আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমন-পীড়নে কয়েক শ আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। সরকারবিরোধী ক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানান। কোটাবিরোধী আন্দোলন দ্রুতই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে সরকার ভেঙে পড়ে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন।
এরপর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে নাহিদ ইসলাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন। প্রায় ৭ মাস অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ পদত্যাগ করেন এবং তিন দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হয়েছে এই নতুন দল।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম তাঁর নতুন দলের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন, বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ কেমন হওয়া উচিত, কিংস পার্টি প্রসঙ্গ এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন থেকে সরকারে গিয়েছিলেন। এরপর আবার মাঠের রাজনীতি-আন্দোলনে ফিরে এসেছেন। এই যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাহিদ ইসলাম: সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য সময়টা ছিল অত্যন্ত সংকটময়। সেই কঠিন সময়ের মধ্যে সরকারে কাজ করা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পরে সময়ের দাবি মেনে আমি পদত্যাগ করি এবং মূলধারার রাজনীতিতে আসি। এখন আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পথ গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে, বিশেষ করে সামনের পথ কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে থাকাকালে আপনি কতটা সংস্কার আনতে পেরেছিলেন?
নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প সময়ের দায়িত্বকালে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্তরগুলো পুনর্বিন্যাস করেছি, আইসিটি বিভাগের জন্য একটি সংস্কার রোডম্যাপ তৈরি করেছি এবং তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সেন্সরশিপ আইন পর্যালোচনা করেছি। যদিও এই সংস্কারগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব হয়তো এখনই বোঝা যাবে না, তবে আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘ মেয়াদে দেশ এর সুফল পাবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থী না বামপন্থী দল হবে?
নাহিদ ইসলাম: কোনোটাই নয়। এনসিপি একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শেই অটল থাকব। আমাদের লক্ষ্য হলো, নতুন কণ্ঠস্বরের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে, তরুণ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রাজনীতিতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারেননি।
আমরা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছি, যার অংশ হিসেবে একটি গণপরিষদ গঠন করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছি। আমরা নতুন নতুন ধারণা (আইডিয়া) অন্বেষণ করছি এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুগঠিত করতে মতামত সংগ্রহ করছি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকে বলছেন, এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কি সত্যি?
নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি সত্যিই ‘কিংস পার্টি’ হতো, তাহলে আমি সরকারের পদ থেকে কেন পদত্যাগ করেছি? আমি (সরকারে) থেকে যেতে পারতাম, আমার অবস্থান কাজে লাগিয়ে সরকার থেকেই রাজনীতি করতে পারতাম।
আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি না। শুধু আন্দোলনে আমাদের ভূমিকার কারণে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কোনো একক দলের সরকার নয়। এখানে নানা মতাদর্শের মানুষ আছেন। ফলে, সরকার সব দলকেই সমানভাবে দেখছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবি অনেকটাই এমন শোনায়। এনসিপি বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখবে—এমন আশঙ্কাও আছে!
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—আমরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের দাবি জানাই। তাই বলে কি আমরা এক বা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ? একদমই না। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা জোট গঠন করতাম।
এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ আলাদা দল। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ভিন্ন, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত আমাদের কাছের দল নয়। আমাদের কিছু দাবি হয়তো মিলে যেতে পারে। যেমন আমরা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিই, গণপরিষদ গঠনের কথা বলি, বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। কিন্তু এনসিপি মৌলবাদের সঙ্গে একাত্ম—এমন প্রচারের চেষ্টা একটি মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার কৌশলমাত্র। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ জুলাই বিদ্রোহকে সন্ত্রাসী আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনারা সাধারণ নির্বাচন কবে চান?
নাহিদ ইসলাম: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আগের সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং একটি গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে, যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। তাই নির্বাচন এখনই আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করছি না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: নতুন দল হিসেবে আপনাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
নাহিদ ইসলাম: প্রথমত, বাংলাদেশে বহু পুরোনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আছে। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে হাতে সময় কম থাকলে। যদিও নির্বাচন কবে হবে, তা নিশ্চিত নয়, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের দলকে পৌঁছে দেওয়াটাও বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি শহর বা ক্যাম্পাসের রাজনীতির চেয়ে ভিন্ন এবং এর জন্য ভিন্ন কৌশল দরকার। আমরা আগামী মাস থেকে ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করব।
এ ছাড়া দেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলনেও মনোযোগ দিতে হবে, যাতে জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া যায়। পাশাপাশি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দলের কার্যক্রমে কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ। অতীতে যা দেখা যেত, তার চেয়ে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দল সবার জন্য সমান সুযোগ ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে, যাতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলা যায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নাহিদ ইসলাম: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্য আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন সংবিধান, যা প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হতে হবে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সীমাহীন ক্ষমতা বিলোপ করা হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ নিয়ে এনসিপির অবস্থান কী? দলটি কি নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
নাহিদ ইসলাম: আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করুক, যা ভারসাম্যপূর্ণ ও দেশের জন্য উপকারী এবং কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত। অতীতে আমরা দেখেছি, কিছু রেজিম দিল্লির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিল। তবে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারত কিংবা পাকিস্তান—কোনো দেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতে দেব না। এনসিপি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে এবং সর্বাগ্রে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দল কি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে?
নাহিদ ইসলাম: না! আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আগে দলটির ভেতরে যারা অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির রাজনীতির জন্য বর্তমান কোনো দল কি হুমকি হয়ে উঠতে পারে?
নাহিদ ইসলাম: না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই সমকামী অধিকারকর্মীকে এনসিপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপে করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্ভুক্তির নীতির কথা বলা এনসিপি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল?
নাহিদ ইসলাম: আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এ কারণেই তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের দল বৈচিত্র্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আমাদের অতীত রেকর্ড প্রশংসনীয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, এর ফলে নারীরা আরও নিরাপদ ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারীদের ওপর সহিংসতা ও নীতি পুলিশিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হিসেবে আপনি কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করবেন?
নাহিদ ইসলাম: নারীদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তা-ই নয়, সমাজে প্রচলিত নানা গভীর বদ্ধমূল ধারণা নারীদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখছে। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ আগস্ট পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে এই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন দেখতে হবে সেগুলো কার্যকর হয় কি না। ব্যক্তি হিসেবে এবং দল হিসেবে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমন-পীড়নে কয়েক শ আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। সরকারবিরোধী ক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানান। কোটাবিরোধী আন্দোলন দ্রুতই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে সরকার ভেঙে পড়ে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন।
এরপর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে নাহিদ ইসলাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন। প্রায় ৭ মাস অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ পদত্যাগ করেন এবং তিন দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হয়েছে এই নতুন দল।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম তাঁর নতুন দলের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন, বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ কেমন হওয়া উচিত, কিংস পার্টি প্রসঙ্গ এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন থেকে সরকারে গিয়েছিলেন। এরপর আবার মাঠের রাজনীতি-আন্দোলনে ফিরে এসেছেন। এই যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাহিদ ইসলাম: সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য সময়টা ছিল অত্যন্ত সংকটময়। সেই কঠিন সময়ের মধ্যে সরকারে কাজ করা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পরে সময়ের দাবি মেনে আমি পদত্যাগ করি এবং মূলধারার রাজনীতিতে আসি। এখন আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পথ গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে, বিশেষ করে সামনের পথ কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে থাকাকালে আপনি কতটা সংস্কার আনতে পেরেছিলেন?
নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প সময়ের দায়িত্বকালে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্তরগুলো পুনর্বিন্যাস করেছি, আইসিটি বিভাগের জন্য একটি সংস্কার রোডম্যাপ তৈরি করেছি এবং তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সেন্সরশিপ আইন পর্যালোচনা করেছি। যদিও এই সংস্কারগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব হয়তো এখনই বোঝা যাবে না, তবে আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘ মেয়াদে দেশ এর সুফল পাবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থী না বামপন্থী দল হবে?
নাহিদ ইসলাম: কোনোটাই নয়। এনসিপি একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শেই অটল থাকব। আমাদের লক্ষ্য হলো, নতুন কণ্ঠস্বরের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে, তরুণ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রাজনীতিতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারেননি।
আমরা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছি, যার অংশ হিসেবে একটি গণপরিষদ গঠন করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছি। আমরা নতুন নতুন ধারণা (আইডিয়া) অন্বেষণ করছি এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুগঠিত করতে মতামত সংগ্রহ করছি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকে বলছেন, এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কি সত্যি?
নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি সত্যিই ‘কিংস পার্টি’ হতো, তাহলে আমি সরকারের পদ থেকে কেন পদত্যাগ করেছি? আমি (সরকারে) থেকে যেতে পারতাম, আমার অবস্থান কাজে লাগিয়ে সরকার থেকেই রাজনীতি করতে পারতাম।
আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি না। শুধু আন্দোলনে আমাদের ভূমিকার কারণে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কোনো একক দলের সরকার নয়। এখানে নানা মতাদর্শের মানুষ আছেন। ফলে, সরকার সব দলকেই সমানভাবে দেখছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবি অনেকটাই এমন শোনায়। এনসিপি বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখবে—এমন আশঙ্কাও আছে!
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—আমরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের দাবি জানাই। তাই বলে কি আমরা এক বা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ? একদমই না। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা জোট গঠন করতাম।
এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ আলাদা দল। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ভিন্ন, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত আমাদের কাছের দল নয়। আমাদের কিছু দাবি হয়তো মিলে যেতে পারে। যেমন আমরা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিই, গণপরিষদ গঠনের কথা বলি, বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। কিন্তু এনসিপি মৌলবাদের সঙ্গে একাত্ম—এমন প্রচারের চেষ্টা একটি মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার কৌশলমাত্র। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ জুলাই বিদ্রোহকে সন্ত্রাসী আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনারা সাধারণ নির্বাচন কবে চান?
নাহিদ ইসলাম: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আগের সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং একটি গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে, যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। তাই নির্বাচন এখনই আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করছি না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: নতুন দল হিসেবে আপনাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
নাহিদ ইসলাম: প্রথমত, বাংলাদেশে বহু পুরোনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আছে। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে হাতে সময় কম থাকলে। যদিও নির্বাচন কবে হবে, তা নিশ্চিত নয়, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের দলকে পৌঁছে দেওয়াটাও বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি শহর বা ক্যাম্পাসের রাজনীতির চেয়ে ভিন্ন এবং এর জন্য ভিন্ন কৌশল দরকার। আমরা আগামী মাস থেকে ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করব।
এ ছাড়া দেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলনেও মনোযোগ দিতে হবে, যাতে জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া যায়। পাশাপাশি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দলের কার্যক্রমে কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ। অতীতে যা দেখা যেত, তার চেয়ে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দল সবার জন্য সমান সুযোগ ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে, যাতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলা যায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নাহিদ ইসলাম: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্য আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন সংবিধান, যা প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হতে হবে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সীমাহীন ক্ষমতা বিলোপ করা হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ নিয়ে এনসিপির অবস্থান কী? দলটি কি নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
নাহিদ ইসলাম: আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করুক, যা ভারসাম্যপূর্ণ ও দেশের জন্য উপকারী এবং কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত। অতীতে আমরা দেখেছি, কিছু রেজিম দিল্লির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিল। তবে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারত কিংবা পাকিস্তান—কোনো দেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতে দেব না। এনসিপি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে এবং সর্বাগ্রে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দল কি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে?
নাহিদ ইসলাম: না! আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আগে দলটির ভেতরে যারা অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির রাজনীতির জন্য বর্তমান কোনো দল কি হুমকি হয়ে উঠতে পারে?
নাহিদ ইসলাম: না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই সমকামী অধিকারকর্মীকে এনসিপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপে করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্ভুক্তির নীতির কথা বলা এনসিপি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল?
নাহিদ ইসলাম: আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এ কারণেই তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের দল বৈচিত্র্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আমাদের অতীত রেকর্ড প্রশংসনীয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, এর ফলে নারীরা আরও নিরাপদ ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারীদের ওপর সহিংসতা ও নীতি পুলিশিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হিসেবে আপনি কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করবেন?
নাহিদ ইসলাম: নারীদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তা-ই নয়, সমাজে প্রচলিত নানা গভীর বদ্ধমূল ধারণা নারীদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখছে। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ আগস্ট পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে এই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন দেখতে হবে সেগুলো কার্যকর হয় কি না। ব্যক্তি হিসেবে এবং দল হিসেবে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমন-পীড়নে কয়েক শ আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। সরকারবিরোধী ক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানান। কোটাবিরোধী আন্দোলন দ্রুতই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে সরকার ভেঙে পড়ে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন।
এরপর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে নাহিদ ইসলাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন। প্রায় ৭ মাস অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ পদত্যাগ করেন এবং তিন দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হয়েছে এই নতুন দল।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম তাঁর নতুন দলের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন, বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ কেমন হওয়া উচিত, কিংস পার্টি প্রসঙ্গ এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন থেকে সরকারে গিয়েছিলেন। এরপর আবার মাঠের রাজনীতি-আন্দোলনে ফিরে এসেছেন। এই যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাহিদ ইসলাম: সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য সময়টা ছিল অত্যন্ত সংকটময়। সেই কঠিন সময়ের মধ্যে সরকারে কাজ করা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পরে সময়ের দাবি মেনে আমি পদত্যাগ করি এবং মূলধারার রাজনীতিতে আসি। এখন আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পথ গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে, বিশেষ করে সামনের পথ কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে থাকাকালে আপনি কতটা সংস্কার আনতে পেরেছিলেন?
নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প সময়ের দায়িত্বকালে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্তরগুলো পুনর্বিন্যাস করেছি, আইসিটি বিভাগের জন্য একটি সংস্কার রোডম্যাপ তৈরি করেছি এবং তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সেন্সরশিপ আইন পর্যালোচনা করেছি। যদিও এই সংস্কারগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব হয়তো এখনই বোঝা যাবে না, তবে আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘ মেয়াদে দেশ এর সুফল পাবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থী না বামপন্থী দল হবে?
নাহিদ ইসলাম: কোনোটাই নয়। এনসিপি একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শেই অটল থাকব। আমাদের লক্ষ্য হলো, নতুন কণ্ঠস্বরের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে, তরুণ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রাজনীতিতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারেননি।
আমরা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছি, যার অংশ হিসেবে একটি গণপরিষদ গঠন করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছি। আমরা নতুন নতুন ধারণা (আইডিয়া) অন্বেষণ করছি এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুগঠিত করতে মতামত সংগ্রহ করছি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকে বলছেন, এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কি সত্যি?
নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি সত্যিই ‘কিংস পার্টি’ হতো, তাহলে আমি সরকারের পদ থেকে কেন পদত্যাগ করেছি? আমি (সরকারে) থেকে যেতে পারতাম, আমার অবস্থান কাজে লাগিয়ে সরকার থেকেই রাজনীতি করতে পারতাম।
আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি না। শুধু আন্দোলনে আমাদের ভূমিকার কারণে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কোনো একক দলের সরকার নয়। এখানে নানা মতাদর্শের মানুষ আছেন। ফলে, সরকার সব দলকেই সমানভাবে দেখছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবি অনেকটাই এমন শোনায়। এনসিপি বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখবে—এমন আশঙ্কাও আছে!
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—আমরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের দাবি জানাই। তাই বলে কি আমরা এক বা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ? একদমই না। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা জোট গঠন করতাম।
এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ আলাদা দল। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ভিন্ন, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত আমাদের কাছের দল নয়। আমাদের কিছু দাবি হয়তো মিলে যেতে পারে। যেমন আমরা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিই, গণপরিষদ গঠনের কথা বলি, বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। কিন্তু এনসিপি মৌলবাদের সঙ্গে একাত্ম—এমন প্রচারের চেষ্টা একটি মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার কৌশলমাত্র। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ জুলাই বিদ্রোহকে সন্ত্রাসী আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনারা সাধারণ নির্বাচন কবে চান?
নাহিদ ইসলাম: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আগের সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং একটি গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে, যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। তাই নির্বাচন এখনই আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করছি না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: নতুন দল হিসেবে আপনাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
নাহিদ ইসলাম: প্রথমত, বাংলাদেশে বহু পুরোনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আছে। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে হাতে সময় কম থাকলে। যদিও নির্বাচন কবে হবে, তা নিশ্চিত নয়, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের দলকে পৌঁছে দেওয়াটাও বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি শহর বা ক্যাম্পাসের রাজনীতির চেয়ে ভিন্ন এবং এর জন্য ভিন্ন কৌশল দরকার। আমরা আগামী মাস থেকে ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করব।
এ ছাড়া দেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলনেও মনোযোগ দিতে হবে, যাতে জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া যায়। পাশাপাশি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দলের কার্যক্রমে কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ। অতীতে যা দেখা যেত, তার চেয়ে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দল সবার জন্য সমান সুযোগ ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে, যাতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলা যায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নাহিদ ইসলাম: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্য আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন সংবিধান, যা প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হতে হবে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সীমাহীন ক্ষমতা বিলোপ করা হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ নিয়ে এনসিপির অবস্থান কী? দলটি কি নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
নাহিদ ইসলাম: আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করুক, যা ভারসাম্যপূর্ণ ও দেশের জন্য উপকারী এবং কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত। অতীতে আমরা দেখেছি, কিছু রেজিম দিল্লির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিল। তবে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারত কিংবা পাকিস্তান—কোনো দেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতে দেব না। এনসিপি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে এবং সর্বাগ্রে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দল কি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে?
নাহিদ ইসলাম: না! আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আগে দলটির ভেতরে যারা অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির রাজনীতির জন্য বর্তমান কোনো দল কি হুমকি হয়ে উঠতে পারে?
নাহিদ ইসলাম: না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই সমকামী অধিকারকর্মীকে এনসিপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপে করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্ভুক্তির নীতির কথা বলা এনসিপি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল?
নাহিদ ইসলাম: আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এ কারণেই তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের দল বৈচিত্র্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আমাদের অতীত রেকর্ড প্রশংসনীয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, এর ফলে নারীরা আরও নিরাপদ ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারীদের ওপর সহিংসতা ও নীতি পুলিশিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হিসেবে আপনি কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করবেন?
নাহিদ ইসলাম: নারীদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তা-ই নয়, সমাজে প্রচলিত নানা গভীর বদ্ধমূল ধারণা নারীদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখছে। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ আগস্ট পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে এই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন দেখতে হবে সেগুলো কার্যকর হয় কি না। ব্যক্তি হিসেবে এবং দল হিসেবে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমন-পীড়নে কয়েক শ আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। সরকারবিরোধী ক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানান। কোটাবিরোধী আন্দোলন দ্রুতই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে সরকার ভেঙে পড়ে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন।
এরপর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে নাহিদ ইসলাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন। প্রায় ৭ মাস অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ পদত্যাগ করেন এবং তিন দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হয়েছে এই নতুন দল।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম তাঁর নতুন দলের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন, বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ কেমন হওয়া উচিত, কিংস পার্টি প্রসঙ্গ এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন থেকে সরকারে গিয়েছিলেন। এরপর আবার মাঠের রাজনীতি-আন্দোলনে ফিরে এসেছেন। এই যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাহিদ ইসলাম: সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য সময়টা ছিল অত্যন্ত সংকটময়। সেই কঠিন সময়ের মধ্যে সরকারে কাজ করা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পরে সময়ের দাবি মেনে আমি পদত্যাগ করি এবং মূলধারার রাজনীতিতে আসি। এখন আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পথ গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে, বিশেষ করে সামনের পথ কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে থাকাকালে আপনি কতটা সংস্কার আনতে পেরেছিলেন?
নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প সময়ের দায়িত্বকালে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্তরগুলো পুনর্বিন্যাস করেছি, আইসিটি বিভাগের জন্য একটি সংস্কার রোডম্যাপ তৈরি করেছি এবং তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সেন্সরশিপ আইন পর্যালোচনা করেছি। যদিও এই সংস্কারগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব হয়তো এখনই বোঝা যাবে না, তবে আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘ মেয়াদে দেশ এর সুফল পাবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থী না বামপন্থী দল হবে?
নাহিদ ইসলাম: কোনোটাই নয়। এনসিপি একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শেই অটল থাকব। আমাদের লক্ষ্য হলো, নতুন কণ্ঠস্বরের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে, তরুণ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রাজনীতিতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারেননি।
আমরা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছি, যার অংশ হিসেবে একটি গণপরিষদ গঠন করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছি। আমরা নতুন নতুন ধারণা (আইডিয়া) অন্বেষণ করছি এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুগঠিত করতে মতামত সংগ্রহ করছি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকে বলছেন, এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কি সত্যি?
নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি সত্যিই ‘কিংস পার্টি’ হতো, তাহলে আমি সরকারের পদ থেকে কেন পদত্যাগ করেছি? আমি (সরকারে) থেকে যেতে পারতাম, আমার অবস্থান কাজে লাগিয়ে সরকার থেকেই রাজনীতি করতে পারতাম।
আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি না। শুধু আন্দোলনে আমাদের ভূমিকার কারণে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কোনো একক দলের সরকার নয়। এখানে নানা মতাদর্শের মানুষ আছেন। ফলে, সরকার সব দলকেই সমানভাবে দেখছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবি অনেকটাই এমন শোনায়। এনসিপি বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখবে—এমন আশঙ্কাও আছে!
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—আমরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের দাবি জানাই। তাই বলে কি আমরা এক বা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ? একদমই না। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা জোট গঠন করতাম।
এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ আলাদা দল। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ভিন্ন, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত আমাদের কাছের দল নয়। আমাদের কিছু দাবি হয়তো মিলে যেতে পারে। যেমন আমরা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিই, গণপরিষদ গঠনের কথা বলি, বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। কিন্তু এনসিপি মৌলবাদের সঙ্গে একাত্ম—এমন প্রচারের চেষ্টা একটি মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার কৌশলমাত্র। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ জুলাই বিদ্রোহকে সন্ত্রাসী আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনারা সাধারণ নির্বাচন কবে চান?
নাহিদ ইসলাম: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আগের সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং একটি গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে, যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। তাই নির্বাচন এখনই আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করছি না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: নতুন দল হিসেবে আপনাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
নাহিদ ইসলাম: প্রথমত, বাংলাদেশে বহু পুরোনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আছে। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে হাতে সময় কম থাকলে। যদিও নির্বাচন কবে হবে, তা নিশ্চিত নয়, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের দলকে পৌঁছে দেওয়াটাও বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি শহর বা ক্যাম্পাসের রাজনীতির চেয়ে ভিন্ন এবং এর জন্য ভিন্ন কৌশল দরকার। আমরা আগামী মাস থেকে ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করব।
এ ছাড়া দেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলনেও মনোযোগ দিতে হবে, যাতে জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া যায়। পাশাপাশি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দলের কার্যক্রমে কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ। অতীতে যা দেখা যেত, তার চেয়ে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দল সবার জন্য সমান সুযোগ ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে, যাতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলা যায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নাহিদ ইসলাম: দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্য আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন সংবিধান, যা প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হতে হবে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সীমাহীন ক্ষমতা বিলোপ করা হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশের কূটনীতির গতিপথ নিয়ে এনসিপির অবস্থান কী? দলটি কি নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
নাহিদ ইসলাম: আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করুক, যা ভারসাম্যপূর্ণ ও দেশের জন্য উপকারী এবং কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত। অতীতে আমরা দেখেছি, কিছু রেজিম দিল্লির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিল। তবে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারত কিংবা পাকিস্তান—কোনো দেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতে দেব না। এনসিপি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে এবং সর্বাগ্রে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনাদের দল কি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে?
নাহিদ ইসলাম: না! আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আগে দলটির ভেতরে যারা অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপির রাজনীতির জন্য বর্তমান কোনো দল কি হুমকি হয়ে উঠতে পারে?
নাহিদ ইসলাম: না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: দল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই সমকামী অধিকারকর্মীকে এনসিপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপে করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্ভুক্তির নীতির কথা বলা এনসিপি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল?
নাহিদ ইসলাম: আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এ কারণেই তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের দল বৈচিত্র্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আমাদের অতীত রেকর্ড প্রশংসনীয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, এর ফলে নারীরা আরও নিরাপদ ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারীদের ওপর সহিংসতা ও নীতি পুলিশিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হিসেবে আপনি কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করবেন?
নাহিদ ইসলাম: নারীদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তা-ই নয়, সমাজে প্রচলিত নানা গভীর বদ্ধমূল ধারণা নারীদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখছে। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ আগস্ট পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে এই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন দেখতে হবে সেগুলো কার্যকর হয় কি না। ব্যক্তি হিসেবে এবং দল হিসেবে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
৪১ মিনিট আগে
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র...
১ ঘণ্টা আগে
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
১ ঘণ্টা আগে
গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন এবং জিয়া উদ্যান এলাকা ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অনুমোদিত ছাড়া সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
আজ বুধবার সকালে সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আজ সকাল ৯টার একটু আগে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো একটি গাড়িতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের উদ্দেশে বের করা হয় তাঁর মরদেহ। এরপর নেওয়া হয় গুলশানের তারেক রহমানের বাসায়। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ জানাজা ও দাফনের জন্য আনা হয় জাতীয় সংসদ ভবনে।

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের একজন প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত ঢাকায় আসছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন এবং জিয়া উদ্যান এলাকা ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অনুমোদিত ছাড়া সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
আজ বুধবার সকালে সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আজ সকাল ৯টার একটু আগে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো একটি গাড়িতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের উদ্দেশে বের করা হয় তাঁর মরদেহ। এরপর নেওয়া হয় গুলশানের তারেক রহমানের বাসায়। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ জানাজা ও দাফনের জন্য আনা হয় জাতীয় সংসদ ভবনে।

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের একজন প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত ঢাকায় আসছেন।

নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের
২২ মার্চ ২০২৫
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র...
১ ঘণ্টা আগে
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
১ ঘণ্টা আগে
গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র এবং একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার প্রখর রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর ইতিহাস।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তবে পরবর্তী পূর্ণমেয়াদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপির ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তৎকালীন নীতিনির্ধারকদের মতে, একদল খালেদা জিয়াকে সরাসরি রাজনীতিতে আনতে চাইলেও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় একটি পক্ষ বিচারপতি সাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত করে। এরশাদের আশঙ্কা ছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ থাকবে না।
এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজও সাত্তারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামসুদ্দোহাও এরশাদের প্ররোচনায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়। তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা তানভীর আহমদ সিদ্দিকীসহ অনেককে জেলে পাঠানো হয়। এরশাদের শাসনামলে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য বারবার ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হয়। এর ফলে ১৯৮৩ সালে শাহ আজিজ, ডা. এম এ মতিন এবং শামসুল হুদা চৌধুরীদের নিয়ে ‘বিএনপি (হুদা-মতিন)’ গ্রুপ গঠিত হয়, যারা মূলত এরশাদকে সমর্থন জোগাত।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জেনারেল এরশাদ দাবি করতে থাকেন যে প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর সরাসরি অংশীদারত্ব থাকতে হবে। এই অগণতান্ত্রিক দাবি বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওয়াশিংটনে কর্মরত তৎকালীন কর্মকর্তা এম সাইদুজ্জামান ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে সরকারকে জানিয়েছিলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সতর্ক করলেও ততক্ষণে পর্দার আড়ালে ক্ষমতা দখলের চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
বিএনপির এই চরম দুর্দিনে দল যখন অস্তিত্ব সংকটে, তখনই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৭ সালে তাঁকে আটকের পরও আন্দোলন দমানো যায়নি। ধীরে ধীরে তিনি একজন দক্ষ বক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত লাজুক ছিলেন এবং এমনকি জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় কোনো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেতেও সংকোচ বোধ করতেন। তাঁর এই আমূল পরিবর্তন এবং প্রখর স্মৃতিশক্তি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদেরও মুগ্ধ করেছিল।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এরশাদ বিএনপিকে ১২৬টি আসন দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন। এই প্রস্তাব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক থাকলেও খালেদা জিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, স্বৈরশাসকের অধীনে কোনো সিট ভাগাভাগি বা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করলেও পরদিনই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করে দেন বলে বিএনপি নেতাদের অভিমত।
দীর্ঘ ৯ বছরের লড়াইয়ের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পদত্যাগ এবং প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুনরায় গণতন্ত্রের সূর্য উদিত হয়।
তথ্যসূত্র: তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ বইয়ের ঐতিহাসিক নথি

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র এবং একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার প্রখর রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর ইতিহাস।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তবে পরবর্তী পূর্ণমেয়াদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপির ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তৎকালীন নীতিনির্ধারকদের মতে, একদল খালেদা জিয়াকে সরাসরি রাজনীতিতে আনতে চাইলেও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় একটি পক্ষ বিচারপতি সাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত করে। এরশাদের আশঙ্কা ছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ থাকবে না।
এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজও সাত্তারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামসুদ্দোহাও এরশাদের প্ররোচনায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়। তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা তানভীর আহমদ সিদ্দিকীসহ অনেককে জেলে পাঠানো হয়। এরশাদের শাসনামলে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য বারবার ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হয়। এর ফলে ১৯৮৩ সালে শাহ আজিজ, ডা. এম এ মতিন এবং শামসুল হুদা চৌধুরীদের নিয়ে ‘বিএনপি (হুদা-মতিন)’ গ্রুপ গঠিত হয়, যারা মূলত এরশাদকে সমর্থন জোগাত।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জেনারেল এরশাদ দাবি করতে থাকেন যে প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর সরাসরি অংশীদারত্ব থাকতে হবে। এই অগণতান্ত্রিক দাবি বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওয়াশিংটনে কর্মরত তৎকালীন কর্মকর্তা এম সাইদুজ্জামান ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে সরকারকে জানিয়েছিলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সতর্ক করলেও ততক্ষণে পর্দার আড়ালে ক্ষমতা দখলের চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
বিএনপির এই চরম দুর্দিনে দল যখন অস্তিত্ব সংকটে, তখনই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৭ সালে তাঁকে আটকের পরও আন্দোলন দমানো যায়নি। ধীরে ধীরে তিনি একজন দক্ষ বক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত লাজুক ছিলেন এবং এমনকি জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় কোনো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেতেও সংকোচ বোধ করতেন। তাঁর এই আমূল পরিবর্তন এবং প্রখর স্মৃতিশক্তি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদেরও মুগ্ধ করেছিল।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এরশাদ বিএনপিকে ১২৬টি আসন দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন। এই প্রস্তাব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক থাকলেও খালেদা জিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, স্বৈরশাসকের অধীনে কোনো সিট ভাগাভাগি বা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করলেও পরদিনই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করে দেন বলে বিএনপি নেতাদের অভিমত।
দীর্ঘ ৯ বছরের লড়াইয়ের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পদত্যাগ এবং প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুনরায় গণতন্ত্রের সূর্য উদিত হয়।
তথ্যসূত্র: তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ বইয়ের ঐতিহাসিক নথি

নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের
২২ মার্চ ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
৪১ মিনিট আগে
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
১ ঘণ্টা আগে
গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ জানাজার জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার কিছু পরে নেওয়া হয়েছে। এর পর বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সকল দপ্তর। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপির মনোনীত রাজনীতিবিদেরা উপস্থিত থাকবেন।
দাফনের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তি ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ জানাজার জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার কিছু পরে নেওয়া হয়েছে। এর পর বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সকল দপ্তর। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপির মনোনীত রাজনীতিবিদেরা উপস্থিত থাকবেন।
দাফনের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তি ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হবে।

নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের
২২ মার্চ ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
৪১ মিনিট আগে
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র...
১ ঘণ্টা আগে
গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
এর আগে, আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহবাহী গাড়ি তারেক রহমানের বাসভবনে প্রবেশ করে। এর পাশেই খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন ফিরোজা।
এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে মরদেহ বাসার ভেতরে নেওয়া হলে স্বজনদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় খালেদা জিয়ার মরদেহের পাশে বসে তাঁর সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরআন তেলাওয়াত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ এবং রেজা কিবরিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা। বাসার বাইরে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার চেষ্টা করেন অনেকে। এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।
এর আগে, আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহবাহী গাড়ি তারেক রহমানের বাসভবনে প্রবেশ করে। এর পাশেই খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন ফিরোজা।
এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে মরদেহ বাসার ভেতরে নেওয়া হলে স্বজনদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় খালেদা জিয়ার মরদেহের পাশে বসে তাঁর সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরআন তেলাওয়াত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ এবং রেজা কিবরিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা। বাসার বাইরে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার চেষ্টা করেন অনেকে। এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে পড়েন। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের পর তিনি দলীয় রাজনীতিতে ফিরেছেন। প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন এমন নাগরিকদের
২২ মার্চ ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
৪১ মিনিট আগে
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র...
১ ঘণ্টা আগে
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।
১ ঘণ্টা আগে