হিলাল ফয়েজী

হাসান আজিজুল হকের গল্পে বড় হয়ে যা পড়েছিলাম, ছোটবেলায় চাঁদপুরের কোড়ালিয়া গ্রামে দেখা দৃশ্যের হুবহু। একটি গরু মরে গেছে। খোলা মাঠে রাখা ছিল। দেখি মেঘলা আকাশ থেকে ক্রমে ক্রমে নেমে আসছে পাখা মেলে। আমরা ছোটরা তখন চিৎকার করতাম লাফিয়ে লাফিয়ে: ‘হহুন’ আইছেরে! ‘হহুন’ আইছে! হহুন মানে শকুন। কেমন করে যেন ওরা মরা গরুর গন্ধ পেয়ে যায় অনেক উঁচু আকাশ থেকে। দলবদ্ধ। দলপ্রধান রাজশকুনের লাল প্রাকৃতিক চিহ্ন। খুবলে খুবলে শকুনেরা মরা গরু দিয়ে ভোজন সারে মহানন্দে। আমরা খাওয়া-দাওয়া-নাওয়া ফেলে দেখি। সবুজ বিপ্লবের কীটনাশক এসে গরুভোজী শকুনকুলকে বলতে গেলে ‘নাই’ করে দিয়েছে। চাঁদপুরের এখনকার বালক-বালিকারা ‘হহুন’ চেনে কি না জানি না। একটা বচন ছোটবেলায় বেশ শুনেছি। ‘হহুনের দোয়ায় গরু মরে না।’ এই বচনও বোধকরি নির্বাসিত হয়ে গেছে। এখন ‘শকুন বিকাশ প্রকল্প’ উপমহাদেশে। সেটা কত দূরে, ‘সফল-বিফল-তহবিল তছরুপ’ ইত্যাদি অভিধা পেয়ে ধাক্কা-অক্কা বরণ করেছে কি না জানি না। তবে পক্ষী ‘হহুন’ নিয়ে আজকের বয়ান নয়।
আজ যে ছোটবেলায় চাঁদপুরের ‘হহুন’ দেখি দুনিয়াজুড়ে। এসব মানবরূপী শকুনের দোয়ায় গরু মরে। এখানে দোয়া মানে বীভৎস হার্মাদি কৌশল। শকুনের কৌশলে কত যে গরু মরে দুনিয়াজুড়ে।
চীনের উহান শহরের এক গবেষণাগারে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জানা গেল, ভয়াবহ এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে? কীভাবে? ট্রাম্প বলল, ইচ্ছে করে চীনই এটা উহান থেকে ছড়িয়ে দিয়েছে। চীন প্রথমে বলল, কী সব বানরজাতীয় প্রাণী, বাদুড় ইত্যাদি থেকে। ফের বলল, চীনের ঘাটে তরি ভেড়ানো মার্কিন সৈন্যদের থেকে।
এ রকম ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে এখনো। এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লাইটের ওপর নজর রাখলাম। ওদিকে যে বিশেষত ইতালি ফ্লাইট দিয়ে ভাইরাসটি এ দেশে ঢুকে গেল, তা শুরুতে ভাবতেও পারিনি। আর ভাবতে পারিনি ইউরোপ-আমেরিকার সর্বাধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাও কতটুকু নাজুক। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত লাখ চল্লিশেক মানুষ প্রাণ হারাল, বেশির ভাগই ইউরোপ-আমেরিকায়।
আর আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা? দুর্বল, নাজুক, ঝুরঝুর বললে কম বলা হবে; পাঠক আমাকে অভিযুক্ত করতে পারেন। তবু শুনি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া মন্দ সামাল দিইনি। এমনকি অজানা এক আজব করোনাভাইরাস এসে আমাদের হাজার হাজার স্বাস্থ্যসেবীকে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করল, সেটা সামাল দিতেও তারা জান দিয়ে লড়ে যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের পুরোনো ‘কেনাকাটা ব্যামো’ অনেক কিছু গুবলেট করে দিয়েছিল শুরুতেই। এক জুটি প্রতারক শাহেদ-সাবরিনা তো ভুয়া পরীক্ষার তেলেসমাতি কারবার দেখাল। এই সব ‘হহুন’ নিয়েই আমরা মেতে থাকলাম। কিন্তু আসল ‘রাজশকুন’দের কোনো খবরই আমাদের তখনো নেই জানা।
২০১৬ সালেই প্রযুক্তি-মার্শাল বিল গেটস নাকি এমনই ভাইরাসের ভয়ংকর আবির্ভাবের কথা আগাম বলে দিয়েছিলেন। সে জন্য নাকি প্রস্তুতিও রেখেছেন প্রযুক্তির নববিন্যাসের এক নম্বর হতে। পেন্ডেমিক মানে বৈশ্বিক মহামারি, পশ্চিম বাংলায় উচ্চারিত হলো ‘অতিমারি’ অনুবাদে। বাংলাদেশে আমরা অত সব পণ্ডিতি শব্দে নেই, আমরা জানি আমরা করোনায় কুপোকাত, জব্দ।
পৃথিবীতে বিশ-বাইশ হাজার বছর আগে থেকেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। মানুষের জিনেই নাকি তার প্রমাণ। পৃথিবীর সব গবেষক পণ্ডিত জানালেন, এখন শুধু টিকা এবং মাস্ক...! পৃথিবীর সব মানুষকে মাস্ক পরতে বলো, সব মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে দাও। যত দ্রুত পার। না হলে মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এবার শুরু হলো ‘টিকা-হহুনের’ উঁচু আকাশে নীরব ঘোরাঘুরি। বড় বড় বানরের বড় বড় লেজ। সেই লেজও আকাশসমান উঁচু। গোপনে গোপনে। কে আগে টিকা তৈরি করবে! বিশেষত চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত। অক্সফোর্ড কীর্তিমান গবেষণা-মগজ দিনরাত দিগ্গজ কর্মকাণ্ডে রত। হিউম্যান ট্রায়াল ঠিকমতো না দিয়েই রাশিয়া তার ‘পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ’ স্পুতনিকের নাম দিয়ে সবার আগে টিকার বাজার মাত করে দিতে চাইল। এদিকে গোপনে গোপনে চীন কয়েক রকম টিকা উৎপাদনে নিয়োজিত রইল। সবার আগে অক্সফোর্ড সহযোগে যে টিকা এল, সেটা পেল মান্যতা। তারপরে মডার্না, জনসন–কত কী! এদিকে ইরান-কিউবা-কাজাখস্তান প্রভৃতি দেশও নিজেদের টিকা বানিয়ে ফেলল। দেখা গেল ‘হহুন’ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষিপ্র, তেজি, আগুয়ান চীনা ‘হহুন’। কোথা সে ব্রাজিল। সেখানেও চীনা টিকার বাজার। রাশিয়াও কম গেল না। মার্কিনিরা নিজ দেশ সামাল দেওয়ার কাজটি নিয়েই বেশি মগ্ন থাকল। করোনা হুহু করে বাড়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রটোকল বাণীও হুহু করে বাড়তেই থাকে।
২০২০ সালজুড়ে ইউরোপ-আমেরিকা-জাপানসহ বড় বড় দেশ ‘অতিমারি’ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকল। এসব দেশের সর্বাধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘কোভিড-১৯’ শিরোনাম পাওয়া ভাইরাসটি রীতিমতো তাদের ‘স্টুপিড’ বানিয়ে দিল। পৃথিবীজুড়ে সৃষ্টি হলো লাখ লাখ ট্র্যাজেডি।
তা টিকা উৎপাদনের মতো মহৎ কাজের সঙ্গে ছোটবেলার চাঁদপুরের ‘হহুন’-এর মিল দেখে পাঠক রেগে উঠবেন না। কার আগে কে বিশ্ব টিকার বাজার দখল করে–এ নিয়ে চলল তেলেসমাতি কাণ্ড। কার মুনাফা কত হতে চলল, তার বিশাল নিঃশব্দ পাঁয়তারা। ব্রাজিলে চীনারা টিকার কারখানা গড়ে দিল। কথামতো কাঁচামাল সময়মতো দিল না। ব্রাজিলের ‘ট্রাম্প’ ওই কারখানা দিল ভেঙে। ভারত সরকারের সঙ্গে মিলে যে ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদন শুরু করল, যা রপ্তানি করা ছিল বেআইনি, তারা সিঙ্গাপুরে এক কোম্পানি গড়ে তুলে ব্রাজিলে অনেক বেশি দামে গোপনে টিকা সরবরাহ শুরু করে ধরা খেল ব্রাজিলীয় সরকারের হাতেই। ছোট-বড়-মাঝারি নানা ‘হহুন’ টিকা আকাশে উড়তেই থাকল। মরা গরুর সন্ধান পেলেই নিচে জমিনে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা সামাল দিয়ে ভারত-মহাশাসক তো ২০২১ সালের মার্চে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মল্লবীরের মতো বলে উঠলেন, ‘আমরা করোনাকে হারিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। পৃথিবীকে পথ দেখাব আমরাই।’ করোনা মুচকি হাসল। করোনা-করোনা তখন একান্তে মিলেমিশে দিল্লি-মুম্বাইয়ে একসঙ্গে গোপন শলাপরামর্শ করে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তুলে হঠাৎ ‘ভারত-ভেরিয়েন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভারত মুলুককে এমন নাকানি-চুবানি-ঠাসানি ভক্ষণ করাল যে, লাখ লাখ ট্র্যাজেডি গড়ে উঠল সে দেশে দুনিয়াকে চমকে দিয়ে। পৃথিবীর আরেক দিকে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট’। দিল্লিতে খোদ চিকিৎসকেরা পর্যন্ত অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেলেন। এদিকে নামে নাকি গোস্বা। অতএব ‘ভারত ভেরিয়েন্টের’ নতুন নাম ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘আলফা ভেরিয়েন্ট’।
হায় হায় হঠাৎ বিপদে পড়ে গেলাম আমরা বাংলাদেশ। টিকা না বানাতেই ডিজিটাল স্মার্টনেসে আমরা অগ্রিম অর্থ দিয়ে বিশ্বে বৃহত্তম টিকা উৎপাদক ভারতের সিরাম কোম্পানি থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম নিশ্চিত করে নিলাম। এবং পেলাম প্রথম চালানও। বিশ্বময় প্রবাসী বাঙালিরা যখন উন্নত দেশে অবস্থান করেও টিকার সিরিয়াল পায় না, বাংলাদেশে ডাবল ডোজ টিকাদানে সফলদের ফেসবুকিং ছবি যেন বাজিমাতের মতো। শত দুঃখেও আলোর রেখা। সরকারের পাঁড় বিরোধীরাও সেই টিকা শুরুতে গ্রহণে পাগলপারা হয়ে গেল। আর হাঁ! হঠাৎ বজ্রপাত! ভারত হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দিল সে দেশে উৎপাদিত সব টিকা। সে দেশের খোদ কংগ্রেস পর্যন্ত দাবি তুলল, ভারতে উৎপাদিত টিকা সবার আগে ভারতীয়রাই পাবে। হায়রে কী করা! সরকারের প্রাথমিক সাফল্যের রোশনাই কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। এমনই জটিল সময়ে নানা প্রকারের দেশি ‘হহুন’ নতুন করে জেগে উঠল। গোপন ‘হহুন’। এবার টিকা কেনার জন্য নতুন করে এখানে-সেখানে-ওখানে। মন্ত্রণালয়ে, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বেনিয়া মহব্বতে সরকারের বিপন্নতার সুযোগ নেওয়ার ধুম পড়ে গেল। সে যাই হোক, চীন-রাশিয়ার নানা দেনদরবারে, মার্কিনি সংখ্যাতিরিক্ত উপহারে, আমরা ফের টিকাদানের কাজ শুরু করে আপাতত হাঁপ ছেড়েছি। কিন্তু ভবিষ্যৎ? কমপক্ষে তিরিশ কোটি টিকা আমাদের প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজন মেটাতে দেশি-বিদেশি-সরকারি-বেসরকারি ‘হহুনের’ যে মহোৎসব! মাল বানাও। মাল বানাও। গানের সুরে কান হবে ঝালাপালা।
কিন্তু পাঠক, জেনে কষ্ট পাবেন, আমাদেরও একটি নিজস্ব সরকারি টিকা উৎপাদন কারখানা ছিল এই ঢাকাতেই। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখান থেকে সংক্রামক ব্যাধির টিকা নিয়ে পৃথিবীতে বিতরণ করত। আমাদের সরকারি-বেসরকারি ‘হহুনেরা’ আমদানি-বাণিজ্যের স্বার্থে ওই টিকা কারখানাটি গলাটিপে হত্যা করে ফেলল।
তবুও আছে আর একটি চমকপ্রদ খবর। আমাদের দেশেই এখন আমরা প্রয়োজনীয় শতকরা আটানব্বই ভাগ ওষুধ নিজেরাই প্রস্তুত করি। পৃথিবীর বহু দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি, খোদ আমেরিকা সুদ্ধু।
সেই আমরা কি নিজেরা টিকা বানানোর উদ্যোগ নিতে পারব না? সরকারি-বেসরকারি বৈপ্লবিক উদ্যোগ একত্র করলে পদ্মা সেতুর মতো বিস্ময়কর সাফল্য আমরাও অর্জন করতে সক্ষম হব না? গোপালগঞ্জে আমাদের যে বিশাল হাব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেটা প্রস্তুত করে শুধু করোনা কেন, সংক্রামক ব্যাধিসহ একালের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারে ২০৪১ ভিশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত করতে পারি না? পারি। আমরাই পারি। সরকারের ভেতর-বাহিরের ‘হহুন’ মতলবিদের থাবা চূর্ণ করে এগোতে হবে। ওরা নানা কূটচাল করছে–করবেই। ওসব পরোয়া না করে ‘জয় বাংলা’ বলে এগিয়ে চলি। নিজেদের চাহিদা মেটাব, আমরা পৃথিবীর নানা দেশের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হব।
এখন প্রশ্ন একটিই: ওই ‘হহুনেরা’ কি তা হতে দেবে? উত্তরও একটিই: পদ্মা সেতুতে অন্য ধরনের ‘হহুনেরা’ ব্যর্থ হয়েছে। শক্তপোক্ত ডিজিটাল নেতৃত্ব থাকলে এই টিকা অঙ্গনেও ‘হহুনেরা’ ব্যর্থ হতে বাধ্য! পৃথিবীতে নব নব জীবাণু ভেরিয়েন্ট বেরোবে। আর আমরা হাপিত্যেশ করে দুনিয়াজুড়ে কান্নাকাটির ভিক্ষার প্যাটরা হাতে ঘুরে বেড়াব, সে জন্য বাংলাদেশ আনিনি। পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জে একাত্তর বিজয়ী হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় মর্যাদার সেতুসৌধ। আসুন এবার আমরা সরকারিভাবে ‘জাতীয় টিকা সার্বভৌমত্বের’ তথা একাত্তরের নব গৌরবসৌধ নির্মাণ করি। ‘হহুনেরা’ এটা করতে উন্মাদ হয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর বেলায় যখন জাঁদরেল মনুষ্য ‘হহুন’দের নাক-মুখ থ্যাবড়া করে দিতে পেরেছি, সব ধরনের টিকাসহ আনুষঙ্গিক ইনসুলিন ইত্যাকার বিশাল স্থাপনা নির্মাণেও আমরা ওদের বাধা ঝুরঝুর করে দিতে পারবই। ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রায় আসবেই নব নব বিজয়।

হাসান আজিজুল হকের গল্পে বড় হয়ে যা পড়েছিলাম, ছোটবেলায় চাঁদপুরের কোড়ালিয়া গ্রামে দেখা দৃশ্যের হুবহু। একটি গরু মরে গেছে। খোলা মাঠে রাখা ছিল। দেখি মেঘলা আকাশ থেকে ক্রমে ক্রমে নেমে আসছে পাখা মেলে। আমরা ছোটরা তখন চিৎকার করতাম লাফিয়ে লাফিয়ে: ‘হহুন’ আইছেরে! ‘হহুন’ আইছে! হহুন মানে শকুন। কেমন করে যেন ওরা মরা গরুর গন্ধ পেয়ে যায় অনেক উঁচু আকাশ থেকে। দলবদ্ধ। দলপ্রধান রাজশকুনের লাল প্রাকৃতিক চিহ্ন। খুবলে খুবলে শকুনেরা মরা গরু দিয়ে ভোজন সারে মহানন্দে। আমরা খাওয়া-দাওয়া-নাওয়া ফেলে দেখি। সবুজ বিপ্লবের কীটনাশক এসে গরুভোজী শকুনকুলকে বলতে গেলে ‘নাই’ করে দিয়েছে। চাঁদপুরের এখনকার বালক-বালিকারা ‘হহুন’ চেনে কি না জানি না। একটা বচন ছোটবেলায় বেশ শুনেছি। ‘হহুনের দোয়ায় গরু মরে না।’ এই বচনও বোধকরি নির্বাসিত হয়ে গেছে। এখন ‘শকুন বিকাশ প্রকল্প’ উপমহাদেশে। সেটা কত দূরে, ‘সফল-বিফল-তহবিল তছরুপ’ ইত্যাদি অভিধা পেয়ে ধাক্কা-অক্কা বরণ করেছে কি না জানি না। তবে পক্ষী ‘হহুন’ নিয়ে আজকের বয়ান নয়।
আজ যে ছোটবেলায় চাঁদপুরের ‘হহুন’ দেখি দুনিয়াজুড়ে। এসব মানবরূপী শকুনের দোয়ায় গরু মরে। এখানে দোয়া মানে বীভৎস হার্মাদি কৌশল। শকুনের কৌশলে কত যে গরু মরে দুনিয়াজুড়ে।
চীনের উহান শহরের এক গবেষণাগারে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জানা গেল, ভয়াবহ এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে? কীভাবে? ট্রাম্প বলল, ইচ্ছে করে চীনই এটা উহান থেকে ছড়িয়ে দিয়েছে। চীন প্রথমে বলল, কী সব বানরজাতীয় প্রাণী, বাদুড় ইত্যাদি থেকে। ফের বলল, চীনের ঘাটে তরি ভেড়ানো মার্কিন সৈন্যদের থেকে।
এ রকম ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে এখনো। এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লাইটের ওপর নজর রাখলাম। ওদিকে যে বিশেষত ইতালি ফ্লাইট দিয়ে ভাইরাসটি এ দেশে ঢুকে গেল, তা শুরুতে ভাবতেও পারিনি। আর ভাবতে পারিনি ইউরোপ-আমেরিকার সর্বাধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাও কতটুকু নাজুক। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত লাখ চল্লিশেক মানুষ প্রাণ হারাল, বেশির ভাগই ইউরোপ-আমেরিকায়।
আর আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা? দুর্বল, নাজুক, ঝুরঝুর বললে কম বলা হবে; পাঠক আমাকে অভিযুক্ত করতে পারেন। তবু শুনি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া মন্দ সামাল দিইনি। এমনকি অজানা এক আজব করোনাভাইরাস এসে আমাদের হাজার হাজার স্বাস্থ্যসেবীকে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করল, সেটা সামাল দিতেও তারা জান দিয়ে লড়ে যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের পুরোনো ‘কেনাকাটা ব্যামো’ অনেক কিছু গুবলেট করে দিয়েছিল শুরুতেই। এক জুটি প্রতারক শাহেদ-সাবরিনা তো ভুয়া পরীক্ষার তেলেসমাতি কারবার দেখাল। এই সব ‘হহুন’ নিয়েই আমরা মেতে থাকলাম। কিন্তু আসল ‘রাজশকুন’দের কোনো খবরই আমাদের তখনো নেই জানা।
২০১৬ সালেই প্রযুক্তি-মার্শাল বিল গেটস নাকি এমনই ভাইরাসের ভয়ংকর আবির্ভাবের কথা আগাম বলে দিয়েছিলেন। সে জন্য নাকি প্রস্তুতিও রেখেছেন প্রযুক্তির নববিন্যাসের এক নম্বর হতে। পেন্ডেমিক মানে বৈশ্বিক মহামারি, পশ্চিম বাংলায় উচ্চারিত হলো ‘অতিমারি’ অনুবাদে। বাংলাদেশে আমরা অত সব পণ্ডিতি শব্দে নেই, আমরা জানি আমরা করোনায় কুপোকাত, জব্দ।
পৃথিবীতে বিশ-বাইশ হাজার বছর আগে থেকেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। মানুষের জিনেই নাকি তার প্রমাণ। পৃথিবীর সব গবেষক পণ্ডিত জানালেন, এখন শুধু টিকা এবং মাস্ক...! পৃথিবীর সব মানুষকে মাস্ক পরতে বলো, সব মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে দাও। যত দ্রুত পার। না হলে মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এবার শুরু হলো ‘টিকা-হহুনের’ উঁচু আকাশে নীরব ঘোরাঘুরি। বড় বড় বানরের বড় বড় লেজ। সেই লেজও আকাশসমান উঁচু। গোপনে গোপনে। কে আগে টিকা তৈরি করবে! বিশেষত চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত। অক্সফোর্ড কীর্তিমান গবেষণা-মগজ দিনরাত দিগ্গজ কর্মকাণ্ডে রত। হিউম্যান ট্রায়াল ঠিকমতো না দিয়েই রাশিয়া তার ‘পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ’ স্পুতনিকের নাম দিয়ে সবার আগে টিকার বাজার মাত করে দিতে চাইল। এদিকে গোপনে গোপনে চীন কয়েক রকম টিকা উৎপাদনে নিয়োজিত রইল। সবার আগে অক্সফোর্ড সহযোগে যে টিকা এল, সেটা পেল মান্যতা। তারপরে মডার্না, জনসন–কত কী! এদিকে ইরান-কিউবা-কাজাখস্তান প্রভৃতি দেশও নিজেদের টিকা বানিয়ে ফেলল। দেখা গেল ‘হহুন’ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষিপ্র, তেজি, আগুয়ান চীনা ‘হহুন’। কোথা সে ব্রাজিল। সেখানেও চীনা টিকার বাজার। রাশিয়াও কম গেল না। মার্কিনিরা নিজ দেশ সামাল দেওয়ার কাজটি নিয়েই বেশি মগ্ন থাকল। করোনা হুহু করে বাড়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রটোকল বাণীও হুহু করে বাড়তেই থাকে।
২০২০ সালজুড়ে ইউরোপ-আমেরিকা-জাপানসহ বড় বড় দেশ ‘অতিমারি’ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকল। এসব দেশের সর্বাধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘কোভিড-১৯’ শিরোনাম পাওয়া ভাইরাসটি রীতিমতো তাদের ‘স্টুপিড’ বানিয়ে দিল। পৃথিবীজুড়ে সৃষ্টি হলো লাখ লাখ ট্র্যাজেডি।
তা টিকা উৎপাদনের মতো মহৎ কাজের সঙ্গে ছোটবেলার চাঁদপুরের ‘হহুন’-এর মিল দেখে পাঠক রেগে উঠবেন না। কার আগে কে বিশ্ব টিকার বাজার দখল করে–এ নিয়ে চলল তেলেসমাতি কাণ্ড। কার মুনাফা কত হতে চলল, তার বিশাল নিঃশব্দ পাঁয়তারা। ব্রাজিলে চীনারা টিকার কারখানা গড়ে দিল। কথামতো কাঁচামাল সময়মতো দিল না। ব্রাজিলের ‘ট্রাম্প’ ওই কারখানা দিল ভেঙে। ভারত সরকারের সঙ্গে মিলে যে ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদন শুরু করল, যা রপ্তানি করা ছিল বেআইনি, তারা সিঙ্গাপুরে এক কোম্পানি গড়ে তুলে ব্রাজিলে অনেক বেশি দামে গোপনে টিকা সরবরাহ শুরু করে ধরা খেল ব্রাজিলীয় সরকারের হাতেই। ছোট-বড়-মাঝারি নানা ‘হহুন’ টিকা আকাশে উড়তেই থাকল। মরা গরুর সন্ধান পেলেই নিচে জমিনে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা সামাল দিয়ে ভারত-মহাশাসক তো ২০২১ সালের মার্চে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মল্লবীরের মতো বলে উঠলেন, ‘আমরা করোনাকে হারিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। পৃথিবীকে পথ দেখাব আমরাই।’ করোনা মুচকি হাসল। করোনা-করোনা তখন একান্তে মিলেমিশে দিল্লি-মুম্বাইয়ে একসঙ্গে গোপন শলাপরামর্শ করে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তুলে হঠাৎ ‘ভারত-ভেরিয়েন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভারত মুলুককে এমন নাকানি-চুবানি-ঠাসানি ভক্ষণ করাল যে, লাখ লাখ ট্র্যাজেডি গড়ে উঠল সে দেশে দুনিয়াকে চমকে দিয়ে। পৃথিবীর আরেক দিকে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট’। দিল্লিতে খোদ চিকিৎসকেরা পর্যন্ত অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেলেন। এদিকে নামে নাকি গোস্বা। অতএব ‘ভারত ভেরিয়েন্টের’ নতুন নাম ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘আলফা ভেরিয়েন্ট’।
হায় হায় হঠাৎ বিপদে পড়ে গেলাম আমরা বাংলাদেশ। টিকা না বানাতেই ডিজিটাল স্মার্টনেসে আমরা অগ্রিম অর্থ দিয়ে বিশ্বে বৃহত্তম টিকা উৎপাদক ভারতের সিরাম কোম্পানি থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম নিশ্চিত করে নিলাম। এবং পেলাম প্রথম চালানও। বিশ্বময় প্রবাসী বাঙালিরা যখন উন্নত দেশে অবস্থান করেও টিকার সিরিয়াল পায় না, বাংলাদেশে ডাবল ডোজ টিকাদানে সফলদের ফেসবুকিং ছবি যেন বাজিমাতের মতো। শত দুঃখেও আলোর রেখা। সরকারের পাঁড় বিরোধীরাও সেই টিকা শুরুতে গ্রহণে পাগলপারা হয়ে গেল। আর হাঁ! হঠাৎ বজ্রপাত! ভারত হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দিল সে দেশে উৎপাদিত সব টিকা। সে দেশের খোদ কংগ্রেস পর্যন্ত দাবি তুলল, ভারতে উৎপাদিত টিকা সবার আগে ভারতীয়রাই পাবে। হায়রে কী করা! সরকারের প্রাথমিক সাফল্যের রোশনাই কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। এমনই জটিল সময়ে নানা প্রকারের দেশি ‘হহুন’ নতুন করে জেগে উঠল। গোপন ‘হহুন’। এবার টিকা কেনার জন্য নতুন করে এখানে-সেখানে-ওখানে। মন্ত্রণালয়ে, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বেনিয়া মহব্বতে সরকারের বিপন্নতার সুযোগ নেওয়ার ধুম পড়ে গেল। সে যাই হোক, চীন-রাশিয়ার নানা দেনদরবারে, মার্কিনি সংখ্যাতিরিক্ত উপহারে, আমরা ফের টিকাদানের কাজ শুরু করে আপাতত হাঁপ ছেড়েছি। কিন্তু ভবিষ্যৎ? কমপক্ষে তিরিশ কোটি টিকা আমাদের প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজন মেটাতে দেশি-বিদেশি-সরকারি-বেসরকারি ‘হহুনের’ যে মহোৎসব! মাল বানাও। মাল বানাও। গানের সুরে কান হবে ঝালাপালা।
কিন্তু পাঠক, জেনে কষ্ট পাবেন, আমাদেরও একটি নিজস্ব সরকারি টিকা উৎপাদন কারখানা ছিল এই ঢাকাতেই। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখান থেকে সংক্রামক ব্যাধির টিকা নিয়ে পৃথিবীতে বিতরণ করত। আমাদের সরকারি-বেসরকারি ‘হহুনেরা’ আমদানি-বাণিজ্যের স্বার্থে ওই টিকা কারখানাটি গলাটিপে হত্যা করে ফেলল।
তবুও আছে আর একটি চমকপ্রদ খবর। আমাদের দেশেই এখন আমরা প্রয়োজনীয় শতকরা আটানব্বই ভাগ ওষুধ নিজেরাই প্রস্তুত করি। পৃথিবীর বহু দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি, খোদ আমেরিকা সুদ্ধু।
সেই আমরা কি নিজেরা টিকা বানানোর উদ্যোগ নিতে পারব না? সরকারি-বেসরকারি বৈপ্লবিক উদ্যোগ একত্র করলে পদ্মা সেতুর মতো বিস্ময়কর সাফল্য আমরাও অর্জন করতে সক্ষম হব না? গোপালগঞ্জে আমাদের যে বিশাল হাব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেটা প্রস্তুত করে শুধু করোনা কেন, সংক্রামক ব্যাধিসহ একালের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারে ২০৪১ ভিশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত করতে পারি না? পারি। আমরাই পারি। সরকারের ভেতর-বাহিরের ‘হহুন’ মতলবিদের থাবা চূর্ণ করে এগোতে হবে। ওরা নানা কূটচাল করছে–করবেই। ওসব পরোয়া না করে ‘জয় বাংলা’ বলে এগিয়ে চলি। নিজেদের চাহিদা মেটাব, আমরা পৃথিবীর নানা দেশের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হব।
এখন প্রশ্ন একটিই: ওই ‘হহুনেরা’ কি তা হতে দেবে? উত্তরও একটিই: পদ্মা সেতুতে অন্য ধরনের ‘হহুনেরা’ ব্যর্থ হয়েছে। শক্তপোক্ত ডিজিটাল নেতৃত্ব থাকলে এই টিকা অঙ্গনেও ‘হহুনেরা’ ব্যর্থ হতে বাধ্য! পৃথিবীতে নব নব জীবাণু ভেরিয়েন্ট বেরোবে। আর আমরা হাপিত্যেশ করে দুনিয়াজুড়ে কান্নাকাটির ভিক্ষার প্যাটরা হাতে ঘুরে বেড়াব, সে জন্য বাংলাদেশ আনিনি। পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জে একাত্তর বিজয়ী হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় মর্যাদার সেতুসৌধ। আসুন এবার আমরা সরকারিভাবে ‘জাতীয় টিকা সার্বভৌমত্বের’ তথা একাত্তরের নব গৌরবসৌধ নির্মাণ করি। ‘হহুনেরা’ এটা করতে উন্মাদ হয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর বেলায় যখন জাঁদরেল মনুষ্য ‘হহুন’দের নাক-মুখ থ্যাবড়া করে দিতে পেরেছি, সব ধরনের টিকাসহ আনুষঙ্গিক ইনসুলিন ইত্যাকার বিশাল স্থাপনা নির্মাণেও আমরা ওদের বাধা ঝুরঝুর করে দিতে পারবই। ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রায় আসবেই নব নব বিজয়।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লা
১৬ জুলাই ২০২১
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লা
১৬ জুলাই ২০২১
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লা
১৬ জুলাই ২০২১
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৭ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

এটি এই ধরনের তিন নম্বর ভাইরাস। দুই নম্বর ভাইরাসটিও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে ছড়িয়েই থেমে গেছে। অনেকেই ভাবল, তিন নম্বরটিও বুঝি এই রকমই হবে। আমাদের দেশেও তাই। এদিকে চীনাদের পকেটে এখন অনেক পয়সা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ওরা বেড়াতে গেল নানা দেশে, ইউরোপে। বাংলাদেশে আমরা শুধু চীনা ফ্লা
১৬ জুলাই ২০২১
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৭ ঘণ্টা আগে