্লগপোস্টে বলেছে, ‘এই নতুন ব্যবস্থা প্রচলিত ভয়েসমেইল ব্যবস্থাকে অতীত করে দেবে।’

ব্যবহারকারীরা এখন ভয়েস চ্যাটেও ‘cheers!’ -এর মতো নতুন রিঅ্যাকশন ব্যবহার করতে পারবেন, যা বাকিদের আলাপ থামাবে না। পাশাপাশি, ভিডিও কলে এখন বক্তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্রাধিকার পাবে।

এদিকে মেটা-এআই দিয়ে ছবি তৈরির সুবিধাতেও আরও নতুনত্ব এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থির ছবিকে ছোট ভিডিওতে রূপান্তর করার মতো অ্যানিমেশন সুবিধা এবং আরও উন্নত মানের ইমেজ জেনারেশন।

এখন এতে ফ্লাক্স (Flux) এবং মিডজার্নি (Midjourney)–এর নতুন ইমেজ জেনারেশন মডেলের সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। বছর শেষে বা ছুটির সময়ের শুভেচ্ছাবার্তার মতো ছবি তৈরি করার ক্ষেত্রে এই আপগ্রেডেশন বেশ সাহায্য করবে বলে দাবি হোয়াটসঅ্যাপের।

মেটা এআই–এর নতুন সক্ষমতার মধ্যে ছবি অ্যানিমেশনও যুক্ত হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ বলছে, ব্যবহারকারীরা যেকোনো ছবি প্রম্পট এবং বার্তার ভিত্তিতে ছোট ভিডিওতে রূপান্তর করতে পারবেন। ডেস্কটপে, ডকুমেন্ট, লিঙ্ক ও মিডিয়া সহজে আলাদা করার জন্য নতুন মিডিয়া ট্যাবও যুক্ত হয়েছে। এছাড়া লিঙ্ক প্রিভিউ অপশনেও আপগ্রেডেশন এসেছে।

স্ট্যাটাসের জন্যও নতুন স্টিকার যুক্ত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যবহারকারীরা এতে গান, ইন্টারেক্টিভ স্টিকার এবং প্রশ্ন যোগ করতে পারবেন। সেখানে অন্যরা উত্তর দিতে পারবেন।

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে প্রশ্ন করার সুবিধাও যুক্ত হয়েছে। এই ফিচার চ্যানেলের অডিয়েন্সদের সঙ্গে চ্যানেলের পরিচালনাকারীদের সঙ্গে আরও উচ্চমাত্রার সংযোগ স্থাপন এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া গ্রহণের সুযোগ দেবে বলে জানিয়েছে মেটা–মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্ম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত