Ajker Patrika

যে কারণে অনলাইন ক্লাসে সুন্দরীরা কম নম্বর পান, জানা গেল গবেষণায়

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২: ২৯
যে কারণে অনলাইন ক্লাসে সুন্দরীরা কম নম্বর পান, জানা গেল গবেষণায়

আকর্ষণীয় চেহারার শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গ্রেড পেয়ে থাকেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে নারী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের এ সুবিধা কেবল সরাসরি ক্লাস নেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে! গবেষণা বলছে, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো গ্রেড পাওয়ার হার কমে যায়।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম সাইপোস্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ‘স্টুডেন্ট বিউটি অ্যান্ড গ্রেডস আন্ডার ইন–পারসন অ্যান্ড রিমোট টিচিং’ শীর্ষক গবেষণাটি ইকোনমিক লেটার্স সাময়িকীতে ২০২২ সালের ৬ আগস্ট প্রকাশিত হয়। 

অনেক গবেষণাতেই উঠে এসেছে, ব্যক্তির সাফল্যের পেছনে তার শারীরিক সৌন্দর্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। আকর্ষণীয় চেহারার মানুষ অর্থ বেশি উপার্জন করে। তারা কম আকর্ষণীয় চেহারার মানুষের তুলনায় জীবনের প্রতি বেশি তুষ্ট থাকেন। তবে সৌন্দর্যের এ সুবিধার পেছনে ঠিক কোন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

তবে একদল গবেষক বৈষম্যের ধারণার মাধ্যমে সৌন্দর্যের এ সুবিধা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। সহজাতভাবেই নিয়োগকর্তারা অনাকর্ষণীয় কর্মীদের তুলনায় আকর্ষণীয় চেহারার কর্মীদের বেশি সুবিধা দিয়ে থাকেন। আরেকটি গবেষণা বলছে, সৌন্দর্য এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যমে তাকে আরও সৃষ্টিশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। 

সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক অ্যাড্রিয়ান মেহিক বলেন, ‘আমি সাধারণত বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণায় লিঙ্গ ও বর্ণভেদে বৈষম্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বৈষম্যের ওপর তেমন একটা গবেষণা করা হয়নি।’ 

অ্যাড্রিয়ান মেহিক আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বৈষম্য করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ শিক্ষকেরা সরাসরি শিক্ষার্থীর চেহারা দেখতে পারছিলেন না। এরপরও অনলাইনে লিঙ্গভেদে বৈষম্যের সম্ভাবনা থেকেই যায়, কারণ চেহারা না দেখা গেলেও সেখানে শিক্ষার্থীর নাম দেখা যায়।’ 

সৌন্দর্যের এ বৈষম্যমূলক সুবিধাকে ব্যাখ্যা করার জন্য মেহিক বাস্তব উপাত্তের ভিত্তিতে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডের ওপর সরাসরি ও অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আকর্ষণীয় চেহারার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত কম থাকে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে যেসব আকর্ষণ কাজ করে তাতে সৃষ্টিশীলতার প্রভাবই বেশি থাকে।

গবেষকেরা সুইডেনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিষয়ের পাঁচ শ্রেণির মোট ৩০৭ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারির সময় অনলাইন ক্লাস করেছেন। এ ক্ষেত্রে কোর্সগুলোর বিষয় একই থাকলেও লেকচার ও সেমিনারগুলো অনলাইনে পরিচালনা করা হয়। 

অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভিডিও অন রাখতে উৎসাহিত করা হলেও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর শারীরিক সৌন্দর্যের মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য মেহিক দৈবচয়নে ৭৪ জনকে বাছাই করেন। শিক্ষার্থীদের মুখ দেখে তাঁদের সৌন্দর্যের মাত্রার অনুযায়ী নম্বর দিয়েছেন। 

ডেটা বিশ্লেষণের সময় মেহিক সরাসরি ক্লাসে সৌন্দর্যের কারণে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার প্রমাণ পান। সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালনা করা অ–গাণিতিক কোর্সের (বাণিজ্য, অর্থনীতি) ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রেডের ওপর তাঁদের আকর্ষণীয় চেহারা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। তবে গাণিতিক কোর্সের (গণিত, পদার্থবিজ্ঞান) ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রভাব পাওয়া যায়নি। 

তবে এমনটাই হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন গবেষক। কারণ অ–গাণিতিক কোর্সগুলোতে নানা ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন যুক্ত থাকে এবং এগুলোতে শিক্ষার্থী–শিক্ষকের মিথস্ক্রিয়া বেশি হয়ে থাকে। আর গাণিতিক কোর্সগুলোতে গ্রেড সম্পূর্ণ চূড়ান্ত পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে। 

তবে গবেষণায় দেখা যায়, অনলাইন ক্লাসে কেবল নারী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই সৌন্দর্যের কারণে সুবিধা পাওয়ার ধারণা অকার্যকর হয়ে যায়। অ–গাণিতিক কোর্সগুলোতে আকর্ষণীয় নারী শিক্ষার্থীদের গ্রেড উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। কিন্তু পুরুষ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক বলেন, এ বৈষম্য থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য সুবিধার স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। অনলাইন ক্লাসে তাদের মধ্যে আর উচ্চ গ্রেড পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় না। তবে শিক্ষক–শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া কম থাকা সত্ত্বেও আকর্ষণীয় পুরুষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ গ্রেড পাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য সৌন্দর্য সৃষ্টিশীলতা বর্ধনকারী একটি বৈশিষ্ট্য। 

মেহিক বলেন, ‘এ গবেষণার মূল বিষয় হলো—সরাসরি ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থী উভয়ই সৌন্দর্যের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তবে ক্লাস অনলাইনে চলে গেলেই নারীদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। অন্তত আমার কাছে মনে হয়, পুরুষ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের জন্য নয় বরং তাদের সৃষ্টিশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে সৌন্দর্য সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে তারা সৃষ্টিশীল হয়ে থাকেন। আর আকর্ষণীয় নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈষম্যই কাজ করে।’ 

মেহিক বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পরও পুরুষ শিক্ষার্থীরা ভালো করছে দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছি।’ গবেষণা প্রতিবেদনটিতে মেহিক শারীরিক সৌন্দর্য কেন পুরুষ শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে পারে তার বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। 

এর একটি কারণ হলো, শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় মানুষেরা বেশি অধ্যবসায়ী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। তারা সমবয়সীদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে থাকে। যেহেতু অ–গাণিতিক কোর্সগুলোতে সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট এবং গ্রুপ ওয়ার্ক থাকে, তাই যে পুরুষেরা আরও আকর্ষণীয় তারা এই কোর্সগুলো বেশ ভালো করে থাকেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আগে থেকেই সামাজিক দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বেশি থাকে। 

মেহিক বলেন, ‘মানুষ কেন সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বৈষম্য করে থাকে এর জবাব দেওয়া গবেষকদের জন্য বেশ কঠিন। হয়তো আমরা যখন আকর্ষণীয় কাউকে দেখি তখন আমরা তাঁর মধ্যে এমনসব বৈশিষ্ট্য আছে বলে ধরে নেই, যা আসলে তার মধ্যে নেই, যেমন, বুদ্ধিমত্তা। তবে এর কারণ বের করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক কিংবা শতাব্দীকাল ধরে মানবসভ্যতার নানা অধ্যায়ে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে এ বছর গবেষকেরা যেন গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব, জেনেটিক বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ২০২৫ সালে উন্মোচিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক রহস্য।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিদায়ী এই বছরটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইস্টার আইল্যান্ডের একটি খনিতে পড়ে থাকা অসমাপ্ত পাথরের মূর্তিগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, প্রাচীন পলিনেশীয়রা কীভাবে পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে বিশাল মোয়াই মূর্তি তৈরি করত।

এদিকে, ইতালির পম্পেই নগরীতে নতুন করে খননকাজ শুরু হওয়ার পর একটি পাথরের সিঁড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হওয়ার আগে শহরটি দেখতে কেমন ছিল তা জানতে সহায়তা করেছে।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ হাজার ২০০টি গর্ত নিয়েও নতুন ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। এই গর্তগুলোর নির্মাতা কারা এবং কেন এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল—ড্রোন ফুটেজ ও উদ্ভিদকণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

কিছু গবেষণা আবার নতুন প্রশ্নও উসকে দিয়েছে। যেমন—চিকিৎসা নথি না থাকায় বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেন অস্টেনের মৃত্যুর কারণ জানতে গবেষকেরা তাঁর লেখার ভাষা ও শব্দচয়ন বিশ্লেষণ করছেন।

রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন
রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন

এ বছর ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি হলো, অস্ট্রিয়ার প্রত্যন্ত গির্জায় সংরক্ষিত রহস্যময় একটি মমি। ১৭০০ সাল থেকে ‘বাতাসে শুকানো যাজক’ নামে পরিচিত এই দেহটির পরিচয় দীর্ঘদিন অজানা ছিল। আধুনিক স্ক্যান ও রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি ছিলেন ফ্রাঞ্জ জাভের সিডলার ফন রোজেনেগ নামে একজন অভিজাত ব্যক্তি। পরবর্তীতে তিনি গির্জার যাজক হয়েছিলেন। গবেষকেরা তাঁর দেহ সংরক্ষণের এক অজানা পদ্ধতি ও মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে ডেনমার্কে সংরক্ষিত হিয়র্টস্প্রিং নৌকাটির উৎস নিয়েও রহস্যের পর্দা উঠেছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের এই নৌকাটি অস্ত্রে ভরা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি দ্বীপে আক্রমণ করার উদ্দেশে যোদ্ধাদের বহন করছিল। বিশ্লেষণে একটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এটিকে তৎকালীন কোনো নাবিকের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রমাণ মিলেছে—অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ এইচএমএস অ্যান্ডিউরেন্স ভাঙা স্টিয়ারিং নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ডুবে গিয়েছিল।

১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

১৪ হাজার বছর আগে বরফ যুগের ‘টুমাট পাপিজ’ নামে পরিচিত দুটি সংরক্ষিত শাবককে এত দিন গৃহপালিত কুকুর মনে করা হলেও নতুন জেনেটিক গবেষণায় জানা গেছে, এগুলো আসলে নেকড়ে শাবক ছিল এবং মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এ ছাড়া ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান নিয়েও নতুন তথ্য মিলেছে। সেই সময়ে নিহত ফরাসি সেনাদের দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করে টাইফাসের পাশাপাশি প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা ওই বাহিনীর বিপুল প্রাণহানির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বিজ্ঞানের হাত ধরে ইতিহাসের বহু অন্ধকার কোণ আলোকিত করেছে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ ও জটিল পথচলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত