Ajker Patrika

সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক নেই: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৭: ৪৭
মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছে, তাদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময় সরকারে গিয়েছিলেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে সে সময় একজন ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে একধরনের অপপ্রচার এবং তাঁদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  আমরা বলব, এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলক। গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা গিয়েছেন। সরকার থেকে তাঁরা বের হবেন বা আদৌ বের হবেন কিনা—এটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রত্যাশা, গণ-অভ্যুত্থানের বৈধতাসহ আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নের ছাত্র উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা একত্রে কাজ করবে।’

মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা (এনসিপি) মনে করি জুলাই ঘোষণাপত্রের যে নির্ধারিত সময় দেওয়া হয়েছিল, সময় কিন্তু এগোচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনমনে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি হবে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জুলাই ঘোষণাপত্র, বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে ঘোষণা করা এবং সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণের প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা ভেবে সকলের সেই দায়িত্বশীল আচরণ করব আমরা এবং আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের দিকে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি শুধুই নির্বাচনকালীন সরকার নাকি গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমরা (এনসিপি) মনে করি এই অন্তর্বর্তী সরকার একটা গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। ফলে তার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা বা আহ্বান থাকবে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানের দিকে যাবেন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রমে এনসিপি সন্তুষ্ট নয় জানিয়ে দলের আহ্বায়ক বলেন, ‘বিচার এবং সংস্কার বিষয়ে যে গতিতে কার্যক্রম চলছে, আমরা (এনসিপি) তাতে সন্তুষ্ট নই।’

তবে সমালোচনার পাশাপাশি সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো পক্ষই সরকারের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়াক। সরকারের সমালোচনা ও সহযোগিতা করুক এবং সরকারও তার কাজের গতি বৃদ্ধি করুক, জনগণের সামনে আরও স্পষ্ট করুক তার কাজের গতিধারা।’

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশবিরোধী নানা ধরনের শক্তি বাংলাদেশকে বারবার অনৈক্য ও বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়ায় নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে, আওয়ামী লীগ নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। ফলে বাংলাদেশের এই অনৈক্যের পিছে মূলত রয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগ চায় না এই ঐক্য থাকুক। ফলে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখতে হলে আমাদের সেই ঐক্যের জায়গাটা সব সময় ধরে রাখতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল আদালত, এনবিআর, যমুনার সামনে, ড. মুহম্মদ ইউনূস সেই প্রেক্ষিতে মনে করছেন, যদি ওনাকে জিম্মি করা হয় এবং ওনাকে চাপ প্রয়োগ করে কোনো দাবি আদায় করা হয়, সেটি আসলে সম্ভব না, উনি এটাতে সম্মত নন। গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীকালে দেশের কিছু মৌলিক পরিবর্তনের জন্য উনি দায়িত্ব নিয়েছেন বলে মনে করেন। এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সেই মৌলিক কাজগুলো বিচার, সংস্কার —এই বিষয়গুলো যদি উনি করতে না পারেন তাহলে আসলে ওনার থেকে কী লাভ?’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি যে প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে এসেছিলেন, সেটি উনি রক্ষা করতে পারছেন না এই পরিস্থিতিতে। দেশে যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, রাজনৈতিক দলগুলো ও বিভিন্ন পক্ষ যদি তাদের কার্যক্রম এভাবে চলমান রাখে, তাহলে ওনার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। যদি নির্বাচনের জন্য এভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হতে যাচ্ছে এটাও তিনি সন্দেহ পোষণ করেছেন। ফলে এর দায়ভার উনি নিতে চান না।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘যেহেতু এখন মেয়র বিষয় নিয়ে আদালতের বিভিন্ন ধরনের রায় আসছে এবং সেটা নিয়ে আন্দোলন ও একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে, ফলে আমরা মনে করি অতি দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। সেটার জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। আর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর থেকে জুনের যে টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে আমরা তো সেটা সমর্থন করেছি ৷’

রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া সেনাবাহিনীর কাজ নয় উল্লেখ করে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক-এগারোর বন্দোবস্ত বলতে বোঝায় সেনা-সমর্থিত ও বিদেশি শক্তির প্রভাবে দেশে জনগণ ও গণতন্ত্রবিরোধী একটি সরকার। আমরা ৫ আগস্ট থেকে বারবার এটি স্পষ্ট করেছি, গণ-অভ্যত্থানের সমর্থনে জনগণের পক্ষের সরকার হতে হবে, যারা গণতন্ত্র ও সংস্কার নিশ্চিত করবে। সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া তার কাজ নয়। তার কাজ দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্রাইসিস মোমেন্টে তারা এখন রাস্তায় আছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছে।’

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের তালিকা আরও আগে প্রকাশ করলে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হতো না জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। গণ-অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর যে ভূমিকা পালন করছে, সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি, সেনাবাহিনীর সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ১/১১ ঘটনা জানি। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং আমাদের সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে, কারও জন্য কোনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সে বিষয়টার জন্য আমরা সকলে বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যার যেটা দায়িত্ব, সেটা যাতে সকলে পালন করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুক্রবার বাবার কবর জিয়ারত করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গণসংবর্ধনার মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গণসংবর্ধনার মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ১৭ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন ছেলে তারেক। এরপর তিনি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাবেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

গত বুধবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব তথ্য জানান। একই সঙ্গে তারেক রহমানের আগামী শনিবারের (২৭ ডিসেম্বর) কর্মসূচিও জানান তিনি।

শনিবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান। এরপর ভোটার হতে জন্য যাবেন। পরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে যাবেন পঙ্গু হাসপাতালে।

নির্বাচন কমিশনে নাকি থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তারেক রহমান ভোটার হবেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারেক রহমান কখন, কোথায় ভোটার হবেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো তথ্য নেই।’

আততায়ীর গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের অনেকে এখনো পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেবেন তারেক রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ ৯ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ ৯ জানুয়ারি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এবং গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার পুরানা পল্টন কার্যালয়ে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের (চরমোনাই পীর) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফের পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির দাবিতে এবং গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওসমান হাদি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের এখনো আইনের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

বৈঠকে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বহুদলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।

হাসনাত লিখেছেন, ‘প্রায় দেড় যুগের নির্বাসন ভেঙে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিক অর্জনে সীমাবদ্ধ করতে নয়, বরং বাংলাদেশের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবেই মূল্যায়ন করতে চাই। জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতার নিজ ভূমিতে ফেরার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মাধ্যমেও ঠেকিয়ে রাখা যায় না। স্বৈরাচার যত শক্তিশালীই হোক জনগণের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিকে চিরতরে দমিয়ে রাখতে পারে না।’

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে জনাব তারেক রহমান ও তাঁর পরিবার যেভাবে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, দীর্ঘ নির্বাসনে বাধ্য হয়েছেন, তা গত দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের এক উন্মুক্ত দলিল। তবে মনে রাখা জরুরি এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে হাজারো শহীদের রক্ত, অসংখ্য আহতের ত্যাগ এবং গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে। এই বাস্তবতা ক্ষমতার নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত লড়াইয়ে প্রাপ্ত বাস্তবতা।’

অভ্যুত্থান-পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে হাসনাত লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ভিন্নমত কোনো অপরাধ নয় বরং অধিকার, যেখানে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে কাউকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে না, বরং রাষ্ট্রই তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে না, বরং গণতন্ত্র হয়ে উঠবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার অধিকার এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করার সংজ্ঞা।

বিগত দেড় দশকের অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর ভেঙে আজ আমরা যে মুক্ত বাংলাদেশের পথে হাঁটছি, সেখানে আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লড়াই। এই লড়াই যেন কোনো ব্যক্তি বা দলের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়; সেটা নিশ্চিত করাও প্রত্যেকটি রাজনীতিবিদের দায়িত্ব।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘জনাব তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তবে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘স্বদেশে প্রত্যাবর্তনকারী জনাব তারেক রহমানকে স্বাগত জানাই। বেগম জিয়া যেনো দ্রুতই সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অসম্পূর্ণ লড়াই পূর্ণ করার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন সেই দোয়া করি। একইসাথে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামে তারেক রহমানের এই অংশগ্রহণ জনগণের প্রত্যাশা ও ইতিহাসের দায় পূরণে ভূমিকা রাখবেন এই কামনা করি। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে মায়ের পাশে তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন ছেলে তারেক রহমান। স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা মায়ের পাশে অবস্থান করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে এই প্রথম জিয়া পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে হলেন।

তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার দলীয় পক্ষ থেকেও কোনো চিকিৎসক আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেননি।

তবে গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান। গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে।

দীর্ঘ দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারেক রহমান। সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা গ্রহণের পর তিনি ঢাকার ৩০০ ফুট সড়কে আয়োজিত সংবর্ধনা সমাবেশে যোগ দেন। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছে তিনি ১৫ মিনিটের মতো বক্তব্য দেন।

সংবর্ধনা শেষে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বাসটি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় জনসমাগমের কারণে বাসে উঠতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর তিনি বাসে ওঠেন।

বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ রঙের বাসটি এভারকেয়ার হাসপাতালের গেটে পৌঁছায় এবং বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে তারেক রহমান হাসপাতালে প্রবেশ করেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর গুলশানের বাসায় প্রায় দুই ঘণ্টা বিশ্রাম শেষে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৫টার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরে সেখানে তারেক রহমান তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান হাসপাতাল ত্যাগ করেন। একই বাসে তাঁর স্ত্রী, কন্যা, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা ওঠেন। পরে তাঁরা গুলশানের ২ নম্বর এলাকার ১৯৬ নম্বর বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন।

পথে রাস্তার দুই পাশে সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। কেউ কেউ বাসের দিকে ফুল ছুড়ে দেন, আর তারেক রহমান হাত নেড়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁরা গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান। সেখানেই আপাতত পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করবেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত