Ajker Patrika

কর্মসূচির প্রস্তুতি

সমমনাদের ভাব বুঝতে চাইছে বিএনপি

  • যাতে মাঠের কর্মসূচি বিফলে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক বিএনপি।
  • শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সমমনাদের ভাব বুঝতে চাইছে বিএনপি

জনভোগান্তি লাঘব এবং দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবিতে চলতি মাসেই মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা বিএনপির। দেশব্যাপী এসব কর্মসূচি পালন করতে গেলে শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট রাখা জরুরি বলে মনে করছে দলটি। এ লক্ষ্যে শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে চাইবে মনোভাব।

দলীয় সূত্র বলছে, নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনে যাতে কোনোভাবে মাঠের কর্মসূচি বিফলে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বিএনপি। এ জন্য যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনাদের মনোভাব বুঝতে চাচ্ছে দলটি। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এর অংশ হিসেবে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরেও শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা এবং যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছে শরিকেরা। এই ঐক্য ধরে রাখার অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবারও ১২ দলীয় জোট এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অংশ নেন।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন আমরা সরকার পতনের জন্য করেছিলাম। সেই আন্দোলন যে শুধু সরকার পতনের জন্যই হবে, তা নয়; যেকোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যও আমরা একসঙ্গে এই আন্দোলন করতে পারি। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদের পতন চেয়েছি। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু এখনো আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এ রকম একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা কিছু সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো করেই এই নির্বাচন হবে। এর জন্য ন্যূনতম সময় লাগবে।

কিন্তু এটা করে নির্বাচন করতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে আমরা মনে করি না।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘ঐক্য অপরিহার্য এবং অটুট রাখার বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত এবং ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। আশা করছি, এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না, যাতে পরাজিত শক্তি পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।

গতকাল বিকেলে প্রথমে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এরপর সন্ধ্যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক হয়।

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনোভাবেই যাতে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সবাই যাতে একমত থাকে, সে জন্যই এই আলোচনা। বিএনপি আসলে সমমনাদের মনোভাব বুঝতে চাচ্ছে। আমরা যেকোনো বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি।’

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুফতি মুহাম্মদ রেজাউল করীমের (চরমোনাই পীর) সঙ্গে দেখা করতে পুরানা পল্টনে দলটির কার্যালয়ে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর দল দুটির মধ্যে ১০টি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কথা জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার বাদ জোহর বেলা ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় নেতাকে সর্বস্তরের জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে সম্মান জানাতে পারে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পারে, সে জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সব দপ্তর। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।

এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনীত রাজনীতিবিদেরা উপস্থিত থাকবেন। দাফনকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তিদের ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দাফনকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসপাতালে খালেদার শেষ দিনগুলো

  • গত ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ারে ভর্তি হন খালেদা জিয়া।
  • টানা ৩৮ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে এর আগেও অনেকবার গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে, আবার কখনো ভর্তি থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বাসায়। কিন্তু এবার আর তাঁর ফেরা হলো না। টানা ৩৮ দিন হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে লড়েছেন রোগের সঙ্গে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মেনেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে এই হাসপাতালেই মৃত্যুকে বরণ করে নেন গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এই আপসহীন নেত্রী।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২৩ নভেম্বর শেষ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সেখানে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তবে শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ পথ ভ্রমণের অনুকূলে না থাকায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।

পরিবার ও দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। তবে মেডিকেল বোর্ডের মত ছিল, দীর্ঘ বিমানযাত্রা তাঁর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, হৃদ্‌যন্ত্রের দুর্বলতা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে ২৯ নভেম্বরের পর বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ স্থগিত হয়। পরবর্তী সময়ে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। সেই সময়ই সরকার তাঁকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করে। সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে সার্বক্ষণিক জড়িত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছিল। দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দায়িত্বে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জন হপকিন্স হাসপাতাল, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ হাসপাতাল, লন্ডন ক্লিনিক ও কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা বোর্ডে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানও চিকিৎসক দলের সদস্য ছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে মায়ের চিকিৎসার তদারকি করতেন। সোমবার রাতেও মাকে দেখতে হাসপাতালে যান তিনি। এই রাতে ছেলে তারেক ছাড়াও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান, বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, দুই নাতনি জাইমা রহমান ও জাহিয়া রহমান এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান। রাত দুইটা নাগাদ পরিবারের সদস্যসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন তারেক রহমান। পরে সকাল ৬টার দিকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পায় দেশবাসী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেড় দশকের ছায়াসঙ্গী ফাতেমা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেড় দশকের বেশি সময় সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তিনি। বাসভবন, কার্যালয়, রাজপথ, হাসপাতাল, কারাগার, বিদেশ—সবখানেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে থেকেছেন তিনি। থেকে গেছেন আড়ালে। এই মানুষটি হলেন ফাতেমা বেগম।

২০১০ সাল থেকেই খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন ফাতেমা বেগম। গৃহকর্মী থেকে হয়ে ওঠেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা বলছেন, চেয়ারপারসনের প্রতি ফাতেমার মমত্ববোধ প্রবল। সব সময় পাশে থাকা, চেয়ারপারসনকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেওয়াসহ সব কাজই ফাতেমা করতেন।

ফাতেমা বেগমের গ্রামের বাড়ি ভোলা। ২০১০ সাল থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর গৃহপরিচারিকা হিসেবে ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার ছয় দিনের মাথায় ফাতেমাও সেখানে যান। প্রায় ২৫ মাস স্বেচ্ছায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারেই ছিলেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উত্তাল সময়েও ফাতেমাকে দেখা গেছে খালেদা জিয়ার নীরব ছায়াসঙ্গী হিসেবে। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলনে খালেদা জিয়াকে গুলশানে কার্যালয়ের সামনে আটকে দেওয়ার সময়ও পতাকা হাতে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাতেমা। ২০১৫ সালের শুরুতে টানা ৯২ দিন বিএনপির চেয়ারপারসন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালেও তিনি ছিলেন সার্বক্ষণিক সঙ্গী।

স্বল্পভাষী ফাতেমার বয়স ৪০ বছর ছুঁই ছুই। তিনি এক সন্তানের জননী।

ফাতেমা মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর শাহজাহানপুরে। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার মাধ্যমে মূলত ‘ফিরোজা’য় কাজ শুরু ফাতেমার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন এই সঙ্গ শুধু চাকরি নয়, এটি যেন রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মানবিক অধ্যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের স্মৃতিতে খালেদা জিয়া যেমন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৬
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম, ব্যক্তিত্ব ও মানবিক দিক নিয়ে আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীনতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের অভিভাবকসুলভ আচরণ—সবকিছু মিলিয়ে তাঁরা খালেদা জিয়াকে দেখেছেন এক সংগ্রামী রাষ্ট্রনায়ক ও স্নেহশীল মানুষ হিসেবে। তাঁদের ভাষ্যে উঠে এসেছে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব, নির্যাতনের মুখেও অবিচল থাকা এবং শেষ দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এক অনন্য রাজনৈতিক জীবন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রামরত এক আপসহীন নেত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন যে, নেত্রী (খালেদা জিয়া) দীর্ঘদিন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রায় সমস্ত অংশই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য তিনি কাজ করেছেন। জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। আর যখন বিরোধী ছিলেন, তখনো তিনি একইভাবে সেই গণতন্ত্রকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বিএনপির রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক টার্নিং পয়েন্ট এবং দলকে গণমানুষের কাতারে নিয়ে যাওয়া নেতা। তিনি বলেন, ‘গৃহবধূ থেকে ম্যাডামের রাজনীতিতে আসাটা ছিল বিএনপির রাজনীতির জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। দলের নেতৃত্বে এসে তিনিই বিএনপিকে একটি জনপ্রিয় দলে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা এক নেত্রী। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে জুলুম হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে; কিন্তু তিনি কোনো দিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি কোনো দিন আপস করেননি। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে বিজয়ী প্রমাণ করতে পেরেছেন। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগপর্যন্ত তিনি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। তিনি সেই যুদ্ধে নিজেকে বিজয়ী বলে প্রমাণ করেছেন।

ড. আবদুল মঈন খান আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে যুদ্ধ করেছেন। ২০০৯ সালের পরে যখন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নির্যাতন, অত্যাচার ও মিথ্যা মামলা তাঁর ওপরে নেমে এসেছিল...তখন অনেকে পরামর্শ দিয়েছিল—আপনি কেন এই কষ্ট সহ্য করছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি ন্যায় ও সত্যের জন্য সংগ্রাম করছি। আমি সংগ্রাম করছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আমি সংগ্রাম করছি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’’’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একই সঙ্গে রাষ্ট্রনায়ক ও স্নেহশীল অভিভাবক। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এমন একজন মানুষ ছিলেন, আমাদের যাদের উনার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে...আমরা দেখেছি, উনি একদিকে যেমন সত্যি সত্যি অভিভাবক, আরেক দিকে মাতৃস্নেহে উনি আমাদের দেখতেন। কোনো দিন বাসায় যাওয়ার পরে কোনো কিছু না খেয়ে বাসা থেকে কেউ যেতে পারত না।’

চিকিৎসাধীন অবস্থার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকদের কী খাইয়েছেন? এগুলো সব সময় উনার যাঁরা কাজের সহকর্মী ছিলেন, সহায়তা করতেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেন। উনি বলে দিতেন, আজকে এটা দিবা। কোনো দিন (চিকিৎসক) যেতে একটু দেরি হলে জিজ্ঞাসা করতেন...এত দেরি কেন হলো? আমি তো বসে আছি। অর্থাৎ চিকিৎসকেরা কখন যাবেন...উনি যখন বাসায় থাকতেন, তখন প্রতিদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁর বাসায় যেতেন। উনি সবার সঙ্গে কথা বলতেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘গণতন্ত্রের লড়াই করতে করতেই বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুপথযাত্রী হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশে দলমত-নির্বিশেষে সবাই তাঁর নামে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে বাংলাদেশ গণতন্ত্র ফেরত পেত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন পূরণ হতো।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি ছায়া থেকে বঞ্চিত হলো বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, এই সংকট কাটিয়ে ওঠা জাতির জন্য কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত