Ajker Patrika

শক্তিশালী প্রাকৃতিক কীটনাশক ঢেঁকিশাক: গবেষণা

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ৪৬
শক্তিশালী প্রাকৃতিক কীটনাশক ঢেঁকিশাক: গবেষণা

জানালায় ও বাগানে অযত্নে বেড়ে ওঠা ফার্নের (ঢেঁকিশাক) বেশ উপকারী একটি দিক আছে। জীববিজ্ঞানীরা জানতেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় তাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো উদ্ভিদের চেয়ে প্রাচীন এ উদ্ভিদের ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। তবে কেন এ ক্ষমতা বেশি, তা বের জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। 

সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে, ফার্নে এমন এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে, যা কীটপতঙ্গ মেরে ফেলে বা কাছে ভিড়তে দেয় না। এ ধরনের প্রোটিন প্রাকৃতিক কীটনাশকেও বহুল ব্যবহৃত।

বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন এ প্রোটিন ভবিষ্যতে রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নক্সভিলে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির কীটতত্ত্ববিদ জুয়ান লুই জুরাত-ফুয়েন্তেস বলেন, ‘এ প্রোটিনগুলোর মধ্যে নতুন কার্যক্ষমতাবিশিষ্ট কীটনাশক গড়ে তোলার মতো ক্ষমতা রয়েছে।’ 

স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়নবিদ ক্রিস্টিনা সেপচিশ বলেন, কীটপতঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী ক্ষমতার বিরুদ্ধে এ প্রোটিন কার্যকর। 

 ১৯৩০-এর দশকের শেষ দিক থেকে প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরির মূল উপাদান হিসেবে মাটিতে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস বা বিটি-এর প্রোটিন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমে এটি কীটনাশক স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরে বিজ্ঞানীরা শস্যেও এ প্রোটিন উৎপাদনের জন্য জিন প্রকৌশলের আশ্রয় নেন। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি হেক্টরের বেশি জমিতে এ ট্রান্সজেনিক শস্য বা পরিবর্তিত জিনবিশিষ্ট শস্য চাষ করা হয়।

কৃষি রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান কর্টেভা এগ্রিসায়েন্স অনুসারে, ব্যবহারের প্রথম দুই দশকেই জিনগতভাবে পরিবর্তিত ভুট্টা ও তুলা কৃষকদের প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের শস্য ক্ষতি রক্ষা করেছিল। বিটি প্রোটিনের মাধ্যমে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বাজারে আসার ফলে অর্গানোফসফেট বা অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার কমে আসে। এতে পরিবেশগত ক্ষতিও কমে আসে।

তবে ইদানীং এটি আর আগের মতো কার্যকর নেই বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সাতটি দেশের ভুট্টা, আখ, তুলা, সয়াবিন ও অন্যান্য বিটি শস্যের ২৫ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করেছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ব্রুস তাবাশ্নিক। তাঁর পর্যালোচনা অনুসারে, ১১ প্রজাতির কীট পতঙ্গের মধ্যে এ প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। গত এপ্রিলে জার্নাল অব ইকোনমিক এনটোমলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে ব্রুস তাবাশ্নিক ও তাঁর সহকর্মীরা বলেন, মোট ৭৩টি ঘটনার মধ্যে ২০০৫ সালে তিনটি ঘটনায় কীটপতঙ্গের এমন প্রতিরোধী ক্ষমতা দেখা গিয়েছিল এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে ২৬টিতে পৌঁছায়। এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে বলে জানান জুরাত-ফুয়েন্তেস। তাবাশ্নিক এমন ১৭টি ঘটনা পেয়েছেন যেখানে কীটপতঙ্গরা বিটি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। 

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়নবিদ ম্যারিলিন অ্যান্ডারসন বলেন, ‘এটা বেশ চিন্তার বিষয়। আমরা আবার সেই রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের যুগে ফিরে যেতে চাই না।’ 

ম্যারিলিন ওই কমসংখ্যক বিজ্ঞানীর মধ্যে একজন, যিনি ফার্নের প্রোটিনকে কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে ভাবছেন। এখনকার শস্যের তুলনায় প্রাচীন এ উদ্ভিদের ওপর কীটপতঙ্গ সাধারণত কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। 

১৯৯০-এর দশকে গবেষকেরা শস্যের ওপর ফার্নের নির্যাস স্প্রে করতেন। সাধারণত ফার্ন ও অন্যান্য অপুষ্পক উদ্ভিদকে কীটনাশক হিসেবে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। রস চোষা সাদা মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০১৬ সালে একদল ভারতীয় গবেষক টেকটারিয়া গণের হালবের্ড ফার্নের একটি জিন তুলায় প্রবেশ করান। সিএসআইআর-ন্যাশনাল বোটানিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ জৈব প্রযুক্তিবিদ পি. কে. সিং বলেন, ‘এ পোকাটির বিরুদ্ধে অন্য কোনো প্রাকৃতিক কীটনাশক কখনো কাজ করেনি। তাই আমরা কীটনাশক হিসেবে অন্যান্য উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।’ 

হালবের্ড ফার্নের জিন তুলাকে সাদা মাছি ও অন্যান্য রস চোষা পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। সিং এখন শুঁয়াপোকার মতো উদ্ভিদ চিবিয়ে খাওয়া পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে ফার্ন থেকে এর অন্যান্য উপাদান আলাদা করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর দল এ জিনগুলোকে তুলায় প্রবেশ করিয়েছে এবং বেশ ভালো ফল পেয়েছে। 

কীটনাশক হিসেবে ফার্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখেছেন মার্কিন কৃষি রাসায়নিক ও বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্টেভা ও ম্যারিলিন অ্যান্ডারসনের জৈব রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরাও। অ্যান্ডারসনের দল আট বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১০ হাজার উদ্ভিদের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন। পরীক্ষাগারে এগুলোর নির্যাস পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে কাজ করে কি না এবং পরিপাক এনজাইমের প্রভাবে সংশ্লেষিত হয় কি না, তা দেখা হয়েছে। পরিপাক এনজাইমের প্রভাবে সংশ্লেষিত হলে বুঝতে হবে, তা মানব অন্ত্রে সংশ্লেষিত হবে এবং তা শস্যে ব্যবহারের উপযোগী। 

এদিকে কর্টেভা উত্তর আমেরিকার ও অন্যান্য স্থানের উদ্ভিদের ওপর পরীক্ষা চালায়। দুটি দলই এমন এক প্রোটিনের খোঁজ করছিল, যা বিটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

 ২০১৯ সালে কর্টেভার প্রতিবেদনে বলা হয়, মেইডেনহেয়ার ফার্নের জিন থেকে পাওয়া প্রোটিন সয়াবিনকে সয়াবিন লুপার ও ভেলভেটবিন শুঁয়াপোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এ দুটি দলই কীটনাশক হিসেবে ফার্নের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। এক বিবৃতিতে কর্টেভা বলে, ‘আমরা ফার্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রোটিন পেয়েছি।’ তবে এ প্রোটিন কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে এখনো বিস্তারিত জানেন না তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সমুদ্রতলে ৭ হাজার বছর ধরে টিকে আছে এক বিশাল পাথুরে দেয়াল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সমুদ্রতলে ৭ হাজার বছর ধরে টিকে আছে এক বিশাল পাথুরে দেয়াল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ফ্রান্সের ব্রিতানি উপকূলের কাছে সমুদ্রের গভীরে এক বিশাল পাথরের প্রাচীরের সন্ধান মিলেছে। এই প্রাচীন প্রায় ৭ হাজার বছর আগে—অর্থাৎ ৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফরাসি সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ধারণা করছেন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির কারণে যে প্রস্তর যুগের সমাজ এই এলাকা থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, এই আবিষ্কার হয়তো সেই সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। সেখানে তলিয়ে যাওয়া শহরের প্রচলিত কিংবদন্তির নিদর্শনও হতে পারে এই প্রাচীর।

১২০ মিটার দীর্ঘ এই প্রাচীর ফ্রান্সের জলসীমায় পাওয়া সমুদ্রতলের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, এটি হয়তো মাছ ধরার জন্য এক ধরনের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো, অথবা সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান জলস্তর থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাঁধ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।

প্রাচীরটি ব্রিতানির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ইলে দে সঁ-এর উপকূলে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের চিহ্ন এখনো বহন করছে এই প্রাচীর। বর্তমানে প্রাচীরটি প্রায় নয় মিটার গভীরে ডুবে আছে। দ্বীপটি আগের আকারের তুলনায় অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে, সমুদ্রের পানিস্তর বৃদ্ধির এটি বড় প্রমাণ।

প্রাচীরটির গড় প্রস্থ প্রায় ২০ মিটার এবং উচ্চতা দুই মিটার। নিয়মিত ব্যবধানে ডুবুরিরা এর মধ্যে বড় গ্রানাইট পাথর বা মনোলিথ-এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এগুলো দুটি সমান্তরাল রেখায় প্রাচীরের ওপরে উঁচু হয়ে আছে। মনে করা হচ্ছে, এই মনোলিথগুলোই প্রাচীরের মূল ভিত্তি হিসেবে শিলাস্তরের ওপর স্থাপন করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে স্ল্যাব ও ছোট পাথর দিয়ে তাদের ঘিরে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। যদি মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে ব্যবহারের অনুমানটি সঠিক হয়, তাহলে বলা যায়, মনোলিথগুলোতে জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার সময় মাছ ধরার জাল বেঁধে রাখা হতো।

প্রাচীরটির মোট ভর প্রায় ৩ হাজার ৩০০ টন। প্রত্নতাত্ত্বিক ইভান পাইয়ার বলেন, এই বিশাল নির্মাণ একটি সুসংগঠিত সমাজের কাজ হতে পারে। মূলত শিকারি-সংগ্রাহক (হান্টার গ্যাদারার) জনগোষ্ঠী এটি নির্মাণ করেছে, যারা সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় স্থিতিশীল জীবনযাপন শুরু করেছিল। অথবা, এটি ছিল ৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলে আসা নব্যপ্রস্তর যুগের জনগোষ্ঠীর নির্মাণ।

পাইয়ারের মতে, মনোলিথগুলো নব্যপ্রস্তর যুগের বিখ্যাত মেনহিরগুলোর চেয়েও প্রাচীন। ফলে এটি পাথর উত্তোলন, কাটা এবং পরিবহনের জ্ঞান তৎকালীন শিকারি-সংগ্রাহক সমাজ থেকে পরবর্তী নব্যপ্রস্তর যুগের কৃষকদের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব নটিক্যাল আর্কিওলজিতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই আবিষ্কার স্থানীয় ব্রেটোন কিংবদন্তিগুলোর উৎস হতে পারে। যেমন, ব্রিতানির উপকূলে অবস্থিত বে অব দোয়ারনেনেজ-এর আশপাশে ডুবে যাওয়া শহর ইশ (Ys)-এর কিংবদন্তি। গবেষকদের মতে, একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত সমাজ দ্বারা গঠিত অঞ্চলের বিলুপ্তি মানুষের স্মৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। সমুদ্রের জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধির ফলে মাছ ধরার কাঠামো, প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনাগুলো সম্ভবত স্থানীয় মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত