Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বিতর্ক তৈরি হবে: মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস খুবই নির্মোহভাবে কাজ করছেন। তিনি একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। তাঁর মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। তবে তাঁকে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বিতর্ক তৈরি হবে।

আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পর্যালোচনা সভায়’ তিনি এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, ‘মানুষ এরই মধ্যে বুঝেছে প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই। আমি যতটুকু বুঝতে পারি ড. ইউনূস ভোটটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে চলে যেতে চান। কিন্তু কেউ কেউ দেখছি তাঁকে জোর করে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে চান, কিন্তু কেন? তিনি ভালো কাজ করছেন, তাই যদি মনে করেন তাঁকে দেশের কল্যাণে রাখতে হবে, তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করেন। কেন তাঁকে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে বিতর্কিত করতে হবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘ড. ইউনূস মনে হয় সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন পর্যন্ত চারবার ডেকেছে বিভিন্ন ইস্যুতে। কিন্তু তিনি একবারও রাজনীতি নিয়ে, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক ডাকেননি। উনি ডেকেছেন ইস্যু নিয়ে। ঈদযাত্রা নিয়ে তিনি ম্যাজিক দেখিয়েছেন, এখন রাজনৈতিক বিতর্কে কী ম্যাজিক দেখাবেন?’

রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকুক। আমাদের ভিন্ন মতকে ধারণ করতে হবে। ভিন্ন মতকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একমত নই। সংস্কার কমিশনের শতাধিক প্রস্তাবের সঙ্গেই নাগরিক ঐক্য একমত নয়।’

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সভায় বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সভায় বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের মূলনীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র ছিল। এখনো অনেকেই আছেন সমাজতন্ত্র রাখার পক্ষে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমার দলের পক্ষ থেকে মনে করি সমাজতন্ত্র এখন আমাদের লক্ষ্য নয়। রাশিয়া এবং পুরো পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের ধস নামার পরে সমাজতন্ত্র মূলনীতি হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও গণশক্তি সভার সভাপতি সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: ফেসবুক
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: ফেসবুক

সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে। ৩০ লক্ষাধিক ফলোয়ার সমৃদ্ধ এই পেজটি পরিকল্পিতভাবে রিপোর্ট এবং কপিরাইট স্ট্রাইক দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার আসিফ মাহমুদ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ওসমান হাদি ভাই সংশ্লিষ্ট সকল পোস্ট, ভিডিওতে স্ট্রাইক এবং সংঘবদ্ধ রিপোর্ট করে আমার অফিশিয়াল পেজটি (৩০ লক্ষাধিক ফলোয়ার) রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে।’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে লিংক শেয়ার করে তাঁর পেজটির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে ওসমান হাদিকে নিয়ে দেওয়া তিনটি ভিডিওতেই কপিরাইট স্ট্রাইক দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন এবং পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

ওসমান হাদিকে নিয়ে দেওয়া পোস্ট, ছবি ও ভিডিওতে অব্যাহত রিপোর্ট ও স্ট্রাইকের কারণে অনেকের আইডি ও পেজে সমস্যা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্র্রধান উপদেষ্টার পেজে হাদি সংশ্লিষ্ট সব ভিডিও সংঘবদ্ধ রিপোর্ট ও কপিরাইট ক্লেইম করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকের আইডি ও পেজে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফেসবুকে একজন লিখেছেন, তাঁর প্রোফাইল থেকেও হাদি সম্পর্কিত একাধিক ভিডিও রিমুভ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরও কমেছে পেঁয়াজ আলু ও সবজির দাম

  • পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম নামল ৪২ টাকা কেজি
  • ডিম, মুরগি ও ডালের দাম আগের মতোই
  • চালের দাম কমলেও আশানুরূপ নয়, বলছেন ক্রেতা
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ ও আমদানির বাড়তে থাকায় আরও কমেছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৮-২৫ টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, চলতি সপ্তাহে আলু, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজির দামও আরেকটু কমেছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, ডিম, মুরগি ও অন্যান্য মুদিপণ্য আগের দামেই স্থির রয়েছে।

তবে দাম কমে বাজারে স্বস্তি এলেও তথ্য বলছে অধিকাংশ সবজির দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনো বেশি রয়েছে। এ ছাড়া আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম যতটা কমা প্রয়োজন, ততটা কমেনি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আলুর বাজার। সাধারণত অন্যান্য বছর এই সময় আলুর দাম ৫০ টাকার ওপরে থাকে। কিন্তু চলতি বছর ২৫ টাকা কেজিতে নেমেছে।

সবজিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও চালের দাম নিয়ে এখনো অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, দাম কমলেও এখনো অনেক বেশি রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি শ্যামবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৭ টাকা কেজি; এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। এ ছাড়া আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৭২ টাকা।

শ্যামবাজারের মেসার্স আনোয়ার বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. রঞ্জু শেখ বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে দাম খুব দ্রুত নামছে। নতুন, পুরোনো ও আমদানির মিলে এখন তিন ধরনের পেঁয়াজই রয়েছে বাজারে। চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের বেচাকেনা খুব কম।

পাইকারিতে কমে আসায় খুচরাতেও দাম কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ৮৫-৯০ টাকা। আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৫-১০০ টাকা।

বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় নতুন আলু বাজারে তেমন ছিল না। পুরোনো আলুই বিক্রি হয়েছে ৫০-৭০ টাকা কেজি।

রাজধানীর বাজারগুলোয় গতকাল বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা। ডিএএম বলছে, গত বছর এই সময় বেগুনের দাম ছিল ৩০-৬০ টাকা কেজি।

বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই সময় শিমের দাম ছিল ৩০-৮০ টাকা।

বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫-৪০ টাকা। গত বছর কপি একই দামে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল।

বাজারে শীতের সবজি মুলা প্রতি কেজি ২০ টাকা, সপ্তাহখানেক আগে মুলা বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায়। গত বছর এই সময় মুলার দাম নেমেছিল ১৫ টাকা কেজিতে।

শীতের সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কিছুটা বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকা।

কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০-১০০ টাকা, দেড় থেকে দুই সপ্তাহ আগে যা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা নূর নবী বলেন, গত বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশে পরিস্থিতি ছিল একটু অস্থির। এতে সরবরাহব্যবস্থাও ভালো ছিল না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা খারাপ ছিল। এতে সবজির চাহিদাও কম ছিল। ফলে দামও কম ছিল। এ বছর সে রকম পরিস্থিতি নেই।

সবজিতে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকলেও ডিম, মুরগি, চালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে।

বাজারে ডিমের দাম আরও কমে প্রতিটি ৮ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৯ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ছিল। গত বছর একই সময় প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছিল ১০ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা।

ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও এই দামেই বিক্রি হয়েছিল।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাজার তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে গুটি, স্বর্ণাসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। তবে এই দামও বেশি বলছে ক্রেতারা। যদিও গত বছর একই সময় মোটা চাল ছিল ৫২-৫৮ টাকা।

বিআর-২৮, বিআর-২৯, পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ৬০-৬৫ টাকা। কাটারি, শম্পা কাটারি, জিরাশাইলসহ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৯০ টাকা কেজি, যা গত বছর একই সময় ছিল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা।

মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, মাঝারি মানের এক কেজি সরু চাল কিনতে এখনো ৭০-৭৫ টাকা লাগছে। আমনের এই ভরা মৌসুমে এটা অনেক বেশি। চালের দাম আরও কমে আসা উচিত। প্রতিবেশী দেশগুলোতে চালের দাম অনেক কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবশেষে মায়ের শয্যাপাশে ছেলে

  • এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার পাশে তারেক রহমান
  • হাসপাতালে প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলেন তারেক রহমান, সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও মেয়ে
  • চলতি বছরের শুরুতে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পূর্বাচলে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে গতকাল মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তারেক রহমান। এ সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল
পূর্বাচলে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে গতকাল মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তারেক রহমান। এ সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল

দেশের মাটিতে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেখা হলো মা ও ছেলের। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পর পূর্বাচলে সংবর্ধনা শেষে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা তিনি মায়ের পাশে ছিলেন। তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানও ছিলেন।

তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গতকাল বিএনপি বা চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ছেলের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে।

১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল দেশে ফেরেন তারেক রহমান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি যোগ দেন ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে (৩০০ ফুট সড়ক) বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা সমাবেশে। সংবর্ধনা শেষে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে তাঁকে বহনকারী বাস এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ রঙের বাসটি এভারকেয়ার হাসপাতালের গেটে পৌঁছায় এবং ৫টা ৫৪ মিনিটে তারেক রহমান হাসপাতালে প্রবেশ করেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর গুলশানের বাসায় বিশ্রাম শেষে ডা. জুবাইদা রহমানও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে বিকেল ৫টার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে তারেক রহমান তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

হাসপাতালে তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

খালেদা জিয়ার পাশে প্রায় দেড় ঘণ্টা থাকার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারেক রহমান গুলশানের বাসার উদ্দেশ্যে ওই বাসে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। একই বাসে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরাও ওঠেন। পরে তাঁরা গুলশানের ২ নম্বরে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় সড়কের দুই পাশে সমবেত বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। কেউ কেউ বাসের দিকে ফুল ছুড়ে দেন, তারেক রহমান সবার উদ্দেশে হাত নাড়েন।

তারেক রহমানদের বহনকারী বাস রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৭
ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী সমঝোতার পথে হাঁটছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত কয়েক দিনে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এই সমঝোতার রূপরেখা নিয়ে একাধিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় জামায়াত এনসিপিকে ৩০টি আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে দল দুটি জোটবদ্ধ হবে, নাকি মিত্রতা শুধুই নির্বাচনী সমঝোতার পর্যায়ে থাকবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। আলোচনা চলছে। যেকোনো সময় এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

দল দুটি যখন নির্বাচনে এক হয়ে লড়ার আলাপ করছে, তখন অসন্তোষের সুর বাজছে এনসিপির নেতৃত্বাধীন তিন দলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে।

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে এনসিপির নেতারা বলেছেন, এনসিপিকে খুব বেশি আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়নি বিএনপি। তা ছাড়া তারা গণভোট ও সংস্কার প্রশ্নে এনসিপির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। তারা গণভোটে ‘না’ ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করছে। অন্যদিকে সংস্কার ও গণভোট প্রশ্নে জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান একই।

এর বাইরে মূলত দুটি কারণে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে এনসিপি। এর একটি হলো, প্রশাসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান এবং অন্যটি নির্বাচনী তহবিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ফান্ডিং একটা বড় বিষয়। জামায়াত এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আর প্রশাসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। সংসদে এনসিপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে, অন্য দলের সঙ্গেও চলছে। বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।’

তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার আলোচনার বিষয়টি সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট নিয়ে এনসিপি সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান। বুধবার রাতে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত আটটায় শুরু হয় এই বৈঠক। চলে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। নির্বাহী কাউন্সিলের অর্ধশতাধিক সদস্যের মধ্যে ৩০-৩৫ জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সদস্য জানান, সেখানে নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। কোনো দলের সঙ্গে সমঝোতায় গেলে এনসিপি কী কী সুবিধা পাবে, কোন দল কোন কোন আসনে ছাড় দেবে, সার্বিক বিষয় বৈঠকে তুলে ধরেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সবকিছু বিবেচনা করে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়।

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে জামায়াতের বিপক্ষে থাকা বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। ডা. তাজনূভা জাবীন, সামান্তা শারমিনের মতো নারী সদস্যরাও ওই বৈঠকে ছিলেন না। বৈঠকে থাকা অন্তত দুজন সদস্য জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানান।

তবে অনেকেই শর্ত সাপেক্ষে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া যেতে পারে বলে মত দেন। তাঁরা বলেন, একাত্তরে জামায়াতের অবস্থানের জন্য ক্ষমা চাওয়া, নারী ও সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করা, অন্য দলের মধ্যে ঢুকে গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করা—এসব শর্ত মেনে নিলে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া যেতে পারে, অন্যথায় নয়।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কতগুলো আসনে তারা ছাড় দেবে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

তবে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সাবেক নেতা। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি লেখেন, ‘দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বিলুপ্ত হওয়া গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এনসিপি। তিনি দাবি করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে জোটসঙ্গী হিসেবে আসনপ্রতি এনসিপিকে নির্বাচনী খরচ দেওয়া হবে দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া জামায়াত জিতলে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় নেতা করা হবে এমন আলাপ চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

অন্যদিকে এনসিপির নেতৃত্বে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গঠন হওয়া তিন দলের গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে চলছে ভাঙনের সুর। জোটের সদস্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠনের একমাত্র সূত্র ও শর্ত ছিল বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে বাংলাদেশের পন্থার রাজনীতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি। এই শর্তে একবার জোট গঠনের আলাপ স্থগিতও হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এই শর্ত নিশ্চিত করেই জোট তৈরি হয়। কাজেই জোটের কোনো সঙ্গী যদি বিএনপি বা জামায়াত বা উভয়ের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বা জোটের সংলাপে যুক্ত হয়, তারা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে ভাবা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত