Ajker Patrika

পাথর লুট

সম্পাদকীয়
পাথর লুট

কয়েক দিন ধরেই সিলেটে পাথর লুটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদপত্রে। আজকের পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি বিশদ সংবাদ ছাপা হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৩৫ জন নেতা এই লুটপাটে তৎপর। এদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে আইনি বাধা দেওয়া হলে তাঁরা কি এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারতেন?

কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি কোয়ারি। এর বাইরেও পর্যটন এলাকা বিছনাকান্দি, জাফলং, সাদামাটির মতো জায়গায়ও পাথর কোয়ারি রয়েছে। এই পাথরগুলো আসে ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে। নদীর পানি ও পাথরের বন্ধন এলাকাগুলোকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত করে তোলে। কিন্তু পাথর লুট করে একশ্রেণির পাথরখেকো শেষ করে দিচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।

অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কি নিয়মিত অভিযান চালানো হয়েছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এই লুটপাটকারীদের কোনো যোগসাজশ নেই তো? এই অপকাণ্ড রুখতে স্থানীয় প্রশাসন কতটা তৎপর? স্থানীয় মানুষকে এ ব্যাপারে কি সচেতন করে তোলা হয়েছে? রাজনৈতিক পরিচয়ে পাথর লুট করতে এলে সাধারণ মানুষ যেন তা রুখে দিতে পারে, সে রকম জনসচেতনতা দরকার। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই এলাকার দরিদ্র মানুষের একাংশ পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান করা না হলে পাথর লুট পুরোপুরি রোধ করা কঠিন।

নদী থেকে পাথর তুলে নিলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। নদীর গতিপথ ও গভীরতার পরিবর্তন হয়, অতিরিক্ত পাথর উত্তোলনে নদীর তলদেশ নিচু হয়ে যায়। এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে আশপাশের জমি ও বসতি প্লাবিত হতে পারে। শুকনা মৌসুমে ঘটে উল্টো ঘটনা। পানির প্রবাহ যায় কমে। তখন আরও বড় হ্যাঁপার সৃষ্টি হয়। নদীর তলদেশ থেকে পাথর সরিয়ে ফেললে নদীর পাড় দুর্বল হয়ে নদীভাঙনের আশঙ্কা জেগে ওঠে। তাতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। নদীর পাথরের নিচে অনেক ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ বাস করে। তাদের বাসস্থান এতে ধ্বংস হয়। তাতে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাছের ডিম পাড়ার জায়গা নষ্ট হয়ে মাছের প্রজনন ব্যাহত হয়। জলজ পাখি, উভচর ও অন্য প্রাণীর খাদ্যচক্র ভেঙে পড়ে। বায়ু ও শব্দদূষণের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটন এলাকার স্বচ্ছ পানি ঘোলা হয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়।

এই মহা বিপর্যয়ের জন্য দায়ী লোভ। কয়েকজন দলবাজ ক্ষমতাবান মানুষ গোটা এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। এদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত কাউকে কাউকে বহিষ্কার করা হয়, কিন্তু বহিষ্কারের কারণ ঊহ্য রাখা হয়। ফলে কেন বহিষ্কার করা হয়েছে, তা এলাকাবাসী জানতে পারেন না।

পাথর আর পানির সখ্য ফিরিয়ে এনে সিলেটের এই এলাকাগুলোকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বানানো কি কঠিন? পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে উঠুক। শাস্তি পাক অপরাধীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...