Ajker Patrika

সংবিধান সংস্কার নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চে অনৈক্য

  • সংবিধান সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন চায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
  • গণসংহতি আন্দোলন চায় গণপরিষদ বা সংস্কার সভা
  • নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেএসডি চায়, নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংস্কার
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ১৬
সংবিধান সংস্কার নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চে অনৈক্য

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশ্ন উঠেছে বিদ্যমান সংবিধান নিয়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো বলছে, বিদ্যমান সংবিধানের কারণে শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাই ফ্যাসিস্ট-ব্যবস্থা বিলোপে বিদ্যমান সংবিধানের পুনর্লিখন, সংশোধন প্রয়োজন। তবে নতুন সংবিধান কীভাবে প্রণয়ন করা হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অন্যতম জোট গণতন্ত্র মঞ্চেও এ নিয়ে চলছে সংকট।

গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়েছে ৬টি দল ও সংগঠন নিয়ে—নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। মঞ্চটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে। বিশেষত, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পুনর্লিখন হবে, নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন নয়; বরং সংবিধান পুনর্লিখনের প্রস্তাব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের প্রস্তাব, নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। সেখানেই নতুন সংবিধান অনুমোদন করা হবে।

সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে গণপরিষদ বা সংবিধান সভার নির্বাচন চায় গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কার সংশোধনের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। তাই সংবিধান সংশোধনের জন্য গণপরিষদ বা সংবিধান সভা নির্বাচন প্রয়োজন।

এ নিয়ে রাস্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংসদ শপথ নেয় সংবিধান রক্ষা করার জন্য। সংবিধানের কোনো মৌলিক সংস্কার তারা করতে পারে না। সংবিধানের কোনো পরিবর্তন যদি সংশোধনের নামে কেউ করে, তাহলে আদালত বা পরের সংসদ এটা বাতিল করে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবর্তিত বিষয়গুলো যেন টেকসই হয়, তাই গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা চাই। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সভার নির্বাচন লাগে। এই পদ্ধতির যারা বিরোধিতা করে, তারা অনেকে পদ্ধতিগত জায়গাটা সম্পর্কে স্পষ্টই নয়। স্পষ্ট হওয়ার পরেও যারা করে, তাদের আসলে অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা চাই, সংস্কার যেন জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে হয়। এটাকে প্রধান করেই যেন আগামী নির্বাচনটা হয়। ফলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠাই হবে আগামী নির্বাচনের প্রধান লক্ষ্য।’ এ জন্য সংস্কার সভার নির্বাচন প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সাকি আরও বলেন, ‘সংস্কারের প্রশ্নে জনগণের ম্যান্ডেট থাকলে জন-অভিপ্রায় হিসেবে সংবিধান দাঁড়াবে। সেটা আদালত কর্তৃক সংশোধন হিসেবে গৃহীত হবে না। কিন্তু জনগণের অভিপ্রায়ের সংবিধানের ভিত্তি দিতে গেলে গণপরিষদ বা সংস্কার সভা হিসেবে জনগণ থেকে ম্যান্ডেট নিতে হবে।’

এদিকে একেবারে নতুন সংবিধান তৈরির প্রেক্ষাপট এই মুহূর্তে নেই বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য হওয়া কঠিন।’ তবে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পুনর্লিখন বা সংস্কারের পর সেই গণপরিষদ সংসদ হিসেবে শপথ নিতে পারেন বলে জানান তিনি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটা বিষয় নিয়েই বিতর্ক আছে। গণপরিষদের প্রশ্নে যাওয়া মানে সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান পুনর্লিখন। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে পাকিস্তানের পাঁচ বছর লেগেছিল। বাংলাদেশের নতুন সংবিধান করতে এখন কত বছর লাগবে? এই সময় কি পাওয়া যাবে? যে সকল সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো সংশোধনীর মাধ্যমে ধীরে ধীরে করা যেতে পারে। তাই আমরা সংবিধান সভার কথা বলি না।’

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে—এমনটাই চান গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংবিধান নিয়ে আলোচনা করবে। কোথায় ঐকমত্যের জায়গা আছে, খুঁজে বের করবেন। সংবিধান সভার নির্বাচনের বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত নয়। সরকার সেখানেই দাঁড়াবে, যেখানে ঐকমত্য আছে।’

সংবিধান কীভাবে সংস্কার হবে, সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদ নেবে বলে জানিয়েছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, তা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। যদি সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন হয়, তবে তারা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে তা করবে। যদি মনে করে, সংশোধনের মাধ্যমেই সংস্কার সম্ভব, তবে তা-ই করবে।’

দলগুলোর নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সংস্কার পদ্ধতি প্রশ্নে মতবিরোধের কারণে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। একই সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। মতভিন্নতার বিষয়টি উঠে এসেছে নেতৃবৃন্দের আলোচনায়ও। তবে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে মঞ্চ ভাঙার অথবা একাধিক দল মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন তাঁরা।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই সংবিধান প্রশ্নে গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। গত ৩০ ডিসেম্বর মঞ্চের সর্বশেষ মিটিংয়েও এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। ২৫ জানুয়ারি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আবারও মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছেন নেতা-কর্মীরা।

মতভিন্নতা প্রসঙ্গে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সংস্কার কীভাবে হবে, তার পদ্ধতি নিয়ে মঞ্চের দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত আছে। আমরা আশা করি, শিগগির সেটা একটা জায়গায় পৌঁছাবে।’

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এটা মতবিরোধ নয়। যার যার মত থাকতে পারে। আমরা চেষ্টা করব ঐকমত্যে পৌঁছাতে। শেষ পর্যন্ত না হলে যার যার রাজনৈতিক কর্মসূচি তারা প্রচার করবে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না মতভিন্নতা প্রসঙ্গে বলেন, দুটি দল ভিন্ন কথা বলছে। একটা দল বলছে, সংবিধান সভা ছাড়া হবেই না। আরেকটা দল বলছে, তারা ভাবছে, কী করা যায়।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, টানাপোড়েন আছে, এটা সত্য। তবে মোর্চা ভেঙে যাওয়া বা দুই ভাগ হওয়ার মতো পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সবারই একটা আন্তরিক চেষ্টা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুক্রবার বাবার কবর জিয়ারত করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গণসংবর্ধনার মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গণসংবর্ধনার মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ১৭ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন ছেলে তারেক। এরপর তিনি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাবেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

গত বুধবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব তথ্য জানান। একই সঙ্গে তারেক রহমানের আগামী শনিবারের (২৭ ডিসেম্বর) কর্মসূচিও জানান তিনি।

শনিবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান। এরপর ভোটার হতে জন্য যাবেন। পরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে যাবেন পঙ্গু হাসপাতালে।

নির্বাচন কমিশনে নাকি থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তারেক রহমান ভোটার হবেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারেক রহমান কখন, কোথায় ভোটার হবেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো তথ্য নেই।’

আততায়ীর গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের অনেকে এখনো পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেবেন তারেক রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ ৯ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ ৯ জানুয়ারি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এবং গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার পুরানা পল্টন কার্যালয়ে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের (চরমোনাই পীর) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফের পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির দাবিতে এবং গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওসমান হাদি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের এখনো আইনের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

বৈঠকে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বহুদলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।

হাসনাত লিখেছেন, ‘প্রায় দেড় যুগের নির্বাসন ভেঙে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিক অর্জনে সীমাবদ্ধ করতে নয়, বরং বাংলাদেশের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবেই মূল্যায়ন করতে চাই। জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতার নিজ ভূমিতে ফেরার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মাধ্যমেও ঠেকিয়ে রাখা যায় না। স্বৈরাচার যত শক্তিশালীই হোক জনগণের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিকে চিরতরে দমিয়ে রাখতে পারে না।’

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে জনাব তারেক রহমান ও তাঁর পরিবার যেভাবে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, দীর্ঘ নির্বাসনে বাধ্য হয়েছেন, তা গত দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের এক উন্মুক্ত দলিল। তবে মনে রাখা জরুরি এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে হাজারো শহীদের রক্ত, অসংখ্য আহতের ত্যাগ এবং গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে। এই বাস্তবতা ক্ষমতার নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত লড়াইয়ে প্রাপ্ত বাস্তবতা।’

অভ্যুত্থান-পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে হাসনাত লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ভিন্নমত কোনো অপরাধ নয় বরং অধিকার, যেখানে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে কাউকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে না, বরং রাষ্ট্রই তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে না, বরং গণতন্ত্র হয়ে উঠবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার অধিকার এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করার সংজ্ঞা।

বিগত দেড় দশকের অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর ভেঙে আজ আমরা যে মুক্ত বাংলাদেশের পথে হাঁটছি, সেখানে আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লড়াই। এই লড়াই যেন কোনো ব্যক্তি বা দলের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়; সেটা নিশ্চিত করাও প্রত্যেকটি রাজনীতিবিদের দায়িত্ব।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘জনাব তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তবে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘স্বদেশে প্রত্যাবর্তনকারী জনাব তারেক রহমানকে স্বাগত জানাই। বেগম জিয়া যেনো দ্রুতই সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অসম্পূর্ণ লড়াই পূর্ণ করার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন সেই দোয়া করি। একইসাথে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামে তারেক রহমানের এই অংশগ্রহণ জনগণের প্রত্যাশা ও ইতিহাসের দায় পূরণে ভূমিকা রাখবেন এই কামনা করি। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে মায়ের পাশে তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন ছেলে তারেক রহমান। স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা মায়ের পাশে অবস্থান করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে এই প্রথম জিয়া পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে হলেন।

তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার দলীয় পক্ষ থেকেও কোনো চিকিৎসক আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেননি।

তবে গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান। গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে।

দীর্ঘ দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারেক রহমান। সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা গ্রহণের পর তিনি ঢাকার ৩০০ ফুট সড়কে আয়োজিত সংবর্ধনা সমাবেশে যোগ দেন। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছে তিনি ১৫ মিনিটের মতো বক্তব্য দেন।

সংবর্ধনা শেষে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বাসটি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় জনসমাগমের কারণে বাসে উঠতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর তিনি বাসে ওঠেন।

বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ রঙের বাসটি এভারকেয়ার হাসপাতালের গেটে পৌঁছায় এবং বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে তারেক রহমান হাসপাতালে প্রবেশ করেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর গুলশানের বাসায় প্রায় দুই ঘণ্টা বিশ্রাম শেষে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৫টার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরে সেখানে তারেক রহমান তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান হাসপাতাল ত্যাগ করেন। একই বাসে তাঁর স্ত্রী, কন্যা, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা ওঠেন। পরে তাঁরা গুলশানের ২ নম্বর এলাকার ১৯৬ নম্বর বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন।

পথে রাস্তার দুই পাশে সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। কেউ কেউ বাসের দিকে ফুল ছুড়ে দেন, আর তারেক রহমান হাত নেড়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁরা গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান। সেখানেই আপাতত পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করবেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত